জলের ধারে ঘর : পুনশ্চ ২০০৫
দশটা লেখায় অন্তত ছ-বার তো জলের ধারে ঘরের প্রসঙ্গ উঠেছে? আমার ভিখিরিপনায় ঈশ্বরও অস্থির হয়ে অগত্যা বর দিয়ে ফেলেছেন। অহৈতুকী করুণা বলে কথাটা একদম সত্যি। ওই প্রবন্ধের দশ বছর পরে আমার সত্যি সত্যি জলের ধারে ঘর হয়েছে।—জলের ধারে নিজস্ব বাসা। ছোট দুটি কামরা আর মস্ত একটি উঠোন, এক্কেবারে গঙ্গানদীর ওপরে। ‘গঙ্গার পশ্চিমকূল বারাণসী সমতুল’–সেই সেখানেই। যেখান থেকেই পূর্বদিকে চাইব, দেখতে পাবে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, আর সারদা মঠ। রাতে বালিব্রিজের ম্যাজিক আলোর মালা।
আর ভোর থেকে নৌকোর সারি। কোনওটায় বারোজন কালোমানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড় টানছে—যেন মিশর দেশের ফুলদানির ছবি। কোনওটায় একটি মানুষ বসে বসে দাঁড় বাইছে। দুটির ছাঁদ দুরকম। কখনও পুলিশের লঞ্চ, কখনও ভ্রমণকারীদের। তারা মাইক বাজিয়ে যায়। আর:জেলেনৌকো?—ভোরের দিকে ডাকলে টাটকা মাছ দিয়ে যায় নৌকো থেকে। নীল, হলুদ, গেরুয়া পালের নৌকো আছে তিনটি, যায় ভোরে। সূর্যোদয় দেখা যায় খুব সুন্দর। সূর্যাস্ত কিন্তু দেখা যায় না, শুধু পাখির ঝাঁক, শুধু জলের রং বদলই তার সাক্ষী থাকে। রাত বাড়লে, জেলেনৌকোয় লণ্ঠন জ্বেলে রান্না হয়, ওদের রেডিওতে হিন্দি গান বাজে। বাঁদিকে একটা চমৎকার কুটির বেঁধেছে জেলেরা, জলের মধ্যে বাঁশ পুঁতে, মাচা বেঁধে। সেখানে রাতে লণ্ঠনের আলো কাঁপে। পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ আসে। ঠিক ছবির মতো দেখায়। খুটিতে একটা সবুজ রঙের ছোট বজরা বাঁধা থাকে সন্ধে থেকে সকাল। সকালে সে ভেসে যায়। তার আলপনা আঁকা দোর জানালা আছে। ভারি সুশ্রী।
আমি যখন ইচ্ছে তখনই জলের ধারের বাসায় গিয়ে থাকতে পারি এখন! ঈশ্বরের অশেষ করুণা সেখানে গঙ্গার শীতল বাতাস হয়ে বয়ে যায়। কিন্তু ‘চিরদিনের ইচ্ছে’ পূরণ হয়ে যাওয়া কি ভালো? এবারে কী?