ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ

ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ

দিদি গাদিয়াড়া যাবেন?

‘আমরা ফিরব কবে?

এ যেন অবিকল সেই প্রবাদপ্রতিম হাভাতেপনার উদাহরণ, ‘বাঙাল, ভাত খাবি?’ না, ‘আঁচাবো কোথায়?‘

অনেকদিন ধরে মনটা পালাই পালাই করছে, আর দেহ বাধা দিচ্ছে। রক্তচাপ রক্তচক্ষু করে শয্যাবন্দী রেখেছিল পুরো পুজোর ছুটিটা। দুদিনের জন্য শুধু ছুটে গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে—আত্মীয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে। পুজোর ছুটি ফুরোতে চলল, হাতে কাজ জমে আছে অজস্র, বাড়িতে বিজয়ার ভিড়—যদিও খুব ভালো লাগছে। ‘লোক, না লক্ষ্মী’ মা বলতেন, ‘যতদিন বাড়িতে লোকজন আসে, ততদিনই বাড়িতে লক্ষ্মী আছেন, জানবি।’ কিন্তু পরিশ্রমও হচ্ছে তো? আমাদের বাড়িতে অতিথি এলে, সে একলা আমিই আছি সবার সঙ্গে গড়গড় করে কথা বলবার জন্যে। তারই ভেতর নিজের লেখাপড়ার কাজ করতে খুব চেষ্টা করছি, কিন্তু এগোচ্ছে শামুকের গতিতে। মননে, শরীরে এত শ্রান্তি, মগজে না ঢুকছে কিছু বেরচ্ছেও না কিছুই। এমনই সময়ে ভ্রমণ-সম্পাদক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী ঠিক যেন দেবদূত হয়ে নেমন্তন্ন দিলেন। ঠান্ডা গাড়িতে, ধুলো-ধোঁয়া বাঁচিয়ে সোজা নদীর হাওয়ায়। আমি তো এক লাফে রাজি! দল বলতে আমি, অমরেন্দ্র, টুকু আর আমার দিদিভাই, বুলবুলি। গাদিয়াড়ার রূপগুণের সুনাম শুনছি ইদানীং বেশ কিছুদিন ধরেই। সেখানে নাকি ভাগীরথীর সঙ্গে রূপনারায়ণের জোড় বাঁধার খেলা চলছে। সেই খেলাতে ওদের সঙ্গী ধানখেতের শান্ত সবুজ, আর খোলা আকাশের স্বচ্ছ নীল, আর সাক্ষী নদীর হাওয়ার ঝিরঝিরে আদর। চোখের আরাম। মনের বিশ্রাম। আত্মার শান্তি।

জলের ধারে ঘর আমার চিরদিনের স্বপ্ন। নদী আমার প্রেম। একটা রাত্রি, দুটো দিন জলের ধারে নদীর কাছে মনপ্রাণ ছড়িয়ে শ্বাস নেব। অক্টোবরের ১৪ তারিখ সকালে যাব। ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় ফিরব। শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ, সবকিছু ধুয়ে মুছে দেবে ভাগীরথী আর রূপনারায়ণ।

ঠিক হয়েছে সকাল সাতটায় বেরবো, যাতে দশটার মধ্যে পৌঁছে যাই। যতক্ষণ পারি থাকতে হবে তো নদীর ধারে? তাই সেই কোন ভোরে উঠে পড়েছি। রাত থাকতে স্নান সারা, পুঁটলি বাঁধা, ওষুধপত্র খেয়ে একদম রেডি!

সাহেবদের মতো সাতটায় গাড়ি এসে হাজির। গেটে ভৌ ভৌ করে কাতর গুডবাই জানাতে লাগল টুসুরানি আর রাকুন। আর তাদের সামলে হাত নাড়তে থাকে কানাই, ‘ভালো করে ঘুরে আসুন দিদি!

‘কাল সন্ধেবেলাই ফিরব!’

নতুন হাওড়ার ব্রিজে বিদ্যাসাগরের নামে গড় করে তো আমরা হাওড়ায় প্রবেশ করলাম। টুকু সারথিকে মনে করিয়ে দিলেন, ‘রাজীব গান্ধির মূর্তি পেরিয়ে, বাঁদিকে। মনে আছে তো? সেবারে যে গেলাম?’ কিন্তু রাজীব গান্ধির স্ট্যাচু আর এল না। পথে একটি হোটেল পড়ল, কবে নাকি একবার ঝাড়গ্রামের যাত্রাপথের বর্ণনায় হোটেলটির উল্লেখ ছিল ভ্রমণ পত্রিকায়, সেই থেকে অমরেন্দ্রর সেখানে স্ট্যান্ডিং চায়ের আমন্ত্রণ আছে। তা, আমার প্রাণে একটু চা-টার লোভ জাগলেও, অমরেন্দ্র, দেখা গেল, নির্লোভ সম্পাদক। কেরালা-ভ্রমণের এক উপাদেয় কাহিনী শোনাতে শোনাতে হোটেলের সামনেটা পার করে দিলেন। অমরেন্দ্রর মুখে ফ্রান্সের সূর্যমুখী, ল্যাভেন্ডার আর আঙুরখেতের গল্প শুনছি আর মনে মনে নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলাচ্ছি, আর চলছি তো চলছিই। রাজীব গান্ধির সেই প্রতীক্ষিত মূর্তিটি কোথাও নেই!

এমন সময়ে আমরা এসে পড়লাম অপূর্ব এক কাশবনের আঁচলের আওতায়। টুকু উছলে উঠে বললেন, ‘বাঃ!’ তারপরেই—’বাড়িতে ফেরার সময়ে কিছু কাশফুল নিয়ে যাব!’ অমরেন্দ্র তক্ষুনি গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিয়ে, নেমে পড়লেন। না, পরে বুঝেছি ফুল তুলতে নয়, ফটো তুলতে। আস্তে আস্তে কাশফুলের বনে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

আকাশটার রং টলটলে নীল। রচনা বইতে শরৎকালের যেমন বর্ণনা থাকে, অবিকল তেমনই। নীলের মধ্যে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে, ঘন কাশবনে হাওয়ার সাদা ঢেউ খেলে যাচ্ছে, সবুজ মাঠ বৃষ্টি ধোয়া। অমরেন্দ্রর ছবি তোলা ফুরোয় না! গাড়িতে এসে তাঁর কেবল নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার বিস্ময়, ‘আকাশখানা দেখেছেন! কী অসাধারণ নীল!

ইতিমধ্যে ড্রাইভার জানালেন, রাজীব স্ট্যাচু লরির ধাক্কায় কাত। এদিকে গাদিয়াড়ার পথও আমরা অনেক পিছনে ফেলে এসেছি। অগত্যা অ্যাবাউট টার্ন করে ছুটলাম। এবার পশ্চাদপসারণ। বড় রাস্তা ছেড়ে গ্রাম্যরাস্তা। কত বাজার, কত হাট, কত রেললাইন, কত বাসস্ট্যান্ড, কত বাঁশবাগান, কত সবুজ পানাপুকুর, কত সবুজ ধানখেত। বাতাসে শহরের ধোঁয়া নেই। মানুষ দরিদ্র, কিন্তু হতদরিদ্র মনে হচ্ছে না।

একটা মোড়ে এসে আটকে যাই। এখানে বাঁয়ে ঘুরতে হবে—গাদিয়াড়ার পথে। চারটে ছেলে এসে কালীপুজোর চাঁদা চাইছে। অমরেন্দ্র তাদের বললেন, ‘তোমরা কি জানো, এটা বেআইনি? আমি যদি পুলিশকে বলে দিই’? বললেন বটে কিন্তু দিয়েও দিলেন পাঁচ টাকা।

গাদিয়াড়ার পথ আগলে দাবি-দাওয়া হল এমনই আরও তিনবার। বাচ্চারা ছোট হলে অবশ্য দুটাকাতেই খুশি। কোথাও পুজোর কোনও রকমের প্রস্তুতি অবশ্য দেখা গেল না। তবে হ্যাঁ, একটি মোড়ের সিনেমা হল দেখলাম, তাতে ছবি চলছে, ‘বাবা কেন চাকর?’ বোধহয় স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে? সেখানে বেশ ভিড়!

রাস্তাটা এখানে দক্ষিণ ফ্রান্সের অ্যাভেনিউগুলিকে মনে পড়িয়ে দেবেই। ছায়াময় পথ দুপাশে উঁচু গাছ গির্জার দেওয়ালের মতো খাড়া উঠে গেছে, আর করজোড়ের মতো মিলিত হয়েছে আকাশে। আমাদের মাথার ওপরে গাছের ছাদ। এ পথটুকু খুবই সুন্দর। তারপর হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরেই সামনে ম্যাজিক—বিশাল জলরাশি! তাকে ঘিরে দূরে দেখা যাচ্ছে শ্যামল রেখা। চোখ জুড়িয়ে যায়, নাড়িও যেন ধুকপুকুনি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। এক নিশ্বাসে সেই রূপটি অন্তরে গ্রহণ করি। গাড়িতে ছোট্ট একটা শব্দ হল সেই সুখ-বিস্ময়ের শ্বাসটানার।

দূরে দুরকম রং দেখা যাচ্ছে, বাঁয়ে বিশাল গেরুয়া, ডাইনেও তাই, মাঝখানে হঠাৎ কিছুটা ঝিরঝিরে ঘননীল স্রোত। সেটা কি মেঘের ছায়া? নাকি রূপনারায়ণের স্বাক্ষর? আকাশ তো ঝকঝকে নীল, সাদা মেঘের কি ওরকম ছায়া হবে? নিশ্চয় রূপনারায়ণ জানান দিচ্ছে। ঠান্ডা গাড়ি, বন্ধ গাড়ি, তাতে নদীর হাওয়া ঢোকে না। আমরা কাচ নামিয়ে ফেলি।

বাঁয়ে সরকারি অতিথিশালা, রূপনারায়ণের নামে তার নাম। ভেতরে অনেকখানি সবুজ, একটি সুদৃশ্য কুটির আছে খড়ের ছাউনি দেওয়া, আহা, সেটি কি? সেটি কি? নাঃ, ওটা কোনও অফিস। আরেকটি সুদৃশ্য পুরনোদিনের দোতলা কোঠাবাড়ি রয়েছে, একটু ভাঙাচোরা, একটু মলিন, বিস্মৃতি বিলগ্ন। একেবারে নদীর ধারে। বারান্দায় ডেকচেয়ার। সেটি কি? সেটি কি? নাঃ সেটি কিছু নয়। পুরনো অতিথিশালা।

তবে?

ভেতরে যান।

ভেতরে প্রথমেই চোখে পড়ে বোটিং-এর তীরচিহ্ন। সেটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে চকচকে পুকুর, সেখানে প্যাডেল বোট চালিয়ে ফুর্তি করে যান কলকাতার লোকেরা। নদী ফেলে। নদীর বড় বড় নৌকো ফেলে। স্টিমার ভুটভুটি ফেলে। নদীর দিকে পিছন ফিরে। পুকুরের এক ধারে অনেক রংচঙে বোট উপুড় হয়ে পড়ে আছে, তাদের ভালোবেসে ধুয়ে মুছে রাখেনি কেউ, একমাত্র আদর করে জড়িয়ে রেখেছে ঘন মাকড়সার জাল।

দুটি এ সি ঘর। একটিতে এ সি কাজ করে না। নাকি গোড়া থেকেই। শুধু শব্দ করে। অমরেন্দ্র আমাদের অন্যটি দিলেন, যেখানে এ সি চলে।

(হ্যাঁ, চলত। একটু পরেই বন্ধ হয়ে গেল। আর দুদিনে চলল না।) আমরা দরজা-জানলা খুলে দিই, বারান্দায় নদী দেখতে দৌড়োই। ও মা! সামনে যে ঝাঁকড়া গাছের দু-সারি পর্দা! ফাঁকে ফাঁকে নদীর গেরুয়া। ফাঁকে ফাঁকে নৌকো বয়ে যায়। কিন্তু ও কী? এ কোন আকাশ? অমরেন্দ্রর সেই শরৎ সুনীলের শোভা গেল কোথায়? এ যে নীল অঞ্জনঘনপুঞ্জ শোভায় সম্বৃত অম্বর! এ সংবরণ তো বেশিক্ষণের নয়। এবারে বৃষ্টি নামবেই। আকাশের রং কালো। নদীতে তার গাঢ় ছায়া

লাঞ্চ অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। ডাল, ইলিশ মাছভাজা, আলু-পটলের সব্জি, রুই মাছের ঝোল। আমরা খেতে যাব একঘণ্টা পরে। খেতে খেতেই আকাশ অসম্ভৃত হয়ে পড়লেন!

খাবার পরে একটু বিশ্রাম করা নিয়ম। দিদিভাই আর আমিতো বারান্দায় বৃষ্টির ছাটে ভিজতে ভিজতে বিশ্রাম করতে লাগলাম। যেটুকু নদী পাওয়া যায়, ভেতরে ভরে নিই। একটু পরে টুকু, অমরেন্দ্র হাজির।

‘চলুন, বৃষ্টিটা থেমেছে। একটু ঘুরে আসি।’

‘এক্ষুনি, এক্ষুনি।’

বৃষ্টি কিন্তু থামেনি। ধার করা ছাতা মাথায় দিয়ে আমরা স্টিমার ঘাটে যাই।

গেঁওখালি আর নূরপুর। এই দুটো জায়গায় যায় স্টিমার। দুটেই ওপারে। ত্রিকোণ যাত্রা সম্ভব—গাদিয়াড়া-নূরপুর-গেঁওখালি—গাদিয়াড়া। নতুবা যে কোনও ঘাট থেকে যে কোনও ঘাট। চারজনের গাদিয়াড়া থেকে নূরপুর যাবার টিকিট চোদ্দ না পনেরো টাকা। গেঁওখালির ভাড়া আরও কম। নূরপুরের ভুটভুটি ছাড়ছে তিনটেয়।

ঘাট যেমন হয়।

ভুটভুটির ছাদে দাঁড়ানো আইনত নিষিদ্ধ। ভুটভুটির পেটের মধ্যে ঢুকতে হবে। ছাদে দাঁড়ালে বিশুদ্ধ নদীর হাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়া যায়, আকাশ, আলো আর নদীর সঙ্গে গল্প করা যায়। পেটের মধ্যে ঢুকলে আঁধার, মনখারাপ, ভুটভুটির ভটর ভট্টর আর ডিজেলের বিষবাষ্পে নিশ্বাস নেওয়া। সেটাই আইনত নিতে বাধ্য যাত্রীসকল। ওপরে ছাদে কোনও রেলিং ঘেরা নেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই।

বাচ্চারা বেঞ্চিতে হাঁটু গেড়ে জানলা দিয়ে নদী দেখছে। বসে পড়লে গর্তে ঢুকে যাবে। কিছুই দেখা যাবে না। দিদি, টুকু আর আমিও তাই করি। অমরেন্দ্র ক্যামেরা নিয়ে একটু দূরে দূরে ঘোরাঘুরি করছেন ওই ঘুপচির মধ্যে। উদ্দেশ্য জানলা দিয়ে নদীর ছবি তোলা। প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। যাত্রী কম। হলদে প্লাস্টিকের পর্দাটা ফেলে দিলেন চালক। সোনায় সোহাগা। আমি তো জোর করে তুলে দিলাম,জল আসে আসুক, বিশুদ্ধ বাতাসটাও তো আসবে? এ যেন জলের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা নয়, বৃষ্টির সৈন্য। নূরপুর এসে গেল ১৫ মিনিটে। প্রচণ্ড বৃষ্টি, আর ঝোড়ো বাতাস। মানুষের ছাতা উড়ে যাচ্ছে। ভিজে কাপড় গায়ে লেপ্টে আছে। তারই মধ্যে উঠছেন দুকোলে দুই বাচ্চা নিয়ে মা। বালতি মাথায় দিয়ে স্বামী। সাইকেল নিয়ে মানুষ। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পরিবার। নূরপুর থেকে ফিরলাম গাদিয়াড়া। এবারে অমরেন্দ্র আর আমি সিঁড়িতে। আমরা বড় ছাতাটা সিঁড়ির গর্তের মাথায় মেলে রেখেছি, বৃষ্টিতে ভিজছি না, কিন্তু টাটকা বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি।

কোনওরকমে গাদিয়াড়াতে নেমে, ফেরার টিকিটের পয়সা দিয়ে গাড়িতে চড়ে পালিয়ে বাঁচি। কোথায় একটু ধাবায় বসে চা খাব, তা নয়!

চট করে অন্ধকার নেমেছে। এবং লোডশেডিং ঘোরতর। আমরা ঘরে মোমবাতি জ্বেলে, চা খেতে খেতে, অমরেন্দ্রর মুখে ছোটদের কবিতা শুনি। সন্ধে গাঢ় হয়। নরম মোমের আলোয় নরম শিশুদের ছড়া দিব্যি আবেশ তৈরি করেছে। হঠাৎ আলো ফেরে। পাখা চলে।

‘দেখি তো, টিভিটাও চলে কিনা?’ টিভিটা চালিয়ে দিতে অস্পষ্ট একটা ছায়া ভেসে উঠল। অমিতা সেন। ইনসেটে তাঁর পুত্র অমর্ত্য সেনের ছবি। কোনও শব্দ নেই। আমি লাফিয়ে উঠি, ‘দিদিভাই! এবার তাহলে পেয়ে গেলেন! অবশেষে!’ কদিন ধরেই কাগজে নোবেলের খবর একটা একটা করে বেরোচ্ছে। দিদি, অমরেন্দ্র, টুকু,—আমরা সেই সন্ধ্যা যে কী করে কাটালাম, সেই দূর গ্রামে, রূপনারাণের কূলে! তারই মধ্যে ম্যাজিক, আজকালের টেলিফোন-’প্রতিক্রিয়া?’

পরদিন সকালে উঠে দেখি আকাশ পরিষ্কার। রাতে আমার ঘুম হয়নি। নদীর ধারে হাঁটতে গেলাম চারজনে। অমরেন্দ্র উধাও। গ্রামের সরু পথে, কলাবাগানের, ধানখেতের মধ্যে হারিয়ে গেলেন তিনি।

আমরা মনোরঞ্জনের সঙ্গে কথা বলি। সে আমাদের নদীতে নিয়ে যাবে। আমরা খগেনের সঙ্গেও কথা বলি। সে আমাদের সাইকেলভ্যানে করে গ্রামে নিয়ে যাবে। নদীর ধারের গাছগুলোর কেন যে জলে হাত ডোবাতে, আঙুল ছোঁয়াতে এত ইচ্ছে করে? নিচু হয়ে পড়েছে। তারপরে মনোরঞ্জনের কাঠের নৌকো। আসল তরণী বাওয়া। একঘণ্টা ধরে ভাগীরথী থেকে রূপনারায়ণ হয়ে ফের ভাগীরথীতে ফেরা। সূর্যোদয়, নদীর হাওয়া, নোবেল প্রাইজ। আজ সন্ধ্যায় নয়, আমাদের এক্ষুনি ফিরতে হবে কলকাতায়। আজ তো কলকাতায় সাত-সমুদ্রের বাতাস লেগেছে।

ফিরতে সময় লাগল অনেক কম। এসে দেখি কানাই আড়াইশো নাম লিখে রেখেছে। ফোনের অতিথির। বি বি সি, আজতক, দূরদর্শন, আকাশবাণী, আনন্দবাজার ইত্যাদি এবং অগণিত বন্ধুর নাম।

আমাদের স্মৃতিতে ভাগীরথীর বুকে লেগে থাকবে স্টকহলমের বাতাস। গাদিয়াড়ার সেই মোমজ্বলা সন্ধ্যাটি ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটা নতুন সূর্য ওঠা সকাল হয়ে রইল।

প্রকাশ : ‘ভ্রমণ’ জানুয়ারি ১৯৯৯

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *