রূপোর চাবি – ২

কয়েদখানার লোহার দরজা–ঢং ঢং শব্দে খোলা হল। ফ্রান্সিসরা ঘরটায় ঢুকল। দেখল–ঘরটায় জানলা বলে কিছু নেই। ছাদটার কোণায় ছাদ একটু ভাঙা। খোদলমতো। ওখান দিয়েই আলো হাওয়া আসছে।

এই সকালেও দেয়ালের খাঁজে রাখা মশাল জ্বলছে। তাতে অন্ধকার ভাবটা কেটেছে। মেঝের বিছানা বলে কিছু নেই। কাঠের পাটাতন পরপর পাতা। এটাই বিছানা।

ফ্রান্সিস দরজার কাছাকাছি বসল। মারিয়া শাঙ্কোও বসল। একটু হাঁপাতে হাঁপাতে

মারিয়া বলল–আমার জন্যেই তোমাদের এত ভোগান্তি।শাঙ্কো বলল–রাজুকমারী A এসব ভাববেন না। এতে আপনার মন খারাপ হবে। সহ্যক্ষমতা কমে যাবে। দেখা

যাক–আমরা মুক্তি পাই কি না। এখন শুধু মুক্তির কথা ভাবতে হবে। ফ্রান্সিস কী ভাবতে ভাবতে বলল–শাঙ্কো–আমরা যখন দুৰ্গটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন কোনদিকের পাথরের দেয়ালের একটা জায়গা বেশ ভাঙা ছিল দেখেছিলাম। শাঙ্কো একটু ভেবে বলল-দক্ষিণ দিককার দেয়ালটার মাঝামাঝি পাথরের পাটাগুলো খসে পড়েছে। সবটা নয়। তবে পাথরের পাটাগুলো আলগা হয়ে গেছে।

–ঠিক ঠিক বলেছো শাঙ্কো। এখন আমার মনে পড়ছে। ফ্রান্সিস বলল।

ফ্রান্সিস চারদিকে ভালো করে দেখল। বুঝল এখান থেকে পালাতে হলে দরজা দিয়েই পালাতে হবে। ফ্রান্সিসের নজরে পড়ল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে খাতিব বসে আছে। দু’চোখ বোজা। ফ্রান্সিস উঠে আস্তে আস্তে খাতিবের কাছে এলো। গলা নামিয়ে বলল– খাতিব–আপনারা সাহায্য করলে আমরা এই কয়েদঘর থেকে পালাতে পারি। খাতিব চোখ খুলল। বলল–কীভাবে?

–পাহারাদাররা যখন খাবার নিয়ে দুপুরবেলা আসবে তখন ওরা কীভাবে খেতে দেয় সেটা লক্ষ্য করতে হবে। তখনই আমি ঠিক করবো কখন কীভাবে পালাবো।

–বেশ–উপায় ভাবুন। খাতিব বলল। ফ্রান্সিস নিজের জায়গায় চলে এলো। অপেক্ষা করতে লাগল কখন দুপুরের খাবার খেতে দেয়।

দুপুরে সৈন্যরা তিনজন খাবারের ঝুড়ি হাতে আর কাঠের গামলায় ঝোল নিয়ে এলো। পাহারাদার দু’জন দরজার কাছে খোলা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াল। দরজা খোলা হল। সৈন্যরা খাবার নিয়ে ঢুকল।

খেতে খেতে ফ্রান্সিস নিম্নস্বরে বলল–শাঙ্কো তিনজন ঢোকে। দু’জন পাহারায় থাকে। রাতে খাবার দেবার সময় তুমি একজন পাহারাদারকে কাবু করবে আমি অন্যটাকে ধরবো। যারা খাবার দেবে তাদের সামলাবে খাতিবের যোদ্ধারা।

সন্ধের একটু পরে ফ্রান্সিস খাতিবের কাছে গেল। বলল–পরিকল্পনা ছকে ফেলেছি।

–কী পরিকল্পনা করলেন?

–খাবার দিতে তিনজন সৈন্য ঘরের মধ্যে ঢোকে। তাদের আপনারা আটকাবেন। তাদের যেভাবেই হোক এই ঘরেই বন্ধ করে রাখা হবে। ততক্ষণ আমি আর আমার বন্ধু দু’জন পাহারাদারকে আহত করবো যাতে আমাদের পেছনে ছুটতে না পারে। এ সবের মধ্যেই আপনাদের আমাদের পালাতে হবে।

খাতিব মাথা ওঠানামা করে বলল–পরিকল্পনা খুবই ভালো আর কার্যকরী। দাঁড়ান আমাদের যোদ্ধাদের বলছি।

খাতিব উঠে দাঁড়াল। বলল–সবাই শোনো। খাতিবের সৈন্যরা এগিয়ে এলো। খাতিব বলল–রাতে যখন তিনজন সৈন্য খাবার দিতে আসবে তখন তোমরা ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের কোমরে গোঁজা তলোয়ার কেড়ে নেবে। তারপর খোলা দরজা দিয়ে বাইরে এসে দরজার লোহার হুড়কো টেনে দেবে যাতে সৈন্য তিনজন পালাতে না পারে। এবার সবাই তৈরি থেকো।

রাত হল। তিনজন সৈন্য খাবার নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়াল। দু’জন পাহারাদারের একজন দরজা খুলে দিল। ঢং শব্দ তুলে দরজা খুলে গেল।

তিনজন খাবার নিয়ে ঢুকল। তখনই খাতিবের কয়েকজন যোদ্ধা সৈন্য তিনজনের এ ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওদের খাবারের ঝুড়ি কাঠের গামলা সব ছিটকে গেল। ওরা কাঠের মেঝের ওপর উবু হয়ে পড়ল। খাতিবের যোদ্ধারা তিনজন সৈন্যের কোমর থেকে ঝোলানো তলোয়ার খাপ থেকে খুলে ফেলে যোদ্ধাদের একজন বলল–কেউ কোনোরকম শব্দ করবে না।

ওদিকে ফ্রান্সিস আর শাঙ্কো খোলা তলোয়ার হাতে দু’জন সৈন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ফ্রান্সিস একজনের কাঁধে–এক রদ্দা কষাল। ওর হাত থেকে তলোয়ার খসে পড়ল। শাঙ্কো অন্যটার পেটে ঢু মারল। সেই সৈন্যটি দু’হাত উঁচু করে চিৎ হয়ে মেঝেয় পড়ে গেল।

ফ্রান্সিস মারিয়াকে ডাকতে যাবে তখনই পেছন ফিরে দেখল মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ফ্রান্সিস মারিয়ার ডান হাত ধরে বলে উঠল-শাঙ্কো–ছোটো দক্ষিণের দেয়ালের দিকে।

তিনজনে অন্ধকার মাঠে নেমে এলো। তারপর ছুটল দক্ষিণদিকের দেয়ালের দিকে। খাতিব আর যোদ্ধারাও সেদিকেই ছুটল।

ফ্রান্সিস ভাঙা দেওয়ালের জায়গায় এলো। লাথি মেরে কয়েকটা আলগা পাথরের পাটা ভাঙল। এখন পার হওয়া সহজ হল।

ফ্রান্সিসরা দেয়াল পার হয়ে বাইরে অন্ধকার রাস্তায় এলো। ফ্রান্সিসদের দেখাদেখি খাতিব আর খাতিবের যোদ্ধারাও ভাঙা দেয়াল পার হল। তখনই দুর্গে হৈ হৈ চিৎকার শোনা গেল। আলতোয়াইফের সৈন্যরা চিৎকার করতে লাগল–কয়েদী পালাচ্ছে। সাবধানে। ধরো সবাইকে। অন্ধকার মাঠে সৈন্যরা মশাল হাতে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল। ফ্রান্সিসরা কোণদিক দিয়ে পালিয়েছে সৈন্যরা অন্ধকারে তা দেখতে পায় নি।

এবার ফ্রান্সিসরা একটু সমস্যায় পড়ল। জাহাজঘাটা কোণদিকে? ফ্রান্সিস খাতিবের এক যোদ্ধাকে থামাল। বলল–জাহাজঘাটটা কোণদিকে। যোদ্ধাটি ডানহাত দক্ষিণের দিকে তুলে বলল–ঐদিকে।

ফ্রান্সিসরা দক্ষিণমুখো ছুটল। ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে বলল–মারিয়া ছুটতে পারবে তো?

–কিছু ভেবোনা। তোমাদের মতো ছুটতে না পারলেও আমি আমার মতো ছুটবো।

ফ্রান্সিসরা হাঁপাতে হাঁপাতে জাহাজঘাটায় পৌঁছল।

পাটাতনের ওপর দিয়ে ছুটে ওরা জাহাজে উঠল। ফ্রান্সিস হাঁপাতে হাঁপাতে প্রথমেই ছুটে গেল নোঙরের কাছে। পেছনে শাঙ্কো। দু’জনে নোঙরের দড়ি টেনে টেনে তুলল। জাহাজ হাওয়ার ধাক্কায় ঘুরে যেতে লাগল। ফ্রান্সিস ছুটে গিয়ে জাহাজ থেকে পাতা পাটাতনটা তুলে ফেলল। জাহাজটা ঘুরে গেল।

ওদিকে মারিয়ার ডাকাডাকিতে হ্যারি বিস্কোরা জাহাজের ডেক-এ উঠে এলো। হ্যারি ছুটে গিয়ে ফ্রান্সিসকে জড়িয়ে ধরল। ভাইকিং বন্দুরা উঠে আসতে লাগল। ফ্রান্সিস, মারিয়া আর শাঙ্কোকে ঘিরে দাঁড়াল। ধ্বনি তুলল–ওহোহো।

ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে বলল–ভাইসব, আমাদের এক্ষুণি এই বন্দর থেকে পালাতে হবে। পাল খুলে দাও দাঁড়িয়া দাঁড় ঘরে যাও। জাহাজ যত জোরে পায়রা চালাও।

ভাইকিং বন্ধুরা কাজে নেমে পড়ল। অল্পক্ষণের মধ্যে জাহাজ মাঝ সমুদ্রে চলে এলো।

তখনই পুবদিকে গভীর কমলা রঙের সূর্য উঠল। আলো ছড়ালো সমুদ্রে জাহাজে।

 জাহাজ চলল।

দিন তিনেকের মাথায় ফ্রান্সিসদের জাহাজ এলো হুয়েনভা বন্দরে। কাদিজ বন্দরেই এই হুয়েনভা বন্দরের নাম ওরা জেনে এসেছিল। ওরা নিশ্চিন্ত মনেই ওদের জাহাজ বন্দরে ভেড়াল। তখন সকাল। জাহাজ থেকে কাঠেরতক্তা তির পর্যন্ত পাতা হলো। কয়েকজন ভাইকিং বন্ধু বন্দর শহরটা দেখতে নেমে গেল।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার সময় হয়ে গেল তখনও বন্ধুরা ফিরল না। আরো সময় গেল। দুপুর পেরিয়ে বিকেলের মুখোমুখি সময় তখন। ফ্রান্সিসরা কেউ তখনও খেল না।

বিকেলের দিকে দেখা গেল বন্ধুদের বন্দি করে একদল যোদ্ধা ফ্রান্সিসদের জাহাজে উঠে আসছে। কেন ওর বন্ধুদের বন্দি করা হয়েছে, ফ্রান্সিস তার কোনো কারণই বুঝতে পারল না। মাথায় শিরস্ত্রাণ, বুকে বর্ম,হাতে খোলা তলোয়ার, যোদ্ধারা ফ্রান্সিসদের জাহাজে উঠল। ফ্রান্সিস,হ্যারি এগিয়ে গেল। যোদ্ধাদেরদলনেতা সবার আগে ছিল।একটু লম্বামতো। মুখে দাড়ি-গোঁফ। দেখেই ফ্রান্সিস বুঝল লোকটা চড়া মেজাজের মানুষ।

হ্যারি বলল, কী ব্যাপার বলুন তো?

দলনেতা বলল, শুনলাম তোমরা ভাইকিং। ক্যামেরিনাল বন্দর হয়ে এখানে এই হুয়েনভা বন্দরে এসেছে।

হ্যারি বলল, হ্যাঁ।

তোমরা জানো কি এই অঞ্চলের রাজা হচ্ছেন ফার্নান্দো? দলনেতা বলল।

–সেটা আমরা কী করে জানবো? হ্যারি বলল।

–ক্যামেরিনাল অঞ্চলে এখন রাজত্ব করছে ফার্নান্দোর ভাই গার্সিয়া।

–হ্যাঁ, শুনেছি। হ্যারি বলল।

–ফার্নান্দো আর গার্সিয়ার মধ্যে ভীষণ রেষারেষি।

 –ও। হ্যারি মুখে শব্দ করল।

যে কোনোদিন দুই ভাইয়ে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।

–আমরা এসব কিছুই জানি না। হ্যারি বলল।

–তোমরা সব জানেনা। দলনেতা চিৎকার করে বলে উঠল।

–না, আমরা জানি না। ফ্রান্সিস বলল।

 দলনেতা আবার চিৎকার করে উঠল, তোমরা গার্সিয়ার গুপ্তচর। গার্সিয়া তোমাদের এখানে পাঠিয়েছে গোপনে সব খবর নিতে আমাদের ক’টা যুদ্ধজাহাজ, সৈন্যসংখ্যা কত, কোন্ কোন্ জায়গা আমরা সুরক্ষিত রেখেছি, কোণগুলি আমাদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা।

ফ্রান্সিস বুঝল, খুবই বিপদে পড়েছে ওরা। এই দলনেতাকে কিছু বলে লাভ নেই। দলনেতার এখন যা মনের অবস্থা,ফ্রান্সিসরা এসব ব্যপারে যে জড়িত নয় সেটা কিছুতেই বোঝানো যাবে না। তবু ফ্রান্সিস হাল ছাড়ল না। যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করল। বলল, দেখুন, আমরা বিদেশি। আপনাদের কোনো ব্যাপারেই আমরা জড়িয়ে নেই। জড়াবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও নেই।

–আমি বিশ্বাস করি না। দলনেতা বলল।

–গুপ্তচরবৃত্তি করে আমাদের কী লাভ বলুন! হ্যারি বলল।

–গার্সিয়া তোমাদের অনেক স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছে। দলনেতা বলল।

–বেশ, আপনারা জাহাজে তল্লাশি চালিয়ে দেখুন। ফ্রান্সিস বলল।

–সেসব পরে হবে। এখন তোমাদের সবাইকে বন্দি করা হলো। দলনেতা বলল। তারপর যোদ্ধাদের দিকে তাকিয়ে বলল, এই জাহাজের কোথাও থেকে দড়ি নিয়ে আয়। টুকরো করে দড়ি কেটে সকলের হাত বাঁধ। তারপর কয়েদখানায় নিয়ে চল।

ফ্রান্সিস বলল, আমাদের কয়েদখানায় না রেখে এই জাহাজেই বন্দি করে রাখতে পারেন। আপনাদের যোদ্ধারা পাহারায় থাকবে।

না না, তোমাদের সবাইকে কয়েদখানায় থাকতে হবে। দলনেতা মাথা নেড়ে বলল।

–তাহলে একটা অনুরোধ, আমাদের সঙ্গে রয়েছেন আমাদের দেশের রাজকুমারী। তিনি কয়েদখানার অত কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না। তাকে এই জাহাজেই বন্দি করে রাখুন। ফ্রান্সিস বলল।

দলনেতা বলল, সেসব রাজা ফার্নান্দোকে বলো।

–রাজা ফার্নান্দোকে কোথায় পাবো? ফ্রান্সিস বলল।

রাজা সেভিল্লায় আছেন। দলনেতা বলল।

সেভিল্লা কোথায়? ফ্রান্সিস জানতে চাইল।

–এই হুয়েনভা থেকে মাইল কুড়ি উত্তরে। দলনেতা বলল।

–তাহলে কি আজ রাতে আমাদের সেভিল্লায় নিয়ে যাওয়া হবে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

–না, কাল সকালে রওনা হবো আমরা। দলনেতা বলল।

এবার ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে হ্যারি আর শাঙ্কোর কাছে সরে এলো। নিজেদের দেশীয় ভাষায় বলল, আমি পালাচ্ছি। কেউ লড়াইয়ে নামবে না। সময়-সুযোগমতো সব করবো। তোমরা এগিয়ে এসে আমাকে আড়াল করে দাঁড়াও।

ফ্রান্সিসের বন্ধুরা আস্তে আস্তে ফ্রান্সিসকে আড়াল করে দাঁড়াল। ফ্রান্সিস সঙ্গে সঙ্গে ডেক-এ বসে পড়ল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে কিছুটা এসেই গড়িয়ে গিয়ে মাস্তুলের পেছনে চলে এলো। হাঁপাতে হাঁপতে একটুক্ষণ দাঁড়াল। তারপর ডেক-এর ওপর শুয়ে পড়ে দ্রুত গড়িয়ে সিঁড়িঘরের পেছনে চলে এলো। রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা আর ওকে দেখতে পাবে না। ফ্রান্সিস দ্রুত পায়ে ছুটে গিয়ে হালের কাছে। এলো। হাল জড়িয়ে ধরে হালের কাঠের খাঁজে খাঁজে পা রেখে জলের কাছে নেমে এলো। তারপর হাল ধরে জলের মধ্যে আস্তে নিজের শরীরটা ডুবিয়ে দিল। জলে কোনো শব্দ হলো না।

ওদিকে ভাইকিং বন্ধুরা গজরাতে লাগল। ওরা এভাবে কাপুরুষের মতো বিনা যুদ্ধে বন্দিদশা মেনে নিতে পারছিল না। হ্যারি দেশীয় ভাষায় বলল, ভাইসব, ফ্রান্সিস পালিয়েছে। ও বলে গেছে আমরা যেন লড়াই না করি। সব মেনে নিই। হ্যারি থামল। তারপর বলল, ফ্রান্সিস মুক্ত। এখন আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ফ্রান্সিস আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেই। ভাইকিং বন্ধুরা একটু শান্ত হলো।

ফার্নান্দোর সৈন্যরা ভাইকিংদের হাত বাঁধার জন্যে দড়ি জোগাড় করে নিয়ে এলো। এবার হ্যারি দলনেতার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন, আমাদের বন্ধুরা ফিরে আসছে না দেখে আমরা কেউ এখনও পর্যন্ত খাইনি। আগে আমাদের খেতে দিন। তারপর যেখানে নিয়ে যেতে চান নিয়ে যাবেন।

একটু ভেবে নিয়ে দলনেতা বলল, বেশ, খেয়ে নাও। আমার সৈন্যরা পাহারায় থাকবে। কেউ পালাবার চেষ্টা করলেই মরবে।

ভাইকিংরা সিঁড়ির দিকে চলল। সৈন্যরাও পেছনে পেছনে চলল। ভাইকিংরা খেতে গেল। সৈন্যরা পাহারায় রইল।

খেতে খেতে মারিয়া বলল, হ্যারি, আমার জন্যেই তোমাদের এত কষ্ট।

হ্যারি হেসে বলল, কী যে বলেন! আপনি না থাকলেও এই রাজা ফার্নান্দোর যোদ্ধারা আমাদের বন্দি করতো। যাকগে, আপনি এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।

খাওয়াদাওয়া সেরে হ্যারি ডেক-এ উঠে এলো। দেখল দলনেতা আরো সৈন্য আনিয়েছে। ভাইকিংরা ডেক-এ উঠে আসতে লাগল। সবাইকে সারি দিয়ে দাঁড় করানো হলো। তারপর তাদের দু’হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা হতে লাগল। সবার হাত বাঁধা হলো শুধু মারিয়ার হাত বাঁধা হলো না।

দলনেতা গলা চড়িয়ে ভাইকিংদের বলল, সবাই জাহাজঘাটায় গিয়ে দাঁড়াও।

হ্যারিরা একে একে পাটাতনের ওপর দিয়ে নেমে এলো। রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরাও নেমে এলো। হ্যারিদের ঘিরে দাঁড়াল।

দলনেতা হাত তুলে পুবদিক দেখিয়ে গলা চড়িয়ে বলল, চলো। হ্যারিরা হাঁটতে শুরু করল। সৈন্যরাও ওদের দু’পাশ থেকে ঘিরে হাঁটতে লাগল।

তখন সন্ধে হয়েছে। হুয়েনভা বন্দরের রাস্তায় লোকজনের তেমন ভিড় নেই। রাস্তার এখানে-ওখানে মশাল জ্বলছে। দু’পাশের বাড়িঘরেও আলো দেখা যাচ্ছে। বন্দি হ্যারিদের দেখে পথচলতি অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ে দেখল ওদের।

একসময় বাড়িঘর শেষ হলো। ডানদিকে একটা প্রান্তর। সেটা পার হয়ে হ্যারিরা এখটা পাথরের বাড়ির কাছে এলো। বাড়িটা তেমন বড়ো না। দরজার কাছে মশাল জ্বলছে। হ্যারি মশালের আলোয় দেখল লোহার দরজা। তাতে তালা ঝুলছে। বুঝল আবার কয়েদঘরের বন্দিজীবন।

লোহার দরজা ঠং ঠং শব্দে খোলা হলো। হ্যারিদের ঠেলে ঠেলে ঢোকানো হলো। ঘরের মধ্যে দেয়ালের খাঁজে দুটো মশাল আটকানো। মশাল দুটো জ্বলছে। হ্যারি চারদিকে তাকাল। কয়েদঘর যেমন হয় তেমনি ঘর। ছাদের কাছে দু’দিকে দুটো ঘুলঘুলির মতো। মেঝেয় পুরু করে শুকনো ঘাসের বিছানা। হ্যারি দেখল আগে থেকেই বন্দি হয়ে আছে। জনা দশেক লোক।

হ্যারি মারিয়াকে বলল, রাজকুমারী, আমার সঙ্গে আসুন। ঘরের এক কোণায় হ্যারি না এলো। মারিয়াকে বসতে বলল। নিজেও বসল। হ্যারির শরীর বরাবরই দুর্বল। ক্লান্তিতে সে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না। শুয়ে পড়ল। বাঁধা হাত রাখল কপালের ওপর। মারিয়া আস্তে আস্তে বলল, এ তো কষ্টের শুরু। কপালে আরও দুর্ভোগ আছে। তবে সান্ত্বনা একটাই, ফ্রান্সিস মুক্ত। ও আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারবে।

-হ্যাঁ, এখন ওটাই একমাত্র ভরসা। হ্যারি বলল।

.

ওদিকে ফ্রান্সিস সাঁতার কেটে সমুদ্রতীরে এলো। পেছল পাথরে সাবধানে পা রেখে রেখে তীরে উঠে এলো। ভেজা পোশাক নিয়েই একটা বড়ো পাথরের চাইয়ের ওপর বসল। ওখান থেকে জাহাজ-ডেক, মানুষজন দেখা যাবে।

রাত হলো। ফ্রান্সিস তখনও বসে আছে। তাকিয়ে আছে ওদেরজাহাজের দিকে। জাহাজের কাঁচটাকা আলোয় দেখল হ্যারিদের সারি দিয়ে দাঁড় করানো হলো। তারপর হ্যারিরা হাত বাঁধা অবস্থায় জাহাজ থেকে নেমে এলো। সামনে-পেছনে রাজা ফার্নান্দোর সৈন্যরা।

ফ্রান্সিস পাথরটা থেকে উঠে দাঁড়াল। চলল বড়ো রাস্তার দিকে। ঝোঁপঝাড়। গাছগাছালি বাড়িঘর পার হয়ে সদর রাস্তায় এলো। রাস্তায় এখানে-ওখানে মশাল জ্বলছে। তারই আলোয় দেখল হ্যারিরা চলেছে। দেখল মারিয়ার হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা নয়। ফ্রান্সিস এই ভেবে আশ্বস্ত হলো যে মারিয়ার বেশি কষ্ট হবে না।

ফ্রান্সিস হ্যারিদের পেছনে কিছু দূরে থেকে হাঁটতে লাগল। হ্যারিদের কয়েদঘরে ঢোকানো পর্যন্ত সবই ফ্রান্সিস দেখল। এবার চিন্তা কী করে বন্ধুদের মুক্ত করা যায়।

এখন তো কিছু করার নেই। ফ্রান্সিস বেশ দুর্বল বোধ করতে লাগল। সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি।

ফ্রান্সিস জাহাজঘাটার দিকে চলল। জাহাজঘাটায় পৌঁছে দেখল ওদের জাহাজটায় আলো জ্বালা হয়নি। ও খুব সাবধানে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে জাহাজের ডেক-এ উঠে এলো। আশপাশের জাহাজগুলো থেকে আলো পড়েছে ওদের জাহাজে। সেই সামান্য আলোতে দেখল ডেক-এ কোনো পাহারাদার সৈন্য নেই। ফ্রান্সিস হাঁফ ছাড়ল। ও নিজের কেবিনঘরে নেমে এলো। ভেজা পোশাক পালটাল। তারপর রসুইঘরে এলো।

রসুইঘরের টেবিলে ঢাকনা দেওয়া পাত্রগুলোর ঢাকনা খুলে দেখতে লাগল ফ্রান্সিস। মশলা নুন এসব রাখা। হঠাৎ দেখল টেবিলের ধারে রাখা একটা ঢাকা দেওয়া বড়ো পাত্র। ফ্রান্সিস ঢাকনা খুলল। দেখল রুটি মাংস আলুভাজা পরিপাটি রাখা। রাঁধুনি ভাইকিং বন্ধুটি জানতো ফ্রান্সিস পালিয়েছে। ফ্রান্সিস অভুক্ত থাকবে। এই জাহাজে ও নিশ্চয়ই আসবে। তাই রাঁধুনি বন্ধুটি সব খাবার সাজিয়ে রেখে গেছে। একে ক্ষুধার্ত, সামনেই খাবার আর রাঁধুনি বন্ধুটির ভালোবাসা–ফ্রান্সিস আবেগে চোখ বুজল। মনে মনে গভীর ভালোবাসা জানাল বন্ধুটিকে। তারপর খেতে বসল। গোগ্রাসে খেতে লাগল সে। খিদে যা পেয়েছে!

 .

ভোর হলো। হ্যারির ঘুম ভেঙে গেল। ও উঠে বসল। দেখল বন্ধুরাও কেউ কেউ ঘুম ভেঙে উঠে বসেছে। মারিয়া তখনও ঘুমোচ্ছে। হ্যারি মারিয়ার ঘুম ভাঙাল না। ভালোমতো ঘুম আর বিশ্রাম রাজকুমারীর এখন অবশ্য প্রয়োজন।

বেলা হলো। ঢং ঢঙাস্ শব্দে কয়েদঘরের লোহার দরজা খুলে গেল। সকালের খাবার নিয়ে ঢুকল পাহারাদার সৈন্যরা। বন্দিদের হাতে বাঁধা দড়ি খুলে দেওয়া হলো। লম্বাটে সবুজ পাতায় গোল করে কাটা রুটি, আনাজের তরকারি আর মাংসের ঝোল। হ্যারি একটু অবাকই হলো–সকালের খাবারে এত কিছু! হ্যারিরা খাচ্ছে তখনই শুনল একজন পাহারাদার সৈন্য বলল, একটু পরেই তোমাদের সেভিল্লো নিয়ে যাওয়া হবে। পথে তেমন খাবার নাও জুটতে পারে। কাজেই যতটা পারো পেট পুরে খেয়ে নাও।

একটু বেলা হতেই ঢং ঢং শব্দে কয়েদঘরের দরজা খুলে গেল। দলনেতা ভেতরে ঢুকল। গলা চড়িয়ে বলল, সবাই বেরিয়ে এসো। সবাইকে হেঁটে সেভিল্লা যেতে হবে। বাইরে গিয়ে সারি দিয়ে দাঁড়াও।

হ্যারি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, চলো সবাই।

দু’জন ভাইকিং বন্ধু ঘাড় নাড়ল। একজন বলল, এখান থেকে আমরা যাবো না। এখানেই থাকবো। ফ্রান্সিস এখানে আছে। ওর সাহায্যেই আমরা মুক্ত হবো।

হ্যারি বলল, জেনো, ফ্রান্সিস সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে। এখনই বাইরে গেলে দেখবে ফ্রান্সিস বড়ো রাস্তায় আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। সেভিল্লো যাওয়ার পথে ফ্রান্সিস আত্মগোপন করে ঠিক আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। হ্যারি থামল। পরে বলল, ফ্রান্সিস বলে গেছে আমরা যেন দলনেতার কথামতো চলি। এখন দলনেতার কথামতো সেভিল্লো যেতেই হবে। তার কথা না মানলে আমরাই বিপদে পড়বো।

সব বন্দি বাইরে এলো। সার বেঁধে দাঁড়াল। দেখা গেল চারটে ঘোড়া আনা হয়েছে। হাতের খোলা তলোয়ার কোষবদ্ধ করে দলনেতা একটা ঘোড়ার পিঠে উঠে বসল। তিনজন সৈন্য বাকি তিনটে ঘোড়ায় উঠে বসল। দলনেতা তার সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা চারজন এই গুপ্তচরদের পাহারা দিয়ে সেভিল্লো নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা হুয়েনভা বন্দরে খুঁজে বের করো রাজা গার্সিয়ার গুপ্তচরদের। ধরতে পারলেই কয়েদঘরে বন্দি করে রাখবে। আমি ফিরে এসে যা করার করবো।

দলনেতা ঘোড়া চালিয়ে একটু এগিয়ে গেল। তারপর হ্যারিদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার পেছনে পেছনে এসো। হ্যারিরা এগিয়ে এলো। তখনই তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে হ্যারিদের দেখতে দেখতে দলনেতা বলল, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল সে-ই তোমাদের নেতা। তাকে তো দেখছি না।

হ্যারি বলল, আমরা সবাই তো আছি। আপনি কার কথা বলছেন বুঝতে পারছি না।

দলপতি মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, সে নিশ্চয়ই চালাকি করে আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে। চিন্তা নেই–আমরা ঠিক খুঁজে বের করবো। এবার চলো সবাই।

দলনেতা ঘোড়া চালাল। হ্যারিরা পেছনে পেছনে চলল। সবার পেছনে চলল তিনটি ঘোড়ায় তিনজন সৈন্য।

হুয়েনভা বন্দর শহর ছাড়িয়ে হ্যারিরা একটা টানা রাস্তায় পড়ল। বালি আর পাথরের টুকরো ছড়ানো রাস্তাটা বেশ চওড়া। এই রাস্তাটাই বোধহয় সেভিল্লা গেছে।

বেলা বাড়তে লাগল। রোদের তেজও বাড়তে লাগল। হ্যারিদের সবচেয়ে কষ্ট দিতে লাগল মাঝেমধ্যে ছুটে আসা জোর বাতাস। সঙ্গে ধুলোবালি উড়ে এসে গায়ে মাথায় পড়ছে। এজন্যে ওদের চোখ-মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এভাবেই হ্যারিদের হাঁটতে হচ্ছে সেভিল্লার দিকে।

বেলা বাড়তে লাগল। রোদের তেজও বাড়তে লাগল। হ্যারিরা কাহিল হয়ে পড়ল। সেই সকালে খেয়েছে। তারপর এখনো পর্যন্ত একফেঁটা জলও খেতে পায়নি। সবচেয়ে কষ্ট হতে লাগল মারিয়ার। দু’হাত খোলা থাকলে কি হবে, এতক্ষণ হাঁটা, রোদের তেজ, ধুলো ওড়ানো দমকা হাওয়া–এত সব মারিয়া সহ্য করতে পারছিল না। বেশ দুর্বল পায়ে সে হাঁটছিল। হ্যারি মারিয়ার কষ্ট বুঝতে পারল। কিন্তু মারিয়াকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। হ্যারি ভাবল, এক পাত্র জল খেতে পেলে মারিয়া আর বন্ধুদের কষ্ট একটু কমবে। সে দ্রুতপায়ে হেঁটে দলনেতার কাছে এলো। বলল, আমাদের জলতৃষ্ণা পেয়েছে, জলের ব্যবস্থা করুন।

দলনেতা বলল, আর কিছুক্ষণ হাঁটলেই একটা গ্রাম পাওয়া যাবে। সেখানে ইঁদারা আছে। পেটভরে জল খেও।

হ্যারি কিছু বলল না। ফিরে এলো বন্ধুদের কাছে। গলা চড়িয়ে বলল, ভাইসব, সামনেই একটা গ্রামে ইঁদারা আছে। জল পাওয়া যাবে।

হ্যারিরা হাঁটতে লাগল। হাঁটার গতি অনেকটা কমে গেছে। হ্যারি মারিয়াকে বলল, রাজকুমারী, আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।

মারিয়া হেসে বলল, ফ্রান্সিসও কি কম কষ্ট সহ্য করছে! ওর কথা ভেবেই আমি সব কষ্ট সহ্য করছি।

কিছুটা এগিয়েই একটা গ্রাম পাওয়া গেল। পাথর আর কাঠ দিয়ে তৈরি ঘরদোর। পাঁচ-সাতটা বাড়ি নিয়ে গ্রাম। দলনেতার নির্দেশে হ্যারিরা গ্রামে ঢুকল। গ্রামটার মাঝামাঝি জায়গায় একটা বড়ো ইঁদারা। গ্রামের বৌ-ঝিরা দড়ি বাঁধা কাঠের পাত্র ডুবিয়ে জল তুলছে। হ্যারিদের দেখে ওরা সরে দাঁড়াল। বিস্কো হাঁদারার ধারে গেল। কিন্তু দু’হাত তো বাঁধা। জল তুলবে কী করে! মারিয়া এগিয়ে এলো। কাঠের পাত্র ইঁদারায় ডুবিয়ে জল তুলতে লাগল। তৃষ্ণার্ত ভাইকিংরা দু’হাত পেতে অঞ্জলির মতো জল ধরে খেতে লাগল। গায়ে-মাথায় জল ছিটোতে লাগল। সাত-আট পাত্র জল তুলতেই মারিয়া হাঁপাতে লাগল। কয়েকজন ভাইকিং বাঁধা দু’হাত তুলে দলপতিকে বলল, আমাদের হাত খুলে দিন। রাজকুমারী একা সবাইকে জল খাওয়াতে পারবেন না। দলপতি দু’জন সৈন্যকে ইঙ্গিত করল। সৈন্য দুজন ঘোড়া থেকে নেমে দারার ধারে এলো। কাঠের পাত্রে জল তুলে ভাইকিংদের জল খাওয়াল। নিজেরাও খেল।

আবার পথ চলা শুরু হলো। ছোটো ছোটো নুড়িপাথর আর ধুলোভর্তি রাস্তা। মাঝে মাঝেই দমকা হাওয়া বইতে লাগল। ধুলো উড়তে লাগল। হ্যারিদের তখন হাত দিয়ে চোখ ঢাকতে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। হ্যারিদের মাঝে মাঝেই এরকম দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে বলেই চলার গতি কমে যাচ্ছে। এভাবেই চলল হ্যারিরা।

হ্যারিরা একটা জায়গায় এলো। বাঁ দিকে ঝুঁকে পড়া পাথরের চাঁই, ডান দিকে সবুজ ঘাসে-ঢাকা উপত্যকা মতো। হ্যারিরা কিছু বোঝবার আগেই একজন ভাইকিং বন্ধু চিৎকার করে বলে উঠল, আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি। কথাটা শেষ করেই বন্ধুটি দল থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর ছুটল ডান দিকের উপত্যকার ওপর দিয়ে।

দলপতি সঙ্গে সঙ্গে ভাইকিং বন্ধুর দিকে ঘোড়া ছোটাল। এতটা পথ হেঁটে হেঁটে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত বন্ধুটি বাঁধা দু’হাত নিয়ে বেশি দূর যেতে পারল না। দলপতি ঘোড়া ছুটিয়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই তাকে ধরে ফেলল। তলোয়ার কোষমুক্ত করে মুহূর্তে ঢুকিয়ে দিল বন্ধুটির পিঠে। বন্ধুটি মুখে একটা শব্দ করল। তারপর ঘাসে-ঢাকা জমির ওপর মুখ থুবড়ে পড়ল।

ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটে গেল। ভাইকিংদের চোখের সামনে। ওরা প্রথমে বুঝে উঠতে পারল না কী করবে। পরক্ষণেই শাঙ্কো চিৎকার করে উঠল, ও-হো-হো। সঙ্গে সঙ্গে ভাইকিং বন্ধুরাও চিৎকার করে উঠল, ও-হো-হো। প্রথমে শাঙ্কো ছুটে চলল দলপতির দিকে। পেছনে আরো কয়েকজন। হ্যারি বুঝল ভীষণ বিপদ। হ্যারি চিৎকার করে বলল, শাঙ্কো মাথা গরম করো না। কথা শোনো৷ বাঁধা হাত নিয়ে লড়াই হয় না। এবাবে লড়ইয়ে নামলে আমার কেউ বাঁচবো না। ফিরে এসো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *