জানি তুমি আসবে – ৬

সদর হাসপাতাল থেকে হাত প্লাস্টার করে ঘরে ফিরে রাহেলার মুখে শফি ও রবিউল এসে মোবাইল সেট ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে মহসিন ভীষণ রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, শালা হারামীর বাচ্চার এত বড় সাহস থাকলে মোবাইল গাঁড়ে ঢুকিয়ে দিতাম।

রাহেলা বলল, হুট করে তুমি রেগে যাও কেন? এই যে তাকে গালাগালি করলে, এটা কী ঠিক হল?

মহসিন রাগের সঙ্গেই বলল, আমার কথার উপর কথা বলছিস কেন? দেব এক থাপ্পড়।

রাহেলা বলল, থাক, অত আর বাহাদূরী দেখিও না। ডালিয়ার মুখে শুনেছি তোমাদের ছ’জনকে কীভাবে শফি একাই মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলে গেছে। কই, কিছুইতো তার করতে পারলে না।

ছোট বোনের কথা শুনে মহসিন লজ্জা পেয়ে রাগ সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, মোবাইল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বাবা জানে?

হ্যাঁ, জানে, বাবাই তো আপ্যায়ন করিয়ে মোবাইল সেট ফেরৎ দিতে বলে পাশের গ্রামে মিটিং-এ চলে গেল। আমি অবশ্য বাবাকে বলেছিলাম, ছেলেটা মোবাইল সেট নিতে এলে মোবারক চাচাকে দিয়ে তার হাত পা ভেঙ্গে লুলা করে দিতে।

উৎফুল্ল হয়ে উঠে মহসিন বলল, বাহ! তুই তো খুব ভালো সাজেসান দিয়েছিলি, বাবা শুনল না কেন?

তুমি সবকিছুতে তাড়াহুড়ো করো। বাবা কী বলল শোনার আগেই কথা বলছ। তারপর বাবা যা বলেছে বলল।

মহসিন বলল, বাবার প্ল্যানটাও অবশ্য খুব ভালো। এবার বাছাধন বুঝবে কত ধানে কত চাল। সেই সময় যদি আমি মোবারক চাচার সঙ্গে থাকতে পারতাম, তা হলে মনের ঝাল মেটাতে পারতাম।

রাহেলা বলল, তোমার আশা পূরণ হবার নয়। কারণ তা হলে সবাই জেনে যাবে কাজটা বাবাই করিয়েছে।

মহসিন বলল, সেকথা ভেবেই তো আফশোস হচ্ছে।

রাহেলা বলল, আফশোস হলেও কিছু করার নেই। তবে যখন শুনবে মোবারক চাচা মেরে শফির হাত পা ভেঙ্গে লুলা করে দিয়েছে তখন বন্ধুদের নিয়ে ফুর্তি করো।

মহসিন বলল, তাতো করবই। তারপর বলল, হ্যাঁরে, রবিউল ওর সঙ্গে কেন এসেছিল? সে তো তোদের কলেজের প্রফেসর তাই না? প্রথম ঘটনার দিন ডালিয়া রবিউলকে দেখলেও মহসিন রাগের চোটে আশপাশের কাউকেই লক্ষ্য করেনি।

ভাইয়ার কথা শুনে রাহেলা বলল, রবিউল স্যার শফির বন্ধু। আর উনি কলেজের একজন প্রফেসর জানার পর ওনার সম্পর্কে সম্মান দিয়ে কথা বলা তোমার উচিত।

মহসিন রেগে উঠে বলল, তোকে আর মাস্টারী ফলাতে হবে না। যা এখান থেকে।

.

চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের গ্রাম থেকে প্রায় তিন চার মাইল দূরে লাঠিয়াল সর্দার মোবারকের বাড়ি। চেয়ারম্যান অনেকবার তাকে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন। ছেলে ও তার বন্ধুদের পরিণতি ও শফির বাহাদূরী দেখে খুব অপমানিত হয়েছেন। উনি খুব বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লোক। তাই তখন অপমানিত হয়েও শফির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন।

সেই সাথে মনে মনে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। বাজারে ওনার চালের আড়ৎ আছে। শফি চলে যাওয়ার পর আড়তে এসে একজন লোকের দ্বারা মোবারক লাঠিয়ালকে ডেকে পাঠালেন।

প্রায় দু’ঘন্টা পরে মোবারক লেঠেল এসে সালাম বিনিময় করে বলল, কেন ডেকেছেন বলুন সাহেব।

চেয়ারম্যান শফির নাম ঠিকানা একটা কাগজে লিখে রেখেছিলেন। সেটা তার হাতে দিয়ে কী করতে হবে না হবে বললেন। তারপর তাকে দু’হাজার টাকা দিয়ে বললেন, কাজ শেষ করে এসে তিন হাজার নিয়ে যেও। আর শোনো, ছেলেটা সব দিকে তুখোড়। দরকার মনে করলে সঙ্গে দুতিন জনকে নিও। একেবারে জানে মারবে না। হাত পা এমনভাবে ভেঙ্গে দেবে। যেন চলা ফেরা করতে না পারে। যদি লাঠির দ্বারা কাবু করতে না পার তোমার তো লাইসেন্স করা পিস্তল আছে, সেটা দিয়ে এমন সব জায়গায়। গুলি করবে, যেন হাত পা কেটে বাদ দিতে হয়। তবে খুব সাবধান, কেউ যেন জানতে না পারে আমি তোমাকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছি।

চেয়ারম্যান থেমে যেতে মোবারক বলল, ঠিক আছে সাহেব আপনি তো জানেন, মোবারক কোনো ফ্লু রেখে কাজ করে না। ছেলেটা যতই তুখোড় হোক এই মোবারকের কাছে নস্যি। তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেল।

মোবারকের বয়স এখন পঞ্চাশের মতো হলেও শক্তি সামর্থে পাঁচ-দশ জন লেঠেলকে কাবু করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। ফেরার পথে চিন্তা করল, আগে ছেলেটাকে চিনতে হবে। তারপর কাজে নামতে হবে।

চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, সঙ্গে দু’তিনজন লোক নিতে সত্যি কী ছেলেটা খুব তুখোড়? দেখলে বোঝা যাবে কত তুষোড়।

.

একদিন জাকির হোসেন চাচি জমিলা খাতুনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, শফি কী আপনাকে জমি-জায়গার ব্যাপারে কিছু বলেছে?

জমিলা খাতুন বললেন, না কিছু বলেনি। ওকি ওর বাবার জমি-জমা চাষাবাদ করবে কিনা জিজ্ঞেস করেছেন?

না, করিনি।

ওকে জিজ্ঞেস করবেন। যদি নিজে সবকিছু চাষাবাদ করে, তা হলে তো ওকে সব জমি-জায়গা দেখিয়ে দিতে হবে।

এমন সময় শফি এসে সালাম দিয়ে বলল, চাচা, কেমন আছেন? জাকির হোসেন সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ভালো আছি।

জমিলা খাতুন নাতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোর চাচা জানতে এসেছে, তুই তোর বাপের জমি-জমা চাষ করবি কিনা।

শফি চাচার দিকে চেয়ে বলল, না আমি জমি-জমা চাষ করব না। আপনি যেমন করছেন করবেন, তবে ভাগচাষি হিসাবে যা ফসল হবে খরচ। বাদ দিয়ে অর্ধেক ফসল দেবেন। আর মা তার স্বামীর ১/৮ অংশ পাবে। সেটা মাকে দলিল করে দেব। সেই জমির ফসলের ভাগ দিতে হবে না। মা সব ফসল পাবে। বাবার সব জায়গা-জমি আমাকে দেখিয়ে শুনিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। ফসলী জমি ছাড়া বাকি সবকিছু আমি দেখাশোনা করব।

শফি ফিরে আসায় জাকির হোসেন খুশি হননি। ওনার ইচ্ছা ছিল জমিলা খাতুন মারা যাবার পর শফির বাবার সবকিছু এমন কি বাস্তভিটা পর্যন্ত গ্রাস করার। সেই ইচ্ছা পূরণ হবে না ভেবে হতাশ হয়েছেন। তবু মনে করেছিলেন, জমা-জমি ও অন্যান্য সবকিছু দেখাশোনা করে যতটা পুশিয়ে নেয়া যায় সেই ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এখন শফির কথা শুনে সে আশাও তার পূরণ হবে না ভেবে তার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট হলেও তা বাহিরে প্রকাশ না করে বললেন, বেশ তাই হবে।

দেবর পুতের মনের খবর জমিলা খাতুন শফি ফিরে আসার আগে কিছুটা অনুমান করেছিলেন। এখন তার মুখের অবস্থা দেখে সেই অনুমান আরও দৃঢ় হল। নাতির কথা শুনে তাকে বললেন, তুই সবকিছু নিজে চাষবাস করবি না কেন?

শফিও চাচার মনের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে। তাই চালাকি করে বলল, ফিরে আসার সময় ঢাকায় একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য দরখাস্ত করে এসেছি। সেটা যদি হয়ে যায়, তা হলে ঢাকা চলে যাব। তবে প্রতিমাসে মাসে আসব। আর যদি চাকরি না হয়, তা হলে হয়তো নিজের হাতে চাষবাস করব।

জমিলা খাতুন বললেন, তোর চাকরির দরকার কী? তোর বাপের যা। জমি জায়গা আছে, তা দেখাশোনা করলে রাজার হালে থাকবি।

শফি হেসে উঠে বলল, দাদি, আপনি কি জানেন, একটা রাজার কত বিষয় সম্পত্তি থাকে?

তা না জানলেও তোর বাপের যা আছে, সাতপিড়ী বসে খেলেও শেষ হবে না। এই শেষ বয়সে তোকে আমি চাকরি করতে ঢাকায় যেতে দেব না। তুই ঢাকায় গেলে আমাকে দেখাশোনা করবে কে?

আমি কী একেবারে যাব নাকী? বললাম না, প্রতি মাসে আসব। প্রয়োজনে সপ্তাহে সপ্তাহে আসব।

শফি গ্রামে না থেকে ঢাকায় চাকরি করবে শুনে জাকির হোসেন খুশি হয়েছেন। তাই তার কথা শুনে চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ও বোধ হয় এত বছর শহরে ছিল, গ্রামে ওর ভালো লাগছে না। তাই ঢাকায় চাকরি করতে চাচ্ছে। আমার মতে চাকরি করলে বিষয় সম্পত্তি আরও বাড়াতে পারবে। এতদিন আমি আপনার দেখাশোনা করেছি, প্রয়োজনে সারাজীবন করব। তা ছাড়া চাকরি পাওয়ার পর আমরা ওর বিয়ে দেব। ও ঢাকায় চাকরি করলেও বৌ এখানে থেকে আপনার সেবা যত্ন করবে।

চাচার কথা বার্তায় শফিও বুঝতে পেরেছে, তার বাবার সম্পত্তি গ্রাস করতে চেয়েছিলেন। না বোঝার ভান করে বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন। দাদিকে একটু বোঝান তো।

জমিলা খাতুন কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তার আগে শফি আবার বলল, আগে চাকরিটা পাই, তারপর এ ব্যাপারে আলাপ করা যাবে। মাও তখন। থাকবে।

জাকির হোসেন বললেন বেশ, তাই হবে। তারপর এবার আসি বলে চলে গেলেন।

.

চরদৌলতখান গ্রামের মাতব্বর সূরুজ মিয়া স্বনামধন্য লোক। ধর্ম কর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলেন। আচার বিচারের সময় কারও পক্ষপাতিত্ব না করে খাঁটি বিচার করেন। বয়স প্রায় পয়ষট্টীর মতো। গরিবদের প্রতি খুব সদয়। প্রয়োজনে তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। সেজন্য ছোট বড়, ধনী-গরিব সবাই মান্য করে।

দাদির মুখে সেকথা জেনে শফি একদিন ওনার সঙ্গে দেখা করতে গেল। সালাম বিনিময় করে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, দাদু কেমন আছেন?

মাতব্বর আগেই শুনেছেন, মরহুম আমিনুল ইসলামের ছেলে প্রায় বিশ বছর পর ফিরে এসেছে। তাকে দেখেও তার কথা শুনে খুশি হলেন। বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তারপর তাকে বসতে বলে একজন কাজের বুয়াকে ডেকে নাস্তা নিয়ে আসতে বললেন।

শফি বলল, আমি নাস্তা খেয়ে এসেছি, আর খেতে পারব না। দাদির মুখে আপনার কথা শুনে দেখা করতে এলাম।

মাতব্বর বললেন, আরে ভাই, এই বয়সে খাওয়া পেটেও খাওয়া যায়। তা তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? কী করছিলে? কী করে ফিরে এলে বলতো ভাই। তোমার বাপতো তোমাকে খুঁজে খুঁজে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। শেষে হঠাৎ একদিন হার্টফেল করে মারা গেল।

বাবার কথা শুনে শফির চোখে পানি এসে গিয়েছিল। চোখ মুছে বলল, আল্লাহ বাবাকে জান্নাত নবীস করুণ, তাঁর গোরআযাব মাফ করে দিন। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, দাদি ও অনেকেই আমাকে একথা জিজ্ঞেস করেছেন; কাউকেই বলিনি। শুধু বলেছি সেকথা পরে বলব। আপনি মুরুব্বী ও আল্লাহওয়ালা মানুষ, আপনাকে বলতে বাধা নেই। তবে ওয়াদা করতে হবে, যা বলব কাউকেই বলবেন না। বললে আমার ভীষণ ক্ষতি হবে।

মাতব্বর মৃদু হেসে বললেন, কোনো মুসলমান কি আর এক মুসলমানের ক্ষতি করতে পারে? যদি কেউ করে, তা হলে সে প্রকৃত মুসলমান থাকবে না। ঠিক আছে, ওয়াদা করছি, এবার বল। এমন সময় কাজের মেয়ে নাস্তা নিয়ে এলে আবার বললেন, আগে নাস্তা খেয়ে নাও তারপর তোমার কথা শুনব।

নাস্তা খাওয়ার পর শফি বলতে আরম্ভ করল। আপনারা জানেন, আমি নয় দশ বছরের সময় খেলতে খেলতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখনকার কথা তেমন মনে না থাকলেও যতটুকু মনে আছে বলছি-পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে খেলতে হঠাৎ একজন খুব লম্বা চওড়া দাড়ি টুপিওয়ালা লোক এসে আমার নাকে ও মুখে রুমাল চাপা দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিল। আমি চিৎকার করতে চাইলাম; কিন্তু মুখ থেকে শব্দ বের হল না। তারপর আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখলাম পাকা বিল্ডিং এর একটা রুমের খাটে শুয়ে আছি। উঠে বসেছি এমন সময় সেই লম্বা চওড়া লোকটাকে রুমে ঢুকতে দেখে বললাম, আমাকে এখানে এনেছ কেন? আমি ঘরে যাব। লোকটা ইয়া বড় বড় লাল টকটকে চোখ বের করে বলল, এখানে থেকে তুমি লেখাপড়া করবে। লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর ঘরে যেতে পারবে। আমি ঘরে আসার জন্য খুব কান্নাকাটি করতে লোকটা খুব রাগের সঙ্গে বলল, একদম কান্নাকাটি করবে না, যা যা বলব শুনবে। নচেৎ গলাটিপে মেরে ফেলব বলে আমার গলায় হাত দিল। আমি ভয় পেয়ে কান্না থামিয়ে বললাম, না-না আমাকে মেরে ফেলবেন না। আপনার সব কথা শুনব। আমার কথা শুনে লোকটা অনেক সুস্বাদু ফল খাবার খেতে দিল, সেই বিল্ডিংটা ছিল একটা মাদরাসার হোস্টেল। আমি আগেই হাফেজ হয়েছি। তাই আমাকে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। টাইটেল পাশ করার পর ভার্সিটি থেকে আরবি ও ইংরেজীতে মাস্টার্স করি। লাঠিখেলা ও নানারকম অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দেন। শুধু তাই নয় কুংফু ও ক্যারাটেতে পারদর্শী করান। এমন কি জিন হাসিলের আমলও শিক্ষা দেন বলতে গিয়েও বলল না। চুপ করে গেল।

মাতব্বর জিজ্ঞেস করলেন, এমন কি বলে থেমে গেলে কেন? নিশ্চয় আরও কিছু শিক্ষা দিয়েছে?

শফি বলল, মাফ করবেন দাদু বলতে পারব না।

ঠিক আছে, এবার বল ঐ লোকের পরিচয় জানতে পেরেছ কিনা।

অনেকবার জানতে চেয়েছি, বলেননি। শুধু এতটুকু বলেছেন আমি তোমার হিতাকাঙ্খী। ফিরে আসার কিছুদিন আগে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। বললেন, সে সময় আমার একটা ছেলে মারা যায়। তুমি দেখতে সেই ছেলের মতো। তাই তোমাকে নিয়ে এসে মানুষ করলাম। এখন তুমি তোমার মা বাবার কাছে ফিরে যাবে। কয়েক দিন পর এক সকালে নাস্তা খাওয়ার পর কেন কি জানি খুব ঘুম পেতে ঘুমিয়ে পড়লাম। এর আগে কোনো দিন এই সময়ে ঘুম পাইনি। জোহরের আজান শুনে ঘুম ভেঙ্গে যেতে দেখলাম যে জায়গায় খেলতে খেলতে নয় দশ বছরে হারিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে শুয়ে আছি। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে কাপড়ের ধুলো ঝেড়ে চারপাশে তাকিয়ে সবকিছু চিনতে পারলাম। তখন সেই লম্বা চওড়া দাড়ি টুপি ওয়ালা লোকটার কথা ও বিগত বিশ বছরের কথা মনে পড়ল। শুয়ে থাকা জায়গার দিকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়তে দেখলাম বেশ বড় একটা মুখবন্ধ খাম। খামটা নিয়ে খুলে একটা কাগজে লেখা দেখে পড়লাম, তোমাকে একদিন যেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে দিয়ে গেলাম। আল্লাহ তোমাকে দোজাহানে সুখী করুক।

ইতি

তোমার হিতাকাঙ্খী।

খামের ভিতর যে অগুন্তিক টাকা ছিল শফি তা না বলে চুপ করে গেল।

মাতব্বর বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে অনেক আগেই পালিয়ে আসতে পারতে, এলে না কেন?

ওখানে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে এখানকার সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম। আর এখানে ফিরে আসার পর আপনাকে যতটুকু বলেছি, সেগুলো ছাড়া ওখানকার সবকিছু ভুলে গেছি।

মাতব্বর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এরই মধ্যে তোমার সম্পর্কে ভালোমন্দ অনেক কথা আমার কানে এসেছে। তুমি একটু সাবধানে থেক। গ্রামের কোনো ব্যাপারে জড়াবে না।

শফি বলল, আপনার কথা যথাসাধ্য মেনে চলার চেষ্টা করব। তবে অন্যায় কিছু হতে দেখলে প্রতিবাদ করবই। কারণ এটা করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। এটা হাদিসের কথা তাই না দাদু?

মাতব্বর তার সবকিছু শুনে বুঝতে পেরেছেন, কোনো মুসলমান ভালো, জিন ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে মানুষ করেছে। বললেন, হ্যাঁ, এটা হাসিদের কথা। তারপর বললেন, এবার ঘরে যাও, মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যেও।

ইনশাআল্লাহ নিশ্চয় আসব বলে শফি সালাম বিনিময় করে চলে এল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *