১
কোনো পোষা নেকড়ের নাম কি হোমো হতে পারে? নাহ্, কী করে তা সম্ভব! হোমো মানে তো মানুষ। অথচ একজন লোক তার পোষা নেকড়ের নাম সত্যি সত্যি হোমো রেখেছে। শুধু কি তা-ই? সে নিজের নাম রেখেছে উসাস। কী আশ্চর্য, তাই না? উর্সাস মানে যে ভালুক, এ তো সবারই জানা। অথচ এই নামেই সে পরিচিত হতে চায়। এই লোককে পাগল ছাড়া আর কী বলা যায়?
তবে উসাসকে যদি পাগলই বলা হয়, তাহলে সেই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, তার পাগলামির ভেতর আশ্চর্য একটা শৃঙ্খলা আছে, আছে দায়িত্ববোধ এবং খানিকটা যেন বিদঘুটে রসবোধও, যা চারপাশের সমস্ত কিছুর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে প্রকৃতির ভেতর অসংগতি আর বিকৃতিই খুঁজে পায়।
উর্সাস একটা গাড়ির মালিক। হোমোকেই সেটা টানতে হয়। মাঝেমধ্যে অবশ্য উসাস ও হোমো জোয়ালে কাঁধ লাগিয়ে একসঙ্গেও টানে। সেটাকে ঠিক গাড়ি না বলে বাড়ি বললেই বেশি মানায়—চার চাকার ওপর বসানো, এই যা। উর্সাসের যা কিছু নিজের, সব ওই গাড়ির ভেতরই পাওয়া যাবে। তার হাঁড়িকুড়ি, তৈজসপত্র? আছে। নিজের খাবার? আছে। নেকড়ের খাবার? আছে। তার বিছানাপত্র, জামা-জুতা, কোদাল-শাবল-দা? আছে, সবই আছে। প্রতিটি জিনিস নির্দিষ্ট জায়গায় সযত্নে সাজিয়ে রাখা, কাজের সময় হাত বাড়ালেই যাতে পাওয়া যায়। আবার একই সঙ্গে লক্ষ রাখা হয়েছে ওঠা-বসা বা চলাফেরার জায়গা যাতে দখল না করে ওগুলো। গাড়ির ভেতর মাঝখানটা ফাঁকা। ঝড়-বৃষ্টির দিনে সেখানে আরাম করে বসে সে, সময় হলে স্টোভ জ্বেলে রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়া সারে, কখনো-বা ইচ্ছে হলে কালের আঁচড়ে হলুদ হয়ে যাওয়া জীর্ণ পুঁথি বের করে পড়ায় মন দেয়। রাত হলে ওখানেই বিছানা পাতে। পেছনের দরজা আর দুপাশের জানালা বন্ধ করে দিলে ভেতরের মানুষটা ঝড়-বৃষ্টির অত্যাচার থেকে তো বাঁচেই, ছোটখাটো সিঁধেল চোরের হাত থেকেও নিরাপদ থাকে।
চোর? উর্সাসের গাড়িতে চোর কেন আসবে? টাকার লোভে? কিন্তু কোথায় টাকা? উর্সাসের কাছে যে মেলা টাকা নেই, এ তো কারও না জানার কথা নয়। তবে তাকে অভাবী লোকও বলা চলে না। নতুন কোনো গ্রামে এলেই টাটকা রুটি কেনা চাই তার। আরও কিনবে ভেড়ার মাংসল একটা ঠ্যাং। চলতি মৌসুমের রসাল ফল, তা-ও দু-একটা না কিনলে তার চলে না।
হোমোর খুব যত্ন নেয় উসাস। হোমো যাতে ভালো-মন্দ খাবার বেশি পরিমাণে পায়, সেদিকে তার বিশেষ খেয়াল থাকে। হোমোর জন্য আলাদা করা থাকে বড় বড় মাংসের টুকরো, সেগুলো রামে ভিজিয়ে খাওয়ানো হয় তাকে। তা ছাড়া নিজের খাদ্য থেকেও একটা ভাগ হোমোকে দেয় উসাস। গাড়ি যখন চলছে, পথের ধারে হয়তো দেখা গেল খরগোশের নধর একটা বাচ্চা, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে হোমোকে ছেড়ে দেবে উসাস-শিকার ধরে খাওয়ার জন্য।
রাতে হোমো শোয় কোথায়? আকাশে যখন মেঘ থাকে না, আবহাওয়া যখন না-গরম না-ঠান্ডা, ফ্রান্সের বাতাস যখন ফুলের সৌরভে সুবাসিত, হোমো তখন গাড়ির গা ঘেঁষেই আরাম করে শুয়ে রাত কাটিয়ে দেয়। কিন্তু ঝিরঝির করে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি শুধু পড়লে হয়, গাড়ির ভেতর থেকে জোর গলায় তাগাদা দেবে উসাস, ‘তলায় যা রে, হোমো! জলদি তলায় যা!’
গাড়িটা বেশ উঁচু করেই বানানো। চাকাগুলোকে এড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে গাড়ির নিচে সেঁধিয়ে যায় হোমো। মনে মনে কৃতজ্ঞতাবোধ করে, আর আরাম-আয়েশের দিকে কত খেয়াল রাখে মনিব! বৃষ্টি যদি বাড়ে, কিংবা যদি শুরু হয়ে যায় ঝড়, কাঠের মজবুত ঝাঁপ নামিয়ে দেয় উসাস। গাড়ির নিচে চারপাশ ঢাকা পড়ে গেল, নিশ্ছিদ্র নিরাপদ হয়ে গেল হোমোর ঘর।
প্রশ্ন উঠতে পারে, খরচপাতি তো একেবারে কম নয়, উসাস এত টাকা পায় কোথা থেকে? আয়ের ভালো একটা উৎস আছে তার। সে আসলে যাযাবর চিকিৎসক, রোগী দেখে ওষুধ দেয়। সব দেশেই কিছু লোক থাকে, যারা রোগ হলেও কষ্ট করে ডাক্তারের কাছে যাবে না। এরাই উসাসের রোগী। উর্সাস তো যাযাবর, গাড়ি নিয়ে গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছে। রোগীরা তাকে নাগালের মধ্যে পেয়ে ভারি খুশি হয়। গাড়ির ভেতর সারি সারি র্যাক আছে, সেসব র্যাকে বিচিত্র আকারের ওষুধের বোতল আর পাত্র ঠাসা। সব ওষুধই উর্সাসের নিজের হাতে তৈরি। চলার পথে মাঠের ধারে বা বনের মাঝে হঠাৎ গাড়ি থামানো অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস উসাসের। নিচে নেমে কোনো গাছের পাতা ছিঁড়ছে, ছুরি দিয়ে কোনো গাছের ছাল তুলছে। ফল থেকে মূল সব জিনিসই তার ওষুধ বানাতে কাজে লাগে।
উর্সাস ওষুধ তৈরি করতে বসে রাতের বেলা। উপাদান সারা দিন ধরে সংগ্রহ করা গাছের পাতা, শিকড়, ছাল ও ফুল। এসব সে ছাঁচে, বাটে, নিংড়ায়, জ্বাল দেয়, ফাটে। তারপর এটার সঙ্গে ওটা মেশায়। মানুষের পেটে যাবে, রোগও সারতে হবে, কাজেই গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করে উর্সাস, কোনো রকম ভুল হয়ে গেলে নিজেকে সে ক্ষমা করবে না।
রাতে ওষুধ বানিয়ে দিনে গ্রামে গ্রামে নগদ দামে বিক্রি করে উসাস। গিন্নিদের কাছেই তার ওষুধ বেশি বিক্রি হয়। তবে বেতো বুড়োরাও কম কেনে না। দু-তিন মাস পরপর প্রতিটি গ্রামে ফিরে আসে উসাসের গাড়ি, তখন সেখানে ওষুধ কেনার জন্য রীতিমতো ভিড় জমে যায়।
সন্দেহ নেই, তার ওষুধের চাহিদা আছে। তবে খদ্দেরের ভিড় দেখে তার আয় আন্দাজ করতে যাওয়াটা বোকামি হবে। কারণ হলো, তার রোগীরা সবাই খুব গরিব। গরিব মানে, একেবারেই গরিব। যার খুব দরাজ দিল, সে হয়তো এক বোতল ওষুধের দাম দিল এক ফ্রাংক। এই এক ফ্রাংকে ওষুধ ও বোতল দুটোই উসাস দিতে পারে না, রোগীর কাছ থেকে বোতলটা তাই ফেরত চেয়ে নিতে হয় তার।
আয়ের উৎস হিসেবে এটা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। খাওয়াদাওয়াটা চলছে, গাড়ির মেরামতি খরচটাও উঠে যায়। তবে সঞ্চয় হিসেবে কিছুই থাকে না। তাহলে চোরকে এত ভয় পায় কেন উসাস?
ভয় যে সে পায়, সেটা তার আচরণ দেখেই বোঝা যায়। উসাস ভুলেও কখনো গাড়ি ফেলে রেখে কোথাও যায় না। গাড়ির জানালায় লোহার মোটা শিক আছে, তাই রাতে কবাটগুলো খুলে রাখে। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে হুড়কো এঁটে দেয়। এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক উসাস। ঘুমানোর আগে প্রতি রাতে ভালো করে দেখে নেয় জানালার কোনো শিক নড়বড় করছে কি না বা দরজাটা ভালোভাবে বন্ধ করা হয়েছে কি না। বিছানার পাশে লোহার একটা শাবল নিয়ে শোয় সে। বোঝাই যায়, চোর এলে ওই শাবল দিয়েই তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হবে।
সন্দেহ নেই, শাবল হাতে রুখে দাঁড়ালে বেশ শক্তিশালী চোরকেও অনায়াসে হটিয়ে দিতে পারবে উসাস। সে যে পথে চলাচল করে, আশপাশের সব চোরই সেটা জানে।
উর্সাসের বয়স কম নয়। তবে কত, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। মাথার কাঁচা-পাকা জট পাকানো ঝাঁকড়া চুল আর চওড়া দাড়ি কপাল ও গালের সমস্ত রেখাকে পুরোপুরি আড়াল করে রেখেছে, ফলে মুখ দেখে বয়স আন্দাজ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার নামের অর্থ ভালুক, ভালুকের সঙ্গে মিল রেখে তার চেহারাও লোমশ। যেমন লোমশ, তেমনি মোটাসোটা ও ভারী। সে যখন হাঁটে, থপথপ করে আওয়াজ হয়। পুরোপুরি সোজা হতে পারে না সে, একটু কুঁজো হয়ে থাকে—গাড়ির ভেতর মাথা নত করে হাঁটাচলা করতে করতে ঘাড়টা স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা নুয়ে পড়েছে।
তো কথা হলো, বয়স পঞ্চাশ হোক বা পঁচাত্তর, উসাসকে দেখলেই বোঝা যায়, তার শরীরে এখনো প্রচুর শক্তি আছে। তা ছাড়া শাবলটাও খুব ভারী আর ধারালো। কাজেই চোরের দল সাবধানে থাকে, সাহস করে বড় একটা তার দিকে ঘেঁষে না। অথচ তা সত্ত্বেও সারাক্ষণ সতর্ক অবস্থায় তৈরি থাকে উসাস। ভাবটা যেন, তার এই স্থায়ী ঠিকানা কাঠের তৈরি গাড়ির কোনো গোপন খুপরির ভেতর প্রচুর নগদ টাকা বা সোনা-রুপা সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে।
আজ প্রায় বিশ বছর হতে চলল এই এলাকায় গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা করছে উসাস। এই কয় বছরে বহুবারই গাড়িটার খোলনলচে বদলাতে হয়েছে তাকে। বদলানোর সময় প্রতিবারই আগের চেয়ে পুরু নতুন কাঠ দেওয়া হয়েছে, জানালায় গরাদ বসানো হয়েছে আগের চেয়ে মোটা দেখে। দুবার পাল্টাতে হয়েছে হোমোকেও; তবে না, বিক্রি করেনি বা রাস্তায় ছেড়ে আসেনি। বয়স বেড়ে অকর্মণ্য হতে যাচ্ছে, এরই মধ্যে হঠাৎ অজ্ঞাত কোনো রোগে মারা গেছে এর আগের একজোড়া হোমো। প্রিয় পোষা নেকড়ে দুটো মারা যাওয়ায় শোকে খুবই কাতর হয়ে পড়েছিল উর্সাস। নিজের হাতে মাটি খুঁড়ে তাদের কবর দিয়েছে সে। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছে এই বলে যে, কোনো প্রাণীই তো চিরকাল বেঁচে থাকে না, বেঁচে থাকে শুধু তার সেবা আর ভালো কাজের স্মৃতি। তারপর, শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য, ৩ নম্বর হোমোকে মনের মতো করে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
.
ফ্রান্সের বনভূমি গ্রীষ্ম ও বসন্তে নতুন করে সেজেগুজে অপরূপ হয়ে ওঠে। শহরবাসী তখন দল বেঁধে বেড়াতে আসে বনে। সারা দিন জঙ্গলের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। ঝরনার ধারে বসে সবাই মিলে লাঞ্চ খায়; কারণে-অকারণে হাসাহাসি করে। তবে সবাই নয়। এই যেমন শিল্পীরা। তারা বনে ঢোকার পর একা হয়ে যায়, খুঁজে নেয় নিভৃত একটা কোণ, তারপর ফুলশোভিত বৃক্ষের সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করে ক্যানভাসের ওপর
এল-আর্ডেন গোটা ফ্রান্সে বিখ্যাত বাগিচা। প্রকৃতি যেন বিশেষ যত্নে সাজিয়েছে উদ্যানটিকে। সুবিন্যস্ত তরুবীথির সুদীর্ঘ সারি দেখতে বড়ই ভালো লাগে। চারদিকে, গাছে গাছে, ফুলের যেন মেলা বসে যায়। প্রতিটি সেডার আর পাইনগাছকে জড়িয়ে রেখেছে পুষ্পলতা। পাতার ফাঁকে ফাঁকে বন বিহঙ্গের শ্রুতিমধুর কলরব। বাগানের কোথাও এতটুকু জলা নেই। মাটিতে স্যাঁতসেঁতে ভাব নেই। অন্ধকার এখানে ঢুকতে পারে না। খুঁজলেও একটা কাঁটা গাছ পাওয়া যাবে না। যেদিকেই তাকাও, একটানা সৌন্দর্যই শুধু চোখে পড়বে।
তো বসন্তকালে এল-আর্ডেনে ভ্রমণবিলাসী লোকজনের খুব ভিড় লেগে যায়। এত লোক, তাদের চিত্তবিনোদনের আয়োজন তো হওয়া দরকার, তাই না? সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় বিভিন্ন পেশাদার শ্রেণির মানুষ। তারা সবার আগে এসে বাগানে তাঁবু ফেলে। বনভোজনে যারা আসে তাদের জাদু, ভেলকি, দড়ির নাচ, পোষা জানোয়ারের খেলা ইত্যাদি দেখিয়ে দুই পয়সা আয় করে। বাগিচার ভেতর খানিক পরপর ছোটখাটো ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেই ওদের তাঁবু পড়ে। ঢং ঢং, টুংটাং বাজনা বাজিয়ে নিজেদের উপস্থিতি ঘোষণা করে ওরা। গাছপালা দেখে আর পাখির গান শুনে সবাই যখন একঘেয়েমির শিকার, তখন দু-একজন করে এই সব তাঁবুতে ঢুকে পড়ে।
দর্শক কম কি বেশি, তা নিয়ে ওরা মাথা ঘামায় না। দুজন দর্শক পেলেও খেলা দেখাবে। যেকোনো খেলাই হোক, দেখাতে বেশি সময় লাগে না। সময়সীমা মাত্র দশ মিনিট। যে এল, দেখিয়ে দাও তাকে, দাঁড় করিয়ে রাখার কোনো দরকার নেই। খেলা দেখে যে যার পথে চলে যাক, তুমি নতুন দর্শকের জন্য অপেক্ষা করো। খেলা যদি রশির হয়, সেটা আরও শক্ত করে বাঁধো। তোমার পেশা যদি হয় নাচ দেখানো, ঘুঙুরটা এই ফাঁকে বদলে নাও। আর যদি খেলা দেখানোর জন্য বাঘের বাচ্চাটাচ্চা এনে থাকো, পানিটানি খেতে চায় কি না দেখে নাও।
সেদিন এই আর্ডেন বাগিচায় গাড়ি নিয়ে ঢুকেছে উসাসও। বনের ভেতর গাড়ি চালানোর কথা নয়, তাই রাস্তাও নেই। রাস্তা না থাক, ঢুকে পড়েছে উর্সাস। সে আসলে আমেন্তিয়া গ্রামে যাবে। বনটাকে ঘুরে গেলে তিন দিনের পথ আর ভেতর দিয়ে গেলে এক বেলার। উর্সাসের তাড়াও আছে, কালই তার আমেন্তিয়ায় পৌঁছানো চাই। সেখানে এমন একজন রোগী আছে, হাঁটুতে উর্সাসের বাতের তেল মালিশ না করলে এক দিনও তার চলে না।
বাগিচায় উসাস ঢুকল দুপুরের দিকে। ঢুকেই থতমত খেয়ে গেল সে। চারদিকে গিজগিজ করছে লোকজন। শিশুরা ছোটাছুটি করে খেলছে। এখানে-সেখানে ঘাসের ওপর বসে মধ্যাহ্নভোজন সারছে কয়েকটা দল। এই ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালালে যদি কেউ আপত্তি করে? না, উসাস কোনো ঝামেলার মধ্যে যাবে না, তার চেয়ে এক কোণে গাড়ি থামিয়ে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। সেই সঙ্গে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়া হয়ে যাবে তার। সন্ধ্যার দিকে খালি হয়ে যাবে উদ্যান, বনটুকু পার হওয়ার সেটাই নিরাপদ সময়।
ফাঁকা মাঠে গাড়ি থামাল উসাস। হোমোকে ছেড়ে দিল, যদি কোনো শিকার পায় ধরে খাক। চুপ করে বসে থাকা স্বভাব নয় উর্সাসের, গাড়ির ভেতর ওষুধ তৈরি করতে বসল সে। এটা জ্বাল দিল, ওটা বাটল, পানি মেশাল, ছাঁকল, বোতল থেকে বোতলে ঢালাঢালি করল। দেখতে দেখতে গাড়ির চারপাশে লোকজনের ভিড় জমে গেল। সবার চোখে কৌতূহল। দেখে খুব মজা পাচ্ছে।
বাগিচায় যারা এসেছে, তারা বেশির ভাগই টগবগে তরুণ-তরুণী। বাত বা মাথাঘোরার ব্যারাম এদের না থাকারই কথা। থাকলেও বন্ধুবান্ধবের সামনে তা কেউ স্বীকার করবে না। উসাস ধরেই নিয়েছে, এরা তার ওষুধের ক্রেতা নয়। তবু সময় তো কাটাতে হবে। তা ছাড়া গাড়ির ভেতর বসে তাকে কাজ করতে দেখলে লোকজন জানতে পারবে সে ওষুধ বানিয়ে বিক্রি করে, তাতে তার প্রচারও হবে। সে একজন ব্যবসায়ী, বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব বোঝে। এখানে বসে ওষুধ তৈরি করলে তা বেশ ভালো বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজে দেবে।
ফাঁকা মাঠের এক কোণে একটা তাঁবু পড়েছে। কোমল টুংটাং বাজনা নয়, চারদিক কাঁপানো ঢাক পিটিয়ে প্রচার চালাচ্ছে তাঁবুর মালিক। তাঁবুর ভেতর থেকে একদল দর্শককে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। ছোট্ট দল, মাত্র পাঁচ কি ছয়জন লোক। অবশ্য এই বাগিচার কোনো আসরেই এর চেয়ে বেশি লোক হয় না।
যারা বেরিয়ে এল, তাদের চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছাপ। তাঁবুর ভেতর যেন অষ্টম আশ্চর্য দেখেছে তারা। আবেগে উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রত্যেকেই কোনো-না-
কোনো মন্তব্য করছে।
কেউ বলছে, ‘অদ্ভুত!’
একজন বলল, ‘অবিশ্বাস্য!’
তৃতীয় লোকটা বলল, ‘আজব!’
যারা উর্সাসের ওষুধ তৈরি দেখছিল, তাদের মধ্য থেকে একজন জানতে চাইল, ‘দাঁড়াও, বাপু, কী আজব দেখে এলে বলে যাও!’
‘একটা ছেলে,’ উত্তর দিল একজন। ‘খালি হাসছে। হাসছে তো হাসছেই। কোনো থামাথামি নেই। এমন আজব কাণ্ড বাপের কালেও দেখিনি।
‘সে কি এমনিতেমনি হাসি?’ আরেকজন বলল। ‘সারাক্ষণ বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে আছে। এমন দু’কান বিস্তৃত হাসি, কোনো রকম বিরতি ছাড়াই, আর কেউ হেসেছে কি না আমার জানা নেই। শুধু কি তা-ই? হাসির ফাঁকে ফাঁকে একটা কথাও মুখ থেকে বেরোচ্ছে না। একেবারে খাঁটি নির্বাক হাসি যাকে বলে। এ যে সম্ভব, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না…’
যারা দেখেনি তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, ‘কেন সম্ভব নয়? নির্বাক হাসি এমন আর কী শক্ত? এই দেখো, আমিও পারি…’
লোকটা হাসতে শুরু করল। দাঁতগুলো বেরিয়ে পড়ল, কপাল উঠল কুঁচকে, নাকও শিঙের মতো খাড়া হলো, কিন্তু উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে তার হাসি জনপ্রিয় হলো না। প্রশংসা তো দূরের কথা, সবাই দুয়ো দুয়ো করতে লাগল। তাদের একজন লোকটাকে বলল, ‘কই, দু’কান পর্যন্ত লম্বা হচ্ছে কই? না হে, তোমার এই হাসি সেই হাসি নয়। তুমি বরং তাঁবুতে গিয়ে ভালো করে একবার দেখে এসো। আগে দেখো, তারপর চেষ্টা করো। অনুকরণ করা কি এতই সহজ?’
এই পরামর্শ অনেকেরই মনে ধরল। একজোট হয়ে বেশ কয়েকজন তাঁবুর দিকে এগোল, সব মিলিয়ে দশ-বারো জন তো হবেই। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে, পরের মুখে ঝাল খেয়ে মজা নেই, ঘটনাটা আসলে কী, তা নিজের চোখে দেখাই যুক্তির কথা। চলো যাই, হাসির অফুরন্ত উৎস দেখে আসি। দেখার পর বলা যাবে, এর মধ্যে সত্যি কোনো কৃতিত্ব আছে কি না।
উর্সাস আশা করল, তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসা লোকগুলো এবার তাকে ঘিরে দাঁড়াবে, কৌতূহল নিয়ে দেখবে কীভাবে সে ওষুধ তৈরি করে। কে জানে, কিছু বিক্রি-বাট্টাও হতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো উৎসাহই দেখা গেল না। দল বেঁধে বাগিচার আরেক দিকে চলে যাচ্ছে তারা। এখনো বিস্ময়বোধক শব্দগুলো আওড়াচ্ছে।
‘অদ্ভুত!’
‘আশ্চর্য!’
‘আজব!’
‘কি জানি ভাই, এ কীভাবে সম্ভব! সত্যি, দুনিয়ায় কত কী যে আছে, আমরা তার কটারই বা খবর রাখি, বলো?’
একদল ঢুকল তাঁবুর ভেতর, আরেক দল গাছপালার আড়ালে হারিয়ে গেল। উর্সাসের গাড়ির আশপাশ ফাঁকা হয়ে গেছে, একজনও নেই। মানুষই যখন নেই, প্রচারও বন্ধ করে দিতে হয়। হাত-পা গুটিয়ে নিশ্চল মূর্তির মতো বসে আছে উসাস, মাঠের শেষ মাথায় ফেলা তাঁবুটার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে। হাতে এখনো খল, তবে সেটায় এখন আর কিছু বাটছে না। একা ঘুরতে ঘুরতে বেশ অনেকটা দূরে চলে গেছে হোমো, ডাক দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার কথাও ভাবছে না উসাস। হোমোর গতিবিধির ওপর সাধারণত অত্যন্ত কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখে সে, অথচ আজ তাকে এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন মনে হলো।
বিরতিহীন আকর্ণবিস্তৃত হাসি একদল লোক দেখে এসেছে, এইমাত্র যারা বনের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। ওই একই হাসি আরও একদল দেখছে, মাত্র খানিক আগে একটা করে ফ্রাংক নগদ খসিয়ে তাঁবুর ভেতর ঢুকল যারা। সে হাসির সংজ্ঞা কী? অদ্ভুত, আশ্চর্য, আজব! কেন? না, নির্বাক হাসি। কে হাসছে? একটা ছেলে। অদ্ভুত, আশ্চর্য বা আজব, যা-ই বলা হোক, সে হাসি কি খ্যাক খ্যাক হাসি? না খিলখিল? না। খিক খিক? না, তা-ও নয়। অথচ হাসিটা হাসতে বত্রিশ পাটি দাঁত বেরিয়ে পড়ছে তার। সে হাসি এতই চওড়া যে, ঠোঁটের দুটো কোণ কান ছুঁয়ে ফেলছে। আজব অবশ্যই, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! এরকম নির্বাক চওড়া হাসি দু-চার সেকেন্ডও ধরে রাখা খুব কঠিন, প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এই ছেলে একবারও না থেমে হাসছে তো হাসছেই, হেসেই চলেছে! পাঁচ মিনিট পেরোচ্ছে, দশ মিনিট পেরোচ্ছে, তার হাসি থামছে না, এতটুকু ম্লান হচ্ছে না। এভাবে কেউ অনির্দিষ্টকাল হাসতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যি কঠিন।
না, সত্যি কেউ বিশ্বাস করবে না, যদি একটা রহস্য তার জানা না থাকে। সে রহস্য বা গূঢ়তত্ত্ব ওই লোকগুলো জানে না, এটা পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে। ওই ওরা, এইমাত্র যারা বনের আড়ালে হারিয়ে গেল।
কিন্তু উসাসের রহস্যটা জানা আছে। সে জন্যই ব্যাপারটা তার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে না। সে বরং বিশ্বাস করছে, এ সম্ভব। তবে নিজের চোখে একবার দেখা দরকার না! সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হতো। সন্দেহটা দূর হতো। সত্যি কথাই তো, পরের মুখে ঝাল খেয়ে মজা নেই। কিন্তু নিজের চোখে দেখার উপায়টা কই? গাড়ি ফেলে উসাস কীভাবে যায়! পরিচিত এলাকায়ও এরকম ভুল কখনো করে না সে। আর এ তো জঙ্গল। চারপাশে লোকজন আছে ঠিকই, কিন্তু উসাস তাদের কাউকে চেনে না। চেনা লোকদেরই বিশ্বাস করা যায় না, এদের সে বিশ্বাস করবে কোন বুদ্ধিতে? বনভোজনে আসা সব লোকই ভদ্রবেশী, কিন্তু ভদ্রবেশী যারা সমাজে চলাফেরা করে তাদের মধ্যে প্রকৃত ভদ্রলোক কজন খুঁজে পাওয়া যাবে? সে জানে, ভদ্রবেশীদের মধ্য থেকে প্রকৃত ভদ্রলোক খুঁজতে গেলে চোর বাছতে গা উজাড়ের মতো অবস্থা হবে। এ ব্যাপারে উর্সাসের মতো অভিজ্ঞতা কার আছে?
না, কৌতূহল মেটানোর কোনো উপায়ই নেই। গাড়ি ফেলে কোথাও তার যাওয়া চলে না। বলা যায় না, হয়তো আশপাশের ঝোপের ভেতরই সুযোগের অপেক্ষায় লুকিয়ে বসে আছে কোনো তস্কর, গাড়ি ছেড়ে সে চলে গেলেই ছুটে এসে হানা দেবে তার গোপন ভান্ডারে। এ-ও অসম্ভব নয় যে, সেই সুদূর লোকালয় থেকেই গাড়ির পিছু পিছু এসেছে ঘাগু কোনো চোর।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল উসাস, গাড়ি ফেলে যাবে না সে। হাসির ভেলকি দেখার জন্য যতই ছটফট করুক মন, ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। আশ্চর্য ছেলেটা হাসছে হাসুক। উসাস নিজেকে বঞ্চিত করবে। আবার সে কাজে মন দিল। লতা-পাতা, শিকড়, ফুল, মূল ইত্যাদি বাটছে। সময় কীভাবে বয়ে গেল বলতে পারবে না, একসময় বনভূমির মাথা থেকে নিচের দিকে ঢলে পড়ল সূর্য। ধীরে ধীরে কমে এল আলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অন্ধকার নামছে বাগিচায়। এখানে আর থাকা চলে না। গাড়ি ছাড়ার জন্য তৈরি হলো উসাস।
ভ্রমণবিলাসী লোকজন একে একে লোকালয়ে ফিরে যাচ্ছে। তাঁবুর ভেতর আলো জ্বলতে দেখল উসাস। তার মানে, তাঁবুর মালিক সম্ভবত এই উদ্যানেই আজ রাত কাটাবে। সন্দেহ নেই, আজ তার ভালোই রোজগার হয়েছে। খেলা দেখিয়ে দু’পয়সা আয় করার জন্য এই জায়গা আদর্শ। কাজেই সে ভাবছে, এখানে আরও দু-একদিন খেলা দেখাবে। জানা কথা, আবার কাল সকাল থেকে ভ্রমণবিলাসীরা ভিড় জমাবে এখানে।
রওনা হলো উর্সাস। হোমো গাড়ি টানছে। সারি সারি গাছের ফাঁক গলে জোছনা এসে পড়েছে নিচে। চাঁদের উজ্জ্বল সেই আলোয় বাগিচার সাদাটে মাটি ঝকঝক করছে। উর্সাসের কোনো তাড়া নেই, আস্তে-ধীরে গাড়ি চালালেও সকাল হওয়ার আগেই আমেন্তিয়ায় পৌঁছে যাবে ওরা। শুধু শুধু হোমোকে তাড়া লাগানোর কী দরকার?
হোমোর জন্য মনটা সহানুভূতিতে ছেয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে হোমোর পাশে চলে এল উসাস, দুজন একসঙ্গে হাঁটছে। কিছু না, এ স্রেফ হোমোকে সঙ্গ দেওয়া। বাতাসে গাছের ডালপালা দুলছে। বেশ গরম বাতাস। এরকম আবহাওয়ায় সান্ধ্যভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তা ছাড়া ঘণ্টা দুয়েক এভাবে হাঁটলে উর্সাসের পায়ের বাতটাও বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না।
উর্সাস হাঁটছে আর মাঝেমধ্যে ঘাড় ফিরিয়ে তাঁবুটার দিকে তাকাচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় এখন আর তাঁবুটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে শুধু তাঁবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা আলোর আভা। এভাবে বারবার তাকানোর অন্য কোনো কারণ নেই—ওই তাঁবুর ভেতর তারই মতো দু- চারজন মানুষ আছে, এই অনুভূতিই মনটাকে ওদিকে আকৃষ্ট করছে। চারপাশে কয়েক মাইল বিস্তৃত বনভূমি। ভ্রমণবিলাসীরা সবাই চলে গেছে। সরকারি দু-চারজন বনরক্ষী হয়তো আছে, কিন্তু তাদেরও কোনো নড়াচড়া বা সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিশাল বনে, অন্ধকার রাতে, মানুষ বলতে শুধু উসাস আর তাঁবুর ভেতরের লোকগুলো। ওদের সে চোখে দেখেনি ঠিকই, তবু একটা আকর্ষণ, একটা নাড়ির টান, একধরনের একাত্মতা অনুভব করছে বৈকি! মানুষ যেহেতু, পরস্পরের প্রতি এই টান বা মায়া থাকতে বাধ্য।
কিন্তু এ কী! চমকে উঠল উসাস। অনেকক্ষণ পর পেছন ফিরে তাকিয়েছে সে, আর তাকাতেই একটা রোমহর্ষ দৃশ্য দেখতে পেল। কী সর্বনাশ! আগুন লাগল কীভাবে?
তাঁবুটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। সব মিলিয়ে তিন-চারজন মানুষই ছিল ভেতরে, সবাই চিৎকার করছে। কোনো রকম ইতস্তত বা দ্বিধা নয়, গাড়ি ফেলে ছুটল উসাস। মানুষ বিপদে পড়েছে, কাজেই সাহায্য করতে যেতে হবে। তাই যাচ্ছে উসাস। বিপদগ্রস্ত মানুষকে দেখেও না দেখার ভান করে নির্লিপ্ত থাকতে পারে যারা, বহু বছর সাধনা করেও নিজেকে তাদের স্তরে নামিয়ে আনতে পারেনি উসাস। ‘হোমো, এই জায়গা ছেড়ে নড়বি না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক,’ দ্রুত এই একটামাত্র নির্দেশ দিয়েই ছুটল সে। ঝোপের ভেতর লুকিয়ে বসে থাকা চোর তার গাড়ি লুট করবে, এই ভয়টাকে উসাস পাত্তাই দিল না।
কিন্তু সাহায্য করার সুযোগ পাওয়া গেল না। উসাস তাঁবুর কাছে পৌঁছানোর আগেই সর্বনাশ যা ঘটার ঘটে গেল। পাঁচ মিনিটও লাগেনি, পুড়ে ছাই হয়ে গেল গোটা তাঁবু। ওদের আর সাহায্য দরকার নেই, কাজেই ছুটে গিয়ে লাভ কী! তিন-চারজন লোক ওরা, আগুনে কেউ জখম হয়নি। এখন যা করার, নিজেরাই তা করতে পারবে ওরা।
ধীরে ধীরে ফিরে এল উসাস। তার জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিল। ফিরেই সে দেখল, হোমো গাড়ি নিয়ে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার পাশে একটা মানুষকেও দেখা যাচ্ছে। পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে, উর্সাসের পায়ের আওয়াজ পেয়ে ঘুরল।
লোকটা ঘুরতেই তার মুখ দেখে থমকে গেল উসাস। লোকটার সারা মুখে ছড়িয়ে রয়েছে সেই হাসি। বিরতিহীন একটানা হাসি। ঠোঁটের দুই প্রান্ত দুই কান ছুঁয়েছে। বেরিয়ে পড়েছে বত্রিশ পাটি দাঁত।
কোনো কারণ ছাড়াই উসাসের বুক ধড়াস ধড়াস করতে লাগল।