০৩. দ্রুত ও সহজে বক্তব্য রাখার পথ
দিনে আমি হঠাৎ কখনো কখনো টেলিভিশন দেখি। কিন্তু আমার একজন বন্ধু বিকেলের একটা অনুষ্ঠান দেখতে অনুরোধ জানাল একদিন। অনুষ্ঠানটা গৃহকর্ত্রীর জন্য এবং একটু উচ্চস্তরের তাই বন্ধুর ধারণা
অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া আমার দেখা উচিত। সত্যিই তাই মনে হল। অনুষ্ঠানটা বেশ কয়েকবার দেখলাম আমি। যারা কথা বলছিলেন তারা কেউই পেশাদার বক্তা নন। তাঁদের বক্তৃতার শিক্ষা ছিল না তবুও তাঁদের কাজ অত্যন্ত শিষ্টাচার পূর্ণ। কথা বলার সময় তারা সকলেই ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন।
এর কারণ কি? কারণটা আমি জানি কারণ বহু বছর ধরেই এ ধরণের ক্লাস আমাকে নিতে হয়েছে। এই সব মানুষরা সকলেই অতি সাধারণ স্ত্রী পুরুষ অথচ তারা সারা দেশের দর্শকদের আকর্ষণ করে চলেছেন। তাঁরা বলে যান তাঁদের নিজেদেরই কথা। তাঁদের জীবনের কোন বিসদৃশ মুহূর্ত, কোন আনন্দময় ঘটনা। কিভাবে স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে, ইত্যাদির কাহিনী। এসব বলতে গিয়ে তাঁদের বাক্যবিন্যাস বা ব্যাকরণগত দিক নিয়ে ভাবতে হয়নি। অথচ তা সত্বেও তারা দর্শককুলের বাহবা পেয়ে চলেন। এটাই আমার কাছে জনসংযোগের তিনটি নাটকীয় নিয়ম :
১. অভিজ্ঞতা বা শেখার মধ্য দিয়ে জানা বিষয়ে কথা বলুন
টেলিভিশনে যারা কথা বলেছিলেন তাঁরা সবাই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। তারা তাদের জানা কথাই বলছিলেন। একবার ভাবুন তাঁদের যদি, কমিউনিজম বা রাষ্ট্রসঙঘ সম্বন্ধে বলতে বলা হত তাহলে কি দাঁড়াত। সমগ্র অনুষ্ঠানই জলো হয়ে উঠত। অথচ হাজার হাজার অনুষ্ঠানে বক্তারা এই ভুলই করেন। তারা ভাবেন যা বলতে হবে তা হল নতুন নব বিষয়ে, অথচ তাদের ওই সব বিষয়ে হয়তো জ্ঞানই নেই। তারা বেছে নেন স্বদেশিকতা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ইত্যাদি। বক্তৃতা তৈরী করতে তাঁরা পাগলের মত ঘটতে থাকেন উদ্ধৃতি। তাঁরা আদৌ ভাবেন না শ্রোতারা হয়তো ঘটনাবহুল অভিজ্ঞতালব্ধ কথাই শুনতে চাইবেন, বড় বড় বাক্যবিন্যাস নয়।
শিকাগোয় ডেল কার্নেগী পাঠক্রমের এক ক্লাসে কয়েক বছর আগে একজন ছাত্রবক্তা কিছু বলতে গিয়ে এইভাবে শুরু করে : স্বাধীনতা, মমতা আর ভ্রাতৃত্ব। মানুষের ইতিহাসে এসবই হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধারণা। স্বাধীনতা ছাড়া জীবন বৃথা।
এ পর্যন্ত বলার পরেই শিক্ষক, তাঁকে থামিয়ে দেন তারপর প্রশ্ন করেন যে কথা তিনি বলছেন সে সম্বন্ধে তাঁর কোন রকম অভিজ্ঞতা আছে কিনা। ছাত্রটি তখন এক অদ্ভুত কথা শোনায়।
তিনি ছিলেন এক ফরাসী গেরিলা যোদ্ধা। তিনি আমাদের এবার শোনান তিনি ও তাঁর পরিবার নাশীদের হাতে কিভাবে অসম্মান লাভ করেন। সজীব ভঙ্গীতে তিনি আমাদের শোনালেন কিভাবে সিক্রেট পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে আসেন। তিনি বলেছিলেন ‘আমি আজ যখন মিশিগান অ্যাভিনিউ দিয়ে এই হোটেলে আসছিলাম কোন পুলিশ আমার দিকে তাকায়নি। আজ আমি যেখানে খুশি যেতে পারি। আজ বুঝেছি স্বাধীনতার মূল্য কি। ছাত্রটি শ্রোতাদের কাছ থেকে বিরাট প্রশংসাই পান।
জীবনে যা শিখেছেন তাই শোনান
যে সব বক্তা জীবন তাদের কি শিখিয়েছে যখন শোনাতে চান শ্রোতারা তাদের কথা শুনতে খুবই আগ্রহী হন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি বক্তারা কথাটা সহজ মেনে নিতে চায় না-তাঁরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে তুচ্ছ বলেই ভাবেন। তারা বরং সাধারণভাবে দার্শনিকতত্বের দিকে বেশি ঝুঁকতে ইচ্ছুক। তারা যখন কোন সম্পাদকীয় লেখেন আমরা তা পড়তে চাই এটা ঠিক। তবে সেটা যোগ্য লোকের হাত থেকেই আসুক তাই আমরা চাই। তবুও আসল কথাটা হল এই : জীবন আপনাকে যা শিখিয়েছে তাই শোনান তাহলে আমিই হব আপনার শ্রোতা।
শোনা যায় এমার্সন সব সময়েই লোকের কথা শুনতেন, তা সে যত সামান্যই হোক। এর কারণ হল তাঁর মনে হত, যে কোন মানুষের কাছ থেকেই তার কিছু শেখার আছে। আমি প্রচুর বয়স্ক মানুষদের বক্তৃতা আর কথা শুনেছি, তাই বলতে পারি বক্তা যখন জীবন তাকে যা শিখিয়াছে তাই শোনাতে চান তখন সে কথা কখনই বিরক্তিকর মনে হয় না।
নিজের অতীত থেকে কাহিনী সংগ্রহ করুন
একবার আমাদের কিছু শিক্ষককে লিখতে বলা হয় বক্তা হয়ে ওঠার কাজে সবচেয়ে বড় কোন সমস্যার তারা মুখোমুখি হন। লেখাগুলো যাচাই করে দেখা যায় প্রায় সব কটিতেই একই রকম কথা লেখা : প্রথম শিক্ষার্থীদের সঠিক বক্তৃতার বিষয় জানানো।
সঠিক বিষয়টি কি? আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন ঠিক বিষয় আপনার জীবনেই নিহিত আছে, আপনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তা উপলব্ধি করতে পারেন? সেটা কিভাবে খুঁজে পাবেন? অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করার মধ্য দিয়েই তা পাবেন–কারণ যে ঘটনা বা অভিজ্ঞতা আপনার মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে সেটাই সেই বিষয় হতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে আমরা এই বিষয় সম্পর্কে সমীক্ষা চালাই। যে বিষয় শ্রোতাদের প্রিয়, দেখা যায় কারও অতীত জীবনের কোন অভিজ্ঞতাই শ্রোতাদের প্রিয় হতে চায়। এটা হয় নিচের বর্ণনা মতই :
প্রথম জীবন ও গড়ে ওঠা, যে সব বিষয়ে পরিবার, শৈশব স্মৃতি, স্কুলের দিনগুলো থাকে সেগুলোই শ্রোতাদের আকর্ষণ করে। এর কারণ আমরা জানতে চাই মানুষ কিভাবে সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে।
যখনই সুযোগ পাবেন অতীতের ঘটনা থেকে উদাহরণ রাখার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন শ্রোতাদের কাছে এর আকর্ষণ সর্বদাই অসামান্য।
এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক লড়াই : এই কথা কটি বেশ মানবিক আগ্রহে পরিপূর্ণ। এক্ষেত্রে তাই বেশ সহজেই শ্রোতাদের আকর্ষণ করা সম্ভব নিজের অতীত জীবনের লড়াইয়ের কাহিনী উল্লেখের মধ্য দিয়ে। কিভাবে বিশেষ কোন কাজে যোগ দিতে পেরেছিলেন? আপনার কর্মজীবনে কি ধরণের অবস্থার মুখোমুখি হন? আপনার জীবনের নানা বাধা, আশা-আকাঙ্খ, জয়, প্রতিযোগিতাময় জীবনে এগিয়ে চলা সবই আগ্রহ জাগাতে পারে। কারও জীবনের সত্যিকার ঘটনার বিবরণ–নিশ্চিতভাবেই শ্রোতাদের মনোরঞ্জনে সমর্থ।
শখ ও অবসর বিনোদন : এ বিষয়ে জড়িত থাকে ব্যক্তিগত পছন্দ তাই মানুষের আগ্রহ আকর্ষণও করে। আনন্দের জন্য আপনি যা করেন তা অন্যের কাছে আদরণীয় হওয়াই সম্ভব।
জ্ঞানের বিশেষ এলাকা : কোন বিশেষ বিষয়ে কাজ করায় আপনি প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ওই অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে আপনার কাহিনীর বর্ণনা শ্রোতারা গ্রহণ করবেই।
অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা : কোনদিন কোন বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছেন? যুদ্ধের ভয়ঙ্করতার সামনে এসেছেন? বা অন্য কোন অস্বাভাবিক অবস্থার সামনে পড়েছেন? বক্তৃতার ক্ষেত্রে এই সব বিষয় চমৎকার কাজ দেয়।
বিশ্বাস ও ধারণা : আপনি অবশ্যই আজকের দুনিয়ার নানা সমস্যা সম্বন্ধে আপনার অবস্থা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেছেন। এ সম্পর্কে আপনার ধ্যান ধারণার কথা অনায়াসেই বলতে পারেন। শ্রোতাদের চেয়ে কোন বিষয়ে সামান্য বেশি জানা থাকলে সেটা সম্বন্ধে না বলাই ভালো। অন্যদিকে অন্য কোন বিষয়ে আপনার ভালো রকম জ্ঞান থাকলে এটাই হবে আপনার বিষয়। অবশ্য সেটাই কাজে লাগান।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ যেমন বলা হয়েছে কোন বক্তৃতায় শুধু যান্ত্রিক কিছু শব্দ আর বাক্যই থাকে না বা মুখস্থ করলেই চলে না বক্তৃতা মানে কারও ধার করা বাণী বা কাগজের খবর বলে যাওয়া নয়। এর মধ্যে থাকতে হবে আপনার মনের মধ্যে জমা থাকা জীবনের নানা অভিজ্ঞতার নির্যাস। হ্যাঁ, এটাই ঠিক। ওই সম্পদ আহরণ করে আপনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে শ্রোতাদের জন্য। এ ধরনের বক্তৃতা সত্যিই উপভোগ্য।
এবার আপনি বক্তৃতার মূল অনুধাবণ করতে পেরেছেন। তাই আসুন এর জন্য দ্বিতীয় যে নিয়মটি প্রয়োজন তাই দেখা যাক :
নিজের বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী থাকা চাই
আমি বা আপনি যে সব বিষয় নির্বাচন করি–অবশ্যই শ্রোতাদের সামনে বলার জন্য-সে সম্বন্ধে যে আমাদের পুরোপুরি আগ্রহ আর আকর্ষণ থাকে তা নয়। আমার কথা বলতে পারি যে আমি ডিস ধোয়ার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তবে এটুকু বলি এ বিষয়ে যে বলতে খুব উত্তেজনা অনুভব করব তা কখনই নয়। তবুও আমি শুনেছি গৃহকর্মীরা এ ব্যাপারে চমৎকার বলতে পারেন। কাজটা সম্বন্ধে তারা এতই ঘৃণার ভাব পোষণ করেন যে আবহমান কালের অভিজ্ঞতা তাঁদের দক্ষতার হিমালয়ে তুলে দেয়। এর পরিণতিতে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলনাবিহীন হয়ে ওঠে।
এবার একটা প্রশ্ন রাখব যাতে আপনি শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য বিষয় নির্বাচন করতে আর আলোচনায় সাহায্য পাবেন। কেউ যদি শ্রোতাদের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে সরাসরি আপনার বক্তব্য মানতে অস্বীকার করে তাহলে কি আপনি আপনার বক্তব্যের পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারবেন? তা যদি পারেন তাহলে সেটাই হবে আপনার বিষয়।
সম্প্রতি আমার হাতে ১৯২০ সালে লেখা কিছু কাগজপত্র এসেছে। এগুলো আমি জেনেভায় রাষ্ট্রসঙে ঘর ৭ম অধিবেশনের সময় বেড়াতে গিয়ে লিখেছিলাম। একটা প্যারাগ্রাফ এই রকম : তিন চার জন প্রাণহীন বক্তা তাদের বক্তব্য পাঠ করার পর কানাডার স্যার জর্জ ফস্টার উঠে দাঁড়ালেন। বেশ খুশি হয়ে দেখলাম তার হাতে কোন কাগজ ছিল না। তিনি স্বতঃস্ফুর্ত ভঙ্গীতেই বলে চললেন। তাঁর বলবার পিছনে তিনি মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল শ্রোতারা তাঁর বক্তব্য মেনে নেওয়ার চেষ্টাই করছিলেন। আমার পাঠক্রমে আমি যা শিক্ষা দিতে চাই তিনি সেকথাই বলছিলেন।
আমার প্রায়ই স্যার জর্জের সেই বক্তৃতার কথা মনে পড়ে। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন, ভাল বক্তার পক্ষে যা একান্তই জরুরি।
আমাদের ক্লাসে কোন সদস্য যখন বলে কোন বিষয় সম্পর্কে আমার উত্তেজনা হয় না। অতি সাধারণ জীবনই আমি কাটিয়েছি, সেখানে উত্তেজনার কোন খোরাক ছিল না। শিক্ষক যখন তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, অবসর সময়ে আপনি কি করেন। ছাত্রটি জবাবে জানায় সে দেশলাইয়ের বাক্স সগ্রহ করে। সে
আরও জানালো পৃথিবীর নানা দেশের দেশলাইয়ের বাক্স তার সংগ্রহে আছে। এ বিষয়ে সে নানা রকম বইও কিনেছে। কথা বলতে বলতে সে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। শিক্ষক তখনই তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনার এই শখের বিষয়েই আমাদের কিছু বলুন না কেন? দারুণ আগ্রহ জাগছে। ছাত্রটি জানালো কারও আগ্রহ জাগবে কিনা সে জানে না। ছাত্রটি শেষ পর্যন্ত তার শখের বিষয়েই চমৎকার বলে যাওয়ার পর শ্রোতারাও তা মন দিয়ে শুনলো। এই উদাহরণ থেকেই বোঝা যায় আন্তরিকতা সত্যিই প্রয়োজনীয় বিষয়। এবার তিন নম্বর নিময়টি এই রকম।
বক্তব্য বিষয়ে শ্রোতাদের একাত্ম হন
জনসংযোগের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জড়িত থাকে : বক্তা, বক্তব্য আর শ্রোতা। প্রথম যে দুটি নিয়মের কথা এই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে বক্তার সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বক্তব্য রাখার অবস্থা আসেনি। বক্তা যখন তাঁর বক্তব্য শ্রোতাদের সামনে রাখতে আরম্ভ করেন তখনই কথা বলার অবস্থা প্রাণময় হয়ে ওঠে। বক্তার বক্তব্য হয়তো চমৎকার ভাবেই তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে, বিষয়টাও এমন হতে পারে যাতে বক্তা উত্তেজনা অনুভব করতে পারেন। কিন্তু পুরোপুরি সাফল্য লাভ করার জন্য বক্তার বক্তব্য রাখার মাঝখানে আরও একটি বিষয় এসে পড়ে। বক্তাকে শ্রোতাদের অনুভব করতে দিতে হবে তিনি যা বলতে চলেছেন সেটা শ্রোতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজেই যে শুধু তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে উত্তেজিত হয়ে উঠবেন তা নয়, তাঁর ওই উত্তেজনা শ্রোতাদের মধ্যেও জাগিয়ে তুলতে হবে। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সমস্ত বক্তাদের মধ্যেই এই আকর্ষণীয় রূপটি কাজ করে গেছে। একে প্রকাশ করার গুণ বা সেলসম্যানশিপ বা প্রচারের গুণ যাই বলুন না কেন। কার্যকর যে কোন বক্তাই ভেবে নেন আর কামনা করেন তাঁর শ্রোতারা তাঁর মতই অনুভব করেন, তাঁর মতে মত দেন, তাঁর মতই তিনি যা চান তাই তারা করুক আর তার অভিজ্ঞতা তাদের অভিজ্ঞ করে তুলুক। এই বক্তা হয়ে উঠবেন শ্রোতাদের যোগ্য, আত্মকেন্দ্রিক নয়। তিনি জানেন তাঁর বক্তব্যের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করছে শ্রোতাদের মন আর হৃদয়ের মধ্যে, তাঁর নিজের বক্তব্যের মধ্যেই শুধু নয়।
এমন একটা সময় ছিল যখন আমি জনসংযোগের ক্ষেত্রে কতকগুলো নিয়মের উপর জোর দিতাম, কিন্তু সময় কেটে গেলে আমি বক্তব্য রাখার উপরেই জোর দিতে চেয়েছি।
প্রয়াত মিঃ ব্রায়ান বলেছেন, বাকপটুতা তাকেই বলা যায় বক্তা যা বলেন তা যখন জেনে বলেন … জ্ঞানই এখানে শেষ কথা নয়, শেষ কথা হল বক্তা শ্রোতাদের কতটা একাত্ম করতে পেরেছেন তারই উপর। কোন বক্তাকে তার শ্রোতাদের ঠকানো অসম্ভব–বিশেষ করে তার মনোভাব নিয়ে … প্রায় দু হাজার বছর আগে একজন লাতিন কবি চমৎকারভাবে কথাটা বলে গেছেন : ‘শ্রোতাদের চোখে অশ্রু ঝরাতে চাইলে আপনার নিজের মধ্যেও সেই শোকের ছায়া আনতে হবে।’
আশ্চর্যের কথা জানেন কি? এমনকি ঘোড়াও উত্তেজিত কথায় বিচলিত হয়ে পড়ে। বিখ্যাত পশু শিক্ষক রেইনী বলেছেন ক্রুদ্ধ কথায় ঘোড়ার নাড়ীর গতি প্রতি মিনিটে দশবার বেড়ে যায়। শ্রোতারাও এই ঘোড়ার মতই স্পর্শকাতর।
এ ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা চাই। যতবারই আমরা বক্তব্য রাখি ততবারই আমরা শ্রোতাদের অভিব্যক্তি গড়ে তুলি। তারা আমাদেরই হাতে ক্রীড়নক।
বক্তার বক্তব্যের মধ্যে উত্তাপ, আবেগ, আন্তরিকতার স্পর্শ থাকলে তা বাষ্পের মতই ছড়িয়ে যায়। আমাদের পাঁচশ রকম ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু তাতে আমরা ব্যর্থ হব না। বিখ্যাত রুবেনষ্টাইন বক্তৃতার মাঝখানে অসংখ্যা ভুল বলতেন তবুও তার কথা শ্রোতারা মন দিয়েই শুনতে চাইতেন।