লা পারিযিয়েন
রশীদ মেধাবী ছাত্র। বরাবর বৃত্তি পেয়েছে। কাজেই পিতার উপর সে পড়াশুনার খরচের বড় একটা ভাব চাপায় নি। এবার সে বি. এ. পরীক্ষায় ইংরেজিতে অনার পেয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছে। বাপের বুক আনন্দে গর্বে ফুলে উঠেছে।
রশীদের–পিতা কোন স্কুলের হেড মৌলভী। সামান্য আয়। অনেকগুলি ছেলে মেয়ে। কিন্তু রশীদের পড়ার খরচের জন্য কখন তাকে ভাবতে হয় নি। এবার তিনি একটু ভাবছেন। ছেলেটাকে কোনও রকমে বিলেতে পাঠাতে পারলে মানুষ হ’ত।
খোদাই মুশকিল আসান করে দেন। সুবর্ণপুরের জমিদার বাড়ী থেকে রশীদের বিয়ের প্রস্তাব এল। তাঁরা এমন ভরসাও দিলেন যে বিলেতের খরচ পৰ্যন্ত দিবেন। সেই বৎসর শওয়াল মাসের এক শুভ দিনে খুব ধুমধামে সালেহা খাতুনের সঙ্গে রশীদের শাদী মোবারকবাদী হয়ে গেল।
সে বৎসর কিন্তু রশীদের বিলেতে যাওয়া হ’ল না। শ্বশুর সাহেব বলেন এম. এ. পাশ করে বিলেতে যাওয়া ভাল। রশীদের পিতা বেহাইয়ের কথায় একটু অসন্তুষ্ট হলেন। রশীদ বিলেতে যেতে খুব উৎসুক ছিল, তবুও সে মনে মনে খুশীই হ’ল। তেমন অবস্থায় পড়লে তোমরাও রশীদের মতন ক’ৰ্ত্তে।
রশীদ এম. এ. পাশ করলে প্রথম বিভাগে বটে, কিন্তু সকলের নীচে হয়ে। রশীদের পিতা মৌলভী সাহেব সকলের কাছে বল্লেন যে পরীক্ষকেরা পক্ষপাতিত্ব করেছে; তা না হলে তার ছেলে যেমন তেমন ছেলে নয়। রশীদ কিন্তু ভালই জানত এরূপ পরীক্ষার ফলের কারণটা কি।
(২)
আজ রশীদের বিলেতে যাত্রার দিন। সালেহার মুখ খানি শ্রাবণের মেঘলা দিনের মত আঁধার। এক বছুরে কোলের ছেলে আবু মায়ের আদর না পেয়ে বার বার চীৎকার করে কাঁদছে। কিন্তু সালেহার সে দিকে লক্ষ্য নেই। রশীদ জিনিস পত্র গোছাতে খুবই ব্যস্ত।
বিদায়ের সময় সালেহার বুক ফেটে যাচ্ছিল। কিন্তু তার মুখে কথাটী নেই। কত কথা বলবে বলে বেচারী সমস্ত রাত মনে তোলাপাড়া করেছে। এখন কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও মুখে কথা ফুটল না। সে অনেক কষ্টে শুধু এই টুকু বললে, “আবুকে ভুলো না।” রশীদ কি বল্তে যাচ্ছিল, এমন সময় বাপ এসে দোরের পাশ থেকে চেঁচিয়ে বল্লেন, “বাবা রশীদ, ট্রেন যে ফেল হয়ে যাবে। এস বাবা, জলদি এস।” তাড়াতাড়ি রশীদ স্ত্রী পুত্রের মুখে দুটো চুমো দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। ছেলেটা আঁতকে কেঁদে উঠল। কিন্তু সে দিকে রশীদের মন দেবার সময় ছিল না।
(৩)
অক্সফোর্ড-ইংল্যাণ্ডের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড। তার সঙ্গে ইংরেজ জাতির কত শতাব্দীর কত মনীষীর স্মৃতিই না জড়িয়ে আছে! এখন রশীদ সেই অক্সফোর্ডের সেন্টজনস কলেজের ছাত্র। তার কৈশোরের স্বপ্ন আজ এক অংশে সফল।
রশীদ খুব মন দিয়েই পড়ছে; বাজে কাজে সময় একটুকুও নস্ট করে না। অবসর সময় সে একটু ফরাসী ভাষা শেখে। বস্তুতঃ সে পুস্তক-জগতেই বাস করে। তার বন্ধুরা তাকে “হোপলেস কেস” মনে করে তার আশা ছেড়ে দিয়েছে। প্রথমে তারা তাকে মদ ধরাবার জন্য খুব উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিল। কিন্তু শেষে হার মেনে তারা একে একে সরে পড়েছে। রশীদ এখন নিবিঘ্নে পড়ার ভিতরই ডুবে আছে।
তবু তাকে সপ্তাহে দুদিন কয়েক ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়। যে দিন দেশ থেকে মেল অসে, সে দিন কতকটা সময় চিঠি পত্র পড়তে যায়। আর যে দিন মেল ছাড়ে, সে দিনও কয়েক ঘণ্টা পত্র লিখতে যায়। বাড়ীর চিঠির মধ্যে যেখানে ছেলের কথা লেখা থাকে,-এই আবু হাঁটতে শিখেছে, এই আবু আকাশের চাঁদের দিকে চেয়ে ‘বাবু, আয়’ ‘বাবু, আয়’ করে ডাকে— এমন সব লেখা তার মনে কি এক ভাব এনে দেয়। এই দু দিন ছাড়া রশীদ সমস্ত দুনিয়া ভুলে পড়াশোনায় মশগুল হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মের বন্ধে অক্সফোর্ড একরূপ জনশূন্য। কলেজের ছেলের ছুটি পেয়ে চারি দিকে ছুটে বেরিয়েছে। বন্ধে কলেজে থাকার হুকুম নেই। তবুও রশীদ একটা ফ্যামিলিতে থাকবে বলে স্থির করেছিল। কিন্তু কয়েকজন ভারতীয় ছাত্র এসে তাকে পাকড়াও করলে প্যারিসে বেড়াতে যেতে হবে। ফরাসী ভাষার একটু চৰ্চ্চা হবে মনে করে সেও রাজী হয়ে গেল।
(৪)
সুন্দরী নগরীরাণী প্যারী। কোন পারসী কবি কাশ্মীর সম্বন্ধে যা ব’লে গেছেন, প্যারিস সম্বন্ধে তা বলা যেতে পারে-
“গর্ ফিরদৌস বরূএ যমীনস্ত।
হমীনস্ত হমীনস্ত হমীনস্ত ॥”
“যদি মর্ত্ত্যে স্বর্গ থাকে, তবে সে এই, সে এই, সে এই।” গ্যার দে নোর ষ্টেশনে নেমে রশীদের চোখে প্যারিস এমনই সুষমাময়ী দেখালে। একখানি ট্যাক্সিতে করে সে আর তার দুই সঙ্গী রু দ্য সোমেরারের একটা হোটেলে গিয়ে উঠল। আগেই তাদের প্যারিসের বন্ধুরা এখানে তাদের জন্য কামরা ঠিক করে রেখেছিল।
দিন পনর পরে রশীদের সঙ্গীরা সুইযারল্যাণ্ডে বেড়াতে গেল। তারা রশীদকে খুব টানাটানি করলে, কিন্তু সে প্যারিস ছেড়ে যেতে চাইলে না। বাস্তবিক ফরাসী ভাষা, ফরাসী জাতি, আর ফরাসী রান্না রশীদকে একেবারে মোহিত করে ফেলেছিল। কাজেই সে প্যারিসেই সমস্ত বন্ধটা কাটাতে ইচ্ছা করলে। সঙ্গে কতকগুলো কলেজের পড়ার বইও ছিল; কাজেই সময় নষ্ট হবার ভয় ছিল না।
রশীদ মাস খানেক প্যারিসে আছে। কয়েকটি ভারতীয় ছাত্র তাকে প্যারিসের জীবন দেখাতে প্রথম দিন কতক তার পিছু খুব ঘুরেছিল; কিন্তু শেষে তাকে নিতান্ত বদরসিক জেনে সঙ্গ ছেড়ে দিলে। রশীদ একাই খায় দায় আর পড়ার অবসর সময়ে একাই বেড়ায়।
আগষ্ট মাস। তখন প্যারিসে সূর্যাস্ত ৯টার কাছাকাছি। ৭টার সময় ডিনার খেয়েও অনেকটা বেলা থাকে। এই সময় রশীদের বেড়ানোর সময়। সে দিন রবিবার। বিকেল ৮ টার সময় রশীদ লুকসেমবুর্গ উদ্যানের একটা বেঞ্চেতে বসে পুকুরে ছেলেমেয়েদের খেলনার ছোট ছোট পালের জাহাজ ভাসান দেখছিল। পুকুরের তরঙ্গের মত তার মনেও কত তরঙ্গ উঠছিল!
তার পাশে কখন যে একটা কিশোরী এসে বসেছিল, তা সে টের পায় নি। কিশোরীটী যে তার স্নিগ্ধ শ্যামল মুখখানির দিকে বার বার কৌতূহলের সঙ্গে তাকাচ্ছিল, তাও সে জানতে পারে নি। তার চমক ভেঙে গেল তখন, যখন সে একটা মৃদু মধুর কণ্ঠস্বর শুনলে– “একসক্যুযে মোয়া, মসিয়ে, ভুযেত দে কেল, ন্যাসিও নালিতে?” (ক্ষমা করুন, মশা’য়, আপনি কোন্ জাতি ?)
রশীদ একটু মুচকে হেসে বললে, “সান্ ফে রিয়্যাঁ, মাদমোয়াযেল, মোয়া যে সুই অ্যাঁদু।” (সে কিছু নয়, কুমারী, আমি ভারতবাসী)। বলা বাহুল্য রশীদ এখন কাজ চালান গোছ ফরাসী শিখে ফেলেছে। তখন যে কথাবার্তা হ’ল তার সারমৰ্ম্ম হচ্ছে-মেয়েটা একটা দোকানে কাজ করে। সে ভারতবর্ষকে খুব ভালবাসে। তার পিতা চন্দননগরে কিছু দিন চাকরি করেছিল। আজ কয়েক বৎসর হ’ল তিনি মারা গেছেন। মেয়েটা রশীদের নাম, রশীদ যে অক্সফোর্ডে পড়ে, বন্ধে কয়েক দিনের জন্য প্যারিসে বেড়াতে এসেছে ইত্যাদি খবরও কথা প্রসঙ্গে বার করে নিলে। শেষে সে তার নিজের কার্ডখানা রশীদকে দিলে। কিন্তু রশীদ একটা ওজর করে তার কার্ডখানা মেয়েটীকে দিলে না। হোটেলের ঠিকানা সে বড় একটা কাকে দিত না। একবার দিয়ে সে একটু ঝঞ্জাটে পড়ে ছিল। সেই থেকে সে সাবধান হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে এল দেখে সে তাড়াতাড়ি “ও রেভোয়ার, মাদমোয়াযেল” ( বিদায়, কুমারী) বলে বাসার দিকে চলল।
আর একদিন রশীদ একটা রেস্তোরাঁয় “দেয্যেনে” (ইংরেজিতে লঞ্চ) খেতে বসেছে, একটী মেয়ে এসে তার কাছের একটা টেবিলে বসল। রশীদ একটা কটলেটের সদ্ব্যবহার কচ্ছিল ; অন্য দিকে তার লক্ষ্য ছিল না। মেয়েটা এদিকে ওদিকে চেয়ে রশীদকে দেখেই তার সামনের চেয়ারে এসে বসে বলে, “বঁ যূর, মসিয়ে রশীদ, ভুষালে বিয়াঁ ?” (সুদিন, রশীদ সাহেব, আপনি ভাল আছেন ?) রশীদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এ কে যে তার নাম জানে? তখনি তার সব কথা মনে হতে সে হেসে বললে “বঁ যূর, মাদমোয়াযেল, ম্যাসি, ত্রে বিয়াঁ, এ ভূ?” (সুদিন, কুমারী, ধন্যবাদ, খুব ভালই ; এবং আপনি কেমন ?) রশীদ প্রথমে ভুলে গিয়েছিল যে লুকসেমবুর্গ বাগানে এক দিন এই মেয়েটার সঙ্গে তার আলাপ পরিচয় হয়েছে এবং তার কার্ড থেকে সে জেনেছে যে তার নাম সুযান।
খেতে খেতে অনেক কথা হ’ল। মেয়েটা কথায় কথায় প্রস্তাব করলে যে সে রশীদের কাছে ইংরেজি পড়তে চায় আর তার বদলে তাকে ফরাসী পড়াবে। রশীদ তা’তে অসম্মত হতে পারলে না। আজ সে তার হোটেলের ঠিকানা লেখা সমেত একটা কার্ডও মেয়েটাকে দিয়ে ফেল্লে।
তার পর থেকে পড়ান ও পড়া খুব উৎসাহের সঙ্গেই চলতে লাগল। প্যারিসে ছুটি শেষ করে রশীদ কলেজ খোলার আগের দিন অক্সফোর্ডে ফিরল।
পরের বড় দিনের বন্ধেও রশীদ, প্যারিসে গেল। আবার ইষ্টারের বন্ধেও সে প্যারিসে গেল। এবার কয়েক জন বন্ধু তাকে জার্মানিতে নিয়ে যেতে খুব টানাটানি ক’রে ছিল। তবুও রশীদ পারিসেই গেল। ফিরে এলে তার বন্ধুরা তার ফরাসী-প্রীতি দেখে তাকে “মসিয়ে ফ্রাঁসে” বলে ডাকতে লাগল।
সে বৎসর গ্রীষ্মের বন্ধে কলেজের বন্ধুরা স্কটল্যাণ্ডে বেড়াতে যাবে বলে ঠিক করলে। কিন্তু কলেজ বন্ধ হ’তেই রশীদ কাউকে কিছু না বলেই চুপে চুপে প্যারিসে রওনা হয়ে গেল।
প্যারিসের এতোয়াল অঞ্চলে সে একটা হোটেলে কামরা নিলে। আগে আরও দুবার সে সেখানেই এসে থেকে গিয়েছে। সুযানও সেই হোটেলে থাকে। র্যদু, সোমেরারের কয়েক জন ভারতীয় ছাত্র তাকে প্রথম বারে বড় অপদস্থ করেছিল বলে সে ক্যার্তিয়ে লাত্যাঁ ছেড়ে দিয়েছে।
প্রেম স্বর্গীয়। সে প্রেমকে নিন্দা করতে পারে কে? রশীদ মনে কলে সুযানের প্রতি তার ভালবাসাও স্বর্গীয় ভালবাসা। তাতে দোষ কি? সে ত আর তার স্ত্রীর সঙ্গে অবিশ্বাসী হচ্ছে না। হায় মোহ !
যদি সালেহা আর একজন পুরুষকে ঐ রকম স্বর্গীয় ভালবাসা দিত, তবে রশীদের মনে কেমন হত! কিন্তু রশীদ সে কথা মনে ভাবতে পারে নি।
(৬)
প্যারিসে একটা প্রকাণ্ড সুন্দর মসজিদ আছে। সেটা মগরেবী স্টাইলে তৈরী। তার উচ্চ চউকোণা মিনার দূর থেকে পথিকের নজরে পড়ে। রশীদ আজ এই মসজিদে বসে আছে। রশীদ বিলেত গিয়ে প্রথম প্রথম কয়েক দিন নামায পড়েছিল। তারপর নানা অসুবিধায় সে নামায ছেড়ে দিয়েছে। অনেক দিন সে খোদার কাছে মাথা নোঁয়ায় নি। আজ শুক্রবার সে তার সবচেয়ে ভাল স্যূট পরে তার উপর ফেয চড়িয়ে প্যারিসের মসজিদে নমায পড়তে গিয়েছে। জুমার নমাযের পরে সকলে চলে গেল। কেবল রশীদ এবং ইমাম সাহেব মসজিদে রইলেন। রশীদ আজ হঠাৎ এমন ভক্ত হয়ে গেল কোথা থেকে– তোমরা অবশ্য জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু সবুর !
সেকণ্ডের কাঁটা যত টিক টিক করে মিনিট গুণে যাচ্ছে, ততই রশীদের হৃদয় আগ্রহে ধুক ধুক করছে। ক্রমে কাঁটার শব্দ তার কাছে ঘণ্টার আওয়াজের মত বোধ হ’তে লাগল। কেউ মরলে যেমন গির্জায় ঘণ্টা বাজে, এ বাজনা যেন তেমনি। কতবার সালেহার বিদায় কালের বিষাদমাখা মুখখানা মনে হল! কতবার ছেলের সরল মুখখানা মনের চোখে ভেসে উঠল। কিন্তু রশীদ বারবার ঘড়ীর দিকে তাকাচ্ছে। যখন তিনটে বাজতে ১৫ মিনিট আছে, তখন রশীদ ইমাম সাহেবকে ব’লে মসজিদের গেটের কাছে গিয়ে দাড়াল।
ঠিক তিনটের সময় রশীদের হোটেলের “গারসঁ” এসে তার হাতে এক খানি পত্র দিয়ে বিদায় হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি পত্রখানা খুলে পড়তে লাগল। পত্রখানা সুযানের লেখা। সন তারীখ স্থান বাদ দিয়ে পত্র খানির তর্জ্জমা এই–
“আমার প্রিয় রশীদ,
ঠিক তিনটের সময় আমার বদলে আমার একখানা পত্র পেয়ে তোমার মনে কি ভাব হবে তা জানি নে। বোধ হয় তুমি খুব বিরক্ত হবে। কথা ছিল তুমি মসজিদের ইমামের সামনে তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে। ভেবে দেখলুম সেটা তোমার খুব অন্যায় হবে। তুমি মনে করো না যে আমি তোমাকে ভালবাসি না; খুব ভালবাসি, প্রাণের মত ভালবাসি। কিন্তু আমি আমার দেশকে তোমার চেয়ে বেশী ভালবাসি। আমি খুব চিন্তা করে দেখলুম আমি এই সুন্দরী ফরাসী ভূমি ছেড়ে হোমদের দেশে মশা, বাঘ আর সাপের সঙ্গে কিছুতেই বাস করতে পারব না। এসব আগেই ভাবা আমার উচিত ছিল। কিন্তু এখনও একেবারে বেশী দেরী হয় নি। নানা কাজে থাকি, বেশী আগে ভাববার সময় কোথায় ? তবে তোমার মনে হয় ত নৈরাশ্যের কষ্ট দিলুম। তার জন্য দশ শ’বার তোমার ক্ষমা চাই। আমি এই হোটেল ছেড়ে চললুম। হয়ত কখন দেখা হতেও পারে। তবে বিদায়, বন্ধু, বিদায়।
বিশ্বাস করো, আমার প্রিয়, আমি তোমার একান্ত অনুরাগিণী
সূযান।”
পত্রখানা একবার শেষ করে, রশীদ আর একবার সেখানা পড়লে। তার পর একটা বড় রকমের দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, কাছে বাজপড়া লোকের মত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
ইমাম সাহেব যখন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হ’ল ?” তখন রশীদের হুশ হ’ল। সে স্থিরভাবে বলে “আল্ হামদু লিল্লাহ।” আল্লাহতালা আমায় উদ্ধার করেছেন।
সেই দিনই সে সীন নদীতে তার ফরাসী বইগুলি বিসর্জ্জন দিয়ে লণ্ডনে এল।
এর পর আর কেউ রশীদকে কখনও ফরাসীর নাম মুখে আনতে শুনে নি।
——