বিলাতফেরত
(১)
খান বাহাদুর খোন্দকার সমীরুদ্দীন বনিয়াদি জমিদার। লোকটী চমৎকার। সকলকে সন্তুষ্ট রাখতে তিনি খুব পটু। রাজপুরুষদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা, তাঁদের পার্টি দেওয়া, এ সবও তিনি যেমন করেন, আবার তেমনি কংগ্রেসেও চাঁদা দেন (যদিও একটু গোপনে) এবং মধ্যে মধ্যে খদ্দরও পরেন। গ্রামে তিনি একটু উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, এদিকে তাঁদের সাবেক মসজিদের সঙ্গে একটী জুনিয়ার মাদ্রাসাও কায়েম করেছেন।
তাঁর এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েটী বড়। তার উপযুক্ত খান্দানি ঘরেই বিয়ে হয়েছে। ছেলে আবদুল মজীদ ইংরাজী স্কুলেই পড়ে। তবে রোজ সকালে মাদ্রাসার মৌলভী সাহেব এসে তাকে কোরআন শরীফ ও মসলা মাসাএল শেখান। খান বাহাদুর সাহেব নিজে শরা শরিঅতের খুব “পাবন্দ”। ছেলের উপরও কড়া হুকুম আছে ; নমায না পড়লে প্রহার, রোযা না রাখলে খানা বন্ধ। মজীদ যখন ক্লাস টেনে পড়ে, তখন একদিন তার নবীন দাড়ী গোঁফ কামিয়েছিল। আর যায় কোথা! খান বাহাদুর সাহেব তাকে ব’কে বাড়ীর বার করে দিয়েছিলেন। অনেক কান্না কাটির পর তওবা করে তবে সে বাড়ীতে ঢুকতে পেরেছিল।
এই টুকু শুনেই আপনারা মনে করবেন না খান বাহাদুর সাহেব গোঁড়া মুসলমান। তাঁর জমিদারির অধিকাংশ নায়েব গোমশ্তা হিন্দু। তাঁরা কাছারি বাড়ীতে বছর বছর কালী পূজা করেন, তাতে তিনি বাধা দেন না। একবার এক গোড়া মৌলভী তাঁর কাছে এসে আপত্তি জানালে তিনি কোরআন শরীফের আয়াত পড়ে বলেছিলেন—“তোমাদের জন্য তোমাদের ধৰ্ম্ম এবং আমার জন্য আমার ধৰ্ম্ম” এই ত কাফেরদের উপর খোদার হুকুম।
(২)
মজীদ এখন কলেজে পড়ে। পাছে শহরে এসে ছেলে খারাপ হয়ে যায়, এজন্য খান বাহাদুর সাহেব তাঁদের কলকাতার বাড়ীতেই থাকেন। বন্ধের সময় ছেলেকে নিয়ে তিনি গ্রামে যান। তার অভাবে গ্রামের শ্রী অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু কি করা যায়? ছেলেকে ত মানুষ করা চাই।
কলেজে মজীদ পড়াশোনা করে মন্দ নয়। কিন্তু তার কচিমুখে লম্বা দাড়ী তাকে তার সহধ্যায়ীদের কাছে বড় জ্বালাতনে ফেলত। একটী রসিক ছেলে তার দাড়ীর উপর একটা সনেট লিখে ফেলেছিল। তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সেটা পড়া হত। কিন্তু মজীদের কোন উপায় ছিল না। সে কখনও শিক্ষকদের কাছে নালিশ করতে চাইত না; আর দাড়ী কামানোরও যে ছিল না। এক দিকে ক্লাসে একেবারে একঘরে হওয়া, অন্যদিকে বাপের তিরস্কার। দুই-ই সে ভয় করত। যাক সে কথা; মজীদ ক্রমে বি-এ পাশ করলে।
(৩)
বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে মজীদকে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়াবার জন্য খান বাহাদুর সাহেব স্থির ক’রলেন। পাছে বিদেশে ছেলে বিগড়ে যায়—এ আশঙ্কা যে তাঁর মনে হয় নি, তা নয়। তবে তিনি মনে করেছিলেন আজকালকার দিনে এ সমস্ত না হ’লে আর মান সম্ভ্রম থাকে না। তার পর ছেলেকে যেমন করে তিনি শরিঅতে পাকা করে তুলেছেন, তাতে তার বিগড়ান সম্ভবপর নয়।
বোম্বাই পর্যন্ত গিয়ে খান বাহাদুর সাহেব ছেলেকে জাহাজে তুলে দিলেন। সঙ্গে জায়নামায, তসবীহ ও কোরআন শরীফ দিতে ভুললেন না। বিদায় কালে নানা নসীহত করে পানিভরা চোখে দোআ করে তীরে চলে এলেন।
যে পর্যন্ত জাহাজ নজরের বার না হয়ে যায়, খান বাহাদুর সাহেব জেটিতে দাড়িয়ে রইলেন। মজীদও ডেকের উপর রেলিঙের ধারে দাড়িয়ে বৃদ্ধ পিতার দিকে চেয়ে রইল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবিনে গিয়ে শুয়ে পড়ল। শুয়ে শুয়ে নানা কথাই তার মনে হতে লাগল। সে রাত্রে তার আর কিছু খেতে ইচ্ছা ছিল না।
(৪)
পর দিন সকালে ব্রেকফাস্টের সময় টেবিলে সে একটু অপ্রস্তুত হ’ল। সে গিয়েছিল আচকান পায়জামা তুর্কি টুপী প’রে খেতে। সে সাহেবদের মাঝে বসে পড়েছিল।
হেড সটুয়ার্ড এসে তাকে অন্যান্য নেটিব লোকদের সঙ্গে বসিয়ে দিলে। সে জন্মে ছুরি কাঁটা ব্যবহার করে নি। সঙ্গীদের অনেকেরই সেই দশা। তবে কালো চামড়া সব সেখানে। যে একটু সাহেবী খানা খেতে অভ্যস্ত ছিল, সে খুব মুরুব্বিয়ানা করে আনাড়ীদের দোষ সুধরে দিলে।
সেই দিন বিকেলেই মজীদ বহু দিনের দাড়ীটীর মূলোচ্ছেদ করে আরব সাগরের নীল জলে বিসর্জন দিয়ে যেন একটা প্রকাণ্ড বোঝার হাত থেকে রেহাই পেলে। কেবিনের বড় আয়নায় মুখ দেখে তার নিজেরই মনে হল কি সুন্দর চেহারাটা তার দাড়ীটার জন্য একেবারে মাটা হয়ে গিয়েছিল! কলেজে দাড়ীর গঞ্জনার কথাও মনে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে দাড়ীভক্ত পিতার উপর তার মনটা যেন কেমন বিগড়ে গেল।
বাপের ভয়ে মজীদ কখন গান বাজনায় যোগ দিতে পারে নি। থিয়েটার বায়োস্কাপের ত নামটী পৰ্যন্ত মুখে আনবার যো ছিল না। জাহাজের ড্রয়িং রূমে সুন্দরীদের পিয়ানোর টুংটুং আওয়াজে তার প্রাণে কত ভাবের ঢেউ খেতে লাগল। যুবকযুবতীদের বুকোবুকি মুখোমুখি বল নাচ দেখে তার নিজেকে সামলান যেন দায় হয়ে উঠল। জাহাজ লোহিত সাগরে পৌছুতে না পৌঁছুতে মজীদ পোশাক পরিচ্ছদে একেবারে পাক্কা সাহেব।
(৫)
মজীদ লণ্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ছে। প্রতি সপ্তাহে বাড়ীতে পত্র লেখে। মাস গেলেই ত্রিশ পাউণ্ড খরচা পায়। অত টাকা কিছু থাকা খাওয়া ও পড়ার খরচায় ব্যয় হয়। কাজেই আমার মত অরসিক হয় তো যাকে অপব্যয় ববে, তাতে বেশ খরচ হতে লাগল। কোন কোন মাসে কিছু ধারও হতে লাগল। নানা অজুহাতে সে বাড়ী থেকে উপরি টাকা চেয়ে পাঠাত। কোন মাসে অমুক বড় সাহেবকে ভোজ দিতে হবে ; কোন মাসে অসুখের জন্য ডাক্তারের খরচ দিতে হবে ; এই রকম কত কিছু। খান বাহাদুর সাহেব পাছে ছেলের অসুবিধা হয়, এই জন্য অসঙ্কোচে টাকা পাঠিয়ে দিতেন।
আমি একবার কোন বিষয় উপলক্ষে খান বাহাদুর সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেম। তিনি যখন মজীদের কথা তুলেন, তখন তাঁর আর কথা ফুরায় না। আমার তখন কোলরিজের বুড়ো খালাসীর কথা কেবল মনে হচ্ছিল। তার কথার সারমর্ম এই যে মজীদ খুব “নেকবখত” ছেলে আর ব্যারিস্টারি পড়ান যে সে লোকের কর্ম নয়।
(৬)
মানুষের চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর এক জনের চাওয়া আছে। তার চাওয়ার বিরুদ্ধে মানুষের চাওয়া নায়াগ্রার স্রোতের বিরুদ্ধে পিঁপড়ার মত কোথায় গিয়ে পড়ে কে জানে? ব্যারিস্টারি পরীক্ষার মাত্র আর দু মাস দেরী ছিল, হঠাৎ মজীদ জরুরী তার পেলে পিতার সাংঘাতিক অসুখ, তাকে কলকাতায় আসতে হবে। সঙ্গে পথ খরচের টাকাও এসেছিল। বাপের একমাত্র ছেলে সে, ভগ্নীপতির উপরও বিশ্বাস নেই। মজীদ বাড়ী রওনা হওয়াই ঠিক করলে। ইংল্যাণ্ড থেকে তখন তাড়াতাড়ি কোন জাহাজ ছাড়বার কথা ছিল না। তাই জেনোয়ায় এসে সে জাহাজ ধরলে।
(৭)
কলকাতায় পৌঁছে সে সোজা গ্রেট ইস্টার্ণ হোটেলে গিয়ে উঠল। বাড়ীতে তার অসুবিধা হবে, তাই একেবারে বাড়ী যাওয়াটা সে পছন্দ করে নি। আরও হয় তো কিছু কারণ থাকতে পারে। সে হোটেলে বিশ্রাম করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ীতে বাপকে দেখতে এল। বাড়ীতে ঢুকেই সামনে বড় ভগ্নীকে দেখে দৌড়ে তার গালে একটা চুমো দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে “Where is father?” ভগ্নী ভায়ের চেহারা আর পোশাক পরিচ্ছদ দেখে, তার উপর তার মুখে ইংরেজি বুলি শুনে হতবুদ্ধির মঙ দাড়িয়ে রইল। মা ছেলের আসার শব্দে পাগলিনীর মত দৌড়ে এসে তার গলা ধরে কাঁদতে লাগলেন। ক্রমে মজীদ জানতে পারলে আজ পাঁচ দিন খান বাহাদুর সাহেব মারা গেছেন। মরবার সময় তার মুখের শেষ কথা ছিল “আঃ! বাবা মজীদ।”
(৮)
সকলের অনুরোধে মজীদ সাহেব কলকাতার বাড়ীতেই এখন থাকেন। তবে এখন বাড়ীর ভিতর বার সব বদলে গেছে। বাড়ী খানা চুনকাম করে সাহেব ধরণে সাজান হয়েছে। সমস্ত পুরানো চাকর বাকরের বদলে নতুন নতুন চাকর নিযুক্ত করা হয়েছে। সবাই হিন্দুস্তানি, কেবল খানসামাটা মগ। মা মগের হাতে খান না; কাজেই বাড়ীতে সাবেকের মধ্যে পীরুর মা ঝী আছে।
মজীদ সাহেব “সবুজ সমাজ” নামে একটী সভা স্থাপন করেছেন। কাগজ পত্রে আছে সভার উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের আলো চকিয়ে তাদের সকল রকমের উন্নতি সাধন করা। প্রত্যেক রবিবার মজীদ সাহেবের বৈঠকখানায় তার অধিবেশন হয়। “সবুজ সমাজ” নিয়ে মজীদ সাহেব বড় খাটছেন। তার জন্য প্রায়ই বাইরে বাইরে তাকে ঘুরতে ফিরতে হয়। দিন রাত তাঁর অবসর নেই বলেই হয়।
“সবুজ সমাজের রিপোর্ট ইংরেজি বাংলা কাগজে বা’র হয়। অল্প দিনের মধ্যে “সবুজ সমাজের” নাম হিন্দু মুসলমান সকলেরই মুখে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই সমাজ যে সমস্ত প্রস্তাব পাশ করেছে, তাতে দেশে বেশ একটা হুলস্থূল প’ড়ে গেছে। তার মধ্যে কয়েকটা হচ্ছে—বাল্য বিবাহ দুর করা, পর্দা উঠান, মাদ্রাসা মক্তব বন্ধ করা, ভিক্ষা দণ্ডনীয় করা, সাহেবী পোশাক চালান, মোল্লা ধ্বংস করা, গান বাজুনা ও থিয়েটার প্রবর্তন।
“সবুজ সমাজের” এক বিশিষ্ট সভ্যের মুখে সভাপতি মজীদ সাহেবর আরও দুই একটা মন্তব্যের কথা শুনেছি, যা এখনও তিনি কয়েকজন সভ্যের অনুরোধে কোন কাগজে প্রকাশ করেন নি। তার মধ্যে হ’চ্ছে—(১) নমায রোযায় মুসলমান সমাজের দারিদ্র্য বাড়ছে, অতএব তার সংস্কার আবশ্যক; (৩) খাদ্য ও পানীয় বিষয়ে হারাম হালাল বলে গোড়ামি করায়, মুসলমানগণের দিন দিন শারীরিক অবনতি হ’চ্ছে; অতএব সে সব শীঘ্র ছাড়া দরকার। “সবুজ সমাজের” সভ্যেরা এগুলি কাজে মেনে নিয়েছেন, তবে মজীদ সাহেব ছাড়া আর কেউ একটা বিশেষ মাংস খেতে এখনও রুচি করে উঠতে পারেন নি। এগুলি কিন্তু ; এখনও একটু গোপনেই চলছে।
স্কুল কলেজের মুসলমান ছাত্র মহলে মজীদ সাহেবের এখন ষোল আনা পসার। মোল্লার, দল যতই “সবুজ সমাজ” আর তার সভ্যদের ওপর কুফরি ফতোয়া বর্ষণ করছে, ততই মজীদ সাহেবের প্রতিপত্তি বেড়ে চলেছে। বাস্তবিক মজীদ সাহেব তরুণদের কাছে এখম মুকুটবিহীন রাজা।
(৯)
মজীদ সাহেবের মা সেকেলে মেয়েমানুষ। তিনি ছেলের এ সমস্ত গৌরবের কোনই সন্ধান রাখেন না। অন্যদিকে ছেলে যে খ্রীষ্টান ধরণে থাকে, খায় দায় এবং আরও দুই চারিটী কথা পীরুর মার মুখে যা শুনেন, তার জন্য একান্ত দুঃখিত। মা বেটায় প্রায়ই দেখা সাক্ষাৎ হয় না। কখনও দেখা হলে তিনি বলেন, “বাবা! যাই কর, মুসলমানি বজায় রেখো, নমায রোযা ছেড়ো না।” মজীদ সাহেব মাকে বুঝিয়ে দেন যে তুরকী, মিসর প্রভৃতি দেশের সব মুসলমান যে ভাবে চলছে তিনিও সেইভাবে চলছেন। মোল্লারা কেবল নিজের স্বার্থের জন্য আছে, আর তিনি দিন রাত মুসলমানদের ভালোর জন্য প্রাণপণে খাটছেন। মা বিয়ের কথা তুলে মজীদ সাহেব বলেন এখন তার বিয়ে করবার সময় নেই। বিশেষ তাঁর লায়েক মেয়ে কোথায় ? তিনি নমায রোযায় বিশ্বাস করেন না কিংবা তিনি মোটেই বিয়ে করবেন না–এ কথা বলে তিনি মাকে চটাতে চান না। কেউ বলে তার একটা মস্ত কারণ এই ছিল যে এই সময় মজীদ সাহেব মা বোনকে ফাঁকি দিয়ে তাঁদের অংশ গ্রাস করতে উকিলের সঙ্গে গোপনে মতলব আঁটছিলেন। আমি মনে করি এসব তার শত্রু পক্ষ মোল্লাদেরই রটান কথা।
ছেলের রাজি-নারাজিতে কি এসে যায় ? মজীদ সাহেবের মা জামাইয়ের সাহায্যে চারিদিকে মেয়ের সন্ধান করতে লাগলেন। অবশেষে-নগরের জমিদারের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে ছেলের সম্বন্ধ ঠিক করলেন। ভগ্নীপতির মুখে মজীদ সাহেব জানতে পেলেন তাঁর ভাবিনী বধূ তার পিতার একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। বয়স তের, রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। তের আর শ্যামবর্ণ—এই দুয়ে মজীদ সাহেবের আপত্তি ছিল; কিন্তু প্রকাণ্ড জমিদারি যখন বউয়ের সঙ্গে পাওয়া যাবে, তখন মজীদের মা ছেলের নিকট বিয়ের কথা পাড়তেই একটু “না, না” করার পরেই মজীদ সাহেব রাজি হয়ে গেলেন।
“সবুজ সমাজে”র বন্ধুরা এই বাল্য বিবাহের কথা উঠালে মজীদ সাহেব বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে এর ভিতর একটা অর্থ আছে। বাইরের লোকে বুঝলে শুধু অর্থ। কিন্তু লোকের কথায় মজীদ সাহেবের কি এসে যায় ?
(১০)
বিয়ে কলকাতাতেই হচ্ছে। কন্যা-পক্ষ একটা বড় বাড়ী ভাড়া নিয়েছেন। বিয়ের দিন ব্যাঙ বাজিয়ে বরযাত্রীর মটর গাড়ীর বহর দিয়ে ধুমধামের সঙ্গে মজীদ সাহেব বিয়ে বাড়ীতে এলেন। অভ্যর্থনা ও খাওয়া দাওয়া নবাবী কেতায় হ’ল। এখন বিয়ে পড়ান বাকী। বিশ হাজার টাকা দেন মোহর ঠিক হয়েছে, কাবীন নামাও লেখা হয়েছে। কন্যার পক্ষে উকীল ও সাক্ষী মঙ্গলসে হাজির। মোল্লা সাহেবও “শাদী” পড়াতে প্রস্তুত। এমন সময়ে সশব্দে একখানি মোটর গাড়ী বাড়ীর গেটে থামল। ঝড় বেগে একজন মেম গাড়ীথেকে নেমে মজলিসে এসে দাঁড়ালেন। দাড়িয়ে তিনি তীব্র দৃষ্টিতে একবার সভার চারিদিকে চেয়ে দেখলেন। তারপর বাঘের মত লাফ দিয়ে মজীদ সাহেবের সামনে গিয়ে তাঁর হাত ধরে এক টান দিয়ে বললেন “You have turned Musalman and are again going to marry! What nonsense! Come away!” (তুমি মুসলমান হয়েছ! আবার বিয়ে করতে যাচ্ছি! কি বোকামি! চলে এস)। মজীদ সাহেব মন্ত্রমুগ্ধের মত মেমের সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন। মেম তাকে টেনে নিয়ে মোটরে বসিয়ে বিদ্যুদ্বেগে গাড়ী ছুটিয়ে দিলেন। সভার লোক ভেবা চেকা মেরে তাকিয়ে রইল। সকলের মুখে এক কথা “এ কে? এ কি হল ?” যে মোল্লা সাহেব বিয়ে পড়াতে এসেছিলেন, তিনি মুচকে হেসে বললেন, “আব কলাঈ খুল গয়ী।”