হেঁটে যাই জনমভর – ৭

 অহন চলে গেলে বদরুল বারান্দার ওপর চিৎপাত শুয়ে থাকে। গুনগুনিয়ে গান গায়। আপন মনে গাওয়া। নিজেকে প্রকাশ করার সুখের বিলাস। ওসমান একমুহূর্ত শোনে। তারপর নেমে যায় নিচে। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের ঢালুর মাথায় এসে বসে। এমন অপূর্ব বনভূমি, এত সব নৃগোষ্ঠীর মানুষ, চারদিকে প্রাণবৈচিত্র্যের তোলপাড়। এর সবটুকু নিয়ে কি ঢাকায় ফিরতে পারবে? নিজেকেই বলে, না। এই জনপদ বোঝার জন্য বারবার আসতে হবে এখানে। দেখতে হবে খুঁটিয়ে। চিনতে হবে ঘাস লতা খুদে পোকার সবটুকু। শিখতে হবে আদিবাসী মানুষদের জ্ঞান। হাজার রকম শিক্ষা ছাড়া জানা কি এত সহজ হবে? ওসমান ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে। কখনো নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। কখনো চোখ বন্ধ করে ক্ষুদে পোকার বার্তা শোনে। এই চোখ মেলা আর বন্ধ করে রাখার মধ্যে ও জোনাকির জ্বলা-নেভা অনুভব করে। সবুজ ব্যাঙ, আমি সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাহাড়ে শুয়ে নিজেকে জোনাকি ভাবতে পারছি। তুই আমাকে জ্বলা-নেভার সত্যটা বুঝিয়ে দিয়েছিস।

 এই সত্যের উপলব্ধি আমার শরীরে কাঁপুনি জাগায়। আমি হাত বাড়িয়ে কিছু একটা ধরতে চাই। ঘাসের গুচ্ছে ভরে যায় মুঠি। আমার বুকের ওপর ছড়িয়ে দেই ঘাস। পিঠের নিচে ঘাস আছে, কিন্তু যদি বলি মাটিও আছে তাহলে ভুল বলা হবে না। আমি নিজের ওপর বিরক্ত হই। এখনতো আমার এসব ভাবার সময় নয়। আমি মনেপ্রাণে চাইছি নিমগ্ন হতে। পাহাড়-আকাশের পটভূমিতে ভেসে ওঠে জহির রায়হানের ছবি। যেন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ ওসমান আলী?

 আমি উঠে বসি। চারদিকে তাকাই। বলি, জহির রায়হান পাহাড়ের চূড়োয় বসে আমি আপনার হাত ধরতে চাই। যুদ্ধের পরে স্বাধীন দেশে যারা আপনাকে হত্যা করেছে আমি এইখানে বসে তাদের বিচার দাবি করছি। যেদিন সব অপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হবে সেদিন আমার আপনাকে খোঁজা শেষ হবে। এ দেশে ওদের বিচার হতেই হবে।

 বিচারের রায় কাঁধে নিয়ে আমি হেঁটে যাব জনপদে। ডেকে ডেকে সবাইকে বলব, আমরা গ্লাণিমুক্ত হয়েছি। আমাদের স্বাধীনতার ফসলে পোকা নাই। জহির রায়হান আপনি যেখানেই শায়িত থাকুন, আমাদের পদধ্বণি শোনার অপেক্ষা করুন। আমরা কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করব।

 এমন ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশব্দ হয়ে যায় ওর চারপাশ। যেন প্রকৃতিও কোটি কোটি পায়ের ধ্বনি শোনার জন্য নিঃসাড় দাঁড়িয়ে আছে। তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ওসমানের মনে হয় সবাই বলছে, আমরা তোমাদের অপেক্ষায় আছি। স্টপ জেনোসাইড প্ল্যাকাড হাতে এলাকার সর্বোচ্চ পাহাড়-চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন দেশের জন্য জীবনদানকারী শহীদ জহির রায়হান। ওসমান মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে আবার খোলে। দেখতে পায় ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে অহন। বলছে, ওঠো। ঘরে যাই। ওসমান উঠে বসে। অহনের সঙ্গে ঘরে আসে বদরুল বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়েছিল ওকে জাগানো হয়। তিনজনে হেডম্যানের বাড়িতে যাবে বলে পথে নামে। অন্ধকারে হাঁটতে কষ্ট হয়। অহনের হাতের টর্চ জ¦লে-নেভে। এই নিসর্গ থেকে কাল শহরের পথে যেতে হবে। ওসমান ভাবে, যাত্রাটা সত্য। থেমে থাকা মানে পথ ফুরিয়ে যাওয়া। ওর ভেতরের আরিফুর রহমান ওকে এভাবেই ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে।

 ঢাকায় ফিরে ক্লাস-টিউটরিয়াল-পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওসমান। মুখ বুঁজে টেবিলে বসে থাকা এখন ওর ধ্যানমগ্ন সময়। বাইরে রাজনীতি উত্তাল। এসব থেকে ও নিজেকে দূরে রাখে। পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে না হলে অন্য বই পড়ে। বেগম রোকেয়ার লেখা পড়তে ভালো লাগে। বাংলা একাডেমি থেকে ‘রোকেয়া রচনাবলী’ কিনে এনেছে। পড়ার বইয়ের সঙ্গেই রেখে দিয়েছে। ইচ্ছা হলেই বের করে পড়ে। এই বইয়ের অনেক লাইন ও মুখস্থ করেছে। ‘জাগো গো ভগিনী জাগো’ এ কথা মনে হলে মায়ের কথা মনে হয়। ওর মা তো জেগেই ছিল। পড়ালেখা না-শেখা মানুষ, দিনমজুরি করে জীবন চালিয়ে ছেলের মাথার ওপর চাঁদ বসাতে চেয়েছিল। সেই মা হাজার ভগিনীকে জাগাতে পারে। মায়ের মুখটা ভেসে উঠলে ওর সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তখন ও বেগম রোকেয়ার লেখায় আশ্রয় খোঁজে।

 সাজেক ভ্যালি থেকে ফিরে এসে বই পড়ার পাশাপাশি ওর দিনগুলো আরো নিমগ্ন সচেতন হয়ে যায়। মনে হয়েছে, ওদের জীবনে আছে গুলি ও মৃত্যুর সহবাস। এও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।

 স্নান করে ফিরে আসা সেই বুড়োর সঙ্গে দেখা হয়েছিল পরদিন ভোরবেলা ফিরে আসার সময়।

 ওসমান হাত ঝাঁকিয়ে বলেছিল, দাদু, আজ স্নানে যাবেন না?

 বৃদ্ধ মাথা নাড়িয়ে বলেছিল,আজ না। রোজ রোজ স্নান নিতে শরীর রাজি হয় না।

 তাইতো, শরীরেরও রাজি-অরাজির ব্যাপার আছে। এটা তো কোনো দিন ওর ভাবা হয়নি।

 তোমরা কোথায় থেকে এসেছ, দাদুরা?

 ঢাকা থেকে।

 আমি কোনো দিন ঢাকায় যাইনি। দু-চারবার রাঙামাটি গিয়েছি মাত্র।

 ওসমান অবাক হয়। এত ছোট গন্ডিতে কেমন করে বসবাস করে মানুষ? কতটা নিরুপায় হলে মানুষ এমন হয়, সেটা বোঝাই কঠিন। ওসমান চোখ বুঁজে সেই অপরূপ এলাকার কথা ভাবে। যদি ওখানে গিয়ে কিছুকাল থেকে আসতে পারত, তাহলে হয়তো বৃষ্টিধোয়া গাছের মতো সজীব হতে পারত। জীবন এখন নানাভাবে চুলোয় পোড়ানো এবং পোড়খাওয়া। এখন মনে হয়, সাজেক ভ্যালির সেই মানুষটির জীবনও পোড়খাওয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনেক সময় মানুষকে স্বস্তি দেয় না। সেখানে বন্দুকের নল গর্জন করে। সেখানে পানির অভাবে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়।

 দাদু বলেছিল, আমাদের এখানে বর্ষাকাল সবচেয়ে প্রিয় ঋতু। কেন জানো?

 কেন, দাদু? বসন্তকালে তো অনেক ফুল ফোটে।

 মানুষ বর্ষা চায় জলের জন্য। সে সময় আমরা খাবার জল ধরে রাখি। খাবার জল টানার জন্য মেয়েরা যে কষ্ট করে, তার থেকে ওরা কিছুকাল শান্তি পায়।

 ওসমান ভাবল, গুলি ও জল। আদিবাসী মানুষের জীবনযাপনের মাথার বোঝা। সেদিন দাদু ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, এখন বল দাদু, জল দরকার, না ফুল দরকার? তুই বলবি দুটোই দরকার। তবে জল আগে দরকার, না রে?

 হা হা করে হেসেছিল সেই খুনখুনে বুড়ো। ওসমানের মাথার ভেতরে হাসির শব্দ। ওর মনে হয়, ওর নিজের দম ফুরোনোর আগে এমন হাসিই ওর কাম্য ছিল। ও মাথার ভেতরে হাসির শব্দ ধরে রাখতে রাখতে ভাবে, তুমি শতায়ু হও, দাদু। তোমাকে মনে রেখে আমি দিন কাটাব। তোমার হাসির শব্দ হবে আমার জীবনের গান। সেখান থেকে শক্তি নেব।

ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেই হা হা করে হাসে। হাসি যেন পরিপাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে উড়ছে। ওসমানের জীবনেও গুলি ও জলের সত্য জীবন্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু ওর হাসি থামে না। ভাবে, ও হাসি খুনখুনে বুড়ো দাদুর হাসির সঙ্গে মিশে থাকুক। আমি এই মিশে থাকা নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। আমার তো বেশি চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।

 বাইরে মিছিল থেকে স্লোগান ভেসে আসে। কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত। ছাত্ররাজনীতির দুই দলের কোন্দলের জের ধরে প্রতিদিনই নানা ঘটনা ঘটছে। হঠাৎ করে কখনো গুলির শব্দ শোনা যায়। চমকে ওঠে ওসমান। মাথা কাজ করে না। জানালা বন্ধ করে রাখে।

 বদরুল বলে, এভাবে আর কত দিন চলবে, বুঝতে পারছি না। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেবে কিনা অনির্দিষ্টকালের জন্য।

 কে জানে কী হবে। যদি তেমন হয়, তাহলে বাড়ি চলে যাব। অনেক দিন বড় ভাইকে দেখি না। বোনটার শ্বশুরবাড়িও যাওয়া হয়নি। বোনের দুই মাস বয়সী ছেলেটিকেও দেখা হয়নি। আমার দিনমজুর ভাই এখন মুদির দোকান চালায়। এক ধাপ এগিয়েছে।

 তুই বাড়ি গেলে আমিও তোর বাড়িতে বেড়াতে যাব। নিবি?

 হা হা করে হাসে ওসমান।

 এমন করে কেন বললি, নিবি? এই হলে তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু! সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার মতো দুজনে একসঙ্গে গ্রামে ঘুরব। মাছ ধরব। আমার ভাবি ছোট মাছ কলাপাতায় মুড়ে মাটির খোলায় এমন সুন্দর রান্না করে যে খেলে তুই সে রান্নার স্বাদ ভুলবি না।

 হুররে, তাহলে আমার নীলগঞ্জ নদীর ধারে তালতলী গ্রামে যাওয়া পাকা হয়ে গেল।

 বদরুল দুই হাত ওপরে তোলে।

 এক কাজ করলে হয় না, আমরা চল ঘুরেই আসি। ইউনিভার্সিটি বন্ধ হোক আর না হোক।

 না রে, এখনই যাব না। মাত্র কয়েক দিন আগে সাজেক দেখে এলাম। যাব আর কয় দিন পরে।

 যাবি না? ওসমান বিষণ্ণ হয়ে যায়।

 যাব না বলিনি। বলেছি কয়েকটা দিন যাক। পরীক্ষায় তো পাস করতে হবে। আর তোর নোট ছাড়া তো আমার গতি নাই। চলি রে, বন্ধু।

 বদরুল চলে গেলে ওসমান অনুভব করে, চারদিক কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে। এমন ভয়াবহ নির্জনতায় ও জীবনে পড়েনি। ওর ভয় করছে। ঠকঠকিয়ে হাঁটুকাঁপা ভয়। ভয় কেন? ভূমিকম্পের, নাকি দাঙ্গার, নাকি জলোচ্ছ্বাসের, নাকি ঘূর্ণিঝড়ের? ওর বুক ঢিপঢিপ করে। নিজের কপালে হাত দেয়। বুঝতে পারে, জ্বর এসেছে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে ওর জ্বর হয়নি। সর্দি-কাশিও না। ও বিছানায় শুয়ে পড়লে ঠকঠক করে কাঁপে শরীর। ওর আর কিছু মনে থাকে না। ও বালিশে মাথা গোঁজে।

 দুদিন পার হয়ে যায়।

 বদরুল ওকে নাপা খাইয়েছে। বলেছে, জ্বর না ছাড়লে আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাব। কিন্তু নাপা খেয়ে জ্বর ছাড়ে। খানিকটা স্বস্তি ফিরে পায় ও।

 পরদিন রাত আড়াইটা।

 ছাত্র সংঘর্ষের বাড়াবাড়ির একপর্যায়ে পুলিশ হলের ভেতরে ঢুকে লাঠিচার্জ শুরু করে। বদরুল ওর ঘরেই ছিল। শব্দ শুনে ওর হাত ধরে বলে, ওঠ।

 কোথায় যাবি?

 পায়ের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে, ব্যালকনিতে অনেকে জড়ো হয়েছে। আমরাও ওখানে যাই। নইলে পুলিশ ঘরে ঢুকে পেটাবে। টিয়ার শেল ছোঁড়া হয়েছে।

 চারপাশে এত ধোঁয়া যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

 আমার হাত ধরে রাখ।

 আমার মাথা ঘোরাচ্ছে।

 আমারও মাথা ঘোরাচ্ছে।

 শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

 কথা বলিস না। সবার সঙ্গে এখানেই দাঁড়াই আমরা। তুই দেয়ালে ঠেস দিয়ে থাক।

 ওসমান চোখ বুঁজে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে রাখে।

 কেউ কিছু বোঝার আগেই ওদের দিকে ছুটে আসে টিয়ার শেল। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। বদরুল শুধু বুঝতে পারে, ওসমান কাত হয়ে পড়ে গেছে। ভাবে, পরিস্থিতি শান্ত হলে ওসমানকে ওঠাবে। হয়তো ওর মাথা ঘোরাচ্ছে। ও শুয়েই থাকুক।

 একটু পরে খেয়াল করে, ওর পা ভিজে যাচ্ছে। ও খালি পায়েই দাঁড়িয়ে আছে। ওসমানও খালি পায়ে এসেছে। ভিজে যাওয়া পায়ের দিকে খেয়াল করার দরকার নেই। গ্যাসের দ্রবীভূত কোনো কিছু হয়তো পায়ে লাগছে। একসময় পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়। ধোঁয়া কমে গেলে ছেলেরা যখন এদিক-ওদিক সরে যেতে থাকে, তখন বদরুল খেয়াল করে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। কাত হয়ে পড়ে থাকা ওসমানের মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

 ও চেঁচিয়ে ডাকে, ওসমান, ওসমান।

 সাড়া নেই।

 এতক্ষণের রক্তক্ষরণে জ্ঞান হারিয়েছে।

 বদরুলের মনে হয়, ছোট ব্যালকনিটি এক বিশাল সাজেক ভ্যালি। ওসমানকে কাঁধে নিয়ে ও ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। একসময় ও টের পায়, ওর কাঁধের ওপর ওসমান নেই। ওসমান পাখি হয়ে উড়ছে। অল্পক্ষণে ওকে আর দেখা যায় না। ও আকাশের বিশালত্বে হারিয়েছে।

 ওসমান এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বলেন্স ডেকেছে। দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্সের টানা শব্দে বদরলের মাথা ঝিমঝিম করছিল। সামনে মৃতপ্রায় একজন বন্ধু। এভাবে বেঁচে থাকার হিসেব করা কঠিন। ওসমান নিরীহ ছেলে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না, বরং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ ছিল। বদরুল খেয়াল করেছে কোনো বড় মানুষের মৃতদেহ শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা হলে ও ফুল নিয়ে যেত। মরদেহ নিয়ে গাড়ি শহীদ মিনার ছেড়ে গেলে একা একা ফিরে আসত হলে। ফুটপাত ধরে হেঁটে এসে বদরুলের সঙ্গে দেখা হলে বলত, এটা আমার শ্রদ্ধা নিবেদন। সবার সঙ্গে মিলেমিশে না একা একা শ্রদ্ধা জানানো। গাড়ি হাসপাতালের সামনে এসে থামে। স্ট্রেচারে করে ওকে নিয়ে যাওয়া হয়।

 ইমার্জেন্সিতে বেড নেই। মেঝেতে রাখা হয়েছে ওকে। রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। জ্ঞানও ফেরেনি। শ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু প্রবাহ আছে মাত্র। বদরুল ওর মাথার কাছে বসে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। ভাবে, এই শ্বাস-প্রবাহ বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। ডাক্তার যদি এই প্রবাহের গতি বাড়াতে না পারে, তাহলে কী হবে? বদরুলের মাথা নেমে আসে মাটির দিকে।

 কিছুক্ষণ আগে পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা জলপ্রপাতের মতো ছিল ওসমানের মাথার রক্তক্ষরণ। এখন এটি ক্ষীণধারা হয়েছে। একটু পরে রক্তের ধারা বন্ধ হয়ে গেলে জলপ্রপাতে স্নানরত খুনখুনে বুড়োরা বলবে, ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় নন। আমরা যা হারাতে চাইনি, তিনি তা নিয়ে গেছেন। আমাদের পাপ মার্জনা করবেন দয়াময়।

 ডাক্তার এসেছেন।

 ওসমানকে বেডে ওঠানো হয়েছে।

 ডাক্তার মৃদস্বরে বললেন, রক্তক্ষরণে অবস্থার অবনতি হয়েছে। আল্লাহকে ডাকুন।

 কাছের মানুষ কেউ নেই যে চিৎকার করে কাঁদবে। বিলাপ করে হাসপাতালের করিডরে আর্তনাদ করবে। নিঃসঙ্গতা ওসমানের প্রিয় শব্দ ছিল। এখন এক গভীর নিঃসঙ্গতায় ডুবে আছে ওর বেঁচে থাকার চরাচর। বদরুল ছাড়া ওর খুব কাছে কেউ নেই।

 নিঃশব্দ রাতের প্রহর শেষ হয়।

 দিনের আলো ছড়িয়েছে।

 রাতে যারা হাসপাতালে আসতে পারেনি, সেসব ছেলে জড়ো হয়েছে ইমার্জেন্সির সামনে। বাইরে কোলাহল বাড়ে। কেউ এসে স্লোগানের মতো বলে, ওসমান হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।

 চুপ। ওর শ্বাস আছে। ও মরে যাওয়ার আগেই তোরা কেন এমন স্লোগান দিচ্ছিস? দোয়া পড় ও যেন ভালো হয়ে যায়।

 তাহলে ও কি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে?

 হ্যাঁ, লড়ছে। পাঞ্জা লড়া কঠিন, তবে ও জিততেও তো পারে। মৃত্যুর কাছে সবাই হারবে কেন?

 অল্প সময়ের জন্য ওর জ্ঞান ফিরেছিল।

 কয়েকজন এসে বদরুলকে ঘিরে ধরে।

 ও কি কিছু বলেছে?

 না। কথা বলার মতো অবস্থা ওর নেই।

 ডাক্তার কী বলছে?

 তাঁরা তো চেষ্টা করছেন। দেখা যাক।

 বদরুল হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতঘড়ি শব্দ করে না। ছোটবেলা থেকেই ও ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পছন্দ করত। বড় হয়ে ভেবেছে, ওই শব্দ সময়ের হৃদপিন্ডের শব্দ।

 ওর সামনে দেয়ালঘড়ি নেই। হাসপাতালের ইমার্জেন্সির করিডরে দাঁড়িয়ে থেকে ওর অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না।

 ছত্রিশ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ে ওসমান। নিভে যায় জীবন প্রদীপ।

 খবরটা শোনার পরে চোখ ভেজে না বদরুলের।

 এমন মৃত্যুতে চোখ ভিজবে কেন? ক্রোধ হবে। হাত বারবার মুষ্টিবদ্ধ হয়। ও দেখতে পায়, ক্যাম্পাস বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। স্লোগান-মিছিলে ভরে উঠেছে চারদিক। সরগরম ক্যাম্পাস।

 ওসমানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। তার প্রস্তুতি চলছে।

 কে যেন বদরুলের ঘাড়ে হাত রাখে। বলে, ও তো তেমন কারো সঙ্গে মিশত না। তুই ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ওর কাছ থেকে নোট নিয়ে পরীক্ষা দিতি।

 বদরুল ঘাড় থেকে ছেলেটির হাত নামিয়ে দিয়ে বলে, আমি অকৃতজ্ঞ নই।

 কৃতজ্ঞতার ঋণের দায় নিবি?

 হ্যাঁ। আমি ওর লাশের সঙ্গে মধুপুর গ্রামে যাব। দাফনের সময় থাকব।

 লাশ নিয়ে গ্রামে পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যায়। ওর খাটিয়া যে চারজন কাঁধে নিয়ে হাঁটছে, তাদের মধ্যে বদরুল একজন। ওদের বাড়ি পর্যন্ত অ্যাম্বুল্যান্স যাবে না। রাস্তা নেই।

 অবারিত সবুজের মাঝে হেঁটে যেতে যেতে বদরুল নিজেকে বলে, ওসমান আপনাকে খুব ভালোবাসত জহির রায়হান। ও ভাবত, একদিন আপনার সঙ্গে ওর কোথাও না কোথাও দেখা হবে। আপনি আছেন কি আশেপাশে কোথাও? রাজাকাররা আপনাকে কোথায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল? দেশের কোথায় আপনার শেষ ঠাঁই হয়েছে?

 অন্যায়ভাবে লাশ হয়ে যাওয়া ওসমানকে নিয়ে তৈরি হবে কি কোনো চলচ্চিত্র?

 এতক্ষণে বদরুলের চোখ ভিজে যায়। ও চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। অন্যরা বুঝতে পারে, এতক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকা বদরুল বুকের ভেতর চোখের জল আটকে রেখেছিল। এখন ওর কান্নার শব্দ গুলির মতো ছুটছে। ও কাঁদতে কাঁদতে ওসমানের বাড়িতে আসে। কফিনের বাক্স নামিয়ে দূরে গিয়ে তেঁতুল গাছটার নিচে দাঁড়ায়। ওর পিছে পিছে দু’জন তরুণ এসে বলে, আপনার কান্নার শব্দ শুনে মনে হচ্ছে চারদিকে গুলি হচ্ছে।

গুলিইতো ওর জীবন নিয়েছে। ওরতো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।

 তাই বলে কান্নার শব্দ এমন শোনাবে?

 শব্দ কখনো এভাবে পাল্টে যায়। এটাই আমার প্রতিবাদ। আপনারা জানাজা শেষে ওকে কবরে শোয়ানো হলে স্লোগান দিয়ে ওর মৃত্যুর প্রতিবাদ করবেন। বলবেন, আমরা এমন মৃত্যু চাই না।

 দু’জন গ্রামের ছেলে ওকে ধরে বলে, আমরা আপনার সঙ্গে থাকব। প্রতিবাদ করব।

 বদরুল দু’হাতে চোখের পানি মোছে।

 আমি আরিফুর রহমান আবার ফিরে এসেছি।

 আমাকে ফিরে ফিরে আসতে হয়। আমি আরিফুর রহমান একজন মানুষ নই। আমার মধ্যে অনেকের হৃদপিন্ডের ধুকধুক শব্দ আছে। সে শব্দ কখনো স্তব্ধ হয়। যেমন হয়েছে ওসমান অধ্যায়ের শেষ হওয়ার সঙ্গে। জীবনের অন্য একটি অধ্যায়ে হেঁটে আসা আমিতো কাঁচের ঘরের মানুষ। অজস্র ছবি আর রঙতুলিতে আঁকা দেয়ালের চিত্রে নতুন হয়ে বেঁচে উঠি। আমার জীবনে অধ্যায়ের শেষ নেই। এখন আমি মশিরুল। আমিতো ভালোইবাসি জীবনের এই রূপান্তর। একের মধ্যে বহুর বিন্যাস আমার সাধনা। রূপান্তরের রঙ-বদল আমার অস্তিত্ত্বের অংশ। এভাবে আমি জনপদের অজস্র মানুষের সঙ্গে এক হই। কখনো মনে করি আমি কোটি কোটি জীবন বৈচিত্র্য ছুঁতে পেরেছি। আমি কোটি কোটি বলছি কারণ একজনের মাঝে বহুর কন্ঠস্বর শোনাই আমার আকাঙক্ষা আমি সেটা শুনতেও পাই। এই সূত্রে আমি একজন সফল মানুষ। নিজেকে এভাবে ভাবা যায় কিনা তা আমি বুঝতে চাই না। মনে হলো মা আমাকে খুঁজছেন। বলছেন, মশিরুল তুই কোথায় রে? আমি বলছি, মা আমি বেডরুমে। আমার কৈশোরের স্মৃতি খুঁজছি।

 ঘরের নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মশিরুল নিজের ডায়েরিটি বের করে আলমারি থেকে। জীবনের কিছু কিছু ঘটনা এই ডায়েরিতে লেখা আছে, যাকে ও মনে করে অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। ওর মনে হয়, সঞ্চয়ের হিসেব রাখতে হয় না। তাহলে সে হিসেব কমতে থাকে কমে যায় সঞ্চয়ের ভাঁড়। কৈশোরে দেখা একটি ঘটনা থেকে ওর মনে এমন ধারণা জন্মেছে। তেত্রিশ বছর বয়সে আবার ডায়রিটি খুলে পৃষ্ঠা ওল্টায়। আবার সেই পৃষ্ঠা বন্ধ করে। এভাবে ডায়রি খোলা, পড়া, বন্ধ করা দিনরাতের অজস্র সময়ে করেছে। মনে হয়নি যে এটা অবসরের বিনোদন বরং ভেবেছে এভাবেই শক্ত করা নিজের অস্তিত্ত্ব, মনুষ্যত্ব এবং দেশের জন্য ভালোবাসা। মশিরুল নিজেকে মিশিয়ে দেয় অনেকের সঙ্গে, মনে করে না যে ও একা। ওর চারপাশে কেউ নেই। ওর চারপাশে অনেক মানুষ – কখনো আনন্দ-উৎসব করছে, কখনো মিছিলে সামিল হয়েছে, কখনো প্রবল প্রতিরোধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এভাবে সময়ের নদীতে বান ডাকে। কখনো স্রোতহীন হলে আবার উত্তাল হয়। এভাবে সময়ের নদী বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, গড়ে দেয় ছনের ছাউনি, যেখানে লাউ-কুমড়োর লতা বেয়ে যায়, ফুল ফোটে শস্য হয়। আহ, এভাবে মানুষের জীবন, মানুষের জীবন। মশিরুল আত্মমগ্ন নিশাচর হয়ে ডাক ভুলে নিশ্চুপ রাতের প্রহর কাটায়।

 ওর সামনে আজ আবার অন্য একটি দিন। সকাল থেকে ভাবছে ঢাকার বাইরে দূরে কোথাও চলে যাবে। যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের যোগাযোগে কোনো ফাঁক নেই। নৈকট্য এত গভীর যে, একজন মানুষ সেই সম্পর্কের জায়গাটি বুঝে নিজেকে শুদ্ধ রাখতে পারে। এমন একটি ভাবনা মাথায় নিয়ে ও আবার ডায়রির পৃষ্ঠা খোলে। তেরো বছর বয়সে ডায়রির সাদা পৃষ্ঠায় কালো কালি দিয়ে লেখা অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে এসেছে। তবে পড়া যায়। পড়তে অসুবিধাও হয় না। ও লিখেছে, সময়টি ছিল সূর্য ওঠার আগের সকাল। তারিখ ২৬ মার্চ।

 যেহেতু ডায়রিটি একটি বিশেষ বছরের, সে জন্য লেখার সঙ্গে বছরের উল্লেখ করতে হয় না। নিজেকে বলে, তাহলে তারিখের উল্লেখ করেছে কেন? ওটা বয়সের ভুল ছিল না। তারিখটিকে চিহ্নিত করে রাখার জন্য কালো কালি দিয়ে লিখেছিল। ইচ্ছে করেই। যেন তারিখটি ওর সামনে থেকে কোনোদিন হারিয়ে না যায়। যেন ঘটনাটি বিশাল ক্যানভাসে সাদা-কালো রঙের ছবি হয়ে অনাদিকাল পর্যন্ত জ্বলজ্বল করে। ডায়রি থেকে মাথা তুলে তাকালে দেখতে পায় ঘরের সব দেয়ালে আয়না। আয়নার দেয়ালে ফুটে উঠেছে সেদিনের ঘটনা। ও এখন সেই বাড়িতে আছে, তার পাশের বাড়িতে ঘটেছিল ঘটনাটি। এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ি। কয়েক জন পাকিস্তানি সেনা সেই সকালে জিপ থেকে লাফিয়ে নেমেছিল। বুটের কঠিন শব্দ হয়েছিল, যেন কংক্রিটের রাস্তার ওপরে দাপানোর শক্তি প্রদর্শন। ওরা পাশের বাড়ির বাসিন্দা, সেই শব্দ শুনে খাটের নিচে আড়াআড়ি হয়ে শুয়েছিল তিনজন। ওর বাবা মফিজুল হক, মা নাজমা আখতার আর ও নিজে। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। কাজের মেয়েটিকে ওর মা তিন দিন আগে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। ওরা খাটের নিচে টানটান শুয়ে থেকে পাঁচটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিল। মফিজুল হক ফিসফিস করে বলেছিল, এটা পিস্তলের গুলির শব্দ।

 নামজা আখতার ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেছিল, কথা বলো না। ওরা যদি শুনতে পায়?

 আমরা তো জানি, কেন ওই বাড়িতে ওরা ঢুকেছে। যাকে খুন করেছে তিনি একজন অন্যরকম মানুষ। তিনি শহীদ হবেন।

 মশিরুল কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেছিল, বাবা আমার ভয় করছে। কেঁদেই ফেলেছিল ও।

 আমরা আর কথা বলব না সোনা। তুমি কেঁদো না।

 বাইরে তখন আবার গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। একঝাঁক গুলির শব্দ। মনে হয়েছিল ফাঁকা আওয়াজ। তার কিছুক্ষণ পরে জিপটি চলে যায়। জিপের শব্দ কাঁপিয়ে তুলেছিল ফাঁকা রাস্তা। তারও অনেকক্ষণ পরে যখন আর কোনো শব্দ হচ্ছিল না, তখন মফিজুল হক জানালা ফাঁক করে দেখেছিল বাড়ির সামনে কোনো লাশ নেই। জমাট বাঁধা রক্ত ঘন হয়ে ছিল। অনেকক্ষণ পর গড়াতে শুরু করেছিল রক্তের ধারা। বোঝা যাচ্ছিল, মৃতদেহটি জিপের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা। এটুকু হলো মশিরুলের জীবনে নিখোঁজ হওয়ার একটি ঘটনা। এমন ঘটনা আরও আছে। কিন্তু ডায়রি একটাই। সেজন্য অন্য ঘটনা লেখার সময় বছরসহ তারিখ উল্লেখ করতে হয়েছে। যেমন ওর বাবা মফিজুল হকের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা। এরপর মায়ের মৃত্যুর তারিখ। ওদের বাসায় থাকা কাজের মেয়েটিরও একটি ঘটনা আছে। একজন বন্ধুর কথাও লিখেছিল। ওই ডায়রিতে প্রতিদিনের কথা নেই। সাধারণ দিনের স্মৃতির কথা নেই। শুধু অলৌকিক ঘটনা আছে, যেগুলো ওকে এখনও ভাবায়। সেই ভাবনা থেকে সুখ খুঁজে বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিলায়, বিশ্লেষণ করে এবং একটি বই লেখার পরিকল্পনায় কাগজের পৃষ্ঠা ভরে তোলে। ভাবে, ইতিহাস যদি সারভাইভাল অব ফ্যাক্ট হয় তবে ইতিহাসের নানা ডাইমেনশন থাকবে। সেই ডাইমেনশনের সূত্রে মেলাতে হবে বর্তমানকে।

 জহিরুল ওর এই ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারে না। বলে, এসব তোর পাগলামি। এভাবে চিন্তা করে কি ইতিহাস লেখা হবে?

 আমি তো ইতিহাস লিখব না। ইতিহাসের ব্যাখ্যা খুঁজব। খুঁজব ব্যক্তির ইতিহাসও। যারা কিছু একটা করে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন।

 বোগাস। একা একা থেকে এসব হাবিজাবির মধ্যে ঢুকছিস। কে জানে, কবে তোকে মানসিক হাসপাতালে নিতে হবে!

 আমার কিছুই হবে না। আমি ঠিক থাকব। কাজ করব। লেখার কাজ।

 বাবার এমন একটি বাড়ি থাকলে এ সবকিছু ভাবাই যায়।

 চুপ করে থাকে মশিরুল। কারো সঙ্গেই ওর বেশি কথা ভালো লাগে না। নিজে কী ভাবছে সেটাও শেয়ার করতে ইচ্ছা করে না। বছর তিনেক আগে মায়ের মৃত্যুর পরে ও আরও অন্তর্মুখী হয়ে গেছে। আগে যখন ঢাকার বাইরে যেতো, মা থাকতো বাড়িতে। এখন তালা দিয়ে যেতে হয়। কাজের ছেলে মঈন তখন বাড়ি যায়। নয়তো ওর সঙ্গে যেতে চায়। ওর ইচ্ছে হলে ওকে নিয়ে যায়। নইলে বাড়িতে থাকতে বলে। এবার ও ঠিক করেছে, ভোলায় যাবে। পুরো দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো ওর স্বভাব। ওর বাবা কলেজে পড়াতেন। ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। একবার পটুয়াখালীর কলেজে পোস্টিং হয়েছিল তার। সেই বালক বয়সে বঙ্গোপসাগর দেখা হয়েছিল ওর। ইতিহাসের মানুষ বাবা ওকে নিয়ে ঘুরেছিলেন নানা জায়গায়। কত অজানা গ্রাম, মানুষ! কত অজানা গাছ-পাখি দেখে মানুষ ও প্রকৃতি দেখার স্বরূপ বুঝেছিল ও। এখন সেইসব স্মৃতি ওর পরিসর বাড়িয়ে দেয়। ও নিজের খুশিমতো উত্তরবঙ্গের মহানন্দা নদীর ধারে যায়। কানসাট মসজিদ দেখে আসে। পোলাডাঙা সীমান্ত ফাঁড়িও বাদ যায় না। টেকনাফ-শাহপরী দ্বীপে যায়। মহেশখালীতে গিয়ে আদিনাথের মন্দির দেখে। রামুর বৌদ্ধ মন্দির দেখে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবে, এই মন্দির ইতিহাসের বঙ্গোপসাগর। বাবার কাছ থেকে জেনেছে পূর্ববঙ্গের নানা ঘটনা। এভাবে চিন্তা করলে হবে না। চিন্তার রাশ টেনে ধরে। উঠে পানি খায়। তারপর ইলেকট্রিক কেটলিতে চায়ের পানি বসায়।

 ওকে চা বানাতে দেখলে জহিরুল চেঁচামেচি করে বলে, এটা কোনো জীবন হলো?

 ও হাসে। হাসতে হাসতে বলে, এ জীবন মন্দ কী? ভালোই তো আছি।

 তোর জীবনসঙ্গী লাগবে না?

 এটা তো প্রথামাফিক জীবনযাপন।

 প্রথাই তো মানব সভ্যতা।

 বড় কথা বলিস না জহিরুল।

 বড় কথা তুই বলছিস। উল্টো পথে হাঁটতে চাইছিস।

 একশ’ জনের মধ্যে একজন উল্টো পথে গেলে ক্ষতি নেই। তোরা সভ্যতা টিকিয়ে রাখ। আমি বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাব।

 শয়তান একটা। জহিরুল রাগে র্গর্গ করে।

 এখন বল, চা খাবি না কফি?

 আর কী আছে? ফ্রিজ কি শূন্য?

 খুলে দেখ।

 ফ্রিজ খুলে জহিরুল চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল ওয়াও…। এত খাবার! পুডিং, হালুয়া, চিকেন ফ্রাই…। ব্যাপার কী রে? প্রেমে পড়েছিস?

 এ দেশে কি দোকানের অভাব আছে? বাপের টাকায় ভাত খাই। তাই কেনার সময় পিছিয়ে থাকি না। তোর যেটা খুশি সেটা খা। সব খেতে পারলে খেয়ে শেষ কর।

 ইয়ার্কি করছিস আমার সঙ্গে? জহিরুল রাগতে গিয়েও রাগে না। হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে, এভাবে জীবন কাটানো মন্দ না। খেয়ে-পরে বেঁচে থাক দাদা। পুডিং আমার খুব প্রিয়। এখন পুডিং খাব। তারপর কফি।

 এখন ওর সামনে জহিরুল কিংবা অন্য বন্ধুরা নাই। কেটলিতে পানি গবগব শব্দ করছে। অন্যমনস্ক মশিরুল ঘাড় ঘুরিয়ে কেটলির নল দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে দেখে। মাঝে মধ্যে এমন কিছু দৃশ্য দেখে অন্যমনস্ক হয়ে থাকা ওর স্বভাব। এ বিষয়ে মা ওকে অনেক সময় সতর্ক করেছে। কিন্তু কোনো কিছুই মনে থাকেনি ওর। এখন মা নেই। মনে না থাকা আরও দীর্ঘ হয়ে গেছে। আজ তেমন হলো না। চায়ের কেটলির সুইচ অফ করে মগে পানি ঢেলে এক মগ কফি বানায়। মঈন বাজারে গিয়েছে। ওকে আড় মাছ আনতে বলেছে। কেন এ মাছটির কথা ওর মনে হলো তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। রান্না হলে যে ও খাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। এমন অনিশ্চিত ওর জীবনযাপনের অনেকটুকু। এ নিয়ে ওর অবশ্য কোনো দ্বিধা নেই। ভয়ও না। কৈশোরের সেই রক্ত জমানো দরজার সামনে ওর ভেতরে অনিশ্চয়তার যে রেশ দাগিয়েছিল সেটা এখনও চলছে। ও কফির মগ নিয়ে দক্ষিণের বারান্দায় আসে। বাড়ির এ পাশটা এখনও ফাঁকা। খোলা জায়গা পড়ে আছে। জায়গার মালিক বিদেশে বলে এখনও বহুতল ভবন হয়নি। কতদিন মাঠ থাকবে সেটাও অনিশ্চিত। ছোট প্রাচীর দেওয়া আছে চারদিকে। ছেলেরা দেয়াল টপকে ফুটবল খেলতে আসে। মশিরুলের মনে হয়, এই শহরে ওরা বেশ ভাগ্যবান। ও বারান্দায় এসে দেখে মাঠটা ফাঁকা। আজ কি ছেলেরা খেলতে আসেনি? নাকি খেলা শেষে চলে গেছে? এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন ওরা? সূর্য ডোবার তো এখনও ঢের বাকি। ও ঘড়ি দেখে সময়ের হিসেব করতে চায় না। মাঝে মাঝে দিনকে দিনের মতো চলে যেতে দেখতে ভালো লাগে ওর। মনে হয়, এর সঙ্গে নাড়ির সূত্র আছে, যে সূত্র ধরে মানুষ জীবনের হিসেব কষে। হিসেব ভালো-মন্দের, পাওয়া-না পাওয়ার, বর্তমানের-অতীতের। ইতিহাসের-সংস্কৃতির। দেশের। দেশের ভেতরে ঘটে যায়া অজস্র ঘটনার। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ। যেভাবে আরিফুর রহমানের ভেতরের ওসমান আলী মরে যায়। ও কফির মগে চুমুক দিতে ভুলে যায়। হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দার রেলিংয়ের পাশে। ভাবে, কফি বানানো ভুল হয়ে গেছে। এখন ওর কফির দরকার নেই। বুকের ভেতরে কোনো ধরনের পানীয়ের তৃষ্ণা নেই।

 চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন মানুষের জমাট বাঁধা রক্ত। মানুষটিকে হত্যা করে তারা কোথায় যেন নিয়ে গেছে। কোথায়? কেউ জানে না। তাকে খুঁজতে হবে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে। মাটির উপরে বা নিচে। কিন্তু এভাবে খোঁজার উপায় নেই। ওর ভেতরে গুমগুম ধ্বনি হয়। ও হাতের মগের কফি রেলিংয়ের ওপাশে ফেলে দিয়ে রান্নাঘরে আসে। মগটা বেসিনে রেখে দেয়। শূন্য মগটার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে সেদিন যে মানুষটিকে পাকিস্তানি সেনারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর নাম ছিল লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার একজন আসামি ছিলেন। বড় হয়ে ইতিহাসের সবটুকু পড়া হয়েছিল মশিরুলের। শুধু নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ও ড্রইংরুমে আসে। বইয়ের তাকের সামনে দাঁড়ায়। বাবার বই সংগ্রহের সব বই নিয়ে নিজের সংগ্রহ মিলিয়ে হাজার পাঁচেক বই আছে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে। ইচ্ছে করেই বিভিন্ন বিষয়ের বই বিভিন্ন ঘরে রাখা হয়েছে, যাতে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। এখন ওর সামনে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস বইয়ের সমারোহ। কোনটা নেবে? ওর বাবার আগ্রহ ছিল পূর্ববঙ্গের ইতিহাসে। যেই পূর্ববঙ্গকে তিনি বাংলাদেশ হতে দেখেছিলেন। স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন রাষ্ট্রের নানা টানাপোড়েন তাঁকে বিপর্যস্ত করেছিল। তারপর একদিন? না সেকথা থাক। ও শুনতে পায় দরজায় খুটখুট শব্দ হচ্ছে। বোধহয় মঈন ফিরেছে। মশিরুল দরজা খোলে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশাত। ও মৃদুস্বরে বলে, তুমি?

 তোমার জন্য মুরগির রোস্ট এনেছি। আর ট্যাংরা মাছের দোপেঁয়াজা। নাও। তাড়াতাড়ি বাটিটা ফেরত দাও। মঈন আছে?

 না। বাজারে পাঠিয়েছি।

 কেন পাঠাও? বাজারে পাঠাতে না করেছি না? তোমাকে খাবার আমি দেব। শোনো কাল সকাল এগারোটার দিকে আসবে। বাড়িতে কেউ থাকবে না।

 ভেতরে এসো। তোমাকে তো আবার এক মিনিটে যেতে হবে।

 নিশাত দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে অন্য বাটিতে মাছ-মুরগি ঢেলে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সিঁড়ির মাথায় গিয়ে একবার তাকায়। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মশিরুলের দিকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। একসঙ্গে দুটো সিঁড়ি টপকে দোতলায় উঠে যায়। মশিরুলের দাঁড়িয়ে থাকার সময়ই মঈন আসে।

 আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন স্যার?

 তোকে কি মাছ আনতে বলেছিলাম রে?

 আড় মাছ পাইনি। মাছঅলা বলেছে কালকে যেতে। আড়ত থেকে নিয়ে আসবে। রেখে দেবে আমার জন্য।

 কালকে আর বাজারে যেতে হবে না। মাছ খাব না।

 খাবেন না? আপনি তো খুব শখ করে খেতে চেয়েছেন।

 তুই তো জানিস, আমার শখ সব সময় এক জায়গায় থাকে না।

 হ্যাঁ জানি। আপনার শখের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। আমি একদিন চলে যাব আপনাকে ছেড়ে।

 কোথায় যাবি? মশিরুল ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

 মঈন মাথা নিচু করে বলে, জানি না।

 তোর কোথাও যেতে হবে না। তুই আর আমি ভোলায় যাব।

 ভোলা! ভোলা কোথায়?

 বাংলাদেশের দক্ষিণে। ওখানে গেলে তুই বঙ্গোপসাগর দেখতে পাবি।

 বঙ্গোপসাগর! উহ্ মাগো! আমি বঙ্গোপসাগর দেখব!

 মঈন খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে মশিরুলের পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢোকে। ভেতর থেকে ওর গুনগুন গানের ধ্বনি শোনা যায়। মশিরুল শুনতে পায় গানের বাণী ও আমার পঙ্খিরাজ নাও সাগরে ভাসে। ও মৃদু হেসে দরজা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। রাস্তায় দাঁড়ানোর জন্য বিদ্যুতের খুঁটিটাকে পছন্দ ওর। খুঁটির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলে রাস্তার যান চলাচল ওর সামনে ভিন্ন রকম। মনে হয়, এই গতি নিশাতের ঘর। ওর ঘরে শূন্যতা আছে, বিত্ত আছে। যার সঙ্গে বসবাস তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনয়ন আছে। এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওর ছুটে চলার গতি আছে। সেই গতির সঙ্গে ঘরের চার দেয়ালও রাস্তা। সে রাস্তায় যাবেন আটকে থাকা মানে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা নয়। গতিকে ছুটতে দেওয়া। এভাবেই নিশাত ব্যাখ্যা করে মশিরুলের সঙ্গে সম্পর্ককে। বলে, তুমি না থাকলে জীবনের অনেকখানি শূন্য থাকতো। বুঝতে পারতাম না যে নিজেকে বঞ্চিত করাও সম্পর্কের শোষণ। এই বৈষম্যহীন শোষণকে আমি মানি না।

 মশিরুল মৃদু হেসে বলেছিল, সম্পর্কের যে শোষণ তুমি মান না, অর্থাৎ সম্পর্কের বৈধ শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তাকে তুমি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারো না। তুমি কাজের ছেলে মঈনকেও ভয় পাও।

 এটা তোমার প্রেস্টিজ রক্ষা।

 না, তোমারও প্রেস্টিজ। মশিরুল যে সম্পর্কে শুধু দু’জনের গন্ডি বাঁধা, তাকে প্রকাশ করা জরুরি নয়। আমরা অপ্রকাশের শোষণহীন গন্ডিতে প্রবল গতিতে ছুটছি। এসো, আমার হাত ধরো।

 বিদ্যুতের খুঁটিতে নিজের ভার ছেড়ে দিয়ে মশিরুলের মনে হয় নিশাতের তৃষ্ণার জলে কমতি আছে।

 যতটুকু পান করে সে জল ওর শরীরের সব জায়গায় পৌঁছায় না। ওর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মশিরুল এখন ক্লান্ত। সে জন্য নিশাত মাঝে মাঝে বলে, চলো আমরা ঘর বাঁধি মশরু।

 তোমার স্বামী, তোমার মেয়ে?

 স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেব। মাইশা আমার মেয়ে। ও আমার কাছে থাকবে। তোমার কাছ থেকেও আমি একটি সন্তান চাই। এখনও দিতে পারো।

 এখন! কী বলছ? মশিরুল একদিকে অবাক হয়, অন্যদিকে ভুরু কুঁচকায়। মনে হয়, নিশাত ওর শোবার ঘরেরই একজন। বিছানার চাদর ঝেড়ে দেয়। বালিশ ঠিক করে। বলে, বিছানায় তুমি খানিকটা ভীত থাকো। ভয় প্রাধান্য পায়, আনন্দ নয়।

 মশিরুল আপত্তি জানায়। বলে, তোমার তা মনে হতে পারে নিশাত। আমার কাছে আনন্দই প্রধান।

 মনে হয় তুমি তখন শরীফের কথা ভাবো।

 একদম না। ও তোমার স্বামী। আমার কেউ না। বন্ধুও না। আমার কাছে আমার বাড়ির ভাড়াটিয়া।

 ভাড়াটিয়া। হ্যাঁ, আমিও তোমার ভাড়াটিয়া, মশরু।

 সামাজিকভাবে অবশ্যই তাই।

 এরপর কয়েকদিন কথা বলেনি নিশাত। সে ক’দিন নিজের সঙ্গে অনবরত খোলামেলা কথা হয়েছে মশিরুলের। ঘুমের ভেতরসহ জেগে থাকার বিভিন্ন সময়ে নিজের সঙ্গে কথা বলে নিজেও ভেবেছে, বিয়ে-বহির্ভূত একটি সন্তান তো ও নিশাতকে উপহার দিতে পারে। যদি তা নিশাতের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কসূত্র হয়। নিশাত কি সেটাই বোঝাতে চেয়েছে! মশিরুল এমন একটি চিন্তায় প্রবলভাবে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ও খুঁটির গায়ে শরীর ঠেকায়। নিজের ভার ছেড়ে দেয় খুঁটির ওপর। যেভাবে বাবা ওর জীবনযাপনের ঠেকনা দিয়েছে। বাবা হারিয়ে যাওয়ার পরে মা আরও ছয় বছর বেঁচে ছিলো। দুঃসহ বাঁচা। স্বামীর হারিয়ে যাওয়া যে এত যন্ত্রণাদগ্ধ হতে পারে তা ও মানতেই পারে না। অন্যদিকে নিশাত স্বামীর বর্তমানে কত অবলীলায় তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সে সম্পর্ক শুধুই ভালোবাসা শব্দের মধ্যে আটকে নেই। তা বিছানার গভীর আনন্দ হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *