বুনো ঘোড়ার দেশে
অদেখা কামার্গ
কেম্ব্রিজে, আমার ছাত্রবয়সে, আমাদের ডাক্তারের ওয়েটিংরুমে বসে বসে একটা বিলিতি পত্রিকার পাতা ওল্টাতে গিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিলুম একটা ছবি দেখে। ধু-ধু মাঠে একদল সাদা ঘোড়া ছুটে যাচ্ছে পাশাপাশি, জলাভূমির জল ঘেঁসে তাদের সেই দৌড়—পায়ের দাপটে ফোয়ারার মতো আকাশে ছিটকে উঠেছে নোনাজলের মেঘ—জল আর আকাশের মাঝখান দিয়ে যেন স্বপ্নের মতো ছুটে যাচ্ছে একদল অসহ্য সুন্দর সুঠাম সতেজ সাদা ধবধবে ঘোড়া-কেশব ফুলিয়ে চামরের মতো লেজ দুলিয়ে। স্বভাবত আমি পশুপ্রেমী বটে কিন্তু খুব একটা অশ্বপ্রেমী ছিলুম না, তেমন অশ্ব দেখিনি বলেই বোধহয়। কিন্তু এই রূপবান ঘোড়ার সাার যেন আমার ‘চোখের আঠায় আটকেছে বাঘ, নড়ে বসছে না’!
জায়গাটার নাম কামার্গ, দক্ষিণ ফ্রান্সে অনেকখানি পোড়ো জমি নিয়ে এই অঞ্চল। সেহ পত্রিকায় ঘোড়া ছাড়াও ছিল ভয়াল বুনো বাইসনের শিং নিচু করে দৌড়ে যাওয়া, ছিল পরীর মতো গোলাপি ফ্লেমিঙ্গো পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। কামার্গের কথা পড়ে আমার খুব হিংসে হয়েছিল সেই সাংবাদিকটির ওপরে, যিনি ওখানে গিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে অপূর্ব ছবিগুলি তুলেছেন এবং প্রবন্ধ লিখেছেন।
ইশ! এদেশে এরা কত কিছু সুযোগ পায়। কত কী দেখতে পায়। কত জায়গায় বেড়াতে যায়। আমার শুধুই ইউনিভার্সিটি আর বাড়ি! বাড়ি আর লাইব্রেরি।
আর বেড়াতে যাওয়া মানেই দেশে যাওয়া। ‘ভালোবাসা’ আর ‘প্রতীচী’ এই দুটো বাড়ির মধ্যে ঘুরে ফিরে সময় কাটানো! জীবনে কখনোই দেখা হবে না ফ্রান্সের দক্ষিণের ওই উদ্দাম আরণ্যক বেলাভূমি যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্য বাইসন আর বন্য ঘোড়ার দল। ওইখান থেকেই বুনো ষাঁড়ের বাচ্চা ধরে এনে তাদের স্পেনের বুলফাইটের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়। ওইখান থেকেই ধরে আনা হয় বুনো পুরুষ ঘোড়া, ঘোড়দৌড়ের তেজী ঘোড়াদের বংশবৃদ্ধির জন্য। ফরাসি সরকার ওই অঞ্চলটাকে বন্য রেখেছেন, ইচ্ছে করেই। যাতে ঘোড়াদের ষাঁড়েদের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। মানুষের তো অসীম ক্ষমতা নিসর্গকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার। দক্ষিণ ফ্রান্সের নৈসর্গিক দৃশ্যের তালিকায় এই ছুটন্ত বুনো ঘোড়াদের পায়ের ধাক্কায় ছিটকে-ওঠা সমুদ্রজলের ফোয়ারা একটি অতি জনপ্রিয় দৃশ্য। সারা পৃথিবীর সব পোস্টারের দোকানেই একটা না একটা থাকবে—কামার্গের ঘোড়াদের ছুটন্ত ছবি, নীল আকাশ আর নীল জলের মাঝখানে দুই পা শূন্যে তোলা সাদা ঘোড়া আর সাদা জলের ফেনা, দুটোই ছিটকে উঠছে আকাশে—সেই দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে কার না করবে? আমারও করত। কিন্তু কোনওদিন তার সুযোগ আসবে বাস্তবিক ভাবিনি। যেমন আমি জানি আমাদের দেশেও প্রায় এইরকমই বন্য অঞ্চল আছে কচ্ছের ‘রান, যেখানে আরবসাগর, আগুনে আকাশ আর নোনা মাটির সন্ধিস্থলে ঠিক এইভাবেই ছুটে বেড়ায় দলে দলে বন্য সাদা গাধার দল। ঘোড়া নয় তারা, কিন্তু খুবই সুদর্শন জীব। কোথাও কিন্তু তাদের পোস্টার দেখি না—তাদের সেই ছুটে যাওয়ার দৃশ্য ট্যুরিস্টদের দেখাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও দেখি না। ফ্রান্সে কিন্তু আছে। এখন ইচ্ছে করলেই কামার্গের বন্য নিসর্গে ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। ট্যুরিস্ট কোম্পানিদের বাসট্রিপ আছে, যারা কামার্গে নিয়ে যায়। আমি যখন কামার্গের ছবি দেখে কামার্গের প্রেমে পড়ি, আমার তখন কামার্গে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ছোট ছোট বাচ্চার মা, অতি ব্যস্ত স্বামীর স্ত্রী, এরকম উন্মাদ, উদ্দাম ইচ্ছেই বা তার হবে কেন? কিন্তু না, ইচ্ছে হয়নি তা নয়। সত্যি বলতে কি—ইচ্ছে পূরণের চেষ্টাটা করা হয়নি। সম্ভব নয়, তাই চেষ্টা করিনি। কিন্তু গোপন ইচ্ছেটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। ঘন নীল জল আর ঘন নীল আকাশ, তার মাঝখান দিয়ে অদৃশ্য খুরের আঘাতে সাদা ধবধবে ফেনার ফোয়ারা আকাশে ছিটিয়ে সবেগে ছুটে যেত একপাল বুনো সাদা ঘোড়া। ওই পর্যন্তই।
সত্তরের শেষদিকে আমার সেই স্বপ্নদৃশ্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবার সুযোগ এসে গেল। ঈশ্বরের করুণার সীমা নেই। আমার চাহিদা খুব অল্প–হয়তো তাই যেটুকু চাই তার চেয়ে শতগুণ বেশি করেই তিনি আমাকে দান করেছেন। আমার ঝুলিটা ছোট, তাই সবটা গ্রহণ করতে পারিনি। অনেক, অনেকখানি ফিরিয়ে দিতে হয়েছে গ্রহণযোগ্যতার অভাবে।—হয় আলস্য, নয় স্বাস্থ্য, নয় বিভ্রম, নতুবা অন্য কাজের দায়িত্ব—কিছু না কিছু ‘কারণে’ অঞ্জলি পাতার সুযোগই হয়নি আমার। ভিক্ষার চালটুকু বিধাত্রীমাতার আঁচলেই রয়ে গিয়েছে বাঁধা। আর আমি থেকে গেছি সেদিনের মতো অভুক্ত।
কিন্তু করুণা সীমাহীন। স্বচক্ষে কামার্গ দর্শনের সুযোগ জীবনে কখনও পাব ভাবিনি। কোথা দিয়ে কখন যে কী পাওয়া হয়ে যায়। ১৯৭৯তে আমি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ পড়তে aix-en-Province-এ উপস্থিত হয়েছিলুম। আগেও গিয়েছি aix-en-province-এ—কেম্ব্রিজ থেকে, অমর্ত্যর সঙ্গে। সেবারে ছিল অর্থনীতির সম্মেলন, পেপার পড়ছিলেন তরুণ অমর্ত্য সেন এবং সম্মেলনে ইকনমিক হিস্ট্রিও থাকায়, পেপার পড়লেন তপন রায়চৌধুরী এবং অ্যালিস থরনার, ড্যানিয়েল থরনার, এরিক হবসব্যম-এর মতো এখন বিশ্ববিখ্যাত স্কলারেরা। সেবারেও খুব ঘুরে বেড়ানো হয়েছিল। দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্রতীর ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায়। ট্যুরিস্টদের ধ্রুপদী স্বপ্নরাজ্যে ঘুরেছিলাম সেবারে আমরা—নীস থেকে নীচে সান রেমো, স্যাঁ রাফায়েল, সান ত্রোপে এইসব চেনা অঞ্চল, লাল রঙের খাড়া পাথরের পাহাড়—সবুজ ঘাসের ঢাল। সোনালি ঝকঝকে সৈকত, নীল জল, নীল আকাশ-সে অন্যরকম স্বপ্নদৃশ্য। সান ত্রোপের তখনও এমন আধুনিকীকরণ হয়নি—এসব অঞ্চলে খাসদখল তখনও কেবল শিল্পীদেরই। আর গ্রীষ্মে পরিযায়ী ট্যুরিস্টদের। আমরা সেবারে গাড়িতে গিয়েছিলাম কেম্ব্রিজ থেকে। সালটা ১৯৬২–দিন দশেক ধরে ওঁদের কনফারেন্স চলেছিল। আমি সেই সময়ে থিসিস নিয়ে খুব ব্যস্ত। পুঁটলি বেঁধে ওখানেও নিয়ে গিয়েছিলুম আমার কাজকর্ম—এইক্সের হোটেলের ঘরে আমি টাইপরাইটারে ঘাড় গুঁজে বসে থাকতুম। তখনও ব্যক্তিগত পি.সি. মাসির দিন আসেনি। টাইপরাইটারই ভরসা। কনফারেন্স থেকে ফেরার পথে আমরা ‘লাসকো’র গুহাচিত্র দেখে এসেছিলুম-আদিম মানুষের জীবনযাত্রার চিহ্ন আঁকা–স্ট্যালাকটাইট—স্ট্যালামাইট গুহা এই প্রথম দেখলুম। দেওয়ালের গায়ে রক্তিম ষাঁড়ের আশ্চর্য লাইনড্রয়িং। ছুটন্ত হরিণের ছবি। শিকারি পুরুষের ধনুর্বাণধারী ছবি। সেই অমূল্য গুহাচিত্র আধুনিক মানুষের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে, এখন দর্শক নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে ‘লাসকো’য়। সংরক্ষণের কারণে। আমি ভূপালের ভীমবেটকা গুহাতে প্রায় একই ধরনের গুহাচিত্র দেখেছি। দশ হাজার বছরের পুরনো ছবি। জানি না তার সংরক্ষণের জন্য আমরা কী যত্ন করছি। সম্পূর্ণ অসংরক্ষিত পড়ে আছে দেখেছিলুম।
সেইবারে ১৯৬২তে আমাদের সান ত্রোপেতে শুধু ধনী ইয়ট-বিলাসীদের, নিরীহ ট্যুরিস্টদের, আর রং তুলি-ইজেলধারী ষাটের দশকের হিপি শিল্পীদের সঙ্গেই দেখা হয়েছিল। পরের বারে যখন গেলুম ১৯৭৯তে, তখন সান ত্রোপেতে গিয়ে দেখি সৈকতে সারি সারি আমসত্ত্ব রোদে দেবার মতো, নগ্নমানুষ-মানুষীর রৌদ্রদগ্ধ দেহ বালিতে শুকোচ্ছে।
সেবারে কামার্গ হয়নি—
কপালে যখন আছে, তখনই তো ঘটবে কামার্গ দর্শন? ঠাকুরানি যখন টানবেন… প্রকৃতিদেবীর দয়া!
কামাৰ্গ দৰ্শন
এযাত্রাটি অন্য জাতের। সেমিনার শেষ হলে এইক্স থেকেই আমার সোজা দেশে ফেরবার একটুও ইচ্ছে নেই। ইতিমধ্যে খোঁজ নিয়েছি। কয়েকদিনের জন্য ট্যুরিস্ট কোচের ট্রিপে পুরো দক্ষিণ ফ্রান্স ঘুরে আসা যায়-নীস, আভিনিয়ঁ, আর্ল, ভোক্লুজ, দান্তের ‘হেল ভ্যালি’, লে বো রাম। এবং পূর্বপরিচিত কৎ দা’ জুর, সুনীল সৈকত। এটুকুই আমার আগে দেখা। সেই সান রেমো। সান ত্রোপে, স্যাঁ রাফায়েল। এবং? এবং?? এবং কামার্গ!! প্রত্যেক জায়গায় কত কী যে দেখবার আছে! একটা ‘গিদ মিশলা’ কিনেছি (Michelin guide) অপূর্ব বই, ফ্রান্সের প্রতিটি দ্রষ্টব্যস্থল তাতে আছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের সব তো আর দেখা হবে না, তবে অনেকখানিই দেখা যাবে। লরা-পেত্রার্কের ‘প্রেমের’ ভোকুজ গ্রামটা দেখতেই হবে—আর দান্তে যে উপত্যকাটি দেখে তাঁর ‘নরকের কল্পনা করেছিলেন সেই ‘হেল-ভ্যালি’ দেখার সুযোগ কখনো ছাড়া উচিত? এই অঞ্চলটায় এককালে ছিল স্পেন, ইতালি আর ফ্রান্সের মিলিত প্রভাব।—তখনও এভাবে আলাদা আলাদা হয়ে সুস্পষ্ট গড়ে ওঠেনি জাতীয় সংস্কৃতিগুলি—যখন দক্ষিণ ফ্রান্সে ঘুরে ঘুরে গান বাঁধতেন ক্রবাদুর চারণ কবিরা। আর্ল শহরে রোমান ইতিহাসের চিহ্নের চেয়েও হয়তো জরুরি সেজানের স্মৃতি—সেই গাছপালার রং-আভিনিয় শহর জরুরি ভ্যান গখের ছবির স্মৃতি জড়ানো বলে। ওখানেই সেই আভিনিয়র সেতু (পঁ দাভিনিয়) আছে—আছে পোপের বিখ্যাত প্রাসাদ আবে দ্য মঁ মাজুর। সবই তো দেখতে ইচ্ছে–কিন্তু, কপালে থাকলে তো? পকেটটাও তো দেখতে হবে!
দেখা ছিল কপালে। দেখা হল ‘আবে দ্য মঁ মাজুর’। দুই যুগে দুই ভাগে তৈরি, একবার ১২ শতকে, একবার ১৭ শতকে। পোপের সাড়ম্বর রাজকীয় প্রাসাদ। ভেতরটা ঠিকঠাক—কিন্তু বাইরে চারিধারে দৈব নয়—মানুষেরই ধ্বংস করার প্রমাণস্বরূপ যেদিকে দৃষ্টি যায় ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন। নিসর্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা পাথরের সিঁড়ি, পাথরের কড়িবরগা, সবুজ ঘাসের বুকের ওপরে। চতুর্দিকে উঁকি দিচ্ছে ভাঙা ইমারত, ছোট ছোট কেল্লা আর ছোটবড় প্রাসাদ—কিছু তুর্কি, কিছু রোমান, কিছু ফরাসি কত যুদ্ধ, কত শত্রুতা, কত রক্তক্ষয় যে ঘটেছে এই সুন্দর নিসর্গের বুকে, কখনও ক্যাথলিকদের কেল্লা জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসলামধর্মী তুর্কিরা। কখনও বা প্রটেস্ট্যান্টদের গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে ক্যাথলিকরা। ধর্মোন্মাদেরা সবাই এক।
আবে দ্য মঁ মাজুরের মাটির নীচের তলাতেও একটি গির্জে আছে, ভিত্তি তৈরির সময়েই সেটি প্রস্তুত হয়েছিল। তার মধ্যে আছে এই আবের বাসিন্দা সন্ন্যাসীদের কবরস্থানও। একটি কেন্দ্রীয় গোলঘরে একটিই প্রধান কবর। আর তার চারপাশ দিয়ে সূর্যের ছটার মতো বহু ঘর—প্রত্যেকটিতে একটি করে কবর। সেখানে পৌঁছনোর গলিটিও মনে হল যেন ক্রুশচিহ্নের মতো চারমুখো। যে কেন্দ্রে চারটি গলি মেলে, সেখানেই গোল কবরস্থানটি। আর প্রত্যেকটি গলির দুই দেওয়ালের দুই ধারেই কুলুঙ্গির মতো ঘর কাটা। খোপ খোপ কামরা, সারি সারি তাকের মতো মাচা তৈরি করা আছে তার মধ্যে। সেই তাকগুলো সবই কফিনে ঠাসা। একটি ই মাত্র মোম জ্বলছে। রীতিমতো অতিলৌকিক আবহ। যেমন ঠান্ডায় হিহি করছি তেমনই অন্ধকার। যেন কবরের মধ্যেই ঢুকেছি আমিও। ওপরে উঠে এসে, সূর্যের সোনার আলোয় চোখ মেলে, খোলা গরম বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে–আঃ, বাঁচলুম। আগেও আমি ক্যাটাকুম্ব দেখেছি, কিন্তু এখানে নেমে যেন অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল—সম্ভবত একলা হয়ে পড়েছিলুম বলেই। বাসের দলবল নীচের কবরখানা দেখতে নামেনি। আমারই ছিল কৌতূহল বেশি! আমাকে দেখে সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে! এতক্ষণ আমাকেই খোঁজাখুঁজি চলছিল। শাড়িপরা মেয়েটিকে আবে দ্য মঁ মাজুরে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া কারুরই মনঃপূত হচ্ছিল না।
আমাদের বাসটা দিব্যি একটা নৌকোয় চেপে সরু মতো রোন নদী পেরিয়ে ওপারে এসে মাটিতে নামল। একটি খামারবাড়ি আমাদের গন্তব্য। সামনেই ধু-ধু প্রান্তরের মধ্যে উঁচু টিনের চাল-লাগানো খামারবাড়িতে ঢুকেই দেখি এক বিরাট বড় হলঘর। তার পিছনদিকে খোলা উঠোন উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। উঠোনে পনেরো-ষোলটা ছাই ছাই সাদা রঙের তেজী ঘোড়া কেশর ফুলিয়ে ঘাড় উঁচিয়ে পা ঠুকছে। আর সাদা চামরের মতো রেশমি লেজ ঝামরাচ্ছে। যেন ঠিক রূপকথার পক্ষীরাজ! অপূর্ব দৃশ্য! মনে পড়ে গেল! এই তো, এই ঘোড়াগুলোই তো দেখেছিলুম, বহু বছর আগে, কেম্ব্রিজের সেই ডাক্তারের ওয়েটিংরুমে! ওরা সেইখানে ছুটে যাচ্ছিল সমুদ্রতীর ঘেঁসে পায়ের খুরে সাগরজলের ফোয়ারা আকাশে ছিটিয়ে। আমার স্কুল জীবনে দেখা একটি বিদেশি সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল, যার ইংরিজি নাম—’দ্য হোয়াইট স্ট্যালিয়ন’—অবিকল এমনই একটি ঘোড়া, অবিকল এমনই মাঠ, আকাশ, সমুদ্র দেখেছিলুম সেই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবিতে। সেটা কি ছিল তবে এই কামার্গেই? আমার সেসব জানা নেই। আছে শুধু এক বিধুর অনুভূতি—হৃদয়ে বিঁধে আছে এখনও সেই একাকী বালক ও তার প্রিয় ঘোড়ার আমৃত্যু ভালোবাসার তীব্র আবেগের স্মৃতি।
কে বলবে এটা ইয়োরোপ? এখানে মানবসভ্যতার কোনও চিহ্নই নেই আশপাশে। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু ফাঁকা মাঠ। খটখটে শুকনো মাঠ, মাঝে মাঝে কাঁটাঝোপ। ফণিমনসা। আকাশ থেকে আগুন ঝরছে—তীব্র রোদ্দুর। প্রচণ্ড গরম, মরুভূমির মতোই।
খামার বাড়ির আতিথেয়তা এখনও ভুলিনি। বাসের ক্লান্ত যাত্রীদের জন্য প্রথমে এল ঠান্ডা বরফ দেওয়া, চমৎকার লেবুগন্ধী শরবত, সবুজ রঙের লেমোনেড। আহ্! তারপরে? বড় বড় টুকটুকে লাল তরমুজের ফালি, পাশেই পাতলা পাতলা গোলাপি হ্যামের স্লাইস, আর চিজ। এটা তো গেল অ্যাপিটাইজার। ফরাসি ওয়াইন তো ছিলই সঙ্গে, সাদা এবং লাল। তারপরে একটা ট্রলিতে করে বিরাট একটি চ্যাপ্টা লোহার কড়াই করে এল ‘পায়েইয়া’ (Paella ) বিখ্যাত স্প্যানিশ পোলাও, হলুদ রঙের ভাতের মধ্যে পশুপাখির মাংসের আর সামুদ্রিক মাছের ছোট ছোট টুকরো আর বড় বড় আস্ত চিংড়িমাছ, টোমাটো, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ কুচি–দারুণ ‘দিশি রান্নার গন্ধ বেরিয়েছিল—সেই স্বাদ গন্ধ এখনও আমি ভুলিনি। প্রচুর লেমন শেরবেট আর আঙুর, টাটকা ক্রিম, আইসক্রিম, এসব দিয়ে ডেজার্ট হল। এদের মরুভূমিতে খাওয়াটা মন্দ নয়! তারপর এল ছোট দেমি-তাস কাপে টার্কিশ কফি। একটু বিশ্রামের পরেই এসে গেল জিপগাড়ি, তাতে চড়ে শোঁ শোঁ করে বেরিয়ে পড়লুম তেপান্তরের মাঠে। রোন নদীর পাড় থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছড়ানো এই বন্য পোড়ো জমি, যেখানে বুনো ঘোড়ার আর বুনো বাইসনের দল চরে বেড়ায়, ফরাসি সরকারের সযত্ন সংরক্ষণে। কাউবয়রা তাদের পাহারা দিচ্ছে সর্বক্ষণ।
খামারবাড়ি কখন আকাশে মিলিয়ে গিয়েছে। আমাদের জিপ ছুটছে কামার্গের ধু-ধু প্রান্তরের বুক চিরে—যতদূর চোখ যায় মাঠের পরে মাঠ। আকাশের পরে আকাশ। এ সেই ছোটবেলার কল্পনায় দেখা তেপান্তরের অনুভব—’চোর কাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে, মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে গরু বাছুর নেই কো কোনওখানে…আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে’–সত্যি সত্যি মাঠভর্তি লম্বা লম্বা চোরকাঁটার মতো আগাছা—আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন দুটি ঘোড়সওয়ার। সে দুজনই আমাদের গাইড—দুজন কাউবয়-গাড়ি তাদেরই সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে। এরা নকল করে সাজা কাউবয় নয়, সত্যিকারের কাউবয়—পোশাকেও, কাজেকর্মে, জীবনযাপনেও। হঠাৎ কিছুর গন্ধ পেয়ে ঘোড়াদের গতি কমে গেল। ঘোড়াদের পায়ে পায়ে প্রচুর ধুলো উড়ছে। দূরে কালো কালো ফুটকির মতো কী সব দেখা যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলুম বুঝি কাঁটাঝোপই হবে। কিন্তু কাছাকাছি আসতেই আস্তে আস্তে সেই কালো ফুটকিগুলো বড় হয়ে অগণিত জংলী বাইসনের দল হয়ে দাঁড়াল। অগণিতই, বিশ, ত্রিশ? তিন-চারশো জন্তু একসঙ্গে মাঠ জুড়ে কাঁটাঝোপের মধ্যে চরে বেড়াচ্ছে। কালো শরীর, আর কী বাঁকা, কী সাদা তাদের শিং! সবচেয়ে ভয়াবহ তাদের নিচু করা মুখের সাদা সাদা চোখের চাউনি। এমন দৃষ্টি গরু মহিষের চোখে আগে কখনও দেখিনি। বন্য, হিংস্র চোখ। বন্ধুত্বের লেশমাত্র নেই সেই চোখে। আমাদের দেশের গরু মহিষের শান্তশিষ্ট চোখে কত স্নেহমমতা মাখানো থাকে!
আমাদের দেখে শিং বাঁকিয়ে, চোখ পাকিয়ে, ঘাড় হেলিয়ে এক নিমেষের মধ্যেই ‘স্ট্যাচু’ হয়ে থমকে দাঁড়াল বুনো বাইসনের দল। ঠিক ঝড়ের আগে গাছপালা যেমন হয়, নিবাত, নিষ্কম্প, স্থির। দৃশ্যটা দেখলেই ভয়ে গা হিম হয়ে আসে, কিছুই যদিও করেনি তারা। লক্ষণটা ভালো না। কাউবয়রা অবশ্য ভীত বলে মনে হল না। তারা জিভ দিয়ে একসঙ্গে ‘উর্’ করে হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ করে উঠল। বুনো বাইসনের দল স্থির, স্থাণু, পাথরে কোঁদা হয়েই রইল। আক্রমণ করল না। হঠাৎ দুজন কাউবয় ঘোড়া ছুটিয়ে বাইসনদের দুদিকে চলে গিয়ে, মুখ দিয়ে একরকম অদ্ভুত শব্দ করতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ধুলোয় অন্ধকার হয়ে গেল,—খোলা জিপখানাতে আমাদের চোখেও ঢুকল সেই ধুলো। চোখ মুছে তাকিয়ে দেখি দিগন্তের দিকে দূরে ছুটে চলে যাচ্ছে বুনো বাইসনের দল—‘রাঙাধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে!’
বুনো বাইসনের দেখা পাব এভাবে কে জানত। এটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। আমরা চলেছি ঘোড়া দেখতে। জলাজমির দিকে। এখানে অনেক জলাজমি রয়েছে। তারই ধারে ধারে ঘোরে জল খেতে আসা বুনো ঘোড়ার দল। আমরা একটা জলাজমির ধারে পৌঁছতেই দেখি সেখানে আমাদের আসার আগেই এসে গেছেন একদঙ্গল গোলাপি সারস। ‘পিঙ্ক ফ্লেমিঙ্গো! জিপে হর্ষধ্বনি উঠল। বাইসনের দল দেখে বাকরোধ হয়েছিল, পাখি দেখে বাক্স্ফূর্তি হল। ফ্লেমিঙ্গোদের সঙ্গে জলের মধ্যে প্রচুর বকও বসে আছে, টুপটাপ মাথা ডুবিয়ে মাছ ধরছে। গাড়ির শব্দে চমকে উঠে বিশাল গোলাপি ডানা মেলে, বুকের নীচে লম্বা লম্বা লাল ঠ্যাং দুটি সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়ে আকাশে উড়ে গেল পিঙ্ক ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁক। বকেরা উড়ল না। চিড়িয়াখানাতে আগে পিঙ্ক ফ্লেমিঙ্গো দেখেছি, দুটি-একটি। কিন্তু পরীর মতো আকাশে উড়তে দেখিনি। এখানে এরা অগুন্তি। চোখকে যেন বিশ্বাস হল না। শুনেছি আমেরিকাতে মায়ামি আর ফ্লোরিডাতেও এই পাখি আছে।
কিন্তু চোখের জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয় আমার—দূর দিগন্ত থেকে ছুটে আসছে একদল সাদা ঘোড়া, পায়ে পায়ে জল ছিটিয়ে, আকাশে যেন বাষ্পের মেঘ সৃষ্টি করতে করতে, আকাশজোড়া সাদা জলের ঝারি উড়িয়ে।—এই ঘোড়াগুলোর পিঠে কোনও কাউবয় নেই। সওয়ারবিহীন। জিন-না-পরানো, সম্পূর্ণ স্বাধীন এই তেজস্বী ঘোড়ার দল আমাদের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে জলার কিনার ঘেঁসে প্রবলবেগে ছুটে বেরিয়ে গেল। আমাদের জিপ অনেকক্ষণ থেমে গিয়েছে। আমরা স্তব্ধ হয়ে মনের মধ্যে গ্রহণ করছি কামার্গের এই বুনো ঘোড়া, বুনো বাইসন, কাঁটাঝোপের মাঠ, আর জলাভূমি; কিছু কিছু নোনাজলের (ব্যাকওয়াটার) বিল, আর কিছু কিছু মিঠে জলের দিঘি। ভাগ্যিস!—সেই মিঠে জলই তো এইসব বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রেখেছে।
এই সমস্ত কাউবয়রা, যদের নাম কামার্গের ‘গার্ডিয়ানস’–এরাও বিশিষ্ট। আকৈশোর এখানকার বিচিত্র জীবনযাত্রা এরা শিখে নেয়—এদের জীবনও আমাদের শহুরে মানুষদের মতো নয়। বাচ্চাবয়সেই বুনোঘোড়া, আর বুনো বাইসনদের ধরা, তাদের বাগ মানিয়ে, পোষ মানিয়ে, আস্তাবলে আর গোয়ালে ভরা—এই সুকঠিন কর্মটি এরা শিক্ষা করে থাকে। এরা প্রধানত দক্ষিণ ফ্রান্সেরই মানুষ, কিন্তু অনেকেই মূলত স্প্যানিশ। এবং বেশ কিছু জিপসি জাতির। দক্ষিণ ফ্রান্সই তাদের দেশ, কিন্তু তারা সবাই ফরাসি নয়। এখানকার ঘোড়াগুলো নাকি জন্মায় কালো, বড় হতে হতে ছাই-ছাই হয়, তারপর সাদা হয়ে যায়।—ছুটন্ত সাদা ঘোড়ার দল একদিক থেকে এসে আরেকদিকের দিগন্তের নীলে মিশিয়ে গেল। আমাদের যা দেখতে আসা, তা পূর্ণ হয়েছে। মনের আনন্দে আমরা খামারবাড়িতে ফিরে যাই। এবারে একটু চা-কফি দরকার।
খামারবাড়িতে আরও দ্রষ্টব্য বাকি ছিল। উঠোনের ওধারে একটা ‘রিং’ আছে। সেখানে এখন বুলফাইট হবে। দু রকমের খেলা ওখানে দেখানো হয়। এক, বুনোঘোড়ায় চড়ার খেল, কেশর ধরে, বাগ মানিয়ে, বিনা জিনের, বিনা ট্রেনিংয়ের বুনোঘোড়ার পিঠে কে উঠতে পারে, তার প্রতিযোগিতা—ঘোড়া ফেলে দেবে, প্রবল লাথি মেরে পাঁজর ভেঙে দেবে, এসব সম্ভাবনা আছে, তবু ঘোড়া বশ করার খেলাটি খেলবার জন্য দুঃসাহসী লোকের অভাব হয় না। অন্যটি তো বুলফাইট। লাল কাপড় দেখিয়ে ষাঁড়কে খেপিয়ে, তার সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। আমার সঙ্গীরা অধিকাংশই আমেরিকান ট্যুরিস্ট—তাঁরা বুলফাইট দেখতে গেলেন। বুলফাইট দেখতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। নিষ্ঠুর, অমানুষিক। মানুষ, পশু দুজনের প্রতিই নির্দয়তার খেলা। প্রথমটি তবু হয়তো বা দেখা যেত, মানুষের সভ্যতার অন্যতম প্রথম পদক্ষেপই তো হল বন্যপশুকে বশ মানিয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করা। ঘোড়া পোষ মানানোর খেলাটা দেখতে আমার নৈতিক বাধা নেই, কিন্তু বুলফাইটে এবং মোরগ লড়াইতে আমার প্রবল নৈতিক আপত্তি আছে। আমি চাই এইসব খেলা জগতে নিষিদ্ধ তোক। আমাদের দেশেও কোথাও কোথাও এই জিন না পরানো ঘোড়ায় চড়ার ও ষাঁড়কে খেপিয়ে যুদ্ধ করার প্রচলন আছে। গ্রাম্য মেলায় এধরনের প্রতিযোগিতা হয়। কোনও নিষ্ঠুর খেলাই আমার মনকে আনন্দ দেয় না। ঘুষোঘুষি কিংবা মোরগ লড়াইয়ের মতো রক্তারক্তি খেলা দেখে কেন শরীর মনকে যন্ত্রণা দেব?
আমি খামারবাড়ির সামনের উঠোনে এককাপ কফি নিয়ে বসে মনে মনে ভাবি—স্বপ্ন তাহলে সত্যি হল? সশরীরে কামার্গে এলুম? শুধু স্যাঁ-মারি-দ্য-লা-ম্যের যাইনি, যেখানে জিপসিদের চার্চ আছে (ভাঙা কেল্লার মতো দেখতে) সেটা এযাত্রায় আর দেখা হল না। অনেকটা দূরে ভূমধ্যসাগরে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই পাথরের গির্জে-কেল্লা, ‘সমুদ্রের-সম্ভ-মেরি’র প্রাচীন মন্দির। কিংবদন্তি বলে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর মাত্র ৪০ বছর পরেই নাকি ঠিক এই জায়গায় একটা নৌকো এসে কূলে ঠেকেছিল। সেই পালতোলা নৌকো নাকি সোজা ভেসে এসেছিল প্যালেস্টাইন থেকে, যিশুর সাক্ষাৎ শিষ্যদের একমুঠোকে বুকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছিলেন ল্যাজারাস, মারি-মাদলেম, সেন্ট ম্যাক্সিমিল, মারি সালোমে, মারি জাকোবে, আর ছিলেন তাঁদের একটি প্রিয় সখী, নাকি দাসী? সারা। সারা ছিলেন কালো মেয়ে। সারাই জিপসিদের পূজ্য দেবী ‘সান্তা সারা’। এই শ্যামবর্ণা সন্তমাতা নাকি তাদেরই স্বদেশবাসিনী—তাদের রক্ষয়িত্রী। প্রতিবছর ওখানে, ধু-ধু, এই কামার্গে, জিপসিদের একটা আশ্চর্য মেলা বসে। জিপসিদের ওই ভাঙা গির্জের আশপাশে। দেশবিদেশের জিপসিরা এসে যোগ দেয় অসাধারণ সেই উৎসবে, নানান আচার অনুষ্ঠান হয় তখন। যদি ভবিষ্যতে কখনও আবার কামার্গে যাওয়া হয় আমার—সাঁ-মারি-দ্য-লা-ম্যের’-এর মেলাটা দেখে আসতে হবে।
অস্বীকার করব না, ‘ইয়ারো ভিজিটেড’ কবিতার কথা স্মরণ করে মনটা উদ্বিগ্ন ছিল, অদেখা কামার্গই যদি বেশি ভালো হয়? কিন্তু বাস্তব কামার্গ মন ভরিয়ে দিয়েছে। স্বপ্নদৃশ্য সত্য হয়েছে—যা ভেবেছিলুম, তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ধন্য হয়েছি। ‘সান্তা সারা’র কৃপাতেই নিশ্চয়। তিনিও তো আমার মতোই একটি কালো মেয়ে ছিলেন!
প্রকাশ : ‘ভ্ৰমণ’ অক্টোবর ২০০৪