০৪. পতনের আওয়াজ পাওয়া যায়
এক.
ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ রাহিমাহুল্লাহ খুব চমৎকার একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের সাথে তার শেষ হজে আমি সফরসঙ্গী ছিলাম। আমরা যখন মদিনার শেষ উপকণ্ঠে এসে পৌঁছাই, তখন আমাদের সামনে এক জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ এসে উপস্থিত হলেন। বয়সের ভারে তার চোখের সু-যুগল পর্যন্ত সাদা হয়ে গেছে। বয়স্ক লোকটার সাথে তরুণ ও আধ-বয়স্ক মিলিয়ে আরো অনেকগুলো মানুষ ছিলো এবং তাদের একজন আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আপনাদের মধ্যে আহমাদ ইবনু হাম্বল কে?’
তখন আমাদের দলে থাকা অন্য লোকেরা হাত উঁচিয়ে আহমাদ ইবনু হাম্বলকে দেখিয়ে দিলো। এরপর, জরাগ্রস্ত ওই বৃদ্ধ লোক, অন্য একজনের সহায়তায় কোনোমতে আহমাদ ইবনু হাম্বলের সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘তোমার নাম আহমাদ ইবনু হাম্বল?’
আহমাদ ইবনু হাম্বল বললেন, আমার আম্মা এমনটাই আমার নামকরণ করেছেন।
‘বাছা, তুমি কি আমায় চিনতে পেরেছো?’
‘আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’
বৃদ্ধ লোকটা বললেন, ‘আমি ওবাইদুল্লাহ ইবনু মুসা ইবনি জাফর ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আলি ইবনিল হুসাইন ইবনি আলি ইবনি আবি তালিবের বংশের মানুষ। আমি গতকাল স্বপ্নে দেখেছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ও উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বাগদাদ অতিক্রম করছেন। এমন সময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডান কাঁধ থেকে তার চাদরখানা মাটিতে পড়ে যায়। তারপর আমি দেখলাম, হঠাৎ কোত্থেকে যেন এসে তুমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাদরখানা মাটি থেকে কুড়িয়ে পুনরায় তার ডান কাঁধে চড়িয়ে দিলে। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার দিকে তাকালেন। সাথে আবু বকর ও উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমাও। তারা হাসিমুখে তোমাকে বললেন, ‘আহমাদ! সুসংবাদ গ্রহণ করো! জান্নাতে তুমি আমাদের সাথি হচ্ছো।
এরপর, ওই বৃদ্ধলোক সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা কি জানো, ‘আহমাদ ইবনু হাম্বল নবিজির চাদর কুড়িয়ে নিয়ে নবিজির কাঁধে তুলে দিয়েছেন’ বলতে স্বপ্নে কী বোঝানো হয়েছে?’ উপস্থিত জনতার মধ্য থেকে একজন শাইখ বললেন, এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে–নবিজির সুন্নাহকে, যা থেকে এখন মানুষ বিমুখ হয়ে আছে, দূরে সরে আছে, আহমাদ ইবনু হাম্বল তা পুনরায় মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।
ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ বলেন, বৃদ্ধের এই কথা শুনে বিমর্ষ হয়ে যান আহমাদ ইবনু হাম্বল। তিনি বলেন, ‘আহা! এই কথা শোনার আগে যদি আমার এবং এই লোকের মাঝে একটা পাহাড় এসে দাঁড়াতো, কতই না উত্তম হতো।’[1]
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, জান্নাতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথি হতে পারার যে সৌভাগ্য ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহকে বৃদ্ধ লোকটা শোনালেন, তা কি ইমাম আহমাদ পছন্দ করেননি? এজন্যই কি তিনি বলেছেন, এই কথা শোনার আগে আমার এবং এই লোকের মাঝে যদি একটা পাহাড় এসে দাঁড়াতো, কতই না উত্তম হতো?
না, আসলে ব্যাপারটা তা নয়। জান্নাতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথি হওয়ার স্বপ্ন তো প্রত্যেক মুমিনের। ইমাম আহমাদ সেটা অপছন্দ করবেন, তা কী করে হতে পারে? বরং তিনি ভয় পেয়েছেন একটা জিনিসকে–আত্মম্ভরিতা। আত্মমুগ্ধতার ভয়। তিনি শঙ্কিত হয়েছেন–যদি এই বৃদ্ধ লোকের কথা শুনে তার মনে অহমিকা প্রবেশ করে? নবিজির হাদিসকে পুনরুজ্জীবিত করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে পুরস্কারের কথা এই বৃদ্ধলোক তাকে জানিয়ে গেলেন, তা থেকে যদি তার অন্তরে আত্মম্ভরিতার জন্ম নেয়? যদি কোনোভাবে তাতে রিয়া তথা লোকদেখানো অনুভূতি প্রবেশ করে, তাহলে তো সর্বনাশ! এ-কূল ওকূল সবকূলই যে তখন হারাবেন তিনি!
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ ঠিক এই কারণেই সেদিন ভীত হয়ে ছিলেন। নিজের ভেতরে যাতে কোনো অহংকার, আত্মমুগ্ধতা না আসে, সেজন্যই তিনি দুজনের মাঝে একটা পাহাড়ের বাধা আশা করে ছিলেন।
ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহর এই ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। নিজের ব্যাপারে আমরা যখন অনেক বেশি আত্মতুষ্টিতে ভুগবো, তখন আখিরাতে ভালো ফলাফল লাভের আশা আমাদের জন্য ক্ষীণ হয়ে আসবে। আমি তো অনেক বেশি ইবাদত করি, আমল করি, সাদাকা করি, দ্বীন প্রচার করি’–এই অতি-ভাবনাগুলো আমাদের যাবতীয় আমলকে বিনষ্ট এবং আমাদের আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবার জন্য খুবই যথেষ্ট।
দুই.
আবদুল্লাহ নামের একজন বর্ণনা করেছেন, তারাসুসে[2] আমি আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক এবং মুতামির ইবনু সুলাইমানের সাথে অবস্থান করছিলাম। এমন সময়, হঠাৎ চারদিকে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো এবং চারদিক থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান এলো। রোমান ও মুসলিমরা মুহূর্তের মধ্যেই মুখোমুখি সমরে লিপ্ত হলো।
রোমানদের একজন দলনেতা বললো, ‘আমরা মুখোমুখি, জনে জনে যুদ্ধ করবো। একজনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র একজন।’
সে মুসলিমদের আহ্বান করলো যেন একজন একজন করে তার সাথে ময়দানে নেমে যুদ্ধ করে। তার কথানুযায়ী মুসলিম শিবির থেকে এক যোদ্ধা তার বিরুদ্ধে ময়দানে নামল এবং ওই যোদ্ধা রোমান দলনেতার হাতে শহিদ হলো। এরপর আরেকজন গেলো এবং সেও শহিদ হলো। এভাবে ওই দলনেতার হাতে মুসলিম শিবিরের মোট ছয়জন যোদ্ধা শহিদ হলেন।
মুসলিম শিবিরে ততক্ষণে একটা চাপা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং ওই রোমান দলনেতা খুব গর্বভরে, অহংকারের সাথে বিজয়োল্লাস করে চেঁচিয়ে বললো, আর কার বুকে সাহস আছে আসো দেখি?
এরপর, আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক আমার দিকে তাকালেন আর বললেন, আমি যাচ্ছি তার সাথে লড়তে। আমি যদি মারা যাই, তাহলে তুমি অমুক অমুক কাজ করতে ভুলে যেয়ো না কিন্তু।
আমাকে এতটুকু বলে নিজের ঘোড়া ছুটিয়ে যুদ্ধের ময়দানে রোমান সেনাপতির সাথে সম্মুখ সমরে নেমে পড়লেন তিনি। তখন একটা কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে নিয়েছিলেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। দীর্ঘক্ষণ টানা যুদ্ধের পর আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের হাতে ওই দাম্ভিক রোমান সেনাপতির মৃত্যু হয়। তারপরে আরো ছয়জন রোমানযোদ্ধাকে হত্যা করেন তিনি। সম্মুখ সমরে বিজয়াসনে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে লাগলেন, আর কে কে লড়তে চাও, এসো?’
কিন্তু আর কোনো রোমান সেনা আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের সামনে আসতে সাহস করলো না। তারা এতটাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো যে, ওখানেই রণভঙ্গ দিয়ে পালালো।
আবদুল্লাহ নামের ওই লোক আরো বলেন, ‘যুদ্ধশেষে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক পুনরায় আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং আমার কানের কাছে মুখ এনে চুপিসারে বললেন, ‘আবদুল্লাহ, এতক্ষণ ধরে তুমি যা দেখলে, আল্লাহর ওয়াস্তে আমি বেঁচে থাকা অবধি এই ঘটনা তুমি কাউকেই বোলো না।[3]
সেদিনও আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ আত্মম্ভরিতার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি জানতেন–আত্মমুগ্ধতার বিষবাষ্প যদি তাকে একবার পেয়ে বসে, তবে তার পদস্খলন অবশ্যম্ভাবী। বিশাল প্রতাপশালী রোমান বীর এবং যুদ্ধবাজ রোমান সৈন্যদের হত্যার সংবাদ যদি দিকে দিকে, মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, সেটা নিয়ে যে তার অন্তরে অহংকার দানা বাঁধবে না, অহমিকা যে জেঁকে বসবে না তার মনে–তার কী নিশ্চয়তা? তিনি ভয় পাচ্ছিলেন–যদি শয়তান তার কৃতিত্বকে তার সামনে বড় করে তুলে ধরে? যদি অবচেতন মনের কোথাও এই আত্মপ্রশংসা ধ্বনিত হয়–এই মহাবীরকে পরাস্ত করার সকল কৃতিত্ব আমার’ ‘আমার শক্তিবলেই এই অসাধ্য সাধিত হয়েছে’–তবে ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের পতন ঠেকাবে কে? আমাদের পূর্বসূরিরা নিজেদের জীবনটাকে এভাবেই সাজিয়েছেন। তারা ছিলেন বীর, কিন্তু বীরত্বের সবটুকু কৃতিত্ব তারা সোপর্দ করতেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকে। তারা ছিলেন জ্ঞানের ভান্ডার, তথাপি সেই জ্ঞানের ভারত্ব তাদেরকে বেপরোয়া করে তুলতো না। যুগান্তকারী সকল কর্ম সম্পাদন করতেন, কিন্তু প্রশংসার ভাগিদার তারা হতে চাইতেন না। সমস্ত প্রশংসাকে তারা কেবল মহান মালিকের জন্য তুলে রাখতেন। কৃতিত্বের ভাগ-বাঁটোয়ারা থেকে পালাতেন তারা। বেশ ভালোমতোই তারা জানতেন–যেখানেই কৃতিত্বের আকাঙ্ক্ষা, সেখানেই দাম্ভিকতার সূত্রপাত। যেখানেই প্রশংসা কুড়ানোর লোভ, সেখানেই লোকদেখানো কাজের জন্ম।
তিন.
কুরআনের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখবো এই আত্মম্ভরিতা, আত্মমুগ্ধতার কারণেই কিন্তু ইবলিস অভিশপ্ত হয়েছিলো। আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবাইকে আদেশ করলেন আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করার জন্য। সকল ফেরেশতা বিনা বাক্যব্যয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করলো। তারা সিজদা করলো আদম আলাইহিস সালামকে; কিন্তু ইবলিস, যে কিনা একজন উঁচু পর্যায়ের জিন ছিলো, সে রীতিমতো বেঁকে বসলো। আত্মমুগ্ধতায় বিভোর হয়ে সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে বসলো। নিজে আগুনের তৈরি হওয়ায় মাটির তৈরি আদম আলাইহিস সালামকে সে তুচ্ছজ্ঞান করলো। সে বললো, ‘আদম মাটির তৈরি, আমি আগুনের। আগুন মাটির চাইতে সেরা। আদমের চেয়ে তাই আমিই শ্রেষ্ঠ। আগুনের তৈরি হয়ে মাটির তৈরি কাউকে আমি সিজদা করতে পারবো না।
পরের গল্পটা তো আমাদের সবার জানা। ইবলিস অভিশপ্ত হলো চিরতরে। সে হয়ে গেলো মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। আত্মম্ভরিতা ও আত্মমুগ্ধতা একজনের জন্য কীভাবে যে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, তা ইবলিসের ঘটনা থেকেই জানতে পাই আমরা।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একটা বড় গুণ হলো–তারা কখনোই আত্মম্ভরিতায় ভোগেন না। আত্মপ্রশংসায় গদগদ হোন না। আত্মবিমুগ্ধতায় ডুবে থাকেন না। কোনোকিছু অর্জন করলে কিংবা কোনো কিছু যদি আমরা ভালো করতে পারি, অথবা ভালো করার যোগ্যতা রাখি, তখনই আমাদের মাঝে অহংকার প্রবেশ করে। আমরা ভাবি–এ বুঝি কেবল আমারই শ্রম আর মেধার ফসল। এ বুঝি কেবল আমারই যোগ্যতা, কিন্তু আল্লাহর কাছে যারা প্রিয় হয়েছেন, যারা নিজেদের নাম লিখে নিতে পেরেছেন আসমানের সোনালি পর্দায়, তারা ভাবতেন ঠিক এর উল্টো।
যাকারিয়া আলাইহিস সালাম মারইয়াম আলাইহাস সালামের ঘরে এসে নানাবিধ ফলমূল দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন। এমনসব ফলমূল যা ওই অবস্থায়, ওই সময়ে বসে পাওয়া মারইয়াম আলাইহাস সালামের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চমকিত হয়ে যান যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! কৌতূহল নিবৃত করতে না পেরে তিনি মারইয়াম আলাইহাস সালামের কাছে সরাসরিই জানতে চান এতসব ফলমূল তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন। যাকারিয়া আলাইহিস সালামের কৌতূহলের জবাবে মারইয়াম আলাইহাস সালাম সেদিন যা বলেছিলেন, তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। মারইয়াম আলাইহাস সালাম বলেছেন, ‘এগুলো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান তাকে অবারিত রিযিক দান করেন।[4]
মারইয়াম আলাইহাস সালাম বলতে পারতেন, ‘আমি বেশি বেশি ইবাদত করি, তাই তার বিনিমিয়ে এসব লাভ করেছি। অথবা তিনি এ-ও বলতে পারতেন যে, ‘এগুলো আমি আমার যোগ্যতা-বলে লাভ করেছি। আপনি কিংবা আমি হলে হয়তো-বা এভাবেই বলতাম, কিন্তু মারইয়াম আলাইহাস সালাম এভাবে বলেননি। তিনি এই অর্জনকে, এই প্রাপ্তিকে সরাসরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যাকারিয়া আলাইহিস সালামের কাছে নিজের বড়োত্ব আর গুরুত্ব জাহির না করে তিনি প্রশংসার ঝুড়িটা তাঁর দিকেই সোপর্দ করে দিয়েছেন, যিনি প্রকৃতপক্ষে সকল প্রশংসার হকদার।
আমাদের সকল অর্জন, সকল প্রাপ্তি মূলত আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। তাঁর দয়া ব্যতীত কোনোকিছু অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সূক্ষ্ম ব্যাপারটা আমি আর আপনি না বুঝতে পারলেও, আল্লাহর সত্যিকার প্রিয় বান্দারা বুঝতে পারতেন। তাই, জীবনের সকল অর্জনকে, সকল প্রাপ্তিকে তারা আল্লাহর দিকে ঠেলে দিতেন। আত্মম্ভরিতা, আত্মমুগ্ধতার বশবর্তী হয়ে তারা কখনোই সেগুলোকে নিজেদের যোগ্যতা আর মেধার ফসল ভেবে বসতেন না।
আত্মমুগ্ধতায় বিভোর হয়ে পা ফসকেছে স্বয়ং ইবলিসেরও। নিজের গাঠনিক উপাদানের দিকে তাকিয়ে সে ভেবেছিলো মাটির তৈরি আদমের চেয়ে সে শ্রেষ্ঠ কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি তো ইবলিস নির্ধারণ করবে না, এটা নির্ধারণ করবেন কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। আদম শ্রেষ্ঠ হবে, না ইবলিস–তা নির্ধারণের ক্ষমতা কেবল এককভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার।
এই আত্মমুগ্ধতা থেকে বাঁচতেই সেদিন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ। হাদিসশাস্ত্রের যে যুগান্তকারী কাজ তিনি করেছেন, সেকারণে যদি তার মনে কোনো অহংকার জেঁকে বসে, সেই ভয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘আহা! এই কথা শোনার আগে যদি আমার এবং এই লোকের মাঝে একটা পাহাড় এসে দাঁড়াতো, কতই না উত্তম হতো।
আত্মগৌরব দ্বারা নিজের অন্তরকে কাবু হওয়ার হাত থেকে উদ্ধার করতেই সেদিন আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ রোমান যুদ্ধবাজকে দারুণভাবে পরাস্ত করার পরেও সঙ্গীকে বলেছিলেন, ‘আবদুল্লাহ, এতক্ষণ ধরে তুমি যা দেখলে, আল্লাহর ওয়াতে আমি বেঁচে থাকা অবধি এই ঘটনা তুমি কাউকেই বোলো না।
এই আত্মমুগ্ধতায় বিলীন হননি মারইয়াম আলাইহাস সালাম। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে যে খাবার তার জন্য বরাদ্দ ছিলো, তা পেয়ে তিনি বলেছেন, এগুলো আমার রবের কাছ থেকেই আসে। আর, আমার রব যাকে ইচ্ছা অবারিত রিযিক দান করেন।
আমরা যখন কোনোকিছু অর্জন করবো অথবা অর্জনের যোগ্যতা অর্জন করবো, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এই অর্জন, অর্জনের এই যোগ্যতা আমাদের প্রতি মহান রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি দয়া করেছেন বলেই এগুলো আমার জীবনে এসেছে। কখনোই এটা ভাববো না যে–এটা আমি এককভাবে নিজ যোগ্যতায় পেয়েছি। এমন ধারণা করাটা আত্মম্ভরিতারই নামান্তর; বরং আমাদের মারইয়াম আলাইহাস সালামের মতোই ভাবতে হবে। আমাদের যা কিছু অর্জন, যা কিছু প্রাপ্তি সব মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।
কোনো অর্জন বা অর্জনের কোনো যোগ্যতা যখন আমরা লাভ করবো, তখন আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাবো সবার আগে। এই শিক্ষাটা আমরা কুরআন থেকেই পাই। সুরা নাসরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বিজয়ের পূর্বাভাস দেওয়ার সাথে সাথে কয়েকটা করণীয়ও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেছেন–
যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, আর (হে নবি) আপনি লোকদেরকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে ফিরতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার রবের পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুল করেন।[5]
বিজয় অর্জিত হলে এবং লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলছেন, যেন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং দ্বীন কায়েমের এই কাজে যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, তার জন্য যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। আল্লাহর নবি, যিনি একজন পূত-পবিত্র মানবাত্মা, যাকে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জমিনে বুনেছেন তাওহিদের বীজ, যার মাধ্যমে সুশোভিত করে তুলেছেন তাঁর দ্বীনের সৌন্দর্য, তার জন্যই যদি আল্লাহর আদেশ ও হুকুম এমন হয়ে থাকে, আমাদের বেলায় তাহলে সেটা কেমন হতে পারে?
বিজয় অর্জিত হয়ে গেলে আল্লাহ বলেননি উল্লাসে ফেটে পড়তে। তিনি বলেননি তা নিয়ে গর্ব করে বেড়াতে কিংবা বেপরোয়া হয়ে উঠতে; বরং তিনি বলেছেন, বিজয়ের দেখা পেলে আমরা যেন তাঁর দিকেই ফিরে আসি, সমস্ত প্রশংসার মালিক যে একমাত্র তিনিই–তা অকপটে স্বীকার করি এবং বিজয় অর্জনে আমাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় ভুল-ভ্রান্তির জন্য আমরা যেন তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।
চার.
দ্বীনের পথে হাঁটতে শুরু করার পর আমরা সাধারণ যে ভুলটা সবচেয়ে বেশি করি, তা হলো–আত্মম্ভরিতা। জেনে কিংবা না-জেনে, বুঝে অথবা না-বুঝে জীবনে চলার পথে আমরা কোনো না কোনোভাবে এই ফাঁদে আটকে যাই। জীবন থেকে জাহিলিয়াতের ধুলো ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার পরে আমরা যখন আমলের একটা বৃত্তে প্রবেশ করি, যখন আমরা সালাতে নিয়মিত হই, সিয়ামে তৎপর হই, দান-সাদাকা এবং ভালো কাজে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি, এমনকি তাহাজ্জুদেও আমরা যখন নিয়মিত জাগতে শুরু করি, তখন আমাদের মনের কোনো এক সূক্ষ্ম কোণে এই ধারণা উঁকি দিতে শুরু করে যে–’আমার চেয়ে বেশি আমল, বেশি সাদাকা, বেশি সিয়াম, বেশি তাহাজ্জুদ-গুজার বান্দা আশপাশে সম্ভবত আর কেউ নেই।
হতে পারে দ্বীন নিয়ে আমার মতন তৎপর, উদগ্রীব আর সচেষ্ট মানুষ আমার আশেপাশে আর একটাও নেই, কিন্তু তবু কোনোভাবে এই ধারণা মনে আনাই যাবে না যে–আমি এত বেশি আমল-ইবাদত করছি, এত বেশি আল্লাহর স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি, এমন কেউ নেই, যে আমাকে টেক্কা দেবে। এমন ভাবনা নিঃসন্দেহে শয়তানের ওয়াসওয়াসা। আমাদের আমল-ইবাদত, আমাদের তাকওয়ার উচ্চতা যতই আকাশ স্পর্শ করুক না কেন, নিজেকে বড় আর অন্যকে ছোট হিশেবে দেখতে গেলেই আমাদের নিশ্চিতভাবে পা ফসকে যাবে। এমন চিন্তা অবশ্যই অহংকার থেকে উৎসারিত। আমরা কেউ কি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমাদের যাবতীয় ইবাদত আল্লাহ কবুল করে নিচ্ছেন? এটাও কীভাবে ভাবতে পারি যে–অন্যদের সামান্য আমলগুলো আল্লাহর কাছে খারিজ হয়ে যাচ্ছে?
আবু ওয়াহাব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের কাছে অহংকার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘যখন তুমি লোকদের ব্যাপারে বিদ্রূপ করো, তা-ই হলো অহংকার। আমি বললাম, ‘আত্মম্ভরিতা কি?’ তিনি বললেন, ‘যখন তুমি ভাব যে, তুমি এমন কিছু করো, যা আর কেউ করে না।[6]
আত্মম্ভরিতা বিপদ ডেকে আনে। ভালো আমলগুলোকে রিয়ায় পরিণত করে। যখনই মানুষ নিজের আমল-ইবাদতের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, তখনই তার পা ফসকে যায়। সাফা পর্বতে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু দুআ করতেন আর বলতেন, ‘ইয়া আল্লাহ, আপনি বলেছেন, ‘আমাকে ডাকো–আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’, আর আপনি তো কখনোই আপনার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। তাই আজ আমি করজোড়ে আপনাকে ডাকছি, আমার কাছ থেকে আমার দ্বীনকে ছিনিয়ে নেবেন না এবং মুসলিম হয়েই যেন আমি মৃত্যুবরণ করতে পারি।[7]
নবিজির একজন সাহাবি যদি এভাবে দুআ করতে পারেন, যদি তিনি দ্বীন থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করতে পারেন, মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করার ভয়ে তিনি যদি ভীত হতে পারেন, আমরা কেমন ঈমানদার আর তাকওয়াবান যে, নিজেদের আমল-ইবাদত নিয়ে হরহামেশা আত্মম্ভরিতায় ভুগবো? নিজেদের আমলকে, নিজেদের ইবাদত, যাবতীয় রাত্রি-জাগরণ, যাবতীয় ভালো কাজকে আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো সাহাবিরা ‘যথার্থ’ ও ‘যথেষ্ট ভাবতে পারেননি। নবিজিকে সামনে থেকে দেখেও তারা নিজেদের নিয়ে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। আর একটু আমল করতে শুরু করলেই নিজেকে ছাড়া আশপাশের সবাইকে আমরা কিনা গাফিল, উদাসীন আর বিস্মৃত ভাবতে শুরু করি!
হিদায়াত আল্লাহর দেওয়া বড় একটা নিয়ামত। আত্মম্ভরিতা সেই নিয়ামতের রাস্তাকে করে তোলে রুক্ষ ও খড়খড়ে। আমল-ইবাদতের ব্যাপারে অধিক পরিমাণ আত্মবিশ্বাস, অধিক আত্মম্ভরিতা আমাদের এটা ভুলিয়ে দেয়–যেকোনো মুহূর্তেই আমরা পা ফসকে পড়ে যেতে পারি, যেকোনো মুহূর্তেই দ্বীন থেকে আমরা ছিটকে যেতে পারি। একজন হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক যে আজীবন হিদায়াতের রাস্তায় অবিচল থাকবে, তার যে পথ হারাবার কোনো আশঙ্কা থাকবে না–এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার হিদায়াত পায়নি এমন লোকও যে আজীবন হিদায়াতের বাইরে থেকে যাবে, এমন ধারণারও কোনো অবকাশ নেই। তাই হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক যেমন আত্মগৌরব, আত্মম্ভরিতায় ভুগবে না, তেমনি দৃশ্যত হিদায়াতের রাস্তায় নেই এমন লোককেও কটাক্ষ করা, ছোট করে দেখা সমীচীন নয়।
উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন স্ত্রী। তার কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো, কোন সে দুআ, যা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি করতেন?
তিনি বললেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি পড়তেন এই দুআটা–ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিক। অর্থাৎ–হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।[8]
অন্তরকে দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখা মানে হলো–অন্তর যেন দ্বীন থেকে কখনোই সরে
যায়। যেন সর্বদা হিদায়াতের রাস্তায় আমরা থাকতে পারি। মানুষের অন্তরের অবস্থা যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। যেকোনো সময় অন্তর ঝুঁকতে পারে এমনসব দিকে, যা আমাদেরকে দ্বীনের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। এজন্যই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি পরিমাণে যে দুআটা করতেন, তা
এই অন্তরকে দ্বীনে স্থির রাখা বিষয়ক। আমাদের অন্তরের অবস্থা নবিজি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি এমন একটা দুআ আমাদের শিখিয়ে গেছেন। যেখানে অন্তরের স্থিরাবস্থার কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে আমল নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার, বেপরোয়া আর অহংকারী হয়ে ওঠার তো প্রশ্নই আসে না।
শাইখ সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘সর্বপ্রথম আমি নিজেকে উপদেশ দিই এবং অন্যদেরও বলি যে, দ্বীনের পথে অটল-অবিচল থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে মিনতি করুন। কারণ আমাদের প্রত্যেকের পায়ের তলায় লুকিয়ে আছে ফাঁদ। আল্লাহ যদি আমাদের দ্বীনের ওপর অবিচল না রাখেন, নিশ্চিতভাবে আমরা সেই ফাঁদে আটকে যাবো এবং ধ্বংস হবো।[9]
পাঁচ
আমাদের আমলগুলো যেন আমাদের বেপরোয়া না করে তুলে। অহংকারে মোড়া আমলের কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। অহংকার-বিহীন কম আমল অহংকারে ভরা অধিক আমলের চাইতে ঢের উত্তম। অহংকার আর বিনয় একসাথে থাকতে পারে না, যেভাবে মিশে থাকতে পারে না তেল আর জল।
অহংকার অন্তরে প্রবেশ করলে আমাদের ভেতর থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা বিলুপ্ত হয়ে যায় তা হলো বিনয়। ইবলিসের অন্তরে অহংকার ঢুকেছিলো। সে নিজের ব্যাপারে এতই বেশি আত্মবিমুগ্ধ ছিলো যে আল্লাহর আদেশ পর্যন্ত সে অমান্য করলো। আত্মম্ভরিতা ইবলিসকে অভিশপ্তর পথে নিয়ে গেলো।
আবার, যখন অন্তরে বিনয় প্রবেশ করে, আমাদের ভেতর থেকে সবার আগে যে জিনিসটা ধূলিসাৎ হয়ে যায় তা হলো অহংকার। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আদম আলাইহিস সালাম। ইবলিসের ধোঁকায় পড়ে, আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালাম জান্নাতের নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। আদম আলাইহিস সালাম ভুল করেছেন ঠিক, কিন্তু সেই ভুলের ওপর স্থির থাকেননি। সেই ভুলের ওপর গো ধরে বসে থাকেননি। সেই ভুলটাকে তিনি সঠিক প্রতীয়মান করতে উদ্যোগী হোননি৷ বরং, ভুলটাকে ভুল হিশেবে জেনে এবং মেনে নিয়ে তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। নিজেদের কৃত ওয়াদা-চ্যুত হয়ে তারা যে ভুল করেছিলেন তা স্বীকার করে, আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করে মাফ চাইলেন তারা, এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের মাফ করে দেন। অন্তরে বিনয় ছিলো বলেই তারা আল্লাহর কাছে নত হতে পেরেছিলেন। আর, বিনয়ের অভাবেই ইবলিস আল্লাহর কাছে নতি স্বীকার করতে পারেনি।
অহংকার, আত্মমুগ্ধতা, আত্মম্ভরিতা একটা খাদের নাম। এই খাদে একবার পড়ে গেলে ফিরে আসাটা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। তাই, আমাদের উচিত কখনোই আত্মবিমুগ্ধ না হওয়া, আত্মম্ভরিতায় না ভাসা। নিজের যোগ্যতাকে এমনভাবে প্রকাশ না করা, এমনকিছু না ভাবা যেখানে অহংকারের ছাপ ফুটে ওঠে। নিজের যোগ্যতার জন্য আমরা যেন আল্লাহর কাছে আরো বেশি কৃতজ্ঞ, আরো বেশি অনুগত আর বিনয়ী হতে পারি। যদি কখনো মনে হয় আমরা কিছু অর্জন করেছি বা করতে যাচ্ছি, তখনই আমরা যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। অধিক হারে আল্লাহর তাসবিহ তথা তাঁর প্রশংসা করি এবং নিজেদের যাবতীয় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করি। মনে রাখতে হবে– অহংকারী ব্যক্তি কেবল অহংকার করে না, নিজের পতনের আয়োজনটাও করতে থাকে।