2 of 3

যমজ কাহিনি

যমজ কাহিনি

মাস তিনেক আগে কেনা হয়েছিল হাঁসগুলো। মোট আটটা। বোলপুর বাজারে শুধু রবিবার হাঁস বিক্রি হয়। আশে পাশের গ্রাম থেকে নিয়ে আসে চাষিরা। বেশ ছোট ছিল তখন। বাচ্চা হাঁস দেখতে তেমন ভালো হয় না, কেমন যেন দুর্বল প্রাণী মনে হয়। বাচ্চা কুকুর দেখলেই যেমন আদর করতে ইচ্ছে করে, হাঁসেরা তেমন নয়।

এই তিনমাসেই বেশ বড় হয়ে গেছে। পুকুরের জলে ভেসে বেড়ায়, এখন তাদের রূপ ফুটেছে। খুব। তেজি আর স্বাস্থ্যবতী। প্রত্যেকটিরই পালকে কত রকম রং।

জানলা দিয়ে পুকুরটা দেখা যায়।

কলম হাতে নিয়ে লেখক চেয়ে থাকেন পুকুরের দিকে। তাঁকে একটা গল্প লিখতে হবে। এখনও এক লাইন শুরু হয়নি।

হাঁসেদের মধ্যে কোনটি পুরুষ আর কোনটি মেয়ে তা চেনা খুব শক্ত। ডাক শুনে বুঝতে হয়। কোনও-কোনও হাঁস দারুণ গলায় জোরে প্যাঁক-প্যাঁক করে ডাকে। কোনও-কোনও হাঁসের ডাক ফ্যাঁস-ফ্যাঁস ধরনের। ওরা এখনও ডিম দিতে শুরু করেনি। দীনবন্ধুর মতে, এবার যে কোনওদিন ডিম পাড়বে।

গল্প লিখতে হবে, এখনও লেখকের মাথায় কিছুই আসছে না।

পুকুরটা বেশি বড় নয়, শীতকালে খুবই ছোট দেখায়। এখন ভরা বর্ষায় থইথই করছে। পদ্মপাতায় ছেয়ে গেছে অনেকটা।

হাঁসগুলো মাঝে-মাঝে জল থেকে উঠে এসে পাড়ে ঘুরে বেড়ায়। হাঁসদের মধ্যে একবারেই দলাদলি নেই। আটখানা হাঁস সবসময় একসঙ্গে থাকে। একজন জল থেকে উঠে এলেই অন্যরাও আর জলে থাকে না। কাছাকাছি কোনও মানুষ দেখলেই ওরা আবার জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একসঙ্গে।

বাগানের লোহার গেটটা কেউ খুললেই ক্যাঁচ করে একটা শব্দ হয়। অমনি সে দিকে চোখ চলে যায়।

সে বুড়িটা এসে ঢুকছে। একেবারে থুলখুলে বুড়ি। মনে হয়, বয়েসের গাছ পাথর নেই। কেউ যদি বলে, তাও অবিশ্বাস্য মনে হবে না। শরীরটা দুমড়ে বেঁকে গেছে, কোনওক্রমে হাঁটতে পারে, কিন্তু সিড়ি দিয়ে ওঠার ক্ষমতা নেই। সিঁড়ির কাছে এসে বসে পড়ে।

পাশের রাস্তা দিয়ে আস্তে-আস্তে হেঁটে যাচ্ছে দুটি তরুণী। পৃথিবীর নিয়মই এই, বুড়ির বদলে যুবতী মেয়েদের দিকেই পুরুষ মানুষের আগে চোখ যাবে।

দুটি তরুণীরই সাজ পোশাকের চাকচিক্য দেখে বোঝা যায়, তারা শহুরে মেয়ে। দুজনের যেন একইরকম চেহারা। যমজ নাকি?

লেখক কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।

মাঝে-মাঝে তাঁর কাছে মেয়েরা দেখা করতে আসে। অটোগ্রাফ চায়। তবে, সাধারণত তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ থাকে। আবার অনেকে ছুটির দিনে এখানে জমি খুঁজতে আসে কলকাতা থেকে। তাদেরও সঙ্গে স্বামী কিংবা অভিভাবকদের থাকার কথা। মেয়ে দুটি এ-বাড়ির দিকেই তাকাচ্ছে।

সাধারণত লেখার সময় কেউ দেখা করতে এলে তিনি বিরক্ত হন। তবে মেয়েরা এলে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। গরমের সময় তাঁর খালি গায়ে থাকা অভ্যেস। কোনও দর্শনার্থিনী এলে তিনি গায়ে একটা জামা গলিয়ে নীচে নেমে যান।

যমজ মেয়ে কিংবা যমজ ছেলে নিয়ে তিনি এ-পর্যন্ত কোনও গল্প লেখেননি। এই মেয়ে দুটির সঙ্গে কথা বললে একটা নতুন গল্পের উপাদান পাওয়া যেতে পারে।

উলটো দিক থেকে সাইকেলে একটি লোক আসছে। মেয়ে দুটি তাকে কী যেন জিগ্যেস করল। তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল সামনের দিকে। ওরা অন্য কোনও বাড়ির সন্ধান করছে। খুব সম্ভবত ওরা বাংলা বইটই পড়ে না।

বুড়িটি হেঁটে আসছে থপথপিয়ে। হাঁসগুলো তার পাশ দিয়ে চলে গেল। অন্য কোনও মানুষের এত কাছে ওরা আসে না। ওরা কি বুঝে গেছে যে এই বুড়ির পক্ষে হাত বাড়িয়ে একটা হাঁস ধরে ফেলারও ক্ষমতা নেই?

বুড়িটি লেখকের চেনা। বারো বছর আগে শান্তিনিকেতনের এই বাড়িটি করার সময় থেকেই দেখছেন। একইরকম চেহারা। এত আস্তে কথা বলে যে প্রায় বোঝাই যায় না। তবে, এইটুকু জানা গেছে যে, তার দুই ছেলেই মারা গেছে। সে থাকে নাতির সংসারে। সেখানে সে যে পরম যত্ন আদর পায় না, তা অনুমান করা শক্ত নয়। লেখকের স্ত্রী প্রতিবারই তাকে কুড়িটা টাকা দেন, সে বিড়বিড় করে অনেক আশীর্বাদ করতে-করতে চলে যায়।

এই বুড়িটিকে নিয়ে কি লেখা যায় গল্প? যাবে না কেন, প্রত্যেকের জীবনেই থাকে গল্প। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সতীনাথ ভাদুড়ির হাতে ভালো খোলে এরকম গল্প। এই লেখকের মনে এখনও ঝিলিক মারছে। ওই তরুণী দুটি কি সত্যিই যমজ ছিল? ওরা এ-পাড়ায় কার বাড়িতে গেল?

একবার এই বুড়িটি কিন্তু প্রায় একটি গল্পের উপাদান হয়ে উঠেছিল।

নতুন বাড়ি বানাবার পর প্রথম-প্রথম খুব উৎসাহের সঙ্গে প্রতিবারই এসে ক্যামেরায় অনেক ছবি তোলা হত। সঙ্গে আসত বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের কেউ-না-কেউ। একবার সেইরকম ছবি তোলা হচ্ছে। সেই সময় এসে পড়ল বুড়ি। একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ও বাবা, আমার একটা ছবি তুলে দাও না গো! আমার ছবি দেখি নাই কোনওদিন।

বুড়ির চোখ দুটি ঘোলাটে। দৃষ্টিশক্তি আছে কিনা সন্দেহ, যদিও নিজেই হেঁটে-হেঁটে আসে। সেবার লেখকের দুই শ্যালিকা এসেছিল, ছোটো শ্যালিকাই জিগ্যেস করেছিল, ও বুড়িমা, তুমি চোখে দেখতে পাও?

মাথা নাড়তে নাড়তে বুড়ি বলেছিল, না-গো-না, সব ঝাপসা। এই তোমার মুখখানিও ভালো দেখতে পাচ্ছি না গো মা! চোখ গেছে।

বোঝাই যায়। কখনও ছানি কাটানো হয়নি, এর চোখ দুটি প্রায় অন্ধই বলাই যায়। ছবি তুললে তো নিজেই দেখতে পাবে না। তবু মানুষের ছবির প্রতি এমনই মায়া।

গ্রুপ ছবি ছাড়াও বুড়ির আলাদা করে দুটি ছবি তুলেছিলেন লেখক। কিন্তু দুঃখ ও লজ্জার কথা, সে ছবি ওঠেনি। বড়ো শ্যালিকার দুষ্টু ছেলেটি ক্যামেরাটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পেছনটা একবার খুলে ফেলেছিল, আলো ঢুকে শেষের দিকে সাত আটখানা ছবি সাদা হয়ে গেছে।

পরের বার গিয়ে বুড়িকে কী বলা হবে? লেখক খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিলেন। শ্যালিকার ছেলের ওপর রাগও করা যায় না।

ছোটো শ্যালিকা বলেছিল, ওকে একটা অন্য ছবি দিয়ে দিন না। আমার ছবিটা দিয়ে দিন। ও তো কিছু বুঝতেই পারবে না।

এই উপাদান নিয়ে অনায়াসেই একট ছোটো গল্প উতরে দেওয়া যেত। বুড়িকে এক সুন্দরী যুবতীর ছবি দেওয়া হল, সে সেই ছবিখানা নিয়েই আনন্দ করতে-করতে চলে গেল…।

কিন্তু লেখক সে গল্প লেখেননি। এর মধ্যে একটা নিষ্ঠুরতা আছে।

আসলে, পরের বার যাওয়ার পর বুড়ি সেই ছবির কথা জিগ্যেসই করেনি। তার কিছু মনে নেই। এর অ্যালজাইমার্স ডিজিজ আছে নির্ঘাত!

হঠাৎ পুকুরের জলে ঝপাং করে একটা জোর শব্দ হল।

লেখক এখনও গল্প শুরু করতে পারেননি, শব্দটায় চমকে উঠলেন। এত জোরে শব্দ কীসের হতে পারে। উঠে গিয়ে তিনি অন্য জানলা দিয়ে দেখতে লাগলেন।

পুকুর ধারে পাশাপাশি তিনটে তালগাছ। জমি কেনার সময় থেকেই এই গাছ তিনটে ছিল। লেখক যে কোনও গাছ কাটার বিরোধী। তাই বাড়ি তৈরির সময় এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে গাছ তিনটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। তারপর পাশ দিয়ে কাটা হয়েছে পুকুর।

এখন গাছ তিনটিকে বেশ মানানসই মনে হয়। ছোটো পুকুরটাকেও অনায়াসেই বলা যায় তাল পুকুর। নজরুলের কবিতা আছে, বাবুদের তালপুকুরে, হাবুদের ডাল কুকুরে, সে কি বাস করল। তাড়া…।

অন্য অনেক গাছেরই নারী-পুরুষ ভেদ থাকে না, কিংবা সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু তাল গাছ। একেবারে মানুষের মতনই। তিনটে গাছের মধ্যে প্রথম একটি গাছে জটা বেরিয়ে এল। অর্থাৎ পুরুষ। কোনওদিনই ফল হবে না। তৃতীয়টাতে পরের বছর ফুল ফুটল। যথা সময়ে পাওয়া গেল অনেক তাল, প্রায় তিরিশ ছল্লিশটা। মাঝখানের গাছটা এখনও চুপচাপ, নারী না পুরুষ বোঝা যাচ্ছে না। এই তিনটে তালগাছ নিয়েও তো গল্প লেখা যায়। মাঝখানের গাছটা যদি ফল ফলাতে শুরু করে। তা হলে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। আর এরও যদি জটা বেরিয়ে আসে। তাহলে দুই পুরুষ ও এক নারী। অনায়াসে হতে পারে ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি।

কিন্তু আরম্ভ করা যাবে কীভাবে।

ভাদ্র মাসে তাল নিজে থেকেই খসে পড়ে। এ-বছর এই প্রথম শুরু হল, প্রথমটাই পড়েছে পুকুরে।

লেখক চেঁচিয়ে বললেন, দীনবন্ধু, একটা তাল পড়েছে, তুলে নাও!

তাল পড়ার শব্দে হাঁসগুলো ভয় পেয়ে পুকুরের অন্যদিকে ডাঙায় উঠে পড়েছে।

ওপরে উঠেই হাঁসগুলো ডানার জল ঝেড়ে ফেলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক যেমন মেয়েরা স্নান করে উঠে গামছা দিয়ে মাথার চুল ঝাড়ে।

মেয়েদের মাথার চুল ঝাড়ার দৃশ্য লেখক দেখলেন কোথায়? সবাই তো বাথরুমে স্নান করে। গামছা উঠে গেছে, তার বদলে তোয়ালে। মেয়েরা আর বড় চুলও রাখে না। তাঁর ছোট শ্যালিকা ও তার এক বান্ধবী এই পুকুরে স্নান করেছ কয়েকবার। সাঁতার কেটে উঠেই গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে চলে গেছে বাড়ির ভেতরে বাথরুমে।

আসলে উপমাটা মনে আসে বাল্যস্মৃতি থেকে। ছেলেবেলায় গ্রামে দেখেছেন, মেয়েরা ব্লাউজ শায়ানা পরে, শুধু শাড়ি জড়িয়ে নামত পুকুরে। বিশেষ করে মনে পড়ে, যমুনা পিসির কথা, লম্বা চুল ছিল পিঠ ছড়ানো, প্রায় লাফিয়ে-লাফিয়ে চুল ঝাড়তেন গামছা দিয়ে, আর কী যেন গান গাইতেন গুনগুনিয়ে। লেখকের বয়েস তখন দশকিংবা এগারো, আর যমুনা পিসির উনিশ-কুড়ি।

অন্য অনেক মেয়ের কথাই মনে নেই, শুধু যমুনা পিসির চেহারাটাই এখনও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে।

সেই যমুনা পিসি এখন কোথায়? ওঃ হো, তিনি তো আত্মহত্যা করেছিলেন গায়ে আগুন লাগিয়ে। তাই নিয়ে গ্রামে কী হইচই।

কেন আত্মহত্যা করেছিলেন! মনে নেই। কিংবা ওই বয়েসি ছেলের সামনে কেউ এ-বিষয়ে আলোচনা করেনি।

ওই যমুনা পিসিকে নিয়ে গল্প লেখা যায় না? একটি কুমারী মেয়ের আত্মহত্যা ঘিরে অনেক রহস্য রোমাঞ্চ থাকে। অনেক কিছু বানানোও যায়। একজন লেখকের পক্ষে এসব খুব সোজা।

তবু কলমে একটা শব্দও লেখা হল না। প্রথম বাক্যটি লেখাই আসল কাজ, তারপর তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়।

যমুনা পিসির সঙ্গে আর একজনের মুখ মিলে যাচ্ছে। তার নামও যমুনা। কিন্তু যমুনা নামটি এখনও পুরোনো হয়নি। সেই ভাবে প্রমথেশ বড়ুয়ার স্ত্রীর নাম ছিল যমুনা, প্রথম দেবদাস। ফিলমের নায়িকা। লেখক এই ফিলম দেখেননি। আজও কোনও-কোনও মেয়ের নাম যমুনা হয়। আত্মপ্রকাশ উপন্যাসের নায়িকার নাম যমুনা ছিল না?

এই মহিলার নাম যমুনা চ্যাটার্জি। নিউক্লিয়ার ফিজিকসের অধ্যাপিকা, বাউলে-তে থাকেন। দেশে আসেন মাঝে-মাঝে। তাঁর স্বামী বিশ্বরূপ লেখকের এক বন্ধুর বন্ধু। গত বছর যমুনা আর অরিন্দম শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসে দুদিন থেকে গেছে এই বাড়িতে।

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুব সুন্দর, দুজনেই অনেক লেখাপড়া জানে, আবার ঠাট্টা ইয়ার্কি আড্ডাতেও বেশ জমিয়ে তুলতে পারে। তবু দুজনের সম্পর্কের মধ্যে কোথাও যেন একটা সূক্ষ্ম ফাটল আছে তা শুধু লেখকের চোখেই ধরা পড়েছিল।

একদিন বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল। কাছেই সেই তিনটে তাল গাছ। যমুনা চ্যাটার্জি নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অত বড় পণ্ডিত হলেও তালগাছের যে নারী ও পুরুষ আলাদা হয়, তা জানে না। শহরের অনেক মেয়েই জানে না। যমুনা চ্যাটার্জি প্রথমে তালগাছকে মনে করেছিল নারকোল গাছ। কচি তাল দেখে সে ভেবেছিল ডাব।

কথায়-কথায় লেখক যখন বললেন, মাঝখানের গাছটার লিঙ্গ নির্ণয় হয়নি, খুবই অবাক হয়ে গেল যমুনা। সে দু-বার জিগ্যেস করল, সত্যিই এরকম বোঝা যায়?

লেখকের স্ত্রী বললেন, দ্যাখো না, ওই যে ওপাশের গাছটা, মাথার কাছ থেকে জটা বেরিয়ে ঝুলছে। ওই লম্বা-লম্বা জিনিসগুলোকে জটা বলে, তাতেই বোঝা যায় পুরুষ। আর এ-পাশে গাছটায় অনেক তাল হয়েছে দেখতেই পাচ্ছ। কাল তোমাদের তালশাঁস খাওয়াব।

যমুনা বলল, আমি সামনের বছরেই এটা দেখবার জন্য আসব। মাঝখানের গাছটা কী হয়, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

একটা তালগাছের লিঙ্গ জানবার জন্য সুদূর আমেরিকা থেকে একজন চলে আসবে, এটা শুনতে অদ্ভুত লাগে!

যমুনার স্বামী জিগ্যেস করল, হঠাৎ তোমার এত কৌতূহল কেন?

যমুনা তার দিকে যেন জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ওই তালগাছটাও যদি পুরুষ হয়…আমি। দেখতে চাই, ওরা পাশাপাশি কেমন ভাবে থাকে! মানুষের মধ্যে তো, দুজন পুরুষ আর-একজন মেয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক হলেও কত ঝগড়াঝাঁটি মারামারি, কত ঈর্ষা, কত ভুল বোঝাবুঝি…

লেখকের স্ত্রী হাসতে-হাসতে বললেন, গাছেরা তো ঝগড়া করতে পারে না, মারামারি করাও সম্ভব নয়। তা ছাড়া আলাদা-আলাদা মেয়ে গাছ আর ছেলে গাছ হলেও ওদের মধ্যে তো ঠিক শারীরিক সম্পর্ক হয় না।

যমুনা বলল, একজন মেয়ের যদি দুজন পুরুষের সঙ্গে মানসিক সম্পর্কও হয়, তাও কি মানুষরা সহ্য করতে পারে? তখনই লেখক যমুনা চ্যাটার্জির জীবনে একটা গল্পের গন্ধ পেয়েছিলেন।

সে গল্পও লেখা হয়নি।

কয়েক মাস পরেও লোক মুখে খবর পাওয়া গিয়েছিল, যমুনার সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

লেখক যা ভেবেছিলেন, বিচ্ছেদের কারণ মোটেই তা নয়। বিশ্বরূপ চ্যাটার্জির নাকি যৌন রোগ ধরা পড়েছে। অথচ সব কাহিনি তো জীবন থেকেই নিতে হয়।

দীনবন্ধু পুকুরে নেমে তালটা তুলছে। অতবড় ফল হলেও তাল জলে ডোবে না।

লেখকের স্ত্রী বুড়িটাকে টাকা দিয়ে দিলেও সে এখনও যায়নি। পুকুর ধারে দাঁড়িয়ে সে জিগ্যেস করছে, ওটা কী পড়ল গো? অ্যাঁ? তাল নাকি? অ্যাঁ?

কেউ তার কথার উত্তর দিচ্ছে না। বুড়িটার নিশ্চয়ই লোভ হয়েছে। কিন্তু বছরের প্রথম তাল অন্য কারুকে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এরপর অবশ্য অনেক তাল পাড়া-প্রতিবেশিদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।

আরও একজন বুড়ি, কিছুটা কম বয়েস, গাঁট্টা-গোঁট্টা, বেচারা, মাঝে-মাঝে মুড়ি চিঁড়ের মোয়া আর নাড়ু বিক্রি করতে আসে। মোটেই ভালো খেতে নয়, শুধুই কিটকিটে মিষ্টি। লেখক একদিন একটা মোয়া মুখে দিয়েই ফেলে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, নাঃ মোয়া ফোয়া চলবে না। ওসব ছেলেবেলাতেই ভালো লাগে।

এখানে অল্প বয়সি ছেলেমেয়ে কেউ নেই, মোয়া কে খাবে? কলকাতা থেকে উৎপল এসেছে, সেও মোয়া পছন্দ করে না। মোয়াউলি কিছুতেই বারণ শোনে না। সে নিজেই গুনে-গুনে প্রতিটি দশটা করে সাজিয়ে দেয় শালপাতায়। বলছি আমাদের লাগবে না, লেখকের স্ত্রী এরকম ধমক দিলে সেও রাগের সঙ্গে বলে ওঠে, তোমরা না নিলে আমার চলবে কী করে? ইচ্ছে না হয় পয়সা দিও না!

তখন বাধ্য হয়েই তাকে পনেরো টাকা দিতে হয়। সে আবার পরের দিন আসে।

লেখকের স্ত্রী মাত্র দুটো নাডু খান, বাকি সব পড়েই থাকে। দীনবন্ধু ওগুলো খায় না। অন্য কারণে। সে বৈষ্ণব, সব জাতের ছোঁয়া খায় না! বৈষ্ণব ধর্মের এই পরিণতি! চৈতন্যদেব যখন হরিদাসকে কোল দিয়েছিলেন।

লেখক একদিন খেলাচ্ছলে হাঁসদের দিকে দুটো মোয়া ছুড়ে দিয়েছিলেন। ওরা দিব্যি খেয়ে নিল। তবে ভেঙে দিলে সুবিধে হয়। হাঁসেরা সর্বভুক। ওদের খিদেরও শেষ নেই। সারাদিনে যত খাবারই দেওয়া হোক, ওরা ঠিক খেয়ে নেবে। শুধু নারকোল নাডুগুলো ওদের ঠিক পছন্দ নয়। ঠুকরে চলে যায়।

বুড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে, লেখকের স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তার হাতে অনেকগুলো নারকোল নাড়ু তুলে দিলেন।

প্রথমটায় সে বুঝতে পারল না, কী জিনিস। মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে গন্ধ শুকল, তারপর জিভ ঠেকাল।

তারপর সে মুখ তুলে এমন একটা স্বর্গীয় হাসি দিল, যেন এমন উপহার সে জীবনে পায়নি। নাডুগুলোকে বাড়ি থেকে বিদায় করার জন্যই যে তাকে দেওয়া হল, সে প্রশ্ন তোলা এখানে অবান্তর! যে পেয়েছে, তার খুশি হওয়াটাই বড় কথা।

সাইকেল রিকশা চেপে একজন কেউ আসছে। থামল এই বাড়ির গেটের সামনে। লেখক তাকিয়ে রইলেন, যুবকটি অচেনা। কোনও নবীন লেখক কিংবা পত্রিকার সম্পাদক হতে পারে। যুবকটি খুবই রূপবান। লেখক হওয়ার চেয়ে তার পক্ষে সিনেমার নায়ক হইয়াই স্বাভাবিক। সিনেমা না হোক, টিভি সিরিয়ালে।

যুবকটি নামল না, দীনবন্ধুকে কী যেন জিগ্যেস করল, লেখক শুনতে পেলেন না।

সে চলে যাওয়ার পর দীনবন্ধু ওপরের দিকে মুখ তুলে বলল, বোনোবানীর কথা জিগ্যেস করছিল!

লেখক তো জিগ্যেস করেননি, তবু দীনবন্ধু এটা জানাতে গেল কেন? তবে লেখকের কৌতূহল হয়েছিল ঠিকই, সেই তরঙ্গ কি দীনবন্ধুর কাছে পৌঁছে গেছে?

বন-বানী নামে কাছেই একটা গেস্ট হাউজ আছে। যমজ মেয়ে দুটিও কি সেখানেই গেছে? এই ছেলেটি যাচ্ছে ওদেরই খোঁজে?

এই রকম এক জোড়া মেয়েকে লেখক এক সময় চিনতেন। অনেক কাল আগের কথা। তখন। তিনি উঠতি লেখক এবং বেকার। সারাদিনে টিউশনি করতেন তিন জায়গায়। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে এক বাড়িতে দুটি যমজ মেয়েকে পড়িয়েছিলেন মাস ছয়েক। বড়োলোকের বাড়ি, কিন্তু সংসারের লোকজন খুব কম। বাবা-মা অনেক সময়ই থাকে না। আজকের মেয়েদুটির চেয়ে। ওদের বয়েস ছিল কিছুটা কম, দুজনেই সবেমাত্র কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভরতি হয়েছে!

ফুটফুটে দুটি মেয়ে, হুবহু একরকম মুখ। ওদের নাম ছিল সোনা আর মণি। কিন্তু কার নাম কোনটা তা বোঝা অসম্ভব। ওদের মা-ও চিনতে পারতেন কিনা কে জানে। আলাদা করার জন্য এক জনের চুলে নীল রঙের, আর একজনের সোনালি ফিতে বাঁধা থাকত। ভুল হত তবু।

এই ভুল নিয়ে নানারকম মজা হত রোজই। শুধু একদিনই অন্যরকম। দুই বোনের মধ্যে একজন ছাড়া সেই দিনটির কথা অন্য কেউ জানে না। ওদের বাবার বোম্বাইতে বদলি হওয়ার জন্য ছমাস বাদে এই টিউশনিটা চলে যায় লেখকের।

সে আসলে গৃহশিক্ষক হিসেবে লেখকের বেশ সুনাম হয়েছিল। মন দিয়ে পড়াতেন তো বটেই। কক্ষনো কামাই করতেন না। ঝড়-বাদল স্ট্রাইক-হাঙ্গামা, তার মধ্য দিয়েও হেঁটে আসতেন।

সেদিনটাও ছিল দুর্যোগের দিন। সারাদিন আকাশ কালো, বিকেল থেকে মাঝে-মাঝে মেঘ ডাকছে। ঠিক সাড়ে ছটায় লেখক গিয়ে উপস্থিত হলেন সে-বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটের দরজায়। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন সেদিন আবার চলছে লোডশেডিং। কলিংবেল বাজছে না, উঠতি লেখক দরজায় টকটক শব্দ করলেন। অন্যদিন দরজা খুলে দেয় একজন বুড়ো কাজের লোক, সেদিন দরজা খুলল, দুজন ছাত্রীর মধ্যে একজন।

বসবার ঘরটা অন্ধকার। একটা মোমও জ্বালা হয়নি।

লেখকের পকেটে সিগারেট দেশলাই। তিনি একটা কাঠি জ্বেলে বললেন, বাতি-টাতি কিছু নেই?

মেয়েটি বলল, আজ আর পড়া হবে না।

লেখক বললেন, অন্ধকারে আর কী করে পড়া হবে! আমি মিনিট পনেরো অপেক্ষা করতে পারি, যদি তার মধ্যে আলো আসে।

মেয়েটি বলল, অন্ধকারে বসে থাকবেন? রঘুটা বাজার করতে গেল, এখনও ফেরার নাম নেই। মোম-টোম কোথায় রাখে জানি না!

লেখক বললেন, তা হলে আমি চলে যাব?

মেয়েটি বলল, একটু দাঁড়ান, আমি রান্না ঘরে একবার খুঁজে দেখি। আপনার দেশলাইটা দিন তো!

ঠিক তখনই বিরাট আওয়াজ করে একটা বাজ পড়ল। মেয়েটি ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল লেখককে।

এরকম আওয়াজে অনেক পুরুষেরও বুক কেঁপে ওঠে। মেয়েরা তো ভয় পাবেই। লেখক বললেন, খুব কাছেই বোধহয় বাজ পড়েছে, যাক ভয়ের কিছু নেই। দ্যাখো, যদি মোমবাতি

মেয়েটি কিন্তু আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করল না। এবং লেখককে দারুণ চমকে দিয়ে বলল, আপনি আমাকে চুমু খাবেন না?

লেখক বললেন, যাঃ, ও আবার কী কথা!

মেয়েটি বলল, কেন, সিনেমায় যে দেখা যায়, এই সময় চুমু খেতে হয়!

লেখক বললেন, সিনেমায়…সে তো নায়ক নায়িকারা…আমি তো…

মেয়েটি বলল, তাতে কী হয়েছে? আমায় কেউ এখনও চুম খায়নি। বাড়িতে এখন কেউ নেই।

লেখক জিগ্যেস করলেন, তোমার বোন কোথায়?

মেয়েটি বলল, সে বাথরুমে ঢুকেছে। সহজে বেরুবে না।

তারপর সে নিজেই লেখকের মুখের কাছে নিয়ে এল স্বর্গের পরীদের মতন নিজের নরম অধোরষ্ঠ।

লেখক শুকদেব নন। তিনি স্বাস্থ্যবান, সূক্ষ্ম অনুভূতিপরায়ণ যুবক। ছাত্রীদের সঙ্গে তিনি কখনও প্রেম করার চেষ্টা করেননি। কিন্তু কোনও মেয়ে নিজে থেকে ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়েছে, এ-অভিজ্ঞতা তাঁর আগে হয়নি। তবু অতিকষ্টে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে তিনি বললেন, না, না, এটা ঠিক নয়। তুমি কোনজন!

মেয়েটি খিলখিল করে হেসে বলল, কেন?

ওই হাসিতে সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল। অপূর্ব মিষ্টি সেই হাসিটি যে ঠোঁটে লেগে আছে, সে ঠোঁট তো অমৃত। চুম্বনটি বেশ দীর্ঘস্থায়ীই হল। মেয়েটি কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না। হঠাৎ এক সময় আলো জ্বলে উঠল, তখনই মেয়েটি ছিটকে সরে গিয়ে দৌড়ে চলে গেল ভেতরে।

খানিক পরে তারা দু-বোন ফিরে এল একসঙ্গে। কোনও একজনেরও চোখে সামান্য ইঙ্গিত নেই, ঠিক অন্যদিনের মতন। লেখকের তখনও বুক কাঁপছে।

তারপর আরও আড়াইমাস পড়িয়েছিলেন তিনি সে বাড়িতে। কোনওদিন এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বুঝতে পারেননি, কোন মেয়েটির ঠোঁটের সঙ্গে মিলেছিল তাঁর ঠোঁট।

ওরা বোম্বাই চলে যাওয়ার পর আর জীবনে কখনও ওদের সঙ্গে দেখা হয়নি। ব্যাপারটা মধুর স্মৃতি হয়ে ছিল অনেক দিন, তারপর আস্তে-আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। আজ আবার মনে পড়ল।

হাঁসগুলো আবার ডেকে উঠল একসঙ্গে। কোনও কারণ নেই, তবু কেন হঠাৎ-হঠাৎ ডেকে ওঠে? সাপ-টাপ দেখেছেনাকি। বর্ষার সময় পুকুরে অনেক ঢোঁড়া সাপ আসে। হাঁসরা সাপকে ভয় পায় না। হাঁসেদের সারা গায়ে পালক। সাপ ছোবল মারবে কোথায়? প্রকৃতিই ওদের এই আত্মরক্ষার উপায় দিয়েছে।

এক লাইনও গল্প লেখার নাম নেই, লেখক হাঁস-টাঁস নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিল। সম্পাদক তাড়া দিচ্ছেন রোজ। সারা পৃথিবীতেই গল্প ছড়িয়ে আছে, চোখের সামনেও ঘুরে বেড়ায় অনেক গল্প, শুধু ঠিক জায়গায় ধরা দরকার। কিছুতেই যে তিনি আরম্ভ করতে পারছেন না।

লেখকের স্ত্রী তলা থেকে বললেন, অনেক বেলা হল, তুমি চান করতে যাবে না?

চড়াৎ করে বিদ্যুৎ চিড়ে গেল আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। হাওয়ার বেগ বেড়েছে, মনে হয় ঝড় আসন্ন। শিগগির বৃষ্টি আসবে।

লেখক ঠিক করলেন, যদি অনেকক্ষণ জোর বৃষ্টি হয়, তা হলে আজ আর স্নান করবেন না। আজ রেইনি ডে। খাওয়ার পর আর লিখতে বসতে ইচ্ছে করবে না।

গেটের বাইরে কলকণ্ঠ শোনা গেল। সেই দুটি মেয়ে আর রূপবান যুবকটি এক সঙ্গে ফিরে যাচ্ছে। এ-বাড়ির সামনে দাঁড়াল।

একটি মেয়ে গলা তুলে বলল, আমরা ভেতরে গিয়ে পুকুরটা দেখতে পারি?

দীনবন্ধুর বদলে এখন উৎপল একটা নিম গাছ থেকে পাতা পাড়ছে। সে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আসুন না।

দোতলার ঘরে বসা লেখককে ওদের দেখতে পাওয়ার কথা নয়। ওরা লেখকের সঙ্গে দেখা করতেও আসেনি।

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে অন্য মেয়েটি বলল, কী সুন্দর হাঁসগুলো দ্যাখ!

বিদ্যুৎ চমকের মতনই লেখকের মনে হল, এই মেয়ে দুটি কি সেই সোনা আর মণি? এখন লেখক ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওরা নিশ্চয়ই খুব চমকে উঠবে।

ওই সিনেমার স্টারের মতন ছেলেটি ওই দুজনের মধ্যেকার প্রেমিক?

লেখক কোন মেয়েটিকে চুমু খেয়েছিলেন, তা আজও জানেন না। কিন্তু মেয়েটি তো জানে। এই ছেলেটি তার প্রেমিক হলে সে কি তাকে প্রথম চুম্বনের অভিজ্ঞতার কথা বলে দিয়েছে?

তারপরই লেখক মনে-মনে হাসলেন। যাঃ, এই মেয়েটি সোনা আর মণি কী করে হবে? সে তো বহুবছর আগেকার কথা। এতদিনে সোনা আর মণি গিন্নিবান্নি হয়ে গেছে, এমনকি ওদের নাতি নাতনি হয়ে যাওয়াও আশ্চর্য কিছু নয়।

এই মেয়ে দুটি খুব সম্ভবত যমজ বোনও নয়। খুবই চেহারায় মিল আছে, কিন্তু বোধহয় বয়েসের তফাতও আছে দু-তিন বছর।

তবু লেখক এর মধ্যে একটা গল্পের গন্ধ পেয়ে গেলেন। যদি এতগুলি বছর সঙ্কুচিত করে চার পাঁচ বছরে আনা যায়?

একজন গৃহশিক্ষক এক ঝড় বাদলের সন্ধ্যায় দুটি যমজ ছাত্রীর মধ্যে একজনকে একবার চুমু খেয়েছিল, এটা নিয়ে কোনও গল্প হয় না।

কিন্তু চার-পাঁচ বছর পর যদি মেয়েটির সঙ্গে আবার হঠাৎ লেখকের দেখা হয়ে যায়, সঙ্গে ওদের একজনের প্রেমিক, তা হলে মনে-মনে একটা খেলা চলতে পারে।

লেখক পেয়ে গেছেন গল্পের প্রথম লাইন।

তিনি লিখলেন, সেদিনও ছিল এক বজ্র-বিদ্যুতের সন্ধ্যা। সারা শহর অন্ধকার…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *