রূপোর চাবি – ৪

 শাঙ্কো চলে গেল। হ্যারিদের কথাবার্তার শব্দে অনেকেরই ঘুম ভেঙে গেল। মারিয়া উঠে হ্যারির কাছে গেল। বলল–কী ব্যাপার হ্যারি?

কিছু অশ্বারোহী সৈন্য আসছে। এরা কারা জানি না। শাঙ্কো দেখতে গেছে। তবে আমার মনে হয় যে সৈন্যটি পালিয়ে গিয়েছিল সেই বোধহয় রাজার সেনাপতিকে সংবাদ দিয়েছে–আমরা লড়াইয়ে জিতেছি ওরা হেরে গেছে। আমাদের খোঁজে নিশ্চয়ই একদল অশ্বারোহী সৈন্য এসেছে।

–এখন কী করবে? মারিয়া বলল।

–দেখতে হবে–আমরা বনে আশ্রয় নিয়েছি এটা ওরা বুঝতে পেরেছে কিনা। হ্যারি বলল।

–যদি বুঝতে পারি? মারিয়া বলল।

–তাহলে আমরা টিলাটার মধ্যে যে গুহাটা আছে সেই গুহায় আশ্রয় নেব। গুহার মুখটা ছোটো। প্রায় হামা দিয়ে ঢুকতে হবে। তারপরে বেশ বড়ো। দাঁড়িয়ে থাকা যায়। হ্যারি বলল।

–তাহলে সেই গুহাতেই চলো। মারিয়া বলল।

–আগে শাঙ্কো ফিরে আসুক। ওর কাছে সবকিছু শুনি। তারপর গুহায় আশ্রয় নেবার কথা ভাববো। হ্যারি বলল।

ওদিকে গাছের আড়ালে আড়ালে চলে শাঙ্কো বনের দক্ষিণ দিকটায় এলো। ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ ঐ দিকেই শোনা যাচ্ছিল।

শাঙ্কো বনের গাছের আড়ালে দাঁড়াল। গাছের ফাঁকি লুকিয়ে দেখল কাছেই প্রায় পঞ্চাশ-ষাটজন ঘোড় সওয়ার সৈন্য ঘোড়া থেকে নামল।

অন্ধকারে কেটে যাচ্ছে। আকাশ সাদাটে হয়ে গেল। বনের গাছগাছালিতে পাখির ডাক শুরু হল।

কিছু পরেই সূর্য উঠল। ঘাসে-ঢাকা প্রান্তরে বনে স্নিগ্ধ রোদ ছড়াল।

তখনও শাঙ্কো ঠিক বুঝতে পারছে না এই সৈন্যরা কারা? এরা এখানে এসেছে। কেন? এদের পরনে ঢোলা হাতা জামা। বুকে বর্ম মাথায় শিরস্ত্রাণ নেই। কোমরের মোটা চামড়ার কোমরবন্ধনী। তাতে তলোয়ার ঝুলছে।

তখনই ঘোড়ায় টানা একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। একজন সৈন্য ঘোড়ার গাড়িটা চালাচ্ছে। সৈন্যরা ধরাধরি করে দলপতির মৃতদেহ আর আহত দুই সৈন্যকে গাড়িতে তুলল। গাড়ি চলে গেল।

এইবার শাঙ্কো বুঝতে পারল সেই পলাতক সৈন্যটিই খবর দিয়েছে। তাই রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা শাঙ্কোদের খোঁজে এসেছে। একজন মোটা গোঁফওয়ালা লোক হাত নেড়ে নেড়ে নির্দেশ দিচ্ছিল। বোঝা গেল এই লোকটাই সেনাপতি।

শাঙ্কো আর দাঁড়াল না। বন্ধুদের খবর দিতে হয়।

শাঙ্কো বনের মধ্যে দিয়ে ছুটল।হ্যারিদের কাছে এসে বলল রাজা ফার্নান্দোর সেনাপতি এসেছে। দলপতি আর আহত দুই সৈন্যকে নিয়ে গেছে। যে ঘোড়া তিনটে আমরা পেয়েছিলাম বনের ধারেই ঐ ঘোড়া তিনটে বেঁধে রেখে এসেছিলাম। এতক্ষণে ওরা নিশ্চয়ই ঘোড়া তিনটে পেয়েছে। বুঝেছে আমরা বেশিদূর যেতে পারি নি। এই বনে আমরা আশ্রয় নিয়েছি এই সন্দেহ ওদের হবেই। কাজেই দেরি না করে এই বন ছেড়ে পালাতে হবে। শাঙ্কো থামল।

-কিন্তু কোণ দিক দিয়ে পালাবো? হ্যারি বলল।

–ওরা রয়েছে বনের দক্ষিণ দিকে। আমরা উত্তর দিক দিয়ে পালাবো। এক্ষুণি। পালাতে হবে। শাঙ্কো বলল।

সবাই উঠেদাঁড়াল। সবার সামনেশাঙ্কো।ওই নিয়ে চলল ভাইকিং বন্ধুদের। মারিয়ার। সঙ্গে হ্যারি চলছিল। দ্রুতই ছুটল সবাই। সাবধানে ছুটতে হচ্ছে গাছগাছালির মধ্য দিয়ে।

উত্তরের দিকের বনভূমি শেষ হল। শাঙ্কো ইঙ্গিতে সবাইকে থামতে বলল। একটা গাছের আড়াল থেকে দেখল দশ-বারোজন অশ্বারোহী সৈন্য উত্তরদিকটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

শাঙ্কো চিন্তায় পড়ে গেল। উত্তর দিকটায় পাহারা রাখা হয়েছে যখন তখন পুব পশ্চিমেও পাহারা রাখা হয়েছে। পালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। শাঙ্কো হ্যারির কাছে এলো। বলল–্যারি–আমরা খুবই বিপদে পড়লাম। কোনো দিক দিয়েই আর পালাতে পারবো না। বনটা ঘিরে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে।

–এই বনের প্রায় মাঝামাঝি একটা টিলা। টিলার মধ্যে একটা গুহা আছে। সেখানে আমরা আশ্রয় নিতে পারি। এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। হ্যারি বলল।

–তাহলে সবাই সেই গুহায় চলো। শাঙ্কো গলা চড়িয়ে বলল।

সবাই ফিরে চলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিলাটার কাছে এলো। পেড্রো জলের পীপেটা কাঁধে নিয়ে আসছিল। এবার পীপে মাটিতে নামিয়ে কাঠের গ্লাসে সবাইকে জল খাওয়াল।

তারপর শাঙ্কো এগিয়ে এলো। একজন একজন করে হামাগুড়ি দিয়ে গুহাটার মধ্যে ঢুকতে লাগল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সকলে গুহার মধ্যে ঢুকে গেল। হ্যারি মারিয়ার পেছনে পেছনে ঢুকল। গুহার মুখের কাছেই মারিয়াকে বসাল। নিজেও বসল। শাঙ্কো গুহার মুখেই দাঁড়িয়ে রইল।

সময় বয়ে চলল। শাঙ্কোরা শুধু পাখির ডাক কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছিল।

বেলা বাড়তে লাগল। গুহার মধ্যে আশ্রয় নেওয়া ভাইকিংরা গুহার পাথুরে এবড়ো খেবড়ো দেয়ালে পিঠ রেখে বসে আছে। বাইরে কী হচ্ছে ওরা জানে না! সবাই চুপচাপ বসে আছে।

গুহার গরমে সবাই কমবেশি ঘামছে। কপালের ঘাম নেমে আসছে চোখ পর্যন্ত। ঘাম মুছছে আর অপেক্ষা করছে কখন এই দমবন্ধকরা গুহার বাইরে যাবে।

গুহার মুখে শাঙ্কো সতর্কভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে আছে। কান পেতে শব্দ শুনছে। শাঙ্কো ধরইে নিয়েছিল রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা বনের মধ্যে তল্লাশি চালাবে। কিন্তু তেমন কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না।

হঠাই শাঙ্কোর কানে এলো চড়চডু শব্দ। শব্দটা অস্পষ্ট। শাঙ্কো গুহার মধ্যে মুখ বাড়িয়ে ডাকল–হ্যারি–একবার এখানে এসো তো।

হ্যারি অন্ধকারে আস্তে আস্তে গুহার মুখে এসে দাঁড়াল। শাঙ্কো বলল–কান পেতে শোনতো কীসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। হ্যারি কান পাতল। তারপর চমকে উঠে বলল– শাঙ্কো–আমরা ভীষণ বিপদে পড়লাম।

–কী হয়েছে? কীসের শব্দ? শাঙ্কো বলল। হ্যারি ভীতস্বরে বলল–সৈন্যরা বনে আগুন লাগিয়েছে। কাঁচা পাতা পুড়ছে। চড় বড় শব্দ হচ্ছে।

–সর্বনাশ। শাঙ্কো বলে উঠল। তারপর হ্যারিকে বলল কী করবে এখন?

–যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি বনের পশ্চিম দিকে যাও আর বিস্কো থাক পুবদিকে। দেখে এসো ঐ দুই দিকেও আগুন লাগিয়েছে কিন না।

শাঙ্কো আর বিস্কো এক মুহূর্ত দেরি করল না। ছুটে বেরিয়ে গেল।

 মারিয়া এগিয়ে এলো। বলল–হ্যারি কী হয়েছে?

–ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে শব্দটব্দ শুনে মনে হচ্ছে সৈন্যরা বনে আগুন লাগিয়েছে। আমাদের পুড়িয়ে মারবে। হ্যারি বলল।

–কী সাংঘাতিক! এখন কী করবে? মারিয়া বলল।

–পালাবার পথ খুঁজতে হবে। শাঙ্কো আরবিস্কো গেছে খোঁজখবর করতে। হ্যারি বলল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শাঙ্কো আর বিস্কো ফিরে এলো। বলল–পুব পশ্চিম দুদিকেই আগুন লাগানো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আগুনের বেড়াজালে পড়ে যাবো। মৃত্যু সুনিশ্চিত।

হ্যারি মুখ নিচু করে ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর গলা চড়িয়ে বলল–ভাইসব– আমরা সাংঘাতিক বিপদে পড়েছি। জানি না কী করে এই বিপদ থেকে বাঁচবো। রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা এই বনের চারধারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। চারদিক থেকে আগুন এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। এমন একটি অবস্থায় আমরা যে ছুটে পালাবো তারও কোনো উপায় নেই। এবার তোমরা কী করতে চাও বলো। হ্যারি বলল।

–আমরা আগুনের মধ্যে দিয়ে পালাতে পারি। একজন ভাইকিং বলল।

–অসম্ভব। হ্যারি বলল। শাঙ্কো বলল–হ্যারি–আমরা এই গুহায় লুকিয়ে থাকতে পারি। আগুন নিভে গেলে পালাবো।

শাঙ্কো ঠিক বলেছে। বিস্কো বলল।

হ্যারি বলল-আমিও এই উপায়ই ভেবেছি। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবে আমরা বাঁচতে পারবো না।

–কিন্তু এই গুহার চারপাশে যখন আগুন এগিয়ে আসবে তখন অসহ্য গরমে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়বো। বিস্কো বলল।

-হ্যাঁ। এদিকটাও আমি ভেবেছি। আর একটা কথাও ভাবতে হবে। চারপাশের আগুন একই সময়ে এই গুহাটার বাইরে আসবে না। আগুন আসবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। কাজেই আমাদের আগুনের উত্তাপ সহ্য করতে হবে দফায় দফায়। সেটা আমরা পারবো। হ্যারি বলল।

হ্যারি–একটা কথা ভেবেছো? শাঙ্কো বলল।

কী কথা? হ্যারি বলল।

লক্ষ্য করে দেখো-এই টিলাটার গায়ে কোনো গাছগাছালি নেই। গাছগাছালি লতাপাতা ঝোঁপ রয়েছে প্রায় পঁচিশ তিরিশ হাত দূরে। অতদূরের আগুন আমাদের খুব ক্ষতি করতে পারবে না। শাঙ্কো বলল।

হ্যারি বলল–তবু আগুনের হলকা এই টিলার গায়ে এসে লাগবেই। প্রচণ্ড উত্তাপ আমাদের সহ্য করতে হবে। হরি বলল। কেউ কোনো কথা বলল না।

বিপদের গুরুত্ব বুঝে সবাই চুপ করে রইল। হ্যারি বলল–আগুনের হল্কা সহ্য করতে হবে দফায় দফায়। কী পারবে সহ্য করতে? ভাইকিং বন্ধুরা আস্তে ধ্বনি তুলল– ও-হো-হো। হ্যারি বলল–আজ আমাদের সহ্যশক্তির পরীক্ষা। আগুন নিভে গেলেই আমরা গুহা থেকে বেরিয়ে আসবো। ফার্নান্দোর সৈন্যরা ধরেই নেবে আমরা আগুনে পুড়ে মরেছি। আগুনের মধ্যে ওরা আর আসবে না দেখতে আমরা বেঁচে আছিনা মরে গেছি। রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা চলে গেলেই আমরা মুক্ত।

তাহলে উপায় নেই–আমাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা আগুনের হল্কা সবই সহ্য করতে হবে। একজন ভাইকিং বলল।

–হ্যাঁ-হ্যারি বলল। আরো বলল–আগুন শুকনো গাছপালা লতা ঝোঁপ পাবে। না। কাঁচা গাছপালা লতা ঝোঁপের আগুন খুব ভয়ঙ্কর হয় না। এটাও মেরির আশীর্বাদ। সবাই মনস্থির করে প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করার জন্যে তৈরি হও। এই উত্তাপ সহ্য করতে পারলেই আমাদের মুক্তি।

সবাই চুপ করে বসে রইল।

এবার কাঁচা গাছের পাতা পোড়ার চটচট শব্দ শোনা গেল! অনেক স্পষ্ট। সবাই বুঝল–আগুন এই টিলাটার চারপাশে চলে আসছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই একদিকে আগুন ছড়াল। আগুনের হল্কা গুহার মধ্যে ঢুকল। সবাই চুপ করে উত্তাপ সহ্য করতে লাগল। চারপাশে আগুন এগিয়ে এলো গুহাটার দিকে। এবার আগুনের হল্কা প্রচণ্ড বেড়ে গেল। সবাই দ দ করে ঘামতে লাগল। কিন্তু কেউ কোনো শব্দ করল না।

হঠাৎ গুহার অন্ধকারে মারিয়ার গোঙানি শোনা গেল। শাঙ্কো বন্ধুদের ঠেলে ঠেলে সরিয়ে মারিয়ার কাছে এলো। বলল–রাজকুমারী–আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?মারিয়া কথা বলতে পারল না। তারপরে অস্ফুটস্বরে বললজ-অল। শাঙ্কো বিস্কোকে ডাকল। বলল–পীপে থেকে এক গ্লাস জল দাও। বিস্কো অন্ধকারে পীপেটা খুঁজে পেল। একটা কাঠের গ্লাসও। গ্লাসে জল ঢেলে বিস্কো শাঙ্কোর দিকে গ্লাসটা এগিয়ে বলল–নাও। শাঙ্কো জলের গ্লাসটা অন্ধকারে হাতড়ে নিল।মারিয়ার হাতে জলের গ্লাসটা দিয়ে বলল রাজকুমারী জল খান। মারিয়া দুর্বল হাতে গ্লাসটা ধরল। হাতে কোনো সাড় নেই যেন। মারিয়া গ্লাসটা ধরে থাকতে পারল না। হাত কাঁপতে কাঁপতে জলসুন্ধু গ্লাসটা গুহার মেঝেয় পড়ে গেল। মারিয়ার মুখ থেকে আর্তস্বর বেরিয়ে এলো। বিস্কো তাড়াতাড়ি আর এক গ্লাস জল ভরে এগিয়ে ধরল। এবার হ্যারি অন্ধকারের মধ্যেই হাত বাড়িয়ে বলল–আমাকে জলের গ্লাসটা দাও। বিস্কো হ্যারির হাতে জল দিল। অন্ধকারে কিছুটা আন্দাজে হ্যারি মারিয়ার কাছে এলো। প্রথমে মারিয়ার মাথাটা ধরে আস্তে আস্তে ওঠাল। মারিয়াকে পাথরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসাল। হ্যারি আস্তে ডাকল–রাজকুমারী? প্রথম ডাকে মারিয়া সাড়া দিল না। হ্যারি আবার ডাকল–রাজকুমারী? এবার বোধহয় মারিয়া হ্যারির ডাক শুনতে পেল। দুর্বল কণ্ঠে বললজ-অ-ল। হ্যারি অন্ধকারেই মারিয়ার মাথাটা ধরল। হ্যারি মাথা থেকে হাত ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে এলো। কপাল ভুরু নাম মুখে এসে আঙ্গুল রাখল। আস্তে বলল-রাজকুমারী, মুখ হাঁ করুন, আমি জল ঢেলে দিচ্ছি। মারিয়া মুখ হাঁ করল। হ্যারি আঙ্গুল দিয়ে মারিয়ার মুখের হাঁ-তে আস্তে আস্তে অল্প করে জল ঢালতে লাগল। মারিয়া জল খেল। আবার পাথরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে গা ছেড়ে দিয়ে বসে রইল।

বাইরে আগুনে হাওয়া হ্যারিদের গুহার মুখে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। হ্যারিরা সকলেই দাঁত চেপে প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করতে লাগল। আগুনের হল্কা ঢুকতে লাগল গুহার মুখ দিয়ে। মুখ হাত পা যেন ঝসে যেতে লাগল।

হঠাৎ হ্যারি মারিয়ার মৃদুস্বরে ডাক শুনল। মারিয়া কেমন যেন হাঁপাতে হাঁপাতে । থেমে থেমে বলল–হ্যারি–আমি–এই–অসহ্য গরমে শ্বাস নিতে পারছি না। আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসছে।

 হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। বলল-বলেন কি। মারিয়া বলল–আমি মরি– ক্ষতি নেই। তোমরা গুহা থেকে বেরিয়ে ধরা দিও না।

হ্যারি একটু গলা চড়িয়ে বলল–ভাইসব, রাজকুমারী সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে এক্ষুণি গুহার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। রাজকুমারীর জীবন বাঁচাতে আমাদের ধরা দিতে হবে।

শাঙ্কো বলল–আমরা তাতে রাজি। এবার রাজকুমারীকে গুহার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

শাঙ্কো অন্ধকারে আন্দাজ করে করে মারিয়ার কাছে এলো। অন্ধকারে মারিয়ার ঘাড়ের নীচে ডান হাত রাখল। বাঁ হাতে হাঁটুর কাছটা ধরল। তারপর রাজকুমারীকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে অন্ধকার গুহার মুখে এলো। তারপর রাজকুমারীকে পাথুরে মেঝেয় আস্তে আস্তে শুইয়ে দিল।

হঠাৎ একঝলক হাওয়া গুহার মুখে ঢুকল। হাওয়ায় সেই প্রচণ্ড উত্তাপটা আর নেই। কিন্তু মারিয়ার হাঁপধরা ভাবটা একেবারে কমল না। শাঙ্কো বলল-রাজকুমারী আপনাকে এবার একা হামাগুড়ি দিয়ে গুহার বাইরে বেরোতে হবে।

মারিয়া আস্তে আস্তে উঠে বসল। মৃদুস্বরে থেমে থেমে বলল–এখন আমার শরীর ভালো লাগছে। তোমরা আমার জন্য ধরা দিও না।

আপনি অসুস্থ হয়েছেন। বাইরে গেলে আপনি ভালোভাবে নিশ্বাস নিতে পারবেন। আপনি সুস্থ হবেন। শাঙ্কো বলল।

আমি বাইরে বেরোলে তোমরা সবাই তো ধরা পড়ে যাবে। আবার সেই বন্দিজীবন। মারিয়া আস্তে আস্তে বলল। তখনও মারিয়ার হাঁপধরা ভাবটা যায় নি।

–আপনি আমাদের জন্য ভাববেন না। ধরা পড়লেও আবার বন্দি হলেও ফ্রান্সিস মুক্ত আছে। ফ্রান্সিস ঠিক একটা উপায় বের করবে যাতে আমরা আবার মুক্তি পাবো।

মারিয়া আর কোনো কথা বলল না। হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে গুহার মুখটা পার হল। মারিয়ার পেছনে একে একে সবাই বেরিয়ে এলো। এটুকু পেরোবার পরিশ্রমেও মারিয়া কাহিল হয়ে পড়ল। আগুনের মতো গরম গুহামুখে একটা পাথরে মারিয়া বসে পড়ল। মাথা ঝাঁকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগল। হ্যারি সেটা দেখে বুঝল গুহার ভেতরে থাকলে মারিয়াকে বাঁচানো যেত না। ঠিক সময়েই মারিয়াকে বাইরে আনা গেছে।

বাইরে তখন জঙ্গল পুড়ে সব সাফ। দক্ষিণ দিকে রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা জড়ো হয়ে এতক্ষণ আগুন দেখছিল। সব জঙ্গল পুড়ে যেতে ফার্নান্দোর সেনাপতি ও সৈন্যরা হ্যারিদের দেখতে পেল। ওরা ধরেই নিয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে আত্মগোপন করা ভাইকিংরাও পুড়ে মরেছে। তাই তারা বেশ আশ্চর্য হল। আগুনের এত উত্তাপের মধ্যে গুহার মধ্যে থেকে ওরা কী করে বাঁচল।

হ্যারি দু’হাত ওপরে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গী দেখাল। রাজা ফার্নান্দোর সেনাপতি দেখল সেটা।

আগুন তখনও একেবারে নিভে যায় নি। এখানে ওখানে-তখনও ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে। সেনাপতি একাট ঘোড়ায় উঠল। পোড়া জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে হ্যারিদের কাছে এলো।

একটু হাঁপধরা গলায় বলল–তোমরা আমাদের দলনেতাকে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে আহত করেছে। সেভিল্লায় রাজা ফার্নান্দোর রাজদরবারে তোমাদের বিচার হবে। তোমরা সবাই বন্দি হলে।

হ্যারি বলল–আপনাদের দলপতি আমাদের এক বন্ধুকেবিনা কারণে হত্যা করেছিল। আমরা তার বদলা নিয়েছি। সেনাপতি বলল–সে সবের বিচার হবে।

হ্যারি বলল–তাহলে এখন আমরা কী করবো? ক্ষুধায় তৃষ্ণায় আমরা অবসন্ন। আগে আমাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর করুন। তারপর আমাদের নিয়ে যা করবার করবেন।

এখনও আগুন সম্পূর্ণ নেভে নি। আগে আগুন নিভুক। এখনই এই পোড়া বন পার হয়ে তোমরা যেতে পারবে না। সেনাপতি বলল।

–তাহলে তো আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হয়। বিস্কো বলল।

-হ্যাঁ–আগুন একেবারে নিভে গেলে তোমরা পোড়া বন পার হতে পারবে। সেনাপতি বলল। তারপর ঘোড়া ছুটিয়ে পোড়া বন পার হয়ে সৈন্যদের কাছে ফিরে গেল।

হ্যারিরা উত্তপ্ত পাথরে বসে রইল। মারিয়া এখন অনেকটা সুস্থ। ওদের আর পালাবার উপায় রইল না।

সন্ধে হয়ে গেল। অন্ধকার নামল। হ্যারি বলল–এবার চলো–পোড়া জঙ্গল পার হয়ে যাই।

–এখনই? বিস্কো বলল।

—-হ্যারি বলল–এখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। পোড়া বনের কোথাও আগুন জ্বলা থাকলে সহজেই আমাদের নজরে পড়বে। এখনই পোড়াবন পেরুতে হবে। চলো।

ভাইকিংরা এখানে-ওখানে বসেছিল। হ্যারি গলা চড়িয়ে বলল–ভাইসব–পোড়া বন পার হয়ে চলো। দেখে দেখে সাবধানে।

ভাইকিংরা সবাই উঠে দাঁড়াল। শাঙ্কো হ্যারিকে বলল–এই অন্ধকারে আমরা তো পালিয়ে যেতে পারি।

হ্যারি বলল–বনের চারপাশ ঘিরে রেখেছে সৈন্যরা। আমাদের পালাবার উপায় নেই। তখনই বনের চারপাশে মশাল জ্বলে উঠল। উত্তরমুখো মশালের আলোর দিকে লক্ষ্য রেখে হ্যারিরা এগোতে লাগল। পোড়া ছাই পায়ে পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। উড়ছে।

একসময় হ্যারিরা সেনাপতির সামনে এসে দাঁড়াল। সেনাপতি হুকুম দিল–এদের দু’পাশ থেকে ঘিরে নিয়ে চলো। অশ্বারোহী সৈন্যরা হ্যারিদের দু’পাশে দাঁড়াল। সামনে রইল ঘোড়ার পিঠে সেনাপতি। তারপরেই দু’টো মশাল হাতে দুজন। সবাই রওনা হল।

মশালের যেটুকু আলো তারই সাহায্যে হ্যারিরা চলল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হতে লাগল মারিয়ার। ঐ প্রচণ্ড উত্তপ্ত গুহায় মারিয়া অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তারপরে এখন হেঁটে যেতে হচ্ছে। মারিয়ার পাশে পাশেই হ্যারি হাঁটছিল। হ্যারি বুঝল মারিয়ার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

হ্যারি কিছুটা দূরে ছুটে গিয়ে সেনাপতির সামনে দাঁড়াল। গলা চড়িয়ে বলল– আমার একটা কথা ছিল।

সেনাপতি ঘোড়ার পিঠে বসা থেকে বলল–বলো।

আমাদের সঙ্গে রয়েছে আমাদের দেশের রাজকুমারী।

-হা হা একটি মেয়েকে তোমাদের সঙ্গে দেখলাম। সে তো রোদেপোড়া একেবারে তামাটে গায়ের রং।পরেছেও এক অদ্ভুত পোশাক। সেই মেয়েটিই তোমাদের রাজকুমারী। সেনাপতি হেসে উঠল। এই অপমানজনক কথা শুনে হ্যারির গা পিত্তি জ্বলে গেল। হ্যারির আর কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু উপায় নেই। রাজকুমারী এত কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না। তাই মাথা ঠাণ্ডা রেখেই বলল–আপনাদের তো অনেক ঘোড়া। একটা ঘোড়া যদি রাজকুমারীকে নিয়ে যাবার জন্যে দেন তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হব।

–বন্দিকে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় না। সেনাপতি বলল।

–এই নিয়মটা পুরুষ বন্দিদের পক্ষে প্রযোজ্য। কিন্তু খুবই অসুস্থ কোনো নারী বন্দির ক্ষেত্রে এই নিয়ম নেই। হ্যারি বলল।

–ঠিক আছে। সেনাপতি একজন ঘোড়সওয়ার সৈন্যকে নেমে আসতে বলল। সৈন্যটি ঘোড়া থামিয়ে নেমে পড়ল। হ্যারি মারিয়ার কাছে গেল। বলল–রাজকুমারী আপনি একা ঘোড়ায় চড়ে যেতে পারবেন?

–আমি ঘোড়ায় চড়তে জানি। কিন্তু আমার এখন শরীরের যা অবস্থা সাহস পাচ্ছি না। মারিয়া বলল। হ্যারি শাঙ্কোকে ডাকল। বলল–তুমি ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমারীকে নিয়ে যাও।

–বেশ। শাঙ্কো এগিয়ে এলো। শাঙ্কো লাফিয়ে ঘোড়াটার পিঠে উঠল। তারপর বলল–হ্যারি তোমরা রাজকুমারীকে তুলে আমার সামনে বসিয়ে দাও। হ্যারি বিস্কোরা কয়েকজন মারিয়াকে তুলে ঘোড়ায় বসিয়ে দিল। শাঙ্কো মারিয়াকে বাঁ হাতে ধরে রেখে ঘোড়া চালতে শুরু করল।

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলার পর হ্যারিরা সেভিল্লানগরে পৌঁছল। রাস্তার দু’পাশে বাড়িঘর দোর। এখানে-ওখানে মশাল জ্বলছে। বাড়িগুলোর জানালা দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে।

হ্যারিদের কয়েদঘরের সামনে নিয়ে আসা হল। কয়েদঘরের পাহারাদার দু’জন এগিয়ে এলো। অন্য পাহারাদারটি ঢং-ঢং শব্দে লোহার দরজা খুলল। ভাইকিংরা সবাই ঢুকল। শাঙ্কো মারিয়াকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে নিয়ে এলো। মারিয়া এলোমেলো পা ফেলে কয়েদঘরের দরজার দিকে চলল। তাই দেখে হ্যারি দ্রুত সেনাপতির কাছে গেল বলল আমাদের রাজকুমারী খুবই অসুস্থ। তাকে যদি রাজার অন্দরমহলে নজরবন্দি রাখা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়। কয়েদঘরের ঐ পরিবেশে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

–আমার কিছু করার নেই। রাজাজ্ঞায় তোমাদের বন্দি করেছি। এখন কালকে রাজদরবারে রাজা ফার্নান্দো যে আদেশ দেবেন তাই প্রতিপালিত হবে। সেনাপতি বলল।

হ্যারি বন্ধুদের কাছে ফিরে এলো। এক এক করে ভাইকিংরা কয়েদঘরে ঢুকতে লাগল।

কয়েদঘরে জানালা বলে কিছু নেই। সেই উঁচুতে দু’দিকে দুটো বড়ো খোদল। ঐ খোঁদল দুটোই জানালা। কয়েদঘরের পাথুরে দেয়ালের গর্তে দুটো মশাল রাখা হয়েছে। সেই মশালের আলোয় হ্যারি ঘরটা ভালো করে দেখল। পালাবার উপায় নেই।

মেঝেয় শুকনে ঘাস পাতার বিছানা। ভাইকিংরা কেউ কেউ বসল, কেউ কেউ শুয়ে পড়ল। পাথুরে দেয়ালের গায়ে মারিয়াকে হ্যারি ঠেস দিয়ে বসাল। তারপর চলল জলের খোঁজে। এককোণায় দেখল বেশ বড় একটা পীপে। হ্যারি পীপের ঢাকনা খুলে দেখল জল ভরা। ও বন্ধুদের ডেকে বলল–এখানে যথেষ্ট জল আছে। তোমরা জল খাও।

হ্যারির কথা শুনে ভাইকিংরা উঠে দাঁড়াল। সবাই জল খেতে এলো। বেশ ভিড় হয়ে গেল। পীপের পাশে রাখা কাঠের গ্লাস দিয়ে জল তুলে সবাই খেতে লাগল। কয়েকজন জল খেল আর জল তুলে ঘাড়ে মাথায় ঢালল। তৃষ্ণার জল পেয়ে সবাই বাঁচল যেন।

ভিড় কমলে হ্যারি পীপেটার কাছে গেল। কাঠের গ্লাসে জল ভরে নিয়ে এলো মারিয়ার কাছে। মারিয়া ঢক ঢক করে জল খেয়ে নিল। আরও জল নিয়ে এলো। মারিয়া খেল। বাকি জলটা মাথায় কপালে ঢালল। মারিয়া এতক্ষণে একটু সুস্থ বোধ করল।

হ্যারি এবার পরপর তিন গ্লাস জল খেল। তারপর চলল দরজার দিকে। লোহার গরাদে মুখ চেপে ডাকল–পাহারাদার–ও পারাহাদার। একজন পাহারাদার এগিয়ে এলো। হ্যারি বলল–আমরা খুবই ক্ষুধার্ত। আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করো। পাহারাদার কোনো কথা না বলে চলে গেল। এ রকম অভব্য ব্যবহার পেয়ে হ্যারির মাথায় রক্ত চড়ে গেল। হ্যারি সহজে রেগে যায় না। এখন ভীষণ রাগ হল ওর। হ্যারি লোহার দরজায় ঝাঁকুনি দিল। ঝন্ ঝন্ শব্দ উঠল। আবার ঝাঁকুনি দিয়ে চলল। বন্ধুরা অবাক। হ্যারির মতো ঠাণ্ডামাথার মানুষ রেগে গেছে। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। ওরা হ্যারির কাছে এলো। বিস্কো বলল–হ্যারি কী ব্যাপার?

–ঐ একটা পাহারাদারকে ডেকে খেতে দিতে বললাম–লোকটা কোনো কথাই শুনল না। একটাও কথা না বলে চলে গেল। হ্যারি বলল।

দাঁড়াও–দেখাচ্ছি মজা। শাঙ্কো বলল। তারপর সবাইকে ডেকে বলল– ভাইসব–এই লোহার দরজা সবাই মিলে ঝকাও। সবাই দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। একসঙ্গে দরজাটা ধরে কঁকাতে লাগল। প্রচণ্ড শব্দ উঠল। দু’জন পাহারাদারই ছুটে এলো। এক পাহারাদার আবার নাকি সুরে কথা বলে। সে চাঁচাতে লাগল–কী হচ্ছে। চলল দরজা ঝাঁকানো। একজন পাহারাদার এবার লোহার মোটা গরাদের ফাঁক দিয়ে তলোয়ারের খোঁচা দিতে লাগল। দু’জন ভাইকিং ঘায়েল হল। শাঙ্কো চেঁচিয়ে বলল– ভাইসব দরজা থেকে সরে এসো। সবাই দ্রুত পিছিয়ে গেল। দরজায় ধাক্কা বন্ধ হল।

হ্যারি শরীরের দিক থেকে বরাবরই দুর্বল। অতক্ষণ আগুন-ঘেরা গুহায় থাকা পথ হাঁটা এত ধকল হ্যারি সহ্য করতে পারল না। শুকনো ঘাসপাতার বিছানায় হাত পা ছেড়ে শুয়ে পড়ল। ওর মুখ থেকে গোঙানির শব্দ বের হতে লাগল। মারিয়াই প্রথম শুনল সেটা। মারিয়া তাড়াতাড়ি হ্যারির কাছে এলো। বসে পড়ল। হ্যারির মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে মারিয়া ডাকল–শাঙ্কো–এ দিকে এসো। শাঙ্কো কাছে এলো। মারিয়া বলল-হ্যারি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শিগগির জল নিয়ে এসো। শাঙ্কো সঙ্গে সঙ্গে জলের জালার কাছে গেল। এক গ্লাস জল নিয়ে ফিরে এলো। গ্লাসটা নিয়ে মারিয়া মুখ নিচু করে বলল–হ্যারি খাবার জল। আস্তে আস্তে ঢালছি। খেয়ে নাও। হ্যারি আস্তে আস্তে মুখ খুলল। মারিয়া অল্প অল্প করে হ্যারির মুখে জল ঢালতে লাগল। হ্যারি জল খেতে লাগল। গ্লাসের জল শেষ হল। শাঙ্কো আবার জল নিয়ে এল। মারিয়া আধ গ্লাস জল খাওয়াল। বাকি জলে হ্যারির কপাল চোখ ধুইয়ে দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *