গেরস্থের বৌ

গেরস্থের বৌ

(রূপিকা)

এক ছিল গেরস্থ। সে বিয়ে করেছিল এক মরু দেশে। সে দেশে না আছে সবুজ ঘাস, না আছে শ্যামল গাছপালা; না আছে আকাশে মেঘ, না আছে মাটিতে রস। সে দেশে না আছে নদী আর তার কুল কুলু নাদ; না আছে পাখী আর তার কল কল রব।

বিয়ের পর বৌ পয়লা গেরস্থের বাড়ীতে এল। এসে কতদিন সে মুখে লম্বা ঘোমটা দিয়ে লাজে লজ্জাবতী লতাটীর মতন হ’য়ে রইল। বৌ চোখ বুঁজে কেবল কোণে ব’সে থাকে। বৌ চোখে কিছু দেখে না, কানে কিছু শোনে না। সকল সময় কেমন একটা ভয় ভয়। সকল সময় কেমন একটা জড়সড় ভাব।

ক্রমে তার সরম ভেঙে গেল। তখন বৌ চোখ মেলে দেখলে—বাঃ! এ দেশের মাটির ওপর কেমন ঘাসের নরম মখমল্! জমির ওপর কেমন গাছের ছোট বড় ছাতা! নীল আকাশের কোলে কেমন মেঘের পেঁজা তুলো ! পাখীগুলো গান গেয়ে গান গেয়ে কেমন হাওয়ার ওপর সাঁতার দিয়ে বেড়ায় !

এক দিন পাড়ার মেয়েরা কলসী কাখে করে তাকে এসে বলে, “আয় না লো বৌ! জল আনতে যাই।” তার বাপের বাড়ীর দেশে জল আনতে যেত পুরুষ মানুষে, উট নিয়ে, ঘোড়া নিয়ে, কতদূর থেকে। এখানে মেয়ের জল আনতে যায় পায়ে হেঁটে ! সে ত ভেবেই অস্থির। মেয়েরা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।

গেরস্থের বাড়ীর পিছনে একখানা ক্ষেত পার অশথ গাছের নীচে নদী। এত জল ! কাকের চোখের মত কাল !

আঃ! কি ঠাণ্ডা ! কেমন কু কু করে ব’য়ে যাচ্ছে! জলে নেমে তার কাঁখের কী কাঁখেই রইল, সে অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল। কোথা থেকে কে এত জল ঢেলে দিলে! কোথায় এ জল যাচ্ছে ? লোকে সব জল তুলে নিয়ে যাবে না ত? তা হলে ত নদী শুখিয়ে যাবে। সে জল নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাড়ী ফিরল।

একদিন গেরস্থ দেখে বাড়ীময় কেবল জলের কলসী আর জালা। রান্না ঘর থেকে নিয়ে শোবার ঘর, বৈঠকখানা, আঙিনা, সদর দরজা চারিদিকে কেবল জলের কলসী আর জালা। গেরস্থ বৌয়ের কাণ্ড দেখে অবাক ! সে দূর থেকে বৌকে ডেকে বললে, “বলি ওগো! ব্যাপার খানা কি বল ত।” বৌ হেসে বললে, “কেন ? জল তুলে রেখেছি। নদীর জল যদি ফুরিয়ে যায়, তাই। তুমি আমায় তেমন হাবা মেয়ে ভেব না।”

গেরস্থ হেসে বললে, “মরুদেশের মেয়ে তুমি, তোমায় কে হাবা বলে ? কিন্তু তুমি ঘর বাড়ী এমন ক’রে জালা কলসীতে ভরে ফেলেছ, যে আমার একটু দাঁড়াবারও জায়গা রাখ নি। ও পাগলী ! এ কৃপানদীর জল কি ফুরাবার ?”

সমাপ্ত

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *