১২ অধ্যায় – অ্যাটাক বাই ফায়ার
সানজু বলেন:
১
অগ্নিসংযোগে আক্রমনের পাঁচটি পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেনঃ
এক. শত্রু ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করে তাদের ক্যাম্প তছনছ করে দিতে পারেন। শত্রু ক্যাম্পে এমন অতর্কিত আক্রমণ তাদের মধ্যে চরম ভীতি আর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
দুই. শত্রুর খাদ্য আর জ্বালানীর মজুদে অগ্নিসংযোগ করে তাদের ভীষন অসুবিধায় ফেলে দেয়া যায়। কখনো কখনো এমন আক্রমনের কারনে শত্রু তার পরিকল্পনা বদলাতে, এমনকি পিছু সরে যেতেও বাধ্য হয়।
তিন. শত্রুর যুদ্ধের সরঞ্জামাদি অগ্নিসংযোগ করেও তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয়া যায়।
চার. শত্রুর গোলাবারুদের মজুদে অগ্নিসংযোগ করতে পারলে একে তো তাদের যুদ্ধের জন্য অপরিহার্য গোলাবারুদে টান পরে, তার উপর গোলাবারুদের মজুদ বিস্ফোরিত হয়ে চারপাশে ভয়াবহ পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে।
পাঁচ. সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমণ শত্রু সৈন্যদের সরাসরি হতাহত করে, আর এর ফলে সৃষ্ট ধোয়া যুদ্ধক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয় ভীতি আর বিভ্রান্তি।
.
২
সানজুর মতে, অগ্নিসংযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই মধবর্তী কিছু উপায়ের উপর নির্ভর করতে হয়।
চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, অগ্নিসংযোগ আক্রমনের ক্ষেত্রে সবসময় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।
এক. অগ্নিসংযোগের জন্য দরকারি সব সরঞ্জামাদি সবসময় হাতের কাছে তৈরি রাখতে হয়।
দুই. অগ্নিসংযোগ করার জন্য উপযুক্ত সময় বা দিন-ক্ষন দেখে অগ্রসর হতে হয়। উপযুক্ত সময়’ বলতে আবহাওয়ায় গরমের অত্যন্ত দাবদাহ থাকার কথা। বোঝানো হচ্ছে। উপযুক্ত দিন’ বলতে চাঁদের উপর নির্ভরশীল হতে বলা হচ্ছে, কারণ চাঁদ দেখে বলে দেয়া যায় বাতাসের বেগ থাকবে কিনা।
তিন. পরিস্থিতির পরিবর্তন। অগ্নিসংযোগে আক্রমণ করতে গেলে যে কোন সময় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
চার. শত্রুর শিবির আগুনে পুড়তে শুরু করলে দ্রুত কোন দিক না ভেবে আক্রমনে যান। যদি শত্রু সৈন্যরা আগুনে ভীত-বিশৃঙ্খল না হয় তবে আক্রমনে যাওয়া একদমই উচিত হবে না।
পাঁচ. আগুন ধরে গেলে পাশাপাশি সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হোন; আর আগুনের পরিস্থিতি যদি পরিকল্পনামাফিক না হয় তবে আক্রমনের পরিকল্পনা বাদ দিন।
ছয়. শত্রু ক্যাম্পের বাইরে আগুন ধরাতে পারলে ভেতরে নিজে থেকে ধরার জন্য অপেক্ষা না করে সুযোগ বুঝে ভেতরেও ধরিয়ে দিন।
সাত. বাতাসের কারনে আগুন যদি ডান থেকে বামের দিকে যায় তাহলে বাম দিক থেকে আক্রমনে যাবেন না।
আট. আগুন দিনে লাগালে সেটা শেষ হতে হতে রাতও হয়ে যেতে পারে।
নয়. এবার সৈন্যদেরকে অবশ্যই অগ্নিসংযোগের পরিস্থিতিতে আক্রমনের জন্য পাঁচটা ভিন্ন এবং সাহসি উপায় জানতে হবে।
দশ. যারা অগ্নিসংযোগে আক্রমণ করবে তাদেরকে অত্যন্ত বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে; আর যারা প্রবল বর্ষনে আক্রমণ করবে তারা অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হয়।
এগারো. পানি কেবলমাত্র শত্রুকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, কিন্তু তাদের যুদ্ধ সরঞ্জামাদি নষ্ট করতে পারে না।
যুদ্ধে জিততে হলে অবশ্যই লক্ষ্য পুরণ করতে হবে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে জিততে না পারলে সেটা অমঙ্গলজনক হবে। এমনকি সেটাকে ‘সময় ক্ষেপন’ ছাড়া আর কিছুই বলা হবে না।
.
৩
সানজুর মতে, যোগ্য শাসকরা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন আর যোগ্য সেনানায়করা তা কাজে পরিণত করান। যদি যুদ্ধের দিকে রাষ্ট্রের কোন ঝোঁক না থাকে, তবে তা করতে যাবেন না। যদি সফলতা অর্জন করতে সন্দেহ থাকে তবে সৈন্যদের কাজে লাগানো ঠিক হবে না। বিপদে না পড়লে যুদ্ধ-বিগ্রহ করবেন না।
সার্বভৌম কোন শাসক ক্ৰেধান্বিত হয়ে তার আর্মিকে যুদ্ধে পাঠায় না কারণ তিনি উদাত্ত ক্ষমতাবান, আর স্রেফ অহঙ্কারের বশবর্তি হয়ে কোন জেনারেল যুদ্ধে লড়তে যান না, কারণ এতে তিনি ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠতে পারেন। অনেক সময় একজন রাগি মানুষও সুখি হতে পারেন, আর একজন বিদ্বেষপূর্ণ মানুষও সকলের ভালোবাসার পাত্র হয়ে উঠতে পারেন, যুদ্ধের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোন রাষ্ট্র রাতারাতি আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে না, আবার যুদ্ধে মৃত সৈনিকও আর জীবন ফিরে পেতে পারে না। আর তাই একজন যোগ্য শাসক হয় পরিণামদর্শী, আর বিচক্ষণ জেনারেল হয় খুব সাবধানী। আর এভাবেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আর রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।