ফুলমণি-উপাখ্যান – ৯

চিরকাল একজনের দোষে অন্য একজন মার খায়।

হিরোসিমা-নাগাসাকিতে যে হাজার হাজার মানুষ অ্যাটম বোমার ঘা খেয়ে মরেছিল, তারা কি যুদ্ধ বাধাবার জন্য দায়ী ছিল? দাঙ্গার সময় মরে শুধু নিরীহ লোকেরা, যারা অস্ত্র ধরতেই জানে না। দুই গুণ্ডার দলের বোমা মারামারির সময় শিয়ালদার কাছ প্রাণ দিয়েছিল শুধু একটি স্কুলের মেয়ে!

আড়াই বছর আগে ছোটপাহাড়ী থেকে একজন কন্ট্রাকটর নাকি একটি বেশ ডবকা আদিবাসী মেয়েকে ফুসলে নিয়ে গিয়েছিল। তা আমি জানব কী করে? সেই কারণে ছোটপাহাড়ীর লোকেরা সন্দেহপ্রবণ হয়ে আছে। আমি কি ফুলমণিকে ফুসল নিয়ে গেছি নাকি? আহা, একে ফুসলানি বলে, আমি তার হাতও ধরিনি একবার, সব মিলিয়ে তার সঙ্গে আড়াইখানা বাক্য বিনিময় হয়েছে কিনা সন্দেহ। আড়াই বছর আগেকার সেই ঠিকাদার পালিয়ে গিয়ে দিব্যি মজা মারল, তাকে কেউ ধরতে ছুঁতে পারল না, তার বদলে মার খেয়ে মরলুম আমি!

না, ঠিক মরিনি অবশ্য। বেকারের জান খুব কড়া হয়। বেকাররা যদি পটাপট মরে যেত, তা হলে তো এদেশের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেত।

বেকাররা মরে না, তারা রক্তবীজের মতন বাড়ে।

মাথা ও ঘাড়ের ঘা শুকিয়ে গেছে, ঝামেলা বাঁধিয়েছে বাঁ পাটা। ঢাউস একটা প্লাস্টারের পোশাক পরিয়ে আমায় বিছানায় শুইয়ে রেখেছে এক মাস। হাঁটুর মালাইচাকি আর গোড়ালি নাকি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

মাকে বলা হয়েছে যে আমি পাহাড়ে ট্রেকিং করতে গিয়ে এক খাদে পড়ে গিয়েছিলুম। দুর্ঘটনার চেয়ে মানুষের হাতে মার খাওয়া মায়েদের চোখে বেশি ভয়াবহ। কারণ যারা মেরেছে তারা আবার মারার চেষ্টা করতে পারে। আমি অবশ্য হালফিল আর ছোটপাহাড়ীতে যাচ্ছি না।

নীপা বউদিরা প্রায়ই আমাকে দেখতে আসে। চন্দনদা দুবার ঘুরে গেছে। প্রায় প্রতিদিন আসে লালুদা। লালুদা এলেই আমি মুখের ওপর চাদর টেনে, ঘাপটি মেরে ঘুমের ভান করে থাকি। লালুদার বাক্যস্রোত কি রোজ সহ্য করা যায়? অথচ একটা মানুষকে বাড়িতে আসতে বারণ করা যায়?

লালুদা আসে দুপুরের দিকে। নিজস্ব ব্যবসা, যখন তখন ছুটি। আমার সন্দেহ হচ্ছে লালুদা এই সুযোগে আমার বউদির সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করবে। বউদি সকালের ইস্কুলে পড়াতে যায়, সারা দুপুর বাড়িতে থাকে। বিবাহিতা বৌদের সঙ্গে প্রেম করা লালুদার দ্বিতীয় পেশা।

আমার বউদি দুটো মিষ্টি কথায় গলে যাবার মতন মেয়ে নয়। লালুদার কাঁঠালি কলা মার্কা ঠোঁট কোনো মেয়ের পছন্দ হবেই বা কেন? কিন্তু লালুদার এটি মোক্ষম অস্ত্র আছে। পরোপকার। আমাদের বাথরুমের সিস্টার্ন থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়া আজ পর্যন্ত কেউ বন্ধ করতে পারেনি, তলায় গামলা পেতে রাখতে হয়, লালুদা কোথা থেকে এক জাদুকর মিস্ত্রি নিয়ে এসে সেটা সারিয়ে দিল। ঠিকে ঝি. দেশে গিয়ে আর ফেরেনি, লালুদা এনে দিয়েছে এক আদর্শ কাজের মেয়ে, যে মাইনে কম নেয়, ফাঁকি মারে না। মা ও বউদির কাছে লালুদার ভাবমূর্তি বেশ উজ্জ্বল।

আমাকে প্রায়ই সান্ত্বনা দিয়ে লালুদা বলে, তোমার কোনো চিন্তা নেই, নীলকণ্ঠ, তুমি সেরে উঠলেই তোমাকে আমি অন্য চাকরি জোগাড় করে দেব। ওরকম ধাদ্ধাড়া গোবিন্দপুরেও যেতে হবে না।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আবার চাকরি। আমার কপালে চাকরি সয় না।

মুমু একদিন এসে বলল, অ্যাই ব্লু, তুমি সবসময় শুয়ে থাক কেন? লেজি বোন্‌স! শুধু শুয়ে থাকলে তুমি আরও লেজি হয়ে যাবে, আর কোনোদিন হাঁটতে পারবে না।

মুমু এলেই ঘরের মধ্যে টাটকা বাতাস খেলে যায়। জবা ফুলের মতন একটা লাল টকটকে ফ্রক পরে এসেছে মুমু। হাতে একটা চেকোলেট বার। বাচ্ছা ছেলেকে লোভ দেখাবার মতন করে বলল, তুমি যদি আজ হাঁটতে পার, তোমাকে এই চকোলেট খাওয়াব।

আমার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামাল মুমু। তারপর সুর করে বলল, হাঁটি হাঁটি পা পা, খোকাবাবু আসছে সরে যা।

মুমুর কাঁধে ভর দিয়ে এক দিকের দেয়াল পর্যন্ত গেলুম। হাঁটুতে ব্যথা লাগছে বেশ, কিন্তু অসহ্য নয়।

মুমু বলল, রোজ একটু হাঁটতে হয়, না হলে জয়েন্টগুলো খারাপ হয়ে যায়।

–তুই কোথা থেকে জানলি রে, মুমু?

—আমার একবার পা ভেঙেছিল না? প্রত্যেকেরই একবার করে পা ভাঙে।

—তা ঠিক বলেছিস। যাদের একবারও পা ভাঙে না, তারা পায়ের মর্ম বোঝে না।

—ব্লু, সেবারে তুমি আমাকে দিকশূন্যপুরে নিয়ে যাবে বলে আমাকে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে রেখে এলে। আমার আর দিকশূন্যপুর দেখা হলো না। একবার নিয়ে যাবে না?.

–তোর বয়েসী মেয়েদের সেখানে যেতে নেই।

—তাহলে তখন বলেছিলে কেন?

—তখন তোকে ভোলাবার জন্য…তোর তখন খুব মন খারাপ ছিল।

–কেন আমার বয়েসীদের দিকশূন্যপুর যেতে নেই?

—ওখানে যারা যায়, তার সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে যায়, আর ফেরার কথা চিন্তা করে না। তোর এখনো পড়াশুনা বাকি, আরও অনেক কিছু বাকি।

—তুমি যাও কেন? তুমি তো ফিরে আস!

—ওখানে বন্দনাদি বলে একজন আমাকে খুব ভালোবাসে। তাকে দেখতে যাই। ওখানে কেউ শুধু শুধু বেড়াতে গেলে অন্যরা পছন্দ করে না। শুধু আমার পারমিশান আছে। আমি দু’একজনকে দিকশূন্যপুরে পৌঁছে দিয়েছি।

—ওখানে কী আছে বলো না।

—খুব সুন্দর জায়গা, যার যেমন ইচ্ছে সেইভাবে থাকতে পারে। প্রত্যেকেই নিজের জিনিসটা তৈরি করে নেয়, কোনো কিছুরই অভাব নেই। যার যেটা বেশি আছে, সে সেটা অন্যকে দেয়, এইরকম ভাবে বদলাবদলি হয়।

—কারা ওখানে গিয়ে থাকে?

—যারা খুব দুঃখী, যাদের কেউ ঠকিয়েছে, খুব আঘাত দিয়েছে, তারা যায়, ওখানে গিয়ে সব দুঃখ ভুলে যায়।

—কোথায় জায়গাটা? কত দূরে?

—সে এক নিরুদ্দেশের দেশ। ঠিকানা বলতে নেই!

মুমু অনেকদিন পর আমাকে দিকশূন্যপুরের কথা মনে পড়িয়ে দিল।

দিকশূন্যপুর আমাকে টানে। বন্দনাদি, রোহিলা, জয়দীপ, বসন্ত রাও এদের দেখিনি কতদিন।

যেদিন আমার পায়ের প্লাস্টার কাটা হলো, সেদিন বিকেলে এল চন্দনদা। মুখখানা গম্ভীর। একটা না-জ্বালা চুরুট মুখে দিয়ে বসে রইল চুপ করে।

আমি একসময় বললুম, আর দু’দিন পরেই পুরোপুরি ফিট হয়ে যাব। মধ্যপ্রদেশে আমার এক বন্ধু চাকরি পেয়েছে, আমাকে নেমন্তন্ন করেছে, ওর ওখানে থেকে ঘুরে আসব ভাবছি। বস্তারের জঙ্গল।

চন্দনদা বলল, হুঁ, বস্তারের জঙ্গল। তুই জঙ্গল খুব ভালোবাসিস, তাই না, নীলু! সুন্দরবনে গেছিস?

—অনেকবার।

—আমাকে একবার নিয়ে যাবি? আমি সুন্দরবন দেখিনি। আচ্ছা, না থাক।

—থাক কেন? সুন্দরবন তো যে-কোনোদিন যাওয়া যায়। তোমার ছুটি থাকলে এই উইকএন্ডেই চলো।

—নাঃ, এখন সুন্দরবন যাব না।

চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে একবার জানলার ধারে গিয়ে বাইরে উঁকি দিল চন্দনদা। আমার টেবিলের ওপর বইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগল। তারপর হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ফুলমণির খবর পাওয়া গেছে, শুনেছিস তো?

—না তো! কোথায়?

—লালু তোকে বলেনি?

—লালুদা ঠিক দরকারের কথা ছাড়া অন্য সব কথা বলে। কোথায় আছে ফুলমণি! ছোটপাহাড়ীতে ফিরে গেছে?

—সেখানে ফেরেনি। ফুলমণি থাকে অনিন্দ্য দাসের সঙ্গে।

আমি দারুণ চমকে গেলুম এবার। অনিন্দ্য দাস? সেই দুর্মুখ শিল্পী? যিনি সেই রাতে ফুলমণিকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন?

চন্দনদা বলল, নাঃ, জোর-টোরের ব্যাপার নেই। প্রেমের ব্যাপার। যাতে যার মজে মন কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম!

—অনিন্দ্যবাবু কখন ফুলমণির প্রেমে পড়লেন?

—অনিন্দ্য তো প্রেমে পড়েনি, সে প্রেম-ট্রেমে বিশ্বাসই করে না। এক্ষেত্রে অনিন্দ্যই হচ্ছে ডোম, তার প্রেমে পড়েছে ফুলমণি।

—কী উল্টোপাল্টা বলছ, চন্দনদা? ফুলমণি কারুর প্রেমে পড়তে পারে নাকি? মানে…অনিন্দ্যবাবুকে সে কতটুকু দেখেছে?

—শোন, তুই কানু রায়কে চিনিস? কানু রায় ছবি আঁকে না। কিন্তু সে সব ছোট-বড় শিল্পীদের চেনে, আর্ট ওয়ার্লড-এ ঘোরাফেরা করে। সেই কানু রায় গিয়েছিল অনিন্দ্যর বাড়িতে। সে দেখে এসেছে, ওরা দু’জনে বেশ মজায় আছে, দু’জনেই ছবি আঁকছে। ফুলমণি নাকি তাকে বলেছে যে অ্যাকাডেমির প্রদর্শনীতে সে যত শিল্পীদের দেখেছে, তাদের কারুকেই তার সত্যিকারের পুরুষ বলে মনে হয়নি। অনিন্দ্য তাকে বকাবকি করলেও তাকে দেখা মাত্র ফুলমণি মুগ্ধ হয়েছে। তার চোখে অনিন্দ্যই সত্যিকারের পুরুষ এবং শিল্পী। তাই অনিন্দ্য একটা ইঙ্গিত করা মাত্র ফুলমণি তার সঙ্গে চলে গেছে।

—ফুলমণি এত কথা বলতে পারে?

—এখন হয়তো তার মুখে কথা ফুটেছে

—অনিন্দ্যবাবু তো দমদমে থাকেন, তাই না?

—দমদমে এরকমভাবে একটা মেয়েকে নিয়ে থাকা চলত না। সুন্দরবনে অনিন্দ্যদের একটা লাট আছে। চাষবাস হয়, মাছের চাষ হয়, একটা বাড়িও তৈরি করেছে। সেখানে অনিন্দ্য প্রায় ছবি আঁকতে বা মূর্তি গড়তে যায়। ও এমনিতেই কারুকে গ্রাহ্য করে না, আর সেখানে তো সমাজ বলতে কিছু নেই।

—ফুলমণি কারুকে কিছু না বলে অনিন্দ্য দাসের সঙ্গে চলে যাবে, এটা যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, চন্দনদা। যাই হোক, যদি সত্যি হয়, ফুলমণি তা হলে ভালোই আছে। ওর জন্য ছোটপাহাড়ীতে তোমাদের আর কোনো গোলমাল হয়নি তো?

—নাঃ! তোকে মারধোর করার পর ওরা খানিকটা স্কেয়ার্ড হয়ে গেছে। আমরাও পুলিশ প্রোটেকশান নিয়েছিলাম। আমি এখানে আসবার দু’দিন আগে শুনলাম, ফুলমণি তার শ্বশুরের নামে দুশো টাকা পাঠিয়েছে মনিঅর্ডার করে। তাতে লোকে বুঝে গেল যে সে স্বেচ্ছায় অন্য কোনো জায়গায় রয়েছে। এরপর আর আপত্তির কিছু থাকতে পারে না। বুড়োটা বেশ মজাতেই আছে! এর মধ্যে আবার তার কোনো এক ভাইপো বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে এসেছে ঐ বাড়িতে। তারা বুড়োকে খুব আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। তার মানে, বুড়ো চোখ বুজলেই বাড়িটা হাতিয়ে নেবে।

—ফুলমণিকে নিয়ে তাহলে আর আমাদের মাথা ঘামাতে হবে না? যাক বাঁচা গেল!

—তুই অবশ্য ইচ্ছে করলে একবার দেখে আসতে পারিস, নীলু, কানু রায়ের কথা কতটা সত্যি। আমি অবশ্য তোকে যেতে বলছি না। তোর কোনো দায়িত্ব নেই, তুই যথেষ্ট ভুগেছিস।

—যেতে হলে আমরা দুজনেই তো একসঙ্গে…

–আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না রে।

–কেন?

—নীপা দারুণ রেগে আছে। ফুলমণি অনিন্দ্যর কাছে আছে শুনেই বলল, তোমার বন্ধু একটা দুশ্চরিত্র। তোমরা পুরুষরা সবাই এরকম। ফুলমণির ছবি নিয়ে মাতামাতি করে তোমরা আসলে নিজেদের আর্ট-বোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছিলে, ওর জীবনটার কোনো মূল্য দাওনি। ওর শেকড় ছিঁড়ে ওকে ছোট পাহাড়ী থেকে উপড়ে আনার কী দরকার ছিল? এখন যদি আমি যাই…

—অনিন্দ্য দাস বুঝি আগেও এরকম করেছে।

—ওকে ছোটবেলা থেকে চিনি তো। মেয়েদের মন ভোলাতে একেবারে ওস্তাদ। ওর টেকনিকটা কী জানিস, ও মেয়েদের সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে না, প্রেম জানায় না, প্রথমেই রুক্ষভাবে কথা বলে, এমনকি দুমদাম গালাগালি দেয়। আশ্চর্য! তাতেই অনেক মেয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। চেহারাটা তো রাফ, মেয়েরা মনে করে ও একেবারে রিয়েল মাচো, হি-ম্যান! কয়েক বছর আগে হাইকোর্টের এক জজের মেয়ে, দারুণ সুন্দরী, ওর জন্য একেবারে পাগল হয়ে গিয়েছিল।

–সে মেয়েটি এখন কোথায়?

-কে জানে!

—তুমি না গেলে আমিও যাব না, চন্দনদা?

–যাস না। আমি মোটেই যেতে বলছি না। অনিন্দ্যদের গ্রামটার নাম বোয়ালভাসি, ক্যানিং থেকে লঞ্চে যেতে হয় গোসাবা, সেখান থেকে মাইল চারেক দূরে গ্রাম। ও, তোকে আর এসব কথা বলছি কেন, তুই তো সুন্দরবনের সবই চিনিস।

চন্দনদা চলে যাবার পর বোয়ালভাসি নামটা আমার মাথায় ঘুরতে লাগল অনবরত। এক একটা নাম, এক একটা শব্দ হঠাৎ মনে গেঁথে যায় কেন যেন! গোসাবার কাছে রাঙাবেলিয়া, সাতজেলিয়া, সজনেখালি এই সব গ্রাম আমি চিনি, গেছি কয়েকবার। কিন্তু বোয়ালভাসির নাম আমি আগে শুনিনি। এককালে এই সব অঞ্চল ছিল হ্যামিলটন সাহেবের জমিদারি, সাহেব চলে যাবার পর কিছু কিছু সমৃদ্ধ বাঙালি সেখানে ফার্মিং শুরু করেছিল।

রাস্তায় বেরুতে শুরু করার দু’তিনদিন বাদেই বুঝতে পারলুম, বোয়ালভাসি গ্রামটা আমাকে চুম্বকের মতন টানছে।

একটা অদম্য কৌতূহল, অনিন্দ্য দাসের মতন মানুষের সঙ্গে ফুলমণির কী করে জোড় মিলল, সেটা শুধু দেখে আসা।

তা হলে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে যাবার আগে একবার সুন্দরবনটাই ঘুরে আসা যাক।

গোসাবা পৌঁছে একটা সাইকেল ভ্যান ধরলুম। নিজের দুটো পা ছাড়া এটাই এখানকার প্রধান যানবাহন। ভ্যানচালককে বললুম, বোয়ালভাসি যাব গো, দাসবাবুদের খামারে।

ভ্যানচালক বলল, সেখানে তো দুটো দাসবাবুর খামার। কেনটায় যাবেন?

বললুম, একজন দাসবাবু, খুব লম্বা, ছবি-টবি আঁকেন, তাকে চেনো? সে বলল, অ। যে-বাবু মেয়েছেলে দাঁড় করিয়ে তার মূর্তি বানায়, সে তো? হ্যাঁ চিনি।

বোঝা গেল, অনিন্দ্য দাস সেখানেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। ভ্যানচালক মাইল চারেক ইঁটের রাস্তায় চালিয়ে নিয়ে এসে একটা নদীর ধারে থেমে বলল, এবার খেয়া নৌকায় পার হয়ে যান। ঐ যে দেখা যাচ্ছে ওপারে দাসবাবুদের খামার

খেয়ার নৌকায় ওঠার পর আমার ভয় ভয় করতে লাগল।

অনিন্দ্য দাসের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল। উনি এখন কী রকম মেজাজে আছেন কে জানে। উনি যদি মনে করেন আমি অপমানের শোধ নিতে এসেছি! এখন আর ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। এখন বেলা তিনটে, আশা করি এখনই উনি মৌজ করে বসেননি!

খেয়াঘাট থেকে একটা সরু পথ গেছে দাসদের খামারের দিকে। খানিকটা ইঁটের দেয়াল, খানিকটা কঞ্চির বেড়া দিয়ে ঘেরা। গেটটা খোলাই রয়েছে। তারপর মস্ত বড় একটা উঠোন, একপাশে দুটো ধানের গোলা, অন্য পাশে একটা মস্ত বড় বাড়ি। প্রশস্ত বারান্দা, ওপরে টিনের চাল। উঠোনে হাঁস-মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে, পাঁচটা ছাগলছানা লাফাচ্ছে এক ছাগ-মাতার পেছন পেছন, আর এই সব কিছুর মাঝখানে, গনগনে রোদে দাঁড়িয়ে একটা পাথরের চাঁইতে ছেনি চালাচ্ছেন অনিন্দ্য দাস। পরনে শুধু জিনসের টাউজার্স, খালি গা, মাথায় টোকা।

আমার প্রথমেই আশ্চর্য লাগল পাথরটা দেখে।

সুন্দরবন জলকাদার দেশ, এখানে এক টুকরো পাথর নেই, পাহাড় বহুদূর। এখানে এতবড় পাথর এল কী করে?

আমার ধারণা ছিল, আজকালকার ভাস্কররা প্রথমে প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তি বানিয়ে তারপর ব্রোঞ্জ কাস্টিং করেন। এখনো পাথর কুঁদে কুঁদে মুর্তি বানানো হয়! অনিন্দ্য দাসের মতন দীর্ঘকায় বলশালী পুরুষ না হলে সম্ভবও না।

কোথা থেকে একটা কুকুর হঠৎ ঘেউ ঘেউ করে উঠতেই অনিন্দ্য দাস আমার দিকে ফিরে তাকালেন। চোখ কুঁচকে দেখলেন কয়েক মুহূর্ত।

তারপর বললন, তুমি কে! তোমায় আগে যেন কোথায় দেখেছি দেখেছি মনে হচ্ছে।

আমি হাত তুলে বললুম, নমস্কার। হ্যাঁ, আপনি আমাকে আগে দেখেছেন। আমি চন্দন ঘোষালের ছোট ভাইয়ের মতন। আমি এদিকে সাতজেলিয়ায় এসেছিলুম একজনের কাছে, শুনলুম আপনি এখানেই স্টুডিও বানিয়েছেন, তাই আপনার কাজ দেখতে এসে পড়লুম। আপনাকে ডিস্টার্ব করলুম বোধহয়।

অনিন্দ্য দাস একগাল হাসলেন। মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, না তুমি সাতজেলিয়ায় আসনি। তুমি শালা এখানে স্পায়িং করতে এসেছ। দেখতে এসেছ, ফুলমণিকে আমি খেয়ে ফেলেচি না আস্ত রেখিচি!

তারপর চেঁচিয়ে দু’জনকে ডাকলেন। প্রথমে বললেন, ফুলমণি, এদিকে এসো গো! দ্যাখো, তোমার বাপের বাড়ির লোক এসেছে!

আবার বললেন, নিরাপদ, একটা টুল নিয়ে আয়। কুটুমকে বসতে দে।

আগে এল একজন বাঁটকুল ধরনের লোক। আমার কাছে একটা টুল পেতে দিল।

অনিন্দ্য দাস খাতির করে বললেন, বসো, বসো ছোকরা। তোমাদের ছবিউলি মেয়েটাকে আমি টেনে হিঁচড়েও আনিনি, এখানে জোর করে ধরেও রাখিনি। সে এলেই জিজ্ঞেস করো, নিজের ইচ্ছেতে এসেছে কি না।

অনিন্দ্য দাসের কথা শুনব কী, আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলুম। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে নেমে এল ফুলমণি। এ কোন্ ফুলমণি? তাকে যে চেনাই যায় না। একটা বাটিক প্রিন্টের শাড়ি পরে আছে সে, মাথার চুল খোলা, এই দেড় মাসেই তার স্বাস্থ্য ফিরেছে অনেক। শীর্ণ ভাবটা মোটেই নেই, মসৃণতা এসেছে চামড়ায়, চোখের দৃষ্টিতে গভীরতা। সে এখন তাকিয়ে থাকার মতন সুন্দর। আগে বোঝা যায়নি, তার মুখখানা বেশ ধারালো।

কী করে ফুলমণির এতটা পরিবর্তন হলো? একজন পুরুষের সঙ্গে উদ্দাম ভালোবাসা, না পেট ভরে দু’বেলা খাওয়া, নাকি মনের ফুর্তি?

ফুলমণি আমাকে দেখে অবাক হয়েছে ঠিকই। কাছে এসে বলল, নমস্কার ছোটবাবু।

কানু রায় তো মিথ্যে বলেনি—ফুলমণির মুখে কথা ফুটেছে। আগে সে নিজের থেকে কোনো কথাই বলত না।

কিন্তু হঠাৎ এক রাশ অভিমান ঢুকে গেল আমার গলার মধ্যে। ফুলমণির সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করল না। অ্যাকাডেমি থেকে অনিন্দ্য দাসের সঙ্গে চলে আসার আগে ও একবার আমাকে বলে আসারও প্রয়োজন মনে করেনি? আমি ওর ছোটবাবু নই, কেউ নই।

অনিন্দ্য দাস বলল, হাঁড়িয়া আনিসনি? নিয়ে আয়। তোর নিজের লোককে খাওয়া!

নিরাপদ নামে বাঁটকুল লোকটিই নিয়ে এল কাচের জগ ভর্তি হাঁড়িয়া আর কয়েকটা গেলাস।

অনিন্দ্য দাস এক চুমুকে এক গেলাস সাবাড় করে বলল, ফুলমণি ফার্স্ট ক্লাস হাঁড়িয়া বানায়। খেয়ে দ্যাখো! সেদিন, বুঝলে, অ্যাকাডেমিতে তুমি আমার সঙ্গে ঝঞ্ঝাট করেছিলে, আমার বেশ রাগই হয়েছিল, ভাগ্যিস তোমায় মেরে বসিনি। তোমার দোষ নেই, তুমি তো আমাকে চেনো না। আমি গেটের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, দেখি যে এই মেয়েটাও এসেছে। আমি ওকে বললুম, অ্যাই ছুঁড়ি, তুই এই সব বাবুদের মধ্যে কী কচ্ছিস? যদি সত্যি ছবি আঁকতে চাস, ছবি আঁকা শিখতে চাস তো আয় আমার সঙ্গে। অমনি সুড়সুড় করে চলে এল।

আমি গেলাস হাতে নিয়ে চুপ করে তাকিয়ে রইলুম।

অনিন্দ্য দাস আবার বলল, ওকে এনে ভালো করিচি কি না বলো! চেহারায় কেমন চেকনাই হয়েছে, দেখেছ? বুলু দেখেছ, বুলু!

অনিন্দ্য দাস ফুলমণির নিম্ন শরীরের চাপড় মারলেন দু’বার।

আমার দিকে তাকিয়ে আধখানা ঠোটে হেসে বলল, বুলু মানে জানো? ওদের ভাষায় ঊরুকে বলে বুলু! আরও অনেকগুলো সাঁওতালি কথা শিখেছি। এরা পাগলকে বলে কঙ্কা। এ বেটী প্রায়ই আমাকে বলে কঙ্কা, কঙ্কা, প্রথমে বুঝতুম না। পাহাড়কে বলে বুরু। ঠোঁট হচ্ছে লুটি আর বুক হচ্ছে কোড়াম্। আঙুল হচ্ছে কাটুকা। বেশ, না? এই সব শব্দ বাংলা ভাষাতেও নিয়ে নেওয়া উচিত। আর পড়হাও-কুঁড়ি মানে কী বলো তো? ছাত্রী! এই মেয়েটা আমার পড়হাও-কুঁড়ি! অবশ্য আমি ওকে ছবি আঁকতে দিই না এখনো।

এবার আমি একটু চমকে উঠলুম।

অনিন্দ্য দাস বললেন, কেন আঁকতে দিই না জানো? আরে বাবা, ছবিই বলো, আর যে-কোনো শিল্পই বলো, আগে ফর্মটা ভালো করে শিখে নিয়ে তারপর ফর্ম ভাঙতে হয়। না ভাঙলে নতুন কিছু গড়া যায় না। শিল্পের ফর্ম ভাঙতে গেলে জীবনটাকেও কিছু ভাঙচুর করতে হয়। চাকরি-বাকরি, রোজগার, রোজ রাত্তিরে ক’খানা হাতে গড়া রুটি আর তরকারি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া, বছরের পর বছর এরকম জীবন কাটিয়ে শিল্প হয় না। ওকে ওর আগেকার জীবনের বাপের নাম ভুলিয়ে দিচ্ছি। সব উল্টো পাল্টা হয়ে যাক! আর একটা কথা। অশিক্ষিত পটুত্বের আমি ইয়ে মারি। ওসব দিন চলে গেছে। শিখতে হয়, সব গোড়া থেকে শিখতে হয়। ভেতরে মালমশলা আছে বলে দু’চারখানা ছবি এঁকে ফেলল, কিন্তু তা দিয়ে শিল্প হয় না। দু’দিনে একঘেয়ে হয়ে যায়। ফোক আর্ট সব একইরকম। মহৎ শিল্পীর হাতে হাজাররকম খেলা। জীবনটাকে শিল্প করে না নিলে তা হয় না। ফুলমণিকে আমি বলেছি, এখন এক বছর শুধু সোজা সোজা দাগ টেনে যা। চোখ বুজে মানুষের মুখটা দেখতে শেখ।

শুধু ফুলমণিই বদলে যায়নি, অনিন্দ্য দাসকেও আমার আজ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ মনে হলো, লম্বা লম্বা লেকচার দিচ্ছেন বটে, তবু ওঁর কোনো কথাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

হঠাৎ ফুলমণিকে কাছে ডেকে তিনি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন, এ মেয়েটার প্রোফাইলটা দারুণ! প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল মাগিটাকে পাথরে ধরতে হবে।

পরক্ষণেই ফুলমণিকে সরিয়ে দিয়ে বললেন, অ্যাই হারামজাদী, আর মোটাবি না বলে দিচ্ছি। যদি দেখি আরও মুটিয়েছিস, মেরে একেবারে পাট করে দেব! ফুলমণিকে এখনো কোনোক্রমেই মোটা বলা যায় না। আমি অনেক আদিবাসী পল্লীতে ঘুরেছি। সাঁওতাল, ওরাওঁ, হো, মুণ্ডা, লোধদের মধ্যে এ পর্যন্ত একজনও স্থূলকায়া মহিলা দেখিনি।

অনিন্দ্য দাসের এই সব ভাষা শুনলেও ফুলমণি মিটমিটিয়ে হাসছে।

আমি পাথরটার পেছন দিকে বসে আছি। অনিন্দ্য দাস ডাকতেই সামনের দিকে গিয়ে অবাক হলুম। ফুলমণির অনেকখানি প্রতিমূর্তি গড়া হয়ে গেছে। তার নগ্ন প্রতিমূর্তি।

আমি ভাস্কর্য কিছুই বুঝি না। তবে দেখেই মুগ্ধ হলুম। এর সঙ্গে দেবীপ্রসাদ, রামকিঙ্করের কোনো মিল নেই। হেনরি মূর বা রদ্যার ধরনেরও নয়। অনেকটা যেন রিলিফের মতন। পাথরটা পাথরই থাকছে, তার মধ্য থেকে একটা বেশ চিনতে পারার মতন মূর্তি ফুটে বেরুচ্ছে।

অনিন্দ্য দাস বললেন, আমি আর্টকে কমার্সিয়াল করিনি। আমার মূর্তি বেচি না। শেষ হবার পর এটা কোথায় বসাবো জানো—চমটা ব্লকে, নদীর মোহনার ধারে। সমুদ্র দিয়ে জাহাজ যাবে, নৌকোর মাঝিরা দেখবে। জঙ্গলের বাঘেরা এসে মূর্তিটাকে আদর করবে। কয়েক শো বছর বাদে লোকেরা ভাববে, সুন্দরবনের নরম মাটিতে একটা পাথরের মূর্তি গজিয়ে উঠল কী করে? নিশ্চয়ই আকাশ থেকে দেবতারা ফেলেছে! সেইভাবে আমি দেবতা হয়ে যাব। হা-হা-হা-হা।

আমি জিজ্ঞেস করলুম, পাথরটা আপনি আনলেন কী করে?

অনিন্দ্য দাস বললেন, বাজে প্রশ্ন। নৌকোয় আনিয়েছি। ঘাটশিলা থেকে। আর একটা মূর্তি দেখবে। এসো।

বাড়ির পেছন দিকে একটা বাগান। সেখানে একটা প্রমাণ সাইজের মূর্তি বসানো আছে। সেটাও ফুলমণির। কঠিন পাথরের মধ্যে ফুলমণির লাজুক ভাবটা কী আশ্চর্য ফুটেছে। অনিন্দ্য দাস সত্যিই শক্তিশালী শিল্পী।

অনিন্দ্য দাস বললেন, অ্যাই ফুলমণি, তুই এই মূর্তিটার পাশে দাঁড়া।

আমাকে বললেন, একবার দ্যাখো, খুঁটিয়ে দ্যাখো, ফুলমণির চেহারার সঙ্গে মূর্তিটায় কিন্তু মিল নেই। অথচ মিল আছে। এই অথচ মিলটাই আসল! ক’জন শালা এটা বোঝে?

বাঁটকুল লোকটি এবার এসে বলল, আপনারা এবার খাবেন না? বিকেল হয়ে গেল!

অনিন্দ্য দাস বললেন, কী রেঁধেছিস। নিয়ে আয় না শুয়ার। বকবক করছিস কেন?

নিরাপদ সঙ্গে সঙ্গে এক ডেকচি খিচুড়ি নিয়ে এল। কলাপাতায় বেড়ে দিয়ে গেল হাতে হাতে। বিকেল সাড়ে চারটের সময় এই ওদের দুপুরের খাবার। শুধু কলাপাতায় খানিকটা খিচুড়ি, ভেতরে অবশ্য আলু-টালু আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়া। অনিন্দ্য দাস খিচুড়ি খেতে খেতেই হাঁড়িয়ার গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন। ফুলমণিও হাঁড়িয়া খেয়ে যাচ্ছে সমানে।

আমি খানিকটা খিচুড়ি খেয়ে পাতাটা নামিয়ে রাখলুম।

অনিন্দ্য দাস ধমক দিয়ে বললেন, এই, এই, ও কী, আরও নাও। নিরাপদ ওকে খিচুড়ি দে। বেগুনভাজা কোথায়? হারামজাদা, আজ একটু মাছও জোগাড় করতে পারলি না? সবাই বলে সুন্দরবন মাছের দেশ, অথচ এখানেই মাছ পাওয় যায় না। সব কলকাতায় চলে যায়।

আমি বললুম, না, আমি আর খাব না।

—কেন খাবে না? ঐটুকু খেলে পেট ভরে? খাও খাও।

–না, আমাকে এবার যেতে হবে। এরপর আর ফেরার লঞ্চ পাব না।

—ফিরবে কেন? কে মাথার দিব্যি দিয়েছে, চাঁদু? এখানে থেকে যাবে উঠোনে খাটিয়া পেতে দেব রাত্তিরে। এই গরমে আমার সবাই উঠোনে শুই। ভয় নেই, বাঘ আসবে না।

মাটি থেকে আমার ঝোলাটা তুলে নিয়ে বললুম, আমাকে ফিরতেই হবে আজ।

ফুলমণি ঈষৎ নেশাগ্রস্ত গলায় বলল, কেন যাবে? থাকো, থাকো।

এই প্রথম আমি ফুলমণির দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলুম, ফুলমণি তোমাকে নিয়ে এই যে মূর্তিটা গড়েছে, তোমার কেমন লেগেছে?

ফুলমণির মুখ হাসিতে ঝলমল করে উঠল।

অনিন্দ্য দাসের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, মূর্তি তো গড়ে নাই।

তারপর আকাশের দিকে আঙুল তুলে বলল, উ গড়াইছে।

ওরে বাবা এত প্ৰেম!

হাতের কলাপাতায় খিচুড়ি নিয়েই ওরা আমাকে বিদায় দিতে এল গেট পর্যন্ত ফুলমণি কঞ্চির বেড়ায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছে, অনিন্দ্য দাস তার এঁটো হাত ফুলমণির কাঁধে রাখলেন। আমাকে বললেন, এই ছেলে, আবার আসিস। যখন খুশি চলে আসবি।

ওদের দুজনের গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভঙ্গিটা আমার চোখে লেগে রইল। আমি আর এখানে কখনো আসব না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *