যুগলবন্দী – পরিচ্ছেদ ১০

১০.

সুদর্শনের মনের মধ্যে রজতশুভ্রর ব্যাপারটা কিছুটা সংশয়ের মধ্যে দোল খাচ্ছিল, কিন্তু কিরীটীর ওখান থেকে বের হয়ে জীপে উঠে বসতে বসতে একটা সুস্পষ্ট কর্মপন্থা তার মনের মধ্যে দানা বেঁধে উঠতে থাকে। তাকে আবার নীলাকাশে যেতে হবে সি আই ডি অফিসার সুধাকান্তকে সঙ্গে করে। সুধাকান্ত লোকটার বয়েস খুব বেশী হয়নি, এখনও ৩৪ ৩৫ হবে—চাকরিতে বছর দশেক ঢুকেছে, কিন্তু যেমন বুদ্ধিমান তেমনি কর্মঠ ও করিৎকর্মা। লালবাজারে ফিরে এসে সুদর্শন প্রথমেই সুধাকান্তর খোঁজ নিল। সে ঐসময় তার ঘরেই ছিল।

সুদর্শন মল্লিক ডেকেছে শুনে সুধাকান্ত তার অফিস ঘরে এসে ঢুকল, ডেকেছেন স্যার?

হ্যাঁ, সুধাকান্ত—বোস। আমার সঙ্গে এক জায়গায় তোমাকে যেতে হবে।

কখন যেতে হবে বলুন।

আপত্তি যদি না থাকে তো এখুনি যেতে চাই—

বেশ চলুন।

দুজনে এসে আবার জীপে উঠে বসল। সুদর্শনই ড্রাইভারকে নীলাকাশে যেতে বলল।

সেদিন কি একটা পাবলিক হলিডে। অফিস-আদালত ছুটি।

সরিৎকে তার ফ্ল্যাটেই পাওয়া গেল।

সরিৎই নয় কেবল–বকুলও ছিল। বকুল পাটনায় তখনও ফিরে যায়নি। আগামীকাল রাত্রের ট্রেনে সে ফিরে যাবে কথা হয়েছে।

সরিৎ সুদর্শন ও সুধাকান্তর আগমনে একটু বিস্মিতই হয়। কিন্তু তা হলেও আহ্বান জানায়, আসুন মিঃ মল্লিক–

একটু বিরক্ত করতে এলাম সরিৎবাবু–সুদর্শন বললে।

 কি ব্যাপার বলুন তো মিঃ মল্লিক।

দেখুন রজতশুভ্রবাবুর ব্যাপারটা আমাদের ধারণা সুইসাইড নয়—a clean case of murder!

হত্যা?

হ্যাঁ—

কে হত্যা করবে তাকে? আর কেনই বা করবে? সরিৎ বললে।

কেন করবে বা কেন করেছে, সেটা অবিশ্যি আরও তদন্তসাপেক্ষ, তবে কেউ যে হত্যা করেছে সে রাত্রে সেটা ঠিকই। আপনার চাকর পঞ্চানন আছে?

আছে।

একবার ডাকবেন তাকে?

নিশ্চয়ই সরিৎ পঞ্চাননকে ডাকল, সে কিচেন থেকে বের হয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। পঞ্চানন—

আজ্ঞে–

এঁরা লালবাজার থেকে আসছেন—পুলিস অফিসার—এঁরা কিছু জিজ্ঞাসা করতে চান তোমাকে।

পঞ্চানন কেমন যেন ভীত ও বিহুল দৃষ্টিতে প্রথমে সুদর্শন তারপরে তার পাশে উপবিষ্ট সুধাকান্তর মুখের দিকে তাকাল!

পঞ্চানন! সুদর্শন ডাকল।

আজ্ঞে—

সেদিন—মানে যেদিন তোমার বাবুর বন্ধু রজতবাবু এখানে এসেছিলেন, কখন এসেছিলেন?

সকাল তখন সোয়া সাতটা হবে।

তুমি তো বিকেলে ছুটি নিয়ে যাও!

আজ্ঞে।

কখন কটার সময় গেছলে?

সাড়ে পাঁচটার পর–

তাহলে ঐ সোয়া সাতটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তুমি ছিলে?

আজ্ঞে—

রজতবাবুও কি ছিলেন?

আজ্ঞে না। দশটা নাগাদ বের হয়ে যান—

ফিরলেন কখন?

বেলা পৌনে একটা তখন হবে।

তারপর আর বের হননি?

না।

কেউ ঐ সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল—কোন ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা?

না তো।

ঠিক মনে আছে?

আছে বই কি—কেউ আসেনি।

রজতবাবু ঐ সময়টা কি করছিলেন?

মধ্যে ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন—অনেকক্ষণ ধরে—আর একবার দেখেছিলাম অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে কেবল পায়চারি করছেন আর করছেন।

সেটা কখন?

বাইরে থেকে ফিরে আসবার পর–

তুমি একবার সন্ধ্যায় বাইরে থেকে ঘুরে আসবার কথা বলতেই তিনি বুঝি তোমাকে সে রাত্রের মত ছুটি দিয়ে দিলেন। সুদর্শন পুনরায় প্রশ্ন করে।

আজ্ঞে। বললেন—রাতের মত তোমাকে ছুটি দিচ্ছি আমি বললাম রাত নটা-দশটার মধ্যে ফিরে আসব তখন বললেন, না, না তুমি সকালেই ফিরে এস। তাতে আমি বললাম, আপনার রাত্রের খাবারের কি হবে? উনি বললেন, বাইরের হোটেলেই খেয়ে নেবেন বাবু। সত্যি বলছি, উনি যে অমন একটা কাণ্ড করবেন আমি ভাবতেই পারিনি।

ঠিক আছে পঞ্চানন, তুমি যাও—

পঞ্চানন চলে গেল।

সরিৎ ও বকুলকে সুদর্শন গোটাকতক প্রশ্ন করল, তারপর একসময় বললে, বকুল দেবী, আপনি করে পাটনায় ফিরছেন?

কাল রাত্রের ট্রেনে।

আপনি আর কয়েকদিন থেকে যান। সুদর্শন বললে।

কেন?

আমাদের আরও কিছু অনুসন্ধান বাকি আছে, সেটা শেষ হলে যাবেন।

বকুল বললে, কিন্তু আমাকে আপনাদের প্রয়োজন কিসের। ঐ ব্যাপারের তো কিছুই আমি জানি না–আমি এখানে ছিলামও না।

না ছিলেন না কিন্তু তা হলেও আপনার সঙ্গে রজতবাবুর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল—

সরিৎ বললে, তাতে কি হয়েছে। ওকে আটকাচ্ছেন কেন। বেচারা একেই সমস্ত ব্যাপারটার আকস্মিকতায় রীতিমত শক্‌ড্‌ হয়েছে—আদৌ থাকতে চাইছিল না—আমিই কয়েকটা দিন ওকে, ধরে রেখেছিলাম—

আমার কিন্তু মনে হয় সরিৎবাবু, ওঁর এখানে আরও কয়েকটা দিন থেকে যাওয়াই ভাল।

বকুল বলে ওঠে, ঠিক আছে দাদা–উনি যখন বলছেন আমি আরও দুচার দিন পরেই না হয় যাব।

ধন্যবাদ জানিয়ে তখনকার মত সুদর্শন ওঁদের কাছ থেকে বিদায় নিল।

সেখান থেকে ওরা এল অনন্য বক্সীর গৃহে।

ছুটির দিন হলেও অনন্য বক্সী ছিল না—ছিল বিপাশা। পরেশের মুখে লালবাজার থেকে আসছেন শুনে বিপাশা ওদের দোতলায় বসবার ঘরে ডেকে পাঠাল।

দুচারটে মামুলী কথাবার্তার পর সুদর্শন বললে, আপনি তো রজতবাবুকে বেশ ভালভাবেই চিনতেন!

হ্যাঁ—অনেকদিনের পরিচয় আমাদের।

রজতবাবু আপনাকে চিঠিপত্র লিখতেন?

না।

কখনও আসতেন?

না।

এ বাড়িতে কখনও আসেন নি?

এসেছিল।

কবে?

যেদিন দুর্ঘটনাটা ঘটে সেইদিনই সকালে।

সুদর্শন কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসল। বললে, তাহলে সেই শনিবার তিনি সকালে এখানেই এসেছিলেন?

হ্যাঁ—কিন্তু আপনি কথাটা কার কাছে শুনলেন?

যেমন করে তোক শুনেছি। তা কতক্ষণ ছিলেন এখানে?

ঘণ্টাখানেক হবে।

কি কথাবার্তা হয়েছিল আপনাদের?

বিপাশা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর সেদিনকার সমস্ত ঘটনাটা বলে গেল।

আপনি গিয়েছিলেন নীলাকাশে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।

গিয়েছিলাম।

কখন?

রাত তখন পৌনে আটটার মত হবে।

দেখা হয়েছিল নিশ্চয়ই আপনার রজতবাবুর সঙ্গে?

হয়েছিল।

কি কথা হয়েছিল আপনাদের মধ্যে যদি বলেন বিপাশা দেবী!

ক্ষমা করবেন অফিসার। সেটা একান্তভাবেই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

হুঁ। আপনার স্বামী জানেন ব্যাপারটা—মানে রজতবাবু তো এখানে এসেছিলেন—আপনি পরে নীলাকাশে গিয়েছিলেন!

না।

বলেননি তাঁকে কোন কথা?

না।

হঠাৎ ঘরের জানালার ওপাশ থেকে ঐসময় একটা মুখ চকিতে সরে যেতে দেখে সুদর্শন দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, কে-কে ওখানে?

বিপাশা বললে, কোথায় কে?

একটু আগে ঐ জানালা থেকে উঁকি দিচ্ছিল—মনে হচ্ছে আপনাদের সেই চাকরটা!

পরেশ?

হবে। ডাকুন তো একবার তাকে!

বিপাশা পরেশকে ডাকতেই সে ঘরে ঢুকল।

তোমার নাম পরেশ?

আজ্ঞে—

একটু আগে ঐ জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলে কেন?

আজ্ঞে আমি-কই না তো!

পরেশ—আমার চোখকে তুমি ফাঁকি দিতে পারনি। বল, কেন উঁকি দিচ্ছিলে? যদি সত্য কথা বল তো—আমি তোমাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব থানায়—বল কেন উঁকি দিচ্ছিলে— আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলে, তাই না?

বিশ্বাস করুন বাবু, কালীর দিব্বি—

প্রচণ্ড একটা ধমক দিয়ে উঠল সুদর্শন, এই চুপ রও! সুধাকান্ত, নীচের থেকে সার্জেন্টকে ডেকে আন, ওকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাক থানায়।

দোহাই বাবু আপনার—আমি আড়ি পেতেছিলাম—

কেন?

আজ্ঞে—

সুদর্শন বিপাশার দিকে তাকাল, লোকটা কতদিন আপনাদের এখানে আছে বিপাশা দেবী?

আমি আমার স্বামীর মুখে শুনেছি, বিপাশা বললে, আমার শ্বশুরমশাইয়ের আমলের লোক–

আপনাদের বিয়ে কতদিন হয়েছে?

মাস আষ্টেক—

আপনার শ্বশুরমশাই—

পরেশই জবাব দিল, আজ্ঞে তার তো মাথা খারাপ–রাঁচিতে পাগলাগারদে আছেন।

তাই নাকি বিপাশা দেবী! সুদর্শনের প্রশ্ন বিপাশাকে।

হ্যাঁ।

কতদিন আছেন তিনি সেখানে?

তা প্রায় শুনেছি উনিশ বছর।

বলেন কি—অনেকদিন তাহলে! তা কি হয়েছিল হঠাৎ পাগল হয়ে গেলেন কেন?

শুনেছি একটা দুর্ঘটনার কিছু পরেই তার মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে—অনেক চিকিৎসা হয়, কিন্তু দিন দিন ক্রমশ অবনতি ঘটায়—আমার শ্বশুরের এক বোেন তাকে পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেন।

কি দুর্ঘটনা—

বিপাশা তখন তার স্বামীর মুখে থেকে যা শুনেছিল সব বলে গেল।

তাহলে আপনার স্বামী কি দুর্ঘটনা ঘটেছিল, যাতে আপনার শ্বশুরমশাইয়ের মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে, তা বলেন নি?

তিনি বলেছেন—তিনি জানেন না।

হঠাৎ পরেশের দিকে তাকিয়ে ঐসময় সুদর্শন প্রশ্ন করল, তুমি তো এ বাড়ির অনেকদিনের পুরানো লোক, তুমি জান না?

আজ্ঞে শুনেছি গিন্নীমা হঠাৎ মারা যাওয়াতেই কত্তাবাবু যেন কেমন হয়ে যেতে লাগলেন দিনকে দিন চুপচাপ ঘরের মধ্যে অন্ধকারে বসে থাকতেন একা একা—আপনমনে বিড় বিড় করে কি সব বলতেন, তারপরই একেবারে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেলেন, কেবল চেঁচাতেন–রাক্ষুসী—ডাইনী—বেশ্যা!

রাক্ষুসী, ডাইনী, বেশ্যা!

আজ্ঞে।

কাকে বলতেন?

তা তো জানি না বাবু—

তোমার গিন্নীমাকে দেখেছ?

আজ্ঞে না—আমি তার মারা যাবার এক বছর পরে এ-বাড়িতে এসেছি—

তা তুমি কার কাছে ঐ কথা শুনলে পঞ্চানন?

পিসিমার মুখে।

পিসিমা এখন কোথায়?

তিনি বছর কয়েক আগে মারা গেছেন। সেই থেকেই এত বড় বাড়ির মধ্যে আমি আর দাদাবাবুই ছিলাম—বৌদিমণিও সেদিন এলেন।

পরেশ!

আজ্ঞে—

যাও তুমি এবারে নীচে যাও—আমি না ডাকা পর্যন্ত আসবে না উপরে, মনে থাকে যেন–আবার আমাদের কথা শোনবার চেষ্টা করলে বা উপরে এলে সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে গ্রেপ্তার করে চালান দেব।

পরেশ মাথা নিচু করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ক্রমশ পরেশের পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলা

বিপাশা দেবী—আপনার ও রজতবাবুর মধ্যে আলাপ পরিচয় ছিল বিবাহের পূর্বে সেকথা মিঃ বক্সী জানেন না?

জানে।

জানেন?

হ্যাঁ। বিবাহের পূর্বে চার-পাঁচ বৎসর আমাদের মধ্যে আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা ছিল—

একটা কথা বলব কিছু মনে করবেন না। আমি কিন্তু আপনাদের ঐ পরেশ ভৃত্যটিকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না!

বিপাশা কোন কথা বলবার আগেই অনন্য এসে ঘরে ঢুকল ঐ মুহূর্তে।

বিপাশার দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল।

এঁরা লালবাজার থেকে আসছেন সুদর্শনবাবু—সুধাকান্তবাবু—

ভ্রূ দুটো কুঞ্চিত করে অনন্য প্রশ্ন করে, লালবাজার থেকে কেন?

সুদর্শন বললে, বসুন মিঃ বক্সী, আমি বলছি—আমরা রজতবাবুর ব্যাপারে—

রজতবাবু তো সুইসাইড করেছেন–

না, তিনি খুন হয়েছেন।

কি বলছেন সুদর্শনবাবু—খুন? তাঁকে মার্ডার করা হয়েছে!

হ্যাঁ–ব্রুটালি মার্ডার! নিষ্ঠুর হত্যা। বিপাশা দেবী আপনি একটু এ ঘর থেকে যান—আপনার স্বামীকে আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে।

আমাকে?

হ্যাঁ—যান বিপাশা দেবী–

না—ওর যাওয়ার দরকার নেই—তুমি বোস বিপাশা—

বিপাশা একটু যেন বিব্রত বোধ করে—তাহলেও ঘর ছেড়ে চলে যায় না। অনন্য বললে, বলুন কি জিজ্ঞাসা আছে আপনার? কিন্তু আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না অফিসার, রজতবাবু যদি খুনই হয়ে থাকেন, আপনারা যা বলছেন তার সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক থাকতে পারে?

আপনাদের দুজনকেই রজতবাবু চিনতেন—

হ্যাঁ—সামান্যই পরিচয় ছিল।

সেটা হয়ত আপনার সঙ্গে ছিল, কিন্তু আপনার স্ত্রী তার দীর্ঘদিনের পরিচিত ছিলেন—

কে বললে?

আমরা শুনেছি।

কার কাছে শুনলেন?

সরিৎবাবু ও তার বোনের কাছ থেকে।

তাঁরা কে?

চেনেন না তাদের?

না।

সত্যিই বলছেন চেনেন না?

না। এই প্রথম নাম দুটো আপনার মুখ থেকে শুনলাম।

তাই বুঝি! শুনেছি আপনার মা নাকি কি এক দুর্ঘটনায় মারা যান! কথাটা কি সত্যি?

হ্যাঁ–

তা কি দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি?

জানি না।

বেশ—এবারে বলুন তো—যে শনিবার রাত্রে রজতবাবু খুন হন–সেদিন যে সকালবেলা তিনি দশটা সোয়া দশটার সময় এখানে এসেছিলেন তা আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন!

না তো—

পরেশ আপনাকে বলেনি?

পরেশ!

হ্যাঁ–সে আপনাকে বলেছিল কথাটা।

Absurd! কে বললে? সে আমাকে কোন কথা বলেনি।

যদি বলি পরেশই বলেছে—

পরেশ বলেছে! অনন্যর গলার স্বরটা সহসা যেন কেমন মিনমিনে হয়ে আসে।

হ্যাঁ—পরেশ। কি, বলেনি সে?

হ্যাঁ—মানে ঐ রকমই কি যেন বলেছিল পরেশ?

কখন বলল?

অফিসে আমাকে গিয়ে বলে এসেছিল দুপুরে—

এবারে বলুন, আপনি নীলাকাশে গিয়ে রজতবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন?

বিপাশা স্থিরদৃষ্টিতে তখন স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে আছে, তার সমস্ত মুখটা তখন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।

না, না—রজতবাবুর সঙ্গে আমি দেখা করতে যাব কেন? তাছাড়া লোকটাকে আমি অত্যন্ত ঘৃণা করি।

ঘৃণা করেন?

 হ্যাঁ–-ও কি একটা ভদ্রলোক—একটা ছোটলোক—

ছোটলোক?

নয়? ছোটলোক না হলে কেউ অপরের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে তার স্ত্রীর হাত ধরে টানাটানি করে—অসম্মান করে। ঘৃণায় আক্রোশে অনন্যর স্বরটা যেন রুক্ষ হয়ে ওঠে।

আপনি তাহলে মিঃ বক্সী শুনেছেন, রজতবাবু আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন!

লোকটাকে হাতের কাছে পেলে আমি চাবকে তার পিঠের ছাল তুলে দিতাম–ভাগ্য ভাল তার যে সে সময় আমি অফিসে ছিলাম। এখানে উপস্থিত ছিলাম না!

মিঃ বক্সী—তাহলে পরেশের মুখে সংবাদটা শোনার পরও আপনি নীলাকাশে যান নি?

না।

আচ্ছা মিঃ বক্সী—আপনাদের বিরক্ত করবার জন্য আমি দুঃখিত—আজ তাহলে উঠি–সুদর্শন সুধাকান্তকে নিয়ে নমস্কার জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।