যমুনাজলে বিবর সন্ধান
যমুনাজলে নৌকাটি ভাসছে।
তীর ঘেঁষেই নৌকাটি। একগাছি শুকনো লতা দিয়ে তীরলগ্ন একটি গাছের শিকড়ের সঙ্গে নৌকাটি বাঁধা। একে নৌকা না বলে ডিঙি বলা ভালো। আকারে তেমন বড় নয়। চার-পাঁচজন আরোহী বসতে পারে মাত্র। কিশোরী-নৌকাটি আপন ছন্দে নাচছে। এদিককার যমুনাজল নীল। জলতরঙ্গগুলো ছলাৎ ছলাৎ করে তীরভূমিতে আছড়ে পড়ছে। আছড়ে পড়ার শব্দ ঈষদুচ্চকিত। মৃদু তরঙ্গাঘাতেই নৌকাটি অল্প অল্প দুলছে।
নৌকার পাছার দিকে হাল ধরে বসে আছে এক কন্যা। উদ্ভিন্ন যৌবনা। রমণীর সকল রমণীয়তা তার সর্বাঙ্গ জুড়ে। যমুনাজলের মতোই ঘননীল তার চোখ দুটো। কন্যাটি অতিশয় সুন্দরী। মানুষ যে অর্থে সুন্দরী নারী বোঝে, এই নারী সে অর্থে সুন্দরী নয়। তার শরীরে গৌরবর্ণের আভাসটুকুও নেই। গৌরবর্ণীয় দুর্বলতাটুকু সৌন্দর্য নির্ধারণের মাপকাটি হতে পারে না। যুবতিটির গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। সৌন্দর্য সম্পর্কে আদি-বিশ্বাসটুকু মন থেকে ঝেড়ে ফেলে কন্যাটির দিকে তাকালে যেকোনো বয়সের পুরুষের দৃষ্টি আটকে থাকবে ওই নারীর দেহে। তাকে দেখে মানুষের ইন্দ্রিয়সমূহ চঞ্চল হয়ে উঠবেই।
নৌকায় বসা যুবতিটির দৃষ্টি অরণ্যবাহী পথের দিকে প্রসারিত। যদি কেউ আসে! এই ঘাটে আসার ওটাই একমাত্র পথ। এই নির্জন ঘাটে কারও জন্য অপেক্ষা করছে সে। এই অপেক্ষা নিতান্ত প্রয়োজনের।
কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেল, এখনো পর্যন্ত কেউ এলো না।
সন্ধ্যা নামতে এখনো দেরি আছে। গোধূলির হলদে আলো সবেমাত্র নীল যমুনাজলের ওপর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। শুধু যমুনাজলে কেন, সবুজ অরণ্যভূমির ওপর, পাহাড় থেকে সাপের মতো আঁকাবাঁকাভাবে নেমে আসা পথের ওপর, সর্বোপরি নৌকায় বসে থাকা রমণীর চিকনকালো দেহের ওপর গোধূলি তার আপন রং ছড়িয়ে যাচ্ছে।
নৌকার প্রান্তভাগে স্থির হয়ে বসা নারীটিকে চিত্রার্পিত মূর্তির মতো মনে হচ্ছে। তার কেশরাশি মাথার ওপরে চূড়া করে বাঁধা। দেখে মনে হচ্ছে, ঘোর অমাবস্যা ওই কেশরাশির মধ্যে বন্দি হয়ে আছে। তার ঈষৎ ঝুলানো ওষ্ঠাধরে এমন একটা হাসি মৃদু খেলা করছে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ তো কোন ছার, মুনিঋষিরও ধ্যানীমন টলে যাবে।
রমণীর পুরুষ্টু স্তনযুগল ছোট একটি বস্ত্রখণ্ডে ঢাকা। ওই বস্ত্রখণ্ডটি পৃষ্ঠদেশের একটি সূত্রগ্রন্থির সঙ্গে নিবদ্ধ। নারীটির অধমাঙ্গের বস্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় কম। ঊরু ছাড়িয়ে সামান্য নিচে এসে বস্ত্রটির দৈর্ঘ্য ফুরিয়ে গেছে। নৌকাটির পশ্চাদ্ভাগে পা দুটোকে সামান্য ছড়িয়ে দিয়ে বসেছে সে। তাতে তার ঊরু, মোহনীয় চরণ দুটো প্রায় অনাবৃত ও দৃশ্যমান। নারীটির এই অনাবরণ দেহাংশ চতুর্দিকের পরিবেশে লাবণ্যের সঞ্চার করছে। ইচ্ছে করে নারীটি এরকম সাজপোশাক পরেনি বা এরকম লোভনীয় ভাবে বসেনি। এটা তার সমাজে স্বাভাবিক এবং প্রচলিত।
তার স্বল্প বসন, তার অনাবৃত দেহ তার সমাজে যতই স্বাভাবিক হোক না কেন, অন্য সমাজের মানুষের কাছে তা অসহনীয়। নারীটির সমাজে এটা একটা সহজ সরল আচার, কিন্তু তার সমাজবহির্ভুত মানুষের কাছে রিরংসা উদ্রেককারী। নীল ঊর্মিমুখর যমুনার জল, তার ওপর মোহিনী এই যুবতি, দুটোকে একসঙ্গে অবলোকন করে যেকোনো ঋষি তাঁর সারাজীবনের বৈরাগ্যসাধনা বিসর্জন দিতে তিলার্ধ কাল বিলম্ব করবেন না। এই নারীটির অধিকার পেতে সমস্ত পৃথিবীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দ্বিধা করবেন না তিনি।
হঠাৎ নদী-তীরবর্তী পাহাড়ের সর্পিল পথ বেয়ে একজন মানুষকে দ্রুত নেমে আসতে দেখা গেল। পুরুষটি দীর্ঘ শ্মশ্রুমণ্ডিত, জটাজুটধারী। নৌকাটির কাছে এলেন তিনি। শরীরটা শীর্ণ। দীর্ঘদিনের বৈরাগ্যসাধনার চিহ্ন সমস্ত দেহজুড়ে। চেহারায় ক্লান্তির প্রকাশ দেখা গেলেও চোখ দুটো তাঁর উজ্জ্বল। তাঁর সেই উজ্জ্বল চোখে অর্জিত জ্ঞানের নিবিড় উপস্থিতি লক্ষ্যযোগ্য। একটা নির্দিষ্ট তপাশ্রমে বহু বছর সাধনা শেষ করে হয়তো তিনি তীর্থদর্শনে বের হয়েছেন। হয়তো যমুনা পার হয়ে মথুরা বা শূরসেন রাজ্যের কোনো দেবক্ষেত্র দর্শনে যাবেন। অথবা যমুনার ওপারের মৎস্যদেশের কোনো তীর্থক্ষেত্র দর্শন করে নিজেকে আরও পবিত্রময় করে তুলবেন।
যমুনার এই অংশটি কিঞ্চিৎ সংকুচিত। জলধারা কম স্রোতময়। নদীর বুকজুড়ে এখানে ওখানে চর। দূরের একটা চর বৃক্ষময়। ওই চরের পাশ ঘেঁষেই ওপারে যেতে হবে। এই অঞ্চল দিয়ে নদী পারাপারের জন্য লোক আসে। এদিক দিয়ে পারাপারে সময় লাগে কম, তাই নদীর এই অংশটিই পারার্থীদের পছন্দ। পরিশ্রম কম লাগে বলে নৌবাহকেরও পছন্দ এই অঞ্চলটি।
এখানে সবসময় একজন পুরুষই নৌকা পারাপার করে, আজকে তার জায়গায় বসে আছে এই উদ্ভিন্ন যৌবনা রমণীটি।
নৌকার কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়ালেন ঋষি। তাঁর দৃষ্টি সামনে প্রসারিত। এমনিতে ঘাটে পৌছতে তাঁর দেরি হয়ে গেছে! দ্রুত পায়ে হেঁটে আসার জন্য হাঁপ ধরে গেছে তাঁর। চোখে-কপালে ক্লান্তির উপস্থিতি। আর দেহজুড়ে ক্লান্তি-অবসন্নতা তো আছেই! কিন্তু সামনে তাকিয়ে ঋষির দেহমন থেকে ত্বরিত সমস্ত ক্লিষ্টতা উধাও হয়ে গেল। তিনি দেখলেন, নিকষ কৃষ্ণবরণ রমণীটির সর্বাঙ্গ ঘিরে গোধূলির আলো এক অপূর্ব মায়ার সৃষ্টি করে চলেছে। যমুনাজলকে উদ্ভাসিত করে নারীটির নগ্ন পায়ে অস্তরাগ লুটোপুটি খাচ্ছে।
ঋষি ক্ষণকাল তার অতীতকে ভুললেন। তিনি নদীর সৌন্দর্যে, পৰ্বত- অরণ্যের রূপে এবং নৌকায় বসা নারীটির অঙ্গসৌষ্ঠবে মোহিত হলেন। এক অবর্ণনীয় শিহরণ তাঁর শিরায় উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ল। তিনি কামার্ত হলেন। এক দুর্দমনীয় আসঙ্গলিপ্সা তাঁর মনে জেগে উঠল। তিনি বিচক্ষণ। মনের কামনা মনেই চেপে রাখলেন তিনি। মানসিক বিকারকে দমন করে রাখার শক্তি তাঁর আছে। তিনি নিজের রিরংসাকে সংযত করলেন।
মুনি নারীটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুতন্বী, তুমি কে? এখানে যে- লোকটি পারাপার করত, সে কোথায়? ও আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত নাইয়া।’
তন্বী করজোড়ে বলল, ‘প্রণিপাত ঋষিবর। যিনি নৌপারাপার করতেন, তিনি আমার বাবা। বাবার বয়স হয়ে গেছে। নৌপারাপারে শক্তির প্রয়োজন। পিতা আজ শক্তিহীন। তাঁর কোনো পুত্রসন্তান নেই। তাই নৌচালানোর দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। আপনি নৌকায় চরণ রাখুন।’
মুনিবর মেয়েটির গুছানো কথা শুনে মুগ্ধ হলেন। বললেন, ‘বাঃ! তুমি তো বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারো!’
বলতে বলতে নৌকায় উঠে বসলেন তিনি। মুগ্ধ চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কি তন্বী?’
মেয়েটির মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল। বলল, ‘আপনি তো আমার একটা নাম দিয়েই দিয়েছেন, তন্বী। ও নামেই না হয় ডাকুন আমাকে।’
‘তুমি তো বেশ বুদ্ধিমতী দেখছি! আমার কথা দিয়ে আমাকেই জব্দ করলে হে!”
‘অপরাধ নেবেন না মুনিবর। আমি যদি আপনার রাগের কারণ হই ক্ষমা করুন।’
মৃদু হেসে ঋষি বললেন, ‘অপরাধের কিছু বলোনি তুমি। সন্ত্রস্ত হয়ো না।’ একটু থেমে আবার বললেন, ‘তোমার নামটি কি বলবে এবার?’
মুনিবরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তন্বী বলল, ‘সূর্যদেব পশ্চিমে একেবারে হেলে পড়েছেন। পাহাড়ের ছায়া ঘন হয়ে আসছে। অবস্থা বুঝে মনে হচ্ছে, আর কোনো পারার্থী আসবে না। তাছাড়া, আপনার হাঁটার গতি দেখে অনুমান করছি, আপনারও তাড়া আছে। যদি অনুমতি দেন, নৌকা ছাড়ি।’
‘অবশ্যই অবশ্যই।’ তন্বীর বক্ষদেশে একপলক চোখ বুলিয়ে ঋষি বললেন।
তন্বী এক লাফে নৌকা থেকে নামল। তার নিতম্ব দুলে উঠল। গাছের শিকড় থেকে লতাটি খুলে দিল। উপুড় হয়ে নৌকাটিকে জলের দিকে ঠেলতে উদ্যত হলো সে। এই সময় ঋষির চোখদুটো আটকে গেল তন্বীর পুষ্ট স্তনযুগলে। উপুড় হবার কারণে স্তনদুটো ভালোরকমে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল।
তন্বী নৌকায় উঠে হাল ধরল। নৌকা সামান্য এগিয়ে গেলে মেয়েটি নিচু স্বরে বলল, ‘আমার নাম মৎস্যগন্ধা।’
‘মৎস্যগন্ধা!’ বিস্মিত চোখ মুনিবরের। ‘এ কেমন নাম তোমার?’
‘হ্যাঁ, আমার নাম মৎস্যগন্ধা। আমার সমস্ত শরীরজুড়ে মাছের গন্ধ। বিদ্ঘুটে একটা মৎস্যগন্ধ সর্বদা আমাকে ঘিরে আছে।’
নিজের অজান্তে মুনিবরের ডান হাতটা নাকের কাছে চলে এলো। বুড়ো আঙুল আর তর্জনী দিয়ে নাকের অগ্রভাগে একবার ডলা দিলেন। তারপর জোরে একটা শ্বাস টানলেন।
বললেন, ‘কই, আমি তো কোনো মাছের গন্ধ পাচ্ছি না!’
এবার খলবল করে হেসে উঠল মৎস্যগন্ধা। হাসতে হাসতে বলল, ‘অতদূরে মাছের গন্ধ পাবেন কী করে আপনি? গন্ধ তো আমার গায়ে গায়ে! যারা অতি নিকটে আসে, শুধু তারাই বুঝতে পারে আমার গায়ের দুর্গন্ধটি।’
মুনি কি এই সময় একটু লোভাতুর হয়ে উঠলেন, মৎস্যগন্ধার নিকটে যাওয়ার জন্য? বোঝার উপায় নেই। কারণ মুনি যেখানে বসে ছিলেন, সেখানেই বসে থাকলেন। তাঁর দেহ এক জায়গায় স্থির থাকলে কী হবে, মন তাঁর উড়ে গেল মৎস্যগন্ধার দেহসমীপে। দেহের চারিদিকে মধুকরের তৃষ্ণা নিয়ে মনটি তাঁর ঘুরতে লাগল।
‘কী ভাবছেন মুনিবর?’ মৎস্যগন্ধা জিজ্ঞেস করল।
তাঁর এই মুহূর্তের ভাবনাটি যদি মৎস্যগন্ধার কাছে ব্যক্ত করেন, তাহলে লজ্জার অন্ত থাকবে না। নিজের মধ্যে নিজের মনকে লুকালেন তিনি। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলতে চাইলেন, ‘এরকম হলো কেন?’
মৎস্যগন্ধা জিজ্ঞেস করল, ‘কী রকম?’
‘মানে তোমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ বের হয় কেন? স্বাভাবিক কোনো মানুষের শরীর থেকে তো মৎস্যগন্ধ বের হয় না! নিদেনপক্ষে ঘামের গন্ধ বের হয়!’
‘যদি অপরাধ না ধরেন মুনিরর, আপনার পরিচয়টা কি জানতে পারি?’
এবার মুনিবরের চোখমুখ জুড়ে প্রশান্ত একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ল। বললেন, ‘নিতান্ত অল্পবয়স তোমার, তাই তুমি আমাকে চিনতে পারছ না। ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষ আমাকে চেনে। আমি পরাশর। মহর্ষি বশিষ্ঠের পৌত্র হিসেবে, বৈদিক ঋষি হিসেবে সমগ্র পৃথিবী আমাকে চেনে।’ আস্তে আস্তে বললেন পরাশর।
হালধরা অবস্থাতেই মাথা নোয়াল মৎস্যগন্ধা। বলল, ‘আমার সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত গ্রহণ করুন ঋষিবর।’
এরপর বলল, ‘আপনি জিজ্ঞেস করছিলেন আমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ বের হয় কেন? এর উত্তর দেওয়ার আগে বলি, পিতার কাছে আপনার কীর্তির কথা শুনেছি। শুধু আপনাকে চোখে দেখিনি আগে।’
‘হ্যাঁ, তাই তো! কেন বের হয়?’ পরাশর মৎস্যগন্ধার শেষের কথাকে কানে না তুলে বললেন।
‘আমার যে স্বাভাবিক জন্ম নয়!’
‘মানে!’
‘মানে আমার জন্ম কোনো নারীর গর্ভে হয়নি। অদ্রিকা নামের এক মৎস্যার গর্ভে আমার বড় হয়ে ওঠা।’
নৌকাটি সামনের দিকে এগোতে থাকল। আস্তে আস্তে বৈঠা চালাতে চালাতে মৎস্যগন্ধা তার জন্ম-ইতিহাস বলে গেল।
চেদিরাজ উপরিচরবসু। মহিষী গিরিকা। পিতৃযজ্ঞের কারণে মৃগয়ায় যেতে হলো রাজাকে। কিন্তু মৃগয়ায় মন বসে না রাজার। প্রাসাদে অপেক্ষমান সুন্দরী গিরিকার কথাই বারবার মনে পড়ছে তাঁর। রাজা রতিলিপ্সু হয়ে পড়লেন। কিন্তু স্ত্রী তো স্পর্শের বাইরে, রাজপ্রাসাদে। মন সংযমের বাঁধ মানল না। রেতপাত হলো রাজার। সেই বীর্য পত্রপুটে করে বাজপাখির পায়ে বেঁধে মহিষীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন রাজা। আকাশপথে সেই পাখি অন্য একটা বাজপাখি দ্বারা আক্রান্ত হলো। যমুনাজলে সেই শুক্রাণু পতিত হলো। শাপগ্রস্ত মৎস্যরূপী স্বর্গঅপ্সরা অদ্রিকা সেই বীর্য খেয়ে গর্ভবতী হলো। কালক্রমে সেই মৎস্য জেলেদের জালে ধরা পড়ল। ধীবররা সেই মৎস্যকে কাটতে গেলে পেট থেকে দুটো শিশু বেরিয়ে এলো। একটি কন্যা, অন্যটি পুত্র। রাজা উপরিচরের কাছে খবর গেলে তিনি পুত্রটিকে সাদরে গ্রহণ করলেন। কন্যাটিকে ত্যাগ করলেন।
গভীর আগ্রহে পরাশর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর?’
‘সেই পরিত্যক্ত কন্যাটিই আমি। মেয়ে বলে পিতার কাছে গৃহীত হলাম না। পিতা হেলায় দাশরাজার কাছে আমাকে দিয়ে দিলেন। বললেন, দেখ ধীবররাজ, মেয়েটাকে বাঁচাতে পারো কিনা।’
পরাশরের বিস্ময়ের শেষ নেই। তিনি বললেন, ‘তারপর!’
‘ধীবররাজ আমাকে সাদরে কোলে তুলে নিলেন। গভীর বাৎসল্যে আমাকে বড় করে তুললেন এই জেলেদম্পতি। নিজেরা খেয়ে না-খেয়ে আমার ভরণপোষণ করে যেতে লাগলেন।’
‘খেয়ে না-খেয়ে কেন? এই না বললে ধীবররাজ! মানে তোমার পালকপিতা রাজা! তার অভাব কীসের?’ বললেন ঋষি।
এবার খিলখিল করে হেসে উঠল মৎস্যগন্ধা। বলল, ‘আমার বাবা নামে রাজা, আসলে সাধারণ একজন জেলে। হ্যাঁ, অন্যান্য জেলের চেয়ে তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। তাই পাড়াপড়শিরা তাঁকে দাশরাজা বলে সম্বোধন করত। রাজা বলতে আপনারা যা বোঝেন, আমার বাবা সেরকম ছিলেন না। দরিদ্র জেলেদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে উচ্চবিত্তের ছিলেন। ‘
‘তাও যদি হয়, তারপরও তো খাওয়াপরার অভাব হবার কথা নয় তোমার বাবার!’ পরাশর বললেন।
মৎস্যগন্ধা করুণ কণ্ঠে বলল, ‘যথার্থ বলেছেন ঋষি। অভাব ছিল না বাবার ঘরে। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় অভাবে পড়তে হলো তাঁকে।’
‘দুর্ঘটনা!’ বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন মুনি।
‘হ্যাঁ, দুর্ঘটনা। একবার প্রবল বৃষ্টিপাত হলো এই অঞ্চলে। আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন পাহাড়ি অঞ্চল এটা। বৃষ্টির দরুন প্রবল ঢল নামল পাহাড় থেকে। শান্ত যমুনা রাক্ষুসি যমুনা হয়ে উঠল। প্রচুর জল, প্রবল স্রোত। ওই সময় যমুনায় বাবার দু’দুটো নৌকা মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ করালগ্রাসী বন্যার তোড়ে নৌকা-জাল যে কোথায় ভেসে গেল, হদিস মিলল না! বাবা কোনোরকমে প্রাণে বাঁচলেন। সঙ্গী জেলেদের কোনো খোঁজই পাওয়া গেল না! সেই থেকে বাবা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য এই পারানির কাজ। আগেই বলেছি আপনাকে, বাবা এখন বয়োবৃদ্ধ। শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারেন না এখন। তাই আমাকে করতে হচ্ছে নৌবাহনের কাজ।’ একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মৎস্যগন্ধার বুক চিরে।
এ তো প্রকৃতির অভিশাপ। প্রকৃতির অভিশাপে মৎস্যগন্ধার পিতা সর্বস্বান্ত হয়েছে। তাতে মানুষের হাত নেই। সব হারানোর কাহিনি শুনে মনে বেদনা জাগতে পারে শুধু। পরাশরের মনেও তা-ই জাগল। পরাশর ক্রোধ এবং বেদনাকে সংবরণ করতে জানেন। খেয়াতরীতে বসে মৎস্যগন্ধার দিকে তাকিয়ে তাঁর বেদনা প্রশমিত হলো। বেদনার পর জাগল বাৎসল্য। বাৎসল্যের জায়গায় ধীরে ধীরে এক অপূর্বস্বাদিত শিহরণ উৎপন্ন হতে শুরু করল। মুনি মৎস্যগন্ধার যৌবনোদ্ভেদ নিরীক্ষণ করে পুলকিত হতে থাকলেন। মৎস্যগন্ধার কালো দেহরূপের মধ্যে কমনীয় আলোর সন্ধান পেলেন।
পরাশর বললেন, ‘আমি তোমার দিনশেষের শেষযাত্রী বাসবী। আমাকে একটু দ্রুত ওপারে নিয়ে চলো।’
মৎস্যগন্ধা চকিতে চোখ তুলে তাকাল পরাশর মুনির দিকে। বাসবী কেন? মুনির মুখে এই অশ্রুতপূর্ব সম্বোধনটি শুনে মৎস্যগন্ধার হাতের বৈঠাখানি থেমে গেল। বাসবী নামের রহস্য সে জানে। এই সম্বোধন ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত। অদ্ভুত এক ভঙ্গি করে সে মুনির দিকে তাকাল। এই ভঙ্গিমায় মৎস্যগন্ধার কোনো অভিসন্ধি নেই। এটা তার সহজাত ভঙ্গিমা। শুধু মুনির দিকে কেন, সবার দিকে বিস্ময়ের সময় ঠিক এই ভঙ্গিতে তাকায় সে। মুনি ভাবলেন, অন্যকিছু। কৃষ্ণা রমণীর শারীরিক বিভঙ্গের দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন তিনি।
এইসময় মৎস্যগন্ধা খাঁকারি দিয়ে বলল, ‘নারী আমি। আমার পেশিতে জোরই-বা কতটুকু! দ্রুত বাইতে তো শক্তি লাগে!”
পরাশর মৎস্যগন্ধার পেলব বাহুর দিকে চোখ রেখে বললেন, ‘তুমি আমাকে ভুল বোঝ না স্নিগ্ধা। ওপারে যাবার তাড়া আমার। দ্রুত সন্ধ্যা নামছে। তাই তাড়া দিয়েছি আমি। ভুল হয়ে গেছে আমার। তুমি তোমার সাধ্যমতো বাও।’
মৎস্যগন্ধা ভাবল- যে পরাশর মুনির ক্রোধ জগদ্বিখ্যাত, যিনি মিষ্টি কথায় জগৎ ভোলাতে শিখেননি, বেদ-পুরাণ-বেদান্ত পড়ে পড়ে যার ভেতর থেকে লোকজ আবেগ তিরোহিত হয়ে গেছে, যিনি ঈশ্বর সাধনাকেই জীবনের সারার্থ বলে মনে করেন, তাঁর কণ্ঠে একী উচ্চারণ! বাসবী, স্নিগ্ধা, ভুল বোঝ না—এসব কথাবার্তা!
কোনো রহস্য? কোনো উদ্দেশ্য?
অনুসন্ধিৎসু চোখে পরাশরের দিকে তাকাল মৎস্যগন্ধা। দেখল—মুনিবরের চোখে কী রকম একটা গাঢ় আভা! ও-চোখে ক্রোধ নেই, বিরক্তি নেই, প্রথম দেখার ক্লান্তি নেই। কী রকম যেন অদ্ভুত এক চাহনি! সেই চাহনির অর্থ কি মৎস্যগন্ধা অনুমান করতে পারছে? মৎস্যগন্ধা নারী 1 সুতরাং এরকম পুরুষ-চাহনির অর্থ যে সে একেবারে বুঝতে পারছে না, এমন নয়। সে লজ্জায় মাথা নিচু করল। মৃদু একটা কম্পন সে নিজের মধ্যে অনুভব করতে লাগল।
এই সময় পরাশরের স্নিগ্ধ কোমল কন্ঠ মৎস্যগন্ধার কানে ভেসে এলো, ‘বাসবী, আমি তোমার সঙ্গে মিলন প্রার্থনা করছি।’
বিভ্রান্ত চোখে মৎস্যগন্ধা মুনিবর পরাশরের দিকে তাকাল। তাঁর হঠাৎ প্রস্তাবে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল সে। মুনির প্রস্তাবটি বজ্রাঘাত তুল্য না নিতান্ত শ্রুতিসুখকর, বুঝতে পারল না মৎস্যগন্ধা। একটা অব্যক্ত বিভোরতা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। তার যে এই এত বয়স হলো, কোনো পুরুষ তাকে এরকম করে প্রার্থনা করেনি আগে। তার দেহের ওপর যৌবন আলো ফেলেছে, দিনে দিনে তার নারী-অঙ্গগুলো পুষ্ট হয়ে উঠেছে, কিন্তু কেউ তার দিকে তেমন করে ফিরে তাকায়নি। বলেনি, ‘মৎস্যগন্ধা, তুমি অতীব সুন্দরী, আমি তোমার সঙ্গ চাই।’
চাইবে কী করে? সে তো নিতান্ত কালাকোলা এক ধীবরকন্যা, তার শরীর জুড়ে যে তীব্র মৎস্যগন্ধ! এই মুনি যতই হাডিডসার হোন, যত অধিক হোক তাঁর বয়স, তাঁকে তো যথামর্যাদায় প্রার্থনা করল! এ তো তার পরম পাওয়া!
হঠাৎ জোরে মাথা ঝাঁকাল মৎস্যগন্ধা। ছিঃ! এসব কী ভাবছে সে? সে না দাশরাজার কন্যা? তার না সমাজ আছে? তাকে ঘিরে না তার মা-বাবার স্বপ্ন-সাধ আছে? সর্বোপরি আছে তার কুমারিত্ব! মুনি-সংসর্গে তার কুমারিত্ব বিসর্জিত হবে। গোটাটা জীবন অশুচিময়তার মধ্যে যাপন করে যেতে হবে তাকে। এই মুনি তো তাকে চিরসঙ্গিনী করে নিয়ে যাবেন না। রতিক্রিয়া সম্পন্ন করে হেলায় ফেলে চলে যাবেন। মুনির কাছে সে ক্ষণিক-উত্তেজনার ব্যবহার্য বস্তু ছাড়া তো বাড়তি কিছুই নয়? মুনির ক্ষণিক চিত্তচাঞ্চল্যে ধরা দেওয়া তার উচিত হবে না। কিন্তু ধরা না দিলে মুনি যদি অভিশাপ দেন? যদি ‘নরকের কীট হয়ে পরবর্তীকালটা কাটাও তুমি’—এরকম কিছু একটা অভিশাপ দেন? কী হবে তখন?
এইসময় পরাশরের কণ্ঠ আবার শুনতে পেল সে, ‘তুমি দ্বিধায় পড়েছ, তাই না মৎস্যগন্ধা? একদিকে তোমার কুমারিত্ব, তোমার সমাজ, তোমার পিতামাতা, তোমার ভবিষ্যৎ জীবন, অন্যদিকে মুনির প্রার্থনা। সেই প্রার্থনার সঙ্গে তোমার শিহরণ বাসনাও যুক্ত। কোনটাকে মেনে নেবে তুমি? তোমার কুমারিত্বকে মূল্য দেবে, না আমার প্রার্থনাকে গ্রহণ করবে? আমি বলি কি…।’ অর্ধপথে কথা থামিয়ে দিলেন মুনি।
চকিতে পরাশরের দিকে তাকাল মৎস্যগন্ধা। কোনো কথা বলল না।
‘বলি, আমাকে একটা পুত্র দান করো তুমি। তোমার মাধ্যমে আমি আমার পিতৃঋণ শোধ করতে চাই। যুগান্তরে বিস্তৃত হতে চাই।’ রমণীর সঙ্গে শারীরিক মিলনের পূর্বে পুরুষের মধ্যে যে বাঁধভাঙা কামনা উদগ্র হয়ে ওঠে, সেরকম কোনো চিহ্ন পরাশরের দেহভঙ্গিতে বা কথায় নেই।
মৎস্যগন্ধা নিজের ভেতরে চোখ রাখল। তার ভেতরটা কী বলে? তার ষোড়শীহৃদয় বলছে—অনাস্বাদিত এই স্বাদ গ্রহণ করতে তোমার আপত্তি কেন মৎস্যগন্ধা? অবর্ণনীয় নিবিড় শিহরণ এতে। এক গহিন-গভীর আনন্দ জড়িয়ে আছে এই শিহরণে। ফিরিয়ে দিয়ো না তুমি মুনিকে। গ্রহণ করো তাঁকে। তাতে মুনির তৃপ্তি, তোমার পরমানন্দ।
‘কিন্তু আমার কুমারিত্ব?’ মনকে প্রশ্ন করল সে। সেই প্রশ্ন গলা দিয়ে শব্দ হয়ে বেরিয়ে এলো। মুনির শ্রবণেন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌঁছে গেল মৎস্যগন্ধার প্রশ্ন।
পরাশর মনে করলেন—প্রশ্নটি তাঁকেই করা হয়েছে। স্মিত কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি ভয় পেয়ো না নারী। আমার আশীর্বাদে তোমার কুমারিত্ব অটুট থাকবে। সন্তান প্রসবের কোনো চিহ্ন তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে থাকবে না।’
‘তা কী করে হয়! সন্তান হবে অথচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাপূর্ব থাকবে! আপনার আসঙ্গলিপ্সা মিটাব অথচ আমার কুমারিত্ব বজায় থাকবে?’ লজ্জার মাথা খেয়ে প্রশ্নগুলো করল মৎস্যগন্ধা।
‘ঋষি আমি। বশিষ্ঠ আমার পিতামহ। আমি আমার ঋষিত্বের দোহাই দিয়ে বলছি—আমার আশীর্বাদে তোমার কুমারিত্ব যথাযথ থাকবে। আমার সঙ্গে মিলনের পরও তুমি অপবিত্র হবে না। শুধু তাই নয়…।’ বসা থেকে উঠতে উঠতে পরাশর বললেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাকে তৃপ্তি দেওয়ার ফলে তোমার ভবিষ্য-জীবন রাজকীয় হবে।’
‘রাজকীয় হবে!’ মৎস্যগন্ধার অবিশ্বাসী কণ্ঠ।
‘হ্যাঁ, রাজকীয় হবে। এই ভারতবর্ষের বিখ্যাত এক রাজার সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে। বিপুল মর্যাদায় সেই রাজা তোমাকে প্রধান মহিষী করে তার রাজপ্রাসাদের নিয়ে যাবে।’ মৎস্যগন্ধার পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে বসতে পরাশর বললেন।
মৎস্যগন্ধা সংকুচিত হয়ে নৌকার কাছা ঘেঁষে বসল। বলল, ‘আমি নিম্নবর্ণের সামান্য এক নারী। আপনি ব্রাহ্মণ, সমাজে নমস্য। একজন দাশনারীতে উপগত হওয়া আপনার শোভা পায় না।’
‘বাসনার কাছে উঁচু আর নিচু বলে কিছু নেই। তোমাকে আমার বাসনা পূরণের অনুষঙ্গ বলে মনে হয়েছে, তাই তোমাকে কামনা করছি। তুমি ব্রাহ্মণ আর শূদ্রের কথা বললে। শাস্ত্রে আছে—ব্রাহ্মণ যে কোনো বর্ণের নারীতে উপগত হতে পারে। তুমি আমাকে বিমুখ করো না বাসবী।’ মৎস্যগন্ধাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললেন পরাশর।
মৎস্যগন্ধা শেষ চেষ্টা করল। মুনির জড়িয়ে ধরা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল, ‘মৎস্যগন্ধা আমি। আমার সমস্ত শরীর জুড়ে মাছের উৎকট গন্ধ। আমার সঙ্গে মিলনে আপনার ব্রাহ্মণত্ব কলুষিত হবে।’
এবার অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন পরাশর। বললেন, ‘ব্রাহ্মণত্ব এত ঠুনকো জিনিস নয় যে, তোমার মতো এক নারীর সান্নিধ্যে তা কলুষিত হবে! তুমি নির্বিঘ্ন থাকো।’
তারপর কামাসক্ত চোখে মৎস্যগন্ধার দিকে তাকিয়ে পরাশর বললেন, ‘আমি আশীর্বাদ করছি, তোমার শরীরে আর মাছের গন্ধ থাকবে না। আজ থেকে তোমার শরীর থেকে পুষ্পগন্ধ বের হবে। যোজনপথ দূর পর্যন্ত তোমার শরীরের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। আজ থেকে তুমি পুষ্পগন্ধা। ‘
‘পুষ্পগন্ধা! যোজন পথ দূর থেকে!’ মৎস্যগন্ধার গলা দিয়ে কথাগুলো বেরিয়ে এলো।
‘আমার সঙ্গে মিলনে তোমার কোনো পাপ হবে না। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সত্যবতী নামে খ্যাতি লাভ করবে তুমি।’ বলতে বলতে মৎস্যগন্ধাকে জাপটে ধরলেন পরাশর।
নৌকার অপরিসর পাটাতনে মৎস্যগন্ধাকে শুইয়ে দিলেন।
মৎস্যগন্ধা নিজেকে মুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাল।
কিন্তু ব্রাহ্মণ্যপৌরুষের সঙ্গে একজন কৈবর্তনারী পেরে উঠবে কেন?
.
স্রোতের টানে এবং বাতাসের তাড়নায় নৌকাটি একটা সময়ে ওপারে ভিড়ল। মৎস্যগন্ধার দিকে একপলক তাকিয়ে নদীপারে পা রাখলেন পরাশর। যাওয়ার আগে নৌকাটিকে মাঝ-যমুনার দিকে ঠেলে দিলেন।
.
নৌকার পাটাতনে চিত হয়ে শুয়ে আছে মৎস্যগন্ধা। নিষ্পলক চোখ দুটি ঊর্ধ্বাকাশে স্থির।
আঁধার ঘনায়মান। আকাশের এদিক থেকে ওদিকে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে।
নৌকাটি যমুনাজলে বৃত্তাকারে ঘুরে যাচ্ছে।
পুরনো ওয়েবসাইটটি ভালো ছিল। অনুগ্রহ করে ওয়েবসাইটের Theme চেঞ্জ করুন।
থিম আগেরটিই আছে। শুধু ইয়েলোর জায়গায় পার্পল কালার দেয়া হয়েছে ডার্কমোডের সাথে মিল রেখে।