তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে…

তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে 

এক.

প্রচুর আলো-বাতাস আর বিশাল একটা আকাশকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা আমার। কলেজে ওঠার পর চলে আসতে হলো ইট, পাথর, ধোঁয়া আর যান্ত্রিকতায় ভরা ঢাকা শহরে। হোস্টেলের রুমটা প্রথম দর্শনেই অপছন্দ করে ফেললাম। ভরদুপুরেও ঘোর অমবস্যার অন্ধকার। জানালা একটা আছে বটে তবে সেটা আলো-বাতাস চলাচলের জন্য না; দুর্গন্ধ আর মশা প্রবেশের জন্য। খাঁচায় রাখা পাখির মতো ছটফট করত আমার প্রাণ। একটু পা ছড়িয়ে বসার জায়গা নেই, নেই দম ফেলার জায়গা। রাত-দিন এক করে পড়াশোনা করতে হতো কলেজের প্রেশারে। তবু বিকেলবেলা কিছুটা হলেও অবসর পাওয়া যেত। কিছু করার থাকত না তখন। বাতাসের মতো 

অবাধ ছিল আমার জীবন, মাঠে ঘাটে দৌড়ঝাঁপ করে বড় হয়েছি আমি, ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট আমাকে তেমন টানত না, সারাদিন ক্লাসের পড়ার পর গল্পের বইটই পড়তেও ইচ্ছে করত না। রুমে মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে বেড়াতাম রাস্তায়। রিকশীর গোলকধাঁধী, লোকাল বাস, ফুটপাতের ফেরিওয়ালা, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, অগণিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মানুষ, দীর্ঘশ্বাসের মতো হুইসেল দিয়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যাওয়া ট্রেন, হেমন্তের বিষণ্ণ আলো, সবকিছু ছাপিয়ে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত ছোট্ট একটা নদীর পাড়, নদীর পাড়ের অলৌকিক একটা গ্রাম। একদল কিশোর সরিষাখেতের আইল দিয়ে সারিবেঁধে হেঁটে যাচ্ছে। সরিষাখেতের ওপর হেমন্তের নতুন কুয়াশী গা এলিয়ে দিয়েছে পরম আয়েশে। কিশোরদের কারও হাতে স্ট্যাম্প, কারও হাতে বল। সারাবিকেল মাঠে বল পিটিয়েছে ওরা। এখন যে যার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। অশথ গাছের ওপর দিয়ে পূর্ণিমার বিশাল চাঁদটা উঁকি দিতে শুরু করেছে। দুরের একটা গ্রাম থেকে করুণ সুরে একটা বাছুর হাম্বা করে উঠল। মাকে ডাকছে বোধহয়। উত্তরের হিমেল বাতাসে সেই ডাক ভেসে বেড়ালে অনেকক্ষণ। নিজের শহরের ট্রেনটী প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো দেখলে ইচ্ছে করত সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে এখনই চেপে বসি ট্রেনে। ঢাকা শহরের বাচ্চাদের দেখলে খুব কষ্ট হয়। কী করুণ অবস্থা ওদের! এমন এক সিস্টেম বানিয়ে ফেলেছি আমরা, যেই সিস্টেম প্রত্যেকটা মুহূর্তে চুষে নিচ্ছে বাচ্চাদের জীবনীশক্তি। বইয়ের ভারে, কোচিং সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি আর প্রাইভেট টিউটরের উৎপাতে ওদের জীবনটা কেরোসিন। ওদের ওপর এত চাপ দিয়ে কী লাভ? ওদের প্রতি একটু রহম করুন না। ওকে কেনই-বা সব বিষয়ে ফুল মার্কস পেতে হবে? ওকে কেনই-বা পাশের বাসার ফাইয়াজ বা ফারিহার মতো হতে হবে? আমরা প্রত্যেকেই না আলাদা আলাদা মানুষ? আমাদের প্রত্যেকেরই আলাদা একটা সত্তা আছে, আছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য? কেন আমরা অন্যের কার্বন কপি হতে চাই? অন্যের জীবনের দিকে না তাকিয়ে আমরা যদি আমাদের নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করতে পারতাম, তাহলে এই পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর হতো। এত টেনশীন, এত অস্থিরতা, মানসিক অশান্তি, ইনসমনিয়া থাকত না আমাদের। প্রত্যেকেই জীবনে যেটী হতে চেয়েছিল, যেটা ভালোবাসত সেটাই হতে পারত। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে রোজ সকালে গোমড়া মুখে ব্যাংকের ডেস্কে বসতে হতো না, লুকিয়ে কবিতা লেখা ছেলেটাকে মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পড়তে হতো না বিবিএ। ঢাকা শহরের যান্ত্রিক হৃদয়হীন মানুষগুলো টাকা, ক্যারিয়ার আর খ্যাতির পেছনে। ছুটতে ছুটতে অখণ্ড অবসর পায় না বললেই চলে। তারপরেও যতটুকু অবসর পায়, ততটুকু উপভোগ করাও বিশাল এক সমস্যা। কত দরিদ্র এ ঢাকা শহর! এক চিলতে আকাশ নেই, নিশ্বাস নেবার জায়গী নেই, খেলার মাঠ নেই, বাঁশঝাড় নেই, নেই বাঁশঝাড়ের মাথার ওপরের সেই নির্ভেজাল চাঁদটাও! এভাবে মুরগির কুঠিতে, নয়টা-পাঁচটায় বাঁধা ছকে বেঁচে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে? এ জীবন তেলাপোকার জীবন! এ জীবন সরীসৃপের জীবন! তবুও এই সাদাকালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে মানুষ লাল নীল সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখে। মা ভালোবাসে তাঁর সন্তানকে, স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে কখন ঘরে ফিরবে তার ভালোবাসার মানুষটা। কী ভেবে লেখা শুরু করেছিলাম আর অপ্রাসঙ্গিক কত কী লিখে ফেললাম! অনেকের ক্ষেত্রেই হস্তমৈথুন বা পর্ন-আসক্তি তীব্র আকার ধারণ করে শুধু অবসর সময়টাকে ঠিকভাবে কাজে না লাগানোর কারণে। এ লেখাতে ইন শা আল্লাহ্ চেষ্টা করা হবে শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও কীভাবে অবসরকে আনন্দময় করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করার। সারাদিন অফিস করে বা ক্লাস করে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুলে ঝুলে ফিরে, বাসার দরজার কলিংবেল টেপার সময় বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করে। এ সময়টা, মানে অফিস বা ক্লাস থেকে ফেরার পরের এই সময়টা খুবই নাজুক। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেন্টাল স্ট্রেস বাড়লে বা কোনো কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে যৌন উত্তেজনার পরিমাণ বেড়ে যায়। যারা মাঝেমধ্যে পর্ন ভিডিও দেখে বা হস্তমৈথুন করে এ সময় শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দেয়, “যা ব্যাটা পর্ন দেখ বা হস্তমৈথুন কর, মেন্টাল স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে।” 

অনেকেই শয়তানের এই কুমন্ত্রণায় সাড়া দেয়। পর্ন-হস্তমৈথুনের ফ্যান্টাসি জগতে হারিয়ে ভুলতে চায় জীবনের সব অবসাদ অবসাদ ক্ষণিকের জন্য দুর হলেও একটু পরেই ফিরে আসে শতগুণ শক্তিশালী হয়ে। ইসলাম কী চমৎকার সমাধানই না দিয়েছে এ সমস্যার! রাসূলুল্লাহ ($E) বলেছেন, স্বামী যখন ঘরে ফিরবে তখন যেন। স্ত্রী দরজা খুলে দেয়। পরস্পর সালাম বিনিময় করে। স্ত্রী যেন স্বামীর জন্য সুন্দর করে সাজে। স্ত্রীর হাসিমুখ, মিষ্টি কণ্ঠের সালাম বা দুটো নরম কথা, সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত স্বামীকে একনিমিষেই দিতে পারে দুদণ্ড শান্তি, নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণী, চোখকে করে দিতে পারে শীতল।

 “…তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাদের কাছ থেকে শান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন…” 

{সূরা আর-রুম; ৩০:২১)

পাশ্চাত্যের প্রপাগান্ডায় ব্রেইন ওয়াশড হয়ে নারী-স্বাধীনতার নামে আমরা নারীকে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি পুরুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে। কর্মক্ষেত্রের কর্কশ, কঠোর পরিবেশ নারীর কোমলতা, স্নিগ্ধতাকে দূর করে দিচ্ছে। স্বামীর মনের শূন্যতা আর দূর করবে কী দিন শেষে বেচারি নিজেই ঘরে ফিরছে শুন্য এক মন নিয়ে। কেউই কাউকে পর্যাপ্ত সময় কাছে পাচ্ছে না, দূরত্ব বাড়ছে। একটু একটু করে। দুয়ার খুলে যাচ্ছে পরকীয়া, পর্ন-আসক্তির। অবিবাহিত ভাইরা এখন হয়তো ছলোছলো চোখে অভিযোগ শুরু করবেন, “আমাদের তো বউ নেই, আমাদের কী হবে?” ভাই, আমাদের সমাজে বিয়েকে করে ফেলা হয়েছে অনেক অনেক কঠিন। অভিযোগ-অনুযোগ না করে, বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে না ভুগে আপনাদের চেষ্টা করতে হবে বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার। বিয়ে আপনার পর্ন-আসক্তি বা হস্তমৈথুন আসক্তি একেবারে দূর করবে এটা ভাবলে ভুল করবেন। বিয়ে কিছুটা সমাধান দিতে পারবে, কিন্তু পুরোটী না। তাই, লড়াইটা শুরু করতে হবে এ মুহূর্ত থেকেই। বিয়ের জন্য বসে থাকলে চলবে না। 

ঘরে ফেরার পরে খুব দ্রুত ঢুকে পড়বেন বাথরুমে। ঠান্ডা পানি দিয়ে একটা “ঝটিকা” গোসল দিয়ে ফেলুন। স্পর্শকাতর জায়গাগুলো যত বেশি এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। বাথরুমে কাপড় সম্পূর্ণ না খুলে ফেলে কিছু কাপড় শরীরে রেখে গোসল করা উচিত। গোসল শেষে বাথরুম থেকে বের হয়ে মোবাইলে বা সাউন্ডসিস্টেমে শুনতে পারেন কুরআনের তিলাওয়াত। ইউটিউবে অনেক কারির অসাধারণ সব তিলাওয়াত পাওয়া যায়, একটু খুঁজলেই পাবেন। অথবা দেখতে পারেন এই লিংকে : http://bit.ly/2lkMIBU। মনোযোগ দিয়ে শুনলে আল্লাহর কালাম আপনাকে ইন শা আল্লাহ রক্ষা করবে শয়তানের ধোঁকা থেকে, আর সেই সঙ্গে মেন্টাল স্ট্রেস কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করবে।

“আমি নাযিল করেছি এমন কুরআন যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমতের 

{সূরা বনি ইসরাইল; ১৭:৮২)

 এ সময় গান শুনে রিল্যাক্সড হতে ইচ্ছে করবে খুব, কোনোমতেই গান শোনা যাবে, কুরআন শুনুন। একান্তই না পারলে মিউযিক ছাড়া নাশীদগুলো শুনতে পারেন। ইউটিউবে সার্চ দিলে মিউযিকবিহীন সুন্দর সুন্দর নাশীদ পাবেন প্রচুর। তবে খুব বেশি নাশীদ শোনার অভ্যাস না করাই ভালো, কারণ অনেক সময় এটা আবার মিউযিক শোনায় ফিরে যাবার গেইটওয়ে হিসাবে কাজ করতে পারে। মুভি সিরিয়াল দেখতে ইচ্ছে করলে ইসলামিক লেকচার বা ডকুমেন্টারি দেখতে পারেন। ডকুমেন্টারি হতে পারে প্রকৃতি, পশুপাখি, ইতিহাস বা কোনো ঐতিহাসিক স্থানের ওপর। kalamullah.com এ অনেক ডকুমেন্টারি পাবেন। ডকুমেন্টারি দেখার সময় চোখের হেফাযতের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে গেলে চলবে না। গাইরে মাহরাম মেয়ে আছে এ রকম কোনো কিছুই দেখা যাবে না। হালকা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন। ছোট ভাইবোন বা পিচ্চিদের সঙ্গে খুনসুটি করতে পারেন। মানসিক চাপ কমাতে এগুলো খুব সাহায্য করে। পরিবার ছেড়ে দূরে, হোস্টেলে বা হলে থাকলে এ সময় বাবা-মাকে ফোন করুন। খোঁজখবর নিন। ইমো, ভাইভার, ওয়াটস অ্যাপ এগুলোর সদ্ব্যবহার করুন। মন খুলে কথা বলুন। মেন্টাল স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। আবারও বলি, ঘরে ফেরার পরের এ সময়টা খুবই নাজুক। এক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। হাজার চেষ্টা করেও পর্ন। এবং হস্তমৈথুন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। কিছুদিন ভালো থাকেন, তারপর পর পর একটানা কয়েকদিন পর্ন দেখে হস্তমৈথুন করে ফেলেন। তারপর আবার কিছুদিন ভালো থাকেন, তারপর আবার পর্ন আর হস্তমৈথুন শুরু… এ লুপ থেকেই বের হতেই পারছিলেন না। ভাইয়াকে বলা হলো ট্রাক রাখুন কোন কোন দিন পর্ন দেখছেন, হস্তমৈথুন করছেন। দেখা গেল, তিনি সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি শুরুর আগের রাতে  (মানে শুক্রবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হলে বৃহস্পতিবার রাতে) পর্ন দেখেন, হস্তমৈথুন করেন। আসলে সারা সপ্তাহের কাজের চাপে বিধ্বস্ত মন সাপ্তাহিক ছুটির সময়টাতে একটু আনন্দ চায়, মেন্টাল স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে চায়, চায় একটু “চিল” করতে। গীন শুনে, ইউটিউবে বসে, ইনবক্সে মেয়েদের সঙ্গে কথা চালাচালি করে বা মুভি সিরিয়াল দেখে “রিল্যাক্স” করার একপর্যায়ে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পর্ন 

ওয়েবসাইটে কখন চলে যাওয়া হয় তা টেরও পাওয়া যায় না। কোনো এক সেনাবাহিনীর অনুপ্রেরণামূলক একটা ভিডিওতে দেখেছিলাম, একটু পর পর একজন ইস্পাতকঠিন গলায় জিজ্ঞাসা করছে, “আমি কে?” ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ততোধিক ইস্পাতকঠিন গলায় উত্তর দেয়া হচ্ছে, “আমি একজন গর্বিত সৈনিক!” আর্মি ট্রেনিং এ বার বার সৈন্যদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তার পরিচয়, স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় সে একজন সৈনিক, সে এমন কোনো কাজ করতে পারবে না। যাতে তার সৈনিক সত্তার অপমান হয়। পরাজয় শব্দটা তাঁর অভিধানে থাকা চলবে না, সে কখনো মাথানত করবে না, প্রাণ থাকতে একচুল পিছু হটবে না, যুদ্ধক্ষেত্রে তার উপস্থিতি হবে আক্রমণাত্মক। বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সৈনিকদের মানসিকভাবে তৈরি করা হয় যুদ্ধক্ষেত্রের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। ভাই আপনিও তো একজন সৈনিক, আপনি তো অনবরত লড়ছেন পর্ন আর হস্তমৈথুন আসক্তির বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে। ঘরে ফেরার পর আপনার নিজেকে বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে আপনি একজন সৈনিক, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের একরাশ বিপদের মাঝখানে। আপনার চারিদিকে শত্রু, শয়তান যেকোনো দিক দিয়ে আক্রমণ করে পর্নহস্তমৈথুনের বিরুদ্ধে আপনি যে প্রতিরক্ষী ব্যুহ গড়ে তুলেছেন, তা তছনছ করে দিতে পারে। বার বার নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, আপনি এখন যুদ্ধে আছেন। এতে করে আপনি ফোকাসড থাকবেন। শয়তান সহজেই আপনাকে ফাঁদে ফেলতে পারবে না ইন শা আল্লাহ্। ছুটির আগের রাতে একা একা কখনোই রুমে থাকবেন না। আশেপাশে তেমন কাউকে না পেলে আপনার ভালো কোনো বন্ধুর সঙ্গে (অবশ্যই বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে না) চ্যাট করতে থাকুন। তাকে দশ মিনিট পর পর আপডেট দিতে থাকুন। দু’আ করতে বলুন। দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে ইন শী আল্লাহ্ শয়তানকে বুড়ো আঙুল দেখানো সম্ভব হবে। 

.

দুই.

অবসর কাটানোর খুব চমৎকার এবং আমার অতি প্রিয় একটা উপায় হচ্ছে বই পড়া। কিছু অখণ্ড অবসর, এক মগ কফি আর একটি ভালো বই… আহ! জীবনে আর কী চাই! ক্লাস/কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে আরাম করে বসলেন। ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে শুরু করল। হাতে আগুন গরম চা আর প্রিয় কোনো বই। আহ! শান্তি! বইয়ের কালো কালির নিষ্প্রাণ হরফগুলোর যে কী শক্তি একবার যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম! বাঙালি ঐতিহাসিকভাবেই বই কেনার প্রতি তেমন আগ্রহী ছিল না কখনোই, কিন্তু একটা সময় ছিল বাঙালি ধীর করে হোক বা পাঠাগীরে গিয়ে হোক, টুকটাক বই পড়েছে। এখন ফেইসবুক, ইউটিউবের যুগে। বাঙালি এতটাই বইবিমুখ যে হয়েছে, যা অতীতেও আর কখনো হয়নি। পড়ার কোনো বিকল্প নেই… পড়ুন। কী বই পড়া যেতে পারে? খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জীবনের বড় একটা সময় কেটেছে জাফর ইকবালদের মতো সস্তা, কপি পেইস্ট লেখকদের ছাইপাঁশ পড়ে। এখন আফসোস করে মরি। ইশ! ছাইপাঁশ গাঁজাখুরি লেখাগুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট করলাম! বই মানুষের মনোজগৎ পরিবর্তনের খুবই শক্তিশালী একটি মাধ্যম। দু-একটা হিমু পড়লে ইচ্ছে করবে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে সারাদিন রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতে। পর্নহস্তমৈথুন নিয়ে যারা সমস্যায় আছেন তাদের অবশ্য পালনীয় একটা কাজ হলো ন্যাকা ন্যাকা প্রেম, ভালোবাসা, এক চিমটি বিজ্ঞান আর এক চিমটি গাঁজা মিশিয়ে লেখা সায়েন্স ফিকশান টাইপের বইগুলো এড়িয়ে চলা। এই বইগুলো যেমন সময় খেয়ে ফেলে। ঠিক তেমনই আপনার বুকের ভেতর এক ধরনের হাহাকার তৈরি করে। ইশ! নীরা বা তিথির মতো আমার যদি কেউ থাকত! রূপীর মতো কেউ যদি আমার জন্য অপেক্ষা করত! অবসরে,বিশেষ করে একাকিত্বে এ রকম হাজারো চিন্তা ভর করবে আপনার মাথায়। চিন্তা থেকে দুশ্চিন্তা, দুশ্চিন্তা থেকে দুঃখবিলাস, সেখান থেকে হতাশী, আর হতাশার মুহূর্তেই শয়তান এসে ধরবে কাঁক করে। তাহলে কী পড়বেন? কুরআনের পুরো অনুবাদ কয়জনের পড়ী আছে? হুমায়ুন, সুনীল, সমরেশের ঢাউস ঢাউস বই পড়ে ফেলেছি, কিন্তু আল্লাহ্ বই এখনো পড়া হয়নি আমাদের। কী লজ্জা! লজ্জা আরও বাড়ার আগে এখনই পড়া শুরু করে দিন। প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াতের জন্য কিছু সময় আলাদা করে রাখলে ভালো হয়। দশ-পনেরো মিনিট হলেও চলবে। আর তিলাওয়াত করতে পারুন বা না পারুন, আয়াতগুলোর অর্থ পড়বেন। একেবারে সূরা ফাতিহা থেকে শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ পড়ে যান। প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি লাগতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন একসময় খুবই মজা পাবেন। আল কুরআন একাডেমী, লন্ডন-এর প্রকাশিত কুরআনের বাংলা 

অনুবাদটা আমার ভালো লেগেছিল। রাসূলুল্লাহ () জীবনীও আমাদের পড়া নেই। পড়তে পারেন এটিও। আর রাহীকুল মাখতুম, সীরাতে ইবন হিশাম বা রেইনড্রপসের সীরাহ পড়া যেতে পারে। রিয়াদুস সালেহীন, হায়াতুস সাহাবা, রাসূলের চোখে দুনিয়ার মতো বইগুলোও পড়া যেতে পারে। অন্তর নরম করতে এই বইগুলো খুবই কার্যকরী। বই পড়ুন। বই কিনুন। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। যারা গাঁটের টাকা খরচ করে বই কিনতে চান না তাদের জন্য রয়েছে Kalamullah.com। ইচ্ছেমতো পিডিএফ নামিয়ে পড়ুন এখান থেকে। অবসর কাটানোর আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে ইসলামিক লেকচার শোনা। ইউটিউবে ইসলামিক লেকচার এবং শর্ট রিমাইন্ডারের অনেক চ্যানেল আছে। সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এগুলো। নিয়মিত লেকচার শোনার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার পর্নহস্তমৈথুন-আসক্তি দূর করতে সাহায্য তো করবেই, সেই সাথে আল্লাহ্ চাইলে আপনার জীবনের গতিপথই পালটে দিতে পারে। কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে লেকচার শোনার মধ্যে অন্যরকম একটা মজা আছে, 

শুনলে ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। অন্য উপকার না হোক, লেকচার শুনতে লাগলে পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বেন এটা নিশ্চিত! ছুটির দিনে অযথা ফেইসবুকিং না করে, টিভিসেটের সামনে না বসে থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হোন। কক্সবাজার, বান্দরবন বা দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে হবে, সে কথা বলিনি। বাসার পাশের রাস্তাতে দুজনে হাঁটুন, আইসক্রিম খান, ঝালমুড়ি খান, রিকশীতে করে আশপাশটা চক্কর দিন। চাঁদনি পসর রাতে একসাথে জ্যোৎস্না দেখুন, শ্রাবণসন্ধ্যায় ঘর অন্ধকার করে জানালার ধারে বসে থাকুন দুজন। এক মহাসমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে দুজন মানুষ কাছাকাছি আসে বিয়ের মাধ্যমে। সংসার নামের কুখ্যাত কারাগারে ফেঁসে সেই ভালোবাসার মহাসমুদ্র শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগে না। স্ত্রীকে সময় দিন। তাঁর রান্নার প্রশংসা করুন, প্রয়োজনে একটু-আধটু বাড়িয়ে বলুন, মরা খালেও জোয়ার আসবে ইন শ আল্লাহ্। সপ্তাহজুড়ে কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপে পিষ্ট হয়ে আপনার অন্তর শূন্য হয়ে যায়। আপনি থাকেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। শয়তান খুব বেশি কুমন্ত্রণী দেয় পর্ন ভিডিও দেখার। এ সময় আপনার দরকার আপনার স্ত্রীকে। আপনার স্ত্রীরও দরকার। আপনাকে। সারা সপ্তাহজুড়ে বেচারি আপনাকে কাছে পায় না। এই একটা বা দুটো দিন তাকে কিছুটা তো সময় দিন। নাহলে কে জানে একদিন দেখবেন কোনো সুযোগ-সন্ধানী শেয়ৗল আপনাদের দুজনের মাঝে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবে। পরকীয়া, বিবাহবিচ্ছেদ তো আর এমনি এমনিই বাড়ছে না! “বউ” নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের মা-বাবার কথা ভুলে না যাই। শুধু টাকা ইনকাম আর রান্না করার জন্য আমাদের বাবা-মা পৃথিবীতে আসেননি। তাদেরও বাইরে খেতে যেতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে ছেঁড়াদ্বীপ আর নীলগিরি দেখতে৷ তারাও মানুষ। তাদেরও সাথে নিন। সময় দিন। 

অবিবাহিতরা আবার হাউকাউ শুরু করবেন, “আমাদের তো বউ নেই, আমাদের কী হবে?” অবসর পেলেই খেলাধুলা করুন বা শারীরিক পরিশ্রম করুন। সারাদিন ফার্মের মুরগির মতো রুমে বসে বসে ফিফা, কাউন্টার স্ট্রাইক বা রেইনবো সিক্স খেলে লাভ নেই; যদি খেলতেই হয় আসল দুনিয়ার বের হয়ে আসল খেলা খেলুন–ক্রিকেট খেলুন, ফুটবল খেলুন (এটা বেশি কাজের)। ঢাকা শহরের মুরগির কুঠিতে থাকেন? খেলার মাঠ নেই? ফুটপাতে জগিং করুন, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ভাঙুন, রিকশায় চড়া কমিয়ে দিয়ে হাঁটুন, পুশ আপ দিন–দশটা করে শুরু করুন, এক দিন পর পর পুশ আপের পরিমাণ তিনটী করে বাড়াতে থাকুন–১০- ১৩-১৬ এভাবে। সুযোগ থাকলে মাঝে মাঝে পুলে গিয়ে সাঁতার কাটুন, অফিসে, ক্লাসে বা টিউশানিতে সাইকেল চালিয়ে যান। মোদ্দাকথা হলো, যত বেশি সম্ভব ঘাম ঝরান। আপনার বয়সটাই এমন যে, শরীরে এখন অনেক এনার্জি। এত্তো এনার্জি যে কিছু এনার্জি রিলিয না করলে ঠিক স্বস্তি পাওয়া যায় না, শরীরটা কেমন কেমন জানি করে। হালাল পথে এ এনার্জি রিলিয না করলে ইবলিস ব্যাটা তো আছেই আপনাকে হীরাম পথগুলো বাতলে দেয়ার জন্য। তার পাল্লায় পড়ে দেখা যাবে রিলিভ পাওয়ার জন্য আপনি হস্তমৈথুন করা শুরু করেছেন, আর হস্তমৈথুন করার আগে পর্ন ভিডিও দেখছেন–হ্যাক সেটা সফটকোর বা হার্ডকোর বা বলিউডের আইটেম সং। তাই খেলাধুলা করুন, এক্সারসাইয করুন–হালাল পথে এনার্জি রিলিয করুন। শারীরিক পরিশ্রম করলে বা খেলাধুলা করলে খুব সলিড ঘুম হবে ইন শা আল্লাহ, শরীর-মন দুটোই চাঙা থাকবে। ঘুমানোর আগে যে “উল্টা-পাল্টা চিন্তাভাবনা। মাথায় আসে সেগুলো থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ্ রাসূলের একটা সুন্নাহও কিছুটা আদায় হয়ে যাবে এক্সারসাইয করলে। মুহাম্মদ  নিজে নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। এ ছাড়া তিনি ঘোড়দৌড়, কুস্তি ও তীরনিক্ষেপ চর্চার জন্য অন্যদের উপদেশ দিতেন। রাসূল বলেছেন, 

 “দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহ্র কাছে অনেক উত্তম ও অধিক প্রিয়, তবে সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।” 

(সহিহ মুসলিম : ৬৯৪৫)

তো এক্সারসাইয, খেলাধুলা করে হয়ে উঠুন শক্তিশালী, মেদ-ভূঁড়ি কমিয়ে হয়ে উঠুন ফিট। বিয়ের বাজারে নিজের মূল্য বাড়ান আর তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিন বেয়াড়া পর্নহস্তমৈথুন-আসক্তি! 

.

তিন.

জীবন নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই আমাদের। এটা পাইনি, ওটা পাইনি। অবসরে, বিশেষ করে একাকী থাকলে এক এক করে মনে পড়ে জীবনের সব হিসেব না মেলা ঘটনাগুলোর কথা। অজান্তেই গ্রাস করে বিষণ্ণতা আর হতাশী। হৃদয়ে। রক্তক্ষরণ হয়। অনেকসময় এই অপ্রয়োজনীয় দুঃখবিলাস খুলে দেয় পর্ন-আসক্তির দুয়ার। খুব বেশি বয়স হয়নি আমার। কিন্তু এরই মধ্যে দুবার ঘুরে আসতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে। পড়তে হয়েছে সার্জনের ছুরির নিচে। সহ্য করতে হয়েছে। অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। বিছানায় শুয়ে-বসে থাকতে হয়েছে দেড়-দুই মাস। তখন বার বার। অনুভব করেছি সুস্থতা আল্লাহ্ কী বিশাল নিয়ামত। আপনি হেঁটে বেড়াতে পারেন, ইচ্ছে হলে যেখানে খুশি যেতে পারেন, চোখ দিয়ে দেখতে পান, কান দিয়ে শুনতে পান–আপনি ডুবে আছেন নিয়ামতের এক মহাসমুদ্রে। তারপরও কেন এত দুঃখবিলাস? বন্ধুবান্ধবদের (অবশ্যই সেইম জেন্ডার) নিয়ে অবসরে মাঝে মাঝে হাসপাতালে যান। জীবনকে দেখতে পাবেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কত নানা রকমের রোগী! কেউ চোখে দেখতে পায় না, কারও পা কেটে ফেলতে হয়েছে, কেউ শ্বেতশুভ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে ওপারে যাবার। স্পিরিট, ন্যাপথালিন, স্যাভলন, ওষুধের কড়া গন্ধ, নার্সদের ছোটাছুটি, বসতবাড়ির জমিটুকুও বিক্রি করে গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজনদের শূন্য চাহনি, অন্যরকম নিষ্ঠুর, নির্দয় এক জগৎ! ঘুরে আসুন হাসপাতাল থেকে। মন নরম হবে, জীবনে অল্পে তুষ্ট হওয়া শেখা যাবে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া শেখা যাবে, মৃত্যুভীতি জাগবে; পর্নহস্তমৈথুন আসক্তি কাটানোর জন্য যেটা খুবই দরকারী। রোগী দেখতে যাওয়া রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ। অনেক হাদীসে রোগী দেখতে যাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, কোনো মুসলমান যদি অন্য মুসলমান রোগীর সেবা-শুশ্রুষ বা খোঁজখবর নেয়ার জন্য সকালে যায়, তাহলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দিন তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যায় যায়, তাহলে সারা রাত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। 

বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এতিমখানা বা বৃদ্ধাশ্রম থেকে। পর্নহস্তমৈথুন-আসক্তি কাটানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে এগুলোও। মাঝেমধ্যে কবরস্থানে যাওয়া নিশ্চিতভাবেই এমন অভিজ্ঞতা যা অহংকারকে নিঃশেষ করে দেয়, অন্তরে আল্লাহভীতি জাগায়। যদি কিছুদিনের মধ্যে না গিয়ে থাকেন, তাহলে স্থায়ী বাসিন্দা হবার আগে একবার দর্শনার্থী হিসেবে ঘুরে আসুন। কবরস্থানে গিয়ে আপনার প্রিয় মানুষদের কবরের পাশে দাঁড়ান। সেই সময়গুলোর কথা স্মরণ করুন যখন তারা ছিলেন সুস্থ-সবল। অবস্থান করছিলেন জীবিতদের। মাঝে। সেই কবরবাসীদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করুন। কল্পনা করুন আপনি কবরে শায়িত, কল্পনা করুন একবার, দুনিয়ায় থাকতে পর্ন-হস্তমৈথুনে যে ক্ষণিকের মজা নিয়েছিলেন এখন তার প্রতিদান দেয়া হচ্ছে, আপনার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, আপনার পরনে জাহান্নাম থেকে আনা আগুনের পোশাক… জানাযায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন। মন নরম হবে। অন্তর আখিরাতমুখী হবে, পর্ন/হস্তমৈথুন থেকে আপনি দূরে থাকতে পারবেন। 

.

চার.

 এ দুনিয়ার জীবনে যারা সফল, যাদের যশ, খ্যাতি, অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তির কোনো অভাব নেই, আমরা অবেচেতন মনেই তাদের অনুসরণ, অনুকরণ করার চেষ্টা করি। হোক সে ক্লাসের সেরা ছাত্র বা জনপ্রিয় খেলোয়াড়, তুখোড় অভিনেতা বা শীর্ষ ধনীব্যক্তি। এরা কীভাবে অবসর কাটায়? ঘরের কোণায় বসে মুভি সিরিয়াল দেখে, ইউটিউবে পড়ে থেকে, ফেইসবুকে একটার পর একটা স্ট্যাটাস দিয়ে? 

জাগতিক জীবনে সফল ব্যক্তিরা অবসর কাটাতে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর পথে, ছুটে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কেউ সাগরে নৌকা ভাসায়, কেউ আকাশ থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়ে, কেউ পাহাড়ে চড়ে বেড়ায়, কেউ হাইকিং করে, সাঁতার কাটে, বই পড়ে, সাইক্লিং করে, পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটায়। অবসরে তারা নতুন নতুন জিনিস শেখে–কোনো নতুন ভাষা, কোনো নতুন প্রযুক্তি, রান্নী বা অন্য কিছু। নেটওয়ার্ক বিল্ড আপ করে, চ্যারিটি ফান্ডের জন্য টাকা সংগ্রহ করে, কোনো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়। অবসর সময়কে শুধু নিছক “আনন্দ” আর “মজা” করার মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রোডাক্টিভ কিছু করার চেষ্টা করুন। সাঁতার, সাইক্লিং, বাইক চালানো শিখুন, রান্না করাটা শিখে নিন। মাইক্রোসফট অফিস খুব ভালোমতো শিখুন, ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং জানা খুব জরুরি; ধীরে ধীরে শিখে ফেলুন। টুকটাক প্রোগ্রামিং করা শিখুন, সুযোগ থাকলে ইলেক্ট্রনিক্স নিয়েও অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করুন। মসজিদে স্বেচ্ছাশ্রম দিন, জনসেবামূলক কোনো প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন (নারী-পুরুষের ফ্রি মিক্সিং হবার সম্ভাবনা থাকলে কোনো দরকার নেই)। 

আল্লাহ বলেন, 

 আর সফলকাম তারাই যাদের দোযখের আগুন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। দুনিয়ার জীবনতো ছলনার বস্তু ছাড়া অন্য কিছুই নয়।” 

{সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৮৫)

তাঁরাই প্রকৃত সফল ব্যক্তি যারা এই ধুলোমলিন পৃথিবীতেই পেয়েছিলেন জান্নাতের সুসংবাদ। কেমন ছিল তাদের অবসর? কী কী করে তাঁরা কাটাতেন তাঁদের অবসর? জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের অবসর কাটত আল্লাহ যিকিরে, কুরআন তিলাওয়াতে, ইলম অনুসন্ধান আর ইলম অনুযায়ী আমল করায়। তাঁরা ঘোড়া চালাতেন, তীরন্দাজি করতেন, কুস্তি করতেন, ভারোত্তলন, হাই জাম্প, লং জাম্পের অনুশীলন করতেন। যুদ্ধবিদ্যা চর্চা করতেন। তাঁদের মূল ফোকাস ছিল আল্লাহ যমিনে আল্লাহ্ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। তাঁদের মতো হবার চেষ্টা করুন। হালের তুচ্ছ ছেলেমানুষি সেলিব্রিটি কালচার ছেড়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জেনারেশনকে, কুরআনের প্রজন্মকে আপনার রোল মডেল হিসেবে নিন। কুরআন পড়ুন, বুঝুন, দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে মনোযোগ দিন, তাওহিদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, মিল্লাতু ইব্রাহিমের মতো দ্বীনের বেইসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণী স্বচ্ছ করুন। নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী হোন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, অবসরে প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি আপনার ওপর বাড়তি চাপ পড়ে অথবা উইকএন্ড চলে যাবার পরেও পুরো সপ্তাহের অবসাদ, গ্লানি দূর না হয়, তাহলে অবসরে বা উইকএন্ডে প্রোডাক্টিভ কাজ না করে শুধু রিল্যাক্স করুন। আপনার প্রথম প্রায়োরিটি থাকবে পর্নহস্তমৈথুনের ফিতনাহ থেকে বেঁচে থাকা, প্রোডাক্টিভ কাজ করতে গিয়ে যদি দিন শেষে আবার পর্ন হস্তমৈথুনের জগতে ফিরে যান, তাহলে সেই প্রোডাক্টিভ কাজের কোনো দরকার নেই। কোনোমতেই চাপ নেয়া যাবে না। রিল্যাক্সড থাকতে হবে। ফোকাস রাখতে হবে আপনার প্রায়োরিটির ওপর। আপনি কি চান পর্নহস্তমৈথুন-আসক্তি থেকে বেঁচে থাকতে, নাকি চীন না? যদি চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু স্যাক্রিফাইস (আপাতদৃষ্টিতে) করতে হবে, আপনার কোনো মেয়ে বন্ধু থাকা যাবে না, ফ্রি মিক্সিং এড়িয়ে চলতে হবে, গান শোনা যাবে না, আইটেম সং, মুভি সিরিয়াল থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনি যদি শয়তানের এই ফাঁদগুলো থেকে দূরে না থাকেন, তাহলে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাবেন, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবেন না। পর্নহস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার মনের জৌর, আল্লাহ্ ওপর ভরসা করা আর তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। কোনো বান্দা যখন আল্লাহর দিকে এক হাত এগিয়ে যায় আল্লাহ্ তার দিকে কয়েক হাত এগিয়ে যান। আপনি ভয়ঙ্কর একটা পাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাচ্ছেন, শয়তানের তাঁবু থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন। তাহলে কেন আল্লাহ্ আপনাকে সাহায্য করবেন না? আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। নাছোড়বান্দার মতো চাইতে থাকুন। আল্লাহ্ আপনাকে এই পাপ থেকে বাঁচাবেনই। মনের সঙ্গে বোঝাঁপড়া করুন। হৃদয়ের কথা শুনুন। অন্তর থেকে চাইলে একদিন না-একদিন পর্ন/হস্তমৈথুন/চটিগল্পের আসক্তি দূর হবেই হবে।