১৪. মুসলমানদের বিষয়

মুসলমানদের বিষয়

অনুভূমিকা (৪)

১। এই চতুর্দর্শ সমুল্লাসে অন্য কোন গ্রন্থের পরিবর্তে কেবলমাত্র কুরানের অভিপ্রায় অনুসারেই মুসলমান মতবিষয়ে লিখিত হইয়াছে, কারণ মুসলমানগণ সম্পূর্ণরূপে কুরানবিশ্বাসী। সম্প্রদায়গতমতভেদবশতঃশব্দ এবং অর্থাদিসম্বন্ধে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও কুরাণ সম্বন্ধে সকলেরই এক মত। কুরাণ আরবী ভাষায় লিখিত। মৌলবীগণ উর্দু ভাষায় ইহার অনুবাদ করিয়াছেন। আরবীভাষাবি বিখ্যাত পণ্ডিতদের দ্বারা সংশোষিত সেই উর্দু অনুবাদের হিন্দী অনুবাদ দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হইয়াছে। যদি কেহ বলেন যে, এই অনুবাদ অশুদ্ধ, তাহা হইলে সর্বাগ্রে মৌলবীদিগের অনুবাদ খণ্ডন করা কর্তব্য এবং পরে এ বিষয়ে লেখা তাহাদের কর্তব্য।

২। কেবল মানবজাতির উন্নতি এবং সত্যাসত্য নির্ণয় এই আলোচনার একমাত্র উদ্দেশ্য। সকল মত সম্বন্ধে কিছু কিছু জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তদ্বারা সকলে পরস্পরের মত কিংবা অন্য কোন মতের অনর্থক নিন্দা বা প্রশংসা করা অভিপ্রেত নহে। কিন্তু ভাল এবং যাহা মন্দ তাহাকে মন্দ বলিয়া জানাই সকলের কর্তব্য। তাহাতে কেহ কাহারও উপর মিথ্যা দোষারোপ এবং সত্যের অপলাপ করিতে পারে না। সত্যাসত্য প্রকাশিত হইবার পরেও স্বীকার করা বা না করা সকলের ইচ্ছাধীন; এ বিষয়ে বলপ্রয়োগ করা যায় না। নিজের কিংবা পরের দোষকে দোষ এবং গুণকে জানিয়া গুণগ্রহণ ও দোষ বর্জন এবং হঠকারীদের হঠকারিতা ও দুরাগ্রহ হ্রাস করাই সজ্জনদের রীতি। ৩। পক্ষপাতিত্ব দ্বারা জগতে কতই না অনর্থ ঘটিয়াছে ও ঘটিতেছে?ইহা সত্য যে এই অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী জীবনে পরের অনিষ্ট করিয়া স্বয়ং লাভ হইতে বঞ্চিত হওয়া এবং অপরকে করা মনুষ্যোচিত কাৰ্য্য নহে। এ স্থলে সত্যবিরুদ্ধ কিছু লেখা হইয়া থাকিলে ভদ্র মহোদয়গণ তাহা জানাইবেন। উচিত বিবেচিত হইলে তাহা স্বীকার করা যাইবে। কারণ হঠকারিতা, দুরাগ্রহ, ঈর্ষা-দ্বেষ এবং বাদ-বিবাদ ঘটাইবার বা বৃদ্ধি করিবার উদ্দেশ্য কিছু লিখিত হয় নাই। যাহাতে কেহ কাহারও অনিষ্টকরিতে না পারে, কিন্তু সকলেই পরস্পরের হিতসাধনে যত্নবান হয় তাহাই আমাদের সর্ব প্রধান কর্তব্য।

এই চতুর্দশ সমুল্লাসে মুসলমান মত বিষয় ভদ্রমহোদয়ের নিকট নিবেদন করিতেছি। তাহারা বিচার পূর্বক যাহা হিতকর তাহা গ্রহণ এবং যাহা অহিতকর তাহা বর্জন করুন।

অলমিতিবিস্তারেণ বুদ্ধিমদ্বয়ে
ইত্যনুভূমিকা ॥

.

অথ চতুর্দশ-সমুল্লাসারম্ভঃ
অথয়বনমতবিষয়ংব্যাখ্যাসামঃ।

অতঃপর মুসলমান মত বিষয়ে লিখিত হইবে।

১। “আল্লাহের নামের সহিত আরম্ভ; তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু।” মঞ্জিল ১। সিপারা ১। সুরত১ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানেরা বলেন যে, কুরাণ খুদার বাণী। কিন্তু এই বচন হইতে জানা যাইতেছে যে, ইহার অপর কোন রচিয়তা আছে। কারণ ইহা পরমেশ্বর রচিত হইলে “আল্লাহের নামের সহিত আরম্ভ” বলা হইত না। “মনুষ্যদের প্রতি উপদেশের জন্য আরম্ভ” বলা হইত। যদি মনে করা হয় আল্লাহ মনুষ্যদিগকে উপদেশ দিতেছেন, “তুমি এইরূপ বল” তাহা হইলেও সঙ্গত হয় না; কারণ তাহাতে পাপের আরম্ভও খুদার নামে হইবে এবং তাহার নাম কলঙ্কিত হইবে।

যদি তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু হন, তাহা হইলে তিনি তাঁহার সৃষ্টিতে মনুষ্যদের সুখের জন্য অন্য প্রাণীদিগকে দারুণ কষ্ট দিয়া হত্যা করিয়া মাংসভোজনের আদেশ দিলেন কেন? ঐ সকল প্রাণী কি নিরাপরাধ নহে? তাহারা কি ঈশ্বরের সৃষ্ট নহে?

পরমেশ্বরের নামে উত্তম কর্মের আরম্ভ, কুকর্মের নহে, এইরূপ বলাই উচিত ছিল। পূর্বোক্ত বাক্যে অসঙ্গতি কেননা চৌর্য্য, লাম্পট্য এবং মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি পাপকর্মের আরম্ভও কি পরমেশ্বরের নামের সহিত করিতে হইবে? বোধ হয় এই কারণেই মুসলমান কসাইরা কণ্ঠচ্ছেদ করিবার সময়ও ‘বিস্মিল্লাহ” ইত্যাদি পাঠ করিয়া থাকে। উক্ত বচনের ইহাই অর্থ মনে করিয়া মুসলমানেরা কুকর্মের আরম্ভও ঈশ্বরের নাম লইয়া করিয়া থাকে। মুসলমানদের খুদা দয়ালুও হইবেন না। কারণ পূর্বোক্ত প্রাণীদের প্রতি তাহার দয়া রহিল কোথায়? উক্ত বাক্যের অর্থ যদি মুসলমানরা না জানেন, তাহা হইলে এই বাক্যের প্রকাশও বৃথা; যদি অন্য কোন অর্থ করেন, তবে সেই প্রকৃত অর্থ কী? ।।১ ॥

২। ”সকল স্তুতি পরমেশ্বরের জন্য; তিনি “পরবরদিগার” অর্থাৎ সমস্ত সংসারের পালনকর্তা ॥ তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু ॥” মং১। সি০ ১। সুরতুলফাতিহা। আ০ ১,২ ॥

সমীক্ষক –যদি কুরাণের খুদা জগতের পালনকর্তা হইতেন এবং সকলের প্রতি ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করিতেন, তাহা হইলে তিনি মুসলমানের হস্তে ভিন্নমতাবলম্বী ও পশ্বাদির হত্যার আদেশ দিতেন না। তিনি ক্ষমাকারী বলিয়া কি পাপীদেরও ক্ষমা করিবেন? তাহা হইলে পরে “কাফিরদিগকে হত্যা কর” বলিবেন কেন? এই নিমিত্ত কুরাণ ঈশ্বরকৃত বলিয়া মনে হয় না ॥২॥

৩। ”বিচার দিবসের অধিপতে। আমরা তোমাকেই ভক্তি করি, তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তুমি আমাদিগকে সরল পথ প্রদর্শন কর।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ১। আ০ ৩,৪,৫ ॥

সমীক্ষক — খুদা কি সকল সময়ে ন্যায় বিচার করেন না? কোন বিশেষ দিনেই কি তিনি ন্যায় বিচার করেন? ইহা অন্যায় মনে হয়। তাঁহাকে ভক্তি করা ও তাহার সহায়তা প্রার্থনা করা অবশ্য সঙ্গত; কিন্তু তাই বলিয়া কুকর্মের জন্যও কি তাহার সহায়তা প্রার্থনা করিতে হইবে?

সত্যমাৰ্গ কি কেবল মুসলমানেরই না অন্যেরও? মুসলমানেরা সত্যমার্গের অনুসরণ করেন না কেন? যে পথে কুকর্ম করা যায়, সেই পথকেই তাহারা সরল মার্গ মনে করেন কি? যাহা ভাল, তাহা যদি সকলের পক্ষেই ভাল হয়, তবে মুসলামানদের বৈশিষ্ট্য কিছুই নাই। অন্যের মধ্যেও যাহা ভাল স্বীকার না করিলে তাহারা পক্ষপাতী ॥৩ ॥

৪।”তুমি তাহাদিগকে কৃপা করিয়াছ, তাহাদের পথ আমাদিগকে প্রদর্শন কর। যাহাদের প্রতি তুমি গজব” অর্থাৎ অত্যন্ত কোপদৃষ্টি করিয়াছ এবং যাহারা পথভ্রষ্ট তাহাদের পথ আমাদিগকে প্রদর্শন করিও না।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ১। আ০ ৬,৭ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানগণ পূর্বজন্ম এবং প্রাক্তন পাপপুণ্য স্বীকার করেন না সুতরাং কাহারও প্রতি “নিয়ামত” অর্থাৎ ফজল বা দয়া প্রদর্শন করায় এবং কাহারও প্রতি না করায় খুদা পক্ষপাতী হইবেন। পাপপুণ্য ব্যতীত দুঃখসুখ প্রদান করা অন্যায়। অকারণ দয়া বা কোপদৃষ্টিকরা অস্বাভাবিক। ঈশ্বর দয়া করিতে কিংবা ক্রুদ্ধ হইতে পারেন না। পূর্বর্সঞ্চিত পাপপুণ্য না থাকায় তিনি কাহারও প্রতি ক্রুদ্ধ বা দয়ালু হইতে পারেন না। যেহেতু এই সূরতের টিপ্পনীতে লিখিত আছে যে, “এই সূরা আল্লাহ সাহেব মনুষ্যের মুখ দিয়া বলাইয়াছেন, যেন তাহারা সর্বদা বলিতে থাকে।” অতএব “আলিফ বে” ইত্যাদি অক্ষর খুদাই তাহাদিগকে শিখাইয়া থাকিবেন। কিন্তু অক্ষরজ্ঞান ব্যতীত তাহারা উক্ত সূরত কীরূপে পাঠ করিল? তবে কি তাহারা কেবল কণ্ঠ দ্বারাই উচ্চারণ করিতে ও করাইতেছিল তাহা হইলে সম্ভবতঃ সমস্ত কুরাণটি মুখে মুখেই শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল।

এখন বুঝিতে হইবে যে, যে পুস্তকে পক্ষপাত আছে, তাহা ঈশ্বরকৃত হইতে পারে না। আরবী ভাষায় লিখিত হওয়ায় আরবদের পক্ষে কুরাণ পাঠ করা সহজ কিন্তু অপর ভাষাভাষীদের পক্ষে কঠিন। তাহাতে খুদা পক্ষপাতী হন। এই নিমিত্ত পরমেশ্বর সৃষ্টির অন্তর্গত সকল দেশের অধিবাসীদের প্রতি ন্যায়বিচার করিয়া, সকল দেশের ভাষা হইতে পৃথক সংস্কৃতভাষায় বেদ প্রকাশ করিয়াছিলেন। কারণ এই ভাষা জানিতে হইলে, সকল দেশের লোককে একই প্রকার পরিশ্রম করিতে হয়। এই ভাষায় কুরাণ করিলে পূর্বোক্ত দোষ ঘটিত না ॥৪ ॥

৫। “এই পুস্তকে কোন সংশয় নাই। ইহা ধার্মিকদের পথপ্রদর্শন করে। তাহারা পরোক্ষ বিষয় বিশ্বাস করে, নমাজ পড়ে এবং আমার প্রদত্ত ধন হইতে ব্যয় করে।”

“পূর্বে যে পুস্তকের অথবা তোমার পূর্বে যে পুস্তকের অবতরণ হইয়াছে তাহারা সেই পুস্তক ও কয়ামত বিশ্বাস করে এবং তাহাদের প্রভুর শিক্ষানুসারে চলে। তাহারই মুক্তি পাইবে।”

“নিশ্চয় যাহারা কাফির, তাহাদিগকে তোমার ভয় প্রদর্শন করা বা না করা সমান। তাহারা বিশ্বাস করিবে না; আল্লাহ তাহাদের চিত্ত ও কর্ণ শীলমোহর দ্বারা রুদ্ধ করিয়া দিয়াছেন। তাহাদের চক্ষুর উপর আবরণ এবং তাহাদের জন্য কঠোর শাস্তি রহিয়াছে ॥” সি০ ১। ম০ ১। সূ০ ২। আ০ ২,৩,৪, ৫,৬,৭ ॥

সমীক্ষক –খুদার নিজ মুখে পুস্তকের প্রশংসা কি আত্মম্ভরিতা নহে? যাঁহারা পরহেজগার অর্থাৎ ধার্মিকতাহার স্বভাবতঃ সত্যমার্গে থাকেন কিন্তু যাহারা অসত্য মার্গে থাকে কুরাণ তাহাদিগকে পথ প্রদর্শন করিতে পারে না, তবে কুরাণের প্রয়োজন কী?

পাপপুণ্য এবং পুরুষকার বিচার না করিয়াই খুদা কি তাঁহার ধনভাণ্ডার হইতে ধন ব্যয় করিতে দেন? তবে সকলকে দেন না কেন? মুসলমানদের পরিশ্রম করিতে হয় কেন?

যদি বাইবেল এঞ্জেলের উপর বিশ্বাস করা উচিত হয়, তবে কুরাণের উপর যেরূপ বিশ্বাস মুসলমানেরা করিয়া থাকেন, সেইরূপ বাইবেলেও বিশ্বাস করেন না কেন? বাইবেলে বিশ্বাস না করিলে কুরাণের [বাস্তবিক এই শব্দটি “কুরআন”; হিন্দীতে লোকে ইহাকে “কুরান” বলে। সেই কারণে এইরূপ লিখিত হইয়াছে] প্রয়োজন কী? যদি বলা হয় যে, কুরাণে অধিক কথা আছে, তাহা হইলে বোধ হয়, খুদা প্রথম পুস্তকে ঐ সকল কথা লিখিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। যদি না ভুলিয়া থাকেন, তবে কুরাণ রচনা নিষ্প্রয়োজন।

আমরা কোন কোনটি ব্যতীত অপর সকল বিষয়ে কুরাণ এবং বাইবেলের মধ্যে মিল দেখিতে পাই। তাহা হইলে বেদের ন্যায় একটি সম্পূর্ণ পুস্তক প্রকাশ করা হইল না কেন? কেবল মাত্র কয়ামেতই বিশ্বাস করিতে হইবে অন্য কিছুই বিশ্বাসযোগ্য নহে?

কেবল খ্রীষ্টান এবং মুসলমানেরাই খুদার নির্দেশ অনুসারে চলেন? তাহাদের মধ্যে পাপী কি কেহই নাই? তাঁহারা কি অধার্মিক হইলেও মুক্তি পাইবেন? অন্যেরা কি ধার্মিক হইয়াও মুক্তি পাইবেন না? যদি তাহাই হয়, তবে কি ঈশ্বরের অজ্ঞতা ও অন্যায় প্রকাশ পায় না?

যাহারা মুসলমান মত মানে না, তাহাদিগকে কাফের বলা কি “একতরফা ডিক্রী” নহে? যদি পরমেশ্বর তাহাদের কর্ণ এবং অন্তঃকরণ শীলমোহর দ্বারা রুদ্ধ করায়, তাহারা পাপ করে, তাহা হইলে তাহাদের দোষ নাই, দোষ খুদার। সুতরাং তাহাদের সুখ-দুঃখ এবং পাপপুণ্য হইতে পারে না। যাঁহারা স্বাধীনভাবে পাপপুণ্য কিছুই করে না, তাহাদিগকে দণ্ড দিবার কারণ কী? ।।৫ ॥

৬। “তাহাদের অন্তরে রোগ আছে। আল্লাহ তাহাদের রোগ বৃদ্ধি করিয়াছেন।” মং ১। সি০ সূ০ ২। আ০ ১০ ॥

সমীক্ষক –আচ্ছা, বিনা অপরাধে তাহার রোগ বৃদ্ধি করিতে খুদার কি দয়া হইল না? তাহাতে সেই হতভাগ্যদের কতই না কষ্ট হইয়া থাকিবে। ইহা কি শয়তান অপেক্ষাও অধিকতর। শয়তানি করা নহে? খুদা কাহারও অন্তঃকরণ শীলমোহর দ্বারা অবরুদ্ধ কিংবা কাহারও রোগ বৃদ্ধি করিতে পারেন না; স্বকৃত পাপই রোগবৃদ্ধির কারণ ॥ ৬ ॥

৭। “যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীরূপ শয্যা ও আকাশরূপ ছাদ রচনা করিয়াছেন।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ২২ ॥

সমীক্ষক –ভাল, আকাশ কি ছাদ হইতে পারে? আকাশকে ছাদ মনে করা অজ্ঞতাসূচক এবং হাস্যকর। অপর কোন ভূমণ্ডলকে ছাদ মনে করা তাহার নিজস্ব কল্পনা মাত্র ॥৭ ॥

৮। “যে বস্তুতে তোমার সন্দেহ আছে আমি আমার পয়গম্বরের নিকট সেই বস্তু অবতীর্ণ করিয়াছি। যদি সত্যবাদী হও, তবে সেইরূপ একটি সূরত লইয়া আইস, আল্লাহ ব্যতীত তোমার অপর যে যে সাক্ষী আছে, তাহাদিগকে আহ্বান কর, নতুবা মনুষ্য যে অগ্নির ইন্ধন, সেই অগ্নি এবং অবিশ্বাসীদের জন্য যে প্রস্তর প্রস্তুত আছে তাহা হইতে ভীত হও।” মং ১। সি০ সূ০ ২ ॥ আ০ ২৩, ২৪

সমীক্ষক –ভাল, ইহাও কি একটি কথা যে তাদৃশ একটি “সূরত” রচিত হওয়া অসম্ভব? সম্রাট আকবরের সময়ে মৌলবী ফৈজী কি বিন্দু ব্যবহার না করিয়াই কোরাণ সঙ্কলন করেন নাই? নরকের অগ্নি কীরূপ?

পার্থিব অগ্নিকে কি ভয় করিতে হইবে না? ইহাতে যাহা পতিত হয়, তাহা দগ্ধ হইয়া যায়। কুরাণে যেমন লিখিত আছে যে, কাফিরদের জন্য নরকের অগ্নি প্রস্তুত করা হইয়াছে, পুরাণেও সেইরূপ বর্ণিত আছে যে, ম্লেচ্ছদের জন্য ঘোরতর নরক প্রস্তুত রহিয়াছে। এই দুটি বর্ণনার মধ্যে কোনটিকে সত্য মনে করা যাইবে?

নিজ নিজ মতানুসারে উভয় পক্ষই স্বর্গগামী, কিন্তু এক পক্ষের মতানুসারে অপর পক্ষ নরকগামী। সুতরাং উভয় মতই মিথ্যা। কিন্তু সকল মতানুসারেই সত্য এই যে, ধার্মিকেরা সুখ এবং পাপীরা দুঃখ ভোগ করিবে ॥ ৮ ॥

৯। “যাহারা বিশ্বাসী এবং উত্তম কর্ম করে, তাহাদিগকে আনন্দের সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য বহিস্ত (স্বর্গ) রহিয়াছে। তাহার নিম্নভাগে নদী প্রবাহিত হইতেছে। যখন সে স্থানে ভোজনার্থ তাহাদিগের ফল দেওয়া হইবে তখন তাহারা বলিবে যে, সেই বস্তু তাহাদিগকে পূর্বে দেওয়া। হইয়াছিল। তাহাদের জন্য পবিত্র রমণীগণ সর্বদা আহ্বান করিতেছে।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ২৫ ॥

সমীক্ষক –ভাল, কুরাণের এই বহিস্ত, পৃথিবী অপেক্ষা কোন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ? পৃথিবীতে যে সকল বস্তু আছে, স্বর্গেও মুসলমানদের সে সকল আছে, বিশেষত্ব কেবল এইমাত্র যে, এ স্থানে। মনুষ্য যেমন জন্মে, মৃত্যুমুখে পতিত হয়, এবং যাতায়াতে করে, স্বর্গে সেইরূপ নহে। এস্থানে। সুন্দরী নারীরা চিরকাল জীবিত থাকে না কিন্তু সে স্থানে থাকে। তাহা হইলে যত কাল কয়ামতের রাত্রি না আইসে, ততকাল এই দুর্ভাগা নারীদের দিনগুলি কীরূপে অতিবাহিত হয়? অবশ্য যদি তাহাদের প্রতি ঈশ্বরের দয়া এবং তাহার আশ্রয়ে তাহাদের দিনগুলি কাটিয়া যায়, তবে ভাল।

কিন্তু দেখা যাইতেছে যে, মুসলমানদের এই বহিস্ত গোকুলিয়া গোঁসাইদের গোলোক ও মন্দির সদৃশ। গোলোকে নারীর সম্মান অধিক, পুরুষের সম্মান নাই। সেইরূপ খুদার গৃহেও নারীদের সম্মান অধিক, এবং তাহাদের প্রতি খুদার প্রেমও অধিক, পুরুষদের প্রতি কম। এইহেতু খুদা সুন্দরী নারীদিগকে সর্বদা বহিস্তে রাখিয়াছেন; পুরুষদিগকে রাখেন নাই। খুদার ইচ্ছা ব্যতীত নারীরা কীরূপে চিরকাল স্বর্গে থাকিতে পারে? যদি তাহারা খুদার ইচ্ছানুসারেই থাকে, তবে খুদা তাহাদের প্রতি আসক্ত হইয়া পড়িতে পারেন ॥ 9 ॥

১০। “আদমকে সকল বস্তুর নাম শিখাইয়া দেওয়া হইল। তৎপর তিনি ফেরস্তাদিগকে সম্মুখে করিয়া বলিলেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও; তবে আমাকে এ সকল বস্তুর নাম বল। তিনি বলিলেন, হে আদম! এ সকলের নাম বল।আদম সকল বস্তুর নাম বলিয়া দিলে খুদা ফেরিস্তাদিগকে বলিলেন, “আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই যে, আমি নিশ্চয়, পৃথিবী ও আকাশের গুপ্ত বস্তু সমূহকে এবং প্রকট বা কর্মসমূহকে জানি?” মং ১। সি০ বা গুপ্ত ১। সূ০ ২। আ০ ৩১, ৩৩ ॥

সমীক্ষক –ভাল এইরূপে স্বর্গীয় দূতদিগকে প্রতারিত করিয়া আত্মশ্লাঘা করা কি খুদার কাৰ্য্য হইতে পারে? ইহা তো কেবল প্রতারণা মাত্র; কোন বিদ্বান্ ইহা বিশ্বাস করিতে পারেন না এবং এমন ঔদ্ধত্যও দেখান না। ঈদৃশ কাৰ্য্য দ্বারাই কি খুদা আলৌকিক শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা করিতেছেন? অবশ্য যাহার যেমন ইচ্ছা, বন্য মনুষ্যদের মধ্যে ভ্রান্তমত চালাইতে পারে এবং তাহা চলাও সম্ভব, কিন্তু সভ্যদের মধ্যে তাহা সম্ভব নহে ॥ ১০ ॥

১১। “আমি যখন ফেরেস্তাদিগকে বলিলাম, বাবা আদমকে দণ্ডবৎ প্রণাম কর।তখন সকলে তাহা করিল, কিন্তু শয়তান অস্বীকার ও গর্ব করিল, সেও কাফির।” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ৩৪ ॥

সমীক্ষক– এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, খুদা সর্বজ্ঞ নহে অর্থাৎ ভূত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানের বিষয় সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত নহেন। তিনি সর্বজ্ঞ হইলে শয়তানকে সৃষ্টিই করিবেন কেন? খুদা তেজস্বীও নহেন; কারণ শয়তান তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও তিনি তাহার কিছুই করিতে পারিলেন না ॥

আরও দেখুন! একশয়তান কাফির খুদাকেও হতবুদ্ধিকরিল। তাহা হইলে যেখানে মুসলমানদের মতে কোটি কোটি কাফির আছে, সেখানে তাহাদের খুদা এবং তাহারা কী করিতে পারেন? খুদা। কখনও কাহারও রোগ বৃদ্ধি করেন, কাহাকেও পথভ্রষ্ট করেন, এসকল তিনি শয়তানের নিকট। শিখিয়া থাকিবেন। শয়তানও বোধ হয় এ সকল খুদার নিকটে শিক্ষা করিয়াছে; কারণ খুদা ব্যতীত। শয়তানের গুরু অপর কেহই হইতে পারে না ॥১১ ॥

১২। “আমি বলিলাম, ‘আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী বহিস্তে থাকিয়া আনন্দের সহিত যেখানে ইচ্ছা ভোজন কর; কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকট যাইও না, গেলে পাপী হইবে। শয়তান তাহাকে বিভ্রান্ত করিয়া বহিস্তের আনন্দ হইতে বঞ্চিত করিল। তখন আমি বলিলাম, “অবতরণ কর, তোমাদের পরস্পরের মধ্যে কেহ শত্রু আছে; তোমাদের বাসস্থান পৃথিবী এবং যে স্থানে তোমরা এক এক। সময়ে এক এক বস্তু লাভ করিবে। আদম তাহার প্রভুর কিছু কথা শিক্ষা করিয়া পৃথিবীতে আগমন করিল।” মং ১। সি০ ২। আ০ ৩৫-৩৭ ॥

সমীক্ষক –খুদা কেমন অল্পজ্ঞ দেখুন। এইমাত্র আশীর্বাদ দিলেন, “স্বর্গে থাক”, আবার পর মুহূর্তেই বলিলেন, “বাহির হও”। তিনি ভবিষ্যৎ জ্ঞাত থাকিলে বরই বা দিবেন কেন? দেখা। যাইতেছে যে, তিনি বিভ্রান্তকারী শয়তানকে দণ্ড দিতে অক্ষম। তিনি কাহার জন্য সেই বৃক্ষ সৃষ্টি করিয়াছিলেন; নিজের জন্য করিয়াছিলেন কিংবা পরের জন্য? পরের জন্য করিয়া থাকিলে, নিষেধ করিবার কারণ কী? সুতরাং এ সকল কথা ঈশ্বর কিংবা ঈশ্বরকৃতপুস্তকের হওয়া অসম্ভব।

আদম সাহেব খুদার নিকট কত বিষয় শিক্ষা করিয়া আসিয়াছিলেন? তিনি কীরূপে পৃথিবীতে। আসিলেন? স্বৰ্গ কি পর্বত কিংবা আকাশের উপর অবস্থিত? তিনি তাহা হইতে কীরূপে অবতরণ করিলেন? পাখীর ন্যায় উড়িয়া আসিলেন, কিংবা প্রস্তর খণ্ডের ন্যায় উপর হইতে পতিত হইলেন?

যেহেতু মৃত্তিকা দ্বারা আদম সাহেবকে নির্মাণ করা হইয়াছে, অতএব জানা যাইতেছে যে, খ্রষ্টানদের স্বর্গেও মৃত্তিকা আছে। বোধ হয়, সেখানকার ফেরিস্তারাও সেইরূপে নির্মিত হইয়াছেন। কারণ পার্থিব শরীর ব্যতীত ইন্দ্রিয়-সুখ ভোগ হইতে পারে না। পার্থিব শরীর থাকিলে মৃত্যুও আছে; তাহা হইলে মৃত্যুর পর তাহারা স্বর্গ হইতে কোথায় গমন করেন? মৃত্যু না থাকিলে জন্ম থাকে না। কিন্তু জন্ম থাকায় মৃত্যুও নিশ্চয় আছে। তাহা হইলে স্ত্রীলোকেরা যে চিরকাল স্বর্গে বাস করে বলিয়া কুরাণে লিখিত আছে, তাহা মিথ্যা, কারণ তাহাদের মৃত্যু নিশ্চিত। সুতরাং স্বর্গবাসীদের মৃত্যুও অবশ্যম্ভাবী ॥১২ ॥

১৩। “ভয় কর সেই দিনকে, যে দিন কোন জীব কোন জীবের উপর ভরসা রাখিবে না, কাহারও অনুরোধ রক্ষিত হইবে না, কাহারও নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হইবে না এবং কেহ সাহায্যও পাইবে না।”মং ১। সি ১। সৃ০ ২। আ০ ৪৮ ॥

সমীক্ষক –বর্তমানে কি ভয় করিবে না? কুকর্মে সর্বদা ভয় পাওয়া উচিত। অনুরোধ স্বীকৃত না হইলে, ইহা কীরূপে সত্য হইতে পারে যে, পয়গম্বরের সাক্ষ্য অথবা সুপারিশ বশতঃ খুদা স্বর্গ প্রদান করিবেন? খুদা কি কেবল স্বর্গবাসীদেরই সহায়? তিনি কি নরকবাসীদের সহায় নহেন? তাহা হইলে তিনি পক্ষপাতী ॥১৩ ॥

১৪। “আমি মুসাকে পুস্তক এবং আলৌকিক শক্তি দিলাম। মং১। সি০১।সূ০২ (আ০৫৩ ॥

সমীক্ষক –মুসাকে পুস্তক দেওয়া হইয়া থাকিলে কুরাণ প্রকাশ বৃথা। বাইবেলে ও কুরাণে লিখিত আছে যে, ঈশ্বর মুসাকে অলৌকিক শক্তি দিয়াছিলেন; কিন্তু তাহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। কারণ যাহা পূর্বে ছিল তাহা এখনও থাকা উচিত। যেহেতু এখন কাহারও আলৌকিক শক্তি নাই, সুতরাং পূর্বে ছিল না। যেমন আজকাল স্বার্থপরেরা অবিজ্ঞানীদের নিকট পাণ্ডিত্যের ভান করে, বোধ হয় সে কালেও ঐরূপ ভণ্ডামি করা হইত। খুদা এবং তাঁহার সেবকগণ এখনও বিদ্যমান আছেন; কিন্তু খুদা আজকাল তাহার সেবকদিগকে অলৌকিক শক্তি প্রদান করেন না কেন? আজকাল কেহ অলৌকিক শক্তি প্রদর্শন করিতে পারে না কেন? ঈশ্বর মুসাকে পুস্তক দিয়া থাকিলে পুনরায় কুরাণ প্রেরণের কী প্রয়োজন ছিল? সৎকর্ম করা এবং অসৎ কর্ম না করা সম্বন্ধে উপদেশ সর্বত্র একই প্রকার; ভিন্ন ভিন্ন পুস্তকে একই কথা লিখিলে পুনরুক্তি দোষ ঘটে। মুসা প্রভৃতিকে যে যে পুস্তক দেওয়া হইয়াছিল, তন্মধ্যে খুদা কি কোন ভুল করিয়াছিলেন? ।।১৪ ॥

১৫৷”তোমরা বল, ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি”; আমি তোমাদের পাপ ক্ষমা করিব। যাহারা সকর্ম করে তাহাদিগকে অধিক ক্ষমা করিব ॥ ” মং০ ১। সি০ ১। সু০ ২। আ০ ৫৮ ॥

সমীক্ষক –ভাল, খুদার এই উপদেশ সকলকে পাপে প্রবর্তিত করিবে কি না। কারণ পাপ ক্ষমার আশ্বাস পাইলে কেহ পাপ করিতে ভীত হয় না। সুতরাং যিনি এইরূপ বলেন তিনি খুদা হইতে পারেন না এবং ইহাও খুদার রচিত পুস্তক হইতে পারে না। কেন না খুদা ন্যায়কারী, তিনি কখনও অন্যায় করেন না, কিন্তু পাপ ক্ষমা করিলে তিনি অন্যায়কারী হন। যথোপযুক্ত দণ্ড দিলেই ন্যায়কারী হইতে পারেন। ১৫ ॥

১৬।”মুসা স্বজাতীয়দের জন্য জল প্রার্থনা করিলে, তাহাকে যষ্টি দিয়া প্রস্তরের উপর আঘাত করিতে বলিলাম। তখন প্রস্তর হইতে বারটি প্রস্রবণ নির্গত হইল ॥ ” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ৬০ ॥

সমীক্ষক — দেখুন! এমন অসম্ভব কথা কে আর বলিবে? একখণ্ড প্রস্তাবের উপর যষ্ট্যাঘাতে বারটি প্রস্রবণের উৎপত্তি সর্বথা অসম্ভব। অবশ্য সেই প্রস্তরখণ্ডের অভ্যন্তরে গর্ত খনন করিয়া সেই গর্ত জলপূর্ণ এবং দ্বাদশ ছিদ্রযুক্ত করিলে তাহা সম্ভব হইতে পারে, অন্যথা ইহা অসম্ভব ।।১৬ ॥

১৭। তাহাকে বলিলাম, “তুমি নিন্দিত বানর হইয়া যাও। সম্মুখবর্তী এবং পার্শ্ববতীদিগকেও এই ভয় দেখাইলাম এবং বিশ্বাসীদিগকে শিক্ষা দিলাম।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ৬৫-৬৬ ॥

সমীক্ষক –যদি কেবল খুদা ভয় দেখাইবার নিমিত্ত বানর হইতে বলিয়া থাকেন, তবে হয়তো তাঁহার বাক্য মিথ্যা অথবা তিনি ছলনা করিয়া থাকিবেন। যিনি এ সকল কথা বলেন, তিনি খুদা নহেন এবং যে পুস্তকে এ সকল কথা আছে, তাহাও খুদার রচিত নহে ॥ ১৭ ॥

১৮। “এইরূপে খুদা মৃতদিগকে পুনর্জীবিত এবং তোমাদিগকে তাঁহার সাঙ্কেতিক চিহ্ন সমূহ প্রদর্শন করেন, যেন তোমরা বুঝিতে পার।” মং০ ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ৭৩ ॥

সমীক্ষক–খুদা কি মৃতদিগকে পুনর্জীবিতকরিতেন? তবে এখন করেন না কেন? কয়ামতের রাত্রি পর্যন্ত জীবদিগকে কি কবরের মধ্যে পড়িয়া থাকিতে হইবে? আজ কাল কি তাহারা দায়রা সুপদে আছে? কেবল এই কয়েকটি কি ঈশ্বরের নিশান? পৃথিবী, চন্দ্র, সূৰ্য্য প্রভৃতি কি তাহার নিশান নহে? জগতে যে বিচিত্র সৃষ্টি রচনা প্রত্যক্ষ দৃষ্ট হয়, তাহা কি সামান্য নিশান? ॥১৮ ॥

১৯। “তারা নিত্যকাল বহিস্ত অর্থাৎ বৈকুণ্ঠবাসী।” মং০ ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ৮২

সমীক্ষক — কোন জীবেরই অনন্ত পাপ-পুণ্য করিবার সামর্থ্য নাই। এই কারণে কেহই সর্বদা স্বর্গে বা নরকে থাকিতে পারে না। যদি খুদা এইরূপ ব্যবস্থা করেন, তবে তিনি অন্যায়কারী এবং অজ্ঞ। কয়ামতের রাত্রিতে ন্যায়বিচার হইলে মনুষ্যের পাপপুণ্য সমান হওয়া উচিত। কর্ম অনন্ত

হইলে, কর্মফল কীরূপে অনন্ত হইবে? যদি বলা হয় যে, সাত কিংবা আটসহস্র বৎসরের কাছাকাছি সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা হইলে তাহার পূর্বে খুদা কি নিষ্কর্মা হইয়া বসিয়াছিলেন? কয়ামতের পরেও তিনি নিষ্কর্মা থাকিবেন? এ সকল বালকের কথা, কারণ পরমেশ্বরের কার্য সর্বদাই বর্তমান। যাহার যে পরিমাণ পাপপুণ্য, তিনি তাহাকে সেই পরিমাণ ফল প্রদান করেন। সুতরাং কুরাণের এ কথা সত্য নহে ৷১৯ ॥

২০। “আমি তোমাদিগকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়াছি যে, তোমরা নিজেরা পরস্পরের রক্তপাত করিবে না এবং পরস্পরকে গৃহ হইতে বিতাড়িত করিবে না। তোমরা যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছ, তোমরাই তাহার সাক্ষী। কিন্তু তোমরাই আবার পরস্পরকে হত্যা করিতেছ, এবং নিজেদের মধ্যে একদলকে অপরের গৃহ হইতে বিতাড়িত করিতেছ।” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ৮৪-৮৫ ॥

সমীক্ষক — বিচার করুন, প্রতিজ্ঞা করা এবং প্রতিজ্ঞা করান অল্পজ্ঞের কাৰ্য, পরমাত্মার নহে। সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর সাধারণ মনুষ্যের ন্যায় ছলনার অবলম্বন করিবেন কেন? ইহা কীরূপ ধার্মিকের কাৰ্য্য যে, কেবল নিজেরা পরস্পরের রক্তপাত এবং স্বমতাবলম্বীদের গৃহ হইতে বিতাড়িত করিবে না, অথচ ভিন্ন মতাবলম্বীদের রক্তপাত করিবে এবং তাহাদিগকে গৃহ হইতে বিতাড়িত করিবে? ইহা মিথ্যাচার, মূর্খর্তা এবং পক্ষপাতিত্ব।

পরমেশ্বর কি পূর্বে জানিতেন না যে, তাহারা প্রতিজ্ঞা বিরুদ্ধ কাৰ্য্য করিবে? জানা যাইতেছে যে, মুসলমানদের ঈশ্বরও অনেকটা খৃষ্টানদের ঈশ্বর সদৃশ, এবং কুরাণ স্বতন্ত্র রচনা নহে। কারণ কুরাণের কয়েকটি উপদেশ ব্যতীত অবশিষ্ট সমস্তই বাইবেলে আছে। ২০ ॥

২১। “যাহারা পারলৌকিক জীবনের বিনিময়ে ঐহিক জীবন এয় করিয়াছে, তাহাদের পাপ কখনও লঘু করা হইবে না এবং তাহাকে কোন সাহায্য দেওয়া হইবে না। মং০ ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ৮৬ ॥

সমীক্ষক –ভাল, ঈশ্বরের কি এরূপ ঈর্ষা-দ্বেষ হইতে পারে? কাহাদের পাপ লঘু করা হইবে? কাহাদিগকেই বা সাহায্য করা হইবে? তাহারা পাপী হইলে দণ্ড দানের পরিবর্তে তাহাদের পাপ লঘু করা অন্যায় হইবে। দণ্ডদান পূর্বক পাপ লঘু করা হইলে, এ স্থলে যাহাদের উল্লেখ আছে, তাহারাও দণ্ড পাইয়া লঘু হইতে পারে। দণ্ডদান করিয়াও লঘু করা না হইলে অন্যায় হইবে ॥

যাহাদের পাপ লঘু করিবার কথা, তাহারা ধর্মাত্মা হইলে তাহারা স্বভাবতই লঘু থাকে। তবে খুদা কী করিবেন? অতএব এ সকল বিদ্বানের লেখা নহে। স্ব স্ব কর্মানুসারে ধার্মিকদের সুখ এবং অধার্মিকদের দুঃখ সর্বদা হওয়া উচিত ।।২১ ॥

২২। “আমি নিশ্চয়ই মুসাকে পুস্তক দিয়াছি এবং তাহার পর পয়গম্বরকে আনাইয়াছি এবং মেরীর পুত্র যীশুকে ও তৎসঙ্গে রূহল্কুদ্‌সকেও [রূহল্কুদ্‌স জিব্রাইলকে বলা হয়। তিনি সর্বদা মসীহার সহিত থাকিতেন] প্রকট দৈবীশক্তি ও সামর্থ্য দিয়াছি। যে বস্তু তোমাদের প্রীতিকর যখন সে বস্তু লইয়া পয়গম্বর আসিলেন, তখন তোমরা অহঙ্কার করিলে, একটি মতকে মিথ্যা বলিলে এবং এক জনকে হত্যা করিলে ॥ ” মং ১। সি০ ১ সূ০ ২। আ০ ৮৭ ॥

সমীক্ষক –যেহেতু কুরাণে সাক্ষ্য আছে যে, মুসাকে পুস্তক দেওয়া হইয়াছে অতএব মুসলমানদের তাহা বিশ্বাস করা আবশ্যক। উক্ত পুস্তকের দোষগুলিও মুসলমান মতে প্রবেশ করিয়াছে। তদ্ব্যতীত দৈবশক্তির কথা সমস্তই মিথ্যা। নির্বোধ সরল প্রকৃতির লোকদিগকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য এ সকল মিথ্যা প্রচার করা হইয়াছে। কারণ সৃষ্টিক্রম এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ সমস্তই মিথ্যা। যদি তখন দৈবশক্তি ছিল, তবে এখন নাই কেন? এখন না থাকায় তখনও যে ছিল না, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই৷২২ ॥

২৩। “ইহার পূর্বে তাহারা কাফিরদের উপর বিজয় ইচ্ছা করিতেছিল। যখন সেই বস্তু আসিল, তখন তাহারা চিনিতে পারা সত্ত্বেও শীঘ্ৰ কাফির হইয়া গেল। কাফিরদের উপর আল্লাহের অভিশাপ আছে ॥ ” মং০ সি০ ১। সূ০ ২। আ০৮৮ ॥

সমীক্ষক — তোমরা যেমন ভিন্ন মতাবলম্বীদিগকেকাফির বল, তাহারাও কি সেইরূপ তোমাদিগকে কাফির বলে না? তাহারাও কি তাহাদের মতের ঈশ্বরের পক্ষ হইতে তোমাদিগকে ধিক্কার দেয় না? তাহা হইলে বল কে সত্য, কেই বা মিথ্যা! বিচার পূর্বক অনুসন্ধান করিলে সকল মতেই মিথ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু সত্য, সর্বত্র কেবল একরূপ কেবল মুর্খতাই বাদবিবাদের মূল ॥২৩ ॥

২৪। “বিশ্বাসীদিগের প্রতি আল্লাহের আনন্দ বার্তা এই যে, যাহারা ফেরিস্তাগণ, পয়গম্বরগণ, জিব্রাইল এবং মীকাইলের শত্রু আল্লাহও সে সকল কাফিরদের শত্রু।” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ৯৮ ॥

সমীক্ষক –মুসলমান মতে খুদার অংশীদার নাই। তাহা হইলে এই অংশীদার বাহিনী কোথা হইতে আসিল? যাহারা কাহারও শত্রু তাহারা কি ঈশ্বরেরও শত্রু? তাহা সত্য নহে, কারণ ঈশ্বর কাহারও শত্রু হইতে পারেন না ॥২৪ ॥

২৫। “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাহাকে প্রধান এবং দয়ার পাত্র করেন।” মং ১। সি০ ১। সূ০ ২। আ০ ১০৫ ॥

সমীক্ষক –যে ব্যক্তি প্রধান এবং দয়ার পাত্র হইবার যোগ্য নহে তাহাকেও কি প্রধান ও দয়া করা হইবে? তাহা হইলে ঈশ্বর অত্যন্ত অন্যায় করিবেন এবং কেই বা ধর্মানুষ্ঠান আর কেই বা পাপ বর্জন করিবে? কেননা সমস্তই কর্মফল খুদার প্রসন্নতার উপর নির্ভর করিতেছে। অতএব সকলের ঔদাসীন্য বশতঃ কর্মচ্ছেদ প্রসঙ্গ হইবে ৷২৫ ॥

২৬। “কাফিরগণ যেন ঈর্ষাবশতঃ তোমাদের বিশ্বাস হইতে বিচলিত না করে; কারণ তাহাদের মধ্যে বিশ্বাসীদের অনেক বন্ধু আছে।” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ১০৯ ॥

সমীক্ষক –দেখুন! ঈশ্বর স্বয়ং তাহাদিগকে সাবধান করিতেছেন, যেন কাফিরগণ তোমাদের বিশ্বাস নষ্ট না করে। তাহা হইল খুদা কি সর্বজ্ঞ নহেন? পরমেশ্বর সম্পর্কে এসকল কথা সত্য হইতে পারে না। ॥২৬ ॥

২৭। “তোমরা যে দিকে মুখ ফিরাইবে সেই দিকেই আল্লার মুখ আছে।” মং ১। সি০ ২। আ০ ১১৫ ॥

সমীক্ষক –ইহা সত্য হইলে মুসলমানদের মক্কার দিকে মুখ ফিরাইবার কারণ কী? যদি বলা হয় যে, মক্কাভিমুখে মুখ ফিরাইবার জন্য তাঁহাদের উপর আদেশ আছে; তাহা হইলে এই আদেশও আছে– যেদিকে ইচ্ছা মুখ কর। তাহার কি একটি কথা সত্য অপরটি মিথ্যা? যদি আল্লাহের মুখ থাকে তবে এক মুখ সকল দিকে থাকিতে পারে না, এক দিকেই থাকিবে। সুতরাং ইহা যুক্তিসঙ্গত নহে ॥ ২৭ ॥

২৮। “যিনি আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা তিনি যখন কিছু করিতে ইচ্ছা করেন, ইহা নহে যে তাহাকে করিতে হয়; তিনি বলেন হইয়া যাও’ অমনি হইয়া যায়।” মং ১। সি ১। সূ০ ২। আ০ ১১৭ ॥

সমীক্ষক — বেশ তো, খুদা আজ্ঞা দিলেন “হইয়া যাও”, আজ্ঞা কে শুনিল? তিনি কাহাকে শুনাইলেন? আর কে হইয়া গেল? কী কারণেই বা হইল? লিখিত আছে যে, সৃষ্টির পূর্বে খুদা ব্যতীত বস্তু কিছুই ছিল না। তাহা হইলে এ সংসার কোথা হইতে আসিল? কারণ ব্যতীত কোন কাৰ্য্যই হইতে পারে না, তাহা হইলে কারণ ব্যতীত এই বিশাল জগৎ কীরূপে উৎপন্ন হইল? সুতরাং ইহা কেবল বালকের কথা ॥২৮ ॥

পূর্বপক্ষ –না না, খুদার ইচ্ছা হইতে উৎপন্ন হইল।

উত্তর পক্ষ –তোমাদের ইচ্ছায় কি একটি মাছির ঠ্যাঙও নির্মিত হইতে পারে? তবে কীরূপে বলিতেছ যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় সমস্ত জগৎ নির্মিত হইয়াছে?

পূর্ব পক্ষ– খুদা সর্বশক্তিমান, অতএব যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন।

উত্তর পক্ষ –সর্বশক্তিমানের কী অর্থ? পূর্ব পক্ষ — তিনি যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন?

উত্তর পক্ষ — তিনি কি নিজে নিজেকে মারিতেও পারেন? (তিনি) মূর্খ, রোগী, এবং অজ্ঞানীও হইতে পারেন কি?

পূর্ব পক্ষ–এরূপ কখনও হইতে পারে না।

উত্তর পক্ষ –অতএব পরমেশ্বর তাঁহার নিজের কিংবা অন্যের গুণকর্ম স্বভাবের বিরুদ্ধে কিছুই করিতে পারেন না। সংসারে কিছু নির্মাণ করিতে বা করাইতে হইলে তিনটি পদার্থের প্রয়োজন হয়; প্রথম — নির্মাণকৰ্ত্তা যথা কুম্ভকার, দ্বিতীয় ঘট নির্মাণের জন্য মৃত্তিকা, এবং তৃতীয় –উহার সাধন যদ্বারা ঘট নির্মিত হয়। কুম্ভকার, মৃত্তিকা এবং সাধন থাকিলেই ঘট নির্মিত হয়। আর নির্মিত হইবার পূর্বে যেরূপ কুম্ভকার, মৃত্তিকা এবং সাধন বিদ্যমান থাকে, সেইরূপ জগৎ সৃষ্টির পূর্বেও জগতের কারণ প্রভৃতি ও তাহার অনাদি গুণকর্মস্বভাব বিদ্যমান থাকে। এই নিমিত্ত কুরাণের উক্তি অসম্ভব ॥ ২৮ ॥

২৯। “যেহেতু আমি মনুষ্যের জন্য কাবার সুখকর পবিত্র স্থান নির্মাণ করিয়াছি, অতএব তোমাদের নামাজের জন্য ইব্রাহামের স্থানকে আশ্রয় কর।” মং ১। সি০ ১। সৃ০ ২। আ০ ১২৫।

সমীক্ষক– খুদা কি কাবা নির্মাণের পূর্বে কোন পবিত্র স্থান নির্মাণ করেন নাই? করিয়া থাকিলে কাবা নির্মাণের কোন প্রয়োজন ছিল না। না করিয়া থাকিলে, যাহারা পূর্বে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেই দুর্ভাগাদের জন্য কোন পবিত্র স্থান ছিল না। পূর্বে পবিত্র স্থান নির্মাণের কথা ঈশ্বরের মনে জাগে নাই বোধ হয় ॥ ২৯ ॥

৩০। “বিমূঢ়াত্মা ব্যতীত এমন কে আছে যে, ইব্রাহামের ধর্ম হইতে বিচ্যুত হইবে? দুনিয়ায় আমি তাহাকেই পছন্দ করিয়াছি এবং নিশ্চয়ই সে শেষ পর্যন্ত ধার্মিক”। মং০ ১। সু০ ২ আ০ ১৩০ ॥

সমীক্ষক –ইহা কীরূপে বলা সম্ভব যে, যাহারা ইব্রাহামের ধর্ম মানে না, তাহারা মূর্খ? খুদা কেবল ইব্রাহামকেই পছন্দ করিলেন, ইহার কারণ কী? যদি ধর্মাত্মা বলিয়া করা হইয়া থাকে তাহা হইলে আরও বহু ধর্মাত্মা থাকিতে পারেন। ধর্মাত্মা না হওয়া সত্ত্বেও যদি পছন্দ করা হয়, তাহা হইলে অন্যায় হইয়াছে। অবশ্য ইহা সত্য যে, অধর্মাত্মা ঈশ্বরের প্রিয় নহে, ধর্মাত্মাই ঈশ্বরের প্রিয় ॥৩০ ॥

৩১। “নিশ্চয়, আমি তোমাকে আকাশের দিকে মুখ ফিরাইতে দেখিয়াছি। নিশ্চয় আমি তোমাকে সেই কাবা অভিমুখী করিব; তাহা তোমার পক্ষে প্রীতিকর হইবে। অতএব তোমার মুখ মজিদুল হরামের দিকে ফিরাও। যেখানেই থাক না কেন তোমার মুখ সেই দিকেই ফিরাইয়া লও।” মং ১। সি০ ২। সু০ ২। আ১৪৪ ॥

সমীক্ষক –ইহা কি ছোটো খাটো পৌত্তলিকতা? ইহা যে মস্ত বড় পৌত্তলিকতা।

পূর্ব পক্ষ –আমরা মুসলমানেরা মূর্তিপূজক নহি, কিন্তু মূৰ্ত্তিভঞ্জক। আমরা মক্কার মসজিদকে খুদা মানি না ॥

উত্তর পক্ষ –তোমরা যাহাদিগকে পৌত্তলিক মনে কর তাহারাও নানা প্রকার মূৰ্ত্তিকে ঈশ্বর মানে না, কিন্তু তাহাদের সম্মুখে পরমেশ্বরেরই পূজা করে। তোমরা মূৰ্তিভঞ্জক হইলে সেই বড় মূৰ্ত্তি মক্কার মসজিদ ভগ্ন কর নাই কেন?

পূর্ব পক্ষ –বেশ তো মহাশয়। আমাদের প্রতি কুরাণের আদেশ আছে যে, মক্কার দিকে মুখ ফিরাইতে হইবে। কিন্তু তাহাদের প্রতি বেদের আদেশ নাই; সুতরাং তাহারা পৌত্তলিক নহে কেন? আমরা কেন পৌত্তলিক হইতে যাইব? আমাদের পক্ষে খুদার আদেশ পালনীয়।

উত্তর পক্ষ– তোমাদের পক্ষে যেমন কুরাণকে খুদার বাণী, পৌরণিকেরাও সেইরূপ পুরাণকে ঈশ্বরের অবতার ব্যাসদেবের বাণী মনে করেন। পৌত্তলিকতা বিষয়ে তোমাদের ও ইহাদের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই, বরং তোমরা বৃহৎ এবং ইহারা ক্ষুদ্র মূৰ্ত্তির পূজক। যেমন কেহ নিজের গৃহ হইতে বিড়াল তাড়াইতে তাড়াইতে তন্মধ্যে উষ্ট্র প্রবেশ করে, সেইরূপ মহম্মদ সাহেবও মুসলমান মত হইতে ক্ষুদ্র মূৰ্ত্তিটি অপসারিত করিলেন সত্য কিন্তু মক্কার মসজিদরূপী পর্বর্তাকার বৃহৎ মূৰ্ত্তি মুসলমানদের মতে প্রবিষ্ট করাইলেন। ইহা কি ছোটোখাটো পৌত্তলিকতা? অবশ্য তোমরাও যদি আমাদের ন্যায় বৈদিক ধর্ম অবলম্বন কর তাহা হইলে মূর্তিপূজাদি কুকর্ম হইতে অব্যাহতি পাইতে পার; নতুবা নহে। যতদিন তোমরা নিজেদের বৃহৎ মূৰ্ত্তিকে অপসারিত না কর, ততদিন পর্যন্ত ক্ষুদ্র মূর্তিপূজা খণ্ডন করিতে লজ্জাবোধ করা উচিত এবং মূর্তিপূজা হইতে বিরত থাকিয়া নিজেদের পবিত্র করা কর্তব্য।৩১৷

৩২ ॥ “যাহারা আল্লাহের মার্গে থাকিয়া নিহত হয়, বলিও না তাহারা মৃত — তাহারা জীবিত।” মং১। দি০ ১। সূ০ ২। আ০ ১৫৪

সমীক্ষক –ভাল, ঈশ্বরের মার্গে মরিবার ও মারিবার প্রয়োজন কী? বল না কেন যে, স্বার্থসিদ্ধিই প্রয়োজন। লোভ দেখাইলে লোকেরা উৎসাহের সহিত যুদ্ধ করিবে, ফলে আমরা বিজয়ী হইব; লোকেরা নির্ভয়ে হত্যা ও লুণ্ঠন করিবে। তদ্বারা আমরা ঐশ্বৰ্য্যশালী হইয়া বিষয়ানন্দ ভোগ করিবং এইরূপ স্বার্থসিদ্ধিই এ সকল বিপরীত কার্যের উদ্দেশ্য ॥ ৩২

৩৩। “আল্লাহ কঠোর দুঃখদাতা। শয়তানের অনুসরণ করিও না। সে নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যক্ষ শত্রু। অসৎ এবং নির্লজ্জ কাৰ্য ব্যতীত অন্য কোন কাৰ্য্য করিতে সে আদেশ দেয় না। তোমরা যাহা জানো না, সে তাহাই আল্লাহের সম্বন্ধে বলিবে”? ম০ ১। সি০ ২। সূ০ আ০ ১৬৫, ১৬৮, ১৬৯ ॥

সমীক্ষক –দয়ালু খুদা কি পাপী ও পুণ্যাত্মাদিগকে কঠোর দুঃখ দেন? তিনি কি মুসলমানদের প্রতি সদয় এবং অন্যের প্রতি নির্দয়? তাহা হইলে তিনি ঈশ্বরই হইতে পারেন না। ঈশ্বর পক্ষপাতী না হইলে ধার্মিক দিগের প্রতি সদয় হইবেন এবং অধার্মিকদিগকে দন্ড দিবেন। অতএব, মহম্মদ সাহেবকে মধ্যবর্তীরূপে মানিবার এবং কুরান বিশ্বাস করিবার কোন প্রয়োজন নাই। যে শয়তান সকলের অনিষ্টকারী এবং শত্রু, তাহাকে খুদা সৃষ্টিই করিলেন কেন? ভবিষ্যতে কী ঘটিবে, তাহা কি জানিতেন না? যদি বলা হয় যে, তিনি জানিতেন কিন্তু পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন তবে তাহাও সত্য নহে। কারণ পরীক্ষা করা অল্পজ্ঞের কাৰ্য্য। তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি সকলের সদসৎ সম্যক্রপে জানেন। পুনশ্চ শয়তান সকলকে বিভ্রান্ত করে কিন্তু শয়তানকে বিভ্রান্ত করে কে? যদি বলা হয় যে, শয়তান নিজে নিজেই বিভ্রান্ত হয়, তবে অন্যেরাও নিজে নিজেই বিভ্রান্ত হইতে পারে। মধ্যস্থ শয়তানের প্রয়োজন কী? যদি খুদাই শয়তানকে বিভ্রান্ত করিয়া থাকেন; তবে তিনি শয়তানের শয়তান হইবেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে এইরূপ কথা বলা যাইতে পারে না। যে ব্যক্তি কুপথগামী হয়, সে কুসঙ্গ এবং অবিদ্যাবশতঃ ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করে ॥ ৩৩৷

৩৪। “মৃত প্রাণী, রুধির, শুকরের মাংস এবং যে বস্তু সম্বন্ধে আল্লাহ ভিন্ন অপর কাহারও নাম লওয়া হইয়াছে, তাহা তোমাদের পক্ষে হারাম (নিষিদ্ধ)” –ম০ ১। সি০২। আর ১৭৩।

সমীক্ষক –এ স্থলে বিচাৰ্য্য এই যে, স্বয়ং মৃত কিংবা কাহারও দ্বারা হত, উভয়ই সমান। অবশ্য কিঞ্চিৎ পার্থক্য থাকিলেও মৃত্যু সম্বন্ধে কোন পার্থক্য নাই। এক পক্ষে শূকরের মাংস তো নিষিদ্ধ; তবে কি মনুষ্যের মাংস ভক্ষণ করা উচিত?

পশুদিকে কঠোর যন্ত্রণা দিয়া পরমেশ্বরের নামে প্রাণী হত্যা করা কি উত্তম কাৰ্য্য? তাহাতে ঈশ্বরের নাম কলঙ্কিত হয়। পরমেশ্বর এ সকল প্রাণীকে পূর্ব জন্মের অপরাধ ব্যতীত মুসলমানদের হস্তে দারুণ কষ্টদানের ব্যবস্থা করিলেন কেন? তাহাদের প্রতি কি তাহার দয়া নাই? তাহারাও কি তাঁহার সন্তান তুল্য নহে?

গবাদি উপকারী পশুর হত্যা নিষেধ না করায়, খুদা হত্যার প্রশ্রয় দিয়া জগতের অনিষ্টকর হিংসারূপ পাপে কলঙ্কিত হইয়াছেন। এসকল কথা খুদার এবং তাহার পুস্তকের কখনও হইতে পারে না। ॥৩৪ ॥

৩৫। “রোজার রাত্রিতে নিজ নিজ পত্নীর সহিত মদনোৎসব বৈধ করা হইয়াছে। তোমাদের পত্নীগণ তোমাদের এবং তোমরা তাহাদের আবরণস্বরূপ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা চুরি অর্থাৎ ব্যভিচার করিয়া থাক। তজ্জন্য আল্লাহ তোমাদিগকে পুনরায় ক্ষমা করিয়াছেন। তোমরা তাহাদের সহিত মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সন্তান প্রাপ্তি লিখিয়া দিয়াছেন, তাহার অনুসন্ধান। কর। যে পৰ্য্যন্ত তোমাদের জন্য কৃষ্ণবর্ণ সূত্র হইতে শ্বেতবর্ণ সূত্র প্রকট, অর্থাৎ রাত্রি হইতে দিন প্রকাশিত না হয়, সে পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ কর।” মং ১। সি০ ২। সূ০ ২। আ০ ১৮৭ ॥

সমীক্ষক –এ স্থলে নির্ণয় হইতেছে, সে সময়ে মুসলমান মত প্রবর্তিত হয়, সে সময়ে। কিংবা তাহার পূর্বে কেহ কোন পৌরাণিককে জিজ্ঞাসা করিয়া থাকিবে, “একমাস ব্যাপী চন্দ্রায়ণ। ব্রতের নিয়ম কী?” চন্দ্রকলার হ্রাস-বৃদ্ধি অনুসারে খাদ্য-গ্রাসের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং মধ্যাহ্ন ভোজন সম্বন্ধীয় শাস্ত্রবিধি না জানিয়া, হয়তো সেই পৌরাণিক বলিয়া থাকিবে যে, চন্দ্রমা দর্শন করিয়া । ভোজন করা উচিত। মুসলমানেরা তাহা এইরূপ বুঝিয়া থাকিবেন।

কিন্তু ব্রতকালে স্ত্রী-সমাগম পরিত্যাজ্য। খুদা একটি কথা বাড়াইয়া বলিয়াছেন, “তোমরা যদি ইচ্ছা কর, তবে স্ত্রী-সংসর্গ করিও এবং রাত্রিকালে যতবার ইচ্ছা ভোজন করিও”। আচ্ছা,ইহা কীরূপ ব্রত হইল? দিবসে ভোজন করা হইল না, কিন্তু রাত্রিতে ভোজন চলিতে লাগিল। দিবাভাগে ভোজন না করিয়া রাত্রিকালে ভোজন করা সৃষ্টিক্রম বিরুদ্ধ। ॥৩৪ ॥

৩৬ ॥ “যাহারা তোমাদের সহিত যুদ্ধ করে, আল্লাহের পথে তাহাদের সহিত যুদ্ধ কর। তাহাদিগকে যে স্থানে পার হত্যা করিবে। হত্যা অপেক্ষা অবিশ্বাস নিন্দনীয়। যে পৰ্য্যন্ত অবিশ্বাস। দূরীভূত এবং আল্লাহের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে পর্যন্ত যুদ্ধ কর! যাহারা তোমাদের উপর যত বল প্রয়োগ করে, তাহাদের উপর তোমরা তত বল প্রয়োগ কর।” মং০ ১। সি০ ২। সূ০ ২। আ০ ১৯০, ১৯১, ১৯৩, ১৯৪ ॥

সমীক্ষক –কুরাণে এ সকল কথা না থাকিলে মুসলমানেরা ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে যে সকল গুরুতর অপরাধ করিয়াছে, সে সকল করিত না। বিনা অপরাধে কাহাকেও হত্যা করা মহাপাপ।

যাহারা মুসলিম মত বিশ্বাস করে না, মুসলমানেরা তাহাদিগকে কাফির বলে। তাহাদের মতে অবিশ্বাসীকে রাখা অপেক্ষা হত্যা করা ভাল। তাহাদের বিশ্বাস এই যে, যাহারা তাহাদের ধর্ম মত মানে না, তাহাদিগকে হত্যা করা বিধেয়। তাহারা তাহা করিয়া আসিতেছে।

ধর্মের জন্য যুদ্ধ করিতে করিতে তাহারা রাজ্য হারাইয়াছে এবং তাহাদের ধর্মমত ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হইয়া পড়িয়াছে। চুরির প্রতিশোধ কি চুরি? চোর আমাদের বিরুদ্ধে যে সকল অপরাধ করে, আমরাও কি চোরের বিরুদ্ধে সে সকল অপরাধ করিব? তাহা করা সর্বতোভাবে অন্যায়। যদি কোন অজ্ঞ ব্যক্তি আমাদিগকে গালি দেয়, আমরাও কি তাহাকে গালি দিব? ঈশ্বর কিংবা ঈশ্বর ভক্ত কোন বিদ্বান্ এইরূপ বলিতে পারেন না। ইহা ঈশ্বরকৃত নহে কিন্তু স্বার্থপর অজ্ঞানের কথা ॥৩৬ ॥

৩৭। “আল্লাহের পক্ষে কলহ করা প্রীতিকর নহে। হে বিশ্বাসী মনুষ্যগণ! তোমরা ইমে প্রবেশ কর।” ম০ ১। সি০ ২। সূ০ ২। আ০ ২০৫। ২০৮ ॥

সমীক্ষক –যদি পরমেশ্বর কলহ বিবাদ পছন্দ না করেন, তাহা হইলে তিনি মুসলমানদিগকে কলহ বিবাদের প্রেরণা দেন কেন? কলহপ্রিয় মুসলমানদের সহিত মিত্রতাই বা করেন কেন?

কেহ মুসলমান মত গ্রহণ করিলেই কি খুদা আনন্দিত হন? তাহা হইলে তিনি মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতী। তিনি নিখিল জগতের ঈশ্বর নহেন। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, কুরাণ ঈশ্বর কৃত নহে এবং কুরাণোক্ত ঈশ্বরও যথার্থ ঈশ্বর নহেন ॥৩৭ ॥

৩৮। “খুদা যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে জীবিকার অনন্ত সাধন প্রদান করেন” ম০ ১। দি০ ২। সূ০ ২। আ০ ২১২ ॥

সমীক্ষক –পরমেশ্বর কি পাপ-পুণ্য বিচার না করিয়াই জীবিকার সাধন প্রদান করেন? তাহা হইলে ভালমন্দ করা এক রূপই হইল, কারণ সুখ-দুঃখ প্রাপ্তি তাহারই ইচ্ছাধীন। এই কারণেই মুসলমানেরা ধর্মবিমুখ হইয়া স্বেচ্ছাচার করিয়া থাকে। কিন্তু তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এ সকল কুরাণোক্ত বাক্য বিশ্বাস না করিয়াও ধর্মাত্মা হন ॥৩৮ ॥

৩৯। “ তাহারা তোমাকে রজস্বলা সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে তুমি বলিও যে, তাহারা অপবিত্র। ঋতুকালে তাহাদের নিকট হইতে পৃথক্ থাকিও। যতদিন পর্যন্ত তাহারা পবিত্র না হয়, ততদিন তাহাদের নিকট যাইও না। তাহারা স্নান করিবার পর খুদা যে স্থান দিয়া তাহাদের নিকট যাইবার আজ্ঞা দিয়াছেন, সে স্থান দিয়া যাইও। তোমাদের পত্নীগণ তোমাদের ক্ষেত্র; অতএব ইচ্ছানুসারে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গমন করিও। বৃথা শপথ করিলে আল্লাহ তোমাদের দোষ গ্রহণ করেন না।” ম০ ১। সি০ ২। সূ০। আ০ ২২২, ২২৩, ২২৫ ॥

সমীক্ষক –রজস্বলার স্পর্শ ও সংসর্গ না করার কথা লেখা হইয়াছে, তাহা প্রশংসনীয়। কিন্তু স্ত্রীলোককে ক্ষেত্ৰতুল্য এবং তাহার সহিত স্বেচ্ছাচার করিতে বলা হইয়াছে; তাহাতে মনুষ্যেরা। ইন্দ্রিয়াসক্ত হইবে। খুদা মিথ্যা শপথের দোষ গ্রহণ না করিলে সকলেই মিথ্যা শপথ ও প্রতিজ্ঞা। ভঙ্গ করিবে এবং খুদা মিথ্যার প্রশয়দাতা হইবেন৷৩৯।

৪০। “এমন মনুষ্য কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণদান করিবে? ভাল, ঈশ্বর তজ্জন্য তাহাকে দ্বিগুণ দান করিবেন।” ম০ ১। সি০ ২। সূ০ ২। আ০ ২৪৫ ॥

সমীক্ষক –আচ্ছা, ঈশ্বরের ঋণ গ্রহণ করিবার প্রয়োজন কী? নিখিল বিশ্বস্রষ্টা কি মনুষ্যের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করেন? কখনই না। কেবল নির্বোধেরাই ইহা বলিতে পারে। ঈশ্বরের ধনভাণ্ডার কি শূন্য হইয়া গিয়াছে? তিনি কি হুণ্ডির কাৰ্য্যে এবং বাণিজ্যিাদিতে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন যে, দ্বিগুণ দিতে প্রতিশ্রুত হইয়া ঋণ গ্রহণ করিবেন? কোন বণিক কি এইরূপ করিতে পারে? যে ব্যক্তি দেউলিয়া হইয়াছে, কিংবা যাহার আয় অপেক্ষা ব্যয় অধিক, তাহাকেই এরূপ কাৰ্য্য করিতে হয়, ঈশ্বরকে তাহা করিতে হয় না৷৪১ ৷

৪১। “তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বিশ্বাসী হইল না এবং কেহ কেহ কাফির হইয়া গেল। আল্লাহ ইচ্ছা করিলে তাহারা যুদ্ধ করিত না। আল্লাহ যেমন ইচ্ছা তেমন করেন।” মং ১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৫৩।

সমীক্ষক — ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে কি সমস্ত কলহ-বিবাদ হইয়া থাকে? ঈশ্বর কি ইচ্ছা করিলে পাপ কাৰ্য্যও করিতে পারেন? তাহা হইলে তিনি ঈশ্বরই নহেন। কলহ-বিবাদ বাধান ও শান্তিভঙ্গ করা কোন সৎপুরুষের কাৰ্য্য নহে। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, এই কুরাণ ঈশ্বর রচিত নহে। কোন ধার্মিক বা বিদ্বান্ ব্যক্তিও ইহার রচিয়তা নহেন।৪১।

৪২। “পৃথিবী ও আকাশস্থ সমস্ত বস্তুই তাহার জন্য। তাহার ইচ্ছায় আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী তাঁহার সিংহাসন রহিয়াছে ॥ “ মং ১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৫৫ ॥

সমীক্ষক –পরমাত্মা জীবদের জন্য আকাশ এবং পৃথিবীস্থ সমস্ত পদার্থ করিয়াছেন; তিনি নিজের জন্য কিছুই করেন নাই। তিনি পূর্ণকাম। তিনি কোন বস্তুরই অপেক্ষা রাখেন না। তাঁহার যদি সিংহাসন থাকে, তবে তিনি একদেশী হইলেন এবং একদেশী হইলে তিনি ঈশ্বর নহেন, কারণ ঈশ্বর সর্বব্যাপক ॥৪২ ॥

৪৩। “আল্লাহ সূৰ্য্যকে পূর্ব দিক হইতে আনয়ন করেন; সুতরাং তুমি উহাকে পশ্চিম দিক হইতে আনয়ন কর। তাহাতে অবিশ্বাসীরা হত বুদ্ধি হইয়া গেল! নিশ্চয়, আল্লাহ পাপীদিগকে পথ। প্রদর্শন করেন না৷” ম০১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৫৮

সমীক্ষক — কেমন অজ্ঞতা দেখুন! সূৰ্য্য পূর্ব হইতে পশ্চিম দিকে কেননা, কিংবা পশ্চিম হইতে পূর্ব দিকে গমনাগমন করে না; কিন্তু নিজ পরিধিতেই ভ্রমণ করে। অতএব নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, কুরাণ রচয়িতা ভূগোল ও খগোল বিদ্যা জানিতেন না।

যদি পাপীদের পথপ্রদর্শন না করান, তাহলে ধার্মিকদের জন্যও মুসলমানদের খুদার প্রয়োজন নাই, কেননা ধার্মিকেরা তো ধর্মপথেই থাকেন। যাহারা ধর্ম ভুলিয়া যায়, তাহাদিগকেই পথ প্রদর্শন করাইতে হয়। কুরাণের খুদার পক্ষে সে কর্তব্য পালন না করা গুরুতর ভ্রম ॥৪২ ॥

৪৪। “তিনি বলিলেন, চারটি পাখী লইয়া উহাদের আকৃতি চিনিয়া রাখ; তাহার পর তাহাদের এক-এক খণ্ড পর্বতের উপর রাখিয়া তাহাদিগকে ডাক। পাখী শীঘ্র দৌড়াইয়া তোমার নিকট চলিয়া আসিবে ॥ ” ম০ ১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৬০৷

সমীক্ষক –বাহবা! দেখ! মুসলমানদের খুদা ভানুমতীর খেলার ন্যায় যাদু খেলা খেলেন! এ সকল কার্য দ্বারা কি খুদার ঈশ্বরত্ব প্রকাশিত হয়? সুধীগণ এমন খুদাকে জলাঞ্জলি দিয়া দূরে অবস্থান করিবেন। কেবল মুখেরাই তাঁহার জালে আবদ্ধ হইবে। ইহাতে খুদার মর্যাদার পরিবর্তে হীনতাই প্রকাশ পায় ॥৪৪ ॥

৪৫। “তিনি যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে নীতি শিক্ষা দেন।“ মং ১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৬৯

সমীক্ষক –যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে নীতিশিক্ষা দেওয়া হইলে বোধ হয় যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে দুর্নীতিও শিক্ষা দেওয়া যায়। ইহা ঈশ্বরোচিত কাৰ্য্য নহে। যিনি পক্ষপাত পরিত্যাগ পূর্বক সকলকে নীতিশিক্ষা দান করেন, তিনিই ঈশ্বর, তিনিই আপ্ত, অপর কেহই আপ্ত নহে ॥ ৪৫ ॥

৪৬। ”যাহারা সুদ খায়, তাহারা কবরে দণ্ডায়মান হইবে না।” ম ১। সি, ৩। সূ ২। আ-২৭৫।

সমীক্ষক — তাহলে যাহারা কবরে শুইয়া আছে, শুইয়াই থাকিবে? কত দিন শুইয়া থাকিবে? এমন অসম্ভব কথা ঈশ্বরীয় পুস্তকেহইতে পারে না, অবশ্য বাল্য বুদ্ধিদের পুস্তকেহইতে পারে।৪৬ ॥

৪৭। “তিনি যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে ক্ষমা করিবেন কিংবা দণ্ড দিবেন; কারণ তিনি সর্বপেক্ষা বলবান ॥ ” মং ১। সি০ ৩। সূ০ ২। আ০ ২৮৪ ॥

সমীক্ষক –ক্ষমাহঁকে ক্ষমা না করা এবং ক্ষমার অযোগ্যকে ক্ষমা করা কি মূর্খ স্বেচ্ছাচারী রাজার কাৰ্য্য নহে? যদি ঈশ্বর যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে পাপী কিংবা পুণ্যাত্মা করেন, তাহা হইলে জীব পাপ-পুণ্যের জন্য দায়ী হইবে না।

ঈশ্বর ইচ্ছানুসারে মনুষ্যকে পাপী কিংবা পুণ্যাত্মা করিলে জীবের সুখদুঃখও হওয়া উচিত নহে। অতএব যেমন কোন সৈন্য, সেনাপতির আজ্ঞানুসারে কাহাকেও হত্যা কিংবা রক্ষা করিলে সে দায়ী হয় না, সেইরূপ কেহই নিজ সুখ-দুঃখের জন্য দায়ী নহে ॥ ৪৭ ॥

৪৮। “যাহারা ধর্মপরায়ণ তাহাদিগকে ইহা অপেক্ষা কী উত্তম সংবাদ দিব? বল যে, আল্লাহের নিকট বহিস্ত আছে; সে স্থানে নদী প্রবাহিত হইতেছে, সে স্থানে পবিত্র রমণীগণ সর্বদা অবস্থান করে। ঈশ্বর ভৃত্যদের সহিত তাহাদিগকে দেখিয়া প্রীতিলাভ করেন।” মং ১। সি ০ ৩ সূ০ ৩। আ০ ১৫ ॥

সমীক্ষক –ভাল, ইহা কি স্বর্গ না বেশ্যাদির প্রমোদ কানন? এই ঈশ্বরকে কি ঈশ্বর অথবা রমণীবিলাসী বলা যাইবে? যে পুস্তকে এ সকল কথা লিখিত আছে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি সেই পুস্তককে ঈশ্বর রচিত বলিয়া স্বীকার করিতে পারেন? ঈশ্বর পক্ষপাত করেন কেন? যদি রমণীগণ চিরকাল স্বর্গে বাস করে, তবে তাহারা কি পৃথিবীতে জন্মের পর সে স্থানে গিয়াছে অথবা সে স্থানেই জন্মগ্রহণ করিয়াছে? যদি জন্মের পর সে স্থানে গিয়া থাকে, আর যদি প্রলয় রাত্রির পূর্বেই তাহাদিগকে সে স্থানে আহ্বান করা হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাদের স্বামীদিগকেও আহ্বান করা হয় নাই কেন? তদ্ব্যতীত প্রলয় রাত্রিতে সকলের বিচার হইবার যে নিয়ম আছে তাহা এ সকল স্ত্রীলোকের বেলায় ভঙ্গ করা হইল কেন? যদি বল, তাহারা সে স্থানেই জন্মিয়া থাকে, তাহা হইলে প্রলয় পৰ্য্যন্ত কীরূপে জীবন যাপন করিয়া থাকে? যদি বল, তাহাদের জন্য পুরুষও ছিল তাহা হইলে যে সকল মুসলমান এ স্থান হইতে স্বর্গে গমন করেন খুদা তাহাদিগকে স্ত্রী কোথা হইতে দেন? খুদা স্ত্রীলোকের ন্যায় পুরুষদিগকে চিরস্বর্গবাসী করিলেন না কেন? এই হেতু মুসলমানদের খুদা অন্যায়কারী এবং নির্বোধ ॥৪৮ ॥

৪৯। “ইস্লাম ধর্ম নিশ্চয়ই আল্লাহ হইতে প্রেরিত হইয়াছে” ॥ মং ১। সি০ ৩। সূ০ ৩। আ০ ১৯। সমীক্ষক –ঈশ্বর কি কেবল মুসলমানদের? অন্য কাহারও নহেন? তের শত বৎসর পূর্বে ঈশ্বর প্রেরিত কোন মত কি ছিল না? ইহাতে জানা যাইতেছে যে, কুরাণ ঈশ্বরকৃত নহে; কিন্তু। কোন পক্ষপাতী ইহার রচয়িতা ॥৪৯ ॥

৫০। “প্রত্যেক জীব যাহা উপার্জন করিয়াছে তাহা তাহাকে সম্পূর্ণ দেওয়া হইবে, কাহারও প্রতি অন্যায় করা হইবে না। বল, হে আল্লাহ। তুমি রাজ্যের অধীশ্বর! তুমি যাহাকে দিতে ইচ্ছা কর, তাহাকে দাও, যাহার নিকট হইতে কাড়িয়া লইতে ইচ্ছা কর, তাহার নিকট হইতে কাড়িয়া লও। যাহাকে সম্মান দিতে ইচ্ছা কর তাহাকে সম্মান দাও, যাহাকে অপমানিত করিতে ইচ্ছা কর, তাহাকে অপমানিত কর; সমস্তই তোমার হস্তে। সর্বোপরি তুমিই বলবান।

তুমিই দিনের মধ্যে রাত্রিকে এবং রাত্রির মধ্যে দিনকে প্রবিষ্ট করাও। তুমিই জীবিত হইতে মৃতকে এবং মৃত হইতে জীবিতকে আনয়ন কর। তুমি যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে অপরিমিত অন্ন দান কর।

মুসলমানের পক্ষে মুসলমান ব্যতীত কোন কাফিরের সহিত মিত্রতা করা উচিত নহে। এমন কাৰ্য্য ঈশ্বরের অনুমোদিত নহে। যদি তোমরা আল্লাহকে চাও তবে আমার অনুসরণ কর। তাহার ইচ্ছা হইলে তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করিবেন। নিশ্চয় তিনি করুণাময়।” ম০১। সি০ ৩। সূ০ ৩। আ০ ২৫-২৮। ৩১ ৷

সমীক্ষক –যদি প্রত্যেক জীবকে তাহার সম্পূর্ণ কর্মফল দেওয়া হয়, তাহা হইলে ক্ষমা করা হয় না;আবার ক্ষমা করা হইলে সম্পূর্ণ কর্মফল দেওয়া হয় না এবং দেওয়া হইলে অন্যায় হইবে। উত্তম কর্ম ব্যতীত রাজ্য দান করাও তাঁহার পক্ষে অন্যায়। এবং বিনা পাপে রাজ্য ও প্রতিষ্ঠা ছিনাইয়া লওয়াও অন্যায় হইবে।

ভাল, কখনও কি মৃত জীবিত এবং জীবিত মৃত হইতে পারে? ঈশ্বরের ব্যবস্থা অচ্ছেদ্য ও অভেদ্য, তাহার কোন পরিবর্তন হইতে পারে না। পক্ষপাত দেখুন, যাহারা মুসলমান মতাবলম্বী নহে তাহাদিগকে কাফির বলা, তাহাদের মধ্যে যাহারা শ্রেষ্ঠ তাহাদের সহিত মিত্ৰতা করিতে। নিষেধ করা এবং দুষ্টপ্রকৃতি মুসলমানের সহিত মিত্ৰতা করিতে উপদেশ প্রদান করা ঈশ্বরত্বের বহির্ভূত। এই কারণেই খুদা এবং মুসলমানগণ অজ্ঞ ও পক্ষপাতী। এই কারণেই মুসলমানেরা অন্ধকারে রহিয়াছেন।

আবার মহম্মদ সাহেবের লীলাখেলা দেখুন। তিনি বলিতেছেন “তোমরা যদি আমার পক্ষে থাক, তবে খুদা তোমাদের পক্ষে থাকিবেন। তোমরা পক্ষপাতরূপ পাপ করিলে তিনি ক্ষমাও করিবেন”। এতদ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে, মহম্মদ সাহেবের অন্তঃকরণ পবিত্র ছিল না, তাই তিনি স্বীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কুরাণ রচনা করিয়াছেন কিংবা করাইয়াছেন ৷৫০ ॥

৫১ ।”যখন ফেরিস্তাগণ বলিলেন, ‘মেরি! আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করিয়াছেন এবং জগতের সকল নারী অপেক্ষা তোমাকেই পবিত্র করিয়াছেন”। মং১। সি০৩। সূ০ ৩। আ০ ৪১ ॥

সমীক্ষক –ভাল, আজকাল খুদা কিংবা তাহার কোন ফেরিস্তা কাহারও সহিত কথোপকথন করিতে আসেন না, পূর্বে কীরূপে আসিতেন? যদি বলা হয় যে, পূর্বকালে লোকেরা পুণ্যাত্মা ছিলেন, এখনকার লোকেরা পুণ্যত্মা নহেন, এই কারণে আসেন না; তহে তাহাও মিথ্যা। যে সময়ে খ্রীষ্টান ও মুসলমান মতের উৎপত্তি হয়, সে সময় ঐ সকল দেশের বন্য ও অজ্ঞ লোক অধিক ছিল। তজ্জন্য এ সকল বিজ্ঞান বিরুদ্ধ মত প্রচলিত হইয়াছিল। এখনকার দিনে বহুলোক সুশিক্ষিত; সুতরাং এ সকল সাম্প্রদায়িক মত চলিতে পারে না। এ সকল অসার মত বৃদ্ধি পাওয়া দুরে থাকুক দিনের পর দিন লোপ পাইতেছে ॥ ৫১ ॥

৫২। “আল্লাহ তাহাকে বলিলেন –“হইয়া যাও সে হইয়া গেল। কাফিরগণ প্রতারণা করিল, আল্লাহও তাহাদের সহিত প্রতারণা করিলেন। আল্লাহ অনেক ছল চাতুরি করেন৷” ম০১। সি০ ৩। সূ০ তা আ০ ৪৭ । ৫৪।

সমীক্ষক –মুসলমানেরা সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর ব্যতীত অপর কিছুরই অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাহা হইলে খুদা কাহাকে বলিলেন? কেই বা হইয়া গেল? মুসলমানেরা সাত জন্মেও ইহার উত্তর দিতে পারিবেন না। যেহেতু উপাদান কারণ ব্যতীত কাৰ্য্য হওয়া অসম্ভব, অতএব কারণ ব্যতীত কাৰ্য্যোৎপত্তি, যেমন মাতাপিতা ছাড়াই আমার শরীর হইয়াছে এইরূপ স্বীকার করার ন্যায় অসম্ভব। যিনি প্রতারিত হন এবং প্রতারণা বা গর্ব করেন তিনি কখনও ঈশ্বর হইতে পারেন না। কোন সৎ লোকের পক্ষেও এ সকল সম্ভব নহে ॥ ৫২ ॥

৫৩। “আল্লাহ তোমাদিগকে তিন সহস্র ফেরিস্তা দ্বারা সহায়তা করিবেন। তাহা কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট হইবে না?” মং ১। সি০ ৪। সূ০ ৩। আ০ ১২৪ ॥

সমীক্ষক –যদি আল্লাহ্ তিন সহস্র স্বর্গীয় দূত দ্বারা মুসলমানদের সহায়তা করিয়া থাকেন, তাহা হইলে এখন যে বহু মুসলমান রাজ্য নষ্ট হইয়া গিয়াছে এবং যাইতেছে তজ্জন্য তিনি সহায়তা করেন না কেন? সুতরাং মুখদিগকে প্রলোভন দেখাইয়া জালে আবদ্ধ করিবার জন্য এ সকল কথা বলা হইয়াছে। ইহা নিত্যন্ত অন্যায়৷ ৫৩ ॥

৫৪। “কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদিগের সহায়তা কর। আল্লাহ তোমাদের উত্তম সহায়ক এবং কাৰ্য্যসাধক। তোমরা যদি আল্লাহের মার্গে নিহত কিংবা মৃত্যুমুখে পতিত হও তবে ঈশ্বরের দয়া অতি উত্তম জানিও ॥ ” মং ১। সি০ ৪। সূ০ ৩। আ০ ১৪৭। ১৫০।১৫৭

সমীক্ষক –এখন মুসলমানদের ভ্রম দেখুন। তাহারা ভিন্নমতাবলম্বীদিগকে বধ করিবার জন্য খুদার নিকট প্রার্থনা করেন। ঈশ্বর কিনির্বোধ যে তাঁহাদের প্রার্থনা স্বীকার করিবেন। খুদামুসলমানদের কাৰ্য্যকৰ্ত্তা হইলে, তাহাদের কাৰ্য্যও নষ্ট হয় কেন? দেখা যাইতেছে, যে, খুদাও তাহাদের প্রতি মোহাসক্ত। যিনি এরূপ পক্ষপাতী, তিনি ধর্মাত্মাদিগের উপাস্য হইতে পারেন না ॥৫৪ ॥

৫৫। “আল্লাহ তোমাদিগকে পরোক্ষ-জ্ঞাতারূপে সৃষ্টি করেন নাই, কিন্তু তিনি তাহার মনোনীত পয়গম্বরদিগের দ্বারা তোমাদিগকে জানান। অতএব আল্লাহ এবং তাহার রসূলকে বিশ্বাস কর।” মং ১। সি০ ৪। সূ০ ৩। আ০ ১৭৯ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানগণ খুদা ব্যতীত অপর কাহারও প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন না এবং কাহাকেও খুদার সহযোগী বলিয়া স্বীকার করেন না। তাহা হইলে পয়গম্বর সাহেবকে খুদার । অংশীদার করা হইল কেন? যেহেতু আল্লাহ পয়গম্বরকে বিশ্বাস করিতে লিখিয়াছেন, অতএব পয়গম্বর তাঁহার অংশীদার। তাহা হইলে খুদাকে ‘লাশরীক’অর্থাৎ অংশীদার বিহীন বলা সঙ্গত হয়। নাই। যদি এই অর্থ করা হয় যে, মহম্মদ সাহেবকে পয়গম্বর না করিয়া স্বয়ং তাহার অভিপ্রেত কাৰ্য্য করিতে না পারেন, তাহা হইলে তিনি শক্তিহীন ॥৫৫ ॥

৫৬। “ হে বিশ্বাসীগণ! সন্তোষ অবলম্বন কর, পরস্পরকে ধারণ কর। যুদ্ধে রত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। তাহা হইলে তোমরা মুক্তিলাভ করিবে।” মং ১। সি০ ৪। সূ০ ৩। আ০ ২০০ ॥

সমীক্ষক –এই কুরাণের খুদা এবং পয়গম্বর উভয়ই যুদ্ধপ্রিয়। যিনি যুদ্ধের আদাতা, তিনি শান্তিভঙ্গকারী। খুদা কিংবা ধর্মবিরুদ্ধ যুদ্ধ প্রভৃতিতে নামমাত্র ভয় করিলেই মুক্তি পাওয়া যায়? অবশ্য ঈশ্বরকে ভয় করা না করা সমান, তবে ধর্মবিরুদ্ধ যুদ্ধকে ভয় করা যুক্তিসঙ্গত ॥ ৫৬ ॥

৫৭। “আল্লাহের নির্ধারিত নিয়ম এই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর এবং রসুলের বাক্য মান্য করিবে, সে বহিস্তে গমন করিবে। যে স্থানে নদী প্রবাহিত হইতেছে এবং তাহা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যে ব্যক্তি আল্লাহের ও তাহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করে, সে নির্ধারিত নিয়মের বাহির হইয়া যাইবে। তাহাকে চিরস্থায়ী অগ্নিতে দগ্ধ করা হইবে; তাহার জন্য গ্লানি ও দুঃখ রহিয়াছে ॥ মং ১। সি০ ৪। সূ০ ৪। আ০ ১৩১৪ ॥

সমীক্ষক –খুদা স্বয়ং পয়গম্বর মহম্মদ সাহেবকে তাহার অংশীদার করিয়া লইয়াছেন এবং তিনিই কুরাণে তাহা লিখিয়াছেন। দেখুন, পয়গম্বর সাহেব খুদার সঙ্গে এমন জড়িয়ে পড়েছেন যে, খুদা তাহাকে বহিস্তে অংশীদার করিয়া লইয়াছেন। মুসলমানদের খুদা কোন বিষয়েই স্বতন্ত্র নহেন, সুতরাং তাহাকে “লাশরীক” বলা বৃথা। ঈশ্বরকৃত পুস্তকে এ সকল থাকা অসম্ভব ॥ ৫৭ ॥

৫৮। “আল্লাহ ত্রসরেণু পরিমাণ অন্যায়ও করেন না। যে কল্যাণজনক কাৰ্য্য করিবে, তাহাকে তিনি দ্বিগুণ দিবেন ৷” মং ২। সি০ ৫। সূ০ ৪। আ০ ৪০ ॥

সমীক্ষক –যদি খুদা একটি ত্রসরেণু পরিমাণ অন্যায় না করেন, তাহা হইলে তিনি কৃতপুণ্যের দ্বিগুণ ফল দেন কেন? তিনি মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতই বা করেন কেন? কৃতকর্মের দ্বিগুণ বা ন্যূন ফল প্রদান করা খুদার অন্যায় ॥৫৮ ॥

৫৯। “যখন তাহারা তোমার নিকট হইতে বাহিরে আসে, তখন তোমার বাক্যের বিপরীত চিন্তা করে। আল্লাহ তাহাদের পরামর্শ লিখিয়া রাখেন। তিনি তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদিগকে বিপথগামী করিয়াছেন। আল্লাহ যাহাদিগকে বিভ্রান্ত করিয়াছেন, তুমি কি তাহাদিগকে সৎপথে আনয়ন করিতে ইচ্ছা কর? কিন্তু আল্লাহ যাহাদিগকে পথভ্রষ্ট করেন, তাহারা কখনও সৎপথ প্রাপ্ত। হয় না ॥” মং ১। সি০ ৫। সূ০ ৪। আ০ ৮১। ৮৮ ।

সমীক্ষক –যদি আল্লাহ খাতা প্রস্তুত করিয়া কথাগুলি লিখিতে থাকেন, তাহা হইলে তিনি সর্বজ্ঞ নহেন। যিনি সর্বজ্ঞ তাহার খাতা লিখিবার প্রয়োজন কী? মুসলমানদের মতে শয়তান। সকলকে বিভ্রান্ত করে, তজ্জন্য সে অপরাধী। কিন্তু খুদাও যদি জীবকে পথভ্রষ্ট করেন, তাহা হইলে খুদা এবং শয়তানের প্রভেদ কোথায়? হ্যাঁ প্রভেদ এইটুকু হইতে পারে যে, খুদা বড় শয়তান। মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রবাদ আছে –যে বিভ্রান্ত করে সেই শয়তান। সুতরাং প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাহাদের খুদাও শয়তান স্থানীয় ॥ ৫৯ ॥

৬০। ”তাহারা যদি তাহাদের হস্ত রোধ না করে, তাহা হইলে তাহাদিগকে ধৃত কর, যে স্থানে। তাহাদিগকে দেখিতে পাও, সেই স্থানেই হত্যা কর। মুসলমানের পক্ষে মুসলমানকে বধ করা উচিত নহে। যদি কেহ অজ্ঞাতসারে কোন মুসলমান বধ করে, তাহা হইলে একজন মুসলমানকে দাসত্ব মুক্ত করিবে। নিহত ব্যক্তির রক্তের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ, তাহার পরিবার ক্ষমা করিলে তাহা দিতে হইবে না। কেহ জ্ঞাতসারে কোন মুসলমানকে নিহত করিলে চিরকাল নরকে বাস করিবে। তাহার উপর আল্লাহের ক্রোধ এবং ধিক্কার পতিত হইবে৷” ম০ ১। সি০ ৫। সূ০ ৪। আ০ ৯১-৯৩ ॥

সমীক্ষক –কী ঘোরতর পক্ষপাত দেখুন! যে মুসলমান নহে, তাহাকে যে স্থানে পাওয়া যাইবে, সে স্থানেই বধ করিব; কিন্তু কোন মুসলমানকে বধ করিবে না। ভ্রম বশতঃ মুসলমানকে বধ করিলে প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। কিন্তু ভিন্নধর্মাবলম্বীকে বধ করিলে স্বর্গলাভ। এমন উপদেশ রসাতলে যাউক। এমন পুস্তক, এমন পরগম্বর, এমন খুদা এবং এমন মতের দ্বারা অনিষ্ট ব্যতীত উপকার হইতে পারে না। এসকল না থাকাই ভাল। এইরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ মতবাদ হইতে দূরে থাকিয়া বেদোক্ত সমস্ত বিষয় মান্য করা উচিত। কারণ বেদে অসত্যের লেশমাত্রও নাই।

মুসলমানকে বধ করিলে নরকে গমন করিতে হয়; কোন কোন মতবাদীর মতে মুসলমানকে বধ করিলে স্বর্গলাভ হয়। এখন বলুন! এই দ্বিবিধ মতের কোনটি গ্রহণযোগ্য? এবং কোনটি ত্যাজ্য? এ সকল মূঢ়-কল্পিত মতবাদ পরিত্যাগ করিয়া বেদোক্ত ধর্ম গ্রহণ করাই সকলের কর্ত্তব্য। আৰ্যমতে অর্থাৎ উন্নতচরিত্র লোকদিগের পথে বিচরণ করা এবং দস্যু অর্থাৎ দুষ্ট প্রকৃতির লোকদিগের পথ হইতে দূরে থাকাই শ্রেয়ঃ এইরূপ লিখিত আছে ॥ ৬০ ।।

৬১। “শিক্ষা প্রকট হইবার পর যে ব্যক্তি রসুলের সহিত বিরোধ এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধ পক্ষ গ্রহণ করিয়াছে, আমি নিশ্চয় তাহাকে নরকে প্রেরণ করিব।” মং ১। সি ৫। সূ০ ৪। আ০১১৫ ॥

সমীক্ষক –খুদা ও রসুল কীরূপ পক্ষপাতী দেখুন! মহম্মদ সাহেব প্রভৃতি মনে করিতেন যে, খুদার নামে এইরূপনা লিখিলে, তাঁহাদের “মজহব”(সম্প্রদায়) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইবে না, ধন-সম্পত্তি লাভ হইবে না এবং আনন্দ ভোগ করাও চলিবে না। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, মহম্মদ সাহেব স্বার্থসিদ্ধিতে ও পরার্থনাশে নিপুণ ছিলেন। সুতরাং তিনি “আপ্ত” (ধর্মের সাক্ষাৎ দ্রষ্টা) ছিলেন না এবং তাঁহার বাক্যও আপ্ত এবং বিদ্বাদিগের দ্বারা কখনও প্রমাণরূপে গৃহীত হইতে পারে না ॥৬১ ॥

৬২। “যে ব্যক্তি আল্লাহ, ফেরিস্তাগণ, পুস্তক, রসুল এবং কয়ামত (প্রলয়) সম্বন্ধে অবিশ্বাসী হয়, সে ব্যক্তি নিশ্চয় পথভ্রষ্ট। যাহারা বিশ্বাসী হইয়া পুনরায় কাফির হয়, পরে বিশ্বাসী হয় এবং পুনরায় কাফির হয় এবং যাহাদের অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাহাদিগকে কখনও ক্ষমা করিবেন না ও সম্মার্গ প্রদর্শন করিবেন না।” মং ১। সি০ ৫। সূ০ ৪। আ০ ১৩৬, ১৩৭ ॥

সমীক্ষক — এখনও কি বলা হইবে যে, খুদা “লাশরীক”? “লাশরীক” বলিবার সঙ্গে বহু “শরীক” বা অংশীদার স্বীকার করা কি পরস্পর বিরোধী নহে?

তিনবার ক্ষমা করিবার পর খুদা কি আর ক্ষমা করেন না? তিন বার অবিশ্বাসের পর কি তিনি পথ প্রদর্শন করিবে? তিনি কি চতুর্থবারের পর আর পথ প্রদর্শন করেন না? চারি বার অবিশ্বাসী হইলে, অবিশ্বাস অনেক বৃদ্ধি পাইবে ৷৬২ ॥

৬৩। “আল্লাহ নিশ্চয় দুবৃর্ত্ত এবং কাফিরদিগকে নরকে একত্র করিবেন। নিশ্চয়, দুবৃত্তেরা আল্লাহকে প্রতারিত করে এবং আল্লাহ তাহাদিগকে প্রতারিত করেন। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা মুসলমানকে পরিত্যাগ করিয়া কাফিরের সহিত মিত্ৰতা করিও না ॥ মং ১। সি০ ৫। সূ০ ৪। আ০ ১৪০, ১৪২, ১৪৪ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানেরা স্বর্গে এবং অপর সকলে নরকে যাইবে, এ বিষয়ে প্রমাণ কী? বাহবা! যিনি দুর্বৃত্তদিগের দ্বারা প্রতারিত হন এবং নিজেও অন্যকে প্রতারিত করেন, এমন খুদা আমাদের নিকট হইতে দূরে থাকুন। তিনি প্রতারকদের সহিত মিলিত হউন এবং প্রতারকেরা। তাহার সহিত মিলিত হউক। কারণ –মাদৃশী শীতলা দেবী তাদৃশঃ খরবাহনঃ ॥

যে যেমন, তাহার সহিত তাদৃশ লোকের মিলন হইলেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। যে খুদা প্রতারক। তাঁহার উপাসকগণও প্রতারক হইবে না কেন? মুসলমান দুষ্টপ্রকৃত হইলেও তাহার সহিত মিত্রতা। করা এবং মুসলমান ছাড়া ভিন্নমতাবলম্বী সৎপ্রকৃতি হইলেও তাহার সহিত শত্রুতা করা কি কাহারও পক্ষে উচিত হইতে পারে? ॥ ৬৩ ॥

৬৪।”হে মনুষ্যগণ! নিশ্চয় পয়গম্বর পরমেশ্বরের নিকট হইতে সত্য লইয়া তোমাদের নিকট আসিয়াছেন। অতএব তোমরা তাহার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আল্লাহ একমাত্র উপাস্য।” মং ১। সি০ ৬। সূ০ ৪ আ০ ১৭০ ১৭১।

সমীক্ষক –পয়গম্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা লিখিত থাকায়, বিশ্বাস সম্বন্ধে পয়গম্বর কি খোদার “শরীক” অর্থাৎ সহযোগী হইলেন না? যদি পয়গম্বর আল্লাহের নিকট যাতায়াত করেন, তাহা হইলে আল্লাহ্ ব্যাপক নহেন, কিন্তু একদেশী। ব্যাপক না হইলে তিনি ঈশ্বরই হইতে পারেন না। কুরাণে ঈশ্বরকে হলবিশেষে সৰ্ব্বদেশী এবং স্থলবিশেষে একদেশী লেখা হইয়াছে। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, কুরাণ একজনের রচিত নহে; কিন্তু ইহার রচয়িতা বহু ব্যক্তি ॥৬৪ ॥

৬৫। “মৃত জীব, রুধির, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহারও নামে প্রদত্ত কোন বস্তু, গলবন্ধনে, যষ্টি কিংবা শৃঙ্গের আঘাতে নিহত, উপর হইতে পতিত কিংবা হিংস্র জন্তু কর্তৃক ভক্ষিত জীব তোমাদের পক্ষে হারাম (নিষিদ্ধ) করা হইয়াছে।” মং ২। সি০ ৬। সৃ০ ৫ । আ০ ৩ ॥

সমীক্ষক — কেবল এ সকল বস্তুই কি নিষিদ্ধ? আরও বহু প্রকার পশু, তির্য্যগ, জীব এবং কীট প্রভৃতি কি মুসলমানদের পক্ষে হালাল (বৈধ)? অতএব ইহা মনুষ্যের কল্পনা, ঈশ্বরের নির্দেশ নহে এবং ইহা প্রমাণরূপে গৃহীত হইতে পারে না ॥৬৫ ॥

৬৬। “আল্লাহকে যথেষ্ট ঋণদান কর। তোমাদের মধ্যে যাহা দোষজনক, আমি তাহা দূর করিব। এবং তোমাদিগকে বহিস্তে প্রেরণ করিব।” মং ২। সি০ ৬। সূ০ ৫ । আ০ ১২ ॥

সমীক্ষক — বোধ হয়, মুসলমানদের খুদার গৃহে বিশেষ ধন-সম্পত্তি নাই; নতুবা তিনি ঋণ গ্রহণ করিবেন কেন? “তোমাদিগকে কুকৰ্ম্ম হইতে মুক্ত করিয়া স্বর্গে প্রেরণ করিব” এই বলিয়া। তিনি তাহাদিগকে বিভ্রান্ত করিতেছেন কেন? এস্থলে দেখা যাইতেছে যে, মহম্মদ সাহেব খুদার নামে স্বার্থসিদ্ধি করিয়াছেন ৷৬৬ ॥

৬৭। আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা তাহা ক্ষমা করেন; যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে যন্ত্রণা দেন। যাহা আমি কাহাকেও দিই নাই, তাহা আমি তোমাদিগকে দিয়াছি। মং ২। সি০ ৬। সূ০ ৫। আ০ ১৮,২০ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানদের খুদা শয়তানের ন্যায় যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে পাপী করেন; সুতরাং তিনিও পুণ্যফলে স্বর্গে এবং পাপের ফলে নরকে গমন করেন; কেননা তিনি পাপ বা পুণ্য কাৰ্য্য করেন। যেহেতু জীব পরাধীন, অতএব যেরূপ সৈনিক সেনাপতির অধীনে থাকিয়া কাহাকেও রক্ষা, কাহাকেও বিনাশ করে, কিন্তু তাহার সদসৎ কাৰ্য্যের জন্য সৈনিকের পরিবর্তে সেনাপতি দায়ী হয়, সেইরূপ জীবও স্বকর্মের জন্য দায়ী নহে; পরমেশ্বরই দায়ী ॥৬৭ ॥

৬৮। “আল্লাহের আদেশ পালন কর এবং রসুলের আদেশ পালন কর।” মং ২। সি০ ৭। সূ০ ৫। আ০ ৯২

সমীক্ষক –দেখুন! এতদ্বারা খুদার যে “শরীক” আছে, তাহা প্রকাশ পাইতেছে। অতএব খুদাকে “লাশরীক’ মনে করা বৃথা ॥৬৮ ॥

৬৯। “পূর্বে যাহা করা হইয়াছে, আল্লাহ তাহা ক্ষমা করিয়াছেন। যদি কেহ পুনরায় কুকর্ম করে, তবে আল্লাহ তাহার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ লইবেন।” মং ২। সি০ ৭। সূ০ ৫ । আ০ ৯৫ ॥

সমীক্ষক –কৃত পাপ ক্ষমা করার অর্থ, পাপ করিতে আদেশ দিয়া পাপ বৃদ্ধি করা। যে পুস্তকে পাপ ক্ষমা করিবার কথা আছে, তাহা ঈশ্বর কিংবা বিদ্বানের রচিত নহে; কিন্তু তদ্বারা পাপের বৃদ্ধি হয়। অবশ্য, ভবিষ্যতে পাপমুক্ত থাকিবার জন্য কাহারও নিকট প্রার্থনা করা এবং পূর্বকৃত পাপ হইতে মুক্ত পাপ হইবার চেষ্টা ও অনুতাপ করা কর্তব্য। কিন্তু পাপাঁচরণ পরিত্যাগ না করিয়া কেবল অনুতাপ করিলে কোন ফল হইতে পারে না ॥৬৯ ॥

৭০। “যাহার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় নাই, সে যদি ঈশ্বর সম্বন্ধে এই মিথ্যা বলে,”আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হইয়াছে আল্লাহের ন্যায় আমিও প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করাইব’। তাহা হইলে তাহার অপেক্ষা অধিকতর পাপী আর কে আছে?” মং ২। সি০ ৭। সূ০ ৬। আ০৯৩ ॥

সমীক্ষক –এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, যখন মহম্মদ সাহেব বলিতেছেন, “ঈশ্বরের প্রেরণায় আমার নিকট কুরাণের পদাবলী আসিতেছে, তখন অপর কেহও মহম্মদ সাহেবের ন্যায় লীলা রচনা করিয়া বলিয়া থাকিবে, “আমার নিকটেও কুরাণের পদাবলী অবতরণ করিতেছে, আমাকেও পয়গম্বর বলিয়া মান্য কর”। সম্ভবতঃ মহম্মদ সাহেব তাহাকে নিরস্ত করিয়া নিজ মৰ্য্যাদা বৃদ্ধি করিবার জন্য এই উপায় অবলম্বন করিয়া থাকিবেন৷৭০ ॥

৭১। “নিশ্চয়, আমি তোমাকে উৎপন্ন এবং তোমার আকৃতি নির্মাণ করিয়াছি। আমিই ফেরিস্তাদিগকে বলিয়াছিলাম, “আদমকে দণ্ডবৎ প্রণাম কর”। তাহারা দণ্ডবৎ প্রণাম করিল, কিন্তু শয়তান দণ্ডবৎ প্রণাম করিল না। আল্লাহ বলিলেন “আমি তোমাদিগকে আজ্ঞা দিলাম; কিন্তু কে তোমাকে নিষেধ করিল যে, তুমি প্রণাম করিলে না?” শয়তান, বলিল, “আমি তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে অগ্নি হইতে, আর তাহাকে মৃত্তিকা হইতে উৎপন্ন করিয়াছ”।

আল্লাহ্ বলিলেন –“তুমি ঐ স্থান হইতে নামিয়া যাও; তুমি ঐ স্থানে থাকিয়া অহঙ্কার করিবার উপযুক্ত নহ”। শয়তান বলিল, –“যে দিন জীবগণ কবর হইতে উত্থিত হইবে, সে দিন পৰ্য্যন্ত আমার সম্বন্ধে শৈথিল্য করা হউক”। আল্লাহ বলিলেন, “নিশ্চয় তোমার সম্বন্ধে শৈথিল্য করা হইবে”। শয়তান বলিল, –“আমি শপথ করিয়া বলিতেছি যে, তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করিয়াছ, অতএব তাহাদের জন্য তোমার সম্মার্গের উপর অবস্থান করিব; কিন্তু প্রায়ই তাহাদিগকে কৃতজ্ঞ দেখিবে না”। আল্লাহ –“দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া এ স্থান হইতে বাহির হইয়া যাও; তাহাদের মধ্যে যাহারা তোমার পক্ষে যাইবে, আমি তাহাদিগকে তোমার সহিত নরকে নিক্ষেপ করিব” ॥ মং ২। সি০ ৮। সূ০ ৭। আ০ ১১-১৮ ॥

সমীক্ষক — এখন মনোনিবেশকপূর্বক খুদা ও শয়তানের কলহ শ্রবণ করুন। চাপরাসীর ন্যায় খুদার এক ফেরিস্তা ছিলেন। তিনিও খুদার নিকট হার মানিলেন না এবং খুদাও তাঁহার আত্মাকে পবিত্র করিতে পারিলেন না। পরে সে পাপী হইয়া বিদ্রোহ করিলে তিনি সেই বিদ্রোহীকে ছাড়িয়া দিলেন। পরে অনেককে পাপপথে পরিচালিত করাই তাঁহার কাৰ্য্য হইল। ইহাতে খুদা অত্যন্ত ভুল করিলেন!

যেহেতু শয়তান সকলকে কুপথে লইয়া যায় এবং খুদা শয়তানকে পথভ্রষ্ট করেন, অতএব  সিদ্ধ হইতেছে যে খুদা শয়তানের শয়তান। শয়তান খুদাকে প্রত্যক্ষ করিয়া বলিতেছে, “তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করিয়াছ”। অতএব খুদার মধ্যে পবিত্রতাও দৃষ্ট হইতেছে না; প্রত্যুত দেখা যাইতেছে যে, তিনিই সমস্ত কুকর্মের নেতা ও মূল কারণ। এমন খুদা মুসলমানদেরই হওয়া। সম্ভব, কিন্তু শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদিগের নহে।

পুনশ্চ মুসমানদের খুদা মনুষ্যের ন্যায় ফেরিস্তাদিগের সহিত কথোপকথন করেন;সুতরাং তিনি দেহধারী, অল্পজ্ঞ এবং অন্যায়কারী। এই কারণে জ্ঞানীগণ মুসলমান মত অনুমোদন করিতে পারেন না ॥৭১ ॥

৭২। “নিশ্চয়, আল্লাহ, তোমাদের প্রভু। তিনি আকাশ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে উৎপন্ন করিয়া ঊর্ধ্বলোকে সিংহাসনে আসীন হইলেন। দীনতার সহিত তোমার প্রভুকে ডাক।” মং ২। সি০ ৮। সূ০ ৭। আ০ ৫৪। ৫৫ ॥

সমীক্ষক — বেশ তো, যে ঈশ্বর ছয় দিনে জগৎ সৃষ্টি করেন এবং “অর্শ” অর্থাৎ ঊর্ধ্বলোকে জ্যোতির্ময় সিংহাসনে বিশ্রাম করেন, তিনি কি কখনও সর্বশক্তিমান এবং সর্বব্যাপকহইতে পারেন? সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান্ না হইলে তিনি খুদাও হইতে পারে না। মুসলমানদের খুদা কি বধির যে, চিৎকার করিয়া ডাকিলেই শুনিতে পান? সুতরাং এ সকল ঈশ্বরের বাক্য নহে, এবং কুরাণও ঈশ্বরকৃত নহে। খুদা ছয় দিনে জগৎ রচনা করিয়া সপ্তম দিনে সিংহাসনে বিশ্রাম করিয়া থাকেন, তাহা হইলে বোধ হয় তিনি ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তিনি কি অদ্যাবিধি ঘুমাইতেছেন, না জাগিয়া আছেন? জাগিয়া থাকিলে কোন্ কার্যে নিযুক্ত আছেন, অথবা নিষ্কর্মা হইয়া ইতস্ততঃ ভ্রমণ ও আমোদ-প্রমোদ করিতেছেন? ॥৭২ ॥

৭৩। “পৃথিবীতে কাহারও সহিত কলহ-বিবাদ করিও না।” মং০২। সি। সূ০৭। আ০ ৭৪ ॥

সমীক্ষক –ইহা তো উত্তম কথা। কিন্তু অন্যত্র “জিহাদ” (ধর্মযুদ্ধ) ও কাফির হত্যার কথাও লিখিত আছে। এখন বলুন। এসকল পরস্পর বিরোধী কি না? অতএব জানা যাইতেছে যে মহম্মদ দুর্বল অবস্থায় প্রথমোক্ত এবং শক্তিশালী অবস্থায় শেষোক্ত পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন। এস্থলে দুই প্রকার শিক্ষা পরস্পর বিরোধী, অতএব উভয়ই অসত্য ॥৭৩ ॥

৭৪। “অতঃপর মুসা একবার তার ষষ্টি নিক্ষেপ করিলেন এবং উহা প্রত্যক্ষ অজগর হইল।” মং ২ সি০ ৯। সূ০ ৭। আ০ ১০৭ ॥

সমীক্ষক –এই লিখিত বৃত্তান্ত হইতে জানা যাইতেছে যে, খুদা এবং মহম্মদ সাহেবও এ সকল অসত্য কথা বিশ্বাস করিতেন। তাহা হইলে তাঁহারা উভয়েই বিদ্বান্ ছিলেন না। চক্ষু দ্বারা দর্শন ও কর্ণ দ্বারা শ্রবণের নিয়ম কেহই পরিবর্তন করিতে পারে না। সুতরাং এ সকল ইন্দ্রজাল। মাত্র ॥৭৪ ॥

৭৫। “অতঃপর আমি তাহাদের বিরুদ্ধে বন্যা, পঙ্গপাল, মকুন, ভেক এবং রুধির প্রেরণ করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ লইলাম। তাহাদিগকে নদীতে ডুবাইয়া দিলাম এবং বনী ইস্রায়েলের সন্তানদিগকে নদী পার করিয়া দিলাম। নিশ্চয়, তাহারা যে মতে আছে, তাহা ও তাহাদের কাৰ্য্য মিথ্যা।” মং ২। সি০ ৯। সূ০ ৭ আ০ ১৩৩, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৯ ॥

সমীক্ষক –এখন দেখুন! যেমন কোন প্রতারক এই বলিয়া কাহাকেও ভয় দেখায়, “তোমাকে বধ করিবার জন্য সর্প প্রেরণ করিব, ইহাও সেইরূপ। ভাল, যে খুদা এমন পক্ষপাতী যে, একটি জাতিকে নদীতে ডুবান এবং অপর একটি জাতিকে নদী হইতে উদ্ধার করেন, তিনি অধার্মিক নহেন কেন? যে মত সহস্র সহস্র কোটি কোটি লোকের ধর্মবিশ্বাসকে মিথ্যা এবং নিজেকেই সত্য বলিয়া ঘোষণা করে, সে মতের ন্যায় মিথ্যা অপর কোন মত হইতে পারে না? কোন মত-বিশ্বাসীদের মধ্যে সকলেই ভাল, কিংবা সকলেই মন্দ হইতে পারে না। এইরূপ এক তরফা ডিক্রী দেওয়া নিত্যন্ত মুখোচিত কাৰ্য। তাঁহাদের প্রাচীন বাইবেলের মত কি মিথ্যা ছিল? কিংবা অপর কোন মতকে কি মিথ্যা বলা হইয়াছে? যদি অপর কোন মতকে মিথ্যা বলা হইয়া থাকে, তবে সে মত কোটি? কুরাণে কী নামে তাঁহার উল্লেখ আছে? ॥৭৫ ॥

৭৬। “অতএব তুমি আমাকে দেখিতে সমর্থ হইবে। তাহার প্রভু পর্বতের উপর আলোক বিস্তার এবং পর্বত চূর্ণ বিচূর্ণ করিলেন। তখন মুসা সংজ্ঞাহীন হইয়া পতিত হইলেন।” মং ২ সি০ ৯। সূ০ ৭। ১৪৩ ॥

সমীক্ষক — যিনি দৃষ্ট হন, তিনি ব্যাপক হইতে পারেন না। যদি খুদা পূর্বে এরূপ অলৌকিক কাৰ্য্য করিয়া থাকেন, তাহা হইলে বর্তমানেও সেরূপ অলৌকিক কাৰ্য্য দেখান না কেন? ইহা সর্বতোভাবে বিরুদ্ধ বলিয়া বিশ্বাসের অযোগ্য ॥ ৭৬ ॥

৭৭।”সকালে এবং বৈকালে ভয় ও দীনতার সহিত উচ্চৈঃস্বরে শব্দোচ্চারণ না করিয়া নিজ প্রভু স্মরণ কর।” ম০ ২। সি০ ৯ সূ০৭ । আ০ ২০৫।

সমীক্ষক –কুরাণে কোন কোন স্থলে উচ্চৈঃস্বরে নিজ প্রভুকে ডাকিবার, আবার কোন স্থলে মৃদুস্বরে শব্দোচ্চারণ করিয়া স্মরণ করিবার কথা লিখিত আছে। এখন বলুন, দুই প্রকার কথার মধ্যে কোটি সত্য, কোটি মিথ্যা? পরস্পর বিরুদ্ধ বাক্য উন্মাদের প্রলাপ সদৃশ। অবশ্য ভুলে কোন বিরুদ্ধ কথা বলিবার পর স্বীকার করিলে দোষ থাকে না৷৭৭ ॥

৭৮। “তাহারা তোমাকে লুণ্ঠিত দ্রব্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলে বলিও যে, তাহা আল্লাহ ও রসুলের জন্য এবং আল্লাহকে ভয় করিও।” মং ২। সি০ ৯। মূ০ ৮ । আ০ ১ ॥

সমীক্ষক –নিত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যাহারা লুণ্ঠন ও দস্যুবৃত্তি করে ও করায়, তাহারা খুদা, পয়গম্বর এবং বিশ্বাসী বলিয়া গণ্য হইবে। আবার আল্লাহকে ভয় করার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতি প্রভৃতি কুকর্মও করা হইবে, অথচ বলিতে সঙ্কোচও হইবে না, “আমাদের মত উত্তম”। অতএব হঠকারিতা করিয়া সত্য বেদমত গ্রহণ না করা অপেক্ষা নিন্দনীয় আর কী হইতে পারে? ॥ ৭৮ ॥

৭৯। “কাফিরদের মূলোচ্ছেদ করিবে। নিশ্চয়, আমি তোমাকে এক সহস্র ফেরিস্তা অনুচর দ্বারা সাহায্য এবং কাফিরদের চিত্তে ভীতি সঞ্চার করিব। তাহাদের গলদেশ এবং প্রত্যেক সন্ধি ছিন্ন কর ৷” মং ২। সি০ ৯। সূ০ ৮ । আ০ ৭,৯,১২ ॥

সমীক্ষক — খুদা ও পয়গম্বর কেমন নির্দয় দেখুন। তাহারা মুসলমান মতে অবিশ্বাসীদের মুলোচ্ছেদ ঘটাইবেন! খুদা কাফিরদের মূলোচ্ছেদ এবং গলচ্ছেদ, হস্তপদের সন্ধিচ্ছেদ করিতে আজ্ঞা দিবেন এবং সাহায্য করিবেন। এরূপ খুদা কি লঙ্কেশ্বর রাবণ অপেক্ষা কোন অংশে হীন? অবশ্য এসকল প্রবঞ্চক খুদার নহে, কুরাণ রচয়িতার; খুদার হইলে এরূপ খুদা আমাদের নিকট হইতে দূরে থাকুন এবং আমরাও তাঁহার নিকট হইতে দূরে থাকিব৷৭৯ ॥

৮০। “আল্লাহ মুসলমানদের সঙ্গে আছেন। হে বিশ্বাসী মনুষ্যগণ। তোমরা আল্লাহ ও রসূলকে ডাক, তোমরা আল্লাহ ও রসূলের ধন-সম্পত্তি এবং নিজের নিকট গচ্ছিত ধন-সম্পত্তি হরণ করিও না। আল্লাহ কপটতাপূর্ণ ষড়যন্ত্র করিতেছিলেন; তাদৃশ ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ ৷” ম০ ২। সি০ ৯। সূ০ ৮ । আ০ ২৪,২৭,২৮, ২৯, ৩০ ॥

সমীক্ষক — সমস্ত সৃষ্টির ঈশ্বর হইয়াও আল্লাহ কি মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতী? তাহা হইলে তিনি অধার্মিক। তিনি কি বধির যে, উচ্চৈঃস্বরে না ডাকিলে শুনিতে পান না? খুদার সহিত রসূলকে অংশীদার করাও কি নিত্যন্ত অন্যায় নহে? আল্লাহের কি কোন পরিপূর্ণ ধনভাণ্ডার আছে যে, তাহা হইতে ধন চুরি করা হইবে? রসূলের ধন-সম্পত্তি এবং নিজের নিকট গচ্ছিত ধন-সম্পত্তি কি চুরি করিতে হইবে? বিদ্যাহীন এবং অধ্যার্মিক লোকেরা এইরূপ উপদেশ দিতে পারে। ভাল, যে খুদা স্বয়ং প্রতারক এবং প্রতারকের সহযোগী, তাহাকে ভণ্ড ও অধ্যার্মিক বলা হইবে না কেন? অতএব কুরাণ খুদার রচিত নহে কিন্তু কোন ভণ্ড ও প্রতারকের রচিত ॥ ৮০ ॥

৮১। “ যে পৰ্য্যন্ত কাফিরগণ বলহীন থাকে এবং আল্লাহের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে পৰ্য্যন্ত তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাক।নিশ্চয় জানিও, তোমাদের লুণ্ঠিত ধন-সম্পত্তির এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ এবং রসূলের ৷” মং ২। সি০ ৯। সূ০ ৮ । আ০ ৩৯। ৪১

সমীক্ষক –মুসলমানদের খুদা ভিন্ন অন্য কে এরূপ অন্যায় যুদ্ধ করিয়া ও করাইয়া শান্তিভঙ্গ করিবে? এখন দেখুন! কেমন এই “মজহব”। আল্লাহ ও রসূলের জন্য সমস্ত জগৎকে লুণ্ঠন। করিতে ও করাইতে হইবে। ইহা কি লুণ্ঠনকারীর কাৰ্য্য নহে? লুণ্ঠিত ধন-সম্পত্তির অংশীদার। হইলে খুদাকেও দস্যুবৃত্তির অপরাধী হইতে হয়। এমন লুণ্ঠনকারীর প্রতি পক্ষপাত করিলে ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বও খর্ব হয়। বড়ই আশ্চর্যের বিষয়, জগতে অশান্তি উপদ্রব বিস্তার করিয়া মনুষ্যদিগকে দুঃখে । নিপাতিত করিবার জন্য এরূপ পুস্তক, এরূপ খুদা, এরূপ পয়গম্বরের আগমন কোথা হইতে। হইল? এরূপ মত প্রচলিত না হইলে জগদ্বাসী আনন্দে থাকিত ॥ ৮১ ॥

৮২। “যদি তোমরা কখনও দেখিতে, তবে জানিতে কীরূপে ফেরিস্তাগণ কাফিরদের শরীর হইতে আত্মা বহির্গত করে; কীরূপে তাহাদের মুখে ও পৃষ্ঠে প্রহার করে এবং কীরূপে কাফিরগণ নরকাগ্নির দহন-জ্বালা সহ্য করে! তাহাদের পাপের জন্য আমি তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছি। আমি ফেরাউনের স্বজাতীয়দিগকে ডুবাইয়াছি। তোমরা তাহাদের জন্য যাহা করিতে পার, তজ্জন্য প্রস্তুত হও।” মং২। সি ০ ৯। সূ০ ৮ । আ০ ৫০। ৫৪৬০ ॥

সমীক্ষক –বর্তমান যুগে যখন রাশিয়া রোমের এবং ইংলণ্ড মিশরের দুর্দশা উপস্থিত করিল, তখন ফেরিস্তারা কোথায় নিদ্রিত ছিলেন? যদি ইহা সত্য হয় যে, পূর্বে খুদা তাহার সেবকদের শত্রুকে বধ করিতেন এবং ডুবাইয়া দিতেন; তবে আজকালও সেরূপ করুন। কিন্তু আজকাল আর তাহা হয় না। সুতরাং এ সকল বিশ্বাসযোগ্য নহে ॥

দেখুন! ইহা কীরূপ জঘন্য আদেশ যে, বিশ্বাসীগণ অবিশ্বাসীদের উপর যথাসাধ্য অত্যাচার করিবে? কোন্ বিদ্বান, ধার্মিক এবং দয়ালু এরূপ আদেশ দিতে পারেন না; তথাপি লিখিত হইয়াছে যে, খুদা দয়ালু এবং ন্যায়কারী। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, ন্যায় এবং দয়া প্রভৃতি সদ্গুণ মুসলমানদের খুদা হইতে বহুদূরে অবস্থান করে। ॥ ৮২ ॥

৮৩। “হে নবী! আল্লাহের সাহায্য এবং মুসলমানদের মধ্যে যাহারা তোমার পক্ষে তাহাদের সাহায্য, উহা তোমার পক্ষে যথেষ্ট। হে নবী। মুসলমানদিগকে যুদ্ধের জন্য উত্তেজিত কর। অধ্যবসায় সম্পন্ন তোমাদের বিশ জন তাহাদের দুই শত জনকে পরাজিত করিতে সমর্থ হইবে। অতএব লুণ্ঠিত দ্রব্য ভোগ কর, তাহা হালাল (বৈধ) এবং পবিত্র। আল্লাহকে ভয় কর; তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু।” মং ২। সি০ ১০। সূ০ ৮ । আ০ ৬৪,৬৫,৬৯ ॥

সমীক্ষক –ইহা কীরূপ ন্যায়, বিদ্যা ও ধর্ম যে, নিজ পক্ষভুক্ত কেহ অন্যায় করিলে তাহাকে সমর্থন এবং লাভবান করিবার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে? যিনি প্রজাদের শান্তিভঙ্গ করিয়া যুদ্ধ করেন ও করান এবং লুষ্ঠিত দ্রব্যকেও বৈধ বলেন, তাঁহাকেই ক্ষমাকারী ও দয়ালু বলা হইয়াছে। ঈশ্বরের কথা দূরে থাকুক, কোন সৎলোকের পক্ষেও ইহা সত্য হইতে পারে না। এতদ্বারা জানা। যাইতেছে যে, কুরাণ ঈশ্বরের বাণী নহে৷৮৩ ॥

৮৪। তন্মধ্যে তাহারা চিরকাল থাকিবে। আল্লাহের নিকট পুণ্যের মহান্ পুরস্কার আছে। হে ধর্মবিশ্বাসীগণ! তোমাদের পিতৃ ও ভ্রাতৃগণ কাফিরদের সহিত মিত্ৰতা করিলে তাহাদিগকে মিত্র মনে করিও না। আল্লাহতাহার রসূল এবং মুসলমানদের প্রতি সান্ত্বনা প্রেরণ করিয়াছেন। পরমেশ্বর যে সৈন্য প্রেরণ করিয়াছেন; তোমরা তাহা দেখ নাই। তিনি অবিশ্বাসীদিগকে যন্ত্রণা দিয়াছেন ইহাই কাফিরদের প্রতি দণ্ড। আল্লাহ যাহাদের প্রতি ইচ্ছা, তাহাদের প্রতি বারংবার তদ্রপ করিবেন। অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।” মং ২। সি০ ১০। সূ০ ৯। ২২, ২৩, ২৬, ২৭,২৯ ॥

সমীক্ষক –আল্লাহ স্বর্গবাসীদের নিকটে অবস্থান করিলে সর্বব্যাপক কীরূপে হইতে পারেন? সর্বব্যাপক না হইলে তিনি সৃষ্টিকর্তা ও বিচারপতি হইতে পারে না। কাহাকেও তাহার পিতা, মাতা, ভ্রাতা এবং বন্ধু হইতে বিচ্ছিন্ন করা অন্যায়। অবশ্য, তাহাদের অন্যায় উপদেশ গ্রহণ করা উচিত নহে, কিন্তু সর্বদা তাহাদের সেবা করা উচিত। যদি ইহা সত্য হয় যে, খুদা পূর্বে মুসলমানদের প্রতি প্রসন্ন ছিলেন এবং তাহাদের সাহায্যর্থে সৈন্য প্রেরণ করিতেন, তাহা হইলে এখন তাহা করেন না কেন? যদি ইহাও সত্য হয় যে, খুদা পূর্বে কাফিরদিগকে দণ্ড দিতেন এবং বারংবার আক্রমণ করিতেন, তাহা হইলে এখন তিনি কোথায় গেলেন? খুদা কি যুদ্ধ ব্যতীত ধর্মস্থাপন করিতে পারেন না? এরূপ খুদাকে সর্বদা জলাঞ্জলি দেওয়া আমাদের কর্তব্য? খুদা কি একজন খেলোয়াড়? ॥৮৪

৮৫। “আল্লাহ, স্বয়ং, কিংবা আমাদের দ্বারা তোমাদিগকে দণ্ডদান করেন, আমরা তাহা। দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছি ॥ মং ২। সি০ ১০। সূ০ ৯। আ০ ৫২ ॥

সমীক্ষক — আচ্ছা, মুসলমানেরা কি ঈশ্বরের পুলিশ যে, তিনি স্বয়ং কিংবা তাহাদের দ্বারা ভিন্নমতাবলম্বীকে ধৃত করিবেন? আরও যে কোটি কোটি মনুষ্য আছে, তাহারা কি ঈশ্বরের অপ্রিয়? মুসলমানদের মধ্যে যাহারা পাপী তাহারাও কি ঈশ্বরের প্রিয়? এরূপ হইলে ইহা তো অন্ধকারাবৃত নগরীতে স্বেচ্ছাচারী নির্বোধ রাজার ব্যবস্থা। আশ্চর্যের বিষয়, বুদ্ধিমান্ মুসলমানেরাও এই ভিত্তিহীন যুক্তিবিরুদ্ধ মত বিশ্বাস করেন ॥ ৮৫ ॥

৮৬।”আল্লাহ বিশ্বাসী নরনারীদিগকে স্বর্গভোগের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। সেই স্বর্গের নিম্নভাগে নদী প্রবাহিত হইতেছে। তাহারা সর্বদা সে স্থানে অবস্থান করিবে। আদমের স্বর্গস্থ পবিত্র উদ্যানের মধ্যে তাহাদের বাসস্থান থাকিবে। কিন্তু আল্লাহের প্রসন্নতা লাভ করাই তাহাদের পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ সফলতা। মনুষ্যেরা খুদাকে উপহাস করিয়া থাকে; খুদা তাহাদিগকে বিদ্রূপ করে ॥ ” মং ২। সি০ ১০ । সূ০ ৯। আ০ ৯৭২।৭৯।

সমীক্ষক –ইহা কেবল স্বার্থসিদ্ধির জন্য খুদার নামে নরনারীদিগকে প্রলোভিত করা ব্যতীত আর কিছুই নহে। এইরূপ প্রলোভন না দেখাইলে কেহই মহম্মদ সাহেবের জালে আবদ্ধ হইত না। অন্যান্য মতবাদীরা এইরূপ করিয়া থাকে। মনুষ্যেরা পরস্পরকে উপহাস করিয়া থাকে; কিন্তু ঈশ্বরকে উপহাস করা কাহারও উচিত নহে। এই কুরাণ যেন একটি বড় খেলার বস্তু ॥ ৮৬ ॥

৮৭।”কিন্তু রসূল এবং তাহার ধর্মবিশ্বাসীগণ তাহাদের ধনপ্রাণ লইয়া জিহাদ করেন। তাঁহাদেরই কল্যাণ হইবে। তাহারা জানে না যে আল্লাহ তাহাদের হৃদয় শীলমোহর দ্বারা অবরুদ্ধ করিয়াছেন।” মং ২। সি০ ১০। সূ০ ৯। আ০ ৮৮, ৯৩ ॥ ৷

সমীক্ষক — কেমন স্বার্থপরতা দেখুন। যাহারা মহম্মদ সাহেবকে বিশ্বাস করে, তাহারাই ভাল, যাহারা বিশ্বাস করে না, তাহারাই মন্দ। ইহা কি পক্ষপাত এবং মূঢ়তা নহে? খুদা তাহাদের শীলমোহর লাগাইয়া দিয়া থাকিলে তাহারা পাপকাৰ্য্যের জন্য অপরাধী হইবে না, কিন্তু খুদাই অপরাধী হইবেন; কারণ তিনি সেই হতভাগ্যদের হৃদয় শীলমোহর দ্বারা অবরুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে সৎকর্মে বাধা দিয়েছেন। ইহা কী ভয়ঙ্কর অন্যায়! ॥ ৮৭ ॥

৮৮। “তাহাদের প্রদত্ত ধন-সম্পত্তি গ্রহণ করিয়া, তাহাদের অন্তর ও বাহির পবিত্র কর। নিশ্চয় আল্লাহ বহিস্তের বিনিময়ে মুসলমানদের জীবন ও ধন-সম্পত্তি ক্রয় করিয়াছেন। তাহারা। ঈশ্বরের মার্গে স্থিত হইয়া যুদ্ধে অপরকে নিহত করিবে এবং নিজেরাও নিহত হইবে।” মং ২। সি০ ১১। সূ০ ৯। আ০ ১০৩, ১১১ ॥

সমীক্ষক –বাহবা! মহম্মদ সাহেব গোকুলিয়া গোঁসাইদের ন্যায় কাৰ্য্য করিলেন। কারণ, ধন-সম্পত্তি গ্রহণ করিয়া পবিত্র করা গোঁসাইদেরই কাৰ্য। বাহবা! খুদা তো চমৎকার ব্যবসা। খুলিয়াছেন। তিনি মুসলমানদের হস্তে দরিদ্রদের প্রাণহরণ লাভজনক মনে করিয়াছেন। তিনি । অসহায়দিগকে হত্যা করিয়া নির্দয়দিগকে স্বর্গসুখ দান করিলেন। তাহাতে মুসলমানদের খুদা নির্দয়, অন্যায়কারী এবং বুদ্ধিমান ধার্মিকদের ঘৃণার পাত্র হইলেন ॥ ৮৮ ॥

৮৯। “ হে বিশ্বাসী মুসলমানগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিবেশী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাহারা যেন দেখিতে পায় যে, তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তা আছে। তাহারা যে প্রতি বৎসর দুই একবার। দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তাহা কি দেখিতে পায় না। তথাপি তাহারা “ তোবা” (অনুতাপ) এবং শিক্ষাগ্রহণ করে না৷” মং ২। সি০ ১১। সূ৯। আ০ ১২৩। ১২৬ ॥

সমীক্ষক –বিশ্বাসঘাতকতা দেখুন! খুদা মুসলমানদিগকে শিক্ষা দিতেছেন যে, প্রতিবেশী হউক, কিংবা কাহারও ভৃত্য হউক, যখনই সুযোগ পাইবে, তখনই তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে এবং তাহাকে আঘাত করিবে। কুরাণের ঈদৃশ লেখার জন্য মুসলমানদের দ্বারা এইরূপ কাৰ্য্য অনেক সংঘটিত হইয়াছে। যদি এখন তাঁহারা কুরাণের এ সকল উপদেশ দূষণীয় বুঝিয়া পরিত্যাগ করেন, তবে বড় ভাল হয় ॥ ৮৯ ॥

৯০। “নিশ্চয়, আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ছয় দিনে আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করিয়া সিংহাসনে বসিয়া সকল কার্যের তত্ত্বাবধানে করিতেছেন।” মং ৩। সি০ ১১। সূ০ ১০। আ০ ৩ ॥

সমীক্ষক –আসমান ও আকাশ একই পদার্থ। উহা সৃষ্ট নহে, কিন্তু অনাদি। কিন্তু কুরাণে লিখিত আছে যে, আকাশ সৃষ্ট হইয়াছে। ইহা দ্বারা জানা যাইতেছে যে, কুরাণ রচয়িতা পদার্থবিদ্যা জানিতেন না। পরমেশ্বরের কি সৃষ্টি করিতে ছয় দিন লাগে? কিন্তু “আমার আজ্ঞায় হউক এবং হইয়া গেল,” কুরাণের এই লেখা অনুসারে, ছয় দিন কখনও লাগে না। সুতরাং ছয় দিনের উল্লেখ মিথ্যা। খুদা ব্যাপক হইলে আকাশে অবস্থান করিবেন কেন? খুদা কাৰ্য্যের তত্ত্বাবধান করেন, অতএব তোমাদের খুদা মনুষ্য সদৃশ। কিন্তু যিনি সর্বজ্ঞ, তিনি কি স্থানবিশেষে অবস্থান করিয়া কাৰ্য্যের তত্ত্বাবধান করেন? এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, ঈশ্বর সম্বন্ধে অজ্ঞ বন্য মনুষ্যেরাই এই পুস্তক রচনা করিয়াছে ॥ ৯০ ॥

৯১। “মুসলমানদের জন্যই দয়া এবং উপদেশ।” মং ৩। সি০ ১১। সূ০ ১১। আ০৫৭ ॥

সমীক্ষক— খুদা কি কেবল মুসলমানদেরই? তিনি কি অন্য কাহারও নহেন? তিনি কি পক্ষপাতী যে, কেবল মুসলমানদেরই প্রতি দয়া করেন, অন্য কাহারও প্রতি দয়া করেন না? যদি বিশ্বাসী বলিতে মুসলমান বুঝায়, তবে তাহার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন নাই। খুদা যদি মুসলমান ভিন্ন অপর কাহাকেও উপদেশ না দেন, তবে তাহার জ্ঞানই বৃথা ॥৯১ ॥

৯২। “তোমাদের মধ্যে কে কর্মদক্ষ, আল্লাহ্ সে বিষয় পরীক্ষা করিতে পারেন। যদি জিজ্ঞাসা কর, মৃত্যুর পর তোমরা নিশ্চয়ই উত্থাপিত হইবে……..” মং ৩। সি০ ১২। সূ০ ১১। আ০ ৭ ॥

সমীক্ষক –খুদা কর্মের পরীক্ষা করেন; সুতরাং তিনি সর্বজ্ঞ নহেন। যদি মৃত্যুর পর উত্থাপিত করা হয়, তাহা হইলে দায়রা সুপর্দ করা হয় এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত না হওয়ার নিয়ম ভঙ্গ করা হয়। তাহাতে খুদার ঈশ্বরত্ব খর্ব হয় ॥৯২ ॥

৯৩। “বলা হইল, হে পৃথিবী! তোমার জল উদরস্থ কর, হে আকাশ। জলবর্ষণ স্থগিত কর; তখন জল শুকাইয়া গেল। হে স্বজাতিগণ। এই উষ্ট্রই তোমাদের জন্য ঈশ্বরের নিশান। অতএব উহাকে ঈশ্বরের পৃথিবীতে ছাড়িয়া দাও, সে ভোজন করিতে করিতে বিচরণ করুক।” মং ৩। সি০ ২১। সূ০ ১১ । আ০ ৪৪, ৬৪

সমীক্ষক — কেমন বালকোচিত কথা! পৃথিবী এবং আকাশ কি কথা শুনিতে পায়? বাহবা! খুদার উষ্ট্রীও আছে। তাহা হইলে উষ্ট্রও আছে, আর হস্তী, অশ্ব গর্দভপ্রভৃতিও আছে। খুদার উষ্ট্রী দ্বারা খেতের শষ্য খাওয়ান কি ভাল কথা? খুদা কি উষ্ট্রীর উপর আরোহণও করিয়া থাকেন। তবে তাহার গৃহে নবাবী জাঁকজমকও আছে ॥ ৯৩ ॥

৯৪। “যতদিন আকাশ এবং পৃথিবী থাকিবে, ততদিন তাহারা সর্বদা তন্মধ্যে অবস্থান করিবে। যাহারা ভাগ্যবান,তাহারা যতদিন আকাশ এবং পৃথিবী থাকিবে ততদিন বহিস্তে থাকিবে৷” মং ৩। সি০ ১২। সূ০ ১১। আ০ ১০৮, ১০৯ ॥

সমীক্ষক –যদি কয়ামতের পর কেহ স্বর্গে, কেহ বা নরকে চলিয়া যায়, তাহা হইলে আকাশ এবং পৃথিবী কাহার জন্য থাকিবে? আর যদি, যতদিন আকাশ এবং পৃথিবী থাকে, ততদিন স্বর্গে অথবা নরকে থাকিতে হয়, তাহা হইলে চিরকাল স্বর্গে অথবা নরকে থাকার কথা মিথ্যা। অজ্ঞ ব্যক্তিরাই এসকল কথা বলিতে পারে, ঈশ্বর কিংবা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এইরূপ বলা অসম্ভব ॥ ৯২ ॥

৯৫। “তখন ইউসুফ তাঁহার পিতাকে বলিলেন, পিতঃ! আমি একটি স্বপ্ন দেখিয়াছি ॥ ” মং ৩। সি০ ১২। সূ ১২। আ০৪ ॥

সমীক্ষক –যেহেতু এই প্রকরণ পিতাপুত্র সংবাদ রূপ আখ্যায়িকায় পরিপূর্ণ, অতএব কুরাণ ঈশ্বর রচিত নহে, কিন্তু মনুষ্য লিখিত মনুষ্যের ইতিহাস ॥৯৫৷

৯৬। ”যিনি স্তম্ভ ব্যতীত আকাশকে স্থাপন করিয়াছেন, তিনিই আল্লাহ! তোমরা তাহা দেখিতেছ। তিনি সিংহাসনে উপবেশন পূর্বক চন্দ্র সূৰ্য্যকে আজ্ঞাবহ করিয়াছেন। তিনিই পৃথিবীকে বিস্তীর্ণ এবং আকাশ হইতে জল অবতারণা করিয়াছেন; তাহাতে উপযুক্ত পরিমাণে জলধারা প্রবাহিত। হইতেছে। তিনি ইচ্ছানুসারে কাহাকেও মুক্তহস্তে আহাৰ্য্য দান করেন; কাহারও আহার্যের পরিমাণ। সঙ্কুচিত করেন ॥” মং ৩। সি০ ১৩। সূ০ ১৩। আ০ ২, ৩, ১৭, ২৬ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানদের খুদা পদার্থবিদ্যা জানিতেন না, নতুবা গুরুত্বশূন্য আকাশকে স্তম্ভের। উপরে স্থাপনের গল্পগুজব লিখিতেন না। যদি খুদা ঊর্ধ্বলোকে স্থানবিশেষে অবস্থান করেন, তবে। তিনি সর্বশক্তিমান ও সর্বব্যাপক হইতে পারেন না। তাঁহার মেঘ সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জানা থাকিলে আকাশ হইতে জল অবতারণের কথা লিখিয়া পুনরায় পৃথিবী হইতে জল উত্থাপনের কথা লিখিবেন না কেন? ইহাতে নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, কুরাণ রচয়িতা মেঘ সম্বন্ধীয়। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জানিতেন না। উত্তম ও অধম কর্ম ব্যতীত সুখ-দুঃখ প্রদান করিলে তিনি সদা পক্ষপাতী নিরক্ষর ভট্টাচাৰ্য্য ॥৯৬৷

৯৭। বল, নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাহাকে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাহারা তাহার অভিমুখী হয়, তাহাদিগকে তিনি তাহার দিকে যাইবার পথ প্রদর্শন করেন। ম০৩ সি০১৩। সূ০১৩। আ০২৭

সমীক্ষক— যখন আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাহা হইলে তাহার ও শয়তানের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? মনুষ্যকে পথভ্রষ্ট করে বলিয়া শয়তান খারাপ; যদি খুদাও তাহা করেন, তবে তাহাকেও খারাপ তথা শয়তান বলা হইবে না কেন? আর বিভ্রান্ত করিবার পাপে তিনিও নরকগামী হইবেন না কেন? ॥৯৭।

৯৮। “এইরূপ আমি আরবী ভাষায় কুরাণ প্রেরণ করিয়াছি। যদি তোমার নিকট এই জ্ঞান প্রকাশিত হইবার পর তুমি তাহাদের পক্ষ গ্রহণ কর। তুমি এই সংবাদ সকলের নিকট প্রেরণ। করিবে। এতদ্ব্যতীত তোমার অপর কোন কর্তব্য নাই। হিসাব গ্রহণের ভার আমার উপর।” মং ৩। সি০ ১৩। সূ০ ১৩। আ০ ৩৭, ৪০৷

সমীক্ষক –কোন্ দিক হইতে কুরাণ অবতীর্ণ হইয়াছে? খুদা কি উপরে থাকেন? তাহা হইলে তিনি একদেশী বলিয়া ঈশ্বরই হইতে পারেন না, কেননা তিনি সর্বত্র এক রস এবং ব্যাপক। বার্তা বহন করা বার্তাবাহকেরই কাৰ্য্য। যিনি মনুষ্যের ন্যায় একদেশী তাহারই বার্তাবাহকের প্রয়োজন। সেইরূপ হিসাব দেওয়া লওয়াও মনুষ্যের কাৰ্য্য, ঈশ্বরের নহে, কেননা ঈশ্বর সর্বজ্ঞ। সুতরাং নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, কুরাণ কোন অল্পজ্ঞ মনুষ্যের রচিত ৷৯৮ ॥

৯৯। “তিনি চন্দ্র সূর্যকে সর্বদা ঘূর্ণায়মান করিয়াছেন। নিশ্চয়, মনুষ্য অন্যায়কারী ও পাপাচারী।” মং ৩। সি০ ১৩। সূ০ ১৪। আ০ ৩৩, ৩৪ ॥

সমীক্ষক –চন্দ্র সূৰ্য্যই কি সর্বদা ভ্রমণ করে? পৃথিবী কি ভ্রমণ করে না? পৃথিবী ভ্রমণ না করিলে কয়েক বৎসরব্যাপী রাত্রি এবং দিন হইবে। মনুষ্য স্বভাবতঃ অন্যায়কারী হইলে কুরাণ। হইতে শিক্ষা গ্রহণ করা ব্যর্থ। কেননা যাহার পাপ করিবার স্বভাব তাহারা কখনও পুণ্যাত্মা হইবে না। কিন্তু পৃথিবীতে পুণ্যাত্মা এবং পাপী সর্বত্র দৃষ্ট হয়। এইরূপ উক্তি ঈশ্বর রচিত পুস্তকে থাকিতে পারে না ৷৯৯ ॥

১০০। “যখন আমি তাহাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মাণ করিব এবং তাহার মধ্যে নিজ আত্মা নিঃশ্বসিত করিব, তখন তোমরা তাহাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করিবে। শয়তান বলিল “হে আমার পালনকর্তা। যেহেতু তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করিয়াছ, অতএব আমি পৃথিবীতে তাহাদের জন্য পাপ সঞ্চিত রাখিব এবং তাহাদিগকে পথভ্রষ্ট করিব।”মং ৩। সি০১৪। সূ০ ১৫ । আ০ ২৯-৩৯।

সমীক্ষক –যদি খুদা নিজ আত্মা আদম সাহেবের মধ্যে নিঃশ্বসিত করিয়া থাকেন, তাহা হইলে আদম সাহেবও খুদা হইলেন। তিনি খুদা না হইলে সিজদা অর্থাৎ প্রণিপাত প্রভৃতি ভক্তি প্রদর্শন বিষয়ে খুদা তাহাকে নিজের সহযোগী করিলেন কেন? যেহেতু খুদাই শয়তানকে বিভ্রান্ত করেন, অতএব তিনি শয়তানের শয়তান, শয়তানের জ্যেষ্ঠ সহোদর এবং গুরু নহেন কেন? তোমাদের মতে শয়তান বিভ্রান্তকারী; খুদা শয়তানকে বিভ্রান্ত করিয়াছেন; শয়তানও ঈশ্বরের সাক্ষাতে বলিয়াছে, “আমি বিভ্রান্ত করিব”, তথাপি ঈশ্বর তাহাকে দণ্ডিত করিয়া কারাগারে বন্দী কিংবা বধ করিলেন না কেন?

১০১ । “নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে পয়গম্বর প্রেরণ করিয়াছি। আমার যখন ইচ্ছা তখন বলি, “তাহা হউক” এবং তাহা তৎক্ষণাৎ হইয়া যায় ॥ মং ৩। সি০ ১৪। সূ০ ১৬। আ০ ৩৬, ৪০ ॥

সমীক্ষক –যদি ঈশ্বর সকল জাতির মধ্যে পয়গম্বর প্রেরণ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে মনুষ্যমাত্রই তাহার মতানুসারে চলিতেছে, তবে কেহ কাফির হইবে কেন? তোমাদের পয়গম্বর ব্যতীত অন্য পয়গম্বরের কি সম্মান নাই? ইহা তো সর্বতোভাবে পক্ষপাতের কথা। যদি সকল দেশেই পয়গম্বর প্রেরিত হইয়া থাকেন, তবে আর্যাবর্তে কোন্ পয়গম্বর প্রেরিত হইয়াছেন? সুতরাং ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে? যখন খুদা ইচ্ছা করেন, এবং বলেন, “পৃথিবী হইয়া যাউক”; পৃথিবী জড় পদার্থ, শুনিতে পায় না, তাহা হইলে তাহার আদেশ কীরূপে প্রতিপালিত হয়? যদি তখন খুদা ব্যতীত অপর কোন বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকৃত না হয়, তবে কে শুনিল? কীই বা হইয়া গেল? এ সকল অজ্ঞানের কথা অজ্ঞানীরাই বিশ্বাস করিয়া থাকে।

১০২। “তাহারা ঈশ্বরের জন্য কন্যা অর্পণ করে; কিন্তু আল্লাহ পবিত্র, তাহারা যাহা ইচ্ছা করে, তাহা তাহার মধ্যে আছে। আল্লাহের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি যে, আমি নিশ্চয় পয়গম্বর প্রেরণ করিয়াছি ॥ ” মং ৩। সি০ ১৪। সূ০ ১৬ । আ০ ৫৭,৬৩ ॥

সমীক্ষক –আল্লাহ কন্যা দ্বারা কী করিবেন? মনুষ্যেরই কন্যার প্রয়োজন। কন্যার পরিবর্তে পুত্র অর্পণ করা হয় না কেন? ইহার কারণ কী?শপথ করা ঈশ্বরের কাৰ্য্য নহে, কিন্তু মিথ্যাবাদীরই কাৰ্য। সচরাচর মিথ্যাবাদীকেই শপথ করিতে দেখা যায়। সত্যবাদী শপথ করিবে কেন? ॥১০২ ॥

১০৩। “আল্লাহ তাহাদের হৃদয়, কর্ণ এবং চক্ষু শীলমোহর দ্বারা রুদ্ধ করিয়া দিয়াছেন তাহারা ইহা জানিতে পারে না। সকল জীবকে কৃতকর্মের ফল সম্পূর্ণ দেওয়া হইবে। কাহারও প্রতি অন্যায় করা হইবে না।” মং ৩। সি০ ১৪। সূ০ ১৬। আ০ ১০৮-১১১

সমীক্ষক –খুদা স্বয়ং শীলমোহর দ্বারা রুদ্ধ করায় এ সকল লোক বিনা অপরাধে বিনষ্ট হইল। তাহাদের স্বাধীনতা হরণ করা হইল। ইহা গুরুতর অপরাধ। আবার বলা হইতেছে যে, যাহার যে পরিমাণ কম তাহাকে সেই পরিমাণ দেওয়া হইবে, ন্যূনাধিক দেওয়া হইবে না। আচ্ছা, তাহারা তো স্বাধীনভাবে পাপ করে নাই; কিন্তু খুদাই করাইয়েছেন, তাই করিয়াছে। তাহাদের কোন অপরাধ হয় নাই, তাহারা ফল পাইবে কেন? তাহাদের পরিবর্তে ঈশ্বরেরই ফল পাওয়া উচিত। আবার যদি কর্মফল সম্পূর্ণ দেওয়া হয়, তবে ক্ষমা করার কারণ কী? ক্ষমা করা হইলে ন্যায় থাকে না। এইরূপে উচ্ছঙ্খলতা ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব; কেবল নির্বোধ বালকের পক্ষেই তাহা সম্ভব ॥ ১০৩ ॥

১০৪। “আমি কাফিরদের অবরোধের জন্য নরক নির্মাণ করিয়াছি এবং প্রত্যেকের গলায় তাহার কর্মপুস্তক সংলগ্ন করিয়াছি। শেষ বিচারের দিন তাহার জন্য একখানি পুস্তক বাহির করিব; সে তাহা খোলা দেখিবে। নূহের পর আমি বহু জাতি ধ্বংস করিয়াছি ॥” মং ৪। সি০ ১৫। সূ০ ১৭। আ০ ৮,১৩১৭

সমীক্ষক –যাহারা কুরাণ, পয়গম্বর, কুরাণের খুদা, সপ্তম আকাশ এবং নমাজ প্রভৃতি বিশ্বাস করে না, তাহাদিগকে কাফির এবং নরকগামী বলা পক্ষপাত ব্যতীত আর কিছুই নহে। ইহা কি কখনও সম্ভব যে,কুরাণ-বিশ্বাসীমাত্রেই ভাল, অন্যমত-মতান্তর বিশ্বাসী মাত্রেই মন্দ? ইহা বলাও নিত্যন্ত বালকোচিত যে, প্রত্যেকের গলায় কর্মপুস্তক সংলগ্ন আছে। আমরাও কাহারও। গলায় তাহা দেখিতে পাই না। কর্মফলদানের জন্য ইহার প্রয়োজন হইলে মনুষ্যের হৃদয় এবং নেত্রাদিকে শীলমোহর দ্বারা অবরুদ্ধ করা এবং পাপ ক্ষমা করা ইত্যাদি বলিয়া কি খেলা করা হইয়াছে? কয়ামতের রাত্রিতে খুদা যে পুস্তক বাহির করিবেন, আজকাল তাহা কোথায়? খুদা কি বণিকের মত খাতা লিখিতে থাকেন? এ স্থানে বিচাৰ্য্য এই যে, জীবের পূর্বজন্ম না থাকিলে কর্মও থাকিতে পারে না, তাহা হইলে কর্মপুস্তক কীরূপে লেখা হইল? কর্ম না থাকা সত্ত্বেও লেখা হইয়া থাকিলে জীবের প্রতি অন্যায় করা হইয়াছে। সদসৎ কর্ম ব্যতীত সুখ-দুঃখ দান করা হইল কেন?

যদি বলা হয় যে, তাহা খুদার ইচ্ছা। তাহা হইলেও খুদা অন্যায় করিয়াছেন। কারণ সদসৎ কর্ম ব্যতীত ন্যূনাধিক সুখ-দুঃখস্বরূপ ফলদান করাকে অন্যায় বলে। সেই সময়ে খুদা কি নিজেই পুস্তক পাঠ করিবেন, অথবা তাহার কোন “সেরিস্তাদার” (সহপাঠী) পাঠ করিয়া শুনাইবেন? যে সকল জীব দীর্ঘকাল ধরিয়া অপেক্ষা করিতেছে, যদি খুদা বিনা অপরাধে তাহাদিগকে বধ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি অন্যায়কারী। যিনি অন্যায়কারী তিনি খুদা হইতে পারেন না ॥১০৪

১০৫। “প্রমাণ স্বরূপ, আমি সমূদকে একটি উষ্ট্রী দিয়াছি। যাহাকে পারি, তাহাকে প্রলুব্ধ করিয়াছি। সেইদিন আমি সকলকে তাহাদের দলপতির সহিত আহ্বান করিব; তাহাদের দক্ষিণ হস্তে কর্মপত্র দেওয়া হইয়াছে ॥ ” মং ৪। সি০ ১৫ । সূ০ ১৭। আ০ ৫৯,৬৪, ৭১ ॥

সমীক্ষক –বাহবা! খুদার আশ্চর্য্য নিশানগুলির মধ্যে একটি উষ্ট্রীও তাহার অস্তিত্বের প্রমাণ অথবা পরীক্ষার সাধন। যদি খুদা সকলকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য শয়তানকে আদেশ দিয়া থাকেন, তাহা হইলে খুদাই শয়তানের সর্দার এবং তিনিই সকলকে পাপে প্রবৃত্ত করেন, এইরকম খুদাকে খুদা বলা নিত্যন্ত অল্পবুদ্ধির কাৰ্য। যদি খুদা কেবল কয়ামত অর্থাৎ প্রলয়কালেই পয়গম্বর এবং তাহার মতাবলম্বীদিগকে আহ্বান করেন, তাহা হইলে প্রলয়ের পূর্ব পর্যন্ত্য সকলকে “দায়রা সোপর্দ থাকিতে হইবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত ইহা সকলের পক্ষেই দুঃখকর। এই নিমিত্ত বিচারপতির পক্ষে সত্ত্বর ন্যায়বিচার করাই শ্রেয়। এইরূপ বিচার “পোপাঁবাই” এর বিচার সদৃশ। যদি কোন বিচারপতি বলেন যে, পঞ্চম বৎসর পর্যন্ত চোর এবং সাধুরা একত্র না হওয়া পর্যন্ত কাহাকেও দণ্ড অথবা পুরস্কার দেওয়া হইবে না, তাহা হইলে ইহাও সেইরূপ কথা হইবে। যেমন একজন পঞ্চাশ বৎসর পর্যন্ত বিচারধীন রহিয়াছে, ইহার পর একজন আজই ধৃত হইল কিন্তু উভয়ের বিচার একই সময়ে হইবে। এইরূপ হওয়া উচিত নহে। ন্যায় বিচার সম্বন্ধে বেদ ও মনুস্মৃতি দেখুন। ইহাতে বিচার কাৰ্যে ক্ষণমাত্র বিলম্ব হয় না। জীবগণ স্ব স্ব কর্মানুসারে দণ্ড কিংবা পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। আচ্ছা –এরূপ পুস্তকের রচয়িতা ও উপদেষ্টা কখনও ঈশ্বর হইতে পারেন কি? কখনই নহে ॥ ১০৫ ॥

১০৬। “তাহাদের চিরবাসের জন্য উদ্যানরহিয়াছে। সেইউদ্যানের নিম্নদেশেনদী প্রবাহিত হইতেছে। তাহারা সে স্থানের সুবর্ণ কঙ্কণ এবং হরিদ্বর্ণ রেশমীবস্ত্র পরিধান করিয়া উপাধানযুক্ত সিংহাসনে উপবেশন করিবে। পুণ্য উত্তম, স্বর্গলাভও উত্তম।” মং ৪। সি০১৫। সূ০ ১৮। আ০ ৩১

সমীক্ষক –বাহবা! কুরাণের স্বর্গ কী চমৎকার! তন্মধ্যে আনন্দভোগের জন্য উদ্যান, অলঙ্কার, বস্ত্র, সিংহাসন এবং উপাধান আছে। কোন বিচারশীল ব্যক্তি এখানকার তুলনায় মুসলমানদের বহিস্তে অন্যায় ব্যতীত অন্য কিছু দেখিতে পাইবেন না। সে অন্যায় সসীম কর্মের অসীম ফল। প্রতিদিন মিষ্টান্ন ভোজন করিলে কিছুকাল পরে তাহা বিষতুল্য প্রতীয়মান হয়। সেইরূপ সর্বদা সুখ ভোগ করিলে, সুখই অবশেষে দুঃখরূপ হইয়া উঠে। এই নিমিত্ত, মহাকল্প পৰ্য্যন্ত মুক্তিসুখ ভোগ করিয়া পুনরায় জন্ম লাভ করাই সত্য সিদ্ধান্ত ॥১০৬ ॥

১০৭। “এ সকল নগরের অধিবাসীরা অন্যায় কাৰ্য্য করিলে আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করি এবং ভবিষ্যতে অন্যায় কাৰ্য্য করিলে ধ্বংস করিব বলিয়া প্রতিজ্ঞা করি।” মং ৪। সি০ ১৫ । সূ০ ১৮ । আ০ ৫৯ ॥

সমীক্ষক –আচ্ছা, কোন নগরের অধিবাসী মাত্রেরাই কি পাপী হওয়া সম্ভব? ঈশ্বর অন্যায় দেখিবার পর প্রতিজ্ঞা করেন, পূর্বে জানিতেন না; পরে প্রতিজ্ঞা করায় তিনি সর্বজ্ঞ নহেন। (ধ্বংস করায়) প্রমাণিত হইতেছে যে, তিনি নির্দয় ॥ ১০৭ ॥

১০৮। “সেই বালকের মাতা-পিতা উভয়েই বিশ্বাসী ছিলেন। এইজন্য আমাদের আশঙ্কা ছিল যে, সে তাহাদিগকে অবিশ্বাসী ও ধর্মদ্রোহী করিতে পারে। যখন তিনি সে স্থানে উপস্থিত হইলেন, তখন সূর্য অস্ত হইতেছিল। তিনি দেখিলেন যে, কর্মময় প্রস্রবণের মধ্যে সূৰ্য্য ডুবিতেছে। তাহারা বলিল, ঐজুলকরনৈন! নিশ্চয় য়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীর মধ্যে উৎপীড়নকারী।” মং ৪। সি০ ১৬। সূ০ ১৮। আ০ ৮০,৮৬, ৯৪ ॥

সমীক্ষক –দেখুন! খুদা কেমন অবুঝ। তাঁহার আশঙ্কা হইল যে,বালকের মাতা-পিতা পথভ্রষ্ট হইয়া পরিবর্তিত হইয়া যাইতে পারে। ইহা কখনও ঈশ্বরের কথা হইতে পারে না ॥

তাঁহার আরও অবুঝের কথা দেখুন। এই পুস্তকের রচয়িতা জানিতেন যে, রাত্রিকালে সূৰ্য্য কোন ঝিলের মধ্যে ডুবিয়া যায় এবং প্রাতঃকালে পুনরায় সেই ঝিল হইতে বহির্গত হয়। ভালরে ভাল, সূৰ্য্য পৃথিবী অপেক্ষা বহুগুণ বড়, সুতরাং ঝিল, নদী বা সমুদ্রের মধ্যে সূৰ্য কীরূপে ডুবিতে পারে? এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে কুরাণ রচয়িতা ভূগোল এবং খগোল বিদ্যা কিছুই জানিতেন না; নতুবা এমন বিজ্ঞান বিরুদ্ধ কথা লিখিবেন কেন? যাঁহারা এই পুস্তক বিশ্বাস করেন, তাহারাও অজ্ঞ; নতুবা এরূপ মিথ্যা পরিপূর্ণ পুস্তক বিশ্বাস করিবেন কেন?

খুদার কী অন্যায় দেখুন! তিনি পৃথিবীর স্রষ্টা, রাজা এবং বিচারপতি হইয়াও য়াজুজ-মাজুজদের পৃথিবীতে উপদ্রব করিতে দেন। ইহাও পরমেশ্বরের স্বভাব বিরুদ্ধ। অতএব বন্য লোকেরাই এই পুস্তক বিশ্বাস করে, জ্ঞানীগণ ইহা বিশ্বাস করেন না ॥১০৮ ॥

১০৯৷” এই পুস্তকে মেরীর যে বৃত্তান্ত আছে, তাহা স্মরণ কর। মেরী স্বগৃহ হইতে বহির্গত হইয়া পূর্বদিকে গমন করেন। তাঁহার পরিধানে একখানি বস্ত্র ছিল। আমি আমার আত্মা অর্থাৎ ফেরিস্তাকে প্রেরণ করি। তিনি হৃষ্ট-পুষ্ট মনুষ্যরূপ ধারণ করিয়া মেরীর নিকট উপস্থিত হন।

মেরী বলিলেন, –“আমি আত্মরক্ষার্থ দয়াময় ঈশ্বরের শরণাপন্ন হইতেছি, তাহাতে তুমি সংযত হও।” ফেরিস্তা উত্তর কহিলেন, –“আমি তোমার অধীশ্বর দ্বারা প্রেরিত, তদ্ভিন্ন অপর কেহই নাই। তোমাকে পবিত্র সন্তান দিবার জন্য আমি প্রেরিত হইয়াছি”। মেরী বলিলেন, –“কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করে নাই এবং আমি পাপাচারিণী নহি; আমার পুত্র কীরূপে হইবে?” তিনি গর্ভধারণ করিলেন এবং তাহার সহিত দূর আবাস স্থানে অর্থাৎ জঙ্গলে চলিয়া গেলেন।” মং ৪। সি০ ১৬। সূ০ ১৯। আ০ ১৬, ১৭,১৮,১৯। ২০/২২ ॥

সমীক্ষক –সুধীগণের বিচাৰ্য্য এই যে, ফেরিস্তা খুদার আত্মা; সুতরাং খুদা হইতে পৃথক নহেন। পুনশ্চ, কুমারী মেরীর সন্তানোৎপত্তি ন্যায়সঙ্গত নহে; কারণ তিনি কাহারও সংসর্গ ইচ্ছা করেন নাই; কিন্তু খুদার আদেশে ফেরিস্তা তাহাকে গর্ভবতী করিলেন। ইহা ন্যায়বিরুদ্ধ। কুরাণে আরও অনেক অশ্লীল কথা লিখিত আছে; ঐ সকল উল্লেখ করা উচিত বিবেচনা করি না ৷১০৯ ॥

১১০। “তুমি কি দেখ নাই যে কাফিরদিগকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য আমি শয়তানদিগকে প্রেরণ করিয়াছি।” মং ৪। সি০ ১৬। সূ০ ১৯। আ০ ৮৩ ॥

সমীক্ষক –যেহেতু কাফিরদিগকে পথভ্রষ্ট করিবার জন্য খুদা স্বয়ং শয়তানদিগকে প্রেরণ করেন, অতএব তাহাদের অপরাধ নাই; তাহারা দণ্ডনীয়ও নহে। খুদার আদেশে যে সকল কার্য্য হয়,খুদাই তাহার ফলভোগী হওয়া উচিত। তিনি সত্যই ন্যায়বান হন, তাহা হইলে তিনি নিজেই ঐ সকল কুকর্মের ফল স্বরূপ নরক ভোগ করুন। তিনি ন্যায় বিসর্জন দিয়া অন্যায় করেন, তিনি। অন্যায়কারী তিনি পাপী ॥১১০ ॥

১১১। “যাঁহারা ‘তোবাঃ’ বলিয়া অনুতাপ করে এবং বিশ্বাসী হইয়া সকর্মের অনুষ্ঠান করে, নিশ্চয় আমি তাহাদিগকে ক্ষমা করি৷” মং ৪। সি ০ ১৬। সূ০ ২০। আ০ ৮২ ॥

সমীক্ষক –কুরাণে লিখিত আছে যে, কেহ “তোবাঃ” বলিলে তাহার পাপ ক্ষমা করা হয়। এই উক্তি সকলকে পাপে প্রবৃত্ত করে, কেননা তাহার পাপ করিবার সাহস অনেক বৃদ্ধি পায় ॥ সুতরাং এই পুস্তক এবং উহাপাপীদের উৎসাহদাতা এবং পাপবৃদ্ধির সহায়ক। এই নিমিত্ত এই পুস্তক পরমেশ্বর কৃত নহে এবং এতদ্বর্ণিত খুদাও পরমেশ্বর হইতে পারেন না ॥১১১ ॥

১১২। “যাহাতে পৃথিবী দোদুল্যমান না হয় তজ্জন্য আমি তন্মধ্যে পর্বত নির্মাণ করিয়াছি।” মং ৪। সি০ ১৭। সূ০ ২১। আ০ ৩১ ॥

সমীক্ষক –পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ভ্রমণ করে ইত্যাদি যদি কুরাণ রচয়িতার জানা থাকিত, তাহা হইলে তিনি কখনও লিখিতেন না যে, পৰ্বতসমূহ ধারণ করায় পৃথিবী বিচলিত হয় না। তাহার মনে সংশয় উপস্থিত হইয়া থাকিবে যে, পৰ্বতসমূহ না থাকিলে পৃথিবী বিচলিত হইত! কিন্তু তাহার এরূপ বলা সত্ত্বেও ভূমিকম্পে পৃথিবী বিচলিত হয় কেন?

১১৩। “আমি সেই স্ত্রীলোকটিকে শিক্ষা দিলাম, সে তাহার গুপ্ত অঙ্গ রক্ষা করিল এবং আমি তন্মধ্যে আমার আত্মা নিঃশ্বসিত করিলাম ॥ ” মং ৪। সি০ ১৭। সূ০ ২১। আ০৯১ ॥

সমীক্ষক –এ সকল অশ্লীল কথা খুদার পুস্তকে থাকা অসম্ভব। খুদার কথা দূরে থাকুক, কোন সভ্য মনুষ্যও এ সকল কথা বলিতে পারে না। যদি মনুষ্যের পক্ষে এ সকল লেখা শোভন না হয়, তাহা হইলে পরমেশ্বরের পক্ষে কীরূপে শোভন হইতে পারে? তজ্জন্য কুরাণ দূষণীয়। কুরাণে উত্তম উপদেশ থাকিলে বেদের ন্যায় কুরাণও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

১১৪। “তুমি কি দেখ নাই যে আকাশস্থ চন্দ্র, সূৰ্য্য, তারা এবং পৃথিবীস্থ পর্বত, বৃক্ষ এবং জন্তু সকলেই আল্লাহকে দণ্ডবৎ প্রণাম করে। তাহাদিগকে সুবর্ণ কঙ্কণ, মুক্তা এবং পশমী বস্ত্র পরিতে দেওয়া হইবে। যাহারা আল্লার গৃহের চতুর্দিকে বেষ্টন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকে, তাহাদের জন্য তাহা পবিত্র রাখিবে। নিজ নিজ শরীরের ময়লা দূর করিবে; নিজেদের সংকল্প পূর্ণ করিবে এবং পুরাতন বাটীর চতুর্দিক প্রদক্ষিণ করিবে। ঈশ্বরের নাম স্মরণ করিবে।” মং সি০ ১৭। সূ০ ২২। আ০ ১৮, ২৩, ২৬, ২৯, ৩৪

সমীক্ষক –ভাল, জড় পদার্থ তো পরমেশ্বরকে জানিতেই পারে না, ভক্তি কীরূপে করিবে? অতএব এই পুস্তক কখনও ঈশ্বর কৃত হইতে পারে না, মনে হয় ইহা কোন ভ্রান্ত মনুষ্যরচিত।

বাহবা! কী চমৎকার স্বর্গ। সে স্থানে স্বর্গ ও মুক্তার অলঙ্কার এবং পরিধানের জন্য রেশমী বস্ত্র পাওয়া যায়! এই বহিস্ত এখানকার রাজপ্রাসাদ অপেক্ষা উত্তম বলিয়া মনে হয় না। যেহেতু পরমেশ্বরের বাসগৃহ আছে, সুতরাং তিনি হয়তো সেই গৃহে অবস্থানও করেন। তাহা হইলে ইহাকে পৌত্তলিকতা বলা হইবে না কেন? আর অন্য পৌত্তলিকদের খণ্ডন করিবার কারণ কী? খুদা পূজা সামগ্রী গ্রহণ করেন, নিজের বাসগৃহ প্রদক্ষিণ করিতে আদেশ দেন এবং পশুহত্যা করাইয়া মাংস ভোজনও করান, সুতরাং তিনি মন্দিরবাসী ভৈরব, দুর্গা সদৃশ, এবং ঘোরতর মূর্তিপূজার প্রবর্তক। কারণ মূৰ্ত্তি অপেক্ষা মজিদ বৃহত্তর মূর্তি। এই হেতু খুদা ও মুসলমান বৃহৎ মূর্তিপূজক এবং পৌরাণিক ও জৈনগণ ক্ষুদ্র মূর্তিপূজক ॥১১৪।

১১৫। “নিশ্চয়, শেষ বিচারের দিন, তোমরা পুনরায় উত্থাপিত হইবে।” মং ৪। সি০ ১৮। সূ০ ২৩। আ০ ১৬ ॥

সমীক্ষক –প্রলয় পর্যন্ত মৃত জীবগণ কি কবরে, না অন্য কোন স্থানে থাকিবে? যদি কবরেই থাকিতে হয়, তাহা হইলে পুণ্যাত্মারাও কি পচা, দুর্গন্ধময় শরীরে দুঃখভোগ করিবেন? ইহা ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নহে। তদ্ব্যতীত অত্যধিক দুর্গন্ধময় বশতঃ রোগেৎপত্তি হওয়ায় খুদা এবং মুসলমানগণ পাপভোগী হন ॥১১৫ ॥

১১৬। “সে দিন তাহাদের জিহ্বা এবং তাহাদের হস্তপদ তাহাদের কাৰ্য্য সমন্ধে সাক্ষ্যদান করে। আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর আলোক স্বরূপ। তাঁহার আলোক প্রাচীন সংলগ্ন দীপাধারে স্থিত এবং তারার ন্যায় দেদীপ্যমান্ কাঁচাধারে আবৃত দীপালোক সদৃশ। সেই প্রদীপ পবিত্র জৈতুন বৃক্ষের তৈলযোগে জ্বলিতে থাকে এবং সেই জৈতুন বৃক্ষ পূর্ব ও পশ্চিম দেশীয় নহে; উহা তৈল অগ্নিসংযোগ বিনাও আলোক বিস্তার করে। আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে স্বীয় জ্যোতি দ্বারা পথ প্রদর্শন করেন৷” মং ৪। সি০ ১৮ । সূ০ ১৮। আ০ ২৪, ৩৫ ॥

সমীক্ষক –হস্ত পদাদি জড় পদার্থ কখনও সাক্ষ্য দিতে পারে না। ইহা সৃষ্টিক্রম বিরুদ্ধ, সুতরাং মিথ্যা। খুদা কি অগ্নি সংযোগ কিংবা বিদ্যুৎ? যাহা উপমা দেওয়া হইতেছে তাহা ঈশ্বর সম্বন্ধে নহে, কিন্তু সাকার বস্তু সম্বন্ধেই প্রযোজ্য ॥১১৬ ॥

১১৭। আল্লাহ প্রাণীমাত্রকে জল হইতে উৎপন্ন করিয়াছেন; তন্মধ্যে কোন প্রাণী উদরের উপর ভর দিয়া চলে। যে কেহ আল্লাহ্ ও রসুলের আজ্ঞা পালন করে, তাহাকে বল, “আল্লাহ ও রসুলের আজ্ঞা পালন কর, রসূলের আজ্ঞা পালন কর যেন তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শিত হয় ॥ ” মং ৪। সি০ ১৮ । সূ০ ২৪। আ০ ৪৫, ৫২,৫৪, ৫৬ ॥

সমীক্ষক –ইহা কীরূপ ‘ফিলজফি” যে, প্রাণীদের শরীরে পঞ্চতত্ত্ব দৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বলা হইতেছে, তাহাদিগের কেবলমাত্র জল হইতে উৎপন্ন করা হইয়াছে? ইহা কেবল অবিদ্যাসূচক।

যদি আল্লাহের আদেশের সহিত পয়গম্বরের আদেশও পালন করা কর্তব্য হয়, তাহা হইলে তিনি খুদার অংশীদার হইলেন কিনা? তাহা হইলে কুরাণে খুদাকে “লাশরীক” লেখা হইল কেন? এইরূপ প্রচারই বা কর কেন? ১১৭।

১১৮। “সে দিন মেঘ দ্বারা আকাশ বিদীর্ণ হইবে এবং ফেরিস্তাদিগকেও অবতীর্ণ করা হইবে। অতএব কাফিরদের বাক্য বিশ্বাস করিও না; তাহাদের সহিত ভয়ঙ্কর কলহ বিবাদে প্রবৃত্ত হও। আল্লাহ তাহাদের কুকর্ম সমূহকে সুকর্মে পরিণত করিবেন। যে ব্যক্তি অনুতাপ ও উত্তম কর্ম করে, নিশ্চয় সে ঈশ্বরের দিকে অগ্রসর হয় ৷ মং ৪। সি০ ১৯। সূ০ ২৫ । আ০ ২৫, ৫২,৭০,৭১ ॥

সমীক্ষক — মেঘ দ্বারা আকাশ বিদীর্ণ হওয়া কখনও সত্য হইতে পারে না; কারণ আকাশ মূর্ত পদার্থ নহে যে বিদীর্ণ হইবে। মুসলমানদের কুরাণ শান্তিভঙ্গ, কলহ এবং বিদ্রোহ ঘটায়; এই নিমিত্ত ধার্মিক জ্ঞানীগণ উহার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেন না। পাপের পুণ্যে পরিণত হওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা। ইহা কি তিল ও মাসকলাই এর মত যে বদল দেওয়া যাইতে পারে? “তোবাঃ” করিলে পাপ খণ্ডন এবং ঈশ্বর লাভ হয়, তাহা হইলে কেহই পাপ করিতে ভীত হইবে না। সুতরাং এ সকল কথা বিজ্ঞান বিরুদ্ধ ॥১১৮৷

১১৯। “আমি মুসাকে প্রত্যাদেশ দিয়াছি, ‘রাত্রিকালে আমার ভৃত্যগণকে লইয়া প্রস্থান কর, নিশ্চয় তোমাদের অনুসরণ করা হইবে।‘ ফিরোন নগরের মধ্যে লোক সংগ্রহ করিবার জন্য। কর্মচারী প্রেরণ করিলেন। যিনি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনিই পথ প্রদর্শন করেন এবং তিনিই আমাকে খাদ্য ও পানীয় প্রদান করেন। আশা আছে যে, শেষ বিচারের দিন তিনি আমার অপরাধ। ক্ষমা করিবেন।” মং ৫। সি০ ১৯। সূ০ ২৬। আ০ ৫২, ৫৩, ৭৮, ৭৯, ৮২ ॥

সমীক্ষক –খুদা মুসাকে প্রত্যাদেশ প্রেরণ করিয়া থাকিলে পুনরায় দাউদ, যীশু এবং মহম্মদ সাহেবকে পুস্তক প্রেরণ করিলেন কেন? পরমেশ্বরের থাকা সর্বদা একরূপ এবং অভ্রান্ত। সুতরাং প্রত্যাদেশ প্রেরণ করিবার পর কুরাণ পৰ্য্যন্ত পুস্তক সমূহ প্রেরণ করায় বুঝিতে হইবে যে প্রথমে। পুস্তক অপূর্ণ এবং ভ্রান্তিযুক্ত ছিল। কুরাণের পূর্ববর্তী তিনটি পুস্তক সত্য হইলে নিশ্চয় কুরাণ। মিথ্যা। কারণ পরস্পর বিরোধী চারিটি পুস্তকই সর্বথা সত্য হইতে পারে না।

যদি খুদা রূহ অর্থাৎ জীব উৎপন্ন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে জীবের কি কখনও মৃত্যু অর্থাৎ অভাবও হইবে? যদি পরমেশ্বরই মনুষ্যাদি প্রাণীদিগকে খাদ্য ও পানীয় প্রদান করেন, তবে কাহারও রোগ হওয়া উচিত নহে এবং সকলকে একরূপ খাদ্য প্রদান করা কর্তব্য। পক্ষপাত করিয়া কাহাকেও উৎকৃষ্ট, কাহাকেও নিকৃষ্ট খাদ্য দেওয়া অন্যায়। উদাহরণ স্বরূপ রাজাকে উৎকৃষ্ট ও কাঙ্গালকে। নিকৃষ্ট খাদ্য দেওয়া অন্যায়। পরমেশ্বরই সকলের ভোজ্য, পানীয় ও পথ্য দাতা হইলে কাহারও রোগ হওয়া উচিত নহে। কিন্তু মুসলমানদেরও রোগ হইয়া থাকে। যদি খুদাই আরোগ্যদাতা হন, তাহা হইলে মুসলমানদের শরীরে রোগ থাকা উচিত নহে। যদি থাকে তবে খুদা পূর্ণ বৈদ্য নহেন। যদি পূর্ণ বৈদ্য হন, তবে মুসলমানদের শরীরে রোগ থাকে কেন? যদি খুদাই মৃত্যুসংঘটন ও পুনরুজ্জীবনকারী হন, তাহা হইলে পাপপুণ্য তাহারই হইয়া থাকে। জীবগণের জন্ম জন্মান্তরের কর্মানুযায়ী ব্যবস্থা হইলে খুদার কোন অপরাধই হয় না; কিন্তু ক্ষমা করিলে এবং কয়ামতের (প্রলয়) রাত্রিতে বিচার করিলে তিনি পাপের প্রশ্রয়দাতা এবং পাপী হইয়া পড়েন। আবার, তিনি যদি পাপ ক্ষমা না করেন, তবে নিশ্চয় কুরাণের উক্তি মিথ্যা হইবে ॥১১৯৷

১২০। “তুমি কেবল আমাদের ন্যায় একজন; তুমি যদি সত্যবাদী হও, তবে কোন চিহ্ন আনয়ন কর”। তিনি বললেন –“এই উষ্ট্রী একটি চিহ্ন, সে একবার জলপান করিবে।” মং ৫। সি০ ১৯। সূ০ ২৬। আ০ ১৫৪, ১৫৫ ॥

সমীক্ষক –ভাল, কেহ কি বিশ্বাস করিতে পারে যে প্রস্তর হইতে উষ্ট্রী নির্গত হয়? বন্য মনুষ্যেরাই এ সকল কথা বিশ্বাস করিয়াছিল। আবার উষ্ট্রীকে নিশান রূপে উপস্থিত করাও বন্য ব্যবহার। ইহার সহিত ঈশ্বরের কোন সম্বন্ধ নাই। এই পুস্তক ঈশ্বর কৃত হইলে তন্মধ্যে এ সকল নিরর্থক কথা থাকিত না ॥১২০ ॥

১২১। “হে মুসা! নিশ্চয় আমি সর্বশক্তিমান্ পরমেশ্বর। তোমার যষ্টি নিক্ষেপ কর। অনন্তর তিনি দেখিলেন যে, উহা সর্পাকৃতি হইয়া নড়া চড়া করিতেছে ॥

“ঈশ্বর তাহাকে বলিলেন, “ হে মুসা। ভয় পাইও না পয়গম্বর আমার সম্মুখে ভয় পায় না। আল্লাহ আছেন, দ্বিতীয় উপাস্য কেহই নাই। তিনি মহান ঊর্ধ্বলোকের অধীশ্বর। আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইও না। মুসলমান হইয়া আমার নিকট আগমন কর।” মং ৫। সি০ ২৯। সূ০ ২৭। আ০ ৯, ১০, ২৬, ৩১ ॥

সমীক্ষক –দেখুন! আল্লাহ্ নিজ মুখেই বলিতেছেন যে, তিনি মহান এবং শক্তিশালী। কোন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আত্মপ্রশংসা করেন না; খুদা কীরূপে তাহা করিতে পারেন? ইহাতেই দেখা যাইতেছে। যে, কোন বন্য মনুষ্য ইন্দ্রজাল দেখাইয়া বন্য মনুষ্যদিগকে বশীভূত করিয়া স্বয়ং বন্যস্থ খুদা হইয়া বসিলেন। এখন কথা ঈশ্বরীয় পুস্তকে কখনও হইতে পারে না। খুদা মহান্ “অর্শ” অর্থাৎ সপ্তম আকাশের অধীশ্বর হইলে একদেশী হওয়ায় ঈশ্বর হইতে পারেন না। উদ্ধত হওয়া দূষণীয় হইলে খুদা এবং মহম্মদ সাহেব আত্মপ্রশংসায় পুস্তকটি পরিপূর্ণ করিলেন কেন? মহম্মদ সাহেব বহু লোককে বধ করিয়াছেন? তাহাতে তিনি উপদ্রবী হইলেন কিনা? এই কুরাণ পুনরুক্তি এবং পূর্বাপর বিরুদ্ধ বাক্যে পরিপূর্ণ ॥১২১।

১২২। “পৰ্ব্বত সমূহ দেখিলে মনে হইবে যে, ঐ সকল দৃঢ় প্রতিষ্ঠ রহিয়াছে। ঐ সকল পর্বত মেঘের ন্যায় অপসারিত হইবে। উহাই ঈশ্বরের কর্মনৈপুণ্য। তিনি সকল বস্তুকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করিয়াছেন। তোমরা যাহা কর, তিনি তাহা জানেন এবং সে সম্বন্ধে সতর্ক থাকেন।” মং০ ৫। সি০ ২০। সূ০ ২৭। আ০ ৮৮ ॥

সমীক্ষক — সম্ভবতঃ কুরাণ রচয়িতার দেশেই পর্বত মেঘের ন্যায় সঞ্চালিত হয়, অন্য কোন দেশে তাহা হয় না। বিদ্রোহী শয়তানকে ধৃত করিয়া দণ্ড দিতে পারিলেন না; ইহা অপেক্ষা অসতর্কতার প্রমাণ আর কী হইতে পারে? ॥১২২ ॥

১২৩। “তখন মুসা তাহাকে মুষ্ট্যাঘাত করিলে তাহার আয়ু শেষ হইল। সে বলিল,-” প্রভো! আমি আমার আত্মার প্রতি অন্যায় করিয়াছি, আমাকে ক্ষমা করুন”। তখন আল্লাহ তাহাকে ক্ষমা করিলেন। আল্লাহ ক্ষমাকারী এবং দয়ালু। তোমার প্রভু যাহা ইচ্ছা ও যাহা পছন্দ করেন তাহাই সৃষ্টি করেন।” মং ৫। সি০ ২০। সূ০ ২৮ । আ০১৫। ১৬৬৮ ॥

সমীক্ষক — এখন আরও দেখুন! মুসলমান এবং খ্রীষ্টানদের খুদা এবং মুসা পরগম্বর, উভয়েই অন্যায়কারী কিনা? কেননা মুসা নরহত্যা করিলেও খুদা তাহাকে ক্ষমা করিলেন। খুদা কি ইচ্ছানুসারে সৃষ্টি করিয়া থাকেন? তিনি কি কাহাকেও রাজা, কাহাকেও দরিদ্র, কাহাকেও বিদ্বান্ এবং কাহাকেও মুখ করিয়াছেন? তাহা হইলে কুরাণ সত্য নহে এবং খুদাও অন্যায়কারী বলিয়া ঈশ্বর হইতে পারেন না ॥১২৩ ॥

১২৪। “আমি মনুষ্যকে আজ্ঞা দিয়াছি যে, মাতাপিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে; কিন্তু যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই, যদি সে বিষয়ে আমার অংশীদার হইতে ইচ্ছা করিয়া তাহারা উভয়ে তোমাকে সম্মত করিবার জন্য চেষ্টা করে, তাহা হইলে তাহাদের আদেশ পালন করিবে না; কিন্তু আমার অভিমুখী হইবে। নিশ্চয়, আমি নূহকে তাহার স্বজাতীয়দের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলাম। নূহ তাহাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম সহস্র বৎসর অবস্থান করিয়াছিল।” মং ৫। সি০ ২০। সূ০ ২৯। আ০ ৮, ১৪ ॥

সমীক্ষক –মাতাপিতার সেবা করা উত্তম কর্ম; ইহাও যুক্তিসঙ্গত যে, যদি তাহারা খুদার অংশীদার থাকা সম্বন্ধে বিশ্বাস করিতে বলেন, তবে তাহাদের আদেশ পালন করা উচিত নহে। কিন্তু তাহারা যদি মিথ্যা ভাষণাদির জন্য আদেশ করেন, তবে কি তাহা পালন করিতে হইবে? সুতরাং এ স্থলে যাহা বলা হইয়াছে, তাহার অর্ধেক ভাল, অর্ধেক মন্দ।

খুদা কি কেবল নূহ এবং পয়গম্বরদিগকেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন? তাহা হইলে অন্যান্য জীবদের প্রেরয়িতা কে? যদি খুদাই সকল জীবের প্রেরয়িতা হন তবে সকলেই পয়গম্বর হন না কেন? যদি পূর্বকালে মনুষ্যের আয়ু এক সহস্র বৎসর ছিল, তবে এখন তাহা হয় না কেন? সুতরাং ইহা সত্য নহে ॥ ১২৪৷

১২৫। “আল্লাহ প্রথম বার সৃষ্টি করেন এবং পুনরায় দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করিবেন; পরে তোমারা তাঁহার নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে। যে দিন বর্ষা অর্থাৎ শেষ বিচারের দিন আসিবে, সে দিন পাপীরা নিরাশ হইবে।

কিন্তু যাহারা বিশ্বাসী এবং যাহাদের কর্ম উত্তম, তাহাদিগকে উদ্যানের মধ্যে ভূষিত করা হইবে। আমি বার্তা প্রেরণ করিলে তোমরা তাহাদের শস্য ক্ষেত্র হরিবর্ণ (শুষ্ক) দেখিতে পাইবে। এইরূপে আল্লাহ তাহাদের চিত্ত শীলমোহর দ্বারা অবরুদ্ধ রাখেন, তাহারা তাহা বুঝিতে পারে না।” মং ৫। সি০ সূ০ ৩০। আ০ ১১, ১২, ১৫, ৫১,৫৯।

সমীক্ষক –যদি আল্লাহ দুইবার মাত্র সৃষ্টি করেন, তিন বার নহে, তাহা হইলে তিনি বোধ হয়। সৃষ্টির আদিতে এবং দ্বিতীয়বার সৃষ্টির পর নিষ্কর্মা থাকেন। সুতরাং এইরূপে দুই একবার সৃষ্টির পর তিনি অকর্মণ্য হইয়া পড়িবেন এবং তাহার শক্তিও বৃথা হইবে।

শেষ বিচাবের দিন যদি পাপীদের নিরাশ হইতে হয় ভাল কথা; কিন্তু ইহার অর্থ এই হওয়া। উচিত নহে যে, মুসলমান ব্যতীত অপর সকলকে পাপী বলিয়া নিরাশ করা হইবে। কিন্তু কুরাণে নানাস্থানে পাপী বলিতে মুসলমান ভিন্ন অন্য মতাবলম্বীদিগকেই বুঝায়।

যদি উদ্যানে বাস করা এবং বেশ-ভূষা দ্বারা শরীর সুসজ্জিত করাই মুসলমানদের স্বর্গ হয়, তাহা হইলে সেই স্বর্গ এই পৃথিবীরই সদৃশ। সুতরাং সে স্থানে উদ্যানপালক এবং স্বর্ণকারও আছে; অথবা খুদা স্বয়ং উদ্যানপালক এবং স্বর্ণকার প্রভৃতির কাৰ্য্য করিতে থাকেন।

যদি সে স্থানে কাহারও অলঙ্কার কম থাকে, তবে হয় তো সে চুরিও করে, ফলে স্বর্গ হইতে নুরকেও নিক্ষিপ্ত হয়। তাহা হইলে “সর্বদা স্বর্গে থাকিবে” এই বাক্যও মিথ্যা।

যদি খুদা কৃষকের কৃষিক্ষেত্র সম্বন্ধেও তত্ত্বাবধান করেন, তাহা হইলে কৃষিকাৰ্য্য হইতেই তিনি তাঁহার অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া থাকিবেন। যদি স্বীকার করা হয় যে, খুদা স্বকীয় জ্ঞানবলে সকল বিষয় জ্ঞাত হইয়াছেন, তাহা হইলে এইরূপ ভয় প্রদর্শন করা আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করা ব্যতীত আর কিছুই নহে। যদি আল্লাহ শীলমোহর দ্বারা জীবদের চিত্ত অবরুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে পাপানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত করেন, তবে তাহাদের পাপের জন্য তাহাদের পরিবর্তে তিনিই দায়ী। যেমন জয়-পরাজয় সৈনাধ্যক্ষেরই হইয়া থাকে, সেইরূপ উক্ত পাপ খুদারই হইবে”॥১২৫ ॥

১২৬। “সেই জ্ঞানপূর্ণ গ্রন্থের অন্তর্গত এই আয়তগুলি। তোমরা দেখিতেছ যে, আল্লাহ স্তম্ভ ব্যতীত আকাশ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং যাহাতে পৃথিবী দোদুল্যমান না হয়, তজ্জন্য তিনি তন্মধ্যে পর্বত সন্নিবিষ্ট করিয়াছেন।

তোমরা কি দেখিতে পাও না যে, আল্লাহ্ দিনের মধ্যে রাত্রি এবং রাত্রির মধ্যে দিন প্রবিষ্ট করেন?

তোমরা কি দেখিতে পাও না যে, আল্লাহের কৃপায় সমুদ্র মধ্যে জলযান সমূহ চলিতেছে? তিনি তোমাদিগকে তাঁহার এ সকল নিশান প্রদর্শন করিতেছেন।” মং ৫। সি০ ২১। সূ০ ৩১। আ০ ২, ১০, ২৯, ৩১ ॥

সমীক্ষক –বাহবা! কী জ্ঞানপূর্ণ পুস্তক। ইহাতে সর্বতোভাবে বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ভাবে আকাশের উৎপত্তি, স্তম্ভসংযোগ এবং পৃথিবীকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখিবার জন্য পর্বত-সন্নিবেশ প্রভৃতির কল্পনা বর্ণিত হইয়াছে। যাহাদের অতি সামান্য জ্ঞানও আছে, তাহারা এ সকল কথা লিখিতে ও বিশ্বাস করিতে পারে না।

আবার বিদ্যাবত্তা দেখুন! যদিও দিনের স্থানে রাত্রি এবং রাত্রির স্থানে দিন থাকিতে পারে না। তথাপি দিনের মধ্যে রাত্রি এবং রাত্রির মধ্যে দিন অনুপ্রবিষ্ট করা হয় বলিয়া লিখিত হইয়াছে। ইহা। নিতান্ত অজ্ঞতাসূচক। এই কারণে কুরাণ জ্ঞানপূর্ণ পুস্তক হইতে পারে না। মনুষ্যের ক্রিয়া-কৌশলাদি দ্বারা পরিচালিত জলযান ঈশ্বরের কৃপায় চলিতেছে বলা কি জ্ঞানবিরুদ্ধ নহে? লৌহ ও প্রস্তর নির্মিত জলযান সমুদ্রে পরিচালিত হইলে, খুদার নিশান জলমগ্ন হয় না? অতএব এই পুস্তক ঈশ্বরকৃত নহে; ইহার রচিয়তা বিদ্বাও নহেন।১২৬ ॥

১২৭। “তিনি আকাশ হইতে পৃথিবী পৰ্য্যন্ত সৃষ্টির তত্ত্বাবধান করেন। যে দিনের পরিমাণ তোমাদের গণনায় এক সহস্র বৎসর, সে দিন সমস্তই তাঁহার নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে। তিনি যাবতীয় পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ বিষয়ের জ্ঞাতা, সর্বশক্তিমান্ এবং দয়াময় ৷”।

‘পরে তিনি তাহাকে সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে নিজ আত্মা নিঃশ্বসিত করিলেন। বলা হইল যে, মৃত্যুদূত তোমাদের নিকট প্রেরিত হইবে, সেই তোমাদের আত্মাকে শরীর হইতে বহির্গত করিবে।’

আমি ইচ্ছা করিলে প্রত্যেক জীবকেই নির্দেশ দিতাম; কিন্তু যে বাক্য আমা হইতে নির্গত হইয়াছে, তাহা অবশ্য সিদ্ধ হইবে। আমি বলিয়াছি, নিশ্চয় আমি দৈত্য ও মনুষ্য দ্বারা নরক পরিপূর্ণ করিব।” মং ৫। সি০ ২১। সূ০ ৩২। আ০ ৫/৬৯।১১।১৩ ॥

সমীক্ষক — এখন সম্যকরূপে প্রমাণিত হইল যে, মুসলমানদের খুদা মনুষ্যবৎ একদেশী। ব্যাপক হইলে তাহার স্থানবিশেষ হইতে ব্যবস্থা, অবতরণ এবং আরোহণ ইত্যাদি হইতে পারে না। যদি খুদা ফেরিস্তাদের প্রেরয়িতা হন এবং আকাশে লম্বমান থাকিয়া তাহাদিগকে পরিচালিত করেন, তাহা হইলে তিনি একদেশী।

তাহা হইলে ফেরিস্তাগণ উৎকোচ গ্রহণ করিয়া কোন কাৰ্য্য নষ্ট করিলে কিংবা কোন মৃত জীবকে ছাড়িয়া দিলে তিনি কীরূপে জানিতে পারেন? অবশ্য তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বব্যাপক হইলে  জানিতে পারেন, কিন্তু খুদা তদ্রপ নহেন, নতুবা ফেরিস্তা প্রেরণ এবং নানা জনকে নানারূপ পরীক্ষা করিবার কী প্রয়োজন ছিল? পুনশ্চ এক সহস্র বৎসরে দূতগণের যাতায়াতের ব্যবস্থা হইতে জানা যাইতেছে যে, তিনি সর্বশক্তিমান নহেন।

যদি মৃত্যুদূত থাকেন, তবে সেই দূতের মৃত্যু সম্বন্ধে কী ব্যবস্থা আছে? যদি বলা হয় যে, মৃত্যুদূতও নিত্যস্থায়ী, তাহা হইলে অমরত্ব বিষয়ে তিনি খুদার সহযোগী। একজন দূতের পক্ষে একই সময়ে বহু জীবকে নরকে যাইবার জন্য আদেশ করা অসম্ভব।

যদি খুদা স্বেচ্ছায় জীবদিগকে বিনা পাপে নরকে প্রেরণ করিয়া তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কৌতুক অনুভব করেন, তবে তিনি অন্যায়কারী, পাপী এবং নির্দয়। যে পুস্তকে এইরূপ শিক্ষা দেওয়া। হইয়াছে, তাহা ঈশ্বরকৃত নহে, বিদ্বানের রচিতও নহে। যিনি দয়ালু এবং ন্যায়বান নহেন, তিনি কখনও ঈশ্বর হইতে পারেন না। ১২৭ ॥

১২৮। “বল যে, যদি মৃত কিংবা নিহত হইবার ভয়ে পলায়ন কর তবে কিছুতেই লাভবান হইবে না। হে পয়গম্বরপত্নিগণ! তোমাদের মধ্যে কেহ প্রকাশ্যে কুকর্মে লিপ্ত হইলে তজ্জন্য দ্বিগুণ যন্ত্রণা দেওয়া হইবে; তাহা ঈশ্বরের পক্ষে সহজ ॥ ” মং ৫। সি০ ২১। সূ০ ৩৩ । আ০ ১৬। ৩০

সমীক্ষক — বোধহয় মহম্মদ সাহেব এই উদ্দেশ্যে ইহা লিখিয়া বা লিখাইয়াছেন যে, কেহ যেন যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে পলায়ন না করে, অথবা মরিতে ভয় করে। তাহাতে তাহার বিজয়, ঐশ্বৰ্য্যবৃদ্ধি এবং মজহব বিস্তার হইতে পারে। পয়গম্বর পত্নিগণ নির্লজ্জ আচরণ করিবে না, কিন্তু। পয়গম্বর সাহেব কি তাহা করিবেন? এ অপরাধে তাহাদের পত্নীদের দুঃখ ভোগ করা এবং তাহার নিরাপদে থাকা কি ন্যায়সঙ্গত? ১২৮ ॥

১২৯। “তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবরুদ্ধ থাক এবং আল্লাহ ও পয়গম্বরের আদেশ পালন কর, তদ্ব্যতীত আর কিছুই নহে।

জৈদ (মহম্মদের পালিত পুত্র) তাহার পত্নী সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা স্থির করিলে আমি তোমার সহিত তাহাকে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করি, যেন বিশ্বাসীদের পক্ষে পালিত পুত্রের পত্নী সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় অবস্থা স্থিরীকৃত হইবার পর, তাহাকে বিবাহ করা অপরাধজনক না হয়। এ বিষয়ে আল্লাহের আদেশ প্রতিপালিত হইয়াছে। পয়গম্বরের নিন্দা নাই।

মহম্মদ কাহারও পিতা নহেন। যে সকল ধর্ম বিশ্বাসবতী নারী যৌতুক ব্যতীত পয়গম্বরকে স্বীয় জীবন সমর্পণ করিবে, তাহারা ধর্মানুসারে তাঁহার গ্রহণ যোগ্যা হইবে।

তাহাদের মধ্যে তুমি যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে ত্যাগ কিংবা গ্রহণ করিতে পার, তাহাতে তোমার। কোন পাপ হইবে না। হে ধর্মবিশ্বাসী মনুষ্যগণ! তোমরা পয়গম্বরের গৃহে প্রবেশ করিও না।  মং ৫। সি০ ২২। সূ০ ৩৩। আ০ ৩৩, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০, ৫০, ৫১, ৫৩ ॥

সমীক্ষক –ইহা নিত্যন্ত অন্যায় যে, নারীরা গৃহে বন্দীর ন্যায় অবরুদ্ধ এবং পুরুষেরা মুক্ত থাকিবে। বিশুদ্ধ বায়ু সেবন, বিশুদ্ধ স্থানে ভ্রমণ এবং সৃষ্টির বিবিধ পদার্থ দর্শন করিতে নারীদের কি ইচ্ছা হয় না? এই অপরাধ বশতঃ মুসলমান যুবকেরা বিশেষ ভ্রমণপ্রিয় ও বিষয়াসক্ত হইয়া থাকে।

আল্লাহ রসূলের আদেশ কি এক ও অবিরুদ্ধ, অথবা পৃথক্ ও পরস্পর বিরুদ্ধ? এক ও অবিরুদ্ধ হইলে উভয়ের আদেশ পালন করা বৃথা। পৃথক্‌ এবং বিরুদ্ধ হইলে একটি সত্য ও অপরটি মিথ্যা। তাহা হইলে একজন খুদা অন্যজন শয়তান, একজন আরেকজনের সহযোগীও হইবে! ধন্য পয়গম্বর, ধন্য কুরাণ। পরের অনিষ্ট করিয়া স্বার্থসিদ্ধি করা যাঁহার উদ্দেশ্য, তিনিই এ সকল প্রপঞ্চ রচনা করেন।

এতদ্বারা ইহাও সিদ্ধ হইতেছে যে, মহম্মদ সাহেব অত্যন্ত ইন্দ্রিয়াসক্ত ছিলেন, নতুবা পালিত পুত্রের পত্নীকে গৃহিণী করিলেন কেন? আবার যিনি এরূপ কাৰ্য্য করিলেন খুদাও তাহার প্রতি পক্ষপাতী হইয়া অন্যায়কে ন্যায় বলিয়া নির্দেশ দিলেন। বন্য-মনুষ্যেরাও পুত্রবধূকে ছাড়িয়া থাকে।

কিন্তু পয়গম্বরের বিষয়াসক্তির লীলা-খেলায় কোনরূপ প্রতিবন্ধক না থাকা কতদূর অন্যায়। যদি পয়গম্বর কাহারও পিতা ছিলেন না, তবে জৈদ কাহার পালিত পুত্র ছিল? আর ইহা লেখাই বা হইল কেন? ইহার উদ্দেশ্যও স্বার্থসিদ্ধি। তজ্জন্য পয়গম্বর সাহেব পুত্রবধূকেও গৃহিণী না করিয়া ছাড়েন নাই, তবে অন্যত্র তিনি কীরূপে আত্মরক্ষা করিবেন? এইরূপ চাতুরী দ্বারাও কুকর্মের নিন্দা দূর হইতে পারে না।

পরস্ত্রী ও পয়গম্বরের প্রতি প্রসন্ন হইয়া তাহাকে নিকাহ করিতে ইচ্ছা করিলে তাহাও কি বৈধ হইবে? আর ইহাও ঘোর অধর্ম যে, নবী যে কোন পত্নীকে পরিত্যাগ করিবেন, কিন্তু তাহার অপরাধ থাকিলেও তাহার পত্নীগণ তাহাকে পরিত্যাগ করিতে পারিবেন না।

যেমন পয়গম্বর সাহেবের গৃহে কাহারও ব্যভিচার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করা উচিত নহে, সেইরূপ পয়গম্বর সাহেবেরও কাহারও গৃহে প্রবেশ করা উচিত নহে। নবী কি নিঃশঙ্কভাবে যাহার তাহার গৃহে প্রবেশ করিবেন এবং মাননীয়ও থাকিবেন? ভাল, কোন জ্ঞানাদ্ধ কি বিশ্বাস। করিতে পারে যে,এই কুরাণ ঈশ্বরকৃত, মহম্মদ সাহেব পয়গম্বর এবং কুরাণের খুদা কি যথার্থ পরমেশ্বর? নিত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, আরব এবং অন্যান্য দেশের অধিবাসিগণ যুক্তিহীন ধর্মবিরুদ্ধ উপদেশ মানিয়া লইয়াছে ॥ ১২৯ ॥

১৩০। “পয়গম্বরকে কষ্ট দেওয়া কিংবা তাহার মৃত্যুর পর তাহার পত্নীদিগকে নিকাহ করা তোমাদের উচিত নহে। নিশ্চয় ঈশ্বরের সমক্ষে তাহা মহাপাপ। যাহারা আল্লাহ এবং তাঁহার রসূলকে যন্ত্রণা দেয় তাহারা আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত হয়।

যাহারা মুসলমান নরনারীকে উৎপীড়িত করে; নিশ্চয় তাহারা মিথ্যাচারী এবং প্রত্যক্ষ পাপের ফলভোগী। তাহারা অভিশপ্ত, তাহাদিগের যে স্থানে পাইবে, সে স্থানে ধৃত করিবে এবং নির্বিচারে হত্যা করিবে। হে আমাদের প্রভো। তাহাদিগকে দ্বিগুণ দুঃখ দাও এবং ভয়ঙ্কররূপে অভিশপ্ত কর।” মং ৫। সি০২২ সূ০ ৩৩। আ০ ৫৩, ৫৭,৫৮, ৬১, ৬৮ ॥

সমীক্ষক– বাহবা! খুদা কি ধর্মতঃ তাঁহার ঈশ্বরত্ব প্রদর্শন করিতেছেন? অবশ্য, রসূলকে উৎপীড়ন করিতে নিষেধ করা যুক্তিসঙ্গত; কিন্তু অপরকে উৎপীড়ন করিতে রসূলকেও নিষেধ করা উচিত ছিল। তাহা করা হইল না কেন? কাহাকেও কষ্ট দিলে আল্লাহ কি দুঃখিত হয়? তাহা হইলে তিনি ঈশ্বরও নহেন। কেবল আল্লাহ এবং রসূলকে কষ্ট দিতে নিষেধ করায় ইহাই কি সিদ্ধ হইতেছে না যে, আল্লাহ এবং রসূলের পক্ষে যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে দুঃখ দেওয়া উচিত?

মুসলমান এবং মুসলমান নরনারীকে দুঃখ দেওয়া যেমন দূষণীয়, অপর কাহাকেও দুঃখ দেওয়া সেইরূপ দূষণীয়। ইহা স্বীকার না করা পক্ষপাতিত্ব।

ধর্মবিপ্লবী খুদা ও নবী; ইহাদের ন্যায় নির্দয় পৃথিবীতে বড়ই বিরল। কিন্তু কুরাণে যেমন লিখিত আছে যে, মুসলমান ভিন্ন অন্য মতাবলম্বীদিগকে যে স্থানে পাইবে, সেই স্থানেই ধৃত করিয়া বধ করিবে; যদি কেহ মুসলমানের বিরুদ্ধে সেরূপ নির্দেশ দেয় তাহা কি মুসলমানের পক্ষে প্রীতিকর হইবে? পয়গম্বর প্রভৃতি কী হিংস্র প্রকৃতির! তাহারা অপরকে দ্বিগুণ যন্ত্রণা দিবার জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে উপদেশ দিয়াছেন। ইহাও পক্ষপাতিত্ব, স্বার্থপরতা এবং ঘোরতর অধর্ম। এই কারণে বর্তমান সময়েও বহু শঠ প্রকৃতির মুসলমান এরূপ কাৰ্য্য করিতে ভয় পায় না। ইহা সত্য যে। অশিক্ষিত মনুষ্য পশুর ন্যায় জীবন যাপন করে ॥১৩০ ॥

১৩১। “যিনি বায়ু-প্রেরণ, মেঘ উত্থাপন এবং মৃতগণকে নিজের নিকট আহ্বান করেন তিনিই আল্লাহ্। আমি এই রূপেই দগ্ধ পৃথিবীকে পুনর্জীবিত করি এবং এই রূপেই কবর হইতে সকলের পুনরুত্থান হইবে। তিনি নিজ কৃপাগুণে আমাদের চিরবাসের জন্য গৃহনির্মাণ করিয়াছেন। সে স্থানে। শ্ৰম আমাদিগকে স্পর্শ করে না এবং আমরা ক্লান্তি অনুভব করি না।” মং ৫। সি০ ২৩। সূ০ ৩৫। আ০ ৯, ৩৫ ॥

সমীক্ষক— বাহবা! ঈশ্বরের কী ফিলজফি! তিনি বায়ু প্রেরণ করিয়া তদ্বারা মেঘসমূহ সঞ্চালিত করেন এবং মৃতগণকে পুনর্জীবিত করেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে ইহা বলা যাইতে পারে না। কারণ তাঁহার কাৰ্য্য সর্বদা একই নিয়মে হইয়া থাকে।

গৃহ থাকিলে নিশ্চয় উহা নির্মিত হইয়াছে; নির্মাণ ব্যতীত গৃহ অসম্ভব; আবার নির্মিত বস্তু। চিরস্থায়ী হইতে পারে না। পরিশ্রম না করিলে দেহধারীকে দুঃখ ভোগ করিতে হয়। দেহধারী কখনও রোগ হইতে অব্যাহতি পায় না। এক স্ত্রীর সহিতও সংসর্গ করিলে রোগমুক্ত থাকা যায় না; বহু স্ত্রীসংসর্গে ইন্দ্রিয়সুখ সম্ভোগ করিলে কতই না দুর্দশা হয়! এই কারণে মুসলমানদের স্বর্গবাসও চিরসুখকর হইতে পারে না ॥১৩১ ॥

১৩২। “আমি জ্ঞানপূর্ণ কুরাণের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি যে তুমি সম্মার্গ প্রদর্শনার্থ। প্রেরিতদিগের মধ্যে অন্যতম। সর্বশক্তিমান্ এবং দয়াময় খুদা ইহা প্রকাশ করিয়াছেন।” মং ৯। সি০ ২৩। সূ০ ৩৬। আ০ ২-৫ ॥

সমীক্ষক –এখন দেখুন! কুরাণ ঈশ্বর প্রেরিত হইলে ঈশ্বর কুরাণের নামে শপথ করিবেন কেন? নবী খোদার প্রেরিত হইলে পালিত পুত্রের স্ত্রীর প্রতি মোহাসক্ত হইবেন কেন? কুরাণ-বিশ্বাসী। মাত্রকেই সরলমার্গগামী বলা নিরর্থক; কারণ যে পথে সত্যবিশ্বাস, সত্যবাদিত্য, সত্যানুষ্ঠান, পক্ষপাতহীনতান্যায় ও ধর্মাচরণ প্রভৃতি গুণ আছে তাহাই সরল পথ। ইহার বিপরীত পথ পরিত্যাজ্য। কুরাণ মুসলমানদের মধ্যে কিংবা মুসলমানদের খুদার আচরণে এরূপ স্বভাবের পরিচয় পাওয়া যায় না। যদি মহম্মদ সাহেব সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর হইতেন, তাহা হইলে তিনি সর্বাপেক্ষা বিদ্বান্ এবং গুণবান্ হইলেন না কেন? অতএব কুলবিক্রয়কারিণী যেমন নিজের কুলকে টক্ বলে না, ইহাও সেইরূপ। আত্মপ্রশংসা ॥১৩২।

১৩৩। “যখন সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হইবে, তখন সকলে সহসা কবর হইতে উত্থিত হইয়া। তাহাদের প্রভুর নিকট ধাবমান হইবে। চরণ তাহাদের কর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্যদান করিবে। তাহার আজ্ঞা ব্যতীত কিছুই নাই। যখন তিনি কিছু উৎপন্ন করিতে ইচ্ছা করেন, তখন বলেন, “হইয়া যাও” তখন তাহা হইয়া যায় ৷” মং ৫। সি০ ২৩। সূ০ ৩৬। আ০ ৫১, ৬৫, ৮২ ॥

সমীক্ষক –এখন এই সকল অর্থশূন্য কথা শুনুন। চরণ কি কখনও সাক্ষ্যদান করিতে পারে? সে সময়ে আজ্ঞাদাতা খুদা ব্যতীত অন্য কে ছিল? কাহাকে আজ্ঞা দেওয়া হইল? কে শুনিল? কীই বা হইয়া গেল? যদি ছিলই না, তবে ইহা মিথ্যা এবং যদি ছিল তাহা হইলে ঈশ্বর ব্যতীত কিছুই ছিল না। ঈশ্বর সকল পদার্থের সৃষ্টিকর্তা এরূপ যে বলা হইয়াছে তাহাও মিথ্যা ॥১৩৩ ॥

১৩৪। “তাহাদিগকে বিশুদ্ধ, শ্বেতবর্ণ এবং মদ্যপায়ীর আনন্দজনক মদ্যপূর্ণ পাত্র হইতে মদ্য পরিবেশন করা হইবে। তাহাদের নিকটে আবৃত অণ্ড সদৃশী, চারুনয়না অবনতমুখী রমণীগণ বসিয়া থাকিবে। আমরা কি মরিব না? লুত নিশ্চয় পয়গম্বরদিগের মধ্যে অন্যতম * * * আমি তাহাকে এবং তাহার পরিবারস্থ সকলকে মুক্তিদান করি; কিন্তু পশ্চাদ্দ্বর্তীদিগের মধ্যে এক বৃদ্ধ ছিল। অতঃপর আমি অপর সকলকে বিনাশ করি।” মং ৬। সি০ ২৩। সূ০ ৩৭। আ০ ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৪৯, ৫৬, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫।

সমীক্ষক –আচ্ছা, বলুন দেখি! এখানে মুসলমান মতে মদ্য জঘন্য পদার্থ। কিন্তু ওখানে মুসলমানদের স্বর্গে মদ্যের স্রোত প্রবাহিত। ইহার কারণ কী? অবশ্য এখানে যে, মুসলমানদিগকে মদ্যপান হইতে বিরত করা হইয়াছে, তাহা প্রশংসনীয়। কিন্তু এখানকার পরিবর্তে তাহাদের স্বর্গেও বড় দূর্গতি। স্ত্রীলোকদের জন্য কাহারও চিত্ত স্থির থাকে না এবং কঠিন রোগও হয়। স্বর্গবাসিগণ শরীরধারী হইলে নিশ্চিত মৃত্যুগ্রস্ত হইবে; শরীরধারী না হইলে ভোগবিলাসও করিতে পারিবে না সুতরাং তাহাদের স্বর্গে যাওয়াও বৃথা হইবে।

যদি লুতকে পয়গম্বর মানেন তাহা হইলে তাহাদের সম্বন্ধে বাইবেলে যে লিখিত আছে –“তাহার কন্যারা তাঁহার সহিত সমাগম করিয়া দুইটি সন্তান উৎপন্ন করিয়াছিল”, যদি তাহা বিশ্বাস করেন তবে তাদৃশ ব্যক্তিকে পয়গম্বর মানা বৃথা।

যদি খুদা এ হেন লোক এবং তাহাদের সহযোগীদিগকে মুক্তিদান করেন, তাহা হইলে তিনিও তাহাদের সদৃশ। যে খুদা বৃদ্ধার ন্যায় কাহিনী বলেন এবং পক্ষপাত করিয়া অপরকে বধ করেন, তিনি কখনও যথার্থ ঈশ্বর হইতে পারেন না। এমন খুদা কেবল মুসলমানদের গৃহেই থাকিতে পারেন, অন্যত্র নহে।।১৩৪ ॥

১৩৫। “তাহাদের চিরবাসের জন্য স্বর্গ উন্মুক্ত রহিয়াছে, তাহারা তাকিয়া লইয়া উপবেশন করিবে; তাহাদের জন্য ফল এবং পানীয় সামগ্রী আনীত হইবে এবং আয়তনয়না ও সমবয়স্কা রমণীগণ তাহাদের নিকটে অবস্থান করিবে। * * *

ফেরিস্তাগণ সকলেই প্রণিপাত করিল। কিন্তু শয়তান প্রণাম করিতে স্বীকৃত হইল না। সে ছিল কাফিরদের একজন এবং আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করিল। ঈশ্বর তাহাকে বলিলেন –“ও হে শয়তান! আমি যাহাকে দুই হস্তে নির্মাণ করিয়াছি, তাহাকে প্রণিপাত করিতে তোমার আপত্তি কী? তুমি কি বৃথা অহঙ্কারে স্ফীত হইয়াছ; তুমি কি উচ্চপদস্থদিগের মধ্যে একজন যে, এইরূপ অহঙ্কার করিলে”? শয়তান বলিল –“তুমি আমাকে অগ্নি হইতে আর তাহাকে মৃত্তিকা হইতে নির্মাণ করিয়াছ আমি তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ”। ঈশ্বর বলিলেন, –তুমি এই স্বর্গধাম হইতে দূর হও; নিশ্চয়, তুমি বিতাড়িত হইলে। নিশ্চয়, শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তোমার উপর আমার অভিসম্পাত রহিল”। শয়তান বলিল –“ প্রভো! মৃতদিগের পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত আমার সম্বন্ধে শৈথিল্য প্রদর্শন করুন”। ঈশ্বর বলিলেন –“নিশ্চয় যাহাদের সম্বন্ধে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হইবে, তুমি তাহাদের মধ্যে অন্যতম”। শয়তান বলিল, –“আমি তোমার নামে শপথ করিতেছি, নিশ্চয় আমি সকলকে পথভ্রষ্ট করিব”। মং ৬। সি০ ২৩ । সূ০ ৩৮ । আ০ ৫০-৫২,৭৩-৮২ ॥

সমীক্ষক –যদি কুরাণের বর্ণনানুসারে স্বর্গে উদ্যান, কুঞ্জ, নদী এবং বাসগৃহাদি থাকে তাহা হইলে ঐ সকল চিরকাল থাকিতেও পারে না। কারণ, সংযোগজ পদার্থের সংযোগের পূর্বে এবং ভাবী বিয়োগের অন্তে থাকা অসম্ভব। যদি স্বৰ্গই চিরকাল না থাকে তবে স্বৰ্গৰ্বাসিগণ কীরূপে থাকিবে? কুরাণে লিখিত আছে যে, স্বর্গে গদী, তাকিয়া, শুষ্ক ফল, পানীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এতদ্বারা প্রমাণিত হইতেছে যে, যে সময়ে মুসলমান মত প্রবর্তিত হয়, সে সময়ে আরব দেশ। বিশেষ সমৃদ্ধশালী ছিল না। এই নিমিত্ত মহম্মদ সাহেব তাকিয়া প্রভৃতির কথা শুনাইয়া দরিদ্রদিগকে স্বমতে আবদ্ধ করিয়াছিলেন।

যে স্থানে স্ত্রীলোক থাকে, সে স্থানে নিরবচ্ছিন্ন সুখ থাকিতে পারে না। বিশেষতঃ স্বর্গে এই স্ত্রীলোকেরা কোথা হইতে আইসে? তাহারা কি চিরস্বর্গবাসিনী, কিংবা স্থানান্তর হইতে আগতা? স্থানান্তর হইতে আগতা হইলে, নিশ্চয় আবার চলিয়া যাইবে। কিন্তু চির-স্বর্গর্বাসিনী হইলে শেষ বিচারের দিনের পূর্বে তাহারা কী করিতেছিল? তাহারা কি নিষ্কর্মা হইয়া আয়ুক্ষয় করিতেছিল?

আবার খুদার তেজস্বিতা দেখুন! ফেরিস্তাগণ সকলেই তাঁহার আদেশ মান্য করিয়া আদম। সাহেবকে প্রণিপাত করিলেন; কিন্তু শয়তান তাঁহার আদেশ পালন করিল না।

খুদা তাহাকে বলিলেন, –“আমি আমার দুই হস্ত দ্বারা তোমাকে নির্মাণ করিয়াছি; তুমি অহঙ্কার করিও না।” এতদ্বারা প্রমাণিত হইতেছে যে, কুরাণের খুদা হস্তদ্বয় বিশিষ্ট মনুষ্যবিশেষ; অতএব তিনি কখনও সর্বব্যাপী ও সর্বশক্তিমান্ হইতে পারেন না। শয়তান যথার্থই বলিয়াছিল, “আমি আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ” তাহাতে খুদা ক্রুদ্ধ হইলেন কেন? খুদার গৃহ কি কেবল আকাশেই আছে, পৃথিবীতে নাই? তাহা হইলে পূর্বে কাবাকে (মক্কার মজিদ) ঈশ্বরের গৃহ বলা হইত। কেন? পুনশ্চ পরমেশ্বর নিজেকে কীরূপে সৃষ্টি হইতে পৃথক করিলেন? সমস্ত সৃষ্টি তো তাঁহারাই। এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, কুরাণের খুদা কেবল স্বর্গেরই অধীশ্বর ॥

খুদা শয়তানকে ধিক্কার দিয়া বন্দী করিলেন। শয়তান বলিল, –“প্রভো! আমাকে প্রলয়ের দিন পর্যন্ত ছাড়িয়া দিন।” খুদা তোষামদে বশীভূত হইয়া প্রলয়ের দিন পর্যন্ত তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন। শয়তান মুক্তি পাইয়া খুদাকে বলিল “আমি এখন মনুষ্যদিগকে অত্যন্ত বিভ্রান্ত করিব এবং বিদ্রোহ করিব। তখন খুদা বলিল তুমি বিভ্রান্ত করিলে আমি তাহাদিগকে তোমার সহিত নরকে প্রেরণ করিব।”

এখন সুধিগণ বিচার করুন যে, খুদাই কি শয়তানকে বিভ্রান্ত করেন কিংবা শয়তান নিজেই বিভ্রান্ত হয়? যদি খুদাই বিভ্রান্ত করেন, তবে নিশ্চয়ই তিনি শয়তানের শয়তান। যদিশয়তান নিজে নিজেই বিভ্রান্ত হয়, তবে সকল জীবই নিজে নিজে বিভ্রান্ত হইতে পারে; শয়তানের মুক্তিদান। করায় জানা যাইতেছে যে, তিনি পাপকাৰ্য্যে শয়তানের সহযোগী। যে ব্যক্তি স্বয়ং চুরি করাইয়া। তজ্জন্য অপরকে দণ্ড দেয়, তাহার অন্যায়ের সীমা নাই৷১৩৫ ॥

১৩৬। “আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন, তিনি নিশ্চয় ক্ষমাকারী এবং দয়ালু। শেষ বিচারের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁহার মুষ্ঠির ভিতর এবং আকাশে তাহার দক্ষিণ হস্তে জড়ান থাকিবে। প্রভুর আলোকে সমস্ত পৃথিবী আলোকিত হইবে। কর্মপত্র রাখা হইবে এবং পয়গম্বর ও সাক্ষীদিগের উপস্থিতিতে বিচার মীমাংসা হইবে।” মং ৬। সি০ ২৪। সূ০ ৩৯। আ০ ৫৩। ৬৭। ৬৯।

সমীক্ষক –যদি খুদা সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন, তাহা হইলে বুঝিতে হইবে যে, তিনি সমগ্র । সংসারকে পাপে নিমগ্ন করেন এবং তিনি নির্দয়। কারণ কোন দুর্বৃত্তকে দয়া ও ক্ষমা করিলে সে । অধিকতর দুর্বৃত্ত হইয়া বহু ধর্মাত্মার দুঃখের কারণ হইবে। কিঞ্চিত্মাত্র অপরাধও ক্ষমা করা হইলে সমস্ত জগৎ অপরাধে পরিপূর্ণ হইবে।

পরমেশ্বর কি অগ্নির ন্যায় জ্যোতিঃ বিস্তার করেন? কর্মপত্র কোথায় জমা রাখা হয়? কেই বা তাহা লিখে? যদি খুদা পয়গম্বর এবং সাক্ষীদিগের উপরে নির্ভর করিয়া বিচার কাৰ্য্য সমাধা করেন, তবে তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান নহেন।

যদি তিনি ন্যায় বিচার করেন এবং কাহারও প্রতি অন্যায় না করেন, তাহা হইলে অবশ্য তিনি জীবের কর্মানুসারে করিয়া থাকেন। ঐ কর্ম সকল পূর্ব এবং বর্তমান জন্মেরও হইতে পারে। তবে আবার ক্ষমা করা, অন্তঃকরণ অবরুদ্ধ করা ‘শিক্ষাদান না করা’ শয়তান দ্বারা বিভ্রান্ত করা এবং ভাবী বিচারাধীন রাখা সৰ্ব্বতোভাবে ন্যায় বিরুদ্ধ ॥১৩৬ ॥

১৩৭। সর্বশক্তিমান্ ও সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর এই পুস্তক প্রেরণ করিয়াছেন। তিনি পাপ ক্ষমা এবং অনুতাপ স্বীকার করেন। ম০ ৬। সি০ ২৪। সূ০ ৪০ । আ০ ২, ৩ ॥

সমীক্ষক –আল্লাহের নামে নির্বোধেরা এই পুস্তক মানিয়া লউক, এই উদ্দেশ্যে ইহা বলা হইয়াছে। এই পুস্তকে কিঞ্চিৎ সত্য আছে; অবশিষ্ট সমস্তই অসত্য। কিন্তু যেটুকু সত্য আছে, তাহাও অসত্যের সংমিশ্রণে বিকৃত হইয়া রহিয়াছে। এই নিমিত্ত কুরাণ, কুরাণের খুদা এবং কুরাণ বিশ্বাসীগণ পাপ প্রবর্তক, পাপকর্মা ও পাপবৃদ্ধিকারী। পাপ ক্ষমা করা ঘোরতর অধর্ম। পাপ ক্ষমা করা হইবে, এই ধারণা বশতঃ মুসলমানেরা পাপ ও উপদ্রব করিতে ভয় পায় না ॥১৩৭

১৩৮। “তিনি দুই দিনে সপ্ত স্বর্গ নির্মাণ করিয়া প্রত্যেক স্বর্গে তদনুপযোগী আজ্ঞা প্রেরণ করিলেন। তাহারা সেস্থানে উপস্থিত হইলে তাহাদের চক্ষু, কর্ণ ও চর্ম তাহাদের কৃত কর্মের সাক্ষ্যদান করিবে। তাহারা তাহাদের চর্মকে বলিবে, “তুমি আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেছ কেন?” চর্ম বলিবে, “কারণ আল্লাহ আমাদের সকলকে ও সব বস্তুকে আহ্বান করিয়াছেন নিশ্চয় তিনি মৃতকে পুনর্জীবিত করেন।” মং ৬। সি০ ২৪। সূ০ ৪১। আ০ ১২, ২০, ২১, ৩৯।

সমীক্ষক– বাহবা! মুসলমানগণ! তোমরা যে খুদাকে সর্বশক্তিমান্ বলিয়া বিশ্বাস কর, তিনি কি দুই দিনে সাত স্বর্গ মাত্র নির্মাণ করিতে সমর্থ হইলেন? যিনি সর্বশক্তিমান্ তিনি তো মুহূর্ত মধ্যেই সব নির্মাণ করিতে পারেন।

আচ্ছা –ঈশ্বর চক্ষু,কর্ণ এবং ত্বকে জড় পদার্থ করিয়া নির্মাণ করিয়াছেন, তবে এ সকল কীরূপে সাক্ষ্যদান করিবে? যদি সাক্ষ্যই দিবে, তবে ঐ সকলকে জড়পদার্থ করিবার কারণ কী? ঈশ্বর নিজে নিয়মবিরুদ্ধ কাৰ্য্য করেন কেন?

আরও বেশী অসত্য এই যে, চর্ম জীবদিগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে জীবেরা চর্মকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি আমাদের সম্বন্ধে সাক্ষ্যদান করিলে কেন?” চর্ম উত্তর করিল, –“ঈশ্বর আমার দ্বারা সাক্ষ্যদান করাইলেন; আমি কী করিব? ভাল, ইহা কি কখনও সম্ভব? যদি কেহ বলে, “আমি বন্ধ্যার পুত্রের মুখ দেখিয়াছি,” তবে জিজ্ঞাস্য তাহা হইলে “পুত্র থাকিতে বন্ধ্যা কেন?” বন্ধ্যার পুত্র হওয়াই অসম্ভব। উক্ত বাক্যও এইরূপ মিথ্যা।

যদি ঈশ্বর মৃতকে পুনর্জীবিত করেন, তবে পূর্বে বধ করিবার কারণ কী? ঈশ্বর স্বয়ং মরিতে পারেন কি? যদি পারেন, তবে মরা দোষজনক মনে করার কারণ কী?

প্রলয় রাত্রি পর্যন্ত জীবগণ কোন মুসলমানের গৃহে অবস্থান করিবে? খুদা জীবগণের সত্বর বিচার না করিয়া বিনা অপরাধে তাহাদিগকে বিচারাধীন রাখিলেন কেন? এ সকল কথা ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব খর্ব করে ॥১৩৮ ॥

১৩৯। “তাহার নিকট আকাশ এবং পৃথিবীর চাবি আছে। তিনি ইচ্ছানুসারে কাহারও জন্য খাদ্য ভাণ্ডার উন্মুক্ত করেন, কাহাকেও কষ্ট দেন; তিনি যাহা চাহেন উৎপন্ন করেন, কাহাকেও পুত্র, কাহাকেও কন্যা, কাহাকেও পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন এবং কাহাকেও বন্ধ্যা করেন। এমন শক্তিশালী কেহই নাই যে, ঈশ্বর তাহার সহিত কথোপথন করিবেন। কিন্তু, ঈশ্বর হৃদয়ে। কিংবা যবনিকার অন্তরাল* হইতে জ্ঞানপ্রকাশ করেন, অথবা বার্তাবাহক ফেরিস্তা প্রেরণ করেন।” মং ৬। সি০ ২৫। সূ০ ৪২। আ০ ১২, ৪৯, ৫০,৫১ ॥
[* এই আয়তের ভাষ্য “তপসীর হুসৈনী” তে লিখিত আছে যে, মহম্মদ সাহেব যবনিকাদ্বয়ের ভিতর। হইতে খোদার শব্দ শুনিয়াছিল। একখানি যবনিকা জরীযুক্ত ও অপরখানি শ্বেতমুক্তাযুক্ত ছিল। দুইটি যবনিকার মধ্যবর্তী স্থান অতিক্রম করিতে সত্তর বৎসর লাগিত। সুধীগণের বিবেচ্য এই যে, ইনি কি খুদা,– না কোন পর্দানশীন মহিলা? এ সকল লোক ঈশ্বরের কী দুর্দশাই না করিয়াছে। কোথায় বেদ উপনিষদ্ প্রভৃতিসত্য গ্রন্থপ্রতিপাদিত পবিত্র পরমাত্মা, আর কোথায় যবনিকার অন্তরালে কথোপকথনকারী কোরাণের খুদা! বাস্তবিক, অশিক্ষিত আরববাসীরা কোথা হইতে সত্যোপদেশ পাইবে?]

সমীক্ষক — বোধ হয় ঈশ্বরের নিকট চাবির ভাণ্ডার পূর্ণ আছে; কেননা তাহাকে সকল স্থানের তালা খুলিতে হয়। ইহা বালকের কথা। খুদা কি পাপ পুণ্যের বিচার না করিয়া যাহাকে ইচ্ছা। তাহাকে ঐশ্বর্যশালী, অথবা ঐশ্বর্য হইতে বঞ্চিত করেন? তাহা হইলে তিনি অত্যন্ত অন্যায়কারী।

কুরাণ রচয়িতার চাতুর্য্য দেখুন। তদ্বারা স্ত্রীলোকেরাও বিমোহিত হইয়া জালে আবদ্ধ হইয়া। যাইতে পারে। যদি সত্যই ঈশ্বর যাহা ইচ্ছা তাহাই উৎপন্ন করেন, তাহা হইলে তিনি কি দ্বিতীয় ঈশ্বর সৃষ্টিকরিতে পারেন?না পারিলে তাহার সর্বশক্তিমত্তা ব্যাহত হইল। ভাল, খুদা ত মনুষ্যদিগের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে পুত্র কন্যা দান করেন, কিন্তু মোরগ, মৎস্য ও শূকর প্রভৃতি যাহাদের। বহু শাবক জন্মে ঐ সকলের দাতা কে? পুনশ্চ স্ত্রী-পুরুষের সমাগম ব্যতীত পুত্র কন্যা দেওয়া হয় না। কোন কোন নারীকে স্বেচ্ছায় বন্ধ্যা রাখিয়া দুঃখ দেওয়া হয় কেন?

বাহবা! খুদার কেমন তেজস্বিতা দেখুন। তাহার সম্মুখে কেহই কথা বলিতে পারে না। কিন্তু তিনি পূর্বে বলিয়াছেন যে, যবনিকার অন্তরাল হইতে তাহার সহিত কথা বলা যায়, ফেরিস্তাগণ ও পয়গম্বর তাহার সহিত কথা বলেন। তাহা হইলে বোধ হয়, তাহারা যথেষ্ট স্বার্থসিদ্ধি করেন।

খুদা সর্বজ্ঞ ও সর্বব্যাপী হইলে যবনিকার অন্তরাল হইতে কথা বলা কিংবা ডাকযোগে সংবাদ লওয়ার ন্যায় সংবাদ জানা ও লেখা নিরর্থক। যিনি তাহা করেন তিনি খুদাই নহেন, কিন্তু চতুর মনুষ্য বিশেষ। অতএব এই কুরাণ কখনও ঈশ্বরকৃত পুস্তক হইতে পারে না। ॥১৩৯ ॥

১৪০। “ঈশা যখন প্রত্যক্ষ প্রমাণের সহিত আগমন করিলেন।” মং ৬। সি০ ২৫ । সূ০ ৪৩। আ০ ৬৩ ॥

সমীক্ষক — ঈশা খুদার সহিত প্রেরিত হইলে খুদা ঈশার উপদেশ বিরুদ্ধ কুরাণ রচনা করিলেন কেন? নব্য বাইবেল (নিউ টেস্টামেন্ট) ও কুরাণবিরুদ্ধ সুতরাং এই দুইটি পুস্তকের কোনটিই ঈশ্বরকৃত নহে ।।১৪০।।

১৪১। “তাহাদিগকে ধৃত করিয়া টানিতে টানিতে নরকে লইয়া যাও; তাহারা সে স্থানে থাকিবে। আমি চারু নয়না ও গৌরবর্ণা নারীদের সহিত তাহাদের বিবাহ দিব।” মং ৬। সি০ ২৫। সূ০ ৪৪। আ০ ৪৭, ৫৪৷

সমীক্ষক –বাহবা! ন্যায়বান্ খুদা প্রাণীদিগকে ধৃত করেন এবং টানিয়া আনেন। মুসলমানদের খুদাই যখন এইরূপ তখন সেই খুদার উপাসকরূপে তাহারা যে অসহায় এবং দুর্বলদিগকে ধৃত করিয়া টানিয়া আনিবে তাহাতে আশ্চর্য কী? আবার খুদা সাংসারিক লোকের ন্যায় বিবাহও দিয়া থাকেন। সুতরাংবুঝিতে হইবে যে, তিনি মুসলমানদের মধ্যে ঘটকের কাৰ্য্যও করিয়া থাকেন৷১৪১।

১৪২।”তোমরা যখন কাফিরদিগের সম্মুখীন হইবে, তখন তাহাদের জীবন নিঃশেষিত না হওয়া পৰ্য্যন্ত তাহাদের গলায় আঘাত করিতে থাকিবে। তাহাদিগকে কঠোর ভাবে কারারুদ্ধ করিবে ॥

তোমাদের নগরী অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী যে সকল নগরীর অধিবাসীগণ তোমাদিগকে বিতাড়িত করিয়াছিল আমি তাহাদিগকে মারিয়াছি, কোন সাহায্য দান করি নাই।

ধাৰ্ম্মিকদিগকে যে স্বর্গের প্রতিশ্রুতি দিয়াছি তাহার স্বরূপ এই যে, তন্মধ্যে শুদ্ধসলিলা নদী এবং দুগ্ধধারা বহিতেছে উহার স্বাদ কখনও পরিবর্তিত হয় না। সেস্থানে মদ্যপায়ীদিগের আনন্দের জন্য মদিরার নদী এবং মধুনদী প্রবাহিত হইতেছে। প্রভু স্বর্গবাসীদের জন্য সকল প্রকার ফল দান। করিয়াছেন।” মং ৬। সি০ ২৬। সূ০ ৪৭। আ০ ৪, ১৩, ১৫ ॥

সমীক্ষক –এই নিমিত্ত এই কুরাণ, খুদা এবং মুসলমানগণ বিদ্রোহ সৃষ্টিকারী সকলের দুঃখের কারণ স্বার্থপর এবং নির্দয়। কুরাণে যেরূপ লিখিত আছে, যদি ভিন্নমতাবলম্বীগণও মুসলমানদের প্রতি তদ্রপ আচরণ করেন তাহা হইলে মুসলমানদের ব্যবহার তাহাদের পক্ষে যেরূপ কষ্টকরতাহাদের ব্যবহারও মুসলমানদের পক্ষে তদ্রূপ কষ্টকর হইবে কি না?

যাহারা মহম্মদ সাহেবকে বিতাড়িত করিয়াছিল খুদা তাহাদিগের বিনাশ করিয়াছিলেন; এইজন্য তিনি পক্ষপাতী।

ভাল, যেস্থানে বিশুদ্ধ জল, দুগ্ধ, মদ্য এবং মধুনদী আছে সে স্থান কি সংসার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইতে পারে? দুগ্ধের নদীও কি সম্ভব? দুগ্ধ অল্প সময়ের মধ্যেই বিকৃত হইয়া যায়। এই নিমিত্ত সুধিগণ কুরাণের মত বিশ্বাস করেন না। ॥১৪২ ॥

১৪৩। ”যখন আঘাতে কম্পিত এবং পর্বত সমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া কীটপতঙ্গের ন্যায় উড়িতে থাকিবে তখন কাহারা দক্ষিণ দিকে থাকিবে, কাহারাই বা বাম দিকে থাকিবে। তাহারা সোনার তারে বোনা উপাধানযুক্ত পালঙ্কের উপর মুখোমুখী হইয়া অবস্থান করিবে। বালকগণ মদ্যের পেয়ালা লইয়া তাহাদের নিকট যাতায়াত করিবে। তাহাদের নিকট গ্লাস, ঘটি এবং পেয়ালা বিশুদ্ধ থাকিবে। তাহাতে তাহাদের শিরঃপীড়া হইবে না এবং তাহারা বিরুদ্ধ কথা বলিবে না। তাহারা ইচ্ছামত ফল এবং পশুপক্ষীর মাংস পাইবে। আবৃত মুক্তার ন্যায় সুনয়না রমনীগণ এবং প্রশস্ত শয্যা তাহাদের জন্য থাকিবে। নিশ্চয় আমি বিশেষভাবে তাহাদিকে সৃষ্টিকরিয়াছি এবং তাহাদিগকে কুমারী করিয়াছি। তাহারা সৌভাগ্যবতী ও সমবয়সী।…. তোমরা তদ্বারা উদর পূর্ব করিবে। আমি পতনশীল নক্ষত্র সমূহের নামে শপথ করিতেছি”॥ মং ৭। সি০ ২৭। সূ০ ৫৬। আ০ ৪,৫, ৬, ৮, ৯। ১৫-২৩,৩৫-৩৮৫৩ ॥

সমীক্ষক –এখন কুরাণ রচিয়তার লীলা দেখুন। পৃথিবী তো ঘূর্ণায়মান রহিয়াছে এবং তখনও থাকিবে। এতদ্বারা প্রমাণিত হইতেছে যে,কুরাণ রচয়িতা পৃথিবীকে স্থির বলিয়াই জানিতেন। আচ্ছা, পর্বতগুলিকেও পক্ষীর ন্যায় উড়াইয়া দেওয়া হইবে কেন? কীট পতঙ্গে পরিণত হইলেও তাহারা সূক্ষ্মশরীরধারী থাকিবে, তাহা হইলে তাহাদের পূনর্জন্ম হইবে না কেন?

বাহবা! খুদা শরীরধারী না হইলে তাহার দক্ষিণ এবং বামপার্শ্বে দণ্ডায়মান হওয়া কীরূপে সম্ভব? যদি সে স্থানে সোনার তারে বোনা পালঙ্ক থাকে তাহা হইলে সেখানে সূত্রধর এবং স্বর্ণকারও আছে। বোধ হয় ছারপোকাও দংশন করে এবং রাত্রিকালে স্বর্গবাসীদের নিদ্রারও ব্যাঘাত ঘটায়। স্বর্গবাসীরা কি উপাধানে হেলান দিয়া নিশ্চেষ্টভাবে কাল যাপন করে, না– তাহারা কোন কার্যে নিযুক্ত আছে?

কেবল বসিয়া থাকিলে অন্ন পরিপাক না হওয়ায় তাহারা বোধ হয় রোগাক্রান্ত হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়। যদি সে স্থানে কাজকর্ম করিতে হয়, তাহা হইলে বোধহয় তাহাদিগের সেখানে শ্রমজীবীর ন্যায় পরিশ্রম করিয়া জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতে হয়। তাহা হইলে পৃথিবীর তুলনায়। স্বর্গের বিশেষত্ব কী? অবশ্য কিছুই নাই ॥

যদি ঐ সকল বালক চিরকাল স্বর্গে বাস আর তাহাদের মাতা-পিতা, শ্বশুর, শাশুড়ী প্রভৃতি সেস্থানে থাকে, তাহা হইলে সে স্থানে বৃহৎ নগরের ন্যায় জনসমাগম আছে, সুতরাং মলমূত্রাদি অধিক পরিমাণে সঞ্চিত হওয়ায় অনেকে রোগাক্রান্তও হইয়া থাকে।

পুনশ্চ, সে স্থানে লোকেরা ফল ভক্ষণ করে, গ্লাসে জল এবং পেয়ালায় মদ্যপান করে, তাহাতে কাহারও শিরঃপীড়া হয় না কেহই বিরুদ্ধ কথা বলে না। ফল এবং পশুপক্ষীর মাংসও যথেষ্ট পরিমাণে ভক্ষণ করায় সেস্থানে নানা দুঃখও থাকা সম্ভব। পশুপক্ষী সেখানে থাকে অথচ তাহাদের হত্যা হয়; অস্থিসমূহ ইতঃস্তত বিকীর্ণ থাকে; তদ্ব্যতীত সে স্থানে কসাইদের দোকানও হয় তো চলে। বাহবা, কী চমৎকার স্বর্গ, ইহার আর কত প্রশংসা করা যাইবে। এই স্বর্গ তো। আরবদেশ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ বলিয়া মনে হইতেছে। আর স্বর্গবাসিরা মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপান করিয়া উন্মত্ত হইয়া যায়, এই নিমিত্ত তাহাদের জন্য সুন্দরী স্ত্রীলোক এবং বালকদেরও প্রয়োজন হয়; নতুবা মাতালদের মস্তিষ্কের উত্তাপ এতদূর বৃদ্ধি পাইবে যে, তাহারা একেবারে সংজ্ঞাহীন। হইয়া পড়িবে। সে স্থানে বহু স্ত্রী-পুরুষের শয়ন উপবেশনের জন্য বহু সংখ্যক প্রশস্ত শয্যারও প্রয়োজন হইয়া থাকে। যদি ঈশ্বর স্বর্গে কুমারীদিগকে উৎপন্ন করেন, তাহা হইলে কুমারদিগকেও নিশ্চয় উৎপন্ন করেন।

ভাল, খুদা লিখিয়াছেন যে, যাহারা পৃথিবী হইতে এই আশা লইয়া স্বর্গে যাইবে, কুমারীদের সহিত তাহাদের বিবাহ হইবে, কিন্তু, চিরস্বর্গবাসী কুমারদের কাহাদের সহিত বিবাহ হইবে, তাহা লিখিত হয় নাই। তবে কি তাহারাও কুমারীদের ন্যায় স্বর্গভোগবিলাসীদের হস্তে সমর্পিত হইবে? এ বিষয়েও কোন ব্যবস্থা লিখিত হয় নাই। ঈশ্বর এত গুরুতর ভ্রমে পতিত হইলেন কেন?

আবার, সমবয়সী সৌভাগ্যবতী স্ত্রীলোকদের পতি লাভ করিয়া স্বর্গে বাস করার ব্যবস্থাও যুক্তিসঙ্গত হয় নাই। কারণ স্ত্রী অপেক্ষা পতির বয়স দ্বিগুণ অথবা আড়াই গুণ হওয়া উচিত। এই তো মুসলমানদের স্বর্গের বিবরণ! নরকবাসীদের সম্পর্কে লিখিত আছে যে, তাহারা “থোহড়” (একজাতীয় কন্টকবৃক্ষ) বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করিয়া উদর পূর্ণ করিবে। তাহা হইলে নরকে কন্টকবৃক্ষও আছে এবং উহার কন্টক জীবদিগকে বিদ্ধও করে। নরকবাসীদিগকে উষ্ণ জল পান করিতে হয়, এসকলও দুঃখজনক। সচরাচর মিথ্যাবাদীরাই শপথ করিয়া থাকে, সত্যবাদীরা কখনও শপথ করে না। যদি খুদাও শপথ করেন, তাহা হইলে তিনি মিথ্যাবাদী হইতে পৃথক্‌ নহেন ॥১৪৩ ॥

১৪৪। “নিশ্চয় যে সকল লোক আল্লাহের পথে যুদ্ধ করে, তাহারাই তাঁহার প্রিয় পাত্র।” মং ৭। সি০ ২৮, সূ০ ৬১। আ০ ৪ ॥

সমীক্ষক –বাহবা! যথার্থই বটে, যে খুদা এইরূপ উপদেশ দ্বারা হতভাগ্য আরববাসীদিগকে সকলের সহিত কলহ বিবাদে লিপ্ত ও শত্রুভাবাপন্ন করিয়া দুঃখে নিপাতিত করিয়াছেন এবং যে। ঈশ্বর সাম্প্রদায়িক ধর্মের পতাকা উর্ধে উত্তোলন করিয়া যুদ্ধবিস্তার করিয়াছেন, তাঁহাকে কোন বুদ্ধিমান মনুষ্য ঈশ্বর বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারেন কি? যিনি মানবজাতির মধ্যে বিবাদ বৃদ্ধি করেন, তিনি সকলের দুঃখের কারণ ॥ ১৪৪ ॥

১৪৫।” হে নবী! খুদা যাহা তোমার জন্য “হালাল”(বৈধ) করিয়াছেন, তুমি তোমার পত্নীদের প্রসন্নতার জন্য তাহা “হারাম” (নিষিদ্ধ) করিতেছ কেন? আল্লাহ্ ক্ষমাকারী এবং দয়ালু।”

পয়গম্বর তোমাদিগকে পরিত্যাগ করিলে, তাহার প্রভু তাহাকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের অপেক্ষা মহিয়সী, মুসলমান ধর্ম-বিশ্বাসিনী, সেবাপরায়ণা, অনুতপ্তা, রোজাপালনকারিণী, ভক্তিমতী, পুরুষম্পশ্যা অথবা অপুরুষম্পশ্যা স্ত্রী প্রদান করিবেন।” মং ৭। সি০ ২৮ । সূ০ ৬৬। আ০ ১,৫ ॥

সমীক্ষক –এ বিষয়ে একটু চিন্তা করিলে ঈশ্বরকে মহম্মদ সাহেবের অন্তঃপুরের এবং বাহিরের ব্যবস্থাকারী ভৃত্য স্বরূপ মনে হইবে।

প্রথম আয়ত সম্বন্ধে দুইটি আখ্যায়িকা আছে। তন্মধ্যে একটি এই যে,মহম্মদ সাহেবের কয়েকটি বিবির মধ্যে একটির গৃহে মধুর সরবৎ পান করিতে বিলম্ব হওয়ায় অন্যান্য স্ত্রীদের পক্ষে তাহা অসহ্য হইল। তাহাদের বাক্য শ্রবণ করিবার পর মহম্মদ সাহেব শপথ করিলেন যে, তিনি আর। কখনও মধুর সরবৎ পান করিবেন না।

দ্বিতীয় আখ্যায়িকা এই যে, –তাহার কয়েক স্ত্রীর মধ্যে একদিন এক স্ত্রীর পালা ছিল। রাত্রিকালে মহম্মদ সাহেব তাহার নিকট গমন করেন; কিন্তু তিনি তখন গৃহে ছিলেন না, পিত্রালয়ে গিয়াছিলেন। মহম্মদ সাহেব একজন দাসীকে ডাকিয়া পবিত্র করিলেন। এই সংবাদ শুনিয়া তাহার সেই স্ত্রী দুঃখিত হইলেন। তাহাতে মহম্মদ সাহেব শপথ করিলেন যে, তিনি আর কখনও তেমন কাৰ্য্য করিবেন না এবং সে বিষয় কাহারও নিকট প্রকাশ করিতে তাহার স্ত্রীকে নিষেধ করিলেন। তাহার স্ত্রী স্বীকৃত হইলেন বটে, কিন্তু পরে তিনি উহা অন্য স্ত্রীদের নিকট প্রকাশ করিয়া দেন। এই উপলক্ষ্যে খুদা এই আয়তের অবতারণা করেন, –“আমি যে বস্তু তোমার জন্য বৈধ করিয়াছি, তুমি তাহা অবৈধ করিতেছ কেন?”

সুধীগণ বিচার করুন, খুদা কি কোথায়ও কাহারও পারিবারিক ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেন? এ সকল ঘটনার মধ্যে মহম্মদ সাহেবের আচরণ জানা যাইতেছে। যাঁহার অনেক স্ত্রী, তিনি কীরূপে ভগবদ্ভক্ত অথবা পয়গম্বর হইতে পারেন? যিনি পক্ষপাত পূর্বক এক স্ত্রীর অসম্মান এবং অপর স্ত্রীর সম্মান করেন, তিনি পক্ষপাতী এবং অধার্মিক নহেন কেন? যিনি বহু পত্নীতেও সন্তুষ্ট না হইয়া দাসীর প্রতি আসক্ত হন, তাঁহার লজ্জা, ভয় এবং ধর্ম কোথায়? কেহ বলিয়াছেন ।

কামাতুরাণাংন ভয়ংন লজ্জা”

কামাতুর ব্যক্তির পাপানুষ্ঠানে ভয় লজ্জা থাকে না। মুসলমানদের খুদা যেন পয়গম্বর সাহেব এবং তাহার পত্নীদের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার জন্য মধ্যস্থ হইয়া পড়িয়াছেন! এখন সুধীবৃন্দ চিন্তা করিয়া দেখুন যে, এই কুরাণ কি ঈশ্বরকৃত, কিংবা কোন বিদ্বান, কিংবা কোন অজ্ঞানী ও স্বার্থপরের রচিত? দ্বিতীয় আয়ত হইতে স্পষ্টরূপে জানা যাইতেছে যে, মহম্মদ সাহেবের কোন পত্নী তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হইলে খুদা তাহাকে ভয় দেখাইবার জন্য এই আয়তের অবতারণা করেন; — “তুমি যদি গোলযোগ কর আর মহম্মদ সাহেব তোমাকে পরিত্যাগ করেন, তাহা হইলে তাঁহার খুদা তোমা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট অপুরুষম্পশ্য পত্নীদান করিবেন।” যাঁহার কিঞ্চিৎ বুদ্ধি আছে, তিনি অবশ্য বুঝিতে পারেন যে, ইহা ঈশ্বরের,– না স্বার্থপর মনুষ্যের কাৰ্য্য? এতদ্বারা প্রমাণিত হইতেছে যে,খুদা কিছুই বলিতেন না; কিন্তু মহম্মদ সাহেব নিজ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য, দেশ, কাল বুঝিয়া খুদার পক্ষ হইতে সমস্ত বলিয়া দিতেন। যাঁহারা বলেন যে, ইহা ঈশ্বরের কাৰ্য্য; তাহাদিগকে আমরা কেন, যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বলিবেন যে, খুদা যেন নাপিত সাজিয়া মহম্মদ সাহেবের বিবাহের জন্য ঘটকালি করিয়া বেড়াইতেন ॥১৪৫ ॥

১৪৬। “ হে নবী! কাফিরদের সহিত সংগ্রাম কর এবং গুপ্ত শত্রুদের প্রতি কঠোর ব্যবহার কর ॥ ” মং ৭। সি০ ২৮। সূ০ ৬৬। আ০ ৯ ॥

সমীক্ষক –মুসলমানদের খুদার কাণ্ড দেখুন। তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের সহিত বিবাদ করিবার জন্য পয়গম্বরকে এবং মুসলমানদিগকে উত্তেজিত করিতেছেন। এই নিমিত্ত মুসলমানগণ সর্বদা কলহ বিবাদে লিপ্ত থাকে। পরমাত্মা তাহাদের প্রতি কৃপা করুন তাহারা যেন উপদ্রব পরিত্যাগ করিয়া সকলের সহিত মিত্রবৎ ব্যবহার করে ॥১৪৬ ॥

১৪৭। “সে দিন আকাশ বিদীর্ণ ও শিথিল হইবে। স্বর্গীয় দূতগণ একপার্শ্বে অবস্থান করিবেন। সে দিন আট জন দূত প্রভুর সিংহাসন উত্তোলন করিবেন, তোমরা সম্মুখে আনীত হইবে এবং কোন গুপ্ত বিষয় গোপন থাকিবে না। যাহার দক্ষিণ হস্তে কর্মপত্র দেওয়া হইবে, যে বলিবে, “হায়! হায়! আমাকে এই কর্মপত্র না দিলেই ভাল হইত।” মং ৭। সি ২৯। সূ০ ৬৯। আ০ ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২৫ ॥

সমীক্ষক— বাহবা! ফিলজফি! কী ন্যায় শাস্ত্র! ভাল, আকাশ কি কখনও বিদীর্ণ হইতে পারে? আকাশ কি বস্ত্ৰতুল্য যে বিদীর্ণ হইবে? যদি উৰ্দ্ধলোককে আকাশ বলা হইয়া থাকে, তবে তাহা বিজ্ঞান বিরুদ্ধ। কুরাণের খুদা যে শরীরধারী, এ বিষয়ে এখন আর কোন সন্দেহ রহিল না। কারণ, সিংহাসনে উপবেশন করা এবং আট জন বাহক দ্বারা সিংহাসন উত্থাপন করান মূর্তিমানেরই কাৰ্য্য। সম্মুখে এবং পশ্চাতে যাতায়াত করা মূর্তিমানের পক্ষেই সম্ভব। খুদা মূর্তিমান্ হইলে একদেশী আবার একদেশী হইলে তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান্ নহেন এবং জীবদের সব কর্মও কখনও জানিতে পারেন না। পুণ্যাত্মাদিগকে দক্ষিণ হস্তে কর্মপত্র দেওয়া, তাহা পাঠ করান এবং তাহাদিগকে স্বর্গে প্রেরণ করা; পাপাত্মাদিগকে বামহস্তে কর্মপত্র দেওয়া এবং তাহাদিগকে নরকে প্রেরণ করা এবং কর্মপত্র পাঠ করিয়া ন্যায়বিচার নিতান্ত আশ্চর্যের বিষয়! ভাল, ইহা কি সর্বজ্ঞের কাৰ্য্য হইতে পারে? কখনও নহে। এসকল শিশুর ক্রীড়া মাত্র ॥১৪৭ ॥

১৪৮। “সেদিন ফেরিস্তাগণ ও আত্মাসমূহ তাহার দিকে উত্তরণ করিবে। সে দিনের পরিমাণ পঞ্চাশ সহস্র বৎসর। যখন (জীবগণ) কবর হইতে নির্গত হইয়া দৌড়াইতে থাকিবে তখন মনে হইবে যেন তাহারা কোন মূৰ্ত্তি অভিমুখে ধাবিত হইতেছে।” মং ৭। সি০ ২৯। সূ০ ৭০। আ০ ৪, ৪৩ ॥

সমীক্ষক –দিন পঞ্চাশ সহস্র বৎসরের হইলে রাত্রিও পঞ্চাশ সহস্র বৎসরের হইবে না। কেন? এত দীর্ঘ রাত্রি না হইলে এত দীর্ঘ দিন কখনও হইতে পারে না। এই পঞ্চাশ সহস্র বৎসর। ধরিয়া খুদা, ফেরিস্তাগণ এবং কর্মপত্রধারী জীবগণ কি বসিয়া, দাঁড়াইয়া অথবা অন্য কোনরূপে জাগিয়া থাকিবে? তাহা হইলে সকলে রোগাক্রান্ত হইয়া পুনরায় মরিয়া যাইবে। জীবগণ কি কবর। হইতে নির্গত হইয়া ঈশ্বরের আদালতের দিকে ধাবমান হইবে?

কবরের মধ্যে অবস্থান কালে তাহারা কীরূপে সমন প্রাপ্ত হয়? দুভাগা পাপাত্মা ও পুণ্যাত্মাদিগকে এতকাল কবরের মধ্যে বিচারাবন্দী রাখা হইল কেন? আজকাল বোধ হয় খুদার আদালত বন্ধ আছে এবং খুদার সহিত ফেরিস্তাগণও নিষ্কর্মা রহিয়াছেন। নতুবা তাহারা কী করিতেছেন? হয়তো স্ব স্ব স্থানে উপবিষ্ট আছেন। নতুবা ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতেছেন, অজ্ঞানান্ধকার আর কোন রাজ্যে নাই। বন্য মনুষ্য ভিন্ন কে আর এসকল কথা বিশ্বাস করিবে? ॥১৪৮ ॥

১৪৯। “নিশ্চয় তিনি তোমাদিগকে নানারূপে উৎপন্ন করিয়াছেন। তোমরা কি দেখ নাই, ঈশ্বর কীরূপে উপর্যুপরি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করিয়া তন্মধ্যে চন্দ্রকে আলোক দাতা এবং সূৰ্য্যকে প্রদীপ করিয়াছেন”? মং ৭। সি০ ২৯ ।। সূ০ ৭১। আ০ ১৪, ১৫, ১৬ ॥

সমীক্ষক –ঈশ্বর জীবদিগকে সৃষ্টি করিয়া থাকিলে তাহারা কখনও অমর ও অনিত্য হইতে পারে না। উৎপন্ন বস্তু নিশ্চয় বিনাশ প্রাপ্ত হয়; সুতরাং সৃষ্ট জীব কীরূপে অনন্তকাল স্বর্গে বাস করিবে? আকাশ নিরাকার এবং বিভু; সুতরাং আকাশকে কীরূপে উপযুপরি নির্মাণ করা হইল? অন্য কোন পদার্থেরও আকাশ নাম রাখা বৃথা।

এক আকাশের উপর অন্য আকাশ উপর্যুপরি নির্মিত হইয়া থাকিলে আকাশ দ্বয়ের মধ্যস্থলে চন্দ্র সূৰ্য্য থাকিতে পারে না। কারণ চন্দ্র সূৰ্য্য মধ্যস্থলে রাখিলে উপরের একাংশ ও নিম্নের একাংশ আলোকিত হইবে; কিন্তু দ্বিতীয় আকাশ হইতে আরম্ভ করিয়া সর্বত্র অন্ধকার থাকিবে। কিন্তু এরূপ দেখা যায় না; সুতরাং ইহা সর্বতোভাবে মিথ্যা ॥১৪৯ ॥

১৫০। “এই মজিদ আল্লাহের জন্য। আল্লাহের সহিত আর কাহাকেও ডাকিও না”। * মং ৭। সি০ ২৯। সূ০ ৭২। আ০ ১৮৷

সমীক্ষক –এই উপদেশ সত্য হইলে মুসলমানগণ “লাইলাহ ইলিল্লাহ মহম্মদররসূলল্লাহ”– এই কলমায় খুদার সহযোগী রূপে মহম্মদ সাহেবকে আহ্বান করে কেন? ইহা কুরাণবিরুদ্ধ। যদি বলা হয় যে, তাহা নয়, তবে কুরাণের বাক্য মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়।

যদি মসজিদ খুদার গৃহ হয়, তবে মুসলমানেরাও মহা পৌত্তলিক। কারণ যদি ক্ষুদ্র মূৰ্ত্তিকে ঈশ্বরের গৃহ বলিয়া বিশ্বাস করিয়া পৌরাণিক ও জৈনদিগকে পৌত্তলিক বলা হয় তাহা হইলে মুসলমানদিগকেও পৌত্তলিক বলা হইবে না কেন? ॥১৫০ ॥

১৫১। “সূৰ্য্য ও চন্দ্র একত্র করা হইবে”। মং ৭। সি০ ২৯। সূ০ ৭৫। আ০ ৯।

সমীক্ষক –ভাল, চন্দ্র ও সূৰ্য্য কি কখনও একত্র হইতে পারে? দেখুন! ইহা কীরূপ নির্বোধের কথা। চন্দ্র ও সূৰ্য্য একত্র করিবার কী প্রয়োজন ছিল? অন্যান্য লোকসমূহ একত্র না করার পক্ষে যুক্তি কী? ঈশ্বর কি এরূপ অসম্ভব কথা বলিতে পারেন? এ সকল বিদ্বানের কথা নহে, কিন্তু মুখের কথা ॥১৫১ ॥

১৫২। ”চিরস্বর্গবাসী বালকগণ তাহাদের নিকট যাতায়াত করিবে। সেই বালকদিগকে দেখিলে তোমার মনে হইবে যেন মুক্তাবলী বিকীর্ণ রহিয়াছে। তাহাদিগকে রজত কঙ্কন দ্বারা ভূষিত করা হইবে এবং তাহাদের প্রভু তাহাদিগকে পবিত্র মদিরা পান করাইবেন।” মং ৭। সি০ ২৯। সূ০ ৭৬। আ০ ১৯, ২১ ॥

সমীক্ষক — কেন মহাশয়! সে স্থানে মুক্তবর্ণ বালকদিগকে রাখিবার প্রয়োজন কী? যুবকেরা বা স্ত্রীলোকেরা কি তাহাদিগকে তৃপ্ত করিতে পারে না? দুষ্টপ্রকৃতির লোকেরা যে বালকদের সহিত অস্বাভাবিক পাপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহার মূলে কুরাণের এই বচন থাকা কি আশ্চর্যের বিষয়? স্বর্গে প্রভু ও সেবকভাব, প্রভুর সুখ ও সেবকদিগের শ্রমক্লেশ এই পক্ষপাত কেন? আবার খুদাই যদি তাহাদিগকে মদ্যপান করায়, তবে তিনিও তাহাদের সেবকতুল্য। তাহা হইলে খুদার মহত্ত্ব কী রহিল?

স্বর্গে স্ত্রী পুরুষ সংসর্গ, গর্ভস্থিতি এবং সন্তানোৎপত্তি হয় কিনা? না হইলে ইন্দ্রিয় সুখ সম্ভোগ বৃথা হইবে এবং হইলে ঐ সকল জীব কোথা হইতে আসে? খুদার সেবা ব্যতীত তাহারা স্বর্গে কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করে? যদি জন্মে তাহা হইলে ধর্মবিশ্বাস ও ঈশ্বরভক্তিব্যতীতও তাহারা অনায়াসে স্বর্গলাভ করে। সুতরাং তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ ধর্মবিশ্বাস বলে এবং কেহ কেহ তদ্ব্যতীতও স্বর্গসুখ লাভ করে। ইহা অপেক্ষা অন্যায় আর কী হইবে? ॥১৫২।

১৫৩।”কর্মানুসারে ফল দেওয়া হইবে। পানপাত্র পূর্ণ আছে। সেই দিন স্বর্গীয় দূতগণ এবং ‘রূহ’ শ্রেণীবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান থাকিবে।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৭৮ । আ০ ২৬, ৩৪, ৩৮ ॥

সমীক্ষক –কর্মানুসারে ফল দেওয়া হইলে হুর, ফেরিস্তা ও মুক্তার ন্যায় সুন্দর বালকগণ। কোন্ কর্মফলে চির-স্বর্গবাসী হইয়াছে। তাহারা পাত্রপূর্ণ মদ্যপান করিয়া মাদকতা বশতঃ কলহ। বিবাদে লিপ্ত হইবে না কেন?

এ স্থলে ‘রূহ’ একজন ফেরিস্তা। তিনি ফেরিস্তাদের মধ্যে সর্বপ্রধান। খুদা কি শ্রেণীবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান রূহ এবং অন্যান্য ফেরিস্তাদের দ্বারা সৈন্যব্যুহ রচনা করিয়া তদ্বারা জীবদিগকে দণ্ডদান। করিবেন? তখন খুদা কি দণ্ডায়মান, না –উপবিষ্ট থাকিবেন? যদি কয়ামতের পূর্বে খুদা তাহার সমস্ত সেনা একত্র করিয়া শয়তানকে পাকড়াও করেন, তবে তাহার রাজ্য নিষ্কন্টক হইতে পারে। ইহারই নাম ঈশ্বরত্ব ॥১৫৩ ॥

১৫৪। “তখন সূৰ্য্যকে ভাজ করিয়া গুটাইয়া লওয়া হইবে এবং নক্ষত্রসমূহ মলিন ও পর্বতসমূহ বিচলিত হইবে। তখন আকাশের ছাল খুলিয়া ফেলা হইবে।” মং ৭। সি ৩০। সূ০ ৮১। আ০ ১। ২। ৩, ১১

সমীক্ষক — গোলাকার সূৰ্য্যমণ্ডলকে ভাজ করিয়া গুটাইয়া লওয়া হইবে বলা মূঢ়তা সূচক। নক্ষত্র সমূহ কীরূপে মলিন হইবে? জড় পর্বত কীরূপে বিচলিত হইবে? আকাশকে কি পশু তুল্য মনে করা হইয়াছে যে, উহার ছাল খুলিয়া ফেলা হইবে? এ সকল উক্তি নিতান্ত নির্বুদ্ধিতা ও বন্যভাবের পরিচায়ক৷১৫৪ ॥

১৫৫। “তখন আকাশ বিদীর্ণ হইবে, নক্ষত্রসমূহ স্খলিত হইবে, সমুদ্র চিরিয়া ফেলা হইবে এবং কবরগুলিকে পুনর্জীবিত করিয়া উত্থাপিত করা হইবে।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৮২। আ০ ১,২,৩,৪ ॥

সমীক্ষক –বাহবা! কুরাণ রচয়িতার কী ফিলজফি। আকাশ কি করিয়া বিদীর্ণ হইবে? নক্ষত্রসমূহ কীরূপে স্খলিত হইবে? সমুদ্র কি কাষ্ঠ যে, চিরিয়া ফেলা হইবে? কবরগুলি কি মৃত যে পুনর্জীবিত করিতে পারিবে? এ সকল বালকের কথা ॥১৫৫ ॥

১৫৬। “দুর্গ-প্রাসাদবিশিষ্ট আকাশের নামে শপথ। সেই মহান্ কুরাণ স্বর্গীয় লৌহ পেটিকায় সুরক্ষিত আছে ॥” মং৭। সি০ ৩০। সূ০ ৮৫। আ০ ১,২১,২২ ॥

সমীক্ষক –কুরাণ-রচয়িতা ভূগোল কিংবা খগোল কিছুই পাঠ করেন নাই, নতুবা তিনি। আকাশকে দুর্গপ্রাসাদবিশিষ্ট বর্ণনা করিবেন কেন? যদি মেষাদি রাশিকে দুর্গপ্রাসাদ বলা হইয়া থাকে, তবে নক্ষত্রসমূহকেও দুর্গপ্রাসাদ বলা হইবে না কেন? বাস্তবিকপক্ষে ঐগুলি দুর্গ-প্রাসাদ নহে, কিন্তু নক্ষত্র লোক। কুরাণ কি খুদার নিকটে আছে? যদি কুরাণ খুদার রচিত হয়, তাহা হইলে খুদাও মুক্তি এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমগ্ন রহিয়াছেন ॥ ১৫৬ ॥

১৫৭। “নিশ্চয় তাহারা প্রতারণা করে; কারণ তাহারা প্রতারক। আমিও প্রতারণা করি, কারণ আমি প্রতারক।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৮৬। আ০ ১৬। ১৭ ॥

সমীক্ষক –প্রতারণা করা প্রতারকের কাৰ্য। খুদাও কি প্রতারক? চুরির প্রতিশোধ কি চুরি এবং মিথ্যার প্রতিশোধ কি মিথ্যা? কোন ভদ্রলোকের গৃহে চোর চুরি করিলে সেই ভদ্রলোককেও কি চোরের গৃহে চুরি করিতে হইবে? ধন্য কুরাণ রচয়িতা! ১৫৭ ॥

১৫৮। “যখন তোমার প্রভু এবং স্বর্গীয় দূতগণ শ্রেণীবদ্ধ হইয়া আগমন করিবেন, তখন সে স্থানে নরকও আনীত হইবে।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৮৯। আ০ ২২, ২৩ ॥

সমীক্ষক –বলুন দেখি! মুসলমানদের ঈশ্বর কি পুলিশ কর্মচারী অথবা সৈন্যাধ্যক্ষের ন্যায় শ্রেণীবদ্ধভাবে দলবল লইয়া যাতায়াত করেন? নরক কি কলসীর তুলা যে, উহা যেখানে ইচ্ছা সেখানে লইয়া যাওয়া যাইবে? নরক এত ক্ষুদ্র হইলে তন্মধ্যে অসংখ্য বন্দীর সমাবেশ কীরূপে হইবে? ॥১৫৮ ॥

১৫৯। “খুদার পয়গম্বর তাহাদিগকে বলিয়াছেন, “খুদার এই উষ্ট্রীকে রক্ষা করিও এবং ইহাকে জলপান করাইও। কিন্তু পরে তাহারা মিথ্যা এবং প্রতারণা মনে করিয়া উষ্ট্রীর পদচ্ছেদ করিল। তজ্জন্য তাহাদের প্রভু তাহাদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করিলেন।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৯১। আ০ ১৩, ১৪ ॥

সমীক্ষক –খুদাও কি উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করিয়া চলাফিরা করিয়া থাকেন? তাহা না হইলে উষ্ট্রী রাখিবার প্রয়োজন কী? খুদা তাহার নিয়ম ভঙ্গ করিয়া কয়ামতের পূর্বে তাহাদের উপর মহামারী প্রেরণ করিলেন কেন? তাহা হইলে, নিশ্চয় তাহাদিগকে দণ্ড দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং শেষ বিচারের দিন, পুনরায় তাহাদের বিচার হওয়া নিশ্চয় মিথ্যা। উষ্ট্রীর বৃত্তান্ত হইতে অনুমান হয় যে, আরব দেশে উষ্ট্রী ব্যতীত অপর কোন ভারবাহী জন্তু কম। অতএব প্রমাণিত হইতেছে যে, কোন আরববাসীই কুরাণের রচয়িতা ॥১৫৯ ॥

১৬০। “যদি সে বিরত না হয়, তবে নিশ্চয়ই, আমরা তাহাদের পাপী ও মিথ্যাবাদী বলিব, মস্তকের সম্মুখভাগের কেশাকৰ্ষণ করিব। আমরা নরকের দূতদিগকে ডাকিব।” মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৯৬। আ০ ১৫, ১৬, ১৮ ॥

সমীক্ষক –ছেচড়াইয়া টানিয়া আনা নীচ চাপরাসীর কাৰ্য্য, উহা হইতেও খুদা অব্যাহতি পাইলেন না। ভাল, মস্তক কি কখনও মিথ্যাবাদী ও অপরাধী হইতে পারে। যিনি জেলখানার দারোগার ন্যায় ফেরিস্তাদিগকে ডাকিয়া পাঠান, তিনি কি কখনও জীব না হইয়া খুদা হইতে পারেন? ॥১৬০ ॥

১৬১। “নিশ্চয়, আমি কদরের রাত্রিতে কুরাণ অবতীর্ণ করিয়াছি। কদর রাত্রি কী, তাহা তোমরা কীরূপে জানিবে? সেই রাত্রিতে ফেরিস্তাগণ পবিত্ৰাত্মাকে মধ্যে লইয়া যাবতীয় কাৰ্য্যের জন্য তাঁহাদের আদেশ লইয়া অবতরণ করেন”। মং ৭। সি০ ৩০। সূ০ ৯৭। আ০ ১,২, ৪ ॥

সমীক্ষক –যদি একই রাত্রিতে কুরাণের অবতরণ হইয়া থাকে, তাহা হইলে অমুক আয়তের উক্ত সময়ে শনৈঃ শনৈঃ অবতরণ কীরূপে সত্য হইতে পারে? রাত্রির অন্ধকার হওয়া সম্বন্ধে কি সন্দেহ আছে?

পূর্বে আমরা লিখিয়া আসিয়াছি যে, আকাশের উপর-নীচু বলিয়া কিছুই নাই। কিন্তু এ স্থলে। লিখিত আছে যে, স্বর্গীয় দূতগণ এবং পবিত্ৰাত্মা খুদার আদেশে সংসারের ব্যবস্থা করিবার জন্য আগমন করেন, সুতরাং স্পষ্ট জানা গেল যে, খুদা মনুষ্যবৎ একদেশী। এ পর্যন্ত আমরা কুরাণে খুদা, ফেরিস্তাগণ এবং পয়গম্বর সম্বন্ধে আলোচনা দেখিয়াছি। কিন্তু এখন চতুর্থ এক “পবিত্ৰাত্মা’র আবির্ভাব হইল। জানি না এই চতুর্থ ‘পবিত্ৰাত্মা’ কী? অবশ্য খ্রীষ্টান মতে পিতা, পুত্র ও ‘পবিত্ৰাত্মা’ আছেন। খ্রীষ্টানদের এই তিন মানিতে গয়া চতুর্থ আর একটি বৃদ্ধি পাইয়াছে।

যদি মুসলমানগণ বলেন যে, তাহারা এই তিনটিকে খুদা মানেন না, তবে তাহাই হউক, কিন্তু “পবিত্ৰাত্মা” পৃথক হওয়ায় খুদা, ফেরিস্তাগণ এবং পয়গম্বরকে পবিত্ৰাত্মা বলা যাইবে কিনা? যদি তাহারা পবিত্ৰাত্মা হন, তাহা হইলে ব্যক্তি বিশেষকে ‘পবিত্ৰাত্মা’ বলা হইবে কেন? পুনশ্চ খুদা। অশ্বাদি-পশু, দিন-রাত্রি এবং কুরাণ প্রভৃতির নামে শপথকরেন। শপথ করা সৎলোকের কাৰ্য্য নহে ॥১৬১ ॥

কুরাণবিষয়ক আলোচনা সুধীগণের নিকট উপস্থিত করা হইল। এখন এই পুস্তক কীরূপ, তাহা তাহারাই বিচার করুন। আমাকে কেহ জিজ্ঞাসা করিলে বলিব যে, এই পুস্তক ঈশ্বরকৃত নহে তো বটেই, কোন বিদ্বান্ ব্যক্তির রচিত জ্ঞানের পুস্তকও নহে।

এই পুস্তকের বহু দোষের মধ্যে অল্প কয়েকটি মাত্র প্রকাশ করা হইল। উদ্দেশ্য এই যে, কেহ যেন প্রতারিত হইয়া জীবন নষ্ট না করে। এই পুস্তকে যে কয়েকটি সত্য আছে, সেগুলি সত্য। সেগুলি বেদ ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের অনুকূল বলিয়া আমার পক্ষে যেমন স্বীকাৰ্য্য, সেইরূপ বিভিন্ন সম্প্রদায়স্থ দুরাগ্রহ ও পক্ষপাতরহিত বিদ্বান এবং বুদ্ধিমানদিগের পক্ষেও স্বীকাৰ্য্য। অবশিষ্ট সমস্ত অবিদ্যা ও ভ্ৰমজাল ব্যতীত কিছুই নহে। উহা মানবত্মাকে পশুতুল্য করিয়া মানবজাতির মধ্যে শান্তিভঙ্গ, উত্তেজনা, উপদ্রব এবং দুঃখ বৃদ্ধি করে। আরও জানিবার বিষয় এই যে, কুরাণ পুনরুক্তি দোষের ভাণ্ডার স্বরূপ।

পরমাত্মা সব মনুষ্যের প্রতি কৃপা করুন, তাহারা যেন পরস্পর প্রীতিশীল হইয়া মিলিতসূত্রে পরস্পরের সুখবৃদ্ধির জন্য যত্নবান থাকে। আমি যেমন আত্মপর বিচার এবং পক্ষপাত না করিয়া, বিভিন্ন মত-মতান্তরের দোষ প্রকাশ করিতেছি, বিদ্বান্ মাত্রেই সেইরূপ করিলে পরস্পর বিবাদের অবসান, আনন্দ, মিলন, মতৈক্য এবং সত্যলাভ হইবে।

আশা করি কুরাণ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্তরূপে যাহা লিখিত হইল, তদ্বারা বুদ্ধিমান এবং ধার্মিক পাঠকগণ গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করিয়া লাভবান্ হইবেন। যদি ভ্রমবশতঃ কিছু যুক্তিবিরুদ্ধ লেখা হইয়া থাকে, তবে তাহা সংশোধন করিয়া লইবেন।

পরিশেষে একটি কথা যে, মুসলমানদের মধ্যে অনেকে বলেন, লিখেন এবং মুদ্রাঙ্কিত করিয়া প্রকাশ করেন যে, তাঁহাদের ধর্মবিষয় অথর্ববেদে লিখিত আছে। ইহার উত্তর এই যে, অথর্ববেদে এ বিষয়ের নামগন্ধও নাই।

(প্রশ্ন) –আপনি কি সমস্ত অথর্ববেদ পাঠ করিয়াছেন? তাহা হইলে অল্লোপনিষৎ দেখুন। তাহাতে এ বিষয়ে স্পষ্টরূপে লিখিত আছে।

অল্লোপনিষদং ব্যাখ্যাস্যামঃ ॥
(এক্ষণে অল্লোপনিষদ্ ব্যাখ্যাত হইবে)

অস্মাল্লাংইল্লে মিত্রাবরুণা দিব্যানি ধত্তে ॥ ইল্লল্লে বরুণো রাজা পুনর্পন্টুঃ ॥ হয়া মিত্রো ইল্লাংইল্পল্লে ইল্লাংবরুণণা মিত্রস্তেজস্কামঃ ॥১॥ হোতারমিন্দ্রো হোতরমিন্দ্ৰ মহাসুরিন্দ্রাঃ ॥ অল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ণং ব্রাহ্মণং অল্লাম্ ॥২॥ অল্লোরসূল মহামদরকবরস্য অল্লো অল্লাম্ ॥ ৩ ॥ আদল্লাবুকমেকক। অল্লাবুকনিখাতক ॥ ৪ ॥ অল্লো যজ্ঞেন হুহুত্বা। অল্লা সূৰ্য্যচন্দ্র সর্ব নক্ষত্রাঃ ॥৫ ॥ অল্লা ঋষীণাং সর্বদিব্যাংইন্দ্রায় পূৰ্ব্বং মায়া পরমমন্তরিক্ষাঃ ॥ ৬ ॥ অল্লঃ পৃথিব্যা অন্তরিক্ষং বিশ্বরূপম্ ॥৭ ॥ ইল্লাঁ কবর ইল্লাঁ কবর ইল্লা ইল্লল্লেতিইল্লল্লাঃ ॥ ৮ ॥ ও অল্লাইল্লল্লা অনাদিস্বরূপায় অথৰ্ব্বণাশ্যামা হুংহ্রীং জনান পশূনসিদ্ধান্ জলচরা অদৃষ্টং কুরু কুরু ফ৷৯ ॥ অসুর সংহারিণী হুংহীং অল্লোরসুলমহমদর । কবরস্য অল্লো অল্লাইল্পল্লেতি ইল্লল্লাঃ ॥১০ ॥ইত্যল্লোপনিষৎ সমাপ্তা ॥

ইহাতে স্পষ্টরূপে লিখিত আছে যে, মহম্মদ সাহেব রসুল অতএব প্রমাণিত হইল যে, মুসলমান মত বেদমূলক।

উত্তর –যদি তুমি অথর্ববেদ পাঠ না করিয়া থাক, তবে আমার নিকট আইস এবং আদ্যোপান্ত পাঠ কর; অথবা যে কোন অথর্ববেদীর নিকট বিংশতি কাণ্ড যুক্ত অথর্ববেদ মন্ত্রসংহিতা পাঠ কর; কোথায়ও তোমাদের পয়গম্বর সাহেবের নাম বা তাহার মতের চিহ্ন দেখিতে পাইবে না।

অথর্ববেদ, ইহার গোপথ ব্রাহ্মণে, অথবা ইহার কোন ব্যাখায় অল্লোপনিষদ্ নাই। অনুমান হইতেছে যে ইহা আকবর বাদশাহের সময়ে কাহারও দ্বারা রচিত হইয়াছিল। দেখা যাইতেছে যে, ইহার রচয়িতা কিঞ্চিৎ আরবী এবং সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। কারণ, ইহাতে আরবী এবং সংস্কৃত ভাষার পদ দৃষ্ট হয়।

দেখ! ‘অস্মাল্লাং ইল্লে মিত্রাবরুণা দিব্যনি ধত্তে’ ইত্যাদি দশ অঙ্কে লিখিত। যেমন ইহাতে “অস্মাল্লাং” ও “ইল্লে” ইহা আরবী এবং “মিত্রাবরুণা দিব্যানি ধত্তে” ইহা সংস্কৃত; এইরূপ সর্বত্র দৃষ্ট হয়। তাহাতে জানা যায় যে, উক্ত গ্রন্থ রচয়িতার আরবী ও সংস্কৃত উভয় ভাষাই জানা ছিল। অর্থ বিচার করিলে দেখা যাইবে যে, উহা কৃত্রিম, অসঙ্গত এবং বেদ ও ব্যাকরণ বিরুদ্ধ।

এই উপনিষদের ন্যায় আরও বহু উপনিষৎ পক্ষপাতী ভিন্নমতাবলম্বীদিগের দ্বারা রচিত হইয়াছে, যথা– স্বরোপনিষদ্, নৃসিংহপনী, রামতাপনী এবং গোপালতাপনী ইত্যাদি।

প্রশ্ন –আপনি যেরূপ বলিতেছেন, আজ পর্যন্ত কেহ সেরূপ বলে নাই। সুতরাং আপনার কথা কীরূপে মানিব?

উত্তর –তোমরা মান বা না মান, তাহাতে আমার কথা মিথ্যা হইতে পারে না। আমি যেরূপ এই অল্লোপনিষৎ যুক্তিবিরুদ্ধ বলিয়া স্থির করিয়াছি, সেইরূপে যদি তুমিও অথর্বদের শাখাসমূহ হইতে লিখিত প্রাচীন গ্রন্থে অবিকল পূর্বোক্ত লেখা দেখাইতে পার এবং অর্থসঙ্গতি দ্বারাও শুদ্ধ বলিয়া প্রমাণ করিতে পার, তবেই তোমার অভিমত স্বীকৃত হইতে পারে।

প্রশ্ন –দেখুন! আমাদের মত কেমন ভাল। ইহাতে সকল প্রকার সুখ এবং পরিণামে মুক্তি আছে।

উত্তর –প্রত্যেক মতবাদীই বলে যে, তাহার মতই উত্তম, অন্য সকল মত খারাপ এবং তাহার মত ব্যতীত অপর কোন মতে মুক্তি হইতে পারে না। এখন আমি কাহার কথা সত্য বলিয়া স্বীকার করিব? তোমার কিংবা তাহাদের?

আমার বিশ্বাস এই যে, সত্যবাদিত্য, অহিংসা এবং দয়া প্রভৃতি সৎ গুণ সকল মতেই উত্তম; ইহা ছাড়া কলহ-বিবাদ, ঈৰ্ষা-দ্বেষ এবং মিথ্যাবাদিতা প্রভৃতি সকল মতেই হেয়। যদি তুমি সত্যাকাঙ্খী হও, তবে বৈদিক মত গ্রহণ কর। অতঃপর “স্বমন্তব্যামন্তব্য প্রকাশঃ”সংক্ষেপে লিখিত হইবে।

ইতি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী স্বামীকৃতে সত্যার্থপ্রকাশে
সুভাষাবিভূষিতেয়বনমত বিষয়ে চতুর্দশঃ
সমুল্লাসঃ সম্পূর্ণঃ ॥১৪ ॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *