১২. হৃদয়ের জানালাটা খুলে দাও না

১২. হৃদয়ের জানালাটা খুলে দাও না

এক.

দূর সম্পর্কের এক দরিদ্র আত্মীয়কে আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু৷ দারিদ্র্যের ভারে নুইয়ে পড়া জীবনের অচলাবস্থায় আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তার সাহায্যের অন্যতম ভরসাস্থল।

কিন্তু যেবার আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে মদিনার মুনাফিকেরা কুৎসা রটালো, চারিত্রিক কালিমার যে অপবাদ তারা লেপ্টে দিতে চেয়েছিলো উম্মুল মুমিনিনের গায়ে, সেই ঘটনায় যুক্ত হয়ে পড়েছিলো আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর সেই আত্মীয়ও।

ভাবুন তো, কারো দুঃখের দিনে আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিয়ে তার পাশে দাঁড়ান, কিন্তু দিনশেষে যদি জানতে পারেন, সেই লোকটা আপনার মান-ইজ্জতকে দুই পয়সারও দাম দেয় না, সুযোগ পেলে আপনার পিঠে ছুরিও চালিয়ে দিতে পারে, আপনার অবস্থা তখন কেমন হবে? আপনি নিশ্চয় এতে অনেক দুঃখ পাবেন। ভাববেন, খাল কেটে আপনি হয়তো কুমির আমদানি করেছেন এত দিন অথবা দুধ-কলা দিয়ে পুষে এসেছেন বিষধর কালসাপ। যার জন্য আপনি গলা-পানিতে নামতে রাজি, সে যদি ওই পানিতেই আপনাকে ডুবিয়ে মারতে চায়, আপনার মনের অবস্থা তখন কেমন হবে?

আপনি বলবেন, না! তোমার সাথে আর না। আমি হাড়ে হাড়ে চিনতে পেরেছি। তোমাকে। আমার নুন খেয়ে আমারই বদনাম করে বেড়াও, আর ভেবেছো কিনা। তোমাকে আমি এভাবেই সাহায্য করে যাবো? এত সস্তা দুনিয়া?

তাকে এত দিন যা সাহায্য-সহযোগিতা আপনি করতেন, সব বন্ধ করে দেবেন মুহূর্তেই। আর যাই হোক, একজন বিশ্বাসঘাতকের সাথে আর কোনো সম্পর্ক আপনি রাখতে পারেন না।

আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ঘটনায় দূর সম্পর্কের সেই আত্মীয়ের ব্যাপারেও মুহূর্তের জন্য এভাবে ভেবেছিলেন আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, ‘নিয়মিতভাবে তোমাকে যে সাহায্য-সহযোগিতা আমি করতাম, সেটা আজ থেকে বন্ধ করলাম। আমার কন্যার ব্যাপারে যে তোক এতটা অপবাদ দিতে পারে, তার জন্য আমার কোনো দয়া থাকতে পারে না।

একজন মানুষ হিশেবে, একজন বাবা হিশেবে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর এই চিন্তাটা খুবই স্বাভাবিক। আপনি বা আমি হলেও এর ব্যতিক্রম চিন্তা কখনোই করতে পারতাম না, কিন্তু আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর এই চিন্তাটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পছন্দ করলেন না। কেউ একজন আপনার সাথে অন্যায় করেছে বলে তার। সাথে যাবতীয় সম্পর্ক আপনি ছিন্ন করে আসবেন, দুঃসময়ে তাকে দিয়ে আসা সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করে দেবেন–এমনটা করবার ব্যাপারে ইসলাম আপনাকে উৎসাহিত করে না। আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে তাকে সতর্ক করে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন–

‘তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ করে না বসে যে, তারা আত্মীয়স্বজন, মিসকিন এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের সাহায্য করবে না। তারা যেন তাদের ক্ষমা করে দেয় ও তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷৷’[১]

আল্লাহ বলছেন–আমাদের মধ্যে যাদের মর্যাদা ও প্রাচুর্য আছে, আমরা যেন কখনোই আমাদের আত্মীয়স্বজন, দরিদ্র এবং আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারী, আমাদের সাহায্য যাদের অতীব দরকার, তাদের যেন আমরা উপেক্ষা না করি। হতে পারে আমাদের কোনো বিপদের সময়ে তারা আমাদের পাশে ছিলো না। হতে পারে তাদের জন্যই আমাদের পার করতে হয়েছে কোনো ভয়ংকর দুঃসময়। হতে পারে আমাদের সাথে তারা ভারি অন্যায়-অবিচার করেছে কোনো একদিন। কোনো একটা সময়ে তাদের কাছে হাত পাতলেও তারা হয়তো আমাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি।

আল্লাহ বলছেন–তাদের সেই অন্যায়ের, তাদের সেই অবিচারের, সেই। আত্মকেন্দ্রিকতা এবং হিংসুটে মনোভাবের হিশেব যেন আমরা না করি। সেগুলোকে হৃদয়ে টুকে রেখে তাদের দুঃসময়ে যেন আমরা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে না উঠি। তাদের ভুল, তাদের অবিবেচকতা, তাদের অন্যায় যেন আমাদের এমন কোনো কাজের দিকে ধাবিত না করে, যেখানে তাদের আর আমাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই; বরং ভুলকে ভুলে গিয়ে, আমাদের দয়া, উদারতা আর প্রশস্ত হৃদয় যেন আমরা নিবেদন করতে পারি তাদের দিকে।

এতে কী হবে জানেন?

ওই একই আয়াতে আল্লাহ বলছেন–’তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিন?

যে আপনার ক্ষতি চায়, যে আপনার সাথে শত্রুতা করে, যে আপনার ভালো সহ্য করতে পারে না, তার উপকার করা মানে যে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া, তার কাছে হেরে যাওয়া, তা কিন্তু নয়। এতে বরং আপনার লাভের পরিমাণটাই বেশি। একটা শাশ্বত মানবজীবনের উদাহরণ আপনি তার সামনে এবং সমাজের সামনে স্থাপন করতে পারবেন। সত্যিকারের বীরপুরুষ তো তারাই, যারা ক্ষমতা হাতে পেলে বিনয়ী হয়। প্রতিশোধের সমস্ত সুযোগ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা ক্ষমার চাদরে মুড়িয়ে নেয় জীবন–তারাই শক্তিমান। কদর্যতার বিপরীতে, হিংসা আর দ্বেষের দুনিয়ায় আপনার এহেন মহানুভবতা সমাজের অনেকের জন্য হয়ে উঠবে অনুপ্রেরণার!

তবে সবচেয়ে বড় লাভ এটা নয়। সবচাইতে বড় লাভ হলো–আপনার এই কাজের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। একজনের ভুলকে বড় করে না দেখে তার দুয়ারে দয়ার ঝুড়ি নিয়ে যখন আপনি উপস্থিত হবেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাও তার দয়ার ভান্ডার আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন। আসমানে তিনি আপনার মর্যাদাকে এত উন্নীত করবেন যে, আপনার ইচ্ছে হবে, ইশ! এরকমভাবে ক্ষমা করে দেওয়ার আরো অহরহ সুযোগ, যদি দুনিয়ায় আমি পেতাম!

যে ক্ষমা করে তার কোনো ক্ষতি নেই; বরং তার জন্য আছে মহা-পুরস্কার।

আয়াতটা নাযিল হওয়ার পর আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু নিজের ভুলটা উপলব্ধি করতে পারলেন। তিনি বললেন, ‘অবশ্যই আমি চাই যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাকে ক্ষমা করুন। আমি কখনোই আমার ওই আত্মীয়কে দিয়ে আসা সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করবো না।[২]

আত্মীয়ের এমন কাজে সত্যই ব্যথিত হয়েছিলেন আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু, কিন্তু আল্লাহর ক্ষমালাভের মতো মহা-পুরস্কারের ঘোষণা যখন এলো, সেই ব্যথা আর স্থায়ী হলো না অন্তরে। তিনি ক্ষমা করে দিলেন তার সেই আত্মীয়কে। হৃদয়ে জমা করে রাখলেন না কোনো দুঃখবোধ।

দুই.

অন্তরে দুঃখ পুষে রেখে প্রতিশোধ যদি নেওয়াই যেতো, এই কাজে ইউসুফ আলাইহিস সালামের চাইতে বেশি অগ্রাধিকার আর কে পেতেন দুনিয়ায়?

সেই ছোটোবেলায় খেলার নাম করে ভাইয়েরা তাকে কূপে ফেলে দিয়েছিলো। এরপর জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে কত দুঃসময়ের ভেতর দিয়েই না যেতে হয়েছিলো তাকে! কিন্তু একদিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যখন তাকে রাজত্ব দান করলেন, দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করলেন ক্ষমতা দিয়ে, যখন ভাইদের অন্যায়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সমস্ত সুযোগ ইউসুফ আলাইহিস সালামের পায়ে লুটোপুটি খেতে লাগলো, তখন ভাইদের উদ্দেশ্য করে তিনি কী বললেন জানেন?

আজ তোমাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ যেন তোমাদের ক্ষমা করেন। তিনি তোপরম করুণাময়।[৩]

ব্যথার সাগরে হাবুডুবু খেয়েছিলেন তিনি। আপন ভাইদের ষড়যন্ত্রে বঞ্চিত হয়েছেন। বাবার আদর-স্নেহ, মায়ের ভালোবাসা থেকে। পথে পথে ঘুরতে হয়েছে তাকে। বিক্রি হয়েছিলেন দাস হিশেবে, তার চরিত্রকে তোলা হয়েছিলো কাঠগড়ায়, তাকে বন্দি করা হয়েছিলো কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে। জীবনের এত চড়াই-উতরাই শেষে যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকে রাজত্ব দান করলেন, ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ দিলেন, প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে তখন তিনি ভাইদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েননি। তাদের কাছে পেয়ে তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

ভাবুন তো, কত মহৎ প্রাণের অধিকারী হওয়া গেলে এভাবে ক্ষমা করা যায়!

তিন.

একদিন আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন কোনটা?

নবিজি বললেন, আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন ছিলো সেটা, যেদিন । তায়িফবাসী আমার প্রতি নির্দয় হয়েছিলো।[৪]

মক্কাবাসীর অনবরত অনাচার-অত্যাচার আর প্রিয়তম চাচা আবু তালিব এবং প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান নবিজি তায়িফে গিয়েছিলেন এক বুক আশা নিয়ে। তিনি ভেবেছিলেন, আর যা-ই হোক, তায়িফবাসী মক্কাবাসীর মতো নির্দয় হবে না অন্তত। হয়তো আল্লাহর দ্বীনকে তারা পরম মমতায় গ্রহণ করবে, কিন্তু তায়িফবাসী তা করেনি। উল্টো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তারা এত ঘৃণ্য আর জঘন্য পর্যায়ের অপমান করলো যে, তাকে রক্তাক্ত করে, পাথরের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে বিতাড়িত করলো তায়িফ থেকে। সেই দিনটা ছিলো নবিজির জীবনের সবচেয়ে বিষাদময় দিন।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন অপমান দেখে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পাহাড়ের ফেরেশতাকে আদেশ দিয়ে পাঠালেন। সেই ফেরেশতা এসে নবিজিকে বললেন, ‘আসোলামু আলাইকুম ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমি পাহাড়ে নিযুক্ত আল্লাহর ফেরেশতা। তায়িফবাসী আপনার সাথে যা করলো, তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দেখেছেন এবং তিনি আমাকে আপনার কাছে আসবার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি চান, এই ঘৃণ্য কাজের বদলা হিশেবে দুই পাহাড়ের চাপে আমি তাদের পিষ্ট করে ফেলবো এখনই।

এত অত্যাচার, এত নির্যাতন, এত অপমান! তবু পাহাড়ের ফেরেশতার এই কথার জবাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন কী বললেন জানেন? তিনি বললেন, ‘না না, আমি তা চাই না। আমি আশা করি একদিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই জনপদে এমন মানুষদের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে।[৫]

প্রতিশোধের কী দুর্দান্ত সুযোগ সামনে এলো, কিন্তু আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিকে ঝুঁকলেন না মোটেও। তায়িফবাসীদের পাহাড়ের চাপে পিষ্ট করার বদলে তিনি তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন ক্ষমার দুয়ার।

চার.

একজীবনে কী পাচ্ছেন আর কী পাচ্ছেন না, কার কাছে পাচ্ছেন আর কার কাছে পাচ্ছেন না–এসব ভেবে যদি জীবন সাজাতে যান, তাহলে মানুষের ভুলগুলো বড় করে দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না। মানুষের ভুলগুলো, ত্রুটিগুলো যদি মনে রাখতে শুরু করেন, যদি আজ থেকে সেসব নোট করা শুরু করেন, সেই নোট খাতা একদিন এনসাইক্লোপিডিয়ার সমান হয়ে দাঁড়াবে! চারপাশে আপনি তখন শত্রু ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবেন না, কিন্তু এমন সংকীর্ণ হৃদয় নিয়ে বাঁচবার জন্য ইসলাম আপনাকে শেখায় না। ইসলাম আপনাকে উদার, মহৎ আর প্রশস্ত হৃদয় বানাতে শেখায়।

কে কী দিলো, কে কী করলো–তার ওপর নির্ভর করে আপনি মানুষকে বিচার করবেন না। আপনি মানুষের কাজে লাগবেন, তাদের পাশে দাঁড়াবেন, তাদের বন্ধু হবেন বিনা শর্তে, বিনা অভিপ্রায়ে।

উঁহু, ঠিক তা নয়। অভিপ্রায় তো একটা আপনার থাকাই লাগবে। কেন আপনি মানুষের ভালো চাইবেন, কেন শত্রুর বিপদেও পাশে দাঁড়াবেন, কেন উপকারের বাসনা নিয়ে ছুটে যাবেন মানুষের দ্বারে, তার কারণ আপনার রব আপনাকে জানাচ্ছেন–

মানুষের কল্যাণ করো, যেভাবে আল্লাহ তোমার কল্যাণ করেন।[৬]

কে আপনার অকল্যাণ সাধন করলো, কে আপনার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ালো না, কে আপনার পেছনে শত্রুতা করেছিলো–এসবকিছুর জন্য আপনার জীবন কিন্তু থেমে থাকেনি। সেই অকল্যাণ থেকে, সেই দুঃসময় থেকে, সেই শত্রুতা থেকে কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে ঠিকই উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। তাই, কারো উপকার করার জন্য সে আপনার জন্য কী করেছে’–তা কখনো বিবেচনায় রাখবেন না। সকল প্রতিকূলতার বিপরীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যে দয়া আর সাহায্য আপনি পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন–মানুষের ঘৃণা, অসহযোগিতা আর অসহিষ্ণুতার তুলনায় সেসব নিয়ামত অনেক অনেক বিশাল!

মানুষ যে দুঃখগুলো আপনাকে দেয়, সেগুলো মনে রাখুন, তবে দুঃসময়ে সেগুলো টেনে তাদের ঘায়েল করবার জন্য নয়। মুনাজাতে আল্লাহর কাছে বলবার জন্য যে ‘ইয়া আল্লাহ, আমার দুঃসময়ে আমি তাকে পাশে পাইনি, কিন্তু আপনি ঠিক-ই আমার পাশে ছিলেন। এখন তার দুঃসময়ে আপনি আমাকে তার মতো বানাবেন না। আমার অন্তরকে তার মতো সংকীর্ণ করে দেবেন না। তার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাওফিক আপনি আমাকে দান করুন, ইয়া রব।

আপনার হৃদয়ের জানালাটা সবার জন্য খুলে দেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর দয়ার ভান্ডার আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।

———–
[1] সুরা নুর, আয়াত : ২২

[2] সহিহুল বুখারি : ৪১৪১; সহিহ মুসলিম : ২৭৭০; তাফসিরুল বাগাভি, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২১; কুরতুবি, খণ্ড :১২, পৃষ্ঠা : ২০৭; তাবারি, খণ্ড : ১৯, পৃষ্ঠা : ১২৩; তাফসির ইবনু আবি হাতিম, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ২৫৪৩; দালাইলুন নুবুওয়াহ, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৭১

[3] সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৯২

[4] সহিহুল বুখারি : ৩২৩১; সহিহ মুসলিম : ১৭৯৫; দালাইলুন নুবুওয়াহ : ২১৩; রিয়াযুস সালিহিন : ৬৪২

[5] সহিতুল বুখারি : ৩২৩১; সহিহ মুসলিম : ১৭৯৫; সহিহু ইবনি হিব্বান : ৬৫৬১; মুসনাদুল বাযযার :১০৩

[6] সুরা কাসাস, আয়াত : ৭৭

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *