রূপোর চাবি – ১

পরিষ্কার আকাশ। বাতাসও বেগবান। ফ্রান্সিসদের জাহাজ দ্রুতগতিতে চলেছে সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে। জাহাজের পালগুলো ফুলে উঠেছে। কাজেইদাঁড় টানতে হচ্ছেনা। ভাইকিংরা ডেকের এখানে-ওখানে শুয়ে বসে আছে। গোল হয়ে বসে ছক্কা-পাঞ্জা খেলছে। আর। একদল বসে নিজেদের মধ্যে দেশবাড়ির গল্প করছে। সকলের মধ্যেই বেশ একটা ছুটির মেজাজ।

ফ্রান্সিসদের কেবিনঘরে ফ্রান্সিস বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। মারিয়া সেলাই ফেঁড়াইয়ের কাজ করছে বিছানায় বসে।

হ্যারি কেবিনঘরে ঢুকল। ওকে দেখে ফ্রান্সিস উঠে বসল। হ্যারি বিছানায় বসতে বসতে বলল, ফ্রান্সিস, এবার কী করবে?

–তোমরা সবাই তো দেশে ফেরার জন্যে আকুল। কাজেই ফ্লেজারকে বলেছি উত্তরমুখো চালাও। ফ্রান্সিস বলল।

সে তো হলো, হ্যারি বলল, কিন্তু কোথায় এলাম, আমাদের দেশই বা কত দূরে কিছুই বুঝতে পারছি না।

মারিয়া বলল, দেখ হ্যারি, আমার যা জ্ঞানগম্যি তাতে বুঝেছি আমরা জিব্রলটার প্রণালী পার হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছি।

–সেটা বুঝলে কী করে? ফ্রান্সিস বলল।

-খুব সহজে। লক্ষ্য করলে বুঝবে গত কদিন জাহাজের দুলুনি খুব বেড়ে গেছে। ভূমধ্যসাগর অঞ্চলটা অনেক শান্ত। তাই জাহাজের দুলুনি খুব বেশি ছিল না। মারিয়া বলল।

–তাহলে রাজকুমারী, আমরা কি স্পেনের কাছাকাছি এসেছি? হ্যারি বলল।

–আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তবে এই এলাকায় কোনো দ্বীপ নেই। ডাঙা পেলেই। বুঝবো কোনো দ্বীপ নয়, স্পেনে এসেছি। মারিয়া বলল।

ফ্রান্সিস বলল, একবার চলো তো ফ্লেজারের কাছে যাই। ও কী বলে শুনি।

 হ্যারি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চলো।

মারিয়া ওর সেলাই-ফোঁড়াইয়ের জিনিসপত্র একটা চামড়ার থলিতে রাখতে রাখতে বলল, আমিও যাবো। সূর্যাস্ত দেখবো।

তিনজনে একটু পরেই ডেক-এ উঠে এলো। চলল জাহাজচালক ফ্লেজারের কাছে। ফ্লেজার হুইলে হাত রেখে সামনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিল। ফ্রান্সিস বলল, ফ্লেজার, আমরা কোথায় এলাম সেটা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছো?

–আমরা ভূমধ্যসাগর থেকে বেরিয়ে এসেছি এটা বুঝতে পারছি। কিন্তু ডাঙার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বোঝা যাবে না। ফ্লেজার বলল।

–এখন তো তাহলে শুধু জাহাজ চালিয়ে যাওয়া। হ্যারি বলল।

–হ্যাঁ। ফ্লেজার বলল, উত্তর দিকটা ঠিক রেখে জাহাজ চালিয়ে যাওয়া। হ্যারি বলল।

ফ্লেজারের সঙ্গে কথা বলে তিনজনে ফিরে এসে রেলিং ধরে দাঁড়াল। পশ্চিম দিকে তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। সূর্যের আলোর গভীর কমলা রঙ মাঝ আকাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। এবং রং সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও রইল। তারপর আস্তে আস্তে রঙ মুছে গেল। সন্ধ্যা নেমে এলো।

সেদিন ভোর ভোর সময়ে নজরদার পেড্রোর চড়া গলা শেনা গেল, ডাঙা, ডাঙা দেখা যাচ্ছে। যে ভাইকিংরা ডেকে শুয়েছিল তারা উঠে বসল। একজন ছুটল ফ্রান্সিস হ্যারিকে খবর দিতে।

একটু পরেই ফ্রান্সিস আর হ্যারি ডেক-এ উঠে এলো। পেছনে মারিয়াও এলো। ওরা রেলিং ধরে দাঁড়াল। ভোরের নরম রোদে উত্তরদিকে দেখা গেল একটা বন্দর। বেশ কয়েকটা জাহাজ নোঙর করে আছে। জাহাজগুলোতে নানা রঙের বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়ছে।

ফ্রান্সিস বলল, হ্যারি, আমরা বন্দরে জাহাজ ভেড়াবো না। এখানেই নোঙর করবো। শুধু শাঙ্কো নৌকোয় চড়ে বন্দরে যাবে। এটা কোন্ দেশের কোণ বন্দর, লোকজন কেমন–এসব জেনে আসবে।

ফ্রান্সিসরা কথা বলছে, তখনই দুই রাঁধুনি ভাইকিং ফ্রান্সিসদের কাছে এলো। বলল, খাদ্য আর জল ফুরিয়ে এসেছে। এই বন্দর থেকেই খাদ্য আর জল নিতে হবে। নইলে কখন ঝড়বৃষ্টিতে জাহাজ কোণদিকে চলে যাবে। আবার কোনো বন্দর পাওয়া যাবে কিনা কে জানে।

ফ্রান্সিস একটু ভেবে বলল, কথাটা ঠিক। তখন অনেক ভাইকিং বন্ধু ফ্রান্সিসকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্সিস শাঙ্কোকে ডাকল। বলল, শাঙ্কো, তুমি একা নৌকোয় চড়ে বন্দরে যাও। সব জেনে এসো। যথেষ্ট খাদ্য আর জল পাবো কিনা সেটাও জেনে এসো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শাঙ্কো তৈরি হয়ে নিল। দড়ির মই বেয়ে নৌকোয় নেমে নৌকো ছেড়ে দিল। শাঙ্কো শুধু ছোরাটা জামার নীচে নিয়েছে। তলোয়ার নিতে ফ্রান্সিস মানা করেছে। তাই তলোয়ার নেয়নি।

ততক্ষণে ঘরঘর শব্দে নোঙর ফেলা হয়েছে। ফ্রান্সিসদের জাহাজ থেমে রইল। সমুদ্রের বড়ো বড়ো ঢেউয়ের ধাক্কায় দুলতে লাগল।

রেলিং ধরে ফ্রান্সিসরা অপেক্ষা করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পরে দুরেশাঙ্কোর নৌকো আসছে দেখা গেল। ফ্রান্সিস তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শাঙ্কোর নৌকোর দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবতে লাগল, আমাদের বিপদ হতে পারে এমন কিছু হলে শাঙ্কো নিশ্চয়ই নৌকোয় উঠে দাঁড়িয়ে সঙ্কেত করবে। কিন্তু দেখা গেল শাঙ্কো আস্তে আস্তে ঢেউয়ের ধাক্কা বাঁচিয়ে নৌকো চালিয়ে আসছে।

জাহাজে নৌকো বেঁধে শাস্কো দড়ির মই বেয়ে ডেকে উঠে এলো। ভাইকিং বন্ধুরা এ ওকে ঘিরে দাঁড়াল। একুট হাঁপাতে হাঁপাতে শাঙ্কো বলল, এটা স্পেনের দক্ষিণ ভাগ। # বন্দরটার নাম ক্যামেরিনাল। এখানকার রাজার নাম গার্সিয়া। এখানে যথেষ্ট খাদ্য আর জল পেতে কোনো অসুবিধা নেই। রাজার যোদ্ধারা কেউ কেউ আমাকে দেখেছে। বুঝেছে আমি বিদেশি। তবু কিছু বলেনি।

এবার ফ্রান্সিস বলল, শাঙ্কো তুমি বিস্কো আর রাঁধুনি বন্ধুদের নিয়ে যাও। খাদ্য-জল আনার জন্যে বস্তা-পীপে সব নাও। সঙ্গে যে নৌকোটা নেবে সেটাতেই থাকবে এসব।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শাঙ্কোরা একটা নৌকোয় চড়ে অন্য একটা নৌকো দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে ক্যামেরিনাল বন্দরের দিকে চলল।

দুপুরের একটু আগেই শাঙ্কোরা ফিরে এলো। খাদ্য-জল সব রসুইঘরের পাশে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হলো। ফ্রান্সিস মনে মনে বলল, যাক–কয়েক মাসের জন্যে নিশ্চিন্ত।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ভাইকিং বন্ধুরা ফ্রান্সিসের কাছে এলো। বলল, ফ্রান্সিস, এখানে পড়ে থেকে শুধু দেরিই হবে। জাহাজ বিকেলেই ছেড়ে দিতে বলো।

ফ্রান্সিস বলল, ঠিক আছে। ফ্লেজারকে গিয়ে বলো আমি বলেছি বিকেলে জাহাজ ছেড়ে দিতে।

বন্ধুরা খুশিতে ছুটল ফ্লেজারকে কথাটা বলতে।

সূর্যাস্ত হবার আগেই জাহাজের নোঙর তোলা হলো। ভাইকিংরা পালের দড়িদড়া ঠিক করল। জোর বাতাসে পালগুলো ফুলে উঠল। জাহাজ পূর্ণবেগে বড়ো বড়ো ঢেউ ভেঙে চলল।

তীরভূমির কাছ দিয়েই জাহাজ চলল।

 দু’দিন পরেই জাহাজ এলো কাদিজ বন্দরে। এখন ফ্রান্সিসরা অনেকটা নিশ্চিন্ত। ওরা কাদিজ বন্দরের জাহাজঘাটায় জাহাজ নোঙর করল। কাদিজ বেশ বড়ো বন্দর। অনেক জাহাজ জাহাজঘাটা নোঙর করা আছে।

ফ্রান্সিস ডেক-এ দাঁড়িয়েছিল। বিস্কো ফ্রান্সিসের কাছে এলো। বলল, এই কাদিজ বন্দর বেশ বড়ো। এখানে জাহাজ মেরামতি করা যাবে।দুদিন থেকে আমাদের জাহাজের মেরামতির কাজটা সেরে নাও। এখনও এই জাহাজে চড়ে আমাদের অনেক দূরে যেতে হবে।

বেশ তাই করো, ফ্রান্সিস বলল।

দু’দিন মেরামতির কাজটাজ চলল। সেদিন সন্ধেবেলা মারিয়া বলল-চলো কাদিজ নগরবন্দরটা দেখে আসি।

–অচেনা অজানা জায়গা–এখানে যাওয়া কি ঠিক হবে? ফ্রান্সিস বলল।

–আমরা তো একটু ঘোরাঘুরি করবো। তারপর রাত বেশি হওয়ার আগেই চলে আসবো। মারিয়া বলল।

–ঠিক আছে চলো। দিনরাত শুধু সমুদ্রের জল দেখে দেখে তোমার একঘেয়ে লাগারই কথা। চলো শাঙ্কোকেও নিয়ে যাবো। তুমি তৈরি হয়ে নাও। আমি শাঙ্কোকে ডাকতে যাচ্ছি।

মারিয়া ওর ভাঙা আয়নাটা নিয়ে বসল। নিজের মুখ দেখে বুঝল–ওর মুখের দুধে আলতার রং এখন তামাটে হয়ে গেছে। মাথার চুলও জট পাকাচ্ছে। মারিয়া আয়না রেখে চলল পোশাক বের করতে। নিজের গাউনটা বের করল আবার ফ্রান্সিসের পোশাকটাও বড়ো চামড়ার বাক্স থেকে বের করল। গাউনটা পরল। গাউনটা একটু ঢিলে লাগল। বুঝল ওর জাহাজী জীবন ওর শরীর রোগা করে দিয়েছে। কিন্তু এসব ভেবে আর কী হবে। মারিয়া চুল আঁচড়াতে বসল।

ফ্রান্সিস শাঙ্কোকে নিয়ে কেবিন ঘরে এলো। মারিয়ার সাজের বহর দেখে মুখ টিপে হাসল। কিন্তু কিছু বলল না। এই সাজ পোশাক নিয়ে রসিকতা করলে মারিয়া মনে দুঃখ পাবে। ফ্রান্সিস চুপ করে রইল।

মারিয়ার সাজগোজ শেষ হল। এবার মারিয়া ফ্রান্সিসের নতুন পোশাকটা বের করল। বলল–এই পোশাকটা পরো। ফ্রান্সিস বলল–কী পাগলামো! আমরা কিনাচের আসরে যাচ্ছি নাকি?

-না–তোমাকে আজ নতুন পোশাক পরতে হবে। মারিয়া বলল।ফ্রান্সিস বলল– কি কাণ্ড!

–না কোনও কথা শুনবো না–তোমাকে পরতেই হবে। মারিয়া বলল।

–ঠিক আছে। তুমি যখন অত করে বলছো। পোশাকটা দাও। ফ্রান্সিস বলল।

মারিয়া ফ্রান্সিসের পোশাকটা দিল। ফ্রান্সিস নিজের পোশাকের ওপরেই নতুন পোশাকটা পরল। মারিয়া ভাঙা আয়নাটা ফ্রান্সিসের মুখের সামনে ধরল। বলল দ্যাখো–তোমাকে কী সুন্দর দেখাচ্ছে। ফ্রান্সিস আয়নাটায় মুখ দেখল।

–মুণ্ডু। ফ্রান্সিস মারিয়াকে আয়নাটা ফিরিয়ে দিল। এবার শাঙ্কো বলল–ফ্রান্সিস তাহলে আমিও নতুন পোশাকটা পরে আসি।

–বেশ তো–ফ্রান্সিস বলল।

মোটামুটি একটু ফিটফাট হয়ে ফ্রান্সিস, মারিয়া আর শাঙ্কো জাহাজ থেকে নেমে এলো।

ওরা দেখল রাস্তায় লোকজনের খুব একটা ভিড় নেই। ফ্রান্সিসরা একটু এগিয়েই একটা ছোটো দুর্গ দেখল। দুর্গ ঘিরে পাথরের দেয়াল। তার বাইরে পরিখা। দুর্গের সদর দরজায় ওরা এলো। চার-পাঁচজন সৈন্য পাহারা দিচ্ছে। কাঠের বিরাট দরজা বন্ধ।

ওরা দুর্গার চারদিকে একবার ঘুরে এলো ফ্রান্সিস লক্ষ্য করল দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। দুতিন জায়গায়। জোরে কয়েকটা ধাক্কা দিলে ওখানকার পাথুরে দেয়াল সবটা না হলেও কিছু অংশে ধস নামবে। দেয়ালের ঐ জায়গাগুলো সুরক্ষিত নয়।

সদর দেউড়ির সামনে পরিখার ওপর কাঠের সেতু। ফ্রান্সিস বলল–চলো একটু খোঁজ-খবর নেওয়া যাক। সেতু পার হয়ে ওরা সদর দরজার কাছে এলো।

তখনই একজন লম্বা মতো সৈন্য চড়া গলায় বলে উঠল–তোমরা কারা! ওখানেই থাকো। দরজার কাছে আসবে না। ফ্রান্সিস বলল–আমরা জাতিতে ভাইকিং। জাহাজে দেশ-বিদেশ বেড়িয়ে বেড়ানোই আমাদের কাজ। আমরা দুৰ্গটা দেখছি।

–তা দেখো তবে পাহারাদার সৈন্যদের ফাঁকি দিয়ে দুর্গে ঢোকার চেষ্টা করবে না। সেরকম কিছু করতে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। লম্বামতো লোকটা বলল।

ফ্রান্সিস বুঝল ঐ লম্বামতো লোকটিই দলনেতা। ফ্রান্সিস একটু এগিয়ে দলনেতার কাছে গেল। বলল–এই দুর্গা কার? কে থাকে এই দুর্গে?

 –এই দুর্গে থাকেন এখানকার আলতোয়াইফ–মানে রাজা গার্সিয়ারের প্রতিনিধি। দলনেতা বলল।

–ও। ফ্রান্সিস মুখে শব্দ করল।

দুর্গ দেখার পর এলো সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকায়। বেশি ভিড়। গাড়ি ঘোড়া চলছে।

ফ্রান্সিস বলল–চলো কিছু খাওয়া যাক। একটা খাবার দোকানে ওরা ঢুকল। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দোকানটি। দোকানদার ফ্রান্সিসদের দেখে এগিয়ে এলো। হেসে বলল– আসুন–আসুন। ফ্রান্সিসরা বলল।

ফ্রান্সিস মারিয়াকে বলল–বলো কী খাবে?

মারিয়া বলল-মিষ্টি পিঠে আর পাউরুটি কেটে দিন। দোকানদার বলল–দুধ থেকে একটা বিশেষ মিষ্টি আমরা তৈরি করি। আপনাদের দেব? অনেক লোক আমাদের এই বিশেষ খাবারটি খেতে আসে।

–দিন তাহলে। শাঙ্কো বলল।

কিছু পরে কাঠের লম্বা টেবিলে পাতা পেতে খেতে দেওয়া হল। ফ্রান্সিসরা খেতে লাগল। মারিয়া খেতে খেতে দোকানদারকে বলল–সত্যি আপনার এই খাবারটা বেশ খাওয়ার মতো। আরো দুটো দিন। আমাদের তিনজনকেই। খাবার দেওয়া হল। খাবার খেয়ে তিনজনই খুশি।

খেতে খেতে ফ্রান্সিস দোকানিকে ডাকল। দোকানি এগিয়ে এলো। ফ্রান্সিস বলল– এখানে দেখবার মতো কী আছে?

-দুৰ্গটা দেখেছেন? দোকানদার বলল।

–হ্যাঁ দেখেছি। তবে বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। ফ্রান্সিস বলল।

বছরে মাত্র দু’দিন বাইরের লোকেরা দুর্গের ভেতর ঢুকে দেখার অনুমতি পায়। দোকানদার বলল।

–আর কী আছে? দেখবার মতো? ফ্রান্সিস বলল।

–উত্তরের দিকে মাইল কয়েক দূরে আছে একটা বিরাট হ্রদ। এখন অন্ধকারে তো ভালো করে দেখতে পারবেন না। দোকান থেকে বেরিয়ে ফ্রান্সিস বলল–চলো হ্রদটা দেখে আসি। ওরা একসময় হ্রদটার কাছে এলো। চাঁদের আলো অনুজ্জ্বল। হ্রদের জল অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হ্রদের জলের ওপর নীলচে কুয়াশা ছড়িয়ে আছে। তাই ওপার দেখা যাচ্ছে না। চারপাশের ঝুঁকে পড়া গাছগাছালির গায়ে মাথায় কুয়াশামাখা চাঁদের নিষ্প্রভ আলো–এতেই হ্রদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।

এবার ফেরা। রাত বেড়েছে। ফ্রান্সিসরা ফিরে আসতে লাগল। একটা মোড়ে এলো তিনজনে। ফ্রান্সিস বলল–ডানদিকের রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে দুর্গা ঘুরে যেতে হবে। তাতে পরিশ্রম বেশি সময়ও নষ্ট। বাঁ রাস্তাটা দিয়ে গেলেই রাস্তাটা যেভাবে গেছে। দেখছি–তাতে এই রাস্তা দিয়ে গেলেই অল্পসময়ের মধ্যে জাহাজঘাটায় পৌঁছতে পারবো।

–কিন্তু এই রাস্তাটা বনের মধ্যে দিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এই অন্ধকারে বনের মধ্যে দিয়ে যাবো? শাঙ্কো বলল।

–তাতে কী হয়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি যেতে পারবো। শাঙ্কো আর আপত্তি করল না। রাস্তা কিছুদূর এসে বনের মধ্যে ঢুকে গেছে। ফ্রান্সিসা বনে ঢুকল। এখন রাস্তাটা পায়ে চলা পথের মতো সরু।

অন্ধকারেই সরু রাস্তাটায় পা টিপে টিপে চলল ওরা। অন্ধকারে চলতে চলতে হঠাৎ ফ্রান্সিস বুঝল ওরা পায়ে চলা পথটা হারিয়ে ফেলেছে। ঝোঁপ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ওরা যাচ্ছে। ফ্রান্সিস দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল–দাঁড়াও। শাঙ্কো আর মারিয়া দাঁড়িয়ে পড়ল। ফ্রান্সিস বলল

–সমস্যায় পড়লাম। আমরা পথ হারিয়েছি। কোণদিকে জাহাজঘাটা বুঝতে পারছি না।

–কী করবে এখন? শাঙ্কো বলল।

চলো যেদিকে যাচ্ছি সেদিকেই যাই। দেখা যাক কোথায় গিয়ে পৌঁছুই। ফ্রান্সিস বলল।

তারপর তিনজনেই অন্ধকারেই চলল।

হঠাৎ ঝোপেঝাড়ে শব্দ তুলে তিন-চারজন লোক ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। ওদের পরনে কানঢাকা জোব্বামতো পোশাকে। কোমরের ফেট্টিতে তলোয়ার গোঁজা।

একজন এগিয়ে এসে বলল–তোমরা কারা? কোথায় যাচ্ছো?

আমরা জাতিতে ভাইকিং বিদেশি। আমরা জাহাজে চড়ে এখানে এসেছি। এই বনের মধ্যে দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি জাহাজটায় পৌঁছবো এই ভেবেই এই রাস্তায় এসেছি।

তাহলে তোমরা জাহাজঘাটায় যাবে। সৈন্যটি বলল।

–হ্যাঁ। কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা পথ হারিয়েছি। ফ্রান্সিস বলল।

–হ্যাঁ–তোমরা জাহাজঘাটার উল্টোদিকে যাচ্ছিলে। জাকগে–তোমরা এখানকার আলতোয়াইদের গুপ্তচর। আমাদের ব্যাপারে খোঁজখবর করতে এসেছো। ফ্রান্সিস বুঝল–ভীষণ বিপদ। ও বলে উঠল–আমাদের সঙ্গে আমাদের দেশের রাজকুমারী আছেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা গুপ্তসংবাদ সংগ্রহে আসবো এত বোকা আমরা নই।

যাক গে–তোমাদের বন্দি করা হল। আমাদের বিদ্রোহী নেতা খাতিব কাল রাতে আসবেন। উনি যদি বলেন তোমাদের ছেড়ে দিতে তাহলে তোমরা ছাড়া পাবে। এখন বন্দি থাকতে হবে। সৈন্যটি ইঙ্গিতে ফ্রান্সিসদের আসতে বলল।

ফ্রান্সিসরা সৈন্যদের পাহারায় চলল। ঝোঁপঝাড় জঙ্গল দু’হাতে সরিয়ে ফ্রান্সিসরা চলল। শাঙ্কো ফ্রান্সিসের কানের কাছে মুখ এনে মৃদুস্বরে বলল–ফ্রান্সিস আমরা এই অন্ধকারে পালাতে পারি।

–মারিয়া রয়েছে। পালাবার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যাবো। তখন বিপদ বাড়বে। তার চেয়ে চলোকয়েদখানা তো আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। কয়েদঘরে আটক থাকা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। চিন্তা মারিয়াকে নিয়ে। ওর তো অত কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই। ফ্রান্সিস বলল।

সবাই ঝোঁপঝাড় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলল। বনের বেশ ভেতরে ঢুকল যোদ্ধারা। তখনই অন্ধকারে দেখা গেল একটা পাথরের বাড়ি। বেশ বড়ো! ভাঙা বাড়ি।

যোদ্ধারা বাড়ির দরজার কাছে গেল। অন্ধকারে দেখা গেল ভাঙা পাথরের দরজা। সবাই ঘরটায় ঢুকল। ঘরটা বেশ বড়ো। ফ্রান্সিস ওপরে তাকিয়ে দেখল আকাশ দেখা যাচ্ছে। তারায় ভরা আকাশ। ছাদ বলে কিছু নেই।

ফ্রান্সিস দেখল অনেক যোদ্ধা। শুয়ে বসে আছে। সঙ্গের যোদ্ধাটি ফ্রান্সিসদের বলল– তোমরা এ ঘরে থাকবে। তোমাদের হাত পা বাঁধা হল না। পালাবার চেষ্টা করলে মরবে।

ফ্রান্সিস ঘরটার কোণায় দেয়াল ঘেঁষে বসল। মারিয়া শাঙ্কোও বসল–এখন কী করবে?

–বন্দি জীবন মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখন দেখা যাক বিদ্রোহী নেতা খাতিব এসে আমাদের কী করে। এখন কিছু করা যাবে না। ফ্রান্সিস বলল।

প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে যোদ্ধাদের মধ্যে তিন-চারজন যোদ্ধা এসে দাঁড়াল। যোদ্ধারা সব উঠে বসল। আগত যোদ্ধাদের হাতে বড়ো বড়ো কাঁচা পাতা। একজন যোদ্ধা সকলের সামনে পাতা পেতে দিল। যোদ্ধাকে অন্য যোদ্ধাটি একটা বড়ো ঝুড়ি থেকে প্রত্যেককে চারটে করে কাটা রুটি দিল। অন্য যোদ্ধাটি কাঠের বড়ো পাত্র থেকে পাখির মাংস ঝোল দিতে লাগল।

খাওয়া শুরু হল। ফ্রান্সিস বরাবর যা বলে তাই বলল–পেটপুরে খাও। ভালো না লাগলেও খাও। এতেই শরীর ভালো থাকবে। সব সময় নিজেকে তৈরি রাখো।

খাওয়াদাওয়া শেষ হল। একজন যোদ্ধা এঁটো পাতাগুলো নিয়ে গেল। ঘরের বাঁ কোণায় জলের জালাটা থেকে কাঠের গ্লাস দিয়ে জল তুলে তুলে খেল সবাই।

একজন দু’জন করে আস্তে আস্তে সবাই শুয়ে পড়ল। মেঝেয় লম্বা লম্বা শুকনো ঘাস পাতা। তার ওপরে শোয়া।

ফ্রান্সিস ঘুমোতে পারল না। অনেক চিন্তা মাথায়। কী করে অক্ষত শরীরে পালানো যায় তার উপায় ভাবতে লাগল। ফ্রান্সিস দু’হাতের তেলোতে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকাল। ঘরটার ছাদ বলে তো কিছু নেই। কালো আকাশে অজস্র তারার ভিড়। সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফ্রান্সিসের দেশের বাড়ির কথা মনে পড়ল। কতদূরে সেই দেশ বাড়ি। পাখির পালকে তৈরি শুভ্র বিছানা। নরম বালিশ। আঃ কী আরাম। ফ্রান্সিস মাথা ঝাঁকিয়ে ফিরে উঠে বসল। মারিয়া তখনও ঘুমোয় নি। মারিয়াও উঠে বসল। বলল–কী হল ফ্রান্সিস? কিছু না-আজেবাজে চিন্তা। ফ্রান্সিস বলল।

–আর রাত করো না। ঘুমিয়ে পড়ো। মারিয়া বলল।

 ফ্রান্সিস শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করলে। ততক্ষণে মারিয়াও শুয়ে পড়েছে। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন ফ্রান্সিসরা সকালের খাবার খেল। দুপুরেও খেল। সন্ধে হল। রাত নামল। রাত বাড়তে লাগল।

বেশ রাতে বিদ্রোহী নেতা খাতিব এলো। সঙ্গে আট-দশজন যোদ্ধা। ওরা পাশের ঘরটায় গিয়ে বসল।

তখনই দলপতির সেই যোদ্ধাটি ফ্রান্সিসের কাছে এলো। বলল–খাতিব তোমাদের ডাকছেন।

–বেশ চলো। ফ্রান্সিস উঠে বসল। শাঙ্কো বলল–তুমি একা যাবে?

–হা হা–তোমরা ঘুমোও। ফ্রান্সিস বলল।

ঘরের পাথরের দেয়ালের খাঁজে মশাল জ্বলছে। সেই আলোয় দেখে দেখে ফ্রান্সিস পাশের ঘরে এলো। দলনেতা ওকে খাতিবের কাছে নিয়ে এলো। খাতিব ফ্রান্সিসকে বসতে ইঙ্গিত করল। ফ্রান্সিস বসল। খাতিব বলল–শুনলাম তোমরা ভাইকিং?

–হ্যাঁ দেশে দেশে জাহাজে চড়ে ঘুরে বেড়াই। কোনো ঝুট ঝামেলায় আমরা থাকি না। আমরা কাউকে অবিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি সব মানুষই আমাদের বন্ধু।

–শুধু জাহাজে ঘুরে বেড়াও? খাতিব বলল।

–হ্যাঁ। তবে একটা কাজ করি। যদি কোনো দেশে দ্বীপে গুপ্তধন থাকে বুদ্ধি খাঁটিয়ে তা উদ্ধার করি। ফ্রান্সিস বলল।

তারপর খুঁজে পাওয়া গুপ্তধন নিয়ে পালিয়ে যাও। খাতিব বলল।

ফ্রান্সিস একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল–আপনার মতো অনেকেই আমাদের এরকম সন্দেহ করেছে। আমরা কিছু মনে করিনি। নিঃস্বার্থভাবে আমরা পরিশ্রম করে বুদ্ধি খাঁটিয়ে গুপ্ত ধনভাণ্ডার উদ্ধার করি আর যাদের মধ্যে গুপ্তধন প্রাপ্য তাদের হাতেই দিই। এটা মানুষ সহজে বিশ্বাস করে না। তারা আমাদের অবিশ্বাস করে। তাই বলে আমরা কোনো মানুষকে বিশ্বাস করব না? আমরা সবাইকে বিশ্বাস করি। এতে কিন্তু আমরা কখনো খুব ঠকি নি।

–ঠিক আছে–খাতিব বলল–তোমার সঙ্গে কারা আছে?

–আমার একজন বন্ধু আর আমাদের দেশের রাজকুমারী। ফ্রান্সিস বলল।

–সে কি! রাজকুমারী রাজপ্রাসাদের আরাম আয়েস ছেড়ে তোমাদের সঙ্গে এলেন কেন? খাতিব জিজ্ঞেস করল।

–আমি রাজকুমারীর স্বামী। আমি যেখানে যাবো তিনিও সেখানে যাবেন। যত কষ্টকর জীবনই হোক আমি তা মেনে নি, বলে উনিও মেনে নেন। ফ্রান্সিস বলল।

–হুঁ। তোমার সঙ্গী আর কেউ নেই? খাতিব জিজ্ঞেস করল।

–আছে। আমার পঁচিশজন বন্ধু এখানকার কাদিজ জাহাজঘাটায় আমাদের জাহাজে আছে। ফ্রান্সিস বলল।

তুমি যা বললে সেসব সত্যি কিনা–আমরা খোঁজ করে দেখবো। ততদিন এখানেই

বন্দি থাকতে হবে। খাতিব বলল।

এবার ফ্রান্সিস বলল–আমার সঙ্গে রাজকুমারী রয়েছেন। তিনি এই বন্দিদশায় অসুস্থ হয়ে পড়বেন। রাজকুমারীকে অন্য কোথাও রাখুন।

–দেখছি সেসব। এখন তোমরা এখানেই থাকবে। খাতিব বলল।

 ফ্রান্সিস শাঙ্কোদের কাছে চলে এলো।

শাঙ্কো বলল–ফ্রান্সিস–কী কথা হল?

–আমাদের এখন মুক্তি দেওয়া হবে না। এখানেই বন্দি হয়ে থাকতে হবে। আমাদের খোঁজখবর নিয়ে তবে আমাদের মুক্তি দেবে। ফ্রান্সিস বলল।

–তাহলে তো এখন এই বন্দি জীবনই চলবে। শাঙ্কো বলল।

–হ। মারিয়াকে অন্য কোথাও রাখার জন্যে অনুরোধ করলাম। খাতিব অনুরোধ রাখল না। মারিয়াকে এভাবেই থাকতে হবে। ফ্রান্সিস বলল।

সন্ধেবেলা খাতিব এলো। খাতিব ফ্রান্সিসদের পাশের ঘরে রইল।

রাত গম্ভীর হল। সবাই ঘুমিয়ে আছে। ফ্রান্সিসও ঘুমিয়ে পড়েছে। নিঃশব্দ চারদিক। শুধু কখনও কখনও রাতজাগা পাখির ডাক। হঠাৎ প্রচণ্ড চিৎকার স্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে গেল। আলতোয়াইফের সৈন্যরা খোলা দরজা দিয়ে চিৎকার করতে করতে ঢুকল। নিরস্ত্র খাতিবের যোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। খাতিবের যোদ্ধারা ঘরের কোণায় জড়ো করে রাখা তলোয়ার বর্শা নেবার জন্যে ছুটে গেল। তারা অনেকেই অস্ত্রাঘাতে মেঝেয় পড়ে গেল। দু’চারজন কোনোরকমে তলোয়ার বর্শা হাতে নিয়ে লড়াইয়ে নামল।

ফ্রান্সিস বুঝল এই লড়াইয়ের সময়ই পালানো ভালো। কারো নজরে পড়বে না। ফ্রান্সিস শাঙ্কো আর মারিয়াকে বলল–পাশের ঘরে ঢুকে পালাতে হবে। চলো।

অন্ধকারে ওরা পাশের ঘরে এলো। সেখানেও লড়াই চলছে। ফ্রান্সিসরা ঘরটা থেকে ভাঙা দরজা পার হয়ে ছুটল। কিন্তু কিছুটা গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়তে হল। খোলা তলোয়ার হাতে আলতোয়াইফের সৈন্যরা এগিয়ে এলো। বোঝা গেল সারা বাড়িটাই ওরা ঘিরে ফেলেছে।

একটা গাছের তলায় ফ্রান্সিসদের আনা হল। দেখা গেল আগে থেকেই কয়েকজন। খাতিবের যোদ্ধাকে ওখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফ্রান্সিসদেরও হাত বেঁধে ওখানে রাখা হল। আলতোয়াইফের সৈন্যরা মারিয়ার হাত বাঁধতে গিয়ে বেশ আশ্চর্য হল। মেয়েটি কে? ওখানে এলো কী করে? ওরা মারিয়াকে কিছু বলল না। হাতও বাঁধল না।

ততক্ষণে লড়াই শেষ। বিদ্রোহী খাতিবের যোদ্ধারা হেরে গেল। অনেক যোদ্ধা মারা গেল। অনেকে বন্দি হল। খাতিবও বন্দি হল।

ভোর হল। সূর্য উঠল। বনের ডালপাতার ফঁক দিয়ে উজ্জ্বল রোদের আকাশ দেখা গেল।

আলতোয়াইফের সৈন্যরা বন্দিদের সারি দিয়ে দাঁড় করাল। তারপর হুকুম দিল– এবার চলো।

বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বন্দিরা চলল। পেছনে সৈন্যরা। সৈন্যদের দলপতি গলা চড়িয়ে বলে উঠল–কেউ পালাবার চেষ্টা করবে না। পালাতে গেলে মরবে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে বন্দিরা বনের বাইরে এলো। দেখল আলতোয়াইফের ছোটো দুর্গটার কাছে এলো।

পরিখা পার হয়ে বন্দিদের দুর্গের বিরাট কাঠের দরজার সামনে আনা হল। ঘর ঘর শব্দে দরজা খুলে গেল। বন্দিরা ঢুকল। পেছনে সৈন্যরা।

দুটো টানা পাথরের ঘর। বোঝাই গেল কয়েদখানা। কাছে আসতে দেখা গেল কয়েকজন সৈন্য পাহারা দিচ্ছে। তলোয়ার খোলা নয়। কোষবদ্ধ।