রাজপাট – ৮

কার্তিক মাসেতে আইব 
কার্তিক সমান বর। 
মন নাই সে ওঠে বাপের 
আইল যত ঘর ॥ 

ছেলেপুলেরা পথে বেরিয়ে পড়েছে। ভৈরবের ওপর থেকে হালকা শীত জড়ানো বাতাস বইছে। এই বাতাস গায়ে মেখে ছেলেপুলেরা ঘুরে বেড়াবে বেলা পর্যন্ত। চারটি মুড়ি কিংবা পান্তাভাত পেটে ঠেসে বেরিয়েছে। যতক্ষণ পেটে ফের তাত না লাগবে ততক্ষণ মাঠে-ঘাটে ঘোরা যায়। মাসুদার মেয়েটি আজ এই দলে যায়নি। মাসুদা উঠোন ঝাঁট দিচ্ছে আর সে ঘুরঘুর করছে পেছন পেছন। ন্যাংটো মেয়ে। বয়স চার-পাঁচ। নাক দিয়ে পোঁটা পড়ছে। এই সকালেই শরীরে মেখেছে কাদামাটি। গিনগিনে কান্না মিশিয়ে সে মায়ের আঁচল ধরে কিছু-বা আবদার করছিল। মাসুদার শোনার সময় নেই। সংসারের সমস্ত কাজ তাকে সারতে হয় একা-একাই। সে-কাজের কোনও শেষ নেই। তার স্বামী ইদরিশ আলি এক বেকাজের বেখেয়ালের মানুষ। যখন ইচ্ছে হল, কাজে কামে মন দিল। জন খাটল এর-ওর জমিতে। কাজে তার নামডাক আছে। সে ইট পোড়াতে জানে। ঘর ছাইতে জানে। নৌকার হাল ধরতে জানে। জমিতে লাঙল-বলদ চালিত করে চমৎকার। কিন্তু যখন তার কাজে মন লাগে না, ভৈরবের জলে খাপলা ফেলে মাছ ধরতে লাগিয়ে দেয় সারাদিন। টিনের ডোঙায় চড়ে ভেসে ভেসে বেড়ায়। বর্ষার ভৈরবে খাপলায় কিছু মাছ ওঠে ঠিকই, কিন্তু তাই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ চলে না। দু-চার ঘর জেলে যারা আছে গাঁয়ে, তারা নৌকা নিয়ে ছোট ভৈরবের বুক বেয়ে চলে যায় জলঙ্গীতে। সেও বর্ষার মরশুমেই। শীতের ভৈরবে নৌকা চলবে না। তখন তার কোথাও বুক সমান জল, কোথাও লুকনো চরা। ওপরের হালকা জলের আস্তরণেও অনেকসময় গভীরতার ভ্রম হয় আর নৌকা আটকে যায়। নদীর পাড়ও ভাঙে এইসময়। বর্ষায় জল মাটি কুরে কুরে ঢুকে যায় অনেকখানি। মাটির বুক ভিজে নরম হয়ে যায়। ক্ষয় লাগে। জলের সঙ্গে একটু একটু করে সরে আসা মাটি ওপরের আস্তরণের তলায় তৈরি করে গোপন গহ্বর। শীতে জল সরে গেলেই সেই গহ্বরের ওপরকার মাটি ধসে পড়ে আর পাড় ভাঙতে ভাঙতে যায়। 

আজ যেখানে বহেরা গ্রাম, লোকে বলে সেখানে আগে ছিল তেকোনারই সীমা। তখন ছোট ভৈরব, বড় ভৈরবের নিকটতর ছিল। ক্রমে ছোট ভৈরব পশ্চিমে সরতে শুরু করল আর তেকোনা গ্রাম ভাঙতে ভাঙতে, সিকস্তি নিয়ে, ছোট হতে থাকল। এই সংঘটন থেমে নেই। চলেছে। গত দশ পনেরো বছরে তেকোনা গ্রামের অন্তত বিশ ঘর চাষি ভৈরবের আগ্রাসনে ভূমি হারিয়েছে। অল্প-স্বল্প জমি নিয়েও যারা স্বনির্ভর ছিল তারা দিনমজুর হয়েছে। যারা ছিল অনেক বেশি জমির হকদার, তারা মাঝারি চাষিতে পরিণত হয়েছে। আর সকলেই অপেক্ষা করে আছে উলটোদিকে গড়ে উঠতে থাকা উর্বর পয়োস্তির জন্য। নদীর অপর পার বহেরা গ্রামের হলেও যারা ভূমি হারিয়েছে, নতুন ভূমি গঠিত হলে তার ওপর তাদেরই অগ্রাধিকার। কিন্তু এই অধিকার অর্জন করা সহজ কথা নয়। চরের দখল নিয়ে খুনোখুনি মারামারি হবেই। 

ইদরিশের কোনওকালেই জমি ছিল না। সে ভূমিহীন হয়েই জন্মেছে। ভূমিহীন অবস্থাতেই কাটিয়ে দিচ্ছে কাল। নিজস্ব ভূমির জন্য তার কোনও আকাঙ্ক্ষাও নেই। তার পছন্দ জল। সে বলে—আমরা দাফালি। মাছ ধরা আমাদের কাজ। কাজ মাঝিগিরি। শক্ত মাটিতে আমাদের ঠাঁই নেই। 

মাসুদা মুখ ঝামটা দেয় তখন—তা মাঝিগিরি করো অন্যের নৌকায়। ঠেকাচ্ছে কে? সেও গরজ দেখি না। শুধু জলে-জলে ঘোরা আর গান বাঁধা। গান দিয়ে কি পেট ভরে? আমি একদিন চলে যাব সব ফেলে। এই সংসার আর টানতে পারি না বাপু। 

ইদরিশ আলি বসে বসে মাসুদার তড়পানি শোনে আর বলে—যাবে কোথা? মা-বাপ তো নেই। বউদি তোমাকে রাখবে বলেছে? 

মাসুদার বাড়ির পাশেই থাকে তার দাদা-বউদি। দাদা ইদরিশের মতো খামখেয়ালি নয়। বেশ গোছানো লোক। সারা বছর কাজ করে। সব কাজে তারও হাত পাকা। নিজের জমি-জিরেত নেই যাদের, তাদের দশরকম কাজ না জানলে চলবে কেন? অন্যের জমিতে যখন জন খাটার, খাটে। কখনও ইট গড়ে দেয়। কখনও ঘর তুলে দেয়। রাজমিস্ত্রির কাজও সে জানে মন্দ না। কাজ করতে চায় বলেই কাজ তার কাছে আপনা হতে আসে। সারা বছর পরিশ্রম করেই দারিদ্রের সংসারকে সে করে রাখতে সক্ষম হয় শ্রীমণ্ডিত। গায়ে গায়ে বাড়ি তাদের। কিন্তু জীবন-যাপনে বড়ই অমিল। মাসুদার যেখানে হাঁড়িই চড়ে না কোনও কোনওদিন, সেখানে তার দাদার বাড়িতে নিত্য দু’বেলা ভাত হয়। 

মাসুদার কপালের সঙ্গে অন্য কারও কপালেরই কোনও তুলনা চলে না কারণ ইদরিশ শিল্পী মানুষ। মাঝে মাঝে সে ঘর সংসার ফেলে পঞ্চরসের গান গাইতে চলে যায়। ফেরে কখনও দশ দিন, কখনও পনেরো দিন পরে। সেইসময় কোনও আয়-উপার্জন থাকে না। মেয়ে নিয়ে বড় কষ্টে পড়ে মাসুদা। সে তখন তার বউদি আমিনার কাছে হাত পাততে যায়। এ কাজ করতে তার মানে লাগে। মন দুঃখে ভরে যায়। কিন্তু ছোট মেয়েটির ক্ষুধা তাকে তাড়িত করে। এমনকী আপন ক্ষুধাও। একবেলা না খেতে পেলেই সারা পেট জুড়ে বিষের কামড় তাকে স্থির থাকতে দেয় না। পুরো একদিন উপবাস হলেই সে পায়ে পায়ে আমিনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তার মলিন বিবর্ণ শাড়ি, ছেঁড়া আঁচলের শতেক ফুটো-ফাটা, তার দীন চোখ দেখলেই আমিনার মুখ শক্ত হয়ে যায়। মাসুদা হয়তো আমিনার উঠোন ঝাঁট দিয়ে দেয়, হয়তো জড়ো করে রাখা গোবর তুলে ঘুঁটে দিয়ে দেয়। আমিনার মেজাজ ভাল থাকলে বলে—কটা উকুন বেছে দে মাসুদা। 

মাসুদা আমিনার রাশি চুলের মধ্যে থেকে টেনে আনে ধাড়ি উকুন, পুইজাল, লিকি। তারপর গলা নামিয়ে ফিসফিস করে আর্জি পেশ করে—একটু চাল দেবে ভাবি? তোমার মিঞাভাই ফিরলেই শোধ দিয়ে যাব। 

সে যত ফিসফিস করে, আমিনা তত গলা চড়ায় চাল কি মাঙনা নাকি রে মাসুদা! আমার ঘরে অভাবের অন্ত নেই, তোকে কী করে দেব? 

—শোধ করে দেব। 

—ইঃ! শোধ করে দেব! কতবার তো নিলি, শোধ করেছিস? দশবার নিলে একবার শোধ দিস। এই বলে দিলাম মাসুদা, এই শেষবার। আর চাইতে আসবি না। 

—এবার ঠিক শোধ দেব ভাবি। 

—মিঞাভাই না হয় বেখেয়ালে মানুষ কিন্তু তুই গতর খাটাতে পারিস না? অত গুমোর কীসের? 

সে চুপ করে থাকে। আমিনা দুপদাপ পায়ের শব্দ তুলে তাকে দু মুঠো চাল দিতে এলে সে আঁচল পেতে দেয় নিঃশব্দে। আমিনা তণ্ডুলগুলি নিক্ষেপ করে এমন যেন ভিখিরিকে ভিক্ষে দিচ্ছে। সে নতমুখে ফিরে আসে। হাঁড়িতে জল দিয়ে ওই চাল সেদ্ধ করতে করতে কাঁদে। ভাতের ফেন উথলালে তারও হৃদয় উথলে ওঠে বেদনায়। সে ফেন ঝরায় না। ফেন সমেত গলা-গলা ভাত তাদের মা-মেয়ের দু’বেলার খোরাকি হয়ে ওঠে। একটু নুন দিয়ে লঙ্কা দিয়ে ফুটিয়ে নেয় কুমড়ো বা লাউয়ের ডগা। খেতে বসলে জিহ্বা অমৃতের স্বাদ পায়। কিন্তু চোখে পানি আসে। জোলো ভাত অশ্রুতে মিলেমিশে যায়। ইদরিশের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয় তার। অথচ এই লোকটাকে ছেড়ে থাকতেও তার কষ্ট হয়। কত কিছু বলবে বলে ভেবে রাখে, কত কঠিন কথা, কিন্তু মানুষটার মুখ যখন দেখে, অনেকদিন পর, তখন আর কিছু বলতে পারে না। 

মাসুদার সঙ্গে মিলিয়ে ইদরিশ মেয়ের নাম রেখেছে ফরিদা। মেয়েকে সে ভালবাসে প্রাণেরও অধিক। কিন্তু প্রাণের চেয়েও বড় ভালবাসা তাকে চাহিদার বন্ধনে বাঁধতে পারেনি। জীবনের স্থূলত্ব তার অধিক দিন সয় না। 

আমিনা যে মাসুদার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না তা জানে ইদরিশ। দরিদ্র কুটুম বড় বালাই। এ এক চিরসত্য। অতএব এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না সে। ঠাট্টা-ইয়ারকির মধ্যে দিয়ে সইয়ে নিতে চায়। এই বিষয়টি তার কাছে এতই গুরুত্বহীন যে সে ভাব প্রকাশ করে এমন যেন আমিনা মাসুদারই বউদি। তার কেউ নয়। অতএব আমিনা ব্যবহার খারাপ করলে তার দায় শেষ পর্যন্ত মাসুদাতেই বর্তায়। মাথা ঘামায় না সে, কিন্তু সময় বিশেষে খোঁটা দিতেও ছাড়ে না। মাসুদা খোঁটা খেয়ে ক্ষেপে ওঠে। প্রথমে চেঁচায়, তারপর ঘরে গিয়ে পা ছড়িয়ে কাঁদে। আর মাসুদা কাঁদলে ইদরিশ বড় প্রেমিক হয়ে ওঠে তখন। সে মাসুদার কাছ ঘেঁষে বসে তার চুলে হাত বুলোয়। মাসুদা তাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সে তখন মাসুদাকে সাপটে ধরে। বুকে টেনে নেয়। ইদরিশের চ্যাটাল, কঠিন, অর্ধভুক্ত বুকের ওপর মাসুদা ভেজা শালিকের মতো থরথর করে কাঁপে। 

.

আজ সকাল থেকেই মাসুদার মেজাজ খারাপ। বরকত আলির বাড়িতে আজ পঞ্চরসের আসর বসবে। ইদরিশ তাই নিয়ে ব্যস্ত ক’দিন। কোন দল আসবে, কোথায় আসর, কীভাবে মঞ্চ বাঁধা হবে, এ নিয়ে তার ভাবনার সীমা নেই। ঘরে কয়েকদানা চাল ছাড়া কিছু নেই। ইদরিশের যথারীতি সেদিকে ভ্রূক্ষেপও নেই। এই চালে মাসুদা আর তার মেয়ের কোনও মতে একবেলা হতে পারে। 

মাসুদার মাঝে মাঝে কোনও কাজ পাবার ইচ্ছা হয়। আমিনা যেমন বলে, সেরকম গতর খাটিয়ে রোজগার করার ইচ্ছে তার নিজেরও। কিন্তু গ্রামে মেয়েমানুষকে কাজে লাগিয়ে টাকা দেবে এমন পরিবার কটা আছে! বাড়ির মেয়েরা যে-যার কাজ নিজেই সামলায়। মাঠে জন খাটার পুরুষ এত আছে যে মেয়েরা সেখানে ঘেঁষতে পারে না। গ্রামে মুসলমানের মেয়ে-বউ বাইরে খাটতে যায় না। তারা পরদা মানে। কিন্তু দাফালির মেয়ের জন্য অত নিয়ম নেই। যেমন বেদে পরিবারেও নেই কোনও নিয়ম এমন। মাসুদার পড়শি বেদেরা গৃহস্থই হয়ে গেছে একরকম। পুরনো অভ্যাসের মধ্যে আছে কেবল চিকিৎসাজ্ঞান ও সাপ ধরার অভ্যাস। এই সবই তাদের কিছু উপার্জন দেয়। মাসুদার এমন উপার্জনের পথও নেই। চাটুজ্যেবাড়ি ও সেনবাড়ির পালাপার্বণে সে কেবল কিছু মাটির প্রদীপ বানাবার বরাত পায়। এক-একটি প্রদীপ দশ পয়সা। কৃপণ সেন পরিবার এই হিসেবের বাইরে একটি পয়সা দেয় না। কিন্তু চাটুজ্যেবাড়ির নয়াঠাকুমা বড় চমৎকার মানুষ। প্রদীপের দামের চেয়ে তিনি কিছু বেশিই দেন মাসুদাকে। দুর্গাপুজোয় একখানা শাড়ি দিতেও তিনি ভোলেন না। 

প্রদীপ গড়তে বসলে এক আশ্চর্য আনন্দের সন্ধান পায় মাসুদা। এ তার নিজের কাজ। একান্তভাবে নিজের। এ কাজের মধ্যে দিয়ে সে তার নিজের স্বাক্ষর কিছু রাখতে পারে এই দুনিয়ায়। এই কাজের সময় মাসুদার মন ভাল থাকে। 

এবার দীপাবলীতে যে-অর্থ সে উপার্জন করেছিল প্রদীপ বানিয়ে, তাই দিয়ে মেয়ের জন্য মরালীর হাট থেকে একটি জামা কিনেছিল মাসুদা। এখন তার মনে হচ্ছে, সেসময় দুম করে টাকাটা খরচ না করলেই হত। অন্তত কিছু চালও যদি খরিদ করে রাখত সে। আসলে, হাটে গিয়ে জিনিসপত্র ঘেঁটে-বেছে কেনার ওই সুখের জন্য বড় লোভী হয়ে উঠেছিল সে। রোজকার চাল, তেল, নুনের বাইরে কিছু কিনতে যে কী অপরিসীম সুখ—মাসুদা তার স্বাদ ভেতরে নেড়েচেড়ে দেখে। কিন্তু সে দেখা বড় ক্ষণিকের। ওই হীনবল সুখের পাশে প্রবল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নিত্যকার দুঃখ-দারিদ্র্য-যন্ত্রণা। 

মেয়ে গিনগিন করে কাঁদছে, বায়না করছে, মাসুদা কিছুক্ষণ সহ্য করল। তারপর তার রাগ চড়ল। ঝাড়ু ফেলে মেয়েকে ধরে তার পিঠে বসিয়ে দিল দু’ঘা। গাল পাড়ল মেয়ের বাপের উদ্দেশে—বেখেয়ালে মানুষ! সংসারের কাজে তোমার মন নাই। অন্য সব কাজ লম্ফ দিয়ে করে বেড়াও। বাপ হয়েছ, খেতে দিতে পারো না, কেমন পুরুষ তুমি! 

মার খেয়ে ফরিদা চিৎকার করে কাঁদছিল। আর কান্নার তলায় চাপা পড়ে গেছে মাসুদার ক্ষোভ। ক্ষুব্ধ বাক্যগুলি ছিটকে ছিটকে উঠোনে পড়ছে কেবল আর তারই সম্মার্জনী-তাড়িত হয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। 

ময়না বৈষ্ণবী যাচ্ছিল এই পথে। ফরিদার কান্না শুনে দাঁড়াল। মাসুদা নিচু হয়ে ঝাঁট দিচ্ছে। ঘোমটা খসে বেরিয়ে পড়েছে বড় একটি খোঁপা। ময়না বৈষ্ণবী ডাকল তাকে—–অ মাসুদা। মেয়ে তোমার কাঁদে কেন! 

মাসুদা আক্ষেপ করে—আর বোলো না বোস্টুমিদিদি। ঘরের মানুষ উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। আর আমি পড়েছি জ্বালায়। সকাল থেকে শুধু খাই-খাই। দিয়েছি মার। 

ময়না বৈষ্ণবী মাসুদার উঠোনে যায়। কোলে তুলে নেয় ময়লা ফরিদাকে। ফরিদা তখন ফোঁপাচ্ছে। ময়না বৈষ্ণবী বলে —আহা, মারো কেন? ছোট মেয়ে। খেতে তো চাইবেই। কী খাবি মা? মুড়ি খাবি? 

সে তার ঝুলি ফাঁক করে। দু’ মুঠো মুড়ি একটি রেকাবে করে দেয়। ফরিদা লোভী চোখে মুড়িগুলো দেখছিল। মুড়ি তার ভাল লাগে। তার ভাত ভাল লাগে। কামরাঙা, কলা, মুলো, কাঁচা শশা, চিঁড়ে, কাঁঠালের মুচি, তেঁতুল—এই বিশ্বসংসারের সকল খাদ্যই তার প্রিয়। তবু, যতক্ষণ মাসুদার অনুমতি না মিলছে, সে রেকাবে হাত দিল না। ছলোছলো চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাল। মাসুদা মেয়ের মাথায় হাত রাখল-খাও। ফুফু দিচ্ছে। খাও। 

ময়না বৈষ্ণবী সস্নেহে তাকায়। ফরিদার মুড়ি খাওয়ার মধ্যে কোনও তাড়াহুড়ো নেই। উদোম শরীরে থেবড়ে বসে সে মুঠোয় কিছু মুড়ি নিয়ে মুখে দিচ্ছে। তার ছোট মুঠি হতে গড়িয়ে পড়ছে কয়েকখানি। সেগুলি কুড়িয়ে সে রাখছে আবার রেকাবে। 

দাফালিদের এই পরিবারটিকে ভাল লাগে ময়না বৈষ্ণবীর। এদের কাছে সে কোনও ভিক্ষা ও প্রার্থনা করে না। কারণ সে জানে, মাসুদাই চেয়েচিত্তে খায়। বিশেষত, যখন ভরা বর্ষায় ভৈরব উপচে ওঠে, ফুলে-ফেঁপে ভয়ংকর, সারা গ্রামে থই থই করে জল, তখন কাজ-কাম নেই, ফলে কষ্টের সীমা থাকে না। চেয়েচিন্তে চালায় তখন। মাসুদা তখন আমিনার কাছে গেলেও শূন্য হাতে ফিরে আসে এবং বড়বাড়িগুলিতে যায়। চাটুজ্যেবাড়ি, সেনবাড়ি, বরকত আলির বাড়ি। আগে এই দাফালিদের পার্শ্বউপার্জনই ছিল ভিক্ষাবৃত্তি। পুরুষেরা কাজ করত, মেয়েরা ভিক্ষায় বেরুত। ধীরে ধীরে নিয়মিত ভিক্ষার পেশা হতে এরা সরে এসেছে। কিন্তু অবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটাতে পারেনি। সামাজিকভাবেও এরা কিছুটা নিচুশ্রেণীর। আর সকলের মসজিদে ঢোকার অনুমতি মেলে না তাদের। খামারমাটি, জামনাবাদ, শঙ্করপুর ও তরতীপুরে দাফালি আছে বেশ কয়েকঘর। তাদের মসজিদ আলাদা। এখানে এই সামান্য সংখ্যক দাফালির আলাদা মসজিদ গড়ার সামর্থ্য নেই। জীবনযাপনেও এরা খুব যে ধর্মপরায়ণ তা বলা যাবে না। মাঝে মাঝে এরা পাঁচপিরের পুজো করে। গাছতলায় পাঁচটি ঢিবি গড়ে মানত করে। দু’বেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করাই মানত, এই-ই তাদের ধর্ম। তার বেশি কোনও জীবনের কথা ভাবতেও পারে না। এক জীবন ধরা দিলে তবে অন্য জীবনের কল্পনা। দু’বেলা ভাতের জীবন আজও ধরা দিল না তাদের কাছে। 

এরই মধ্যে ইদরিশ যে পঞ্চরসের গান গায়, সেই বরং আশ্চর্যের। ময়না বৈষ্ণবী তাকে বোঝে। গান যার অন্তরে আছে সে না গেয়ে থাকে কী প্রকারে! আসলে ইদরিশ এক খাঁটি শিল্পী। একজন স্বপ্নময় মানুষ। সংসারের সীমায়িত পরিসরে তাকে ধরে না। এবং ভালভাবে ভেবে দেখলে ইদরিশ এক আধুনিক মনের মানুষ—এ বিষয়েও তার কোনও দ্বিমত থাকে না। অতএব সে কেবলই ভুগতে থাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। একজন খাঁটি শিল্পীর মতোই মাঝে মাঝে সে পরিপূর্ণ সংসারী হতে চায়। মাঝে মাঝে এক বেভুল হাওয়া তাকে করে দেয় উদাসী। 

চটের ওপর সুতো দিয়ে বোনা একটি জীর্ণ আসন মাসুদা পেতে দিয়েছিল বৈষ্ণবীকে। ময়না বৈষ্ণবী বসল কিছুক্ষণ। ছোট মাটির ঘরে একখানা ছোট খাট, আলনা ও খানকয়েক বাসন সম্বল করে মাসুদার সংসার। খাটখান বুঝি ইদরিশের বাপের। আলনাটি বিয়ের সময় দিয়েছিল মাসুদার বাড়ি থেকে। বাসনকোসনও কিছু। ব্যস। তাদের সম্পদ আর বাড়েনি। 

বৈষ্ণবীর থেকে অল্প দূরে বসেছে মাসুদা। তার মুখ-চোখ দেখাচ্ছে শুকনো। যেন কাল রাত্তিরে খাওয়া জোটেনি। হয়তো তাকেও একটু মুড়ি দিতে পারলে ভাল হত। কিন্তু ঝুলি হাতড়ালে আর মুঠোখানেকের বেশি বেরুবে না। ময়না বৈষ্ণবী প্রশ্ন করল—কাল খাওনি কিছু? 

মাসুদার চোখ ছল ছল করছে। বলল—মানুষটার কি কিছু খেয়াল থাকে? ঘরে চাল বাড়ন্ত। কাল দুপুরে দু’ মুঠো খেয়েছি। রাতে খেলে আজ উপোস দিতে হত। 

ময়না বৈষ্ণবী চুপ করে থাকল। দারিদ্রের প্রশ্নে সে বড় অসহায়। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, তার জমিজমা মঠকে দান না করে এরকম দরিদ্র কোনও পরিবারকে দিলে তারা অন্তত দু’বেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচত। শোক এবং জীবনের অনভিজ্ঞতা তখন তাকে মঠের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য দিয়েছিল। এখন সে মনে করে, ওই সামান্য ভূসম্পত্তি মঠের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। অপরিহার্যও ছিল না। সে মাথা নাড়ে। এখন আর ভেবে লাভ নেই। 

মাসুদা বলে চলেছিল তখন—আমার জন্য ভাবি না। এক কুড়ি বয়স পেরিয়েছি, আর কী! কিন্তু মেয়েটার জন্য বড় ভাবনা হয় গো দিদি। বাউন্ডুলে বাপের মেয়ে, ওর কী হবে বলো তো! 

মাসুদা সাতকাহন খুলে বসে। আমিনার মেয়ে তহমিনা কত বড় ফরিদার থেকে। ষোলোর কমে হবে না তার বয়স। গায়ে-পায়ে ছোট দেখালে কী হবে, বয়স লুকিয়েই বা লাভ কী! আর কার কাছে লুকোয় বয়স? না নিজের ফুফু মাসুদার কাছে। যে নাকি তহমিনাকে চোখের সামনে জন্মাতে দেখল। আর বাপ-মায়ের কাছে তার আদর-আবদার দেখো, যেন তার বয়স ফরিদার সমান। অথচ গায়ে-গতরে থাকলে বিয়ে হয়ে যেত এতদিনে। এমনকী দু’ বাচ্চার মা হওয়াও বিচিত্র ছিল না। কিন্তু ভাবসাব যেন কচি খুকি! ফরিদাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এটা-ওটা খাবে, একটু ভাগও দেবে না। আচ্ছা, দেওয়ার ইচ্ছে নেই, তাই দেবে না। কিন্তু দেখিয়ে খাবার কি কোনও দরকার আছে? সে তো ফরিদার বড় দিদি নাকি? আমিনাও কখনও বলে না, আচ্ছা মেয়েটা ছোট, ওকে একটু খাবার দেই। মেয়েটার তো কষ্ট হয় মনে! 

ময়না বৈষ্ণবী এই সংকট সমাধানের কোনও উপায় দিতে পারল না। শুধু মাসুদা নামের মেয়েটির বেদনায় সেও ব্যথিত হল। কথা বলতে বলতে মাসুদা চোখ মুছছে। ময়না বৈষ্ণবী তাকে দেখছে অপলক। রোগা, শ্যামলা, অপুষ্ট—তবু এখনও বালিকার মতো নরম মুখ-চোখ। শহরে এই বয়সে মেয়েরা কলেজে পড়তে যায়। আর এই মেয়েটি কোন ষোলো বছর বয়সে মা হয়ে বসে আছে। সে শুধোয়—ইদরিশ মিঞা কোথায়? 

মাসুদা রাগত স্বরে বলে—কোথায় আবার! বরকত আলির বাড়িতে আজ পঞ্চরসের গান হবে। উনি তার পান্ডা। দু’ রাত্তির নাওয়া নেই, ঘুম নেই, সেখানে পড়ে আছেন। ভোর না ফুটতেই চলে গিয়েছেন ও-বাড়ি। 

—তা ব্যাপারটা কী! হঠাৎ পালাগান? 

—ইরিগেশনের কাজ দেখতে এসেছিল চারজন বাবু। কী জানি পাম্প বসাবে। তাতে শুখা মরশুমে চাষের সুবিধা হবে। জানি না কবে কী বসবে। তবে পঞ্চরস দেখতে চেয়েছে তারাই। বরকত মিঞার বাড়িতেই খানাপিনা। সঙ্গে পঞ্চরস। 

সেচদপ্তরের প্রযুক্তিবিদ ও আধিকারিকরা মাঝে মাঝে নদীর অবস্থা দেখতে আসেন ঠিকই। তবে কী পাম্প বসাবে তা ময়না বৈষ্ণবীর বোধগম্য হল না। ছোট ছোট পাম্পে অনেকেই এখন নদী থেকে জল তুলে সেচকর্ম করে। তার জন্য যথেষ্ট খরচ আছে বলে ছোট চাষিদের পক্ষে সেগুলি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এ গ্রামে ওই পাম্পসেট আছে মাত্র দু’জনের। চাটুজ্যেদের আর বরকত আলির। গ্রীষ্মে কিংবা অনাবৃষ্টিতে অনেকেই চড়া মূল্যে ওই পাম্পসেট ভাড়া নেয়। যাদের সে-ক্ষমতাও নেই তারা এমনকী চেষ্টা করে বাঁকে করে জল দেবার। কিন্তু সামান্য জমিতেই এই পরিশ্রম প্রয়োগ সম্ভব হয়। তা ছাড়া নদী সংলগ্ন জমিগুলিতেই সেচন করা সহজ। দূরের জমিতে রোদ্দুরে মাটি পোড়ে, ফাটা-ফাটা চাকলা-চাকলা হয়ে যায় জমিজমা। তবু কিছু করার নেই। নলকূপ দুটিমাত্র। এত বড় গ্রামে ওই দুটি নলকূপের জল সমস্ত জমির পক্ষে পর্যাপ্ত হয় না। সামান্য উপায় এবং বিবিধ নিরুপায়তা সমন্বয়েই এখানকার বসবাস। অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টিকে দু’পাশে রেখে জীবনযাপন। 

বাগড়িতে শীতের ফসল ভাল হয়। আর বর্ষায় প্রতিবারই আছে ক্ষতির আশঙ্কা। যদিও প্রতি বছরই বর্ষায় ঘরবাড়ি ডুবে যায় না কিন্তু কোন বছর হঠাৎ এসে পড়বে বন্যা আর সব ভাসিয়ে নেবে, তা কে বলতে পারে! এর আগে যতবার বন্যা হয়েছে, তার ক্ষয়ক্ষতির স্মৃতি মনে আছে সকলের। 

মাসুদা এই রাতটুকুর জন্য ময়না বৈষ্ণবীকে গাঁয়ে থেকে যেতে অনুরোধ করল। ময়না বৈষ্ণবী আগে কখনও এ-গাঁয়ে থাকেনি এমন নয়। চাটুজ্যেদের বাড়িতে কোনও কোনও রাত্রে সে থেকে গেছে। আর সে মঠে না ফিরলে যে কোনও অনাসৃষ্টি হবে এমনও নয়। সে স্বাধীন মানুষ। মাসুদার প্রস্তাব তার মনোমতো হয়। সে বলে—বেশ তো। ইদরিশের গান শুনে যাব আজ রাতে। 

মাসুদার মুখে খুশি উপচে উঠল। ময়না বৈষ্ণবী বুঝতে পারল এই খুশির অর্থ। ইদরিশের খামখেয়ালিপনার জন্য মাসুদার যতই যন্ত্রণা হোক, রাগ-অভিমান হোক, তার আছে এক গোপন গভীর গর্ব—ওই ইদরিশের শিল্পীসত্তার জন্য। মেয়েকে সঙ্গে করে সে নিজেও যাবে ঠিকই। রাতের খাওয়া না জুটলেও যাবে। বরকতের বাড়িতে বাবুদের খাবার নিমন্ত্রণ। মাসুদার নিমন্ত্রণ নেই। এমনকী ইদরিশেরও নেই। তবে ইদরিশ কাজকর্ম করছে, মাচা বাঁধছে, হ্যাজাক বাতিগুলি সাফসুতরো করছে, রাত্তিরে সে-ই হয়ে উঠবে একজন প্রধান শিল্পী। অতএব সে সকালে মুড়ি কাঁচালঙ্কা আর দুপুরে কিছু পান্তাভাত কাঁচা পেঁয়াজ সমেত খেতে পাবে নিশ্চিতই। রাত্তিরে অন্যান্য নিমন্ত্রিতের খাতিরে কিছু মাংসও জুটে যাবে হয়তো বা 

মাসুদার মন আনন্দে আপ্লুত হয়ে ওঠে। হঠাৎ মনে মনে স্থির করে ফেলে, তার কানের ও নাকের রুপোর ফুল—যা রাখা আছে বাক্সের তলায়, যা সে যত্নে রেখে দিয়েছে ফরিদাকে বিয়ের সময় দেবে বলে, পরে যাবে আজ। চুল বাঁধবে পরিপাটি। কেননা পঞ্চরসের গান এ তল্লাটে ইদরিশের মতো আর কেউ-ই গাইতে পারে না। তা ছাড়া আজ ইদরিশের এক বিশেষ দিন। কারণ বাইরের বাবুরা তার গান শুনতে আসছে। 

মাসুদা গা থেকে রাগ ঝেড়ে ফেলে। ময়না বৈষ্ণবীর কাছে আর পাঁচ গাঁয়ের খবর শুধোয়। ময়না বৈষ্ণবী তখন শুরু করে তার কাহিনি। কমলির কথা সে আদ্যোপান্ত বলে যায় মাসুদাকে। তার বলার মধ্যে মাসুদার কাছে কী-ই বা সমাধান প্রত্যাশা থাকবে! তবু সে বলে। বলতে চায়। সমস্ত মায়েদের, মেয়েদের সে সাবধান করে দিতে চায় এই কুপ্রবৃত্তির কথা বলে। এরপর মানুষের বিবেক সম্বল। হতে পারে শংকরের মতো লোক বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে বা কাজের প্রলোভন সঙ্গে করে ঘুরে ঘুরে যায় এ গ্রামেও। 

মাসুদা বড় বড় চোখ করে শুনছিল। শেষ পর্যন্ত সে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল তার বড় বোনের কথা, যে ছিল মাসুদার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। অনেকই বড় ছিল সে মাসুদার চেয়ে। মধ্যে মধ্যে মাসুদার আরও কয়েকটি ভাইবোন জন্মেছে এবং মারা গেছে। বেঁচে ছিল তারা তিনটি। সেই দিদির বিয়ে দিতে পারছিল না তার বাবা। দাফালিরা এমনই কয়েক ঘর। স্বঘরে বিয়ে দিতে গেলে দেনমোহরের পরিবর্তে বরপক্ষ বরপণ চেয়ে বসে। রোজ দু’বেলা খেতে পায় এমন ঘরে বরে দিতে গেলেই মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন বুজকুড়ি ফেটে কেটে যায়। তখন হরিহরপাড়া ডোমকল হয়ে পদ্মা পেরিয়ে সীমান্তে গোরু পাচার করত একটা লোক দিদিকে বিয়ে করতে চাইল। বয়সে অনেকই বড় ছিল লোকটা। কী করে মাসুদার বাবার সঙ্গে লোকটার আলাপ হয়ে যায় সে জানে না। তার শুধু মনে আছে, লোকটা বলেছিল— দানাপানির অভাব হইবে না। মাইয়াডারে দিয়া দ্যান মিঞা। 

মাসুদার বাপ বলেছিল—মেয়েটাকে নিয়ে মাঝে-মধ্যে ঘুরে যাবেন তো মিঞাসাহেব? 

—আমু না? এইডা কি একখান কতা হইল মিঞা? 

চলে গেল সে। এক আধবুড়োর সঙ্গে বিয়ে বসে বিদায় হল। আর এল না। সেই লোককেও আর দেখা গেল না এ তল্লাটে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মাসুদার বাপ তার বড় মেয়েটির কথা বলত। বলত —একটু ভাল খেয়ে-পরে থাকবে এই লোভে মেয়েটাকে এক আধবুড়োর সঙ্গে বিয়ে বসিয়ে দিলাম। কে জানে সে বেঁচে আছে কি না! 

আর তারই জের হিসেবে মাসুদার বাপের চেয়েও দরিদ্র ইদরিশের সঙ্গে মাসুদার বিয়ে হল। চালচুলোহীন বিবাগী ছেলে, তবু মাসুদাকে গ্রামছাড়া করতে চায়নি তার বাবা। যদি মেয়ে হারিয়ে যায়। 

এক বুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল ময়না বৈষ্ণবী। সে জানে গাঁয়ে-গাঁয়ে কমলির কাহিনি বলে ফিরলে তার ঝুলিতেও মাধুকরীর দান হিসেবে উঠে আসবে এমন শতেক মাসুদার কাহিনি। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *