১৩. জীবনের কম্পাস
এক.
আমাদের আগাগোড়া জীবনটাকে যদি পরখ করি, তাহলে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাবো, আমাদের জীবনে যা কিছু লাভ-ক্ষতি, যা কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রায় সবকিছুর মূলে প্রথম এবং প্রধান নিয়ামক হিশেবে যা ছিলো তা হচ্ছে–সময়।
যে ছাত্রটা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, তার অকৃতকার্যের কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাবো–সে পরীক্ষার আগের সময়গুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগায়নি। নিয়মিত এবং নিয়মমাফিক পড়াশোনা করেনি।
যে ব্যবসায়ী ব্যবসায়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে, তার কেইস স্ট্যাডি যদি আমরা সামনে রাখি, তাহলে আমরা দেখবো–তার ক্ষতির পেছনে যতগুলো কারণ বেরিয়ে আসছে, সবখানে কোনো না কোনোভাবে সময় জড়িত। হয়তো সে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, যার কারণে মার্কেটে সে টিকতে পারলো না অথবা এমনও হতে পারে–সঠিক সময়ে পণ্যের জোগান দিতে তার প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু তার এই জায়গাটা তার-ই মতো অন্য কোনো ব্যবসায়ী দখল করতে সমর্থ হয়েছে কেবল সঠিক সময়ে পণ্যের জোগান দিতে পারার ফলে।
যে লোকটা ট্রেন মিস করেছে, আমরা যদি তার ট্রেন মিসের কারণ জানতে চাই, সেও আমাদের সময়ের কথা জানাবে। সঠিক সময়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে স্টেশানে ।আসতে না পারায় গন্তব্যের ট্রেন তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
মোদ্দাকথা, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, জীবনের প্রতিটা অর্জন আর ব্যর্থতাকে যদি আমরা নিক্তিতে ফেলে পরিমাপ করি, তাহলে আমরা দেখতে পাবো–আমাদের জীবনের সবটা জুড়ে যা সত্য ও সৃতঃসিদ্ধ হয়ে আছে, তা হলো সময়। সময় মানুষকে গড়ে এবং সময়-ই মানুষকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। ঠিক এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সুরা আসরে সময়ের শপথের পর পরই, আমরা যে আদতে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত আছি, তা আমাদের স্পষ্ট করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সময় হচ্ছে এমন এক অস্পশ্য বস্তু, যা স্পর্শ করা যায় এমন সবকিছুকে হয় পূর্ণ করে তোলে, নতুবা তাতে মেখে দেয় অপূর্ণতার গ্লানি।
সময় এমন এক নিরেট ‘বাস্তববাদী বন্ধু, যে মুহূর্তের অবহেলায় পরিণত হতে পারে সবচেয়ে জঘন্য শত্রুতে। একজন মানুষ একজীবনে সবচেয়ে বেশি যে জিনিস অপচয় করে, তা হলো সময়। আর সময় এমন এক সম্পদ, যা একবার হারালে, ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। সময় অপচয় করে একজীবনে একজন মানুষ সবচেয়ে বড় যে নিয়ামত হারাতে পারে, তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নৈকট্য। কারণ সময়ের ব্যাপারে সচেতন না হলে তার দুনিয়া যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার আখিরাতও। এইজন্যই ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সময়ের অপচয় মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ, কেননা মৃত্যু মানুষকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে, আর সময় অপচয় মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় তার রব থেকে।
জীবনে সফল হতে হলে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চাইতে দ্বিতীয় কোনো ভালো বিকল্প আমাদের সামনে নেই। মৃত্যুর আগে আমাদের আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠতে হবে। তার মানে, মৃত্যু চলে আসার আগের সময়টাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। অনেক বেশি আমল করতে হবে। এজন্য সময়কে কাজে লাগাতে হবে। বাড়তি আমলের জন্য বাড়তি সময় বের করতে হবে। ধীরে ধীরে, খুশু-খুযুর সাথে সালাত আদায় করতে হবে। মানে সময় নিয়ে, ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না। ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তার জন্য ইসলামি বইপত্র পড়তে হবে। কুরআন-হাদিস-তাফসির-সিরাহ পড়তে হবে। এরজন্য তো সময় দরকার। সময় বের করতে হবে। অকাজের সময়কে কাজে পরিণত করতে পারতে হবে।
অর্থাৎ, আমরা যা-ই করি না কেন, সময় কিন্তু কোনোভাবেই আমাদের পিছু ছাড়ছে না। আমাদের বাঁচতে হয় সময়ের মাঝে, সময়ের মধ্যে, সময়কে নিয়ে। তাই বলা । হয়–’Time is very mystical character. If you use it properly, it’ll be your best companion. If you misuse it, it’ll be your worst enemy’.
দুই.
তাহলে সময়কে আমরা কাজে লাগাবো কীভাবে? আমরা যারা ইসলাম প্র্যাক্টিস করি, সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে, আমাদের জন্য সবচাইতে ভালো উপায় হচ্ছে ‘সালাতকেন্দ্রিক জীবনযাপন। সালাতকে জীবনের কম্পাস বানিয়ে, সেই অনুযায়ী আমাদের জীবনকে আবর্তিত করা গেলে সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে আমাদের জন্য ফরয। করেছেন, তা আমরা সবাই জানি। এই পাঁচ ওয়াক্তের সালাতকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ আমাদের সামনে নেই। আগেও বলেছি, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হলো আমাদের জন্য অক্সিজেন গ্রহণের মতো। অক্সিজেন গ্রহণ না করলে যেমন আমাদের দেহের মৃত্যু ঘটবে, ঠিক সেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দিলে মৃত্যু ঘটবে আমাদের আত্মার। তাই অক্সিজেন গ্রহণ করার মতন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ও আমাদের জন্য জরুরি। অবশ্য কর্তব্য।
এখন সালাতের বাইরে আমাদের যাবতীয় যা কাজ, সেই কাজগুলোকে আমরা সালাতের সময়ানুযায়ী ভাগ করে নিতে পারি। আমি যদি ঠিক করি, এই মাসে আমি সুরা বাকারার অনুবাদ আর তাফসির পড়ে শেষ করবো-ই করবো, তাহলে ফজরের পরের যে সময়টুকুতে সাধারণত আমার ঘুমোতে মন চায় কিংবা আমি ঘুমোই, ওই সময়টাকে আমি চাইলেই সহজে কাজে লাগাতে পারি। এখন থেকে ফজরের পর আমার আর ঘুমোনো চলবে না। ঘুমোনোর সময়টাকে যেহেতু আমি আমার পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ করেছি, তাই এই সময়টাতে আমার চোখজুড়ে যত ঘুমই নামুক, নরম বিছানা যতই লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক, আমি জানি যেকোনো উপায়েই হোক, আমাকে এই ডাক, এই আহ্বান উপেক্ষা করতে হবে। চোখ থেকে ঘুম তাড়াতে যা যা করতে হয় করবো। হাঁটাহাঁটি করা, চা-কফি পান করা, ব্যায়াম বা শরীরচর্চা–যেকোনো উপায়েই আমাকে জেগে থাকতে হবে আমার লক্ষ্য পূরণের জন্য। শুধু যে গড়গড় করে পড়ে চলে গেলে হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। সুরা বাকারা থেকে নতুন এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলো, যেগুলোকে আমার জীবনোপকরণের, জীবন-গঠনের জন্য দরকারি মনে হবে, সেগুলোকে রঙিন পেন্সিল বা মার্কার দিয়ে দাগিয়ে, নোট করে করে আমি এগোতে পারি। সচেতন পাঠক-মাত্রই বুঝে ফেলবেন এই পদ্ধতির কার্যকারিতা।
এভাবে সুরা বাকারা শেষ হলে অন্য যেকোনো সুরা, যা আমার জন্য বোঝা জরুরি এবং তা অনেক সহজও, এমন অন্য একটা সুরা নিয়ে বসে পড়তে পারি অথবা এমনও হতে পারে–এই মাসে সুরা বাকারা শেষ করলাম তো পরের মাসে সিরাহ তথা নবিজির জীবনী নিয়ে বসে গেলাম। লক্ষ্য হবে একমাসের মধ্যে অন্তত নবিজির হিজরত পর্যন্ত পড়ে ফেলা। পরের মাসে হয়তো-বা বসতে পারি রিয়াযুস সালিহিন নিয়ে। মোদ্দাকথা, আমার সুবিধে অনুযায়ী আমি নির্ধারণ করে নিতে পারি, কোন মাসে কী পড়ব; তবে যা-ই পড়ি আর যেটাই পড়ি, পড়ার সিলসিলা আমাকে জারি রাখতেই হবে, এই দৃঢ় অঙ্গীকার আমার মধ্যে থাকা চাই।
ফজরের পরের যে সময়টা এত দিন আমার অলস কাটতো, কোনো কাজ না পেয়ে এত দিন যে সময়গুলোতে আমি নাক ডেকে ঘুমোতাম, সেই সময়গুলো এখন থেকে প্রোডাক্টিভ কাজে লাগছে।
অফিস অথবা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ে কিংবা পড়ায়, তাদের হাতে ফজরের পরের এই সময়টুকু ছাড়া অতিরিক্ত সময় সাধারণত থাকে না। যেহেতু অফিস গমন কিংবা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে আর কোনো সময় হাতে অবশিষ্ট থাকছে না, আপনাকে দেখতে হবে যুহরের পরের সময়টুকু আপনার কীভাবে কাটে। আমার মতে–যুহরের সালাত, খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য আমাদের দেশে ভালো রকমের একটা বিরতি নির্ধারণ করা থাকে। সালাত আদায় এবং খাওয়া-দাওয়ার বাইরে যেটুকু সময় হাতে থেকে যায়, সেই সময়টুকু আপনি চাইলে দুইভাবে কাজে লাগাতে পারেন। যদি ঘুমোনোর অভ্যাস থাকে এবং পর্যাপ্ত বন্দোবস্তও থাকে, তাহলে আমার পরামর্শ হবে এই সময়টায় আপনি হালকা ঘুমিয়ে নিন। গভীর কোনো ঘুম নয় কিন্তু। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন। বিশ মিনিট বা আধ ঘণ্টার। যদি ঘুম নাও আসে, তথাপি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। আপনার মস্তিষ্ককে একটু স্থির হতে দিন।
কারো কারো জন্য এটা বেশ কঠিন কাজ। পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের রাতেই যেখানে স্বাভাবিক ঘুম হয় না, সেখানে দিনে চোখ ভেঙে ঘুম নামানো যে বেশ শ্রমসাধ্য এবং সাধনাল ব্যাপার-ই হবে, তা তো অবশ্যই। যদি আপনি দুপুরের এই হালকা ঘুমে। অভ্যস্ত না হোন, তাহলে আপনার জন্য আমার দ্বিতীয় বিকল্প পরামর্শ হচ্ছে–এই সময়টায় আপনি ভালো কোনো বই, সেটা হতে পারে ইসলামের ইতিহাসের কোনো বই কিংবা আমলের অথবা ইসলামিক কোনো ফিকশন নিয়ম করে পড়তে পারেন। এই সময়টুকুতে প্রতিদিন দশ বা পনেরো পৃষ্ঠা কিংবা নিদেনপক্ষে পাঁচ পৃষ্ঠা পড়ার একটা দৈনিক অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে যদি দৈনিক দশ পৃষ্ঠা পড়া যায়, তাহলে মাস শেষে আপনার তিনশো পৃষ্ঠার যেকোনো ঢাউস সাইজের বই পড়া হয়ে যাবে অনায়াসে। আগে যে সময়টা আপনি হয়তো-বা বেহুদা গল্প-গুজব কিংবা ফেইসবুকে কাটাতেন, এখন সে সময়টাকে কাজে লাগিয়ে মাসে অন্তত একটা ভালো বই আপনি পড়ে শেষ করতে পারছেন।
আসরের পরের সময়টুকু সাধারণত আমাদের নিয়মতান্ত্রিক অলসতায় কাটে। সারাদিনের ক্লান্তি, দৌড়ঝাঁপ শেষের এই সময়টা যেন গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠার আগেই ফুরিয়ে যায়। আমাদের শরীর ও মনকে চাঙা রাখতে এই সময়ে আমরা ভিন্ন কিছু করতে পারি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা কিংবা কফি হাতে, আদিগন্ত নীলাকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা তলিয়ে যেতে পারি ভাবনার অতলে। আকাশের রংধনু, পাখিদের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে আমরা উপভোগ করতে পারি অবসরের অবশিষ্ট সময়টুকু। সবুজের সান্নিধ্যে যাওয়ার সাধ্য যাদের আছে, বাগানে পায়চারি করা, কিংবা শান বাঁধানো পুকুর-ঘাটে বসে নিজের আদি এবং আসল গন্তব্যের কথা স্মরণ করে কাটাতে পারি পড়ন্ত বিকেলের এই স্বল্প সময়।
সময়টা পরিবারের সাথেও কাটানো যায়। কাজের চাপে কত দিন মনখুলে কথা বলা হয় না মায়ের সাথে। বাবার সাথে শেষ কবে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছি মনে করা কঠিন। স্ত্রী-সন্তানদের সাথেও গড়পড়তা কথাবার্তা ব্যতীত আলাপ হয় না। তাই অবসরের এই সবটা সময়, আমরা ইচ্ছে করলে আমাদের পরিবারের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
এর বাইরেও যে-সকল আত্মীয়স্বজনের সাথে সময় স্বল্পতার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, এই সময়টাতে আমরা তাদের সাথেও সংযুক্ত হতে পারি নতুনভাবে। টেলিকমিউনিকেশনের এই যুগে, এই কাজ করতে আমাদের নিশ্চয় না। খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। এতে করে আমাদের প্রায়-বিলুপ্ত আত্মীয়তার বন্ধনগুলো সুদৃঢ়, মজবুত হয়ে ওঠবে। টার্গেট করা যায়–আগামি ত্রিশ দিনে এই সময়টাতে আপনি অন্তত ত্রিশজন আত্মীয়ের সাথে কথা বলবেন।
অথবা এর কোনোটাই যদি সম্ভব না হয়, আপনি নতুন আরেকটা টার্গেট নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারেন। আপনি যদি স্থির করেন, প্রতিদিন আসরের পরের এবং মাগরিবের আগের সময়টুকুতে অন্তত একটা করে দুআ শিখবেন, তাহলে মাস শেষে দেখা যাবে আপনি গুনে গুনে ত্রিশটা এমন দুআ শিখে ফেলেছেন, যা আপনি আগে জানতেন না। দুআ আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আর সেই দুআ যদি হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শিখিয়ে দেওয়া, নবি-রাসুলগণের মুখনিঃসৃত, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! প্রতিদিনকার হেলায় নষ্ট করা সময় থেকে কিছু সময় বাঁচিয়ে যদি আমরা আখিরাতের কাজে লাগাতে পারি, তার চাইতে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে কি?
মাগরিবের পরের সময়টুকুর কথা যদি বলি, আমাদের সাধারণ বাঙালি পরিবারগুলোতে এই সময়টা বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল, টিভি-শো দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায়; তবে একজন সচেতন মুসলিম নিজেকে এসব থেকে সতর্কতার সাথে বাঁচিয়ে রাখে। তাই এই সময়টাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে আমরা আমাদের কাজগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে নিতে পারি। যাদের পড়াশোনা আছে, এই সময়টায় পড়াশোনায় মন দেওয়া যায়। লেখালেখি যাদের কাজ, তারা এই সময়টায় লেখালেখিতে ডুব দিতে পারেন। সময়টা বই পড়ে, বাসার কাজকর্ম করেও কাটানো যায়।
ইশার সালাতের পরের সময়টা আমরা সাধারণত ফেইসবুকে কাটাই। ফেইসবুক এমন এক আজব জিনিস, যেখানে আমরা পাঁচ মিনিট থাকার সংকল্প নিয়ে ঢুকি, পাঁচ ঘণ্টা চলে যাওয়ার পরে আমাদের বোধোদয় ঘটে। এই বাজে অভ্যাস থেকে আমাদের দ্রুতই বেরিয়ে আসতে হবে। ফেইসবুক যেহেতু জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে এবং একে বাদ দিয়ে চলাটা একপ্রকার অসম্ভব, তাই। এর ব্যবহার সীমিতকরণ করা খুব জরুরি; নয়তো আমাদের প্রোডাক্টিভিটিকে অঙ্কুরে বিনাশ হতে দেখা ছাড়া আমাদের হাতে করার আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
ইশার সালাতের পরে হাতে ভারী কোনো কাজ না রাখাই উত্তম। ভারী কাজ করতে গিয়ে যদি ঘুমোতে দেরি হয়ে যায়, তাহলে ফজরের সালাতের জন্য জাগাটা কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফজরের সালাতের গুরুত্ব একজন মুমিনের জীবনে সর্বাধিক।
অধিকতর হালকা কাজগুলো এই সময়ে করার জন্য আমরা রাখতে পারি, যেমন : পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা কোনো বই পড়া, শিশুদের দ্বীনি ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা, পরিবারের সকলের সাথে দ্বীন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা ইত্যাদি।
সারকথা হলো–আমাদের যার যা কাজ, সেই কাজ অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকেন্দ্রিক একটা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া। সালাতকে কেন্দ্রে রেখে জীবনটাকে সাজাতে পারলে আমাদের ভেতরে একটা তাড়না কাজ করবে। নিজেকে সমৃদ্ধ করার তাড়না। সালাতগুলো আমাদের একটা রিমাইন্ডার দেবে। আমাদের মনে হবে-যুহরের পরে তো আমার দশ পৃষ্ঠা বই পড়তে হবে, ‘আসরের পর তো আমার অমুক দুআটা শিখতে হবে’, ‘মাগরিবের পর তো অমুককে ফোন করতে হবে।’
সালাতকে জীবনের কম্পাস বানিয়ে নিয়ে, জীবনটাকে একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমে নিয়ে আসুন। জীবন বড়োই সংক্ষিপ্ত এক সফরের নাম। জীবনের এই অপর্যাপ্ত সময়গুলো যেন অকাজে নষ্ট না হয়।
Thanks a lot.