দুঃসাহসী ফায়সাল
ফায়সালদের গ্রামে অনেকগুলো পাড়া। যেমন খাঁ পাড়া, সেখ পাড়া, মল্লিক পাড়া, কটালি পাড়া, গাড়োয়ান পাড়া, বোস পাড়া ও পাত্র পাড়া। ফায়সাল সেখ পাড়ার ছেলে।
সব পাড়ার সমবয়সী ছেলেদের সঙ্গে খাঁ পাড়ার ছেলেদের খুব সদ্ভাব ও বন্ধুত্ব। খাঁ পাড়ার শেষ প্রান্তে মাঠের ধারে খেলার মাঠ। সেখানে প্রতিদিন বিকেলে সব পাড়ার ছেলেরা ফুটবল, হা-ডুডু, বৌ- বসন্তসহ নানা রকম খেলাধুলা করে। গরিব ঘরের কয়েকজন ছাড়া ওরা সবাই গ্রাম থেকে প্রায় দু’মাইল দূরে হাই স্কুলে পড়ে। তাদের মধ্যে কেউ এইটে, নাইনে ও টেনে পড়ে।
খাঁ পাড়াতে সরকারী প্রাইমারি স্কুল ও কুরআনিয়া মাদ্রাসা আছে। স্কুল ও মাদ্রাসার সামনে অনেক খানি খালি জায়গা। সেখানে দিনের বেলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা করে। আর রাত্রে পাড়ার ছেলেরা বসে গল্প গুজব করে। খাঁ পাড়ার মহিম ধনী ঘরের ছেলে। তাই তাকে সবাই মেনে চলে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর একদিন সব পাড়ার আট দশজন ছেলে গল্প করতে করতে কে কত সাহসী, সে কথা আলাপ করতে লাগল। এক সময় বোষ পাড়ার সমর বলল, আমার বড়দার খুব সাহস। সে গভীর রাতে একা মড়াচির থেকে ঘুরে আসে। তোদের কারো এরকম সাহস আছে?
শেখ পাড়ার ফায়সাল বেশ লম্বা চওড়া। স্বাস্থও খুব ভালো। এখনই তাকে যুবকদের মতো দেখায়। আর সে যে খুব দুরন্ত, তা গ্রামের সবাই জানে। সমরের কথা শুনে বলে উঠল, তোর বড়দা নিশ্চয় অমাবশ্যার রাতে মড়াচিরে ঘুরতে যাই নি। ঐ রাতে গেলে না হয় বুঝতাম তোর বড়দা সত্যিই সাহসী। তা ছাড়া তার বয়স আমাদের থেকে অনেক বেশি। আমাদের মতো বয়সে গেলে তোর বড়দার কত সাহস দেখা যেত।
পাত্র পাড়ার অজিত বলল, ফায়সাল ঠিক কথা বলেছে।
কটালি পাড়ার রহিম বলল, আমার মেজদা ভীষণ সাহসী। সে রাত বারটা একটার সময় করবস্থানের পাশের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন আসে। রহিমের মেজ ভাই কলকতায় ডেলী পেসেঞ্জারী করে। তাই ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়।
গাড়োয়ান পাড়ার রাসেদ কিছু বলতে যাচ্ছিল। তাকে থামিয়ে দিয়ে মহিম বলল, কার বড়দা, কার মেজদা সাহসী, সে কথা আলাপ করে কি হবে? আমাদের মধ্যে কার কত সাহস সেটাই বল।
তার কথা শুনে সবাই চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মহিম আবার বলল, কিরে কেউ কিছু বলছিস না যে? আমাদের মধ্যে কারো তা হলে সাহস নেই?
মল্লিক পাড়ার তৈয়ব বলল, আগে তুই বল, তোর কত সাহস।
মহিম হেসে উঠে বলল, আমি রাতের যে কোনো সময়ে যে কোনো জায়গায় যেতে পারি, ডাব গাছে উঠে ডাব পেড়ে খেতে পারি, তরমুজ বাগান থেকে তরমুজ তুলে আনতে পারি, বিলে গিয়ে মাছ ধরতে পারি। তবে মড়াচিরে বা কবরস্থানে গভীর রাতে যাওয়ার সাহস আমার নেই।
মহিমের কথা শুনে দু’তিনজন ছাড়া সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
দু’তিন জনের মধ্যে মহিমের চাসতো ভাই মসারেফ ছিল। সে বলল, তোরা যে মহিমের কথা শুনে হেসে উঠলি, তোরা কেউ গভীর রাতে একা একা ঘরের বাইরে বেরোতে পারবি? ডাব গাছে উঠে ডাব পাড়তে পারবি? বিল থেকে মাছ ধরে আনতে পারবি?
কেউ কিছু বলার আগে ফায়সাল বলল, আমি পারব। শুধু তাই নয়, রাত বারটা একটার সময় কবরস্থানেও যেতে পারব।
মসারেফ বলল, মুখে অমন কথা সবাই বলতে পারে। কাজ করে দেখালে না হয় বোঝা যেত তোর কত সাহস।
তার কথা শুনে ফায়সাল বলল, দেখতে চাইলে কাজ করেই দেখাব।
সমর বলল, অমাবশ্যার রাতেও যেতে পারবি?
ফায়সাল বলল, হ্যাঁ পারব।
ফায়সালের সঙ্গে মহিমের একটু বেশি মাখামাখি। তাই তার বিপদ হতে পারে ভেবে শঙ্কিত হল। বলল, অমাবশ্যার রাতে যাওয়ার দরকার নেই, অন্য যে কোনো দিন রাত একটার সময় গেলেই চলবে।
কেউ কিছু বলার আগে ফায়সাল দৃঢ়স্বরে বলল, না, অমাবশ্যার রাতে একটার সময়েই যাব।
এবার রহিম বলল, তা হলে পাকা কথা দিলি তো?
ফায়সাল বলল, পাকা কথা আবার কি? যা বললাম তা করেই দেখাব।
অজিত বলল, পরশু দিন অমাবশ্যা। ঐ দিন রাতে খেয়েদেয়ে আমরা এখানে আসব। রাত একটার সময় ফায়সাল কবরস্থানে যাবে।
সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল, তাই হবে।
মসারেফ বলল, ফায়সাল যে কবরস্থানেই যাবে, তা আমরা জানব কেমন করে? অন্য জায়গা থেকে ঘুরে এসেও তো বলতে পারে কবরস্থানে গিয়েছিলাম।
কটালী পাড়ার বসির বলল, সে ব্যবস্থা আমি করব।
মসারেফ বলল, তুই মনে হয় ওর পিছে পিছে গিয়ে দেখবি?
সমর বলল, তা হলে তো ও আর একা গেল কি করে?
রসির বলল, তোরা যা ভাবছিস তা নয়। আমি একটা বাঁশের খুঁটো আর একটা মুগুরু নিয়ে আসব। ফায়সাল ঐ দু’টো নিয়ে গিয়ে কবরস্থানে মুগুরু দিয়ে খুঁটোটা পুঁতে ফিরে এলে আমরা সবাই মিলে গিয়ে খুঁটো কবরস্থানে পুঁতেছে কি না দেখব।
এবার সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, তুই ঠিক বলেছিস।
মহিম ফায়সালকে বলল, কি রে, তুই খুঁটো পুঁতে আসতে পারবি তো?
ফায়সাল বলল, পারব না কেন? এটা তো সহজ কাজ। আমি তো ভেবেছি, ভাঙ্গা কবরের একটা বাঁশ এনে তোদেরকে দেখাব।
তা হলে আজ উঠা যাক বলে মহিম দাঁড়িয়ে উঠে বলল, সবাই মনে করে পরশুদিন রাত এগারটার দিকে এখানে আসবি।
সবাই চলে যাওয়ার পর ঘরে আসার সময় মসারেফকে মহিম বলল, অমাবশ্যার দিন রাত একটার সময় কবরস্থানে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যদি ফায়সালের কোনো কিছু হয়, তা হলে কি হবে? আমার মনে হয় কথাটা ছোট আব্বাকে জানান ভালো।
মসারেফ বলল, ছোট আব্বা শুনলে রেগে যাবে। ফায়সালকে কবরস্থানে যেতে দেবে না।
মহিম বলল, ধর ফায়সাল করবস্থানে গিয়ে কোনো কিছু দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল, তখন তো ও আর ফিরে আসতে পারবে না। আমরা ওর জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করব? বেশি দেরি হলে কি হল না হল দেখার জন্য আমাদেরকে তো সেখানে যেতে হবে? আমাদের সবার সাহসের যে দৌড়? একজন বয়স্ক লোক ছাড়া আমরা কি যেতে পারব? না যাওয়াটা ঠিক হবে?
মসারেফ বলল, কথাটা তুই ঠিক বলেছিস। ছোট আব্বা খুব সাহসী। তাকেই জানাতে হবে।
মহিম বলল, ছোট আব্বা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি বললে না করবে না।
মহিমের ছোট আব্বা ছাত্র জীবনে সংসারের কাজ নিয়ে মেতে থাকত বলে তার দাদাজী বাঁকড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে ক্লাস নাইনে ভর্তি করেন। সেখানেও তেমন পড়াশোনা করত না। যাত্রা, থিয়েটার নিয়ে মেতে থাকত। যাত্রায় একবার টিপু সুলতানের পাঠ ও করেছিল। সেখানে নিয়মিত ব্যায়াম করত। পাঁচ সের করে দশ সের ওজনের দু’টো কাঠের মুগুর ভাঁজত। তার শরীর ছিল বুলেটের মতো। শেষ পর্যন্ত ম্যাট্রিকে ফেল করে ঘরে চলে আসে। আর পড়াশোনা করে নি। চাষবাস করে।
ছোট আব্বা ছয় সাত বছরের বড় হলেও মহিমের সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করে। পরের দিন সকালে ঘটনাটা বলে তাকেও তাদের সঙ্গে থাকতে বলল।
ছোট আব্বা শুনে খুব রাগারাগি করে বলল, এরকম করা তোদের মোটেই উচিত হয় নি। ফায়সাল যদি কবরস্থানে গিয়ে ভয়ে হার্টফেল করে, তা হলে ওর বাপ তোদের সবাইকে দোষী করবে। আর আমি যদি তোদের সঙ্গে থাকি, তা হলে আমাদের ও সেখ পাড়ার মুরুব্বীরা আমাকেও দোষী করবে।
মহিম বলল, আমরা যে সেকথা ভাবিনি তা নয়। তবে ফায়সাল যে ধরনের ছেলে, কোনো কারণে জ্ঞান হারালেও হার্টফেল করবে না।
তারপর অনেক কাকুতি মিনতি করতে ছোট আব্বা রাজি হয়ে বলল, ঠিক আছে, আমি তোদের সঙ্গে থাকব। তবে কথাটা কাউকে বলবি না। আর শোন, আমি তোদের সঙ্গে থাকলেও কিছুটা দূরে থাকব। ফায়সালের ফিরতে যদি সত্যি সত্যি দেরি হয়, তা হলে তোদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করব, এত রাতে তোরা এখানে কি করছিস? তখন তুই যা বলার বলিস।
মহিম চিন্তা করে দেখল, ছোট আব্বা ঠিক কথাই বলেছে। তাই বলল, ঠিক আছে, তুমি যা বললে তাই করো।
কথাটা মহিম এক সময় মসারেফকে বলে অন্য কাউকে জানাতে নিষেধ করে দিল।
আজ অমাবশ্যার রাত। রাতে খাওয়ার পর এগারটার সময় বন্ধুরা সবাই একে একে স্কুলের সামনের মাঠে হাজির হয়ে গল্প করতে লাগল।
অমাবশ্যার কারণে চারপাশ এতই অন্ধকার যে, তিন চার হাত দূরে কি আছে না আছে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। তাদের গল্পের বিসয়বস্তু হল, ফায়সালকে নিয়ে। সে কি কবরস্থানে গিয়ে খুঁটো পুঁতে আসতে পারবে? না কিছুদুর গিয়ে ভয় পেয়ে পালিয়ে আসবে? আর যদি ঘটনাটা মুরুব্বীরা জেনে যায়, তা হলে সবাইকে তাদের কাছে বকুনী খেতে হবে। এইসব কথা বলাবলি করছে আর মহিম মাঝে মাঝে রেডিয়াম ডায়েলের হাত ঘড়ি দেখছে।
বসির একটা বাঁশের খুঁটো ও একটা মুগুর এনেছে। মহিমকে ঘড়ি দেখতে দেখে জিজ্ঞেস করল, কটা বেজেছে রে?
মহিম বলল, সাড়ে বারটা।
বসির বলল, একটা বাজার দরকার নেই, এখনই ফায়সাল যাক।
তার কথা শুনে সবাই বলে উঠল, তাই ফায়সাল যাক।
ফায়সাল যাওয়ার জন্য তৈরি ছিল। খুঁটো আর মুগুর নিয়ে কবরস্থানের দিকে চলে গেল। তার নিজের সাহস ও মনোবলের উপর দৃঢ় আস্থা আছে। সে জানে মনের ভেতর সামান্য ভয়কে প্রশ্রয় দিলে বন্ধুদের সঙ্গে করা চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে পারবে না। যেভাবেই হোক তাকে বিজয়ী হতেই হবে। তাই মনকে সাহস জোগাবার জন্য ভাবতে লাগল, ভূত, পেত বলে আসলে কিছু নেই। এসব মানুষকে ভয় দেখাবার জন্য মানুষই আবিস্কার করেছে। নির্ভয়ে কাজটা করে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসতে হবে। এইসব ভাবতে ভাবতে এক সময় কবরস্থানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর চারপাশে তাকিয়ে অন্ধকারের জন্য কিছু দেখতে না পেয়েও মনকে সাহস দেওয়ার জন্য বলল, কই, দেখছিস তো কেউ কোথাও নেই? নে তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে ফিরে যেতে হবে। ওদের দেখিয়ে দেব ফায়সালের সাহস কত? তারপর কবরস্থানে ঢুকে বসে পড়ে খুঁটোটা মুগুর দিয়ে মাটিতে পুঁতে দিল। কাজটা শেষ করে বিজয়ের আনন্দে উল্লাসিত হয়ে ফায়সাল যেই দাঁড়াতে গেল তখনই অনুভব করল, কেউ যেন মাটির নিচ থেকে ওর পরনের লুঙ্গী টেনে ধরে রেখেছে।
কথাটা মনে হতে ফায়সাল ভীষণ ভয় পেল। তার সমস্ত চিন্তা শক্তি মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে ফেলল। তখন ঘোর অন্ধকারের মধ্যেই দেখতে পেল, দলকে দল মানুষের কঙ্কাল যেন নাচতে নাচতে, হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে আর নানারকম মন্তব্য করছে। কি মন্তব্য করছে বুঝতেও পারছে না। ভয়ে ফায়সালের শরীর থেকে বৃষ্টি ধারার মতো ঘাম ঝরতে লাগল। তবু সাহস সঞ্চয় করে একবার চেষ্টা করল লুঙ্গী ছাড়াবার জন্য; কিন্তু ছাড়াতে পারল না। আরো ভয় পেয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখল, কঙ্কালগুলো যেন ধীরে ধীরে ওর কাছে আরো এগিয়ে এসেছে। বাঁচার জন্য, শেষবারের মতো আর একবার চেষ্টা করল লুঙ্গী ছাড়াবার জন্য; কিন্তু এবারেও কোনো কাজ হল না। মুখ দিয়ে শুধু কোনোরকমে অস্ফুট স্বর বেরিয়ে এল, আল্লাহ তুমি আমাকে বাঁচাও। তারপর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
কবরস্থানটা খাঁ পাড়ার উত্তর পূর্ব দিকে। স্কুলের কাছ থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। এদিকে সবাই উৎকণ্ঠ হয়ে ওর ফেরার অপেক্ষা করতে লাগল। সবার ধারণা ছিল পনের মিনিটের মধ্যে ফায়সাল ফিরে আসবে। কিন্তু যখন আধ ঘন্টা হয়ে গেল অথচ ফায়সাল এল না তখন সবার উৎকণ্ঠ আরো বেড়ে গেল। সবাই ভয় পেয়ে কি করবে না করবে বলাবলি করতে লাগল। শুধু মহিম ও মসারেফ চিন্তা করছে, ছোট আব্বা এখনও আসছে না কেন?
এমন সময় হারিকেন হাতে একজনকে আসতে দেখ মহিম ভাবল, নিশ্চয় ছোট আব্বা। কাছে এলে সবাই সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে ছোট আব্বা বলল, এত রাতে তোরা এখানে কি করছিস?
সবার আগে মহিম এগিয়ে গিয়ে সংক্ষেপে পুরো ঘটনা বলে বলল, ছোট আব্বা, এখন কি করা যায় বল তো?
ঘটনা শুনে ছোট আব্বা খুব রেগে গিয়ে বকাবকি করল। তার কিছুক্ষণ কি যেন চিন্তা করে বলল, তোরা সব আমার সঙ্গে আয়, কবরস্থানে গিয়ে দেখি ফায়সাল আসছে না কেন।
সবাই মিলে এক সঙ্গে ছোট আব্বার পেছন পেছন গিয়ে দেখল, কবরস্থানের একটু ভিতরে ফায়সাল লম্বা হয়ে পড়ে আছে।
ছোট আব্বা তাড়াতাড়ি ওর নাকের কাছে হাত দিয়ে নিশ্বাস পড়ছে বুঝতে পেরে হারিকেনটা একজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফায়সালকে পাঁজা কোলা করে তুলতে গিয়ে দেখল, তোলা যাচ্ছে না। হারিকেনটা কাছে নিয়ে দেখল, ওর পরনের লুঙ্গীর সামনের দিকটা খুঁটোর সঙ্গে মাটিতে গেঁথে আছে। দ্রুত খুঁটোটা তুলে ফেলল। তারপর বলল, তোরাও দু’তিনজন ধর, ওকে তুলে নিয়ে যেতে হবে।
স্কুলের কাছে নিয়ে এসে ফায়সালকে শুইয়ে দিয়ে ছোট আব্বা বলল, লুংগীসহ খুঁটো পুঁতেছে, ও তা বুঝতে পারে নি। চলে আসার সময় টান পড়তে মনে করেছে কোনো মুর্দা ওর লুংগী টেনে ধরেছে। তাই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তারপর মহিম ও মসারেফকে উদ্দেশ্য করে বলল, মসজিদের সিঁড়িতে তিন চারটে বদনা আছে। সে গুলোতে করে পানি এনে মাথায় ঢাল, জ্ঞান ফিরে আসবে।
স্কুলের পিছনে পুকুর। পুকুরের উত্তর পাশে মসজিদ। মহিম ও মসারেফ বদনায় করে পানি ভরে এনে মাথায় ঢালতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে ফায়সাল চোখ মেলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল।
মহিম হারিকেনটা ওর মুখের সামনে এনে বলল, আমরা তোকে করবস্থান থেকে তুলে নিয়ে এসেছি। তুই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলি।
ফায়সাল উঠে বসে সবাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিল।
কয়েক সেকেন্ড পর মহিম ওকে ঘটনাটা বলে বলল, তোর একটু ভুলের কারণে আজ এরকম ঘটনা ঘটে গেল। তবে তুই যে আমাদের চেয়ে সাহসী তা প্রমাণ করেছিস। ঐ রকম ঘটনা ঘটলে আমি তো হার্টফেল করে মরেই যেতাম।
এবার ছোট আব্বা শাসনের স্বরে বলল, তোমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এরকম সাহস কেউ দেখাতে যাবে না। এখন তোমরা যে যার বাড়ি চলে যাও।
অজিত ভয়ার্ত স্বরে বলল, ছোট কাকা, এই ঘটনাটা আমাদের গার্জেনদের বলবেন না। বললে আস্ত রাখবেন না।
ছোট আব্বা বলল, তোমরা যদি প্রতিজ্ঞা কর, ভবিষ্যতে কোনো রকম দুঃসাহসের কাজ করবে না, তা হলে তোমাদের গার্জেনদেরকে বলব না।
সবাই এক সঙ্গে বলল, প্রতিজ্ঞা করছি, ভবিষ্যতে আর কখনও কোনোরকম দুঃসাহসের কাজ করব না।