॥ ৬ ॥
বিষ্যুদবারের সকাল। গতকালই চতুর্লোভীর সঙ্গে সকলে কাটিয়েছি আমরা। বেশ বুঝতে পারছি ব্যাপারটা ক্রমে এক্সাইটিং হয়ে আসছে, তাই বোধহয় জটায়ু তাঁর অভ্যাসমতো নটায় না এসে সাড়ে আটটায় এসেছেন।
ভদ্রলোক কাউচে বসতেই ফেলুদা বলল, ‘আজ কাগজে খবরটা দেখেছেন?’
‘কোন কাগজ?’
‘স্টেটসম্যান, টেলিগ্রাফ, আনন্দবাজার…’
‘মশাই, এক কাশ্মিরী শালওয়ালা এসে সকালটা এক্কেবারে মাটি করে দিয়ে গেল। কাগজ-টাগজ কিছু দেখা হয়নি। কী খবর মশাই?’
আমি আগেই কাগজ পড়েছি, তাই খবরটা জানতাম।
‘তেওয়ারি সিন্দুক খুলেছিলেন,’ বলল ফেলুদা, ‘আর খুলে দেখেন সত্যিই তার মধ্যে একটি কপর্দকও নেই।’
‘তাহলে ত নয়ন ঠিকই বলেছিল,’ চোখ বড় বড় করে বললেন জটায়ু। ‘চুরিটা কখন হয়?’
‘দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে। অন্তত তেওয়ারির তাই ধারণা। সেই সময়টা তিনি আপিসে ছিলেন না। ছিলেন তাঁর ডেনটিস্টের চেম্বারে। ভদ্রলোকের স্মরণশক্তি এখন ভালো কাজ করছে। দুদিন আগেই নাকি উনি সিন্দুক খুলেছিলেন, তখন সব কিছুই ছিল। টাকার অঙ্কও মনে পড়েছে—পাঁচ লাখের কিছু উপরে। তেওয়ারি অবিশ্যি তাঁর পার্টনারকেই সন্দেহ করছেন। বলছেন একমাত্র তাঁর পার্টনারই নাকি কম্বিনেশনটা জানত। এছাড়া আর কাউকে কখনো বলেননি।’
‘এই পার্টনারটি কে?’
‘নাম হিঙ্গোবানি। টি এইচ সিন্ডিকেটের টি হলেন তেওয়ারি আর এইচ হিঙ্গোবানি।’
‘যাকগে। তেওয়ারি, হিংটিংছট, এসবে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি খালি ভাবছি ওই পুঁচকে ছেলে এমন ক্ষমতা পেলে কি করে?’
‘আমিও সে কথা অনেকবার ভেবেছি। ব্যাপারটা প্রথম কী করে আবিষ্কার হয় সেটা জানার খুব আগ্রহ হচ্ছে। তোপশে, নয়নের বাড়ির রাস্তাটার নাম তোর মনে আছে?’
‘নিকুঞ্জবিহারী লেন। কালীঘাট।’
‘গুড।’
‘একবার যাবেন নাকি মশাই? বলা যায় না, আমার ড্রাইভার কলকাতার এমন সব রাস্তা চেনে যার নামও আমি কস্মিনকালে শুনিনি।’
সত্যিই দেখা গেল হরিপদবাবু নিকুঞ্জবিহারী লেন চেনেন। বললেন, ‘ও রাস্তায় ত পল্টু দত্ত থাকতেন। আমি তখন অজিতেশ সাহার গাড়ি চালাই। একদিন তাঁকে নিয়ে গেলুম পল্টু দত্তর বাড়ি। দুজনেই ত ফুটবলার, তাই খুব আলাপ।’
দশ মিনিটের মধ্যে নিকুঞ্জবিহারী লেনে পৌঁছে একটা পানের দোকানে জিজ্ঞেস করে জানলাম অসীম সরকার থাকেন আট নম্বরে।
আট নম্বরের দরজায় টোকা দিতে একজন রোগা, ফরসা ভদ্রলোক দরজা খুলে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। বুঝলাম তিনি সবেমাত্র দাড়ি কামাননা শেষ করেছেন, কারণ হাতের গামছা দিয়ে গাল মোছা এখনো শেষ হয়নি।
‘আপনারা—?’ ভদ্রলোক ফেলুদার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলেন।
‘আপনি কি আপিসে বেরোচ্ছেন?’
‘আজ্ঞে না। এখন ত ৯টা। আমি বেরোই সাড়ে নটায়।’
ফেলুদা বলল, ‘আমরা গত রবিবার তরফদারের ম্যাজিক দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে আপনার ছেলের—আপনিই ত অসীম সরকার?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’
‘আশ্চর্য অলৌকিক ক্ষমতা আপনার ছেলের। তরফদারের সঙ্গে আমাদের বেশ ভালো আলাপ হয়েছে। তাঁর কাছেই আপনার বাড়ির হদিস পেলাম।—এই দেখুন, আমরা কে তাই বলা হয়নি!—ইনি রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক জটায়ু, এ আমার ভাই তপেশ, আর আমি প্রদোষ মিত্র।’
‘প্রদোষ মিত্র?’ ভদ্রলোকের চোখ কপালে। ‘সেই বিখ্যাত গোয়েন্দা প্রদোষ মিত্র—যাঁর ডাক নাম ফেলু?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’ ফেলুদা বিনয়ের অবতার।
‘ভেতরে আসুন, ভেতরে আসুন—কী আশ্চর্য!’
আমরা ভদ্রলোকের পিছন পিছন ভিতরে গিয়ে একটা সরু প্যাসেজের বাঁ দিকের দরজা দিয়ে একটা ছোট্ট ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। সেটাকে শোবার ঘর বসবার ঘর দুইই বলা চলে। দুটো চেয়ার আর একটা তক্তপোষ ছাড়া ঘরে কোনও আসবাব নেই। তক্তপোষের এক প্রান্তে সতরঞ্চি দিয়ে গোটানো একটা বালিশ দেখে বোঝা যায় সেখানে কেউ শোয়। ফেলুদা আর জটায়ু চেয়ারে, অসীমবাবু আর আমি খাটে বসলাম।
ফেলুদা বলল, ‘আপনার বেশি সময় নেবো না। আমাদের আসার কারণটা বলি। সেদিন তরফদারের শোতে আপনার ছেলের আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে আমাদের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শোয়ের পর তরফদারকে জিজ্ঞেস করাতে উনি বলেন ছেলেটি তাঁর কাছেই থাকে। আমি জানতে চাই যে নয়নের বাসস্থান পরিবর্তনের প্রস্তাবটা কি তরফদার করেন, না আপনি করেন?’
‘আপনি মহামান্য ব্যক্তি, আপনার কাছে মিথ্যা বলব না। ওঁর বাড়িতে রাখার প্রস্তাবটা তরফদার মশাই-ই করেন, তবে তার আগে নয়নকে আমিই ওঁর কাছে নিয়ে যাই।’
‘সেটা কবে?’
‘ওর ক্ষমতা প্রকাশ পাবার তিনদিন পরে—দোসরা ডিসেম্বর।’
‘এই সিদ্ধান্তের কারণটা কী?’
‘এর একটাই কারণ, মিত্তির মশাই। আমার বাড়ি দেখেই বুঝতে পারছেন আমার টানাটানির সংসার। আমার চারটি সন্তান। বড়টি ছেলে, সে বি. কম. পড়ছে। তার খরচ আমাকে জোগাতে হয়। তারপর দুটি মেয়ে। তাদেরও ইস্কুলের খরচ আছে। নয়নকে এখনো ইস্কুলে দিইনি। আমি এই কালীঘাট পোস্ট আপিসেই সামান্য চাকরি করি। পুঁজি বলতে কিছুই নেই; যা আনি তা নিমেষেই খরচ হয়ে যায়; ভবিষ্যতের কথা ভেবে গা-টা বারবার শিউরে ওঠে। তাই নয়নের মধ্যে যখন হঠাৎ এই ক্ষমতা প্রকাশ পেল তখন মনে হল—একে দিয়ে কি দু’পয়সা উপার্জন করানো যায় না? কথাটা শুনতে হয়ত খারাপ লাগবে কিন্তু আমার যা অবস্থা, তাতে এমন ভাবাটা অস্বাভাবিক নয়, মিত্তির মশাই।’
‘সেটা আমি বুঝতে পারছি’, বলল ফেলুদা। ‘এর পরেই আপনি নয়নকে তরফদারের কাছে নিয়ে যান?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ। আমার ত টেলিফোন নেই, তাই আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে পারিনি, সোজা চলে যাই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। ভদ্রলোক নয়নের ক্ষমতার দু’একটা নমুনা দেখতে চাইলেন। আমি বললুম, ওকে এমন কিছু জিজ্ঞেস করুন যার উত্তর নম্বরে হয়। ভদ্রলোক নয়নকে বললেন, “আমার বয়স কত বলতে পার?” নয়ন তক্ষুনি জবাব দিল—তেত্রিশ বছর তিন মাস দশ দিন। এর পরে আর কোনো প্রশ্ন করেননি তরফদার। আমাকে বললেন—আমি যদি ওকে মঞ্চে ব্যবহার করি তাতে আপনার কোনো আপত্তি আছে? আমি অবশ্যই পারিশ্রমিক দেবো।—আমি রাজি হয়ে গেলুম। তরফদার জিজ্ঞেস করলেন—আপনি কত আশা করেন? আমি ভয়ে ভয়ে বললুম—মাসে এক হাজার। তরফদার বললেন, “ভুল হল। আমার মাথায় কী নম্বর আছে বলত, নয়ন?” নয়ন বলল—তিন শূন্য শূন্য শূন্য। —সে ভুল বলেনি, মিত্তির মশাই। তরফদার মশাইও তাঁর কথা রেখেছেন। আগাম তিন হাজার আমি এরই মধ্যে পেয়ে গেছি। আর ভদ্রলোক যখন আমাকে বাঁচবার পথ দেখিয়ে দিলেন, তখন নয়নকে তাঁর বাড়িতে রাখার প্রস্তাবেই বা কি করে না বলি?’
‘কিন্তু নয়ন কি স্বেচ্ছায় গেল?’
‘সেও এক তাজ্জব ব্যাপার। এক কথায় রাজি হয়ে গেল। এখন ত ও দিব্যি আছে।’
‘এইবারে আরেকটা প্রশ্ন করছি’, বলল ফেলুদা, ‘তাহলেই আমাদের কাজ শেষ।’
‘বলুন।’
‘ওর ক্ষমতার প্রথম পরিচয় আপনি কী করে পেলেন?’
‘খুব সহজ ব্যাপার। একদিন সকালে উঠে নয়ন বলল—“বাবা, আমার চোখের সামনে অনেক কিছু গিজ গিজ করছে। তুমি সেরকম দেখছ না?” আমি বললাম, “কই, না ত। কী গিজ গিজ করছে?” নয়ন বলল, “এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট নয় শূন্য। সব এদিকে ওদিকে ঘুরছে, ছুটছে, লাফাচ্ছে, ডিগবাজি খাচ্ছে। আমার মনে হয় আমাকে যদি নম্বর নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস কর তাহলে ওদের ছটফটানি থামবে।”—আমার পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাও ছেলের অনুরোধ রাখতে জিজ্ঞেস করলাম, “আমার একটা খুব মোটা লাল বাঁধানো বাঙলা বই আছে জান ত?” নয়ন বলল, “মহাভারত?” আমি বললাম, “হ্যাঁ। সেই বইয়ে কত পাতা আছে বল ত।” নয়নের মুখে হাসি ফুটল। বলল, “ছটফটানি থেমে গেছে। সব নম্বর পালিয়ে গেছে। খালি তিনটে নম্বর পর পর দাঁড়িয়ে আছে।” কী নম্বর জিজ্ঞেস করাতে নয়ন বলল, “নয় তিন চার।” আমি তাক থেকে কালী সিংহের মহাভারত নামিয়ে খুলে দেখি তার পৃষ্ঠা সংখ্যা সত্যি ৯৩৪।’
আমাদের কাজ শেষ, আমরা ভদ্রলোককে বেশ ভালোরকম ধন্যবাদ দিয়ে বাড়িমুখো রওনা দিলাম।
শ্রীনাথ দরজা খুলে দিতে বসবার ঘরে ঢুকেই দেখি দুজন ভদ্রলোক বসে আছেন। তার মধ্যে সুনীল তরফদারকে চিনি। অন্যজনকে আগে দেখিনি।
ফেলুদা ব্যস্ত ভাবে বলল, ‘সরি। তোমরা কি অনেকক্ষণ এসেছ?’
‘পাঁচ মিনিট’, বললেন তরফদার। ‘এ হচ্ছে আমার ম্যানেজার ও প্রধান সহকারী—শঙ্কর হুবলিকার।’
তরফদারের মতো বয়স, বেশ চালাক চেহারা, উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের নমস্কার করলেন।
‘আপনি ত মারাঠি?’ প্রশ্ন করল ফেলুদা।
‘ইয়েস স্যার। তবে আমার জন্ম, স্কুলিং, সবই এখানে।’
‘বসুন, বসুন।’
আমরা সবাই বসলাম।
‘কী ব্যাপার বলুন’, তরফদারকে উদ্দেশ করে বলল ফেলুদা।
‘ব্যাপার গুরুতর।’
‘মানে?’
‘কাল আমাদের বাড়িতে দৈত্যের আগমন হয়েছিল।’
আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল। সেই গাওয়াঙ্গির কথা বলছেন নাকি ভদ্রলোক?
‘ব্যাপারটা খুলে বল’, বলল ফেলুদা।
‘বলছি।’ বললেন ভদ্রলোক। ‘আজ ঘুম থেকে উঠে বাদশাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোব—তখন সাড়ে পাঁচটা—দোতলা থেকে নেমেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।’
‘কেন?’
‘সিড়ির সামনের মেঝেতে ছড়িয়ে আছে রক্ত, আর সেই রক্ত থেকে পায়ের ছাপ সদর দরজার দিকে চলে গেছে। সেই ছাপ পরে মেপে দেখেছি—লম্বায় ষোল ইঞ্চি।’
‘ষো…!’ লালমোহনবাবু কথাটা শেষ করতে পারলেন না।
‘তারপর?’ বলল ফেলুদা।
তরফদার বলে চললেন, ‘আমাদের দরজায় কোল্যাপসিবল গেট লাগানো। রাত্তিরে সে গেট তালা দিয়ে বন্ধ থাকে। সেই গেট দেখি অর্ধেক খোলা, আর তালা ভাঙা। সেই আধখোলা গেটের বাইরে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আমার দারোয়ান ভগীরথ। ভগীরথের পাশ দিয়ে আরো রক্তাক্ত পায়ের ছাপ চলে গেছে পাঁচিলের দিকে।
‘জলের ঝাপটা দিয়ে ত কোনোরকমে ভগীরথের জ্ঞান ফিরিয়ে আনলাম। সে চোখ খুলেই ‘দানো! দানো!’ বলে আর্তনাদ করে আবার ভির্মি যায় আর কি! যাই হোক, তার কাছ থেকে যা জানা গেল তা হচ্ছে এই—মাঝরাত্তিরে সদর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সে খৈনি ডলছিল। দরজার বাইরে একটা লো পাওয়ারের বাতি সারারাত জ্বলে। এই আবছা আলোয় ভগীরথ হঠাৎ দেখে যে একটা অতিকায় প্রাণী পাঁচিলের দিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। প্রাণীটা যে পাঁচিল টপকে এসেছে তাতে সন্দেহ নেই, কারণ গেটে রয়েছে সশস্ত্র প্রহরী।
‘ভগীরথ বলে সে একবার চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল; সেখানে “গরৈলা” বলে একটা জানোয়ার দেখে। এই প্রাণীর চেহারা কতকটা সেইরকম, কিন্তু তার চেয়েও ঢের বেশি লম্বা আর চওড়া। এর বেশি ভগীরথ আর কিছু বলতে পারেনি, কারণ তার পরেই সে সংজ্ঞা হারায়।’
‘বুঝেছি’, বলল ফেলুদা। ‘দানোটা তারপর কোল্যাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে, আর তখনই তোমার বিশ্বস্ত বাদশা দানোটার পায়ে কামড় দিয়ে তাকে জখম করে। এবং তার ফলেই দানব তার কাজ অসমাপ্ত রেখে পলায়ন করে।’
‘কিন্তু যাবার আগে সে প্রতিশোধ নিয়ে যায়। বাদশার ঘাড় মটকানো মৃতদেহ পড়ে ছিল সদর দরজা থেকে ত্রিশ হাত দূরে—তার মুখের দুপাশে তখনো রক্ত লাগা।’
আমি মনে মনে বললাম—এই ঘটনায় যদি খুশি হবার কোনো কারণ থাকে সেটা এই যে টি.এন.টি.-র উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়নি।
ফেলুদা চিন্তিত ভাবে চুপ করে আছে দেখে তরফদার অধৈর্য হয়ে বলে উঠলেন, ‘কিছু বলুন, মিস্টার মিত্তির?’
‘বলার সময় পেরিয়ে গেছে সুনীল’, গম্ভীর স্বরে বলল ফেলুদা। ‘এখন করার সময়।’
‘কী করার কথা ভাবছেন?’
‘ভাবছি না, স্থির করে ফেলেছি।’
‘কী?’
‘দক্ষিণ ভারত যাবো। ম্যাড্রাস দিয়ে শুরু। নয়ন ইজ ইন গ্রেট ডেঞ্জার। তার যাতে অনিষ্ট না হয় এটা দেখার ক্ষমতা তোমাদের নেই। এখানে প্রদোষ মিত্রকে প্রয়োজন।’
তরফদারের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
‘আপনি যে আমাকে কতটা নিশ্চিন্ত করলেন তা বলতে পারব না। আপনি অবশ্য আপনার প্রোফেশনাল ক্যাপাসিটিতে কাজ করবেন। আপনার পারিশ্রমিক আর আপনাদের তিনজনের যাতায়াত ও হোটেল খরচা আমি দেব। আমি মানে—আমার পৃষ্ঠপোষক।’
‘খরচের কথা পরে। তোমাদের যাওয়ার তারিখ ত ঊনিশে ডিসেম্বর, কিন্তু কোন ট্রেন সেটা জানি না।’
‘করোমণ্ডল এক্সপ্রেস।’
‘আর হোটেল?’
‘সেও করোমণ্ডল।’
‘বুঝেছি। তাজ করোমণ্ডল। তাই ত?’
‘হ্যাঁ, আর আপনারা কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস এ.সি.-তে যাচ্ছেন। এখনই আপনাদের নাম আর বয়স একটা কাগজে লিখে দিন। বাকি কাজ সব শঙ্কর করে দেবে।’
ফেলুদা বলল, ‘বুকিং-এ অসুবিধা হলে আমাকে জানিও। রেলওয়েতে আমার প্রচুর জানাশোনা।’