১১ অধ্যায় – যুদ্ধে উদ্ভুত নয় ধরনের পরিস্থিতি
সানজু বলেন:
১
সৈন্যদের যুদ্ধে লাগিয়ে দিলে সেখানে নয় ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারেঃ ডিসপারসিভ, ফ্রন্টিয়ার, কন্টেনশাস, কমিউনিকেটিং, ফোকাল, সিরিয়াস, ডিফিকাল্ট, এনসার্কেল্ড, এবং ডেথ ।
এক. ডিসপারসিভ বা ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতি। যখন একটি আর্মি নিজ দেশের ভেতরে থেকে লড়াই করে, তখন সেই আর্মির অফিসার আর সৈন্যরা নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে। বাড়ি ফিরতে উন্মুখ এই সেনাসদস্যরা যুদ্ধে মরিয়া হয়ে লড়বার পরাক্রম দেখাতে পারে না আর পিছুহটার মত পরিস্থিতিতে উশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে লড়াই না করাই শ্রেয়।
দুই. ফ্রন্টিয়ার গ্রাউন্ড বা সীমান্ত পরিস্থিতি। যখন কোন আর্মি নিজ দেশের সীমান্তের কাছাকাছি শত্রুর দেশের ভেতরে ঢুকে যুদ্ধ করে, তখন পিছুহটা সহজ। এমন পরিস্থিতিতে নৌকা পুড়িয়ে হোক আর ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েই হোক, সৈন্যদের এই বাস্তবতা বুঝানো জরুরী যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে যেকোন উপায়ে যাত্রা বিরতি পরিহার করে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
তিন. কন্টেনশাস বা কলহময় পরিস্থিতি। যখন দুই পক্ষই এমন একটি সুবিধাজনক অবস্থান দখল করার জন্য লড়ছে, যা যে আগে দখল করতে পারবে, সেই জিতবে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত এগিয়ে যান আর আপনার আর্মির পিছুহটার অংশও যেন সামনের সাথে সমান তালে এগিয়ে আসে তা নিশ্চিত করুন। এরপরও যদি সুবিধাজনক অবস্থান দখলে ব্যর্থ হন, তবে যুদ্ধ এড়িয়ে যান।
চার. ওপেন বা কমুউনিকেটিং বা উন্মুক্ত পরিস্থিতি। যখন একটি এলাকার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে উভয় প্রতিপক্ষই সমান সুবিধায় চলাচল করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শত্রুকে অযথাই অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন না। বরং আপনার নিজের প্রতিরক্ষায় আরো মনোযোগী হন।
পাঁচ. ফোকাল বা কেন্দ্রীয়করন পরিস্থিতি। যখন পাশাপাশি তিন দেশের সীমানা এক স্থানে মিলিত হয় আর যে আগে এই এলাকায় পৌঁছায় সেই বাকিদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আপনার মিত্রদের সাথে মিলিত হয়ে শক্তিবৃদ্ধি করুন।
ছয়. সিরিয়াস বা সঙ্গিন পরিস্থিতি। যখন কোন আর্মি পেছনে বেশ কিছু বড় শহর পেরিয়ে শত্রু রাষ্ট্রের রাজধানীর উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনার রসদের পর্যাপ্ত মজুদ চাই, আর পেছনে ফেলে আসা শত্রু শহরের অবশিষ্ট শত্রুরা পুনর্গঠিত হয়ে ক্রমাগত আপনার সরবরাহ লাইনে আঘাত হানবে।
সাত, ডিফিকাল্ট বা কঠিন পরিস্থিতি। যকন কোন আর্মি এমন এক দেশে যুদ্ধ করতে ঢুকে যেখানকার পর্বত সঙ্কুল অথবা চলাচলের জন্য বন্ধুর। এমন পরিস্থিতিতে মুল সড়কের কাছাকাছি থেকে ধীরেসুস্থে দেখেশুনে এগুবেন।
আট, এসার্কেল্ড বা হেমড ইন বা পরিবেষ্টিত পরিস্থিতি। যখন এমন এলাকায় লড়তে হয় যেখানে ঢুকতে সংকীর্ণ পথ পেরুতে হয়, আর যখন থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট বাহিনীও বড় বাহিনীকে হারিয়ে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কৌশলী হোন, প্রত্যক্ষ যুদ্ধের চেয়ে শত্রু চলাচলের পথগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে ফেলুন।
নয়. ডেথ বা ডেসপারেট পরিস্থিতি। যখন বাঁচার একমাত্র পথ হল লড়াই করে শত্রুকে হারানো। তাই এমন পরিস্থিতিতে সেনাদলকে চাঙ্গা রাখুন আর তারা যেন সাধ্যের শেষবিন্দু দিয়ে লড়তে প্রস্তুত হয় সে ব্যবস্থা করুন।
যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলের ক্ষেত্রে এই নয় ধরনের পরিস্থিতি, সৈন্যবিন্যাসের সুবিধা, এবং মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো একজন সেনানায়ক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। আদিকালে যাদেরকে বিচক্ষন যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হতো তিনি শত্রুকে তার বিভিন্ন মিত্র দলের সাথে একতা হতে অসম্ভব করে তুলতেন; সেনারা তাদের যুদ্ধের সরঞ্জামাদির জন্য বড় দল ছোট দলগুলোর সাহায্য নিত; যেখানে দুর্ধর্ষ সৈন্য কম থাকতো সেখানে দুধর্ষ সৈন্যের যোগান দিত আর একদল অন্য দলকে সাহায্য করতো। শত্রু সৈন্যরা যখন এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, তখন তাদেরকে একত্রিত হতে তারা বাধা দেয়; আর যখন একটা জায়গায় তারা জড়ো হয়ে থাকে, তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়।
মেং এর ভাষ্যমতে, বারবার প্রতারনামুলক অভিযান পরিচালনা করুন। পূর্ব দিকে দেখা দিয়ে আক্রমণ করুন পশ্চিম দিক থেকে তাকে উত্তর দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে আঘাত হানুন দক্ষিণ দিক থেকে। এভাবে তাকে উত্তেজিত আর হতভম্ভ করে দিয়ে বিশৃঙ্খল হতে বাধ্য করুন।
তারা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং যখনই সুযোগ পায় অগ্রসর হয়; আর সামনে কোন বাধার মুখোমুখি হলে সেখানেই অপেক্ষা করে।
.
২
সানজু বলেন, এখন কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘সুদক্ষ একটা বিশাল বাহিনীর সাথে কিভাবে আক্রমণ করলে বিজিত হওয়া যায়?’ আমি বলি: ‘শত্রুর দখলকৃত এমন কিছু একটা আপনি দখল করতে চেষ্টা করুন যেটা নিশ্চিত সে আপনার জন্য ছেড়ে দেবে বলে ইচ্ছা আছে।’ তাছাড়া যে বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হয় তা হল:
এক. যুদ্ধে জেতার আসল বাজি হল ক্ষিপ্রতা। শক্রর অপ্রস্তুতার সুযোগ গ্রহন করুন; শত্রু যে সব রাস্তা দিয়ে আপনাকে আশাই করে নি সে সব রাস্তা ধরে অগ্রসর হোন এবং শত্রুর দুর্বল কোন প্রতিরোধের জায়গায় আঘাত করুন।
তু-মু এর ভাষ্যমতে, এই সারসংক্ষেপগুলো যুদ্ধের উদ্ভূত পরিস্থিতির মুল অংশ এবং সেনায়কত্ব অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, অতিপ্রাকৃত ক্ষিপ্রতা থাকতে হবে যুদ্ধে জেতার জন্য। এই কথাটাই এখানে সানজু আবারও ব্যাখ্যা করলেন।
দুই. আক্রমণাত্নক কোন বাহিনীর ক্ষেত্রে একটা সাধারন বিষয় সবসময়ই বলা যায়, যখন কঠিন কেন পরিস্থিতি দিয়ে আপনার সৈন্যরা এগিয়ে যায় তারা কিন্তু একতাবদ্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিপক্ষ তা প্রতিরোধ করতে পারে না। ধন সম্পদে পূর্ণ কোন রাজ্যেই আক্রমণ করুন যাতে সৈন্যরা পর্যাপ্ত খোরাক পায়।
তিন. আহত সৈন্যরা যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় সে দিকে খেয়াল রাখুন; অপ্রয়োজনে তাদেরকে ক্লান্ত করে তুলবেন না। তাদের মনোবল একত্রিত হতে দিন; শক্তি সংরক্ষন করুন। শত্রুর বিরুদ্ধে কালো মেঘের মত রহস্যময় পরিকল্পনা তৈরি করুন।
চার. এমনভাবে সৈন্য সাজান যেখানে লুকোনোর কোন জায়গা নেই। এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও সে যেন সেখান থেকে পালাতে না পারে। মৃত্যুর জন্য সে যদি প্রস্তুত থাকে তবে সে কোন জিনিসটা অর্জন করতে পারবে না? আর তাহলেই কমান্ডিং অফিসার আর সৈন্যরা একত্রে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দেবে। জীবন মরণ পরিস্থিতিতে তারা কোন কিছুকেই ভয় পাবে না। যখন পিছিয়ে যাবার কোন উপায় থাকবে না তখন সেখানে দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করবে। বন্ধুর কোন পরিস্থিতিতে তারা একতাবদ্ধ হয়ে যাবে, এবং সেখানে যদি অন্য কোন উপায় না থাকে, তবেই তারা হাতে হাত মিলিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
এভাবে অগ্রসর হলে সৈন্যদেরকে সাহসি হওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়ার দরকার হবে না। তাদের সর্বোচ্চ শক্তি বল প্রয়োগ করে পাওয়ার পরিবর্তে জেনারেল সেগুলো অর্জন করে নিতে পারেন; তাদের আনুগত্য প্রদর্শনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে জেনারেল তা অর্জন করে নিতে পারেন; তাদের বিশ্বাস পেতে চাওয়ার পরিবর্তে তিনি তা জয় করে নিতে পারেন।
.
৩
আপনার অফিসারদের প্রয়োজনোতিরিক্ত সম্পদ পাওয়ার ইচ্ছা নাও থাকতে পারে কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদ তো আর ফেলে যেতে পারে না; দীর্ঘায়ু পাওয়ার কোন আকাঙ্খ তাদের নাও থাকতে পারে কিন্তু দীর্ঘায়ু পেলে তা তো আর অপছন্দ করতে পারে না।
ওয়াং সি এর ভাষ্যমতে, যখন অফিসার আর সৈন্যরা শুধুমাত্র পার্থিব সম্পদ অর্জনের চিন্তা-ভাবনা করে তারা যে কোন উপায়েই তাদের জীবন বাঁচিয়ে চলতে চেষ্টা করবে।
যুদ্ধে যাওয়ার দিন সৈন্যদের চোখের পানি গলার পাশে বেয়ে নেমে আসে; তাদের চোখের পানি ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসে।
তু-মু এর ভাষ্যমতে, সকলেই মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন করতে যায়। যুদ্ধের আগের দিনই আদেশ জারি হয়ে যায়: ‘আজকের এই পরিস্থিতি একটা বিষয়ের উপর নির্ভর করছে, যারা নিজের দেশের জন্য জীবন বাজি রাখবে না তাদের দেহ শুধুমাত্র জমিনের উর্বরতার জন্য কাজে লাগবে আর পশু-পাখির খাবার হবে।’
কিন্তু তাদেরকে এমন এক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় যেখান থেকে পালানোর কোন উপায় নেই এবং তারা চুয়ান চু ও সাও কিউয়েই এর মত অমর সাহসিকতা প্রদর্শন করে থাকে। আর যখন সৈন্যদেরকে যুদ্ধে লাগিয়ে দেয়া হয় তখন তারা একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। ঠিক যেন মাউন্ট চ্যাং এর সাপের মত। যখন ঐ সাপের মাথায় আঘাত করা হয় তখন সেটি লেজ দ্বারা আক্রমণ করে; যখন লেজে আঘাত করা হয় তখন সেটি মাথা দ্বারা আক্রমণ করে; আর যখন মাঝে আক্রমণ করা হয় সেটি লেজ ও মাথা দ্বারা আক্রমণ করে।
এখন যে কোন কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে: সৈন্যরা কি এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক এই বিষয়গুলোর সমন্বয় করতে পারে?’ জবাবে আমি বলি: হ্যাঁ, তারা পারে। অউ আর ইয়েহ সৈন্যরা যদিও পরস্পর পরস্পরকে পছন্দ করতো না, তবে তাদের হাল ডুবে যেতে শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে তারা একে অপরকে এমনভাবে সাহায্য করতো যেন ডান হাত আর বাম হাত একসাথে কাজ করছে।
আমি বলি, এটা এমন পরিস্থিতি নয় যে ঘোড়ার পা খোঁড়া হয়ে গেল বা রথের চাকা ভেঙ্গে গেল যেখানে একটা আরেকটার উপর নির্ভরশীল।
.
৪
সানজুর মতে, বীরত্বের তকমা অর্জন করা সামরিক আইনের এক বিশাল প্রাপ্তি। আর সেটা সম্ভব হয় ভুমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে যেখানে একেবারে কঠিন আবার ঢিলেঢালা সৈন্যদেরকে কাজে লাগিয়ে এর সর্বোচ্চ সুবিধাটা নিজের করে নেয়া যায়।
একজন সেনানায়ককে অবশ্যই সুশি এবং নিখুঁত মনোবল ও আত্ম নিয়ন্ত্রক হতে হবে। তার পরিকল্পনাগুলোকে অফিসার আর সৈন্যদের থেকে লুকিয়ে রাখতে জানতে হবে।
সাও সাও এর ভাষ্যমতে, তার সেনাবাহিনীকে হয়তো তার পরিকল্পনাটাকে বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে পারবে কিন্তু তার পরিকল্পনা তৈরি করার সময় তারা যোগ দিতে পারবে না।
সন্দেহজনক কোন কাজ করা থেকে তিনি বিরত থাকবেন এবং তাহলেই তার সৈন্যবাহিনীও তা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবে। আর এতেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। তিনি পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনবেন এবং তাহলেই কেউ বুঝতে পারেব না তিনি কি পদ্ধতি অনুসরণ করতে যাচ্ছেন। তিনি সৈন্য শিবির পর্যবেক্ষনের সময় আকাবাকা পথে এগিয়ে যাবেন আর তাতেই তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কেউ জানতেও পারবে না।
সৈন্য একত্রিত করে তাদেরকে জীবন মরণ লড়াইয়ের পরিস্থিতিতে ছেড়ে দেয়াই হল সেনানায়কের কাজ। সৈন্যদেরকে তিনি কঠিন বাধার মুখে ফেলে লাগাম ছেড়ে দেবেন। তিনি শত্রুদের ধ্বংস করবেন; সৈন্যদেরকে ভেড়ার পালের মত খেদিয়ে নিয়ে যাবেন, এই এদিক তো আবার অন্যদিকে, কেউ ঘুনাক্ষরেও জানতে পারবে না আসলে তিনি কোন দিক নিয়ে যাচ্ছেন। সৈন্যদেরকে শত্রুর সামনে দাঁড় করিয়ে তাদের পেছনে আসার সব রাস্তা তিনি বন্ধ করে দেবেন, ঠিক কাউকে গাছে উঠতে শুরু করিয়ে দিয়ে নিচে থেকে মই সরিয়ে ফেলার মত।
একজন সেনানায়ক পরিকল্পনাতে প্রতিবেশি রাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করে সন্তোষজনক মিত্রতা তৈরি করতে পারবেন না; যদি তিনি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের পাহাড়, বন-জঙ্গল, বিপজ্জনক গিরিপথ, জলাভুমি ও খাল-বিল এগুলোর চিন্তাভাবনা মাথায় না রাখেন তবে সৈন্য নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন না; যদি স্থানীয় পথ প্রদর্শক ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন তবে ভুমি থেকে যে সুবিধাগুলো তিনি পেতেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন। সেনানায়ক যদি এই তিনটা শর্তের কোন একটা অবজ্ঞা করেন তবে তিনি হিজিমোনিক রাজার সৈন্যদের মত অপরাজিত হতে পারবেন না। যখন হিজিমোনিক রাজা কোন শক্তিশালী রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণে যান তখন শক্রর সৈন্যদেরকে হতভম্ব করে দেন। শত্রু সৈন্যদেরকে ভয় দেখিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন এবং শক্রর মিত্রবাহিনী যাতে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত না রাখেন তার খেয়াল রাখেন।
মেই ইয়াও চেন এর ভাষ্যমতে, কোন রাজ্য আক্রমণের সময় যদি শত্রুর সৈন্যদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিতে পারেন তবে আপনার শক্তি আরও যথাযথ জায়গায় কাজে লাগাতে পারবেন।
এর মানে তিনি কখনও শক্তিশালী সৈন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণে যান নি, শক্তিশালী সৈন্যদেরকে বিভক্ত করে তাদের শক্তিকে কমিয়ে তারপর আক্রমণ করেছেন। এমনকি মিত্র রাষ্ট্রের কাছে থেকে শক্তি ধারও করেননি। তিনি লক্ষ্য অর্জনে শুধু নিজের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে শত্রুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আর এভাবেই তিনি শত্রুর শহর দখল করেছেন এবং শত্রুকে কোনঠাসা করেছেন।
সাও সাও এর ভাষ্যমতে, হিজিমোনিক রাজা হলেন এমন একজন যিনি কখনও সামন্ততান্ত্রিক রাজার সাথে মিত্রতা স্থাপন করেননি।
গতানুগতিক ধ্যান-ধারনার বাইরে গিয়ে হলেও সৈন্যদেরকে পুরস্কার প্রদান করুন; ইতিহাসে ঘটেনি এমন কোন আদেশ জারি করতে পারেন। আর এভাবে একজন মানুষ যেভাবে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলে প্রাণপন লড়াই করে ঠিক সেভাবে যাতে যুদ্ধ করে পুরো বাহিনীকে যুদ্ধে লাগিয়ে দিন।
চ্যাং ইউ এর ভাষ্যমতে, পুরস্কার ও শাস্তির ব্যপারে যদি সম্পূর্ণ পরিষ্কার দিক নির্দেশনা থাকে এবং তা দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা থাকে তবে কম সংখ্যক সৈন্যকে যেভাবে ব্যবহার করা যায় ঠিক সেভাবেই বহু সৈন্যকেও পরিচালনা করা যায়।
আপনার পরিকল্পনা রহস্যের অন্তরালে রেখে সৈন্যদের কাজে লাগান; তাদেরকে এমনভাবে কাজে লাগান যাতে করে তারা সামনের বিপদটাকে না জানতে পারে। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে তাদেরকে ফেলে দিন তাহলে সেখান থেকে তারা উরতে যেতে শিখবে; রুক্ষ-ধক্ষংসাত্মক পরিস্থিতিতে তাদেরকে যুদ্ধ করতে পাঠান, সেখানেও তারা বাঁচতে শিখবে। বারবার যখন তারা এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে, তখন পরাজয়ের পরিস্থিতিতেও তারা জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
সামরিক অভিযানের জটিলতাগুলো কোন একজনের প্রতারণার ভেতর নিহিত থাকে। শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার সামর্থ্যের দিকে মনোযোগ দিন আর তাহলেই এক হাজার লি দুরে থেকেও শত্রুর জেনারেলকে হত্যা করতে পারবেন। যুদ্ধের দিনে আক্রমনের কৌশলটাকে কাজে পরিণত করুন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টেম্পল কাউন্সিলকে উৎসাহিত করুন।
শত্রু কোন সুযোগ দিলেই দ্রুত তা কজ্বা করুন। শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা দখল করে নিন তাদের বুঝে উঠার আগেই এবং আগে থেকে নির্ধারিত দিনে গোপনে অগ্রসর হোন। যে কোন যুদ্ধের সাফল্য নির্ভর করে আপনি আপনার শত্রুর উদ্দেশ্য আর পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে কিভাবে পাল্টা পরিকল্পনা তৈরি করেন এর উপর।
যুদ্ধের শুরুতে নিজেকে দুর্বল আর যুদ্ধে অনিচ্ছুক হিসেবে উপস্থাপন করুন, অপেক্ষা করুন শত্রুর ভুল চালের জন্য। তারপর সুযোগ আসামাত্র এমন। ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ন যেন সে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে।