এখন দিনের শেষে তিনজন আধো আইবুড়ো ভিখিরীর
অত্যন্ত প্রশান্ত হ’লো মন;
ধূসর বাতাস খেয়ে এক গাল–রাস্তার পাশে
ধূসর বাতাস দিয়ে ক’রে নিলো মুখ আচমন।
কেননা এখন তারা যেই দেশে যাবে তাকে রাঙা নদী বলে:
সেইখানে ধোপা আর গাধা এসে জলে
মুখ দেখে পরস্পরের পিঠে চড়ে যাদুবলে।
তবুও যাবার আগে তিনটি ভিখিরী মিলে গিয়ে
গোল হ’য়ে বসে গেল তিন মগ চায়ে;
একটি উজির, রাজা, বাকিটা কোটাল,
পরস্পরকে তারা নিলো বাৎলায়ে।
তবুও এক ভিখিরিনী তিনজন খোঁড়া, খুড়ো, বেয়াইয়ের টানে–
অথবা চায়ের মগে কুটুম হয়েছে এই জ্ঞানে
মিলে মিশে গেল রাতা চার জোড়া কানে।
হাইড্র্যান্ট থেকে কিছু জল ঢেলে চায়ের ভিতরে
জীবনকে আরো স্থির, সাধুভাবে তারা
ব্যাবহার ক’রে নিতে গেল সোঁদা ফুটপাতে ব’সে;
মাথা নেড়ে, দুঃখ ক’রে ব’লে গেল: ‘জলিফলি ছাড়া
চেৎলার হাট থেকে টালার জলের কল আজ
এমন কি হ’তো জাঁহাবাজ?
ভিখিরীকে একটি পয়সা দিতে ভাসুর ভাদ্র-বৌ সকলে নারাজ।’
ব’লে তারা রামছাগলের মতো রুখু দাড়ি নেড়ে
একবার চোখ ফেলে মেয়েটির দিকে
অনুভব ক’রে নিলো এইখানে চায়ের আমেজে
মানায়েছে তারা এক শাঁকচুন্নীকে।
এ মেয়েটি হাঁস ছিলো একদিন হয়তো বা এখন হয়েছে হাঁস-হাঁস।
দেখে তারা তুড়ি দিয়ে বার ক’রে দিলো তাকে আরেক গেলাস;
‘আমাদের সোনা রূপো নেই, তবু আমরা কে কার ক্রীতদাস?’
এ সব সফেন কথা শুনে এক রাতচরা ডাঁশ;
লাফায়ে লাফায়ে যায় তাহাদের নাকের ডগায়;
নদীর জলের পরে ব’সে যেন, বেন্টিক্ স্ট্রিটে
তাহারা গণনা ক’রে গেল এই পৃথিবীর ন্যায়-অন্যায়;
চুলের এঁটিলি মেরে গুনে গেল অন্যায় ন্যায়;
কোথায় ব্যয়িত হয়–কারা করে ব্যয়;
কী কী দেয়া-থোয়া হয়–কারা কাকে দেয়;
কী ক’রে ধর্মের কল নড়ে যায় মিহিন বাতাসে;
মানুষটা ম’রে গেলে যদি তাকে ওষুধের শিশি
কেউ দেয়–বিনি দামে–তবে কার লাভ–
এই নিয়ে চারজনে ক’রে গেল ভীষণ সালিশী।
কেননা এখন তারা যেই দেশে যাবে তাকে উড়ো নদী বলে;
সেইখানে হাড়হাভাতে ও হাড় এসে জলে
মুখ দ্যাখে–যতদিন মুখ দেখা চলে।