রুপোর খাঁচা
শুনেছি, যেসব পাখি খাঁচায় থাকে তাদের খুব কষ্ট। আমি একজন খাঁচায়-থাকা টিয়াপাখি। নিয়মমতো আমারও কষ্ট পাওয়ার কথা। আমি কিন্তু ভীষণ আনন্দে আছি। যত দিন যাচ্ছে সেই আনন্দ বাড়ছে। উলটে আজকাল খাঁচার বাইরের পাখিদের জন্যই আমার দুঃখ হয়। মনে হয়, ওরা যদি আমার এখানে কয়েকটা দিন থেকে যেত, তা হলে ভাল হত। খাঁচার পাখি সম্পর্কে ওদের অনেক ভুল ধারণা আছে। এখানে দুটো দিন থাকলে সেই ভুল ধারণা ভেঙে যেত। তবে আসার সঙ্গে সঙ্গে বলে দিতাম, কিছু মনে করবেন না ভাই, বেশিদিন কিন্তু থাকা চলবে না। এ-বাড়ির ছোট ছেলের হাফ-ইয়ারলি এগ্জাম চলছে। পরীক্ষার সময় বাইরের লোকের ভিড় ঠিক নয়। দু’দিনের জন্য এসেছেন ভাই, দু’দিনই ফাইনাল। তারপর চলে যাবেন। পরীক্ষার কথাটা বানিয়ে বলতে হবে। তা ছাড়া উপায় নেই। অনেকের স্বভাব আছে, একবার যত্নআত্তি পেলে সহজে নড়তে চায় না। মানুষের সঙ্গে থেকে থেকে আমার একটা বিচ্ছিরি অভ্যেস হয়ে গেছে। পাখিদের সঙ্গে আর বেশিক্ষণ থাকবার কথা ভাবতে পারি না।
এটা একটা চমৎকার বাড়ি। প্রথমদিন থেকেই এ-বাড়িতে আমার দারুণ খাতির। সবাই ভালবাসছে। শুধু ভালবাসছে বললে কম বলা হয়, বাড়াবাড়ি রকমের ভালবাসছে। এত ভালবাসায় আমার লজ্জা করে।
আমাকে আনা হয়েছিল একটা ছোট্ট তারের খাঁচার ভিতর ঢুকিয়ে। খাঁচা তো নয়, একটা নরক যেন। অত্যন্ত খারাপ জিনিস! নড়াচড়ার জায়গা নেই। এমনকী, ভাল করে মাথা তুলে যে বলব, সে-পথও বন্ধ। আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম, বাপ রে! এর মধ্যে থাকতে হলে তো আমি গেছি। তারের খাঁচা বারান্দায় ঝুলিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ভেতর থেকে সবাই ছুটে এল। ঘিরে ফেলল আমায়। দেখবার জন্য সে কী হুড়োহুড়ি! সে কী ঠেলাঠেলি! টিয়াপাখি নয়, বাড়িতে যেন ফিল্মস্টার এসেছে। এখনই কেউ খাতা বাড়িয়ে বলবে, ‘একটা অটোগ্রাফ ম্যাডাম।’
আমি কিন্তু ঘাড় গোঁজ করে বসে রইলাম। প্রতিজ্ঞা করলাম, এরা যদি এই নরক-খাঁচা না বদলায় তা হলে প্রয়োজনে অনশনে পর্যন্ত যাব। ওমা! বিকেলেই দেখি একটা দারুণ খাঁচা এসে হাজির। ট্যাক্সি থেকে খাঁচাটা নামানোর পর আড় চোখে তাকিয়ে দেখি জিনিসটা যেমন বড়, তেমনই ঝকঝকে। লোহার খাঁচা বলে মনেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে রুপোর খাঁচা। ভেতরে একটা সোনালি দাঁড়। সোনার নাকি? কে জানে হতেও পারে। সেটা আবার অল্প অল্প দুলছে। ছি ছি, এ খুব বাড়াবাড়ি। এ না করলেও হত।
বড় খাঁচায় ঢোকানোর পর আমি ভাল করে দেখে নিলাম সবকিছু। না, ভেতরকার ব্যবস্থা চমৎকার। জলের বাটি, খাওয়ার বাটি, ঠোঁট পরিষ্কারের জায়গা সব আলাদা করে সাজানো। শুধু দোলনাটা একটু আটকে আটকে যাচ্ছে। অল্প তেল দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
পোষা কুকুরের নাম হয়। পোষ পাখির কোনও নাম হয় না। এরা কিন্তু আমার একটা নাম দিয়েছে। নিধি। নিধি নামটা আমার খুব পছন্দ না হলেও মোটামুটি পছন্দ হয়েছে। শুধু নিধি কেমন যেন ডাকনামের মতো শোনাচ্ছে। এ-বাড়ির খুকির ভাল নাম ঐন্দ্রিলা। খুকির দাদার ডাকনাম বিল্টু আর ভাল নাম সুরঞ্জন। তেমনই নিধি নামটা থাকুক ক্ষতি নেই, তবে এর সঙ্গে একটা ভাল নামও থাকা উচিত। শুধু ডাকনাম থাকবে, ভাল নাম থাকবে না— এটা ঠিক নয়। দেখা যাক, এরা কী করে। এরা লোক যেমন ভাল দেখছি, তাতে মনে হয় একটা কিছু করবে।
আমি অল্পদিনের মধ্যে নিজের নাম বলতে শিখে ফেলেছি। খুকি যখন খাঁচার সামনে এসে বলে, তোমার নাম কী সোনা?
আমি বলি, নিঢি।
নিঢি নয়, বলো নিধি।
আমি কানখাড়া করে শুনি। আবার বলি, নিঢি।
আসলে আমার বাংলা উচ্চারণে একটা সমস্যা হচ্ছে। সেই তুলনায় ইংরেজি বলা দেখছি সহজ। সকালে কর্তাবাবু ড্রেসিং গাউন পরে বারান্দায় আসেন। বেতের চেয়ারে বসে চা খান। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, গুড মর্নিং নিধি।
আমি হাসতে পারি না। কিন্তু স্পষ্ট বলতে পারি, মর্নিং।
আমার কথা শুনে কর্তাবাবু অবাক হন। বলেন, ভেরি গুড।
আমি বলি, থ্যাঙ্কিউ।
কর্তাবাবু আবার অবাক হন। তিনি তখন চেয়ার ছেড়ে উঠে খাঁচার কাছে চলে আসেন। বলেন, হাউ আর ইউ?
আমি গম্ভীর গলায় বলি, ফাইন।
কর্তাবাবু তখন ইংরেজি ভুলে গিয়ে বাংলায় বলে ওঠেন, দারুণ! দুর্দান্ত।
আমি আরও ইংরেজি বলতে পারি। ‘হ্যালো’ বলা তো জলভাত। এ-বাড়ির মিচকে বেড়ালটাকে দেখলেও মাঝেমধ্যে ‘হ্যালো’ বলি। প্রথম প্রথম সেও থতমত খেয়ে যেত, ইদানীং মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।
ইংরেজি নিয়ে আমার একটু চাপা গর্ব ছিল। কিন্তু গিন্নিমা একদিন বললেন, এটা মোটেই কাজের কথা নয়। নিধি তো ইংরেজি বাড়ির টিয়াপাখি নয়, সে বাঙালি বাড়ির টিয়াপাখি। বাংলা না-বলতে পারাটা ওর পক্ষে যথেষ্ট লজ্জার। আসলে ওর জিভের জড়তা কাটাতে হবে।
কথাটা মিথ্যে নয়। আমার সতি সত্যি একটু লজ্জা হতে লাগল। কিন্তু আমি কী করতে পারি? জিভের জড়তা তো আমার ইচ্ছে করে তৈরি নয়। সেই জড়তা কী করে কাটাতে হয় তাও আমি জানি না। আমাকে অবশ্য কিছু করতে হল না। বাড়ির লোকেরাই ব্যবস্থা নিল। জিভের জড়তা কাটানোর দায়িত্ব দেওয়া হল শ্রীমান বিল্টুকে। আগেই বলেছি, বিল্টু ছোট খুকির দাদা। সে পড়ে ক্লাস সেভেনে। এতদিন শুনে এসেছি, ক্লাস সেভেনের ছেলেরা অনেকেই অত্যধিক বিচ্ছু প্রকৃতির হয়। তারা নিপুণভাবে যে-কোনও ধরনের পশুপাখির ওপর অত্যাচার চালাতে জানে। সেসব অত্যাচারের পদ্ধতিও তারা প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করে। এরা উড়ন্ত কাককে গুলতি মারে। ছুটন্ত বেড়ালছানার লেজে ইট বেঁধে দেয়। কালীপটকা ফাটিয়ে ঘুমন্ত কুকুরের পিলে চমকে দেয়। বিল্টুর ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই সাবধান ছিলাম। কিন্তু ঘটনা দেখলাম অন্যরকম। বিল্টু একজন অপূর্ব ছেলে। আমাকে বাংলা শেখানোর কাজে সে যে কী খাটাখাটি শুরু করছে তা ভাবা যায় না! প্রতিদিন বিকেলে খেলা বাদ দিয়ে সে মোড়া এনে খাঁচার পাশে বসে। আমাকে মুখস্থ করাবার জন্য সে বেছেছে একটা সুন্দর কবিতা। রবি ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’। সে পড়ছে, আমি শুনছি। আমি শুনছি, সে পড়ছে। কাজ চলছে। আনন্দের কথা হল, সাত দিনের মাথায় আমি কবিতার প্রথম লাইন বলতে পারছি। কোনও জড়তা নেই। উচ্চারণ একদম স্পষ্ট। বাড়ির সকলে তো দারুণ খুশি। আত্মীয় টাত্মীয় কেউ বেড়াতে এলেই হল। বিল্টু তাকে টানতে টানতে খাঁচার কাছে নিয়ে আসছে। বলছে, ‘নিধি, একটা আবৃত্তি কর তো।’ আমি খাঁচায় ঘুরে ঘুরে বলতে থাকি, ‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে…।’
আমার আবৃত্তি শুনে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। এ-বাড়ির লোকদের আনন্দ দেখলে আমারও আনন্দ হয়। বুক ভরে যায় গর্বে। মনে হয়, আমি আর টিয়াপাখি নেই, আমি এ-বাড়ির একজন লোক হয়ে গেছি।
আমার কথা শেখা নিয়ে আর একটা মজার ঘটনা বলি। মেজকাকা মানুষটি মজার। একদিন খুকি আর বিল্টুকে ডেকে বললেন, নিধি আবৃত্তি করতে শিখেছে এটা খুবই ভাল কথা। মনে হচ্ছে শিগগিরই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানও গাইবে। অ্যানিমাল প্ল্যানেট চ্যানেলে ওর ইন্টারভিউও হবে। সেখানে ঘাড় নেড়ে বলবে, ‘আমি বিলঠু আর খুকির অবসান জীবনে ভুলঠে পারব ঠা’।
খুকি কঁদোকাঁদো মুখে বলল, মেজকা ভাল হবে না বলছি। নিধিকে নিয়ে মজা করবে না।
মেজকাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি খুবই সিরিয়াস। আর সেই কারণে বলছি, শুধু কবিতা গান নিয়ে থাকলে তো চলবে না। বেশিদিন এরকম করলে ও নিজেই হয়তো দেখবি একদিন গানটান লিখতে বসে গেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিধিকে কিছু কাজের মধ্যেও ইনভল্ভ করব। ও এ-বাড়িতে পাহারার কাজ করবে।
বিল্টু বলল, সে কী! নিধি কি কুকুর, যে চোর এলে ঘেউ ঘেউ করবে?
মেজকাকা হেসে বললেন, দেখ না কী করি। আমি ওর কথা বলার অসামান্য ক্ষমতাকে কেমন কাজে লাগাই সেটা একবার দেখ।
মেজকাকার কথা শুনে আমি তো ভয়ে মরি। ভয়ংকর কিছু করতে হবে নাকি আমায়?
ভয়ংকর কিছুই না। কাজ অতি সোজা। মেজকাকা আমাকে ট্রেনিং দিলেন। এক সপ্তাহের শর্ট কোর্স ট্রেনিং। দিনের বেলায় গ্রিলের দরজার ওপাশে অচেনা কাউকে দেখলেই চেঁচাতে হবে ‘চোর, চোর’। রাতের বেলা অচেনা কাউকে দেখলে সেই একই রকম চিৎকার। শুধু কথা বদলে যাবে। তখন বলতে হবে ‘ডাকাত, ডাকাত।’ ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। তা ছাড়া, এ-বাড়ির জন্য কিছু কাজ করতে পারব ভেবে ভাল লাগল। শুয়ে-বসে শুধু খাওয়াদাওয়া তো ভাল দেখায় না। ক’টা দিন চেনা-অচেনা, দিন-রাত, চোর-ডাকাত, ব্যাপারটা গুলিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি মোটেই ঘাবড়াচ্ছি না। প্রথমদিকে তো এরকম হবেই। গত শনিবার রাতে গুলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।
শনিবারের ঘটনা এরকম:
রাত অনেক। দরজায় তালাটালা দিয়ে শুয়ে পড়েছে সবাই। আমিও ঝিমুচ্ছি। হঠাৎ দেখি গ্রিলের দরজার ওপাশে দাড়িওলা একটা লোক। অচেনা মানুষটার হাতে একটা ঢাউস সুটকেস। মাথায় টুপি। আমি সময় নষ্ট না-করে চেঁচিয়ে উঠলাম, ডাকাত, ডাকাত। মজার কথা, আমার চিৎকারে কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘ডাকাত’ একেবারে পগার পার!
সকালে শুনলাম, দাড়িওলা মানুষটা নাকি বিল্টুর মামা। তিনি থাকেন দুবাই। হঠাৎ ছুটি পেয়ে এসেছেন। বিদেশ থেকে এসে নিজের বোনের বাড়িতে ঢোকার সময় ‘ডাকাত, ডাকাত’ শোনা একটা অপমানের ঘটনা। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে মামা গেটের ওপাশ থেকেই আগরপাড়ায় এক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সেই বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছে দেখেন তালা। সেখান থেকে হোটেল। সকাল থেকে হোটেলে টেলিফোনে অনেক সাধ্য-সাধনা চলছে। বারবার ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে নাকি। তবু উনি এ-বাড়িতে আর আসতে রাজি হচ্ছেন না। আমার আশঙ্কা, পাহারাদারের চাকরি থেকে শিগ্গিরই বরখাস্ত হতে চলেছি আমি।
বড়দা হলেন সত্যিকারের বিচক্ষণ মানুষ। সকলের ভালমন্দ নিয়ে তাঁর খুবই চিন্তা। সেদিন একটা সরু চেন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
বিল্টু বলল, চেন কী হবে জেঠু?
বড়দা বললেন, কী হবে মানে? অপহরণের ঘটনা কীরকম বেড়ে গেছে কাগজে পড়ছ না?
সরু চেন আমার পায়ে লাগিয়ে দাঁড়ের সঙ্গে নিজের হাতে আটকে দিলেন বড়দা। এখন খাঁচা ভেঙেও আর কেউ নিয়ে যেতে পারবে না আমাকে। অপহরণের কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এখন আমি যে কী পরিমাণ নিশ্চিন্ত হয়েছি তা বলার নয়। বড়দার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নত হয়ে গেছে। এই ঋণ আমি কি কোনওদিনও মেটাতে পারব? মনে হয় না পারব। আমি নড়িচড়ি, দোল খাই, চেনে মিষ্টি শব্দ হয়। রিনিঝিনি রিনিঝিনি।
খাওয়ার কথা বলে আজকের মতো শেষ করব।
আমার খাবারের দায়িত্ব গিন্নিমা নিজের হাতে রেখেছেন। সে একেবারে এলাহি কাণ্ড। ছোলা, চানা, লাল লঙ্কা তো আছেই, রবিবার করে দুধ-ভাত। এসবের সঙ্গে প্রতিদিন দুপুরে একটা করে পাকা পেয়ারা। ছোট সাইজ নয়, বড় সাইজ। গিন্নিমা বলেন, খাওয়ার পর একটা ফ্রুট্স দরকার। ভিটামিনটা তে চাই।
হলুদ জলে স্নান করে আর ভাল ভাল খেয়ে আমার জেল্লা নাকি অনেক বেড়ে গেছে। আমি অবশ্য এখনও দেখিনি। একটা আয়না পেলে দেখতাম।
আজকাল মনে হয়, একবার বাড়ি ঘুরে এলে মন্দ হয় না। এই চমৎকার বাড়ির কথা মাকে সব জানানো উচিত। আমাকে নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তা কম ছিল না। মেয়ের সুখের কথা শুনলে মা আমার খুব খুশি হবে। হয়তো আনন্দে কেঁদে উঠবে। হয়তো কেন, আমার তো মনে হচ্ছে নিশ্চয় কাঁদবে। তখন মাকে জড়িয়ে ধরে বলব, ‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।’ মা শুনে চমকে উঠবে। হাসতে হাসতে চোখের জল মুছবে। চোখ আবার জলে ভরে যাবে। বলবে, ‘আবার বল।’ আমি বলব, ‘উঁহুঁ, আর নয়।’ বাবার সঙ্গেও দেখা হবে। আহা, বয়স হয়েছে। গোলমাল শুরু হয়েছে শরীরে। ভোরের দিকে কাশি হয়। বুকে একটু গরম তেল মালিশ করলে ভাল। গরম তেলে কাশি কমে। কর্তাবাবুকে কতবার দেখেছি, তেল মালিশ করছেন। মাকে কর্তাবাবুর কথাটা বলব’খন। বাবা আর ক’টাদিনই বা? মরবার আগে অন্তত জেনে যাক, মেয়েটা তার ভাল আছে। খুব ভাল আছে। ভাইটাকে কি বাসায় পাব? সারাদিন কোথায় যে টই টই করে ছেলেটা। ভাইয়ের জন্য একটা কিছু নিয়ে যেতে হবে। এতদিন পরে দিদি খালি হাতে এসেছে, হয়তো কথাই বলবে না। ঠিক আছে, একটা পেয়ারা নিয়েই যাব। বলব, ‘একবারে সবটা খাবি না। আদ্দেকটা এখন খা, বাকিটা কাল খাবি। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগাচ্ছিস না তো! যদি শুনি ভিজেছিস তা হলে কিন্তু চড় খাবি।’
তবে হ্যাঁ, ওখানে বেশি সময়ের জন্য থাকতে পারব না আমি। এই কোনও ছুটিছাটার দিনে সকাল সকাল গেলাম, সন্ধের আগেই চলে এলাম। মা বলবে, ‘থাক না, থাক না বাবা একটা দিন।’
আমি গম্ভীরভাবে বলব, ‘না মা, তা হয় না।’