2 of 3

পাদুকার বদলে

পাদুকার বদলে

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বেড়াতে বেরোনোর অভ্যেস আমার অনেক দিনের। কাছাকাছি রাস্তায় কিংবা পার্কে হাঁটতে চলে যাই, ঘণ্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে ফিরে আসি। যত রাতেই ঘুমোই না কেন, প্রথম পাখি ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে একটা জামা গায়ে দিয়ে পায়ের কাছে চটি বা জুতো যা পাই পরে নিয়ে চটাস চটাস করে বেরিয়ে পড়ি। অধিকাংশ দিনই আমার কুকুরটা আমার সঙ্গে থাকে। আমার সঙ্গে সকালে বেড়াতে সে খুব ভালবাসে। আমি ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধোয়া মাত্র সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে, ঘন ঘন লেজ নাড়তে থাকে এবং মাঝে মধ্যে আমার উপর লাফিয়ে পড়ে। দুজনে এরপর তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে রাস্তায় নেমে যাই।

আজ কিছুদিন হল আমি একটা নতুন পাড়ায় এসেছি, এটা একদম সাহেবপাড়া। আমরা যে বাড়িটায় থাকি সে বাড়িটাও বিরাট।

আমরা আগে যে বাড়িটায় ছিলাম সেটা ছিল বেশ ছোট। সেখানে আমাদের জিনিসপত্র খাট-আলমারি বিশেষ কিছু ছিল না। আমাদের এখনকার এই বিরাট বাড়িটার পক্ষে সেই জিনিসগুলি খুবই অল্প, সেগুলো দিয়ে এ বাড়ির একটা কোনাও ভরল না। অথচ আমাদের অবস্থা এমন নয় যে। এত বড় বাড়ি নতুন ফার্নিচার দিয়ে ভরে ফেলি। ফলে আমাদের এই নতুন তলায় আমরা কেমন ফাঁকা ফাঁকা, আলগা আলগা হয়ে বাস করছি। কেবলই মনে হয় আরও কিছু জিনিস দরকার ছিল।

এ ছাড়া আরও কয়েকটা ছোটখাটো অসুবিধা হয়েছে নতুন পাড়ায় এসে। যেমন কাছাকাছি কোনও বাজার নেই, বন্ধুবান্ধবের যাতায়াত কম। কিন্তু সবচেয়ে অসুবিধা হল সকালে বেড়ানো নিয়ে। কাছেই ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেখানে হাজার হাজার লোক বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমি দেখলাম আমাদের পুরনো পাড়ার মতো এ পাড়ায় ময়লা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে, পায়ে ছেঁড়া চটি দিয়ে বেড়ানোর নিয়ম নেই। হাফপ্যান্ট, ভি কাট সাদা বা রঙিন গেঞ্জি, পায়ে কাপড়ের জুতো–এই হল এ পাড়ায় প্রাতঃভ্রমণের পোশাক।

এমনকী প্রাতঃভ্রমণের সহচর ময়দানে বেড়াতে নিয়ে আসা কুকুরগুলি পর্যন্ত চমৎকার ধোপদুরস্ত। তাদের গলায় সুন্দর ঝকমকে চামড়ার বকস, রুপোলি শিকল।

বাধ্য হয়ে পাড়ার মেজাজ ঠান্ডা করতে গিয়ে পনেরো বিশ টাকা খরচ করে কুকুরের সাজ সরঞ্জাম কেনা হল। এদিকে হয়েছে, আমার পক্ষে হাফপ্যান্ট পরা অসম্ভব। শুধু পাড়া দেখলেই তো চলবে না, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আছে, তারা দেখলে হাসাহাসি করতে পারে।

একটা কলারওলা জামার মতো গেঞ্জি কিনলাম। অফিস যাওয়ার ফুলপ্যান্টের সঙ্গে সেই গেঞ্জি জুড়ে সকালে বেড়ানোর চমৎকার পোশাক হয়ে গেল।

এরপর জুতো। চামড়ার একজোড়া ফিতেওলা সু আছে আমার। তিন বছরের পুরনো, সেটা পায়ে দিয়ে অফিস যাই। এখন সকালবেলা সেটা পরে হাঁটাহাঁটি করলে ছিঁড়ে যাবে, অফিস যাওয়ার জুতো আর থাকবে না। আর তা ছাড়া ওই ভারী জুতো পরে সকালে বেড়ানো পছন্দসই কাজ নয়। ঘুম থেকে উঠে ফিতে লাগানো জুতো পরা সেও বেশ কষ্ট।

সুতরাং একজোড়া প্রাতঃভ্রমণের জুতো অবশ্যই কিনতে হবে। হালকা, কাপড়ের কিন্তু সাদা নয়, কোনও ঘন রঙের, সাদা হলে ময়লা হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি, বার বার কালি করে রোদে শুকোতে হবে। আর ফিতে লাগানো জুতোও চলবে না। ভোরবেলা উঠে ফিতে ঢিলে করে জুতোর মধ্যে পা গলিয়ে তারপর ফসকা গেরো দিয়ে ফিতে শক্ত করে বাঁধো, তারপর হাঁটতে গিয়ে সে ফিতে দু-একবার খুলবেই, তারপর ফিরে এসে আবার ফিতে খুলে জুতো থেকে পা বার করো। এর মধ্যে যদি আবার ফিতের গিটে জট বেঁধে যায় তাহলে সে আরও ঝকমারি।

সুতরাং আমার একজোড়া রঙিন কাপড়ের জুতো চাই, পাম্পসু বা নিউকাট অন্তত মোকাসিন জাতীয়, যার মধ্যে অনায়াসেই পা গলিয়ে বেরিয়ে পড়া যায়। কিন্তু এই কলকাতা শহরে কাপড়ের মোকাসিন বা নিউকাট পাওয়া অসম্ভব, সেসব জুতো যারা পায় দিত তারা বহুকাল এই শহর থেকে বিদায় নিয়েছে। হয়তো পাড়াগাঁয়ের হাটে-বাজারে গেলে সেরকম জুতো চেষ্টা করলে পাওয়া যাবে, কিন্তু কলকাতায় বড় জুতোর দোকানে গিয়ে কাপড়ের পাম্পসু খোঁজ করা মাত্র দোকানদাররা এমন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকান যেন পঞ্চাশ বছর আগের কবর থেকে এইমাত্র হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে উঠে এসেছি।

তাই বলে দোকানে মর্নিং ওয়াকের জুতো নেই তা নয়। বিচিত্র পাঁচমিশেলি রঙের অত্যন্ত জটিল সে সমস্ত পাদুকা এবং খুবই মূল্যবান। শক্ত টান টান, ফিতে বাঁধা; একজন দোকানদার আমাকে বোঝালেন, এ জুতো পায়ে দিলেই মনে হবে ছুটি।

কিন্তু আমি তো ছোটাছুটি করতে চাই না, আর কেউ হঠাৎ আমাকে তাড়া করছে না। আমার চাই স্বচ্ছন্দে আরাম করে বেড়ানোর উপযুক্ত একজোড়া নরম জুতো।

শেষ পর্যন্ত একদিন আমি আমার স্বপ্নের জুতোর সাক্ষাৎ পেলাম। তাও এক-আধ জোড়া নয়, হাজার হাজার জোড়া, কাপড়ের মোকাসিন, ঘন নীল রঙের, সব প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে ভরা একটি বড় ট্রাকে উঠছে। লালবাজারের পিছনে চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে একটা কাজে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ চোখে পড়ল এই জুতোভরতি ট্রাক। কোন দোকানে যাচ্ছে জানতে পারলে সেই দোকান থেকে কিনব, এই ভেবে ট্রাকওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ড্রাইভার সাব, ইয়ে এতনা জুতা কঁহা যাতা হ্যায়?

ড্রাইভার গম্ভীর হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আসাম, গৌহাটি। বলে দুবার কর্ণভেদী হর্ন বাজালেন।

আমার পক্ষে জুতো কিনতে আসাম যাওয়া সম্ভব নয়। আর সেখানে আজকাল যা গোলমাল, জুতো কিনতে গিয়ে প্রাণ হারাব নাকি?

বাধ্য হয়ে আমাকে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করতে হল, ইয়ে এতনা জুতা কাহাসে আতা হ্যায়?

 ড্রাইভার সাহেব এবার উত্তর দেবার আগেই দুবার প্রবল শব্দে হর্ন বাজালেন, তারপর নিজের হর্ন বাজানো শুনে নিজেই খুশি হয়ে আমাকে হাতের আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে বাঁ দিকের একটা গলি দেখিয়ে বললেন, নিউ বোম্বাই সু কোম্পানি, টেরিটিবাজার, ক্যালকাটা।

বুঝতে পারলাম, পাশের গলিটিই বাজার এবং ওখানেই নিউ বোম্বাই সু কোম্পানির অফিস।

গলিতে ঢুকে কিন্তু জুতোর দোকান দেখতে পেলাম না, তবে অনেক অনুসন্ধানের পর একটা জরাজীর্ণ বাড়ির দরজায় দেখলাম পুরনো টিনের পাতে প্রায় অস্পষ্ট হয়ে আসা ইংরিজি অক্ষরে কোম্পানিটার নাম লেখা রয়েছে। ফাস্ট ফ্লোর। ভাঙা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। দোতলায় শুধু জুতো আর জুতো। বারান্দায়, ঘরে, সিঁড়ির উপরে হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ জুতো। দিনের বেলায়ও রীতিমতো অন্ধকার, আর সেই অন্ধকারে একদল লোক জোড়া মিলিয়ে জুতোগুলো প্ল্যাস্টিকের মোড়কে ভরছে।

আমি যখন দোতলায় উঠে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, তারা আমাকে তাকিয়েও দেখল না। অবশেষে আমাকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর বলতে হল, আমি জুতো কিনতে এসেছি।তারা আমাকে নিঃশব্দে ভিতরের একটা ঘরের দিকে একটি তর্জনী নির্দেশ করে দেখাল। সেই ঘরে একটি মাত্র ছোট টেবিলে দুজন লোক লম্বা লম্বা কাগজে কঠিন সব যোগবিয়োগ করছেন। আমাকে দেখামাত্র তারা জিজ্ঞাসা করলেন, আমি গৌহাটি থেকে আসছি কিনা, তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই জানালেন মাল রওনা হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পরে আমার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলেন যে আমি গৌহাটি কিংবা অন্য কোথাও থেকে আসিনি, আমি কলকাতার একজন সামান্য খদ্দের এবং আমার চাই মাত্র একজোড়া জুতো। শুনে তারা একেবারে আকাশ থেকে পড়লেন, গত তিরিশ বছরে এদের কাছে কেউ একজোড়া জুতো কিনতে আসেনি। তাদের বিখ্যাত নিউ বোম্বাই সু কোম্পানি পাইকারি কারবার করে। একজোড়া জুতো তারা কখনও বেচেননি, বেচবেন না।

অনেক সাধ্য-সাধনা অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর তারা বললেন, ঠিক আছে, যে জোড়া ইচ্ছে নিয়ে যান, দাম লাগবে না।

যদিও খুব অপমানিত বোধ করছিলাম, তবু লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। একজোড়া গাঢ় নীল রঙের কাপড়ের মোকাসিন বেছে নিয়ে চলে এলাম। আসার সময় তাঁদের যথেষ্ট ধন্যবাদ দিলাম কিন্তু তাঁরা ভ্রূক্ষেপ করলেন না।

পরদিন সকালে আমার সেই বহু অপমানের, বহু সাধের জুতো পায়ে দিয়ে ভিক্টোরিয়া তিন চক্কর দিলাম। প্রতিদিন আমার কুকুরটা আমার আগে আগে যায়, আমি পিছে পিছে আসি। আজ নতুন জুতো পরে আমিই আগে আগে গেলাম, সে হাঁফাতে হাফাতে পিছে পিছে আসতে লাগল।

অবশেষে আমিও হাঁফিয়ে গেলাম। ভিক্টোরিয়ার উলটোদিকে ময়দানের সামনের একটা বেঞ্চিতে বিশ্রাম নিতে বসলাম। পাশে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক বসে হাঁ করে হাওয়া খাচ্ছিলেন। আমি পাশে বসতেই সঙ্গে সঙ্গে তার নজর গেল আমার জুতোজোড়ার উপর এবং তখনই তার হাঁ বন্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আমার জুতোজোড়ার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, এ জুতোজোড়া কোথা থেকে কিনলেন?

আমি সত্যি কথা সংক্ষেপে বললাম, কিনিনি।

তিনি বললেন তাহলে

আমি বললাম, টেরিটি বাজারে এক পাদুকা ব্যবসায়ী এই জুতোজোড়া আমাকে দান করেছেন।

ভদ্রলোক একবার আমার কথা শোনেন, একবার আমার পায়ের দিকে তাকান, তারপর একবার নিজের পায়ের দিকে তাকান আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, এরকম একজোড়া জুতো যে আমি কত খুঁজেছি। আমার জুতোজোড়ার দিকে আবার তাকান, তার চোখ দুটো লোভে লালসায় চকচক করে জ্বলতে থাকে।

আমার ভয় হল, কী জানি ভদ্রলোক পা থেকে জুতোজোড়া কেড়ে নেবেন নাকি? তার পায়ে অবশ্য চমৎকার একজোড়া জুতো রয়েছে তবে সেটা নিতান্তই ভাল পাম্পসু, আমার মতো এ রকম জাহাজি নীল ওয়াকিং সু নয়।

ভদ্রলোককে অন্যমনস্ক করবার জন্যে আমি সবিস্তারে জুতো-জোড়া কী ভাবে পেয়েছি এবং এরকম একজোড়া জুতো যে কলকাতায় পয়সা দিলেও পাওয়া যাবে না সেটা ব্যাখ্যা করে বললাম।

আমার কথা শুনে ভদ্রলোক আরও অস্থির হয়ে উঠলেন। এমন সময় একটা সাদা রঙের নতুন অ্যামবাসাডর গাড়ি আমাদের কাছে ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে উর্দিপরা ড্রাইভার নেমে আমার পাশের পাদুকালোভী ভদ্রলোককে সেলাম করল।

বুঝতে অসুবিধা হল না যে এই গাড়ি ও ড্রাইভার ভদ্রলোকেরই। তিনি সকালবেলা হাঁটতে হাঁটতে ময়দান চলে আসেন, পরে ড্রাইভার এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়।

সেলাম শেষ করে ড্রাইভার গাড়ি খুলে গাড়ির ভিতর থেকে আটটা ফোলডিং চেয়ার বার করে ফুটপাথের উপর পেতে দিল। সুন্দর ঝকঝকে সাদা অ্যালুমিনিয়াম রঙের চেয়ার, পিঠে এবং বসার জায়গায় উজ্জ্বল ক্যানভাস লাগানো। ভদ্রলোক প্রতিদিন সকালে নিশ্চয় এই ফুটপাথে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সামনে ময়দানের খোলা হাওয়ায় এই চেয়ারগুলোতে বসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গল্প করেন।

কিন্তু ভদ্রলোকের আজ গল্প করার অবস্থা নেই, তার বন্ধুবান্ধবেরাও এখনও এসে পৌঁছায়নি। ভদ্রলোক আমার জুতোজোড়ার দিকে যত তাকাচ্ছেন ততই অস্থির হয়ে পড়ছেন। অবশেষে লোভ সামলাতে না পেরে বলেই ফেললেন, আপনার জুতোজোড়াটা দিন না, একবার পায়ে দিয়ে দেখি। কতকাল কাপড়ের এমন সুন্দর জুতো পায়ে দিইনি!

এরকম অসম্ভব অনুরোধ জীবনে আমি খুব বেশি পাইনি। কিন্তু ভদ্রলোকের আগ্রহাতিশয্যে জুতোজোড়া খুলতে হল। সঙ্গে সঙ্গে ঘটে গেল এক অসম্ভব ঘটনা, নিজের পাম্পসু জোড়া ফুটপাথের উপর খুলে ফেলে আমার সাধের জুতোজোড়া চকিতে পায়ে গলিয়ে তিনি ছুটে গিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললেন, এই ড্রাইভার, জলদি চলো। বিশ্বস্ত, আজ্ঞাবাহী চালক তাঁকে নিয়ে দ্রুতগতিতে রেড রোডের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

ফুটপাথে পড়ে রইল ভদ্রলোকের আটটি শৌখিন চেয়ার, যাকে বলে বাগানকেদারা এবং একজোড়া পাম্পসু।

আমি ভদ্রলোকের অপেক্ষায় তারই একটি বাগানকেদারায় বসে রইলাম। মাঝে মধ্যে দু-একজন ভ্রমণকারী আমাকে চেয়ারে বসা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, চৌধুরী সাহেব আসেননি। চৌধুরী সাহেব অর্থাৎ সেই পাদুকালোভী ভদ্রলোক এসেছিলেন এবং চলে গেলেন এবং আসবেন কিনা বলতে পারি না এবং তিনি আমার জুতোজোড়া নিয়ে গেলেন এবং আশা করছি তিনি ফিরবেন। এই কথা আট-দশ জন ভদ্রলোককে বোঝাতে হল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চেয়ারে বসে আধঘণ্টা একঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর চলে গেলেন।

বেলা বাড়তে লাগল। নটা, সাড়ে নটা, দশটা। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমার কুকুরটা অস্থির হয়ে পড়েছে। ময়দানের প্রাতঃভ্রমণকারী একজনও নেই। কিন্তু চৌধুরী সাহেব আর এলেন না।

গত্যন্তর না দেখে চৌধুরী সাহেবের জুতোজোড়া পায়ে দিয়ে একটা ঠেলা ডেকে এনে আটটা অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ার তুলে নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম, এত মূল্যবান জিনিস রাস্তায় তো আর ফেলে যেতে পারি না।

এখন আমাদের নতুন বাসায় ফার্নিচারের দুঃখ কিছুটা ঘুচেছে। বাইরের ঘরে অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ারগুলি রুপোর মতো ঝকঝক করছে। যে দেখে সেই জিজ্ঞাসা করে, কোথায় পেলে? আমি প্রশ্নটাকে এড়িয়ে যাই। তবে ময়দানে বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে বেড়ানো ছেড়ে দিয়েছি। আজকাল সকালে চৌধুরী সাহেবের পাম্পসু জোড়া পায়ে দিয়ে কুকুরটাকে নিয়ে বাড়ির ছাদের উপরে পায়চারি করি। বেশ বড় ছাদ, খোলামেলা; কোনও অসুবিধা হয় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *