নীল রঙের অন্ধকার

নীল রঙের অন্ধকার 

পর্নোগ্রাফি বিষাক্ত মাকড়সার মতো জাল বিছিয়ে রাখে। চোখ ধাঁধানো নিষিদ্ধ সুখ আর সাময়িক উত্তেজনায় আকৃষ্ট হয়ে যে কেউ আটকে পড়তে পারে এই জালে। একবার আটকা পড়লে জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন। মাকড়সা যেভাবে পোকাকে তিলে তিলে মেরে ফেলে, পর্নোগ্রাফিও আপনাকে ঠিক সেভাবেই একটু একটু করে ধ্বংস করে ফেলবে। আপনি হারাবেন আপনার স্বাস্থ্য, আপনার পরিবার, আপনার চাকরি, এমনকি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকেও। আমাদের এ লেখায় আমরা আপনাদের কিছু সত্যিকারের গল্প বলে যাব। ব্যর্থতা আর আর্দ্রতার গল্প! দীর্ঘশ্বাস আর নীরব আর্তনাদের গল্প! নষ্ট হবার গল্প! পাঠক, আপনাকে স্বাগতম! 

.

এক, 

বাবা,

 প্রথমেই বলে নিই, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর তোমার কারণে আমার জীবনে যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। তোমার পর্ন দেখার কারণে আমার কী সমস্যা হয়েছে তা তোমার জানা উচিত। তুমি ভাবো এটা শুধু তোমার কিংবা তোমার আর আম্মার সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। তুমি বুঝতেও পারোনি এটা তোমার সন্তানদের কী গভীর সংকটে ফেলেছে। তখন আমার বয়স ১২। কেবল কৈশোরে পা দিয়েছি। এমন সময়ই আমি তোমার কম্পিউটারে পর্ন আবিষ্কার করি। প্রথম প্রথম আমার খুব অবাক লাগত। তুমি একদিকে আমাকে বলেছ, হলিউড মুভি দেখে এটা-ওটা না করতে, আর নিজেই দিনের পর দিন এসব আবর্জনা গিলে চলেছ। আমি কী দেখব আর কী দেখব না, এসব যখন তুমি বলতে আসতে তখন আমি এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিতাম, কারণ আমি জানতাম তুমি একটা ভণ্ড! আমি জানতাম, মা-ই একমাত্র নারী না, যাকে তুমি চাও। তুমি যে আড়চোখে আমাদের দেখতে সেটাও আমার নজর এড়ায়নি। তোমাকে দেখে পুরুষজাতির প্রতি আমার প্রবল বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। ভেবে বসি, সব পুরুষই বোধহয় তোমার মতো বিকৃত মানসিকতার হয়!

তুমি আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে, কীভাবে আমার পোশাক-আশাক পাশের মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে আর কীভাবে আমার নিজের অন্তরাত্মাকে আরও সুন্দর করা উচিত। কিন্তু তোমার কাজেকর্মে আমি বুঝেছিলাম, আমি তখনই সুন্দর হতে পারব যখন আমি ম্যাগাজিনের কভারের মেয়েটির মতো বা তোমার দেখী পর্নের মেয়েগুলোর মতো হতে পারব। তোমার কথার কোনো মূল্যই তাই আমার কাছে ছিল না। বরং তোমার এসব “লেকচার” শুনতে খুব বিরক্ত লাগত। যত দিন যাচ্ছিল, পচে যাওয়া এ সমাজ আমার কানের কাছে শুধু ভ্যান ভ্যান করে যাচ্ছিল, আমি তখনই নিজেকে সুন্দর ভাবতে পারব যখন আমি “ওদের” মতো হব। তোমার প্রতি বিশ্বাসটা দিন দিন শূন্যের কোঠায় নেমে আসছিল, কারণ তুমি যা বলতে করতে ঠিক তার উল্টোটা। আমি হন্যে হয়ে এমন একজনকে খুঁজে বেড়িয়েছি, যে শুধু আমার অঙ্গসৌষ্ঠবের জন্য আমাকে ভালোবাসবে না, আমি মানুষটাকে ভালোবাসবে।

 বাসায় আমার বান্ধবীরা এলে আমি চিন্তা করতাম, তুমি কী চোখে ওদের দেখছ! আমার বান্ধবী হিসেবে, নাকি তোমার নষ্ট কল্পনার কোনো এক অংশ হিসেবে? আমি বিয়ে করলাম এমন একজন পুরুষকে, যার জীবনে পর্নোগ্রাফি ছোবল দিতে পারেনি। আমি এখনো আমার ভেতর থেকে পুরুষজাতির প্রতি অবিশ্বাস ঝেড়ে ফেলতে পারিনি। হ্যাঁ বাবা, তোমার পর্ন দেখা আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কে বছরের পর বছর প্রভাব রেখে গেছে। আমি তোমাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, হয়তো তুমি এখনো বুঝবে না, তোমার পর্ন-আসক্তি শুধু তোমার জীবন ধ্বংস করেনি, আমাদের সবার জীবনে নষ্টের বিষাক্ত বীজ বুনেছে। যখনই চিন্তা করি এ ভয়ঙ্কর নেশা আমাদের সমাজে কী গভীর শিকড় গেড়ে বসে গেছে, আমি অসুস্থবোধ করি। প্রচণ্ড খারাপ লাগে যখন আমার ছোট্ট ছেলের সাথে পর্নের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলতে হয়। আমি তাকে বোঝাই অন্য দশটা পাপাচারের মতো পর্ন শুধু নিজের ক্ষতি করে না, বরং আশেপাশের সবাইকে আঘাত করে। আমি তো তোমাকে ক্ষমা করেই দিয়েছি। ঈশ্বর আমাকে এ কুপ্রভাব থেকে যেভাবে সরিয়ে এনেছেন সে জন্য আমি তার প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ, এখনো মাঝে মাঝে শিউরে উঠি। আমি প্রার্থনা করি যেন তুমি এই নোংরা নেশী থেকে বের হয়ে আসতে পারো, আরও অসংখ্য পুরুষ যেন এর করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পায়।

 .

দুই

আসোলামু আলাইকুম ভাই,

 আল্লাহ্ আপনাদের কাজে বারাকাহ দিন। আমার নাম আবু সাব্বির। আমি ১৯ বছরের এক তরুণ। থাকি শান্তিনগরে। পর্ন এবং হস্তমৈথুন আসক্তি আমার জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি আপনাদের ফেসবুক পেইজ খুঁজে পাই। বেশ কিছু লেখা তখনই পড়ে ফেলি। অনেকেই পর্ন-আসক্তির বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের কথা শেয়ার করেছেন। আমার জন্য তাদের লড়াইয়ের কাহিনিগুলো ছিল খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। অনেক দিন ধরেই আমি চেষ্টা করছি এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার, কিন্তু কেন যেন পারছি না। আমি হতাশ, ক্লান্ত, নিঃস্ব, রিক্ত। দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার কাহিনি অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সময় নিয়ে পড়বেন আশা করি।

শুরু করি তাহলে?

 তখন আমার বয়স ছিল পাঁচ বছর। একটা ফ্ল্যাটে আরও দুটো পরিবারের সঙ্গে আমরা ভাড়া থাকতাম। ওই ফ্ল্যাটে তিনটা রুম থাকলেও টয়লেট ছিল কেবল একটা। আমাদের রুমের বামের রুমে যে পরিবার থাকত, তাদের ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া এক ছেলে ছিল। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম, মাঝে মাঝে তার কাছে পড়া বুঝতে যেতাম। সে আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিল। হুট করে সে আমার সাথে অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করল। আমার সামনেই পোশাক পাল্টীত, আমার শরীরের এখানে-সেখানে বাজেভাবে স্পর্শ করত। আমি তার এ রকম অদ্ভুত আচরণের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেতাম না। সে আমার স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত বুলাত এবং হস্তমৈথুন (এটা আমি অনেক পরে বুঝেছিলাম) করত। বলত, “দেখ তুই আমার আদরের ছোট ভাই। এইসব কথা কাউকে বলবি না।”

 কয়েকদিনের ভেতরেই সে আমাকে শিখিয়ে দিলো কীভাবে হস্তমৈথুন করতে হয়। যখন আমাদের বাবা-মা কেউই বাসায় থাকত না, তখন সে আমার এখানে-সেখানে হাত বুলিয়ে হস্তমৈথুন করত। আমি ভাবতাম এটা বোধহয় মজার একটী খেলা, বাবা-মা বাসায় না থাকলে এটা খেলতে হয়। আমি সেই সময় ছিলাম একেবারেই বাচ্চা। তেমন কিছুই বুঝতাম না। দেখতাম সে হস্তমৈথুন করার কিছুক্ষণ পর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিচ্ছে। এক বছর ধরে এমনটা চলল। তারপর ওরা বাসা বদলে চলে গেল অন্য জায়গায়। কিন্তু এরই মধ্যে যা ক্ষতি হবার হয়ে গিয়েছে। ততদিনে তাকে ছাড়াই আমি হস্তমৈথুন করা শিখে ফেলেছি। মাসে অন্তত দুবার হস্তমৈথুন করতাম। কোনো ধারণাই ছিল না আমি কী করছি, কিন্তু এটা আমাকে আনন্দ দিত প্রচুর। দশ বছর বয়সে অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। ততদিনে আমি পুরোদস্তুর হস্তমৈথুনে আসক্ত একজন। একদিন হস্তমৈথুন করার পর দেখি আমার লজ্জাস্থান থেকে কী যেন বের হয়ে আসছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম। মুখে ব্রণ উঠতে শুরু করল। শরীর দুর্বল হয়ে গেল।

পড়াশোনায় মন দিতে রীতিমতো সংগ্রাম করা লাগত। তখন দেশে মাল্টিমিডিয়া ফোন কেবল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আমার কয়েকজন বন্ধুর এমপি ফোর প্লেয়ার ছিল। তাদের সাথে আমি পর্ন দেখা শুরু করলাম। টিফিন পিরিয়ড়ে, ক্লাসের আগে, ক্লাসের পরে এমনকি ক্লাসে বসে বসেও আমি পর্ন দেখতাম। বন্ধুদের সাথে মেয়েদের নিয়ে সব সময় রসালে আলোচনা করতাম। বয়স খুব বেশি না হলেও ততদিনে আমি পরিণত হয়েছি দাঁতাল এক বুনো শুয়োরে।

 নিজের মাল্টিমিডিয়া ফোন হাতে পেলাম ১৪ বছর বয়সে। ইন্টারনেট তখন খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। তবুও যত বেশি সম্ভব পর্ন ডাউনলোড করতাম। স্কুলের রেসাল্ট খুব খারাপ হতে থাকল। মানসিক সমস্যা তো আগে থেকে ছিলই, বিভিন্ন দৈহিক সমস্যাও দেখা দিতে লাগল। স্কুল বদলে অন্য স্কুলে গেলাম যেন পড়াশোনা আবার নতুন উদ্যোমে শুরু করতে পারি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। পড়াশোনা করব কী, নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতেই পারলাম না!

চুপচাপ থাকতাম সব সময়, কারও সাথে তেমন একটা মিশতাম না। খেলাধুলার ধারেকাছেও যেতাম না। সত্যি বলতে কি, এনার্জি পেতাম না খেলাধুলা করার। সব সময় টায়ার্ড লাগত৷ স্কুল পালাতাম। সপ্তাহে দুই বারের মতো পর্ন দেখতাম আর হস্তমৈথুন করতাম। দু-বছর গেল এভাবেই। ১৬ বছর বয়সে যা হয়েছিল ভাবলে আমি আজও শিউরে উঠি। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে তখন আমার বাস্তব জ্ঞান ছিল একেবারেই শূন্যের কোঠায়; ইন্টারনেট ঘেঁটে আবছা আবছা একটা ধারণা ছিল এই আরকি। বেঁচে থাকী অসহ্য মনে হতো আমার কাছে। কোনোকিছুই ঠিকমতো করতে পারতাম না। বাবা-মার সঙ্গে রাগারাগি করতাম। না ছিল কোনো ভাইবোন, না ছিল কোনো বন্ধুবান্ধব।

আমার এ করুণ অবস্থার জন্য কাউকে দায়ী করতে চাইতাম। কিন্তু কাকে দায়ী করব? শেষমেষ কাউকে না পেয়ে দায়ী করলাম আল্লাহকে! সব দোষ অল্লাহর! তিনি যদি আমাকে ওই ছেলের সঙ্গে ছোটবেলায় না মেশাতেন, তাহলে আমি পর্ন, হস্তমৈথুন কী জানতামই না, আর আমার জীবনটাও এ রকম হতো না। আমি কখনোই নাস্তিক ছিলাম না, কিন্তু আল্লাহকে দোষ দিতাম। তারপর ভাবলাম বখাটে ছেলেপেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করে দেখি। তারা হয়তো আমার বন্ধু হবে আর আমি এই নরকতুল্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে “অস্থির” একটা জীবন পাব। 

বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেশা শুরু করলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোঁকা শুরু করলাম। গাঁজাটাই-বা বাদ যাবে কেন! গাঁজার কল্কিতেও দম দেয়া শুরু করলাম। মাঝেমধ্যে কড়া কিছু ড্রাগসও নিতাম। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় রংবাজি করে বেড়াতাম। ভাবতাম এতদিনে বোধহয় আমার স্বপ্নের জীবনটা পেয়ে গেছি। কিন্তু আমার পর্ন-আসক্তি তো গেলই না, বরং আরও বাড়লো। ড্রাগস নেয়ার কারণে শরীরে এনার্জি যেন টগবগ করে ফুটত, প্রচুর হস্তমৈথুন করতাম। হাস্যকর একটা ব্যাপার ঘটল এ সময়… আমি প্রেমে পড়লাম! পর্ন দেখতাম আর “ও”কে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগতাম। কিন্তু জীনতীম কখনোই তাকে নিজের করে পাব না আমি। কত পাগলামিই যে করেছি আমি ওর জন্য! হাসি পায় এখন এসব মনে হলে। হাত কেটে রক্ত দিয়ে ওর নাম লিখেছি, মারামারিতে জড়িয়েছি, আরও কত কী! সে অনেক কথা! একসময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। আরও বেশি ভেঙে পড়লাম।

বখাটে ছেলেপেলেদের সাথে মেশা বন্ধ করলাম। বাসায় থাকতাম সব সময়। মাঝেমধ্যে শুধু সিগারেট কিনতে বাইরে যেতাম। পর্ন দেখার মাত্রা বেড়ে গেল। আরও। আলহামদুলিল্লাহ! এ সময় আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অল্প-বিস্তর জানাশোনা শুরু করি। জানলাম আমি যা করছি সেগুলো করা মারাত্মক ভুল। যে ভুল আমি করেছি তার মাশুল আমাকে সারা জীবন গুনতে হবে। অন্যান্য ধর্ম নিয়েও ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম কিছুদিন। কিন্তু শেষমেষ বুঝলাম যা আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি সেটা ইসলাম, অন্য কিছু না। গাঁজা খাওয়া তো আগেই ছেড়েছি এবার সিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলাম। বাসায় নামাজ পড়া শুরু করলাম। কিন্তু কিছুতেই পর্ন অর হস্তমৈথুন আসক্তি ছাড়তে পারলাম না। 

পুরোনো কাসুন্দি তো অনেক ঘাঁটা হলো এবার বর্তমান অবস্থার কথা বলি…

 আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাসায় পড়ার চেষ্টা করি। পড়াশোনা করি না, বাবা-মার সাথে থাকি। ভাইবোন নেই, নেই কোনো বন্ধুবান্ধব। একাকিত্বে ভুগি, আত্মবিশ্বাস তলানিতে। মানুষের সাথে মিশতে পারি না। এমনকি বাসায় আত্মীয়স্বজন এলে আমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই।

 আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। পাগল বলতে পারেন একপ্রকার। নিজের সাথে নিজে কথা বলি প্রায়ই, মানুষজন আড়চোখে তাকায়। কিছু মনে থাকে না। তীব্র মাথাব্যথী হয়, ব্যথায় মাথা যেন ছিঁড়ে যায়। মনে হয় মাথা কেটে ফেলে দিই। 

আমার বয়স যদিও ১৯, আমাকে দেখে মানুষ ভাবে আমার বয়স বোধহয় ত্রিশের কোঠায়। চুল পড়ে যাচ্ছে, আর আমার যে ছোট ছোট কিছু দাঁড়ি আছে, জানি না কী কারণে ওগুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। খুব বেশি খাওয়া-দাওয়া করি না, কিন্তু আমি অনেক মোটী। ব্যায়াম-ট্যায়াম যে করব তাও হয় না, সব সময় এত ক্লান্ত থাকি… 

আমি জানি না কী করব। আমি এত অল্প বয়সে হস্তমৈথুনের সাথে পরিচিত হয়েছি যে, আমার শরীর নিজে নিজেই রিঅ্যাক্ট করে। অর্থাৎ প্রায় প্রতিরাতেই হস্তমৈথুন করি। এমনকি ট্রাউজার বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখলেও নিজেকে থামাতে পারি না। নিজের অজান্তেই পাপ করে ফেলি। 

অদ্ভুত ব্যাপারটা হলো হস্তমৈথুনের পর পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকে পড়ি। অপরাধবোধ হয়, মনে হয় যে খোদা আমাকে ক্ষমা করবেন না, তারপর পর্ন দেখি। আমার একটি পিসি ও ফোন আছে। আমার কোনো ডিভাইসেই পর্ন নেই, হতাশ লাগলে ওসবের সাইটে যাই। মাঝে মাঝে ওয়েব ব্রাউয করার সময় নারীর ছবি দেখলে উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্লিক না করে থাকতে পারি না।

 আমার আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসে তাদের সন্তানদের সাফল্য নিয়ে গর্ব করে। আরও হতাশ হয়ে যাই, আবারও ফিরে যাই পীপের রাজ্যে। আমার মা-বাবা আমাকে বকাঝকা করলে হতাশ হয়ে পাপ করে ফেলি।

 সবভাবেই আমি ডুবে যাচ্ছি এক গভীর অন্ধকারে। একটা হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে, হাশরের ময়দানে একদল মানুষ আল্লাহর সামনে পাহাড়সমান পুণ্য নিয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু আল্লাহ্  সেই পুণ্যগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, কারণ এই মানুষগুলো একা থাকা অবস্থায় আল্লাহ্ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছিল ও আল্লাহকে অমান্য করেছিল।

আমার নবী (:) আমাকে নিয়ে হাদিসে বলেছেন। আমি যখন একা থাকি, আমিও ও রকম কাজ করি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। 

.

তিন.

আমার নাম আম্যান্ডা। আমার মনে হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অন্যান্যদের জানানো উচিত, যাতে তারা সাবধান হতে পারে। আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল। মারাত্মক রকমের পর্ন-অসিক্ত। শুরু থেকেই সে আমাকে বোঝাতে শুরু করল পর্ন আসলে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। সবাই কম-বেশি এটা দেখে। সে তার বন্ধুদের কথাও বলত যে, ওরাও পর্ন দেখে। কষ্টকর হলেও আমি শুরু থেকে ওর এই আচরণের সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু দিন দিন এটা অসহ্যকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। দেড় বছর ধরে নিজের মনের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। 

আমার বয়ফ্রেন্ড তখন দিনে প্রায় ৩ বার পর্ন ভিডিও দেখত। ওর পছন্দ ছিল রেইপ পর্ন (ধর্ষণের চিত্রায়ণ) তার চিন্তাভাবনা সবকিছু জুড়েই ছিল পর্ন। এ ছাড়া শারীরিকভাবে সে আমাকে নির্যাতন করা শুরু করে। আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পর্ন ভিডিওর মতো করে নানাভাবে ধর্ষণ করত। আমার মাথায় গুলিভরা পিস্তল তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দিত। বুঝতে পারতাম, ও পর্নের কল্পনার জগৎ আর বাস্তবকে মিশিয়ে ফেলেছে। পর্দায় যা দেখত, আমার সাথে একই আচরণ করার চেষ্টা করত।

.

চার. 

আমার নাম সেলিনা। থাকি ইউ.এস.এ-তে। পর্ন ভিডিও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে ফেলে, আত্মীয়তার সম্পর্কের বাঁধন আলগা করে ফেলে, মাঝে মাঝে ছিঁড়েই ফেলে। একদিন হুট করেই আবিষ্কার করে বসলাম আমার এক আংকেল (ছোটবেলা থেকেই উনি আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন) ভয়ঙ্কর রকমের পর্ন-অসিক্ত। কয়েক বছর আগে উনার ছোট বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য আমি কিছুদিন উনার বাসায় ছিলাম। এ সময় একদিন আমি একটা দেরাজে প্রচুর পর্ন ভিডিওর সিডি পেলাম। সিডিগুলো ছিল এমন কতগুলো জঘন্য ক্যাটাগরির যা ভাবলেও ঘৃণায় আমার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে। অজাচার, ধর্ষণ, কিশোরী…

 ছি, ছি। কী জঘন্য!

নিমিষেই আংকেলের ওপর থেকে আমার সব বিশ্বাস, শ্রদ্ধা কর্পূরের মতো উবে গেল। সেই সাথে ছোটবেলায় তার সাথে কাটানো চমৎকার সময়গুলো, স্মৃতিগুলো। আমাকে এক বিরাট প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। তার সাথে কুস্তি খেল, তার কোলে বসে টিভি দেখা–এগুলো কি শুধু নিখাদ স্নেহ, ভালোবাসার প্রকাশ ছিল, নাকি অন্য কিছু…? যেহেতু সঠিক উত্তর আমার কাছে নেই তাই আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারি না। আমার মেয়ে তার আশেপাশে থাকলে আমি অস্বস্তি বোধ করি।

পর্ন-আসক্তদের বলতে চাই, “তোমরা কি খুশি হবে, যদি তোমাদের কোনো নিকটাত্মীয় দেখে ফেলে তুমি ইনসেস্ট (Incest) পর্ন দেখছো? কেমন লাগবে তোমার তখন?”