বাবর নামা – ৫

পাঁচ

আকাঙ্খার নগরী, স্বপ্নের নগরী সমরকন্দের তখতে তো বসলেন পনেরো বছরের বালক বাবর। কিন্তু রাজ্য চালাবেন কী করে? সৈন্যদেরই বা পুষবেন কী দিয়ে? রাজকোষ যে শূন্য।

যদি তিনি তৈমুর কিংবা চেঙিসের মতো নির্বিচারে লুণ্ঠন চালাতে পারতেন, নির্বিকার থাকতে পারতেন প্রজাদের দুঃখ দুর্দশার প্রতি, তবে হয়তো এ তখত কণ্টক-আসন হয়ে উঠতো না। তার দুর্বল কাঁধে পাহাড়ের মতো বিরাট বোঝা হয়ে দেখা দিত না এ রাজ্য, এ বিজয়। কিন্তু বাবর যে চান এক আদর্শ দিগ- বিজয়ী সম্রাট হতে এক গৌরবজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেতে

তাই, স্থানীয় আমীর-ওমরাহেরা পূর্ব-আমল থেকে যে সব সুযোগ-সুবিধা, অনুগ্রহ লাভ করে আসছিলেন তা বজায় রাখলেন তিনি। থেকে যারা এ অভিযানে তার সঙ্গী হয়েছেন তাদেরও

আপন রাজ্য ফরঘান

যোগ্যতা ও মর্যাাদ অনুসারে পদোন্নতি ঘটালেন, পুরস্কৃত করলেন। কিন্তু কি বেগ বা আমীর, কি সাধারণ সৈনিক, কেউই এতে সন্তুষ্ট হলো না! তারা দীর্ঘ সাতমাস ধরে নানা ক্লেশ স্বীকার করে এ রাজ্য জয়ে তাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু সে কষ্টের তুলনায় কী পেল তারা? অন্য কোন রাজার সঙ্গী হলে লুটের মাল থেকেই এ কষ্টের বহুগুণ উশুল করে নিতে পারতো তারা। অথচ বাবর তা হতে দেয়নি। সমরকন্দ শহর বাদে অবশিষ্ট রাজ্য তার বা সুলতান আলী মীর্জার সঙ্গে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে। তাই সেনাদের সে অঞ্চল লুট করতে দেয়া হয় নি। সমরকন্দ শহরের দখল নেবার পর প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা লুটপাট হলেও পরে বাবরের আদেশে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সুতরাং কারো ভাগেই বিশেষ কিছু লুটের মাল জোটেনি। সমরকন্দ রাজ্যের অতুল সম্পদে ভাগ বসাতে না পেরে, কষ্ট, পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রতিদান প্রথামতো না পেয়ে সেনা, আমীর-ওমরাহ সকলেই অসন্তুষ্ট। বাবরের প্রতি না তাকিয়ে তারা তাই একে একে দেশে ফিরে যেতে সুরু করলে।

বাবর পড়লেন অসহায় অবস্থার মধ্যে। সৈন্যেরা চলে গেলে, আমীর ওমরাহরা চলে গেলে কাদের জোরে তিনি নতুন জয় করা রাজ্য চালাবেন। আবার বিজিত রাজ্যের সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখেও তিনি অভিভূত। সুলতান মাহমুদ মীর্জার মৃত্যুর পর থেকে, বিশেষ করে গত দু বছর ধরে যুদ্ধ- পরিস্থিতি ও সৈন্য চলাচলের দরুণ ঠিকভাবে চাষ-বাস ব্যবসা-বাণিজ্য হতে

30

বাবর নামা

পারেনি। জনসাধারণ নিদারুণ অন্নাভাব ও অর্থ-সংকটের আবর্তে। আগামী ফসল-ঋতু পর্যন্ত বেঁচে থাকা তাদের পক্ষে বিষম ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এর উপর বীজ ও চাষের জন্যও চাই তাদের অর্থ। তাই বা তারা পাবে কোথায়? এ ভয়ংকর পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য, “আগামী ফসল পর্যন্ত চাষবাস চালিয়ে যাবার জন্য অধিবাসীদেরই সাহায্য দেয়া নিতান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। যে দেশ তখন নিঃস্ব অবস্থায় সেখান থেকে জোর করে কোন কিছু আদায় কীভাবে

সম্ভব?”

সৈন্য ও আমীররা কিশোর বাবরের এই অনুভব-অনুভূতির, মানবিক দৃষ্টি- কোণের অংশীদার হতে চাইলো না। তারা অর্থের দাবী তুললো। কিন্তু বাবর প্রজাদের পীড়ণ করে অর্থ সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। বাবর যে ধাতুতে তৈরী তাতে তার কাছ থেকে জোর করে যে কোনকিছু আদায় করা যাবে না তাও অভিযান কালের বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা বুঝে গিয়েছিল। তাই, প্রত্যাশা পূরণের কোন আশা নেই দেখে একজন দুজন করে তারা নিঃশব্দে সরে পড়তে সুরু করলো। কিছুদিনের মধ্যেই একরকম সঙ্গীশূন্য হয়ে পড়লেন বাবর। সাধারণ সৈন্য ও ছোট-বড় বেগ-আমীরদের মিলিয়ে মাত্র হাজার খানেক অনুচর টিকে রইলো তার কাছে। এতো অল্প অনুগামী নিয়ে কী করে তিনি তার আকাঙ্খায় রাজ্য সমরকন্দকে ধরে রাখবেন? কী করেই বা কাটিয়ে উঠবেন এ রাজ্যের অন্ন ও আর্থিক সঙ্কট। দুর্ভাবনায় মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হবার

উপক্রম হলো বাবরের।

বেগ-আমীরদের মধ্যে প্রথম দলত্যাগের সূত্রপাত করেন বয়ান কুলীর ছেলে খান কুলী। তারপরেই ইব্রাহিম বেগচীক। আর এভাবে বাবরের বাহিনী মধ্যে থাকা মুঘল সেনা ও আমীররা সকলেই তাকে ত্যাগ করে চলে গেলো। এমন কি, শেষ অবধি সুলতান আহমদ তম্বল পর্যন্ত। অথচ, সমরকন্দ জয়ের পর এই তম্বলকে তিনি অন্যতম প্রধান বেগের পদে উন্নীত করেছিলেন। তিনি ছিলেন তার মাতৃগোষ্ঠীভুক্ত বেগদের মধ্যে বিশিষ্টতম।

দলত্যাগের ঢেউ রোধ করার জন্য খাজা কাজীকে অন্দিজান পাঠানো হলো ঔজুন হাসানের কাছে। সমরকন্দ অভিযানে আসার বেলা এই ঔজুন হাসানের উপরই অন্দিজানের দায়িত্ব অর্পণ করে এসেছিলেন বাবর। খাজা কাজীর প্রতি ঔজুন হাসানের গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ রয়েছে। হাসানকে প্রভাবিত করে তাকে দিয়ে দল ত্যাগীদের একাংশকে শাস্তিদান ও অন্যদের সমরকন্দ ফিরে

বাবর নামা

৩১

পাঠানোর দায়িত্ব নিয়ে অন্দিজান এলেন খাজা কাজী। কিন্তু ঔজুন হাসান নিজেই অন্তরাল থেকে তখন এই দলত্যাগে উৎসাহ জুগিয়ে চলছিলেন। সুলতান আহমদ তম্বল অন্দিজান ফিরে আসার পর তার সঙ্গে এক হয়ে সব দলত্যাগীদের জোটবদ্ধ করে বাবরের বিরূদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রোহের সুর তুললেন তিনি। বাবরের পরের ভাই জহাঙ্গীর মীর্জাকে অন্দিজানের সিংহাসনে বসাবার কারসাজীতে মেতে উঠলো বিদ্রোহীরা। দাবী তুললে, বাবর যখন সমরকন্দ দখল করেছেন তখন অন্দিজান ও অথসী জহাঙ্গীর মীর্জাকে দেয়া হোক।

বিপদ যখন আসে একা আসে না, এই প্রবাদ বাক্যের সঙ্গে তাল রেখে বড়ো মামা মোঙ্গল-প্রধান মাহমুদ খানও এ সময়ে বাবরের কাছে এক পত্র পাঠিয়ে বাবরের সমরকন্দ জয়ের ভাগ স্বরূপ অন্দিজান রাজ্য চেয়ে বসলেন।

বাবর এ পত্র পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি কখনো মোঙ্গল-প্রধানকে অন্দিজান দেবার প্রতিশ্রুতি দেননি। তিনিও সমরকন্দ জয়ের জন্য তাকে কোনরকম সাহায্য সহযোগিতা করেন নি। উভয়ের মধ্যে এনিয়ে কোন রকম চুক্তিও কখনো হয় নি। তবু মোঙ্গল-প্রধানের কাছ থেকে এহেন পত্র কেন?

বাবরের কথা সত্য হলেও, একথাও ঠিক যে বাবর যে দুবছর সমরকন্দ অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন ওই কাল মধ্যে মোঙ্গল প্রধান কোনরকম শত্রুতাচারণ করে তাকে বিব্রত করেন নি, তার সমরকন্দ জয়ের পথে বাধার সৃষ্টি করেন নি। খুজন্দ দুর্গ উদ্ধারের পর বাবর যখন তার সঙ্গে শাহরুখিয়তে গিয়ে দেখা করেন হয়তো সে সময়ে তিনি বাবরের সাথে কোনরকম শত্রুতাচারণ করবেন না বলে মৌখিক আশ্বাসও দিয়েছিলেন। সুতরাং মনে হয়, সেই মৌখিক আশ্বাসের মূল্য হিসাবে, অথবা বাবরের সমরমন্দ জয়ের পথে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না করার প্রতিদান হিসাবে, তিনি এ সময়ে বাবরের কাছে অন্দিজান চেয়ে বসেছিলেন।

এক বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেন বাবর। তিনি এখন একরকম সঙ্গীহীন অবস্থায় বিপদের মাঝে সমরকন্দে। এ সময়ে মোঙ্গল-প্রধানের কাছ থেকে এ রকম এক অনুরোধ দাবীরই নামার। অন্য পরিবেশের মাঝে এ রকম অনুরোধ এলে তিনি হয়তো বদান্যতা দেখাতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে একে তার চোখ রাঙানি বলেই মনে হল। ‘হুকুমের সুর কে সহ্য করতে পারে?’ অন্যদিকে বিদ্রোহিরাও জহাঙ্গীর মীর্জার পক্ষ নিয়ে এই একই অঞ্চল দাবী করেছে। এ সময়ে জহাঙ্গীরকেই বা এ অঞ্চলগুলি কী করে দেয়া যায়? যদি বাবর তাকে এগুলি এখন দিয়ে দেন, মোঙ্গল প্রধান তা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক ভাবে

32

বাবর নামা

গ্রহণ করবেন না। তিনি নিশ্চয়ই এজন্য জবাবদিহি চাইবেন বাবরের কাছে। উভয় সঙ্কটে পড়ে চুপ হয়ে রইলেন বাবর। কারো অনুরোধ বা দাবীই পূরণ করলেন না। এবং দুঃসহ মানসিক চাপে শেষে তিনি ঘোর অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

তাকে আক্রমণ করে বসাও অসম্ভব নয়।

ইতিমধ্যে বাবর দলত্যাগী কতক মুঘল বেগদের বুঝিয়ে শুঝিয়ে হৃদয় পরিবর্তনের জন্য তুলূন খাজাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তুলুন খাজা ছিলেন বাবরের দলের সব থেকে সাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সৈনিক। সমরকন্দ বিজয়ের পর মুঘলদের মধ্যে তিনিই বাবরের কাছ থেকে সবথেকে বেশি অনুগ্রহ ও পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তাকে বেগ বা আমীরের পদে উন্নীত করা হয়েছিল। আর এসব অনুগ্রহ পাবার মতো যোগ্য ব্যক্তিও ছিলেন তিনি। সব রকম ভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হলেন। বিদ্রোহীরা তাদের এরূপভাবে প্রভাবিত করেছিল যে তুলুন খাজার কোন কথাতেই কান দিলেন না তারা। তুলুন খাজা মিয়া-দোয়ারের পথ ধরে ফরধান যাচ্ছিলেন। ঔজুন হাসান ও সুলতান আহমদ তম্বল সে •খবর পেয়ে তার বিরুদ্ধে একদল দ্রুতগামী সৈন্য পাঠালেন। তারা অতর্কিতে তুলুন খাজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে

হত্যা করলো তাকে।

জহাঙ্গীর মীর্জাকে অন্দিজান ছেড়ে দেবার দাবী বাবর মেনে নিলেন না দেখে ঔজুন হাসান ও তম্বল বালক জহাঙ্গীর মীর্জাকে সঙ্গে নিয়ে অন্দিজান অবরোধ করলেন এবার। অভিযানে বার হবার বেলা বাবর আলী দোস্ত

তঘাইয়ের উপর অন্দিজানের শাসন ও প্রতিরক্ষার ভার দিয়ে এসেছিলেন। ইতিমধ্যে খাজা কাজীও অন্দিজান ফিরে গিয়ে সেখানেই ছিলেন। যারা সমরকন্দ ত্যাগ করে অন্দিজান চলে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে প্রচুর দক্ষ সৈনিক ছিল। খাজা কাজী ফিরে গিয়েই বাবরের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে এদের বাবরের অনুগামী করে তোলার দিকে মন দেন। এ জন্য শহরের সৈনিক ও তাদের স্ত্রীপুত্র পরিবারের মধ্যে নিজের সম্পত্তি থেকে ১৮০০০ ভেড়া বেঁটে দিয়েছিলেন। অতএব বিদ্রোহীরা যখন অন্দিজান অবরোধ করলো তখন খাজা কাজীর এই পদক্ষেপের দরুণ স্থানীয় সৈন্যরা সকলেই বাবরের পক্ষে ছিল।

বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে বাবরের মা, মাতামহী ও খাজা কাজী তাকে ঘন ঘন চিঠি পাঠাতে থাকলেন তাড়াতাড়ি সাহায্যের জন্য ছুটে আসার আকুতি জানিয়ে। তারা লিখলেন ‘এরূপ দুর্দম চাপ পড়ছে যে যদি তুমি

যাবর নামা

৩৩

অবিলম্বে সাহায্যের জন্য না আস তবে খুব খারাপ পরিণতি ঘটবে।’ লিখলেন, ‘তুমি অন্দিজানের সৈন্য ক্ষমতা বলেই সমরকন্দ অধিকার করেছ। যদ অন্দিজানের শাসক রূপে তুমি টিকে থাকতে পার তবে ঈশ্বরের অনুগ্রহে আবার

সমরকন্দ দখল করতে পারবে।’

বাবর যে অন্দিজান রক্ষার জন্য ছুটে যাবেন তার উপায় কী! তিনি তখন সবে কঠিন অসুখ থেকে কোন মতে বেঁচে উঠেছেন। গভীর উদ্বেগ ও মানসিক চাপে তার অবস্থা এতো সংকটজনক হয়ে উঠেছিল যে,

পুরো চারদিন বাক-রহিত

অবস্থায় ছিলেন। তুলোয় ভিজিয়ে ভিজিয়ে ফোঁটা ফোটা করে জল ও তরল খাদ্য তার জিভে দেয়া হচ্ছিল। সাধারণ সৈনিক ও আমীর মিলিয়ে যে হাজার- খানেক অনুগামী তার সঙ্গে ছিলেন তাদের অনেকেই তখন তার জীবন সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে যে যার নিজ নিজ পথ দেখেছে।

পুরোপুরি অস্থ সারতে আরো দিন চার পাঁচ কেটে গেল। কিন্তু তখনো তার শরীর দুর্বল, কথা কইতে কষ্ট হচ্ছে। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আরো কয়েকদিন সময় গেল। তার কয়েকদিন পরেই মা, মাতামহী অইসান দৌলত বেগম ও খাজা কাজীর কাছ থেকে আবার পত্র পেলেন। এরূপ করুণ মিনতি জানিয়ে পত্র দিয়েছেন তারা যে চুপ হয়ে বসে থাকার মতো মনের অবস্থা রইলো না বাবরের। আর দেরি না করে, রজব মাসের এক শনিবারে সমরকন্দ থেকে বেরিয়ে পড়লেন তিনি অন্দিজানের উদ্দেশ্যে। এ সময়ে তিনি সবে একশো দিন

রাজত্ব করেছেন সমরকন্দে।

পরের শনিবার খুজন্দ পৌঁছালেন বাবর। পেলেন, ঠিক পূর্ব শনিবারে, অর্থাৎ যেদিন তিনি

সেদিনই চরের কাছে খবর সমরকন্দ ছেড়েছেন, সেদিনই

আলী দোস্ত তঘাই বিদ্রোহীদের কাছে অন্দিজান দুর্গ সমর্পণ করেছেন।

‘এই বিয়োগান্তক ঘটনার পশ্চাতে একটি ছোট্ট করুণ ইতিহাস রয়ে গেছে। বাবর যখন বাকরহিত অবস্থায় শয্যাশায়ী তখন ঔজুন হাসানের এক দূত কতক রাজদ্রোহাত্মক প্রস্তাব নিয়ে সমরকন্দে উপস্থিত হন।

বাবরের অনুগামী

তার কাছে বাবরের

শোচনীয় শারীরিক

আমীররা নির্বোধ কূটনীতিজ্ঞের মতো অসুস্থতার কথা প্রকাশ ক’রে দিলেন। এমন কি বাবরের

শয্যাপার্শ্বে এনে তার

অবস্থাও দেখালেন। বাবর আর বাঁচবে না এ ধারণা থেকে সে দৌত্যকার্য অসমাপ্ত রেখেই অন্দিজান ফিরে গিয়ে ঔজুন হাসানকে সেকথা জানালে। ঔজুন হাসান চতুরভাবে সে ঘটনাকে কাজে লাগালেন। অন্দিজান দুর্গ মধ্যে অবস্থিত

৩৪.

বাবর নামা

আলী দোস্ত তঘাইয়ের কাছে পাঠালেন সে খবর তিনি। তিনি প্রথমে তা অবিশ্বাস করলেও, দূতটি যখন কসম খেয়ে জানালে যে সে নিজের চোখে দেখে এসেছে বাবরের মুখে তুলো ভিজিয়ে ফোটা ফোটা জল ও তরল খাদ্য দেয়া হচ্ছে ও সকলে তার জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছে তখন আর তার কথা অবিশ্বাস

করতে পারলেন না। বিদ্রোহীদের অবরোধ প্রতিহত ক’রে চলার মনোবল ভেঙে পড়লে। তার। জুড়ে দিলেন তিনি।

বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে গেল।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা

আত্মসমর্পণের সতাদি ঠিক হয়ে যাবার পর দুর্গ-

সমর্পণ করলেন তাদের হাতে। অথচ দুর্গের ভেতর তখন প্রতিরোধ ক’রে চলার মতো সৈন্যের অভাব ছিলনা, ছিলনা খাদ্যেরও কোন অভাব।

বাবর জীবিত সে তার অনুগামীদের নিয়ে খুজঁন্দ উপস্থিত হয়েছে, এ খবর বিদ্রোহীদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করলো। অন্দিজান আত্মসমর্পণ ক’রে থাকলেও এ সংবাদে যাতে সেখানে আবার পালটা অভ্যুত্থান না ঘটে সে জন্যে খাজা কাজীকে বন্দী করলো বিদ্রোহীরা। দুর্গের ফটকে অতি নির্মমভাবে বর্বরের মতো ফাঁসীতে ঝোলালো তাকে। তার পরিবার, গোষ্ঠী ও অনুগামী লোকজনদেরও বন্দী করা হলো! লুঠ করা হলো তাদের বিষয় সম্পত্তি!

এ ঘটনায় দারুণ মর্মাহত হলেন বাবর

ও সম্মান করতেন।

খাজা কাজীকে তিনি গভীর শ্রদ্ধা

ভালবাসতেন। বাবরের নিজের কথায় ‘তিনি ছিলেন

একজন ওয়ালী ( স )।’

সুতরাং অন্দিজানের

বাবরের সঙ্গে তখন মাত্র হাজার খানেক লৈ! অ!ত্মসমর্পণ এবং তার পর খাজা কাজী ও তার অনুগামীদের দুর্দশার খবর তাকে

পুরোপুরি বিপর্যন্ত ক’রে ফেললে।।

আশা মন থেকে মুছে গেল তার।

বিদ্রোহীদের দমন ও অন্দিজান উদ্ধারের

“অন্দিজানকে ধরে রাখার জন্য সমরকন্দকে হাতছাড়া করে চলে এলাম। এসে দেখি আন্দিজানকেও হারিয়ে বসে আছি আমি। আমার পরিস্থিতি এখন ঠিক তাই তুর্কী প্রবাদ বাক্যটির মতো—’বোকার মতো এক ঠাঁই থেকে পা সরিয়ে অন্য ঠাইয়ে পা ফেলার বেলা দেখা গেল সে জমিও পায়ের নিচ থেকে সরে গেছে’।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *