দ্য ম্যান হু লাফস – ৮

চুপ করে বসে নেই আঁদ্রে, ইংল্যান্ডে ফিরে এসে কলকাঠি যা নাড়ার সবই নাড়ছে।

দুদিন পর ইংল্যান্ডে ফিরে রাসেল উপলব্ধি করলেন, পেমব্রোক জমিদারির বাসিন্দারা তাঁর অভিভাবকত্ব বিনা চ্যালেঞ্জে মেনে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রতিপক্ষ দলের মূল বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন লেডি রাচেল। ‘সৃষ্টিছাড়া এসব তুমি কী শুরু করেছ, বলো তো! প্যারিসে আমাদের রেখে একা দেশে ফিরে এলে কেন? তারপর আমরা দেশে ফেরার আগেই দ্বিতীয়বার প্যারিসে গেলে কী মনে করে? এসবের মানে কী? ‘

অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখলেন রাসেল। ‘আর্ল গুস্তাভের উইলে বলা হয়নি যে আমাকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

‘জবাবদিহি করতে হবে না বলেই তুমি চালচুলাহীন যাযাবরদের সঙ্গে চক্রান্ত করবে? অ্যামেলিয়ার বিরুদ্ধে দাবিদার খাড়া করবে? নেকড়ে-টানা গাড়ির মালিক কোনো এক যাযাবরের সঙ্গে কেন তুমি দেখা করতে গিয়েছিলে, অ্যামেলিয়া তা জানতে চাইছে। তুমি যদি সব কথা খুলে না বলো, অ্যামেলিয়া ধরে নেবে, তুমি তার শুভাকাঙ্ক্ষী নও। ওই খাতাটায় কী আছে, জানতে পারি? যেটা তুমি বিটকেল যাযাবরকে দেখিয়েছ?’

এ কথা শুনে রাসেল তো একেবারে থ। মুখে কোনো কথা জোগাচ্ছে না। সন্দেহ নেই, তাঁর আর উর্সাসের ওপর নজর রেখেছিল কেউ। কোনো গুপ্তচর? তাঁর হাতে যখন আর্ল গুস্তাভের ডায়েরিটা ছিল, নিশ্চয় তখনই দেখেছে। কে হতে পারে সেই গুপ্তচর? লালচে দাড়িঅলা ঘোড়সওয়ার?

হঠাৎ আঁদ্রের দিকে ফিরলেন রাসেল। কল্পনার চোখে দেখতে চেষ্টা করলেন আঁদ্রের মুখে চওড়া গোঁফ আর চাপদাড়ি লাগালে কেমন হবে চেহারাটা। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন, তাঁর মনে হলো, ওই ঘোড়সওয়ার আঁদ্রে ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।

রাসেলের ইচ্ছা হলো, হাতের ছড়ি দিয়ে আঁদ্রের পিঠে বেশ কয়েক ঘা বসিয়ে দেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রাখলেন তিনি। পেমব্রোক ছেড়ে তখুনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন। এদের কাছাকাছি থাকা এখন আর নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে না।

আর্ল গুস্তাভের নিখোঁজ ছেলে আবার কোনো দিন ফিরে আসতে পারে, অন্তত অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ হয়তো আর্ল গুস্তাভের ছেলে বলে কাউকে সাজিয়ে আনতে পারে, এ ধরনের একটা ভয় যে সব সময় আছে, নানা প্রসঙ্গে রাসেলই ওদের বিভিন্ন সময়ে এ কথা বলেছিলেন। তখন তাঁর কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি, হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে। আজ রাসেলের রহস্যময় আচরণ দেখে ওদের মনে হলো, তিনি হয়তো সেই নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেয়েছেন বা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার এমনও হতে পারে, লোভে পড়ে নকল একজনকে গিয়েলুম হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন জমিদারির মালিক হওয়ার আশায়। ডেভিড মন্তব্য করল, এ ব্যাপারে দস্যু অ্যালারিকেরও মদদ থাকতে পারে। যেদিন মুক্তিপণ দেওয়া হলো, সেদিন সে আর আঁদ্রে হোটেলে ফিরে আসার পরও রাসেল ওই দস্যু সরদারের আস্তানায় অনেকক্ষণ ছিলেন। কেন? এই প্রশ্নের জবাব রাসেল কাউকে দেননি। তাঁর নীরবতা সন্দেহজনক।

ওরা সবাই মিলে পরামর্শ করতে বসল। রাসেল যদি ওদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেন, ওরা কি হাল ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় গিয়ে আশ্রয় নেবে? ডেভিড বলল, ‘এ আমি কিছুতেই মেনে নেব না। আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব।’

তাকে সমর্থন করল আঁদ্রে।

লেডি রাচেলও সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, ডেভিড পেমব্রোকের আর্ল হবে। সে আশা পূরণ করার জন্য তিনিও শেষ পর্যন্ত লড়বেন।

লেডি রাচেল তাঁর জীবনে একা শুধু রাসেলকেই বন্ধু হিসেবে পাননি, তাঁর আরও অনেক বন্ধু আছে। ছেলে আর্ল হবে, তিনি হবেন একজন আর্লের গর্বিত জননী, তারই ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত থাকার দরুন ইদানীং তাঁদের প্রতি খানিকটা অবহেলা করা হয়েছে। তবে সে এমন কোনো ত্রুটি নয় যে সংশোধন করা যাবে না। লেডি রাচেল বুদ্ধি করে তাঁর পুরোনো এক আইনজ্ঞ বন্ধুর কাছে গিয়ে ধরনা দিলেন।

আইনজ্ঞ বন্ধু তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, আগে দেখা যাক না মি. রাসেল কী করেন। আর্ল গুস্তাভের নিখোঁজ সন্তান সত্যি যদি ফিরেও আসে, আদালতে নিজের পরিচয় প্রমাণ করা তার জন্য খুব কঠিন হবে। প্রায় অসম্ভবই। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যামেলিয়ার পক্ষে লড়বেন বৈকি পুরোনো বন্ধু মি. আর্ভিং। খরচ? সে জন্য লেডি রাচেলকে ভাবতে হবে না—ভবিষ্যতে দ্বিগুণ ফিরে পাওয়ার শর্তে সব খরচ তিনিই করবেন। তবে কিনা এ ব্যাপারে লিখিত একটা দলিল থাকা চাই।

আর্ভিং ভুল কিছু বলেননি। আর্ল গুস্তাভ তাঁর ডায়েরিতে ছেলের হাতের ছাপ রেখে গেছেন, সে কথা তো আর তাঁর জানা নেই। মি. রাসেল এই মোক্ষম অস্ত্রটার কথা এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষদের কাউকে জানতে দেননি। তাই রোমাঞ্চকর এই মামলার কথা যে শুনছে, সে-ই নেতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলছে, ‘এত কাল পর কি এরকম একটা জটিল মামলা দাঁড় করানো সম্ভব? মি. রাসেল প্রবীণ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী, এরকম বোকামি করা তাঁকে মানায় না। কেন, অ্যামেলিয়া কাউন্টেস হলে ক্ষতি কী? ডেভিডকেও তো আর্ল হিসেবে বেশ মানাবে কি মানাবে না, এই একটাই চিন্তা তাদের। ন্যায়-অন্যায় নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয় কেউ। সমাজে যেন বাইরের সৌন্দর্য-সৌষ্ঠবেরই যা কিছু মূল্য। হাজার গলদ থাকুক ভেতরে, বাইরে যেন তা প্রকাশ না পায়।

.

আইনজীবী রাসেল সত্যি সত্যি মামলা ঠুকে দিয়েছেন। ভদ্রলোক অ্যামেলিয়ার শুভানুধ্যায়ী ও অভিভাবক ছিলেন, মামলার সুবাদে হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষ। তবে আর্ভিংয়ের মাধ্যমে একটা আপসরফার প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন তিনি। নিজের নয়, এক অর্থে আর্ল গুস্তাভেরই প্রস্তাব। তাঁর রেখে যাওয়া উইলের শর্ত থেকে এই প্রস্তাব বেরিয়ে এসেছে। সেটার সারমর্ম ব্যাখ্যা করলেন আর্ভিং। আর্ল গুস্তাভের নিখোঁজ ছেলে যদি কোনো দিন ফিরে আসে, অ্যামেলিয়াকেই তার বিয়ে করতে হবে। সে বিয়েতে অ্যামেলিয়া যদি রাজি না হয়, পেমব্রোক জমিদারি থেকে একটি পয়সাও সে পাবে না। আর যদি গুস্তাভের ফিরে আসা ছেলে বিয়েতে অমত করে, তার স্বার্থেও আঘাত লাগবে। আর্ল উপাধি আর জমিদারির খানিকটা অংশ সে পাবে বটে, কিন্তু অর্ধেকটাই চলে যাবে অ্যামেলিয়ার নামে। তখন অ্যামেলিয়া যাকে খুশি তাকে বিয়ে করতে পারবে।

প্রস্তাবের সঙ্গে নিজের মন্তব্যও জুড়ে দিয়েছেন রাসেল—এখন অ্যামেলিয়া যদি গিয়েলুমকে বিয়ে করতে রাজি হয়, তাহলেই সব সমস্যার ইতি ঘটে। তাহলে আর মামলা লড়ারও কোনো প্রয়োজন থাকে না। উভয় পক্ষের সম্মতিতে পুরো জমিদারির মালিক হতে পারে গিয়েলুম, অ্যামেলিয়াকেও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

এই ব্যবস্থায় একমাত্র ডেভিডই পথে বসে। অ্যামেলিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে না হলে স্রেফ রাস্তার ভিখারি হয়ে যাবে সে। বয়স খুব কম নয়, কিন্তু কোনো কাজই সে শেখেনি। নিজের আয় থেকে একটা দিন নিজের খরচ চালাবে, সে সামর্থ্য তার নেই। তার মানে অবশ্য এই নয় যে তার পকেটে টাকা থাকে না। টাকায় ভর্তিই থাকে পকেট, তবে সেসব আসে অ্যামেলিয়া আর লেডি রাচেলের কাছ থেকে। টাকা আসার এই দুটো উৎস শুকিয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে ডেভিডকে।

প্রস্তাবটা শোনামাত্র করুণ চেহারা নিয়ে অ্যামেলিয়ার কাছে ছুটে এল ডেভিড। তবে তাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে হলো না। অ্যামেলিয়া নিজে থেকেই তাকে অভয় দিয়ে বলল, ‘আমার ওপর ভরসা রাখো, ডেভিড। আমি কি সেরকম মেয়ে যে এত দিন তোমাকে আশা দিয়ে আজ বিশ্বাসঘাতকতা করব? তোমাকে ত্যাগ করার কথা আমি তো ভাবতেই পারি না। তা ছাড়া গিয়েলুম কে? তাকে আমি চিনি না, চিনতে চাইও না। কী স্পর্ধা, বলে কিনা তাকে আমার বিয়ে করতে হবে! এরকম উদ্ভট প্রস্তাব মি. রাসেলের মতো উন্মাদের পক্ষেই শুধু দেওয়া সম্ভব!’

অভয় পেয়ে নাচতে নাচতে আঁদ্রের কাছে ছুটে এল ডেভিড। আঁদ্রের বুদ্ধির তো বেজায় ধার! এ বয়সেই প্রতিটি বিষয়ের ভেতরের তাৎপর্য ধরে ফেলতে পারে সে। সব শুনে মাথা নেড়ে সংশয় প্রকাশ করল, বলল, ‘মামলার রায় কী হবে বলা যায় না। শেষ পর্যন্ত যদি দেখা যায় মি. রাসেল জিতে গেছেন, অ্যামেলিয়ার এখনকার চিন্তাভাবনা বদলে যাওয়া বিচিত্র নয়।’

ডেভিডের মুখ ম্লান হয়ে গেল। ‘এখন তাহলে কী করব আমি?’

আঁদ্রে বুদ্ধি দিল, বিয়াঁকার সাহায্য চাও। অ্যামেলিয়ার ওপর বিয়াকার প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে। এই বিয়াঁকা এরই মধ্যে অ্যামেলিয়াকে বুঝিয়েছে যে লেডি রাচেল ও ডেভিড নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে অ্যামেলিয়াকে সৎ পরামর্শ দেবে না। নিঃস্বার্থ উপদেশ পাওয়া যাবে, এই লোভে বিয়াঁকার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে অ্যামেলিয়া।

কাজেই বিয়াঁকাকে দলে টানার জন্য আদাজল খেয়ে লাগল ডেভিড। আঁদ্রে চাইছে ডেভিড বাঁচুক, ডেভিড বাঁচলে সে-ও বাঁচবে। আর বিয়াঁকা ভাবছে, অ্যামেলিয়ার অবস্থা ভালো থাকলে তারও আয় বাড়বে। যে যার স্বার্থ খুঁজছে, তাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই।

বিয়াকার বুদ্ধিতেই আর্ভিংকে খবর পাঠাল অ্যামেলিয়া, ‘আপাতত মামলা চলুক। যখন পরিষ্কার বোঝা যাবে যে আমরা হেরে যাচ্ছি, শুধু তখনই মি. রাসেলের প্রস্তাব গ্রহণ বা বর্জন করার কথা ভাবা হবে। আরেকটা কথা, আপনি দয়া করে ডেভিড বা লেডি রাচেলের সিদ্ধান্তকে আমার সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য করবেন না। তাঁদের স্বার্থ আর আমার স্বার্থ যে অভিন্ন নয়, আশা করি এটা অবশ্যই আপনি বুঝতে পারছেন

অ্যামেলিয়ার খুব প্রশংসা করলেন আর্ভিং। নাবালিকা হলে কী হবে, ঘটের বুদ্ধি খুব পাকা! তাঁর অবশ্য জানার কথা নয় যে বুদ্ধিটা বিয়াঁকার মাথা থেকে বেরিয়েছে।

মামলা তার নিজস্ব পথে চলতে লাগল। গিয়েলুম দরখাস্তকারী নয়, তাই আদালতে এখুনি তার উপস্থিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। পেমব্রোক জমিদারির তত্ত্বাবধায়ক এবং আর্ল গুস্তাভের রেখে যাওয়া উইলের সংরক্ষক হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী মি. রাসেল। একদিন অবশ্য গিয়েলুমকে আদালতে হাজির হতে হবেই। তবে তা আরও অনেক পরে।

দীর্ঘ দিন ধরে চলল মামলা। বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে, শুনানি শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই কয় বছরে একবারই মাত্ৰ আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ইংল্যান্ডে এল গিয়েলুম। বিরাট আয়োজন করে প্যারিস থেকে লন্ডনে নিয়ে আসা হলো তাকে। লন্ডনে যে কদিন থাকল, তার নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখা হলো। হাজিরা দিয়ে প্যারিসে যখন ফিরে গেল, তখনো আয়োজনে কোনো ত্রুটি করা হলো না। সমস্ত খরচই বহন করল অ্যালারিক।

মাত্র দুই দিনের জন্য ইংল্যান্ডে এসেছিল গিয়েলুম, কিন্তু তাতেই গোটা ইংল্যান্ড তার ওপর বিরূপ হয়ে উঠল। একি কদাকার চেহারা! এই চেহারার একটা প্রাণীকে কি মানুষ বলা যায়? এরকম বিকৃত চেহারা নিয়ে গিয়েলুম ইংল্যান্ডের লর্ডসভায় বসবে, এ কথা ভেবে ভয়ে আঁতকে উঠল রক্ষণশীল ইংরেজ জাতি। ঘৃণায় ছি ছি করতে লাগল তারা। এ ঘটনা যদি ঠেকানো না যায়, তাহলে বলতেই হবে যে দেশে কদর্যতার চর্চা শুরু হয়ে গেছে। ওর মুখের স্থায়ী হাসি কী বীভৎস! সেই হাসি মুহূর্তের জন্যও মুছে ফেলার সাধ্য ওর নেই। ওটা একটা পিশাচ। এখুনি ওকে দেশ থেকে ভাগাও!

ইংল্যান্ডজুড়ে তোলপাড় শুরু হলো। সমাজপতিরা বিচলিত। রাসেলের দুর্নামে খবরের কাগজগুলো মুখর। আভাসে-ইঙ্গিতে সবাই বোঝাতে চাইছে, গোটা ব্যাপারটাই সাজানো, রাসেলের গভীর ষড়যন্ত্র। সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে অ্যামেলিয়ার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। গিয়েলুমের সঙ্গে সুন্দরী কিশোরীর বিয়ের প্রস্তাবটাকে ধিক্কার দিল সবাই, প্রত্যাখ্যান করল ঘৃণার সঙ্গে। আর্ভিং ফাঁস করে দেওয়ায় ইংল্যান্ডের সবাই এখন রাসেলের আপস প্রস্তাবের কথা জানে।

সময় তার নিজস্ব গতিতে বয়ে চলেছে। পার হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। মামলা চলছে শম্বুকগতিতে। কিন্তু গিয়েলুম কী করছে? ফ্রান্সের বন- জঙ্গলে আর দুর্গম গ্রামগুলোয় ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, উর্সাসের নেকড়ে-টানা গাড়িতে চড়ে। তবে না, সময়ের এতটুকু অপব্যয় করছে না গিয়েলুম। বিপুল আগ্রহ নিয়ে উর্সাসের কাছে নিয়মিত লেখাপড়া শিখছে সে। তার মাথা খুবই ভালো, অল্প দিনেই বিভিন্ন ভাষার ওপর দখল এসে গেল, তারপর শুরু হলো গোগ্রাসে বিদ্যা ও জ্ঞান আহরণের পালা। একই সঙ্গে ওষুধ তৈরি করাও শিখছে সে।

এ এক বিচিত্র ও অবিশ্বাস্য কাহিনি। নিশ্চয়ই তার কোনো গভীর মর্মবেদনা ছিল, তা না হলে দেশবিখ্যাত একজন অধ্যাপক সমাজ ও সংসার ত্যাগ করে যাযাবরের জীবন বেছে নেবে কেন? তার অন্তর ছিল স্নেহ- ভালোবাসার বিশাল উৎস, কোনো কারণ ছাড়া নিশ্চয়ই সে সেই উৎসমুখ পাথরচাপা দিয়ে বন্ধ করে দেয়নি। যাযাবর জীবন বেছে নেওয়ার পর কেউ তাকে চিনতে পারেনি, চেনার পথ নিজেই সে খোলা রাখেনি। সবাই তাকে উদ্ভট মানুষ মনে করে, হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে জানে, ধরে নেয় এই লোককে সম্মান না জানালেও চলে। সবার কাছে তাই সে অবহেলার পাত্র।

কিন্তু পরিচয় গোপন করে থাকা মহৎপ্রাণ মানুষটি গিয়েলুম আর ডির সংস্পর্শে আসায় স্নেহ-ভালোবাসার সেই উৎসমুখ থেকে পাথরটা সরে গেছে, অন্তরের অন্তস্তল থেকে আবার উৎসারিত হতে শুরু করেছে স্নেহ- বাৎসল্যের অবিরাম ধারা। তবে যাযাবরই রয়ে গেছে উসাস, তার আসল পরিচয় কেউ কোনো দিন জানতে পারবে না।

গিয়েলুমের মেধার সত্যি বুঝি কোনো তুলনা হয় না। গত কয়েক বছরে ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিতে অবিশ্বাস্য পাণ্ডিত্য অর্জন করেছে সে। উর্সাস মনে মনে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে, লর্ডসভায় দাঁড়িয়ে গিয়েলুম যেদিন বক্তৃতা দেবে, সেদিন তার জ্ঞানের গভীরতা দেখে স্তব্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর মানুষ।

দেখতে দেখতে সাতটা বছর কেটে গেল। এত দিনে আদালতে অ্যালারিকের ডাক পড়ল। ডাক এল স্টিফেন ব্রুকের নামে। স্টিফেন ব্রুক, আর্ল গুস্তাভের ব্যক্তিগত বনভূমির সাবেক কর্মচারী। তাকেই চেনেন আদালত, অ্যালারিককে নয়।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিল অ্যালারিক ও আইরিন। এ তাদের প্রায়শ্চিত্ত করার দিন। মানসিকভাবে তৈরিই ছিল ওরা, তবু যখন ডাক এল, পরস্পরের হাত ধরে মুখোমুখি বসল ওরা, নীরবে কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলল। আজই হয়তো তাদের শেষ দেখা। আদালত থেকে অ্যালারিককে সম্ভবত সরাসরি জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর জেলখানা থেকে হয়তো সরাসরি ফাঁসির মঞ্চে।

হোক ফাঁসি, তবু তারা প্রায়শ্চিত্ত করতে ভয় পাবে না। সময় নষ্ট না করে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল ওরা। ওদের জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন বাসস্থানের ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছেন রাসেল।

কাঠগড়ায় সাক্ষী দিতে উঠল অ্যালারিক। প্রথমেই স্বীকার করল, সে-ই স্টিফেন ব্রুক। একসময় এই স্টিফেন ব্রুককে বিনা অপরাধে নির্দয়ভাবে চাবুক মেরেছিলেন পেমব্রোক জমিদার আর্ল গুস্তাভ। হ্যাঁ, মার খেয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগে তার। সে জন্যই গুস্তাভের একমাত্র সন্তান গুইনপেলন ওরফে গিয়েলুমকে নিয়ে ফ্রান্সে পালায় সে। ফ্রান্সে পৌঁছে শিশু গিয়েলুমের নাকে-মুখে ছুরি চালিয়ে অপারেশন করায়। সেই অপারেশনের ফলে তার মুখের আকার-আকৃতি সম্পূর্ণ বদলে যায়, মুখাবয়বে চিরস্থায়ী আসন পায় কুৎসিত একটা হাসি। না, নিজের হাতে ছুরি চালায়নি সে। এভাবে ছুরি চালাতে সে জানেও না। শিশু গিয়েলুমের মুখে অপারেশন চালায় পেশাদার একদল সার্জন। টাকার বিনিময়ে এই কাজ করতে অভ্যস্ত তারা। বলতে গেলে এটাই তাদের পেশা—অপারেশনের মাধ্যমে শিশুদের চেহারা ধ্বংস করা।

সবশেষে স্টিফেন ব্রুক জানাল, আদালতে যাকে হাজির করা হয়েছে, সে-ই যে আর্ল গুস্তাভের সন্তান গুইনপেলন ওরফে গিয়েলুম, এ ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ নেই। বহু বছর ধরে এই ছেলে ফ্রান্সে রয়েছে, সে-ও ফ্রান্সে থাকে, তাই ওর দৈনন্দিন খবর নিতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রথম কিছুদিন অবশ্য তার কাছেই ছিল সে, তারপর এক জাদুকর নিজের তাঁবুতে আশ্রয় দেয় তাকে, এখন আছে এক যাযাবর চিকিৎসকের কাছে। জাদুকর ও চিকিৎসক, দুজনই তার পরিচিত।

স্টিফেন ব্রুকের ওপর নির্দয় জেরা শুরু হলো। ফলে তার অতীত জীবনের অনেক গুরুতর অপরাধের কাহিনি ফাঁস হয়ে গেল। স্টিফেন ব্রুক ওরফে অ্যালারিক অবশ্য কিছুই গোপন রাখার চেষ্টা করেনি। প্রায়শ্চিত্ত করবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়েই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে সে।

গিয়েলুম ওরফে গুইনপেলন সম্পর্কে স্টিফেন ব্রুক যে সত্যি কথা বলছে, এটা মেনে নিতে বাধ্য হলেন আদালত। মোক্ষম অস্ত্রটা সবশেষে ব্যবহার করলেন রাসেল। আর্ল গুস্তাভের ডায়েরি। হাতের সেই ছাপ। আদালতকে দেখানো হলো ডায়েরির শেষ পাতায় আর্ল গুস্তাভের নিজের হাতে লেখা। আঙুলের ছাপের নিচে স্পষ্ট অক্ষরে লিখে রেখে গেছেন তিনি : ‘এগুলো আমার ছেলে গুইনপেলনের তিন বছর বয়েসের আঙুলের ছাপ।’

আদালত আর্ল গুস্তাভের হস্তাক্ষরের নমুনা চাইলেন। নমুনা মিলিয়ে দেখা গেল ডায়েরির ওই লেখা তাঁরই। পেশাদার পরীক্ষকেরা এ ব্যাপারে সবাই একমত হলেন। দুজন লোকের হাতের লেখা কখনোই একরকম দেখতে হয় না, এ তো সবাই জানে।

সাত বছর মামলা চলার পর অবশেষে আদালত রায় ঘোষণা করলেন। রায়ে বলা হলো, চেহারা বদলে ফেলা হলেও আদালতে হাজির গিয়েলুমই আর্ল গুস্তাভের সন্তান গিয়েলুম। সে-ই পেমব্রোক জমিদারি ও আর্ল উপাধির নির্ভেজাল ও একমাত্র অধিকারী।

মামলা চলার সময় ইংল্যান্ডেই দীর্ঘদিন থাকতে হলো অ্যালারিককে। তারপর তার অপরাধের স্বীকারোক্তি শোনার পর লন্ডন পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করল তাকে। আইনজীবী অবশ্য তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন। তার আইনজীবী মি. রাসেল। বিচার চলছে। তারপর একসময় তারও রায় ঘোষণা করা হলো।

ইংল্যান্ডে অ্যালারিকের একমাত্র অপরাধ, সে আর্ল গুস্তাভের ছেলেকে অপহরণ করেছিল। এই অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো তাকে। রায় ঘোষণার পর জেলে ঢুকল সে।

অ্যালারিক ছাড়া পাবে, তারই অপেক্ষায় ইংল্যান্ডে রয়ে গেছে আইরিন। জেলখানার কাছাকাছি একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে সে, ওপরতলার জানালা দিয়ে সকাল-বিকেল জেলখানার মাঠে অ্যালারিককে হাঁটাচলা করতে দেখতে পায়। ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেননি, নিজেকে এই আশ্বাসবাণী শুনিয়ে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করে সে। তার বিশ্বাস, অনুতাপে দগ্ধ হলে ঈশ্বর অবশ্যই তার প্রতি সদয় হবেন।

গুরুতর সব অপরাধই ফ্রান্সে করেছে অ্যালারিক। এমনকি গিয়েলুমের অপারেশনও। তার সেসব কুকর্মের বিচার করার অধিকার ব্রিটিশ সরকারের নেই। বিচার যদি করে তো ফ্রান্স সরকার করবে। কিন্তু দেখা গেল, ফ্রান্সের তরফ থেকে এমন কোনো অনুরোধ এল না, যাতে ব্রিটিশ সরকার ফ্রান্সে তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়। এর কারণ অনেকের কাছেই স্পষ্ট। ফ্রান্সের পুলিশ বিভাগে অ্যালারিকের অনেক বন্ধু আছে, তাদের চেষ্টাতেই ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে গেছে। অর্থাৎ, অ্যালারিকের গুরুতর অপরাধের একটারও কোনো বিচার হলো না।

পেমব্রোক জমিদারির কী অবস্থা? এখানকার সমস্যা ভারি জটিল। আৰ্ল গুস্তাভের নিখোঁজ ছেলে গিয়েলুম ফিরে এসে, মামলায় জিতে, নতুন আল হয়েছে। অ্যামেলিয়ারা এখনো পেমব্রোক ছেড়ে চলে যায়নি বটে, কিন্তু এখানে থাকার কোনো অধিকার তাদের আর নেই।

অনেক দিক চিন্তা করে মি. রাসেল আবার প্রস্তাব পাঠালেন। এখনো সময় আছে, গিয়েলুমকে বিয়ে করুক অ্যামেলিয়া। আশ্চর্যই বলতে হবে, এবার অ্যামেলিয়া এককথায় রাজি হয়ে গেল।

আর ডেভিড? তার কী হলো?

ডেভিডকে অ্যামেলিয়া আশ্বাস দিল, ‘বিয়ের পরও তোমার সঙ্গে আমার আগের সম্পর্ক ঠিক থাকবে।’ সে যুক্তি দেখাল, এরকম নীতিহীন কাজ সমাজের ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। আজকাল এসবে কেউ কিছু মনে করে না।

অ্যামেলিয়া তো গিয়েলুমকে বিয়ে করতে রাজি হলো, কিন্তু গিয়েলুম? ইতিমধ্যে তার কানে এসেছে, ডেভিড আর অ্যামেলিয়ার বিয়ে অনেক দিন আগেই স্থির হয়েছে। পুরোনো প্রেমিক ডেভিডকে ত্যাগ করে অ্যামেলিয়া তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে শুনে গিয়েলুম খুশি হতে পারল না। মি. রাসেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল সে।

তাতে লাভই হলো অ্যামেলিয়ার। আর্ল গুস্তাভের উইলে বলা হয়েছে, অ্যামেলিয়াকে বিয়ে করতে রাজি না হলে সম্পত্তির অর্ধেকটা হারাবে গিয়েলুম, সেই অর্ধেক সম্পত্তি পাবে অ্যামেলিয়া।

অ্যামেলিয়া সম্পত্তির অংশ পাওয়ামাত্র লেডি রাচেল ছেলের সঙ্গে তার বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেললেন। কিন্তু বেচারা ডেভিডের মনে না আছে শান্তি, না আছে আনন্দ। কাউন্টেস হওয়ার লোভে কদাকার একজনকে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়েছিল অ্যামেলিয়া, সেই অ্যামেলিয়ার স্বামী হওয়ার মধ্যে কৃতিত্ব বা গৌরব কোনোটাই নেই। কিন্তু উপায় কী! বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হয়েছে ডেভিডকে। কারণ, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তার নেই। অ্যামেলিয়ার সাহায্য ছাড়া না খেতে পেয়ে মরতে হবে তাকে।

সব দিক থেকে ঠকল একা শুধু আঁদ্রে। চোট খাওয়া মন নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেল সে। বিয়াঁকার ভাগ্যটা অবশ্য মন্দ নয়। অ্যামেলিয়া তাকে সহচরী হিসেবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

তারপর একদিন লর্ডসভায় এসে মর্যাদার আসনে বসল গিয়েলুম। প্রথমে বোঝা গেল না কী ঘটতে চলেছে। লর্ডরা ফিসফাস শুরু করলেন। কেউ কেউ এত বিস্মিত হয়েছেন যে চোখের পাতা ফেলতে ভুলে গেছেন। দু- একজন হেসে ফেললেন। তাঁদের এই হাসিই সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়ল বিশাল হলঘরে। কত রকম হাসিই না মানুষ হাসতে পারে। কারও হাসি শুনে মনে হলো বিড়াল ডাকছে। আবার কারও হাসি ঠিক যেন কুকুরের কান্না। এই হাসি বা ব্যঙ্গ মোরগের ডাক হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। নীরবে বসে থাকল গিয়েলুম, তার যেন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তারপর বক্তৃতা দেওয়ার ডাক পেল সে।

বক্তৃতা দিতে উঠে দাঁড়াল গিয়েলুম। সেই মুহূর্তে তার কদাকার চেহারায় এমন সৌম্য গাম্ভীর্য, মহত্ত্বের এমন স্বর্গীয় আভা ফুটে উঠল যে, থতমত খেয়ে গেল উপস্থিত শ্রোতারা। তারপর শুরু হলো তার জ্ঞানগর্ভ ভাষণ। ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে গেল কলগুঞ্জন, ফিসফাস পরিহাস। একটু আগে যারা কুকুর-বিড়াল-মোরগের ডাক ডেকেছেন, তাঁরাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিয়েলুমের নতুন ভাব আর নতুন তত্ত্বের কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।

কিন্তু তা বেশিক্ষণ নয়। বক্তৃতা থামতেই গিয়েলুমের কদাকার মুখের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন সবাই। মাথা নিচু করল গিয়েলুম, সভাকক্ষ ছেড়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে এল।

সেই যে বেরিয়ে এল, জীবনে আর কখনো সেখানে ঢুকল না গিয়েলুম। ইংল্যান্ড ত্যাগ করল সে। প্রতিজ্ঞা করল আর কোনো দিন ফিরবে না। আবার সেই ফ্রান্স, সেই উর্সাসের কাছে ফিরে এল গিয়েলুম। ফিরে এল ডির কাছে, হোমোর কাছে। উসাস, ডি, হোমো—এরা তাকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় না, ব্যঙ্গ করে হেসেও ওঠে না। এরাই তার আপনজন।

এখানে গিয়েলুমের জীবন খুব সহজ ও আনন্দময়। হোমো গাড়ি টানে, ওরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যায়, এক বন থেকে আরেক বনে ঘোরে/লোকালয়ের পাশে গাড়ি থামিয়ে নিজের তৈরি ওষুধ বুড়ো-বুড়িদের মধ্যে বিলি করে গিয়েলুম। তার অবসর সময় কাটে নতুন কেনা রাজ্যের বই-পুস্তকে মুখ গুঁজে। উর্সাসের বইগুলো আগেই সব পড়া হয়ে গেছে, তবে সেগুলোও মাঝেমধ্যে নাড়াচাড়া করে সে। নিজে পড়ে গিয়েলুম, উসাসকেও পড়ে শোনায়। মাঝেমধ্যে ধর্ম ও সমাজতত্ত্বের জটিল বিষয় নিয়ে গুরু- শিষ্যে গভীর আলোচনা হয়। জমিদারি ত্যাগ করে গিয়েলুমের মনে কোনো দুঃখ নেই। এখানে সে বড় আরামে আছে। বড় স্বস্তিতে আছে।

জমিদারির আয় কম নয়, তা থেকে নিয়মিত টাকা পাঠান রাসেল। গিয়েলুম সে টাকা ছোঁয় না, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান করে দেয়। উসাস, গিয়েলুম, ডি আর হোমো খুব সুখে আছে। উসাস দিন গুনছে, কবে আরেকটু বড় হবে ডি। আদুরে সোনার পুতুলটা আরেকটু বড় হলেই গিয়েলুমের সঙ্গে তার বিয়ে দিতে পারে সে। ওদের এই বিয়েটাই হবে তার জীবনের শেষ কর্তব্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *