নীললোহিতের চোখের সামনে – ২২

২২

আমি আর আমার বন্ধু চৌরঙ্গীর মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি, উত্তর কি দক্ষিণ কোনদিক যাব মনঃস্থির করতে পাচ্ছিনা—সেই সময় একজন মহিলা রাস্তা পার হয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে-যেতে তপনকে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘কী খবর তপন?’ তপন তখন পথের অন্য মহিলাদের দেখায় ব্যস্ত ছিল, তাড়াতাড়ি ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, ‘আরেঃ রেবাদি? কেমন আছেন?’

মহিলাটি বলল, ‘ভালো আছি।’

তারপর আবার তিনি বললেন, ‘খুব ভালো আছি। রিজেন্ট পার্কে একটা চমৎকার ফ্ল্যাট পেয়েছি। তোমার বউদিকে একদিন আসতে বোলো—’

তপন বলল, ‘বউদি তো এখন দিল্লিতে

আমি একটু সরে গিয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। তপন মহিলার সঙ্গে কথা বলতে লাগল। মহিলাটির বয়স তিরিশ-পঁয়ত্রিশের মধ্যে, বেশ সুন্দর স্বাস্থ্য, হাল্কা গোলাপি রঙা শাড়ি পরেছেন। সবচেয়ে নজরে পড়ে ওঁর কপালে আগেকার তামার পয়সার সাইজের সিঁদুরের টিপ। হ্যান্ডব্যাগটি বেশ বড়, তার মধ্য থেকে একটা বাচ্চাদের খেলার এরোপ্লেন উঁকি মারছে।

দু-তিন মিনিট তপনের সঙ্গে গল্প করে মহিলা একটি লেডিজ ট্রাম দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। তপন আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে কোনদিকে যাওয়া যায়?’

আমি কোন উত্তর দিলামনা।

তপন বলল, ‘তুই রেবাদিকে আগে দেখিসনি?’

-না।

–বউদির খুব বন্ধু। আগে আমাদের বাড়িতে খুব আসতেন—

—না, দেখিনি—

লাল আলোর সামনে ট্রামটা তখনও দাঁড়িয়ে। ট্রামভর্তি নানা রঙের মহিলা—সেদিকে তাকানো যায় না। ট্রাম বা বাসের জানালায় একটি-দুটি মহিলাদের দেখে অনেকসময় বহুক্ষণ সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পুরো গাড়িটাই মহিলাতে ভর্তি, লেডিজ ট্রামের দিকে দু-এক পলকের বেশি চোখ রাখতে খুবই লজ্জা লাগে।

তপনের বউদি জানালার পাশেই বসেছিলেন, ট্রাম ছাড়তে তপন আবার সেদিকে চেয়ে হাসিমুখে হাত নাড়ল। তারপর তপন আবার আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘রেবাদিকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন? উনি বললেন, ভালো আছি। বলতে পারিস, ‘ভালো’ কথাটার কতরকম মানে হয়?’ আমি ঠোঁট উল্টে বললাম, ‘কে জানে!’

-রেবাদিকে দেখে তোর কী মনে হল?

—কী আবার মনে হবে? আমি তো ভালো করে দেখিইনি!

—যা দেখেছিস তাই যথেষ্ট। ঐটুকু দেখে রেবাদি সম্পর্কে তোর কী ধারণা হল বল্ তো! দেখি, তোর অবজারভেশনের ক্ষমতা কী রকম! রেবাদি দুবার বলেছেন, ‘ভালো আছি’, সেটা খেয়াল রাখিস!

—ভদ্রমহিলা চাকরি করেন, সম্প্রতি বোধহয় প্রমোশন হয়েছে, তাই অত খুশি-খুশি মুখ। কটি সন্তান তা বলতে পারবনা, তবে একটি ছেলে আছেই—মেয়ে থাকলে এরোপ্লেন না-কিনে পুতুল কিনতেন, উচ্চারণ শুনে মনে হল ভদ্রমহিলা বি-এ. পাস, খুব সম্ভবত সংস্কৃত কিংবা ফিলসফিতে অনার্স ছিল। ভদ্রমহিলার স্বামী ইঞ্জিনীয়ার–না, না, সরকারি কর্মচারী, একটু কুঁড়ে—তবে খুব পত্নীঅনুগত, ভদ্রমহিলার শাশুড়িও একসঙ্গে থাকেন—শাশুড়ি-বউ-এর মধ্যে ঝগড়ার বদলে কে কতটা ভালো ব্যবহার করতে পারে—তার প্রতিযোগিতা চলে, ভদ্রমহিলার শখ বেড়াল পোষার—কিন্তু স্বামীর ইচ্ছে কুকুর, ইনস্টলমেন্টে রেফ্রিজারেটার কিনবেন প্রায় ঠিক করে ফেলেছেন—তপন হো-হো করে হেসে উঠে বলল, ‘তুই আজকাল শখের গোয়েন্দাগিরি করছিস নাকি?’

আমি ঈষৎ গর্বের সুরে বললাম, ‘কী, সব মেলেনি? অন্তত সেভেন্টি ফাইভ পারসেণ্ট?’

–তুই কী করে জানলি?

-মানুষ দেখে স্টাডি করার অভ্যেস করতে হয়!

তপন পুনশ্চ হাসতে-হাসতে বলল, ‘খুব মানুষ চিনেছিস! একটাও মেলেনি! ঐ যে রেবাদি পর-পর দুবার ‘ভালো আছি’ বললেন, সেটা লক্ষ্যই করিসনি। কেউ যখন প্রশ্নের উত্তরে শুধু একবার বলে ‘ভালো আছি’ তাহলে হয়তো সে সত্যি ভালো নাও থাকতে পারে—সবাই তো আর দুঃখের গল্প সবসময় শোনাতে চায়না। কিন্তু দুবার ভালো আছি বললে বুঝবি পিছনে অনেককিছুই আছে, সুখ-দুঃখের একটা জটিল ইতিহাস, তার মধ্যে কোন্টা বেশি কোটা কম—সে-বিষয়ে মনঃস্থির করা যায়না। মানুষ কতরকমে ভালো থাকে জানিস? তোরা সবসময়ে মানুষবে ছকে ফেলতে চাস। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। রেবাদির জীবনের গল্প শুনলে স্তম্ভিত হয়ে যাবি! শুনবি?’

রেস্টুরেন্টে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, ‘রেবাদি আমার বউদির সঙ্গে বরাবর স্কুল-কলেজে একসঙ্গে পড়েছেন, আমাদের বাড়িতে খুব আসতেন। বউদি চেষ্টা করেছিলেন, রেবাদির সঙ্গে চানুদার বিয়ের ব্যবস্থা করতে। (চানুদাকে চিনিস তো? দাদার বন্ধু দুর্গাপুরে…।) চানুদার পছন্দও হয়েছিল রেবাদিকে, কিন্তু সেই সময় রেবাদি হঠাৎ একটা প্রেম করে ফেললেন। রেবাদি নিউ সেক্রেটারিয়েটে চাকরি করেন—একদিন বৃষ্টির দিনে এক ভদ্রলোক ওঁকে ট্যাক্সি করে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইলেন, সেই থেকে আলাপ আর প্রেম, দুমাসের মধ্যে ভদ্রলোকের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়ে গেল। রেবাদির স্বামীকে দেখতে খুব সুপুরুষ, চানুদার চেয়ে অনেক ভালো ঠিকই, কিন্তু বৌদি দুঃখিত হলেন। চানুদা কত বড় চাকরি করেন, আর কী ভালো মানুষ—তার তুলনায় প্রায় একটা অচেনা-অজানা লোককে বিয়ে করা—কিন্তু প্রেম ইজ প্রেম–কে আর কী বলবে। বিয়ের পর রেবাদি আমাদের বাড়িতে আসা কমিয়ে দিলেন। একদিন আমার সঙ্গে ডালহৌসিতে দেখা —রেবাদির একগাদা গয়না গায়—দামি শাড়ি, সেদিনও আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, রেবাদি কেমন আছেন? রেবাদি হাসি-হাসি মুখে বলেছিলেন, ভালো আছি ভাই (একবারই ‘ভালো আছি’ বলেছিলেন সেদিন, দুবার নয়), তোমার বউদিকে বোলো যাব একদিন—একদম সময়ই পাচ্ছিনা—

বউদি বলতেন, রেবা একেবারে বিয়ে করে গদগদ—ওর স্বামী নাকি ওকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারেনা।— সবসময় মাথায় করে রেখেছে—রেবা বাপের বাড়ি যাবার সময় পায়না।

তপন সিগারেট ধরিয়ে বলল, ‘এরপর পর-পর চমকাবার জন্য তৈরি থাক। রেবাদির জীবনে সত্যি ঘটনাগুলোই এমন অবিশ্বাস্য যে একটুও বানাতে হয়না। …কিছুদিন পর রেবাদিকে দেখলাম, আবার আমাদের বাড়িতে আসছেন, বউদির সঙ্গে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কথা বলছেন, খুব মুখ শুকনো। বউদি তখন আমাদের কিছু বলেননি, তারপর কোর্টে মামলা ওঠার পর জানতে পারলাম’—

—কোর্টে?

—হ্যাঁ। ঘটনাটা এই, রেবাদির বিয়ের আট-ন’মাস পর একদিন একজন অপরিচিত মহিলা ওঁকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন যে, তিনি অনেক কষ্টে রেবাদির অফিসের ঠিকানা জোগাড় করেছেন, রেবাদির সঙ্গে তাঁর দেখা করার বিশেষ দরকার—রেবাদিরই উপকারের জন্য। দেখা করে ভদ্রমহিলা বললেন, তিনি রেবাদির স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী। রেবাদির স্বামী একজন অত্যন্ত লম্পট এবং বদমাইশ লোক। রেবাদির সাবধান হওয়া উচিত। রেবাদি বিশ্বাস করলেননা। তিনি জোর দিয়ে বললেন, না, তাঁর স্বামী খুব ভালো লোক, তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন—ভদ্রমহিলার কথার প্রমাণ কী?—ভদ্রমহিলা কী চান?

ভদ্রমহিলা বললেন, তিনি কিছুই চাননা। কিন্তু রেবাদির স্বামী ভালো ব্যবহাব করেন—এটা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। লোকটি কি সত্যই তাহলে বদলে গেছে?

লোকটি কি দাড়ি কামাবার আগে খুর ধার দেবার জন্য স্ত্রীর পিঠে খুর ঘষে রসিকতা করেনা? লোকটি কি সারারাত বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বাড়িতে মদ খেয়ে হল্লা করার জন্য স্ত্রীকে রান্না ঘরে শুতে বাধ্য করেনা? লোকটি কি স্ত্রীর টাকা নিয়ে মাঝে-মাঝেই চার-পাঁচদিনের জন্য বাড়ি থেকে অনুপস্থিত থাকেনা? লোকটি কি চাবুক দিয়ে কোনদিন…

ভদ্রমহিলা রেবাদির হাত চেপে ধরে বললেন, আপনি বলুন সে ভালো হয়ে গেছে, তাহলেই আমি খুশি হব। আমি তবে কিছু চাইনা, আমার কোন স্বার্থ নেই। ওর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্কই নেই—একবছর আগে ওর সঙ্গে আমার সেপারেশন হয়ে গেছে।

রেবাদি তখন আর কী করবেন? ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে মেঝেতে শুয়ে পড়লেন। তারপর অজ্ঞান হয়ে গেলেন। প্রত্যেকটি কথাই সত্যি। বিয়ের একমাস পর থেকেই লোকটি ওর থেকেও আরও ঢের বেশি অত্যাচার করেছে। রেবাদি একথা কারুকে বলতে পারেননা।—কারণ তিনি নিজেই জোর করে বিয়ে করেছেন—সেইজন্য তিনি বাইরে হাসিখুশি থাকতেন। সবার সামনে নিজেকে সুখী দেখাতে চাইতেন।

তপনের গল্প শুনতে-শুনতে আমার মনে পড়ল, ভদ্রমহিলার মুখ। বেশ উৎফুল্ল মুখে তিনি বলেছিলেন, ‘ভালো আছি’। সেটা সবটাই অভিনয়? তাহলে তো তিনি কাননবালা কিংবা ইনগ্রিড বার্গমানের চেয়েও বড় অভিনেত্রী। না, সবটাই অভিনয় হতে পারেনা! কিন্তু দুবার বলেছিলেন—সে বোধহয় অন্যরকম ভালো থাকা। তপনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘রেবাদি তখন কোর্টে মামলা করলেন?’

তপন বলল, ‘শোন্-না! জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকরা নভেলে যত স্টান্ট দেন— অনেক সত্যি ঘটনায় তার চেয়ে অনেক বেশি চমক থাকে। অদ্ভুত ধরনের সামাজিক গণ্ডগোল শুধু বিলেত-আমেরিকাতেই হয়না-কলকাতাতেও অহরহ ঘটছে। রেবাদি, কোর্টে কেস করতে বাধ্য—কারণ লিগাল সেপারেশনের পর দুবছরের মধ্যে বিয়ে করা এদেশে বেআইনি। লোকটা তাই করেছে। কোর্টেও জজ রায় দিলেন, বিয়েটা সম্পূর্ণ অসিদ্ধ। আইনত, লোকটির সঙ্গে রেবাদির যে-বিয়ে হয়েছে—সেটা মানা হবেনা। কিন্তু—’

তপন আমার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘কিন্তু রেবাদি তখন পাঁচ মাসের প্রেগনেন্ট। সেই অজাত শিশুটির জন্য আদালত থেকে কোন নির্দেশই দেওয়া হলনা। তাহলে সেই সন্তানটির পিতৃ-পরিচয় কী হবে? এই অবস্থায় যা স্বাভাবিক সবাই সেই পরামর্শটি দিয়েছিল রেবাদিকে, কিন্তু রেবাদি তা কিছুতেই মানতে চাইলেননা। তোর একটা অনুমান ঠিক, রেবাদির মেয়ে হয়নি ছেলেই হয়েছে, রেবাদির ছেলের বয়স এখন চারবছর—ভারি সুন্দর ছেলেটা। কিন্তু এরপর তোকে যা বলব, শুনলে তোর সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হবে, ভাববি হয়তো রূপকথা কিংবা আরব্যোপন্যাস—কিন্তু এর প্রতিটি বর্ণ সত্যি। আমি নিজে সাক্ষী আছি, আমি রেবাদির ছেলের অন্নপ্রাশনে নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলাম। বিরাট ধুমধাম করে অন্নপ্রাশন হয়েছিল—

রেবাদির স্বামীর সেই প্রথম পক্ষের স্ত্রী, তাঁর নাম অনসূয়া, তিনি কিন্তু ঐ লোকটিকে প্রেম করে বিয়ে করেননি। তাঁর বাবা দেখেশুনেই—অমন চমৎকার চেহারার ছেলে, তখন ইনকামট্যাক্স অফিসে ভালো চাকরিও করত—ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকরি গেছে—বেশ জাঁকজমক করে বিয়ে দিয়েছিলেন। অতিকষ্টে পাঁচবছর অনসূয়াদি থাকতে পেরেছিলেন স্বামীর সঙ্গে—তারপর তাঁর মন ও শরীর দুই-ই ভেঙে পড়ে। রেবাদির ছেলে হবার পর তিনি হঠাৎ এসে একদিন বললেন, ‘তোমার ছেলেকে আমায় দিয়ে দাও, আমি ওকে নিয়েই থাকব। তোমার তো বয়েস কম—তোমার হয়তো আবার কারুর সঙ্গে ভাবটাব হতে পারে—কিন্তু আমার জীবনে আর কিছুই নেই, আমি ঐ ছেলেটাকে নিয়ে তবু বাঁচতে পারি।’ রেবাদি ছেলেকে একেবারে দিয়ে দিতে কিছুতেই রাজি নন। অনেক লজ্জা-অপমান সত্ত্বেও তিনি ঐ ছেলেকে পৃথিবীতে এনেছেন। সুতরাং একটা অন্য ব্যবস্থা হল। অনসূয়াদি বেশ বড়লোকের মেয়ে, কিন্তু তিনি বাড়ি ছেড়ে রেবাদির সঙ্গে একসঙ্গে থাকেন এখন—ছেলেকে সবসময় দেখতে পাবার জন্য। আমি ওঁদের বাড়িতে গিয়েছিলাম —অনসূয়াদি আর রেবাদি অবিকল দুবোন কিংবা দুই সখীর মতো চমৎকার মিলেমিশে আছেন—খুব ভাব ওঁদের, কখনো মতের অমিল হয়না—অনসূয়াদি তাঁর বাড়ি থেকে মাসে আড়াইশো টাকা পান—রেবাদি চাকরি করেন—সুতরাং বেশ সচ্ছল সংসার ওঁদের—ছেলেটির যদিও পিতৃপরিচয় নেই—কিন্তু তাকে ওঁরা রাজপুত্রের মতন যত্নে রেখেছেন। রেবাদি সধবা সেজে থাকেন—লোকে জানে ওঁর স্বামী বিদেশে আছে। এখন ওঁরা যেভাবে আছেন—তাকেও সব মিলিয়ে বেশ ভালো থাকাই বলে—তবে দুবার ‘ভালো আছি’ বলার মতন ভালো থাকা, তাই না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *