১০. উৎসর্গ করেছি তোমাকে

মা, ‘খালি খালি লাগে’ বইটিও উৎসর্গ করেছি তোমাকে। উৎসর্গ পাতায় লিখেছি। তাকে, যাকে ভালবাসার কথা ছিল, অথচ বাসিনি। এই বইতেও লিখেছি কিছু কবিতা, তোমাকে মনে করে। কিছুক্ষণ থাকো’ নামে আরও একটি কবিতার বইপরে লিখেছি, ওতেও আছে কিছু তোমাকে নিয়ে। কবিতা পড়তে তুমি তো খুব ভালোবাসতে। জানি না, কী করে তোমার সময় কাটে, চিঠি যদি পড়তে না চাও, পড়ো না, সম্ভব হলে শুধু কবিতাগুলো পড়ো।

.

যদি হত

এরকম যদি হত তুমি আছ কোথাও, কোথাও না কোথাও আছ, একদিন দেখা হবে,
একদিন চাঁদের আলোয় ভিজে ভিজে গল্প হবে অনেক, যে কথাটি বলা হয়নি, হবে
যে কোনও একদিন দেখা হবে, যে স্পর্শটি করা হয়নি, হবে
আজ হতে পারে, পরশু, অথবা কুড়ি বছর পর, যে চুমুটি খাওয়া হয়নি, হবে

অথবা দেখা হবে না, কুড়ি কেটে যাচ্ছে, দু কুড়িও
তুমি আছ কোথাও, ভাবা যেত তুমি হাঁটছ বাগানে, গন্ধরাজের গন্ধ নিচ্ছ
গোলাপের গোড়ায় জল দিচ্ছ, কামিনীর গা থেকে আলগোছে সরিয়ে নিচ্ছ মাধবীলতা,
অথবা স্নান করছ, খোঁপা করছ, দু এক কলি গাইছ কিছু
অথবা শুয়ে আছ, দক্ষিণের জানালায় এক ঝাঁক হাওয়া নিয়ে বসেছে লাল-ঠোঁট পাখি,
অথবা ভাবছ আমাকে, পুরোনো চিঠিগুলো ছুঁয়ে দেখছ, ছবিগুলো।

গা পোড়া রোদ্দুর আর কোথাকার কোন ঘন মেঘ চোখে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে তোমার ..
অথবা ভাবা যেত আমি বলে কেউ কোনওদিন কোথাও ছিলাম তুমি ভুলে গেছ,
তবু ভাবা তো যেত।

.

বেঁচে থাকা

।একটি কফিনের ভেতর যাপন করছি আমি জীবন
আমার সঙ্গে একশ তেলাপোকা
আর কিছু কেঁচো।

যাপন করছি জীবন, যেহেতু যাপন ছাড়া কোনও পরিত্রাণ নেই
যেহেতু তেলাপোকাঁদেরও যাপন করতে হবে, কেঁচোগুলোকেও
যেহেতু শ্বাস নিচ্ছি আমি, তেলাপোকা আর কেঁচো
যেহেতু শ্বাস ফেলছি, বেঁচে থাকছি
বেঁচে থাকছি যেহেতু বেঁচে থাকছি।

একটি কফিনের ভেতর কিছু প্রাণী
পরস্পরের দিকে বড় করুণ চোখে তাকিয়ে আছি
আমরা পরস্পরকে খাচ্ছিপান করছি
এবং নিজেদের জিজ্ঞেস করছি, কী লাভ বেঁচে!

না আমি না তেলাপোকা না কেঁচো কেউ এর উত্তর জানি না।

.

স্মৃতিরা পোহায় রোদ্দুর

।কেউ আর রোদে দিচ্ছে না লেপ কাঁথা তোষক বালিশ
পোকা ধরা চাল ডাল, আমের আচার
দড়িতে ঝুলছে না কারও ভেজা শাড়ি, শায়া
একটি শাদা বেড়াল বাদামি রঙের কুকুরের পাশে শুয়ে মোজা পরা
কবুতরের ওড়াওড়ি দেখছে না, কেউ স্নান করছে না জলচৌকিতে বসে তোলা জলে।
কোনও কিশোরী জিভে শব্দ করে খাচ্ছে না নুন লংকা মাখা তেঁতুল
চুলোর পাড়ে বসে কেউ ফুঁকনি ফুঁকছে না,
টগবগ শব্দে বিরুই চালের ভাত ফুটছে না,
কেউ ঝালপিঠে খাবার বায়না ধরছে না কারো কাছে,
উঠোনে কেবল দুই পা মেলে স্মৃতিরা পোহাচ্ছে রোদ্দুর।

ঘাসগুলো বড় হতে হতে সিঁড়ির মাথা ছুঁয়েছে,
একটি পেয়ারাও নেই, একটি ডালিমও, নারকেলের শুকনো ফুল ঝরে গেছে,
লেবু তলায় কালো কালো মৈসাপের বাসা,
জামগাছের বাকল জুড়ে বসে আছে লক্ষ বিচ্ছু
কেউ নেই, স্মৃতিরাই কেবল পোহায় রোদ্দুর।

.

তোমার শরীর, তুমি নেই

একটু সরে শোও, পাশে একটু জায়গা দাও আমাকে শোবার
কত কথা জমে আছে
কত স্পর্শ
কত মৌনতা, মুগ্ধতা।
সেই সব সুদূর পারের কথা শোনাব তোমাকে
শুনতে শুনতে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে,
কয়েক ফোঁটা কষ্ট তোমার উদাস দুচোখে বসবে
শুনতে শুনতে হাসবে, হাসতে হাসতে চোখে জল।
ভেবেছিলাম রোদেলা দুপুরে সাঁতার কাটবহাঁসপুকুরে,
পূর্ণিমায় ভিজব, নাচব গাইব।
ভেবেছিলাম যে কথা কোনওদিন বলিনি তোমাকে, বলব।

এখন ডাকলেও চোখ খোলো না
স্পর্শ করলেও কাঁপো না,
এখন এপার ওপার কোনও পারের গল্পই তোমাকে ফেরায় না
নাগালের ভেতর তোমার শরীর, তুমি নেই।

.

খালি খালি লাগে

সেই যে গেলে, জন্মের মত গেলে
ঘর দোর ফেলে।
আমাকে একলা রেখে বিজন বনবাসে
কে এখন ভাল বাসে,
তুমি নেই, কেউ নেই পাশে।

কে এখন দেখে রাখে তোমার বাগান
তুমিহীন রোদ্দুরে গা কারা পোহায়
কে গায় গান পূর্ণিমায়
তুমিহীন ঘরটিতে কি জানি কে ঘুমোয় কে জাগে।
জীবন যায়, যেতে থাকে,
যেখানেই যাই যে পথে বা যে বাঁকে দাঁড়াই
যে ঘাটে বা যে হাটে, বড় খালি খালি লাগে।

.

ঠিক তাই তাই চাই

একটি চমৎকার বাগানঅলা বাড়ির বড় শখ ছিল আমার,
ব্যক্তিগত গাড়ির, এমনকি জাহাজেরও, জলে ভাসার-ওড়ার।
ভালবাসার কারও সঙ্গে নিত্য সংসারের,
আমার সাধ্যের মধ্যে যদিও এখন সব,
আমার সাধ্যের মধ্যে এখন আমার সুখী হওয়া
সুখকে বিষম ঘেন্না এখন
আমি এখন আমার জন্য এমন কিছু চাই না যা দেখলে আনন্দ হত তোমার–
আমার আর ইচ্ছে করে না সমুদ্রের সামনে দাঁড়াতে,
তুমি ইচ্ছে করেছিলে একদিন দাঁড়াবে।

তুমি কিছু হারাচ্ছ না, এই দেখ আমার সারা গায়ে ক্ষত,
স্মৃতির তল থেকে তুলে আনছি মুঠো মুঠো অচেতন মন,
অমল বৃষ্টি থেকে রামধনু থেকে চোখ সরিয়ে রাখি, এই স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বসে
ঠিক তাই তাই চাই, যা দেখলে কষ্ট পেতে, বেঁচে থাকায় ছোবল দিত কালনাগিনী,
আমি অসুস্থ হতে চাই প্রতিদিনই।

.

শিউলি বিছানো পথ

শিউলি বিছানো পথে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে হটিতে মনে পড়ে তোমাকে
কী ভীষণ ভালোবাসতে তুমি শিউলি!
একটি ফুলও এখন আর হাতে নিই না আমি, বড় দুর্গন্ধ ফুলে।
আমি হাঁটছি, হেঁটে যাচ্ছি, কিন্তু হেঁটে কোথাও পোঁছোচ্ছি না।
কোথাও পৌঁছব বলে আমি আর পথ চলি না। কোনও গন্তব্য, আগে যেমন ছিল, নেই। অপ্রকতন্থের মত দক্ষিণে উত্তরে পুবেপশ্চিমে হাঁটি,
হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে কোথাও ফিরি না আমি।
এখন তো কোথাও কেউ আর আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই।
এখন তো এমন কোনও কড়া নেই যে নাড়ব
আর ভেতর থেকে তুমি খুলে দেবে দরজা।
এখন তো কেউ আমাকে বুকে টেনে নেবে না সে আমি যেখান থেকেই ফিরি

শিউলি বিছানো পথে প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে তোমাকে
কী ভীষণ ভালবাসতে তুমি শিউলি।
ফুলগুলো আমি পায়ে পিষে পিষে হাঁটি। তুমি ভালবাসতে এমন কিছু ফুটে আছে কোথাও
দেখলে বড় রাগ হয় আমার।
গোলাপ কী রজনীগন্ধা কী দোলনচাঁপা কী আমি।
এদের আমি দশ নখে ছিঁড়ি,
দাঁতে কাটি, আগুনে পোড়াই। তুমিই যদি নেই, এদের আর থাকা কেন!
তুমি ছিলে বলেইনা গোলাপে সুগন্ধ হত,
তুমি ছিলে বলেই এক একটি সূর্যোদয় থেকে কণা কণা স্বপ্ন বিচ্ছুরিত হত,
তুমি ছিলে বলেই বৃষ্টির বিকেলগুলোয় প্রকৃতির আঙুলে সেতার এত চমৎকার বাজত।
তুমি নেই, বৃষ্টি আর পায়ে কোনও নূপুর পরে না,
স্নান সেরে রুপোলি চাঁদরে গা ঢেকে আকাশে চুল মেলে দিয়ে আগের মত চাঁদও আর গল্প
শোনায় না।

তুমি নেই, কোনও গন্তব্যও নেই আমার। কোনও কড়া নেই, কোনও দরজা।
হেঁটে হেঁটে জীবন পার করি। কাঁধের ওপর বিশাল পাহাড়ের মত তোমার না থাকা।
গায়ে পেঁচিয়ে আছে তোমার না থাকার হাঁ-মুখো অজগর
পায়ের তলায় তোমার না থাকার সাহারা,
পুবে পশ্চিমে দক্ষিণে উত্তরে হাঁটছি আমি, আমার সঙ্গে হাঁটছে বিকট তোমার না থাকা।

যত হাঁটি দেখি পথগুলো তত শিউলি ছাওয়া
তুমি সে যে কি ভালবাসতে শিউলি
কী দরকার আর শিউলি ফুটে, যদি তুমিই নেই!
কী দরকার আর ফুলের সুগন্ধের, তুমিই যদি নেই!

কী দরকার আমার!

.

ঈদুল আরা

ঈদুল আরার বইখাতা ছিঁড়ে নর্দমায় ফেলেছে ঈদুল আরার স্বামী
ঈদুল আরা এখন রাঁধবে বাড়বে, সন্তান জন্ম দেবে।

ঈদুল আরা রাঁধে বাড়ে সন্তান জন্ম দেয়,
তবু ঈদুল আরার মন পড়ে থাকে বইয়ে, ঈদুল আরার দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ওড়ে,

কেউ দেখে না
দীর্ঘশ্বাস তো দেখার জিনিস নয়।
ঈদুল আরার স্বামী দীর্ঘশ্বাসও দেখে তৃতীয় নয়নে
ছিঁড়ে দুটুকরো করে নর্দমায় ছুঁড়ে দেয় দীর্ঘশ্বাস
ঈদুল আরা এখন সন্তানকে খাওয়াবে গোসল করাবে ঘুম পাড়াবে।

ঈদুল আরা সন্তানকে খাওয়ায়, গোসল করায়, ঘুম পাড়ায়,
তবু ঈদুল আরার মন পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাসে, ঈদুল আরার দুঃখ বাতাসে ওড়ে,

কেউ দেখে না
দুঃখ তো দেখার জিনিস নয়।
ঈদুল আরার স্বামী তৃতীয় নয়নে এই দুঃখ দেখে না,
নারীর দুঃখ ঈদুল আরার স্বামীর চোখে কেন, দেবতাদের চোখেও পড়ে না।

.

আমার মনুষ্যত্ব

নিজের মাকে কখনও বলিনি ভালবাসি,
অন্যের মাকে বলেছি,
নিজের মার কোনও অসুখ কোনওদিন সারাইনি,
অন্যের মার সারিয়েছি।
নিজের মার জন্য কাঁদিনি, অন্যের মার কষ্টে কেঁদেছি
এই করে করে জগতের কাছে উদার হয়েছি।
তার পাশে কখনও বসিনি, যে ডাকত
 একটি হাত ভুলেও কখনও রাখিনি তার হাতে,
একটি চোখ কখনও ফেলিনি সেই চোখে।
সবচেয়ে বেশি যে ভালবাসত, তাকেই বাসিনি
যে বাসেনি, তাকেই দিয়েছি সব, যা ছিল যা না ছিল
এই করে করে মহান হয়েছি,
মানুষের চোখে মানুষ হয়েছি।

.

তুমি একটা কবরে শুয়ে আছো

মা কাঁপছে শীতে, কেউ একটি লেপ পৌঁছে দিচ্ছে না মাকে,
মা’র ক্ষিদে পাচ্ছে, কেউ কোনও খাবারও খেতে দিচ্ছে না,
অন্ধকার গর্তে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মার
একটু আলো পেতে, হাওয়া পেতে, শুকনো জিভে একফোঁটা জল পেতে
কাতরাচ্ছে মা, বেরোতে চাইছে,
কেউ তাকে দিচ্ছে না।
মা ছিল মাটির,
জ্যান্ত মানুষগুলো পাথর।

মা তুমি একটি পাখি হয়ে এই পাথুরে পৃথিবী ছেড়ে
অন্য কোনও গ্রহে কোনও পাখির দেশে চলে যাচ্ছ না কেন!
তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার, নাহোক।
জানব ভাল আছ।

.

পূর্বপশ্চিম

মারগটের বাগান দেখলে আমার মায়ের বাগানটির কথা মনে পড়ে,
আমার মায়ের বাগানও ছিল এরকম
সুগন্ধী ফুলের গাছ, সুস্বাদু ফলের, সবজির
আমার মা যেমন গাছের গোড়ায় জল ঢালতেন, মারগটও ঢালে তেমন।
মারগটের বাগানে চারটে আপেল গাছ, ছোট্ট একটি পুকুর-মত, ওতে পদ্ম ফোটে
আরও একটি বাড়তি জিনিস আমার মার বাগানে ছিল না,
সূর্যঘড়ি।
মার কখনও সময় দেখা হয়নি, মার সময় উড়ে গেছে হাওয়ায়
মার দিনগুলো গেছে, এভাবেই বছরগুলো।
মারগট বাগান করে মারগটের জন্য
আমার মা বাগান করতেন অন্যের জন্য
একটি ফুলের ঘ্রাণও তিনি নিতেন না, একটি ফলের স্বাদও
একটি সবজিও মুখে তুলতেন না।
আমার মা অন্যের জন্য নিজের জীবন যাপন করতেন, নিজের জন্য নয়।
মারগট নিজের জন্য ঘর করে, নিজের জন্য বাগান, নিজের জন্য পদ্ম ফোঁটায় ও,
মারগটের স্বামী সন্তান সব আছে, মার যেমন ছিল।
মারগট নিজের জন্য বাঁচে, মা নিজের জন্য বাঁচেননি।

.

মায়ের কাছে চিঠি

কেমন আছ তুমি? কতদিন, কত সহস্র দিন তোমাকে দেখি না মা, কত সহস্র দিন তোমার
কণ্ঠ শুনি না, কত সহস্র দিন কোনও স্পর্শ নেই তোমার।
তুমি ছিলে, কখনও বুঝিনি ছিলে।
যেন তুমি থাকবেই, যতদিন আমি থাকি ততদিন তুমি–যেন এরকমই কথা ছিল।

আমার সব ইচ্ছে মেটাতে যাদুকরের মত। কখন আমার ক্ষিধে পাচ্ছে, কখন তেষ্টা পাচ্ছে,
কি পড়তে চাই, কী পরতে, কখন খেলতে চাই, ফেলতে চাই, মেলতে চাই হৃদয়, আমি বোঝার
আগেই বুঝতে তুমি।
সব দিতে হাতের কাছে, পায়ের কাছে, মুখের কাছে। থাকতে নেপথ্যে।
তোমাকে চোখের আড়ালে রেখে, মনের আড়ালে রেখে যত সুখ আছে নিয়েছি নিজের
জন্য।
তোমাকে দেয়নি কিছু কেউ, ভালবাসেনি, আমিও দিইনি, বাসিনি।
তুমি ছিলে নেপথ্যের মানুষ। তুমি কি মানুষ ছিলে? মানুষ বলে তো ভাবিনি কোনওদিন,
দাসী ছিলে, দাসীর মত সুখের যোগান দিতে।
যাদুকরের মত হাতের কাছে, পায়ের কাছে, মুখের কাছে যা কিছু চাই দিতে, না চাইতেই
দিতে।
একটি মিষ্টি হাসিও তুমি পাওনি বিনিময়ে, ছিলে নেপথ্যে, ছিলে জাঁকালো উৎসবের বাইরে
নিমগাছতলে অন্ধকারে, একা। তুমি কি মানুষ ছিলে! তুমি ছিলে সংসারের খুঁটি, দাবার ঘুটি,
মানুষ ছিলে না।
তুমি ফুঁকনি ফোঁকা মেয়ে, ধোঁয়ার আড়ালে ছিলে, তোমার বেদনার ভার একাই বইতে
তুমি, তোমার কষ্টে তুমি একাই কেঁদেছ। কেউ ছিল না তোমাকে স্পর্শ করার, আমিও না।
যাদুকরের মত সারিয়ে তুলতে অন্যের অসুখ বিসুখ, তোমার নিজের অসুখ সারায়নি কেউ,
আমি তো নইই, বরং তোমাকে, তুমি বোঝার আগেই হত্যা করেছি।

তুমি নেই, হঠাৎ আমি হাড়েমাংসেমজ্জায় টের পাচ্ছি তুমি নেই। যখন ছিলে, বুঝিনি ছিলে।
যখন ছিলে, কেমন ছিলে জানতে চাইনি। তোমার না থাকার বিশাল পাথরের তলে চাপা পড়ে
আছে আমার দম্ভ।
যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি, সে কষ্ট আমাকেও চেয়েছি দিতে, পারিনি। কি করে পারব বল!
আমি তো তোমার মত অত নিঃস্বার্থ নই, আমি তো তোমার মত অত বড় মানুষ নই।

.

ছিল, নেই

মানুষটি শ্বাস নিত, এখন নিচ্ছে না।
মানুষটি কথা বলত, এখন বলছে না।
মানুষটি হাসত, এখন হাসছে না।
মানুষটি কাঁদত, এখন কাঁদছে না।
মানুষটি জাগত, এখন জাগছে না।
মানুষটি স্নান করত, এখন করছে না।
মানুষটি খেত, এখন খাচ্ছে না।
মানুষটি হাঁটত, এখন হাঁটছে না।
মানুষটি দৌড়োত, এখন দৌড়োচ্ছে না।
মানুষটি বসত, এখন বসছে না।
মানুষটি ভালবাসত, এখন বাসছে না।
মানুষটি রাগ করত, এখন করছে না।
মানুষটি শ্বাস ফেলত, এখন ফেলছে না। .

মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।

দিন পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
রাত পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
মানুষটি আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসে না।
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি নেই,
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি ছিল।

মানুষটি কখনও আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসবে না।
মানুষটি কখনও আর আকাশ দেখবে না, উদাস হবে না।
মানুষটি কখনও আর কবিতা পড়বে না, গান গাইবে না।
মানুষটি কখনও আর ফুলের ঘ্রাণ শুঁকবে না।
মানুষটি কখনও আর স্বপ্ন দেখবে না।
মানুষটি নেই।
মানুষটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, মানুষটি ছাই হয়ে গেছে, মানুষটি জল হয়ে গেছে।
কেউ বলে মানুষটি আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে।
যে যাই বলুক, মানুষটি নেই।
কোথাও নেই। কোনও অরণ্যে নেই, কোনও সমুদ্রে নেই।
কোনও মরুভূমিতে নেই, লোকালয়ে নেই, দূরে বহুদূরে একলা একটি দ্বীপ, মানুষটি ওতেও
নেই।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও আর যাকে পাওয়া যাক,
মানুষটিকে পাওয়া যাবে না।
মানুষটি নেই।

মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে মানুষেরা দুঃখ দিত অনেক।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটির দিকে মানুষেরা ছুঁড়ে দিত ঘৃণা।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে ভালবাসার কথা কোনও মানুষ ভাবেনি।
মানুষটি যে মানুষদের লালন করেছিল, তারা আছে, কেবল মানুষটি নেই।
বৃক্ষগুলোও আছে, যা সে রোপণ করেছিল, কেবল মানুষটি নেই।
যে বাড়িতে তার জন্ম হয়েছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার শৈশব কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার কৈশোর কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার যৌবন কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে মাঠে সে খেলা খেলেছিল, সে মাঠটি আছে।
যে পুকুরে সে স্নান করেছিল, সেপুকুরটি আছে।
যে গলিতে সে হেঁটেছিল, সে গলিটি আছে।
যে রাস্তায় সে হেঁটেছিল, সে রাস্তাটি আছে।
যে গাছের ফল সে পেড়ে খেয়েছিল, সে গাছটি আছে।
যে বিছানায় সে ঘুমোতো, সে বিছানাটি আছে।
যে বালিশে সে মাথা রাখত, বালিশটি আছে।
যে কাঁথাটি সে গায়ে দিত, সে কাঁথাটি আছে।
যে গেলাসে সে জল পান করত, সে গেলাসটি আছে।
যে চটিজোড়া সে পরত, সে চটিজোড়াও আছে।
যে পোশাক সেপরত, সে পোশাকও আছে।
যে সুগন্ধী সে গায়ে মাখত, সে সুগন্ধীও আছে।
কেবল সে নেই।
যে আকাশে সে তাকাত, সে আকাশটি আছে
কেবল সে নেই।
যে বাড়ি ঘর যে মাঠ যে গাছ যে ঘাস যে ঘাসফুলের দিকে সে তাকাত, সব আছে
কেবল সে নেই।

মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।

.

না-থাকা

একটি ভীষণ না-থাকাকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রতি রাত্তিরে ঘুমোতে যাই;
ঘুমোই, ঘুম থেকে উঠি, কলঘরে যাই-না-থাকাটি সঙ্গে থাকে।

দিনের হই চই শুরু হয়ে যায় দিনের শুরুতেই,
একশ একটা লোকের সঙ্গে ওঠাবসা–
এই কর সেই করব দৌড়োদৌড়ি–
লেখালেখি–
এ কাগজ পাচ্ছি তো ও কাগজ গেল কই!
হাটবাজার, খাওয়াখাদ্যি, সব কিছুর মধ্যে ওই না-থাকাটি থাকে।

সন্ধেবেলা থিয়েটারে
রেস্তোরাঁ বা ক্যাফের আড্ডার হুল্লোড়ে, হাসিতে
এ বাড়িতে ও বাড়িতে অভিনন্দনে, আনন্দে
ছাদে বসে থাকায়, বসে চাঁদ দেখায়
দেখে চুমু খাওয়ায়,
নিভৃতে থাকে, না-থাকাটি থাকে।

যখন ভেঙে আসি,
বই গড়িয়ে পড়েছে, চশমাটিও–
হেলে পড়াশরীরটিকে আলতো ছুঁয়ে
মাঝরাত্তিরে চুলে বিলি কেটে কেটে না-থাকাটি বলে,
‘মা গো, বড় ক্লান্ত তুমি, এবার ঘুমোতে যাও।’

.

যেও না

যেও না। আমাকে ছেড়ে তুমি এক পাও কোথাও আর যেও না।
গিয়েছো জানি, এখন উঠে এসো। যেখানে শুয়ে আছো,
যেখানে তোমাকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেখান থেকে লক্ষ্মী মেয়ের মত উঠে এসো।
থাকো আমার কাছে, যেও না। কোথাও আর কোনওদিন যেও না।
কেউ নিতে চাইলেও যেও না।
রঙিন রঙিন লোভ দেখিয়ে কত কেউ বলবে, এসো। সোজা বলে দেবে যাবো না।
সারাক্ষণ আমার হাতদুটো ধরে রাখো,
সারাক্ষণ শরীর স্পর্শ করে রাখো,
কাছে থাকো, চোখের সামনে থাকো,
নিঃশ্বাসের সঙ্গে থাকো,
মিশে থাকো।
 আর কোনওদিন কেউ ডাকলেও যেও না।
কেউ ভয় দেখালেও না।
হেঁচকা টানলেও না।
ছিঁড়ে ফেললেও না।
যেও না।
আমি যেখানে থাকি, সেখানে থাকো, সারাক্ষণ থাকো।
আবার যাপন করো জীবন,
যেরকম চেয়েছিলে সেরকম জীবন তুমি যাপন করো আবার।
হাত ধরো, এই হাত থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি সুখ তুলে নাও।
আমাকে বুকে রাখো, আমাকে ছুঁয়ে থাকো, যেও না।
তোমাকে ভালোবাসবো আমি, যেও না।
তোমাকে খুব খুব ভালোবাসবো, যেও না।
কোনওদিন আর কষ্ট দেব না, যেও না।
চোখের আড়াল করবো না কোনওদিন, তুমি যেও না।
তুমি উঠে এসো, যেখানে ওরা তোমাকে শুইয়ে দিয়েছে,
সেখানে আর তুমি শুয়ে থেকো না,
তুমি এসো, আমি অপেক্ষা করছি, তুমি এসো।
তোমার মুখের ওপর চেপে দেওয়া মাটি সরিয়ে তুমি উঠে এসো,
একবার উঠে এসো, একবার শুধু।
আমি আর কোনওদিন কোথাও তোমাকে একা একা যেতে দেব না।
কথা দিচ্ছি, দেব না।
তুমি উঠে এসো।
তোমাকে ভালোবাসবো, উঠে এসো।

.

ছিলে

একটু আগে তুমি ছিলে, ভীষণরকম ছিলে, নদীটার মত ছিলে, নদীটা তো আছে,
পুকুরটা আছে, খালটা আছে।
এই শহরটার মত, ওই গ্রামটার মত ছিলে। ঘাসগুলোর মত, গাছগুলোর মত।
ছিলে তুমি, হাসছিলে, কথা বলছিলে, ধরা যাক কাঁদছিলেই,
কিন্তু কাঁদছিলে তো, কিছু একটা তো করছিলে, যা কিছুই করো না কেন, ছিলে তো!
ছিলে তো তুমি, একটু আগেই ছিলে।

কিছু ঘটলো না কোথাও, কিছু হলো না, হঠাৎ যদি এখন বলো যে তুমি নেই!
কেউ এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে যে তুমি নেই,
বসে আছি, লিখছি বা কিছু, রান্নাঘরে লবঙ্গ আছে কি না খুঁজছি,
আর অমনি শুনতে হল
তুমি নেই। তুমি নেই, কোথাও নেই, তুমি নাকি একেবারে নেইই,
তোমাকে নাকি চাইলেই আর কোনওদিন দেখতে পাবো না!
আর কোনওদিন নাকি কথা বলবে না, হাসবে না, কাঁদবে না, খাবে না, দাবে না,
ঘুমোবে না, জাগবে না, কিছুই নাকি আর করবে না!

যত ইচ্ছে বলে যাও যে তুমি নেই, যত ইচ্ছে যে যার খুশি বলুক,
কোনও আপত্তি নেই আমার, কেন থাকবে, আমার কী! তোমাদের বলা না বলায়
কী যায় আসে আমার! আমার শুধু একটাই অনুরোধ,
করজোড়ে একটা অনুরোধই করি,
আমাকে শুধু বিশ্বাস করতে বোলো না যে তুমি নেই।

.

ফিরে এসো

কোনও একদিন ফিরে এসো, যে কোনও একদিন, যেদিন খুশি
আমি কোনও দিন দিচ্ছি না, কোনও সময় বলে দিচ্ছি না, যে কোনও সময়।
তুমি ফিরে না এলে এই যে কী করে কাটাচ্ছি দিন
কী সব কাণ্ড করছি,
কোথায় গেলাম, কী দেখলাম
কী ভালো লেগেছে, কী না লেগেছে–কাকে বলবো!
তুমি ফিরে এলে বলবো বলে আমি সব গল্পগুলো রেখে দিচ্ছি।
চোখের পুকুরটা সেচে সেচে খালি করে দিচ্ছি, তুমি ফিরে এলে যেন
এই জগৎসংসারে দুঃখ বলে কিছু না থাকে।
তুমি ফিরে আসবে বলে বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে যেখানেই যা কিছু সুন্দর পাচ্ছি, দেখে
রাখছি,
তুমি এলেই সব যেন তোমাকে দেখাতে পারি।
যে কোনও একদিন ফিরে এসো, ভর দুপুরে হোক, মধ্যরাত্তিরে হোক–
তোমার ফিরে আসার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত সুন্দর জড়ো করলেও
তোমার এক ফিরে আসার সুন্দরের সমান হবে না।
ফিরে এসো,
যখন খুশি।
নাও যদি ইচ্ছে করে ফিরে আসতে,
তবু একদিন এসো, আমার জন্যই না হয় এসো,
আমি চাইছি বলে এসো,
আমি খুব বেশি চাইছি বলে।
আমি কিছু চাইলে কখনও তো তুমি না দিয়ে থাকোনি!

মা, বিশ্বাস করো, একটি কবিতাও বানিয়ে লেখা নয়। প্রতিটি কবিতা লিখতে লিখতে চোখের জল ঝরেছে। তুমি দেখনি অনুতাপের ভয়াবহ আগুনে কী ভীষণ পুড়ছি আমি, এখনও পুড়ি। তোমার কথা আমি কোথাও, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে, বা বন্ধুদের সঙ্গে উচ্চারণ করি না। তুমি বুকের ভেতরে থাকো। অপরাধবোধ থেকে, পশ্চিমের অনেক বন্ধুই বলেছে মুক্তি পাওয়া উচিত আমার। কারণ এই বোধটি খুব ক্ষতিকর। তুমি জানো না, চোখে আমার জল কত ছিল তোমার জন্য। জগৎটাই এখন বড় খালি খালি লাগে। একটু যদি কোথাও থেকে দেখতে পেতে, একটুও যদি ভালো লাগতো তোমার, একটু যদি শান্তি পেতে, যে শান্তি তোমার কোনওদিন পাওয়া হয়নি! আমার চোখে তোমার জন্য কোনওদিন তো জল দেখোনি। একবার শুধু দেখেছিলে মা, নাকি দুবার। জল তো কত এখন চোখে, তুমি কি দেখতে পাও!

এগুলোর পর আর কি কোনও কবিতা তোমাকে নিয়ে লিখেছি! নতুন কবিতার বইয়ে মাত্র একটি কবিতা। সম্ভবত ধীরে ধীরে তোমাকে ভুলে যাচ্ছি মা। হয়তো তোমাকে এখন আগের চেয়ে কম মনে পড়ে। আগের চেয়ে চোখের জলও ফেলি কম। আগে যেমন প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখতাম তোমাকে, একটি স্বপ্নই দেখতাম, স্বপ্নটি অনেকদিন আর দেখি না। নতুন বইয়ের কবিতাটাও লিখে দিলাম, পড়ো।

আশ্চর্য একটা গাছ দেখি পথে যেতে যেতে, যে গাছে সারা বছর শিউলি ফোটে।
গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে জল উপচে ওঠে,
শিউলি পড়ে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সাদা হয়ে থাকে মাঠ।
তার কথা মনে পড়ে, শিউলির মালা গেঁথে গেঁথে
শীতের সকালগুলোয় দিত,
দুহাতে শিউলি এনে পড়ার টেবিলে রেখে চলে যেত।
শীত ফুরিয়ে গেলে দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলতে, তাকে মনে পড়ে।
একবার যদি দুনিয়াটা এরকম হতে পারতো যে নেই সে আসলে আছে,
একবার যদি তাকে আমি কোথাও পেতাম, কোনওখানে,
তার সেই হাত, যে হাতে শিউলির ঘ্রাণ এখনও লেগে আছে,
এখনও হলুদ জাফরান রং আঙুলের ফাঁকে, ছুঁয়ে থাকতাম,
মুখ গুঁজে রাখতাম সেই হাতে।
সেই হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতাম নতুন গাছটার কাছে,
মালা গেঁথে গেঁথে তাকে পরাতাম, যত ফুল আছে তুলে
বৃষ্টির মতো ছড়াতাম তার গায়ে।

দুনিয়াটা যদি এরকম হয় আসলে সে আছে,
শিউলির ঋতু এলে কোনও একটা গাছের কাছে সে যাবে,
মালা গেঁথে মনে মনে কাউকে পরাবে, দুহাতে শিউলি নিয়ে
কারও পড়ার টেবিলে চুপচাপ রেখে দেবে,
তাহলে পথে যেতে যেতে যে গাছটা দেখি, সেটায়
হেলান দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো, যতদিন ফুল ফোটে ততদিন।

তুমি শিউলি ভালোবাসতে খুব মা। শিউলি ফুল দেখলেই তাই তোমাকে মনে পড়ে। বুক ফেটে যায়। এই বোবা কষ্টের কোনও নাম নেই মা। আমি এই কষ্টের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারি না। আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না, তুমি তো জানো। আমি পরকালে বিশ্বাস করি না। যে হাশরের ময়দানের কথা ভেবে তুমি শিউরে উঠতে, সেই হাশরের ময়দানেও আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু প্রাণপণে আমি এখন বিশ্বাস করতে চাই ওসবে। আমার মতো সুখী আর কেউ হবে না যদি আমি দেখি যে আসলে আল্লাহ বলে কেউ কোথাও আছেন, আমার মতো সুখী আর কেউ হবে না যদি দেখি আখেরাত বলে, পুলসেরাত বলে কিছু আছে। যদিও জানি ওসবের অস্তিত্ব নেই, যদিও আমি ভীষণ ভাবে বিবর্তনে, বিজ্ঞানে বিশ্বাসী, তারপরও আমি চাই বিজ্ঞান মিথ্যে হোক, ধর্ম সত্যি হোক। আমি আমার সমস্ত জীবন দিয়ে চাই, আমার সমস্ত লেখা আমার সমস্ত বিশ্বাস, আমার দর্শন ধসে যাক ভূমিকম্পে যেমন ধসে যায় ইমারত। আমি চাই, তুমি সুখী হও, তুমি বেহেস্তবাসী হও, আমি চাই তুমি সুখভোগ করো। এই কামনাই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য। আমি চাই আমি মিথ্যে হই, আমি ভুল হই, তুমি সত্য হও, তোমার এতদিনকার ইবাদত সত্য হোক, তোমার স্বস্তি হোক। আমি চাই অনন্তকাল তুমি আনন্দ করো।

.

মা

অনেকে আমার মা হতে চেয়েছে, অনেকে বাবা
অনেকে মামা কাকা খালা ফুপু
অনেকে সেসব বন্ধু, যাদের হারিয়েছি।

চেষ্টা চরিত্তির করে অনেকে বাবা হয়েছে অনেকটাই
কষ্টেসৃষ্টে মামা কাকা খালা ফুপু।
অনেকে বন্ধু হয়েছে নিমেষেই, কায়ক্লেশে নয়।
মা হতে অনেকে চেষ্টা করেছিল, মা হতে সেই অনেকের পর
আরও অনেকে চেষ্টা করেছিল
সেই আরও অনেকেরপর আরও অনেকে। দিনের পর দিন অকথ্য পরিশ্রম
করেছিল মা হতে তবু কেউ মা হতে পারেনি
ছিটেফোঁটা মা কেউ হতে পারেনি
এক ফোঁটা মা কেউ হতে পারেনি।
এক বিন্দু মা হতে পারেনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *