নিতু বলছি – ৩

জন্মদিনের সন্ধ্যাটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্ধ্যা।

সকাল থেকেই রাফিয়া আছে বাসায়। আজ আমাদের প্রাইভেট ও স্কুল কোনোটাই নেই। সুতরাং পুরোটা সময় শুধু ওয়েব আর সোশ্যাল মিডিয়া।

রাফিয়া আমার জন্মদিনে পোস্ট করা ফেইসবুকের একটা একটা করে উইশিংস্ পড়ে, আর তার নিচে পচা পচা কমেন্টস লেখে। লিখেই হাসিতে কুটি-কুটি। এবং আমি নিজেও হেলে পড়ি ওর গায়ে। তারপর সুন্দর করে ডিলেট করে, আবারও লেখে, থ্যাংকস্।

এর মধ্যে এক নতুন লেখক লিখেছেন, ভালো বই ও ভালো বন্ধু, সাথী হোক নতুন দিনের, শুভ জন্মদিন, আমার প্রাণপ্রিয় ভক্ত।

রাফিয়া লিখল, আহারে বেচারা, তোমার ফ্যান শর্ট পড়ছে! কেউ-ই বই কিনে না! তুমি কি জান, তোমার এ প্রাণপ্রিয় ভক্তও কেবলমাত্র ফেইসবুকেই তোমার ফ্রি লেখায় চোখ বুলায়। আর বইয়ের কভার দেখে লাইক দেয়। পড়ে না।

লিখেই আমার দিকে তাকাল, কী বল, এন্টার দেব, না-কি ডিলেট?

আমি বললাম, লিখ, থ্যাংক ইউ স্যার।

প্যাটনা আসিফের উইশিং-এর ঘরে এসে রাফিয়া একটু থেমে গেল। কিছু লিখল না।

আমি দুই ভাই ছবির উত্তমকুমারের মতো বললাম, কি রে, থামলি কেন! বাজা!

রাফিয়া একটু দৃঢ় কণ্ঠে বলল, বাজনা তো আজ রাত থেকেই শুরু হবে। গানের কথাটা মনে নেই; ওই গুন গুন সুরে মন হাসে না, তারে বলে দিও।

.

আমার অবাক হবার আরও অনেক কিছুই বাকি ছিল দিনের বাদবাকি অংশে।

বিকেল থেকে বান্ধবী আর আত্মীয় দিয়ে বাসা প্রায় ভরা ভরা অবস্থা। বাবা এত লোককে কেন দাওয়াত করেছেন, বিষয়টা বুঝতে না-পারলেও আমার জন্য অনেক আনন্দের ছিল পুরোটা।

আমার সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল, যখন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সরাসরি স্বশরীরে এসে হাজির হলেন আমাদের সাক্ষাৎ-দেবতা, স্বয়ং রেজা স্যার। তা-ও শুধু একা নয়। স্কুলের প্রায় দশ-পনেরজন স্যার-মিস্ সবাইকে সহ।

স্যার সোজা আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি দৌড়ে পা-ছুঁয়ে সালাম করতেই মাথায় হাত রাখলেন। এরপর খুব ধীরে ধীরে আবৃত্তির স্বরে বলতে লাগলেন…

‘সে-ই সত্য, যা রচিবে তুমি
ঘটে যা, তা সব সত্য নহে।
কবি তব মনোভূমি
রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’

আমি যেন মন্ত্রপড়া রাজকন্যার মতো পাথরের মূর্তি হয়ে গেলাম। আমার ধারণা, আমি কেন, বিশ্বের যে কোনো পঞ্চদশী নারীই নিজেকে পঞ্চমনী ওজনের প্রস্তরখণ্ড মনে করবে এরপর।

যথারীতি মা’র হাত থেকে ট্রে ফেলে দেয়া। রান্নাঘরে গোটা দশেক হাফপ্লেট ভাঙা। দরজায় বাড়ি খেয়ে কপাল ফোলানো। এবং আপেল কাটতে আঙুল কেটে রক্তারক্তি করা। বাংলা ছায়াছবির নায়িকাদের প্রতিটি গুণাবলিই একে একে প্রদর্শন করতে লাগলাম আমি।

এত সবকিছুর বাইরে, একটা দৃশ্যে গিয়ে নিজের এই ‘হিরোইন- হিরোইন’ ভাবটা ধরে রাখতে পারলাম না আর। হিন্দি ক্রিশ-থ্রি ছবির কঙ্কনা’র মতো মিউট্যান্ট-ভিলেইন চরিত্রে অভিনয় শুরু করলাম।

দৃশ্যটি হল, রেজা স্যারের সাথে কালাপেত্নীর ঢলাঢলি। একই সোফায় পাশাপাশি বসেছেন তারা। পারলে গায়ে গা লেগে যায় অবস্থা! পেত্নী একটু পর পর ডানে-বামে নড়ছে আর শাড়ির আঁচল ফেলে দিচ্ছে।

আমার ইচ্ছে হচ্ছিল, একবার গিয়ে আঁচলটা খুলে পিসু’র হাতে ধরিয়ে দেই। বলি, এবার শান্তি! সব দেখাতে পারছিস্, যা পেত্নী, গান গা…. ছোড় দো আঁচাল, জামানা কেয়া কাঁহেগা।

.

রাফিয়া সম্ভবত আমার মনের কথা ধরতে পারছিল। তাই চোখের ইশারায় পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল।

চল্ নিতু। পেত্নীকে একটা আহাদ সিরিয়ালের ঝাঁটার বাড়ি দেই?

আমি ভারি গলায় বললাম।

গুড আইডিয়া। তবে ক্যামেরা কিন্তু অন রাখতে ভুলবি-না এবার। প্রিস্ট-এর এক্সরসিজম শুরু হবে– ইন দ্যা নেইম অফ গড, জেসাস ক্রাইস্ট কমপেল্‌স ইউ। চল্‌, ক্রুশটা নিয়ে আসি।

রাফিয়া হাসল।

আমি ব্লেড হাতে নিলাম।

পুরো বাড়ি যখন অনুষ্ঠানের আনন্দে আত্মহারা, আমি আর রাফিয়া ঠিক তখনি অতি সন্তর্পণে এগিয়ে গেলাম সোফার পেছনে। রাফিয়া ধরল আঁচল। আর আমি ব্লাউজের পেছনের শাড়ি বরাবর, সোফার সাথে বসিয়ে দিলাম ব্লেড। পিস’র অতি রসময় গল্পের এক পর্যায়ে, পেত্নী ভড়ং-মার্কা আঁচল টানতেই ক্লিচ করে শব্দ হল পেছনে। এবং যথারীতি ব্লেড পড়ে গেল মেঝেতে। ব্যস! কম্ম কাবাড়। ঘটে গেল, যা ঘটার।

আমি আর রাফিয়া একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে, দুই হাতে ভি-সিম্বল দেখিয়ে, মনে মনে বললাম, ইয়েস্!

অনুষ্ঠান শেষে যাবার পালা।

সোফা থেকে দাঁড়িয়েই পেত্নী, নিউ টিন-এইজার ঢংগীদের মতো আদুরে গলায় বলে উঠল চিৎকার করে।

ওহ্ শিট্! শাড়িটা এভাবে ছিঁড়ল কখন? আমার এখন কী হবে?

আমাদের দেবতা পিসু ঢং-এর সাথে রং যোগ করতে, হাত বাড়ালো আঁচল বরাবর।

আরে আরে, এভাবে কাটলে কোথায়!

আমার মনে হল, ব্লেডটা আরেকবার মেঝে থেকে উঠিয়ে, এ-দফায় ঠিক বসিয়ে দেই পিসু’র হাত বরাবর।

আমি ইশারা দিতেই, রাফিয়া শুরু করল তার কাজ।

ক্লিক্, ক্লিক্। ক্লিক্–ক্লিক্–ক্লিক্।

.

সবাই চলে গেলে, আমাদের পরিকল্পনার সর্বশেষ পর্ব বাস্তবায়ন শুরু হল।

রাফিয়া বাবা-মা’কে আদুরে আবদার করল। শুধু আজকের জন্য। শুধু আজকের রাতটা আমাকে নিয়ে যাবে ওদের বাসায়।

রাফিয়াদের বাসা বারিধারায়। বসুন্ধরা আবাসিক। লেকের পার্শ্বে। কর্নার প্লট। বাড়িটাতে নতুন উঠেছে ওরা। আগে ধানমন্ডির ফ্ল্যাটেই থাকত। এলাকাটা দিন দিন ক্রাউডেড হয়ে উঠছে বলে, ওর বাবা আলাদা বাড়ি বানিয়ে শিফ্‌ট হয়ে গেছে।

বাসার ছাদটা মাঠের মতোই বড়। বিশাল। একপাশে সবুজ বাগান। গোলাপ, টগর, বেলি, চামেলি থেকে শুরু করে আম-জাম-জলপাই-লিচুর গাছ পর্যন্ত আছে সেখানে। মাঝখানে প্লাস্টিক শিটের শেড। বসার ব্যবস্থা। আর অন্য দিকটায় কালো গ্লাসওয়ালা বড়বড় দু’টো ঘর। অনেকটা রেস্টরুম টাইপের। আলাদা ব্যালকনি। আলাদা বাথরুম। এমনকি ছোট্ট একটা কিচেন সিস্টেমও আছে সেখানে।

হ্যাঁ। ইট্ ইজ আওয়ার টারগেট। ওইটাই সেই জায়গা। ওটাকেই আমাদের রেকর্ডিং স্টুডিও বানানোর প্ল্যান। যেহেতু ওর বাবাকে বলা আছে অ্যানিমেল রিলেটেড ফিল্ম, তাই বাগানের ভেতরে পাখির একটা আলাদা শেড বানানোর পরিকল্পনা অলরেডি আমাদের প্রস্তুত।

রাফিয়ার বাবার অবশ্য পাখির শখ তীব্র। এটাকেই প্লাস পয়েন্ট হিসেবে নিয়েছে। কিছু একটা হলেই বলে বসে, আমি তোমার মেয়ে না! তাই পাখি নিয়েই কাজ করব। তবে বিদেশি না, দেশি। লোকাল বার্ডস। চড়ু ই, শালিক, কাউয়া এইসব।

আমাদের ফল্স প্ল্যানিং-এর অংশ হিসেবে এইসব পাখি, পাখির বাসা, ডিম, বাচ্চা আগে থেকেই জোগাড় করা আছে। শুধু কাঁটাবনে কল করলেই দিয়ে যাবে।

আমার অবশ্য ওদের বাসায় যাওয়া হয়েছে মাত্র দুইবার। তা-ও বাবাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করে। কারণ মা’কে বললে সরাসরি অ্যাক্সেস ডিনাইড। কারণ, কন্যাসন্তানদের বড়লোক বান্ধবীকে এদেশের সব মায়েরাই সতীনতুল্য চোখে দেখেন।

তবে আজকের প্রতিটি বিষয় কেন যেন আসলেই ভিন্ন। আমার স্বপক্ষে। হঠাৎই কেন যেন মেয়ের জন্মদিনে, আমার মায়ের রোমান্টিকতা উথলে উঠল অতিমাত্রায়। বাবার দিকে লাজুক হাসি দিয়ে, একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন মা। সম্ভবত প্রথম সন্তান জন্মদানের কাহিনি মনে পড়ে গেছে আজ তাদের।

.

রাফিয়াদের বাসাটা অনেক বড় হলেও এক ধরণের সামাজিক এককাশ্ৰম।

যার যার মতো বসবাস। মা নিচতলায়। সাংসারিক হেড কোয়ার্টারে। ড্রাইভার-দারোয়ান, বাবুর্চি-বুয়া, শ্রমিক-কর্মী দ্বারা সর্বক্ষণ পরিবেষ্টিত। বাবা দোতলায়। দ্বিতীয় ব্যবসায়িক দপ্তরে। একটু পর পর মোবাইল, মেইল, সেক্রেটারি আসছে-যাচ্ছে। আর রাফিয়ারা দুই বোন যথারীতি তিন ও চারতলায়। শিক্ষক-পড়ালেখা, আড্ডা-বিনোদন, ভৃত্য-বন্ধু, যখন যা প্রয়োজন। পেয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়, বিনা দ্বিধায়। পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায়

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্যাটা আসিফ রাত দশটায় আসার কথা।

কিন্তু অনিবার্য কারণে দেরি হবে বলে টেক্সট করেছে সে। সম্ভবত রানিং গার্লফ্রেন্ড আজ একটু বেশিই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে ওর। সময়টা তাই সেখানেই ব্যবহৃত হচ্ছে অধিক

সময় অপচয় করার মানসিকতায় আমরাও অবশ্য নেই এখন। বাসায় পৌঁছেই শুরু করে দিয়েছি অবশিষ্ট কাজগুলো। কাটিং, পেস্টিং, এডিটিং। এবং যথারীতি ফেইক আইডি থেকে ছবি মেসেজিং।

পিসু’র নাম ও প্রোফাইল দিয়ে আগেই কয়েকটা অ্যাকাউন্ট খোলা আছে আমাদের। সেখানকার একটা থেকে কালাপেত্নীর মেসেঞ্জারে রাফিয়া লিখল।

জানো হানি, আজ তোমাকে সেই রকম সেক্সি লাগছিল। একদম হট টমেটো! হট বটে!

আমি অবাক হলাম।

ববেট-টা কী?

রাফিয়া হাসল।

গারো স্ল্যাং। বুঝবি-না।

মেসেজ রিড হওয়ার সাথে সাথেই, ওই আইডি ব্লক মেরে দিল কালাপেত্নী।

রাফিয়া ঠাস্ ঠাস্ করে পেত্নীর তিনটা ব্যাকভিউ ছবি পাঠাল ভাইবার অ্যাকাউন্টে।

আমি মুখ চিপে হাসলাম।

ছি! এত বাজে স্ল্যাং!

কালাপেত্নী ভাইবার লগ-আউট করল।

রাফিয়া অতিদ্রুত একটা নগ্ন ছবিতে পিসু আর পেত্নীর মুখ জোড়া লাগিয়ে সেন্ড করল পেত্নীর ইমো নাম্বারে। ছবির নিচে ছোট্ট ট্রল দিল, ‘বলো তো, তুমি আমাকে কী বলছ?’

আমি হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়লাম।

উহ্ রাফিয়া! এনাফ। বেচারিকে ছেড়ে দে।

কথা শেষ হবার আগেই পেত্নী মোবাইল বন্ধ করে অফলাইন ও ইনভিজিবল হয়ে গেল।

রাফিয়া হি হি করে হেসে উঠল।

আহারে! বেচারির রাতের ঘুম হারাম! স্বপ্নে এখন পিস পিস করে হিসু করে দেবে।

আমি ওর মুখ চিপে ধরলাম।

বাজে কথা বন্ধ।

রাফিয়া ট্যাবটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।

ওকে স্টপ। ইট্স ইয়োর টাইম নাউ

আমি পিসু’র ফেইসবুক প্রোফাইলে ঢুকলাম। চ্যাটিং অনলাইন।

দেরি না-করে শাকচুন্নি আর কালাপেত্নীর মুখ লাগানো দু’টো ন্যুড ছবি পাঠালাম।

সাথে সাথে ভিউ হল। এবং রিপ্লাইও এল পরপর।

অন্যের কেন, নিজের ছবি পাঠাও! হোপ ফুল্‌লি ইট উইল বি মোর ইরোটিক।

আমার কান-মাথা গরম হয়ে গেল। আমি প্রচণ্ড রেগে-মেগে লিখলাম।

ও, তোমার তো আবার ‘হোলা– হোলা’ পছন্দ, তাই না বাবু? দাঁড়াও কাল আসছি। সামনা-সামনি দেখিও। সব খুলে দেব।

রাফিয়া ভ্রু কুঁচকালো।

থামু, থাম্। হোলা– হোলা কোন ল্যাংগুয়েজ!

আমার পুরো মুখটা ভারি হয়ে আসল।

বুঝবি না, রংপুর অঞ্চলের কলোকোয়েল গালি।

বলেই এন্টার টিপে সেন্ড করলাম মেসেজ। এবং পরক্ষণেই হোমবারে গিয়ে লগ-আউট করলাম। কারণ আমি জানি, পিসু দমবার পাত্র নয়। উত্তর দিতেই থাকবে। আমার কান্না না-আসা পর্যন্ত।

রাফিয়া এ দফায়ও চিৎকার করে হেসে উঠল।

ও ইয়েস্। ইউরেকা। তুই তো এতক্ষণ ‘টু-কেজি মিসে’র আইডি দিয়ে ঢুকেছিলি। বান্দর!

আমার রাগ পড়ে গেল। আমিও হেসে ফেললাম ওকে জড়িয়ে ধরে।

.

প্যাট্‌না আসিফ আসতে আসতে রাত প্রায় সাড়ে দশটা।

রাফিয়া সরাসরি ছাদে নিয়ে গেল ওকে। আমাদের রেকর্ডিং স্টুডিওতে। রোমান্টিক ভঙ্গিতে বেশ খানিকক্ষণ গল্প চলল ওদের। যাবার আগে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ‘হাগ’ করল ঠিক ইংরেজি ছবির উত্তেজিত দৃশ্যের মতো। এমনকি আমাকে অবাক করে দিয়ে, দীর্ঘসময় ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে ইমরান হাশমি স্টাইলে লিপ্‌-কিসে ব্যস্ত থাকল দু’জন।

রাফিয়ার অভিনয় প্রতিভায় আমি শুধু মুগ্ধ নয়, রীতিমতো বিস্মিত এবং স্তব্ধও হয়ে থাকলাম অনেকটা সময়। তবে পুরো দৃশ্য আমি দেখলাম মনিটরে, পাশের ঘর থেকে। কারণ, এই অংশে আমি হিডেন ক্যামেরাম্যান। এবং প্রডিউসার-ডিরেক্টর।

তাছাড়া আসিফের এই কুরুচিকর দৃশ্য আমার দেখা আছে বহু আগেই। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

.

পুরো জন্মবার্ষিকীর শেষ চমকটা ছিল আমার গভীর রাতে।

আমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

হঠাৎ করেই ফুঁস্ ফুঁস্ আওয়াজ আর নাক ঝাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কারণ, শব্দটা আমার চেনা। পরিচিত। খুব পরিচিত একটা আওয়াজ। গভীর রাতে একাকী মানুষের আর্তনাদ!

আমি আশ্চর্য হয়ে, বালিশে মুখ গুঁজে কাঁপতে থাকা রাফিয়ার দিকে তাকালাম।

রাফিয়া তুই ও!

নিতু, তোরা আমার সম্পর্কে কেউ কিছুই জানিস না। কিছুই না।

বিশ্বাস রাখলে বলতে পারিস্। আই প্রমিজ, স্টোরি উইল বি হিডেন।

বলার কিছু নেই-রে নিতু! নতুন কিছুই না। এটা তোর-আমার সবার গল্প। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমার এক মামা থাকতেন বাসায়। প্রায় আপন। একদিন বাসায় কেউ নেই।

রাফিয়া কাঁদতে লাগল। হাউমাউ করে। বাচ্চা মানুষের মতো। আমাকে জড়িয়ে ধরে।

আমার চোখের চেয়ে, শরীর ভিজে আসতে লাগল থর থর উত্তেজনায়। আমি বললাম।

থাক্ রাফিয়া। বলতে হবে না। অ্যান্ড আই রিয়ালাইজ।

রাফিয়া কাঁদতেই থাকল।

জানিস নিতু, আমি তিনদিন তিনরাত ব্যথায় স্কুলে যেতে পারিনি। বিছানা থেকে নড়তে পারিনি। কিন্তু সে ঘটনা আমি কাউকে বলিনি। কাউকে না। এখনও সে মামা আসে। মামীসহ বেড়িয়ে যায়…

আমি দু’কানে আঙুল দিয়ে চিৎকার করে উঠলাম।

স্টপ রাফিয়া। স্টপ। প্লিজ স্টপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *