৩
চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের বাড়ি চরদৌলতখান থেকে তিন চার কিলোমিটার উত্তরে শিকারমন্ডল গ্রামে। এই গ্রামের রাস্তা দিয়ে শফির নানাবাড়ি নলছটি যেতে হয়। সপ্তাহ খানেক পরে শফি নানাবাড়ি গেল। তাকে দেখে নানা-নানি, মামা মামি এবং তাদের ছেলেমেয়েরা যেমন অবাক হলেন, তেমনি খুশিও হলেন। আদর আপ্যায়নের পর সবাই তার কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর এতদিন কোথায় ছিল এবং কিভাবে ফিরে এল জানতে চাইল।
শফি জানত নানা বাড়িতে এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই কী বলবে আগেই ভেবে রেখেছিল। এখন তাদের কথার উত্তরে বলল, কেমন করে হারিয়ে গিয়ে ছিলাম মনে নেই। যেখানে মানুষ হয়েছি সেখানে থাকার সময় এখানকার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আর কেমন করে ফিরে এলাম তাও জানি না। ফিরে আসার পর ওখানকার সবকিছু ভুলে গেছি। মনে হচ্ছে এত বছর স্বপ্নের মতো কেটেছে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে মানুষ যেমন অনেক কিছু দেখে তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেলে সেসব মনে থাকে না, আমারও ঠিক তেমনি মনে হচ্ছে। সবাই তার কথা বিশ্বাস করলেও তার নানা জহির উদ্দিন বিশ্বাস করেন নি। তাই একসময় গোপনে তাকে বললেন, তুমি ভাই যা কিছু বলেছ, তা সব বানানো। আসল ঘটনা বলতে শুনি।
শফি বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। যা বলেছি সব বানানো। যিনি আমাকে নিয়ে গিয়ে মানুষ করেছেন ফিরে আসার সময় তিনিই আমাকে ওয়াদা করিয়েছেন। আসল ঘটনা কাউকে যেন না বলি। বললে আমার ভীষণ ক্ষতি হবে। তা ছাড়া ওয়াদা ভঙ্গ করাও কঠিন গোনাহ। আর ওয়াদা ভঙ্গকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
চার পাঁচ দিন নানা বাড়িতে থেকে ফেরার সময় শিকারমন্ডল গ্রামের রাস্তায় এসে দেখল, কয়েকটা যুবক ছেলের সঙ্গে চেয়ারম্যানের ছেলে মহসিন কথা বলছে। তখন তার সাথে কয়েকদিন আগে চরদৌলতখান গ্রামের রাস্তায় গোলমাল হওয়ার ঘটনা মনে পড়ল।
সেদিন মহসিন ফুপাত বোন ডালিয়ার সামনে শফির কাছে হেরে গিয়ে খুব অপমানিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল, যেমন করে তোক এর বদলা নেবে। হঠাৎ কয়েকদিন আগে তাকে এই পথ দিয়ে যেতে দেখে কোথায় কাদের বাড়ি যাচ্ছে জানার জন্য রাসেল নামে একটা ছেলেকে তার পিছনে চর লাগিয়েছিল।
রাসেলের নানার বাড়িও নলছটি গ্রামে। সে শফির পিছু নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করতে করতে তার নানার বাড়িতে এল। আলাপ করার সময় শফি কবে ফিরবে জেনে নিল। আজ সকালে ফিরে এসে মহসিনকে সেকথা জানিয়েছিল।
মহসিন চার পাঁচজন বন্ধুকে সেদিনের ঘটনাটা সত্য মিথ্যা জানিয়ে শফিকে শায়েস্তা করার জন্য তাদেরকে নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মহসিনের কথামতো তারা পাঁচটা লাঠি রাস্তার ধারে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে।
কাছে এসে শফি চলন্ত অবস্থায় সবার উদ্দেশ্য সালাম দিল। কেউ সালামের উত্তর দিল না দেখে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, কী ভাই, আপনারা কেউ সালামের উত্তর দিলেন না যে? জানেন না, সালামের উত্তর দেয়া মুসলমানের জন্য ওয়াজিব? না দিলে ওয়াজিব তরকের গুণাহ হবে?
এই কথা বলার পরও যখন কেউ কিছু বলল না তখন মহসিনের দিকে চেয়ে বলল, আপনারা সবাই মুসলমান কিনা জানি না; কিন্তু সেদিন রবিউলের কাছে আপনার পরিচয় পেয়েছি। আপনি মুসলমান হয়েও সালামের উত্তর দিলেন না, এটা কি ঠিক করলেন?
মহসিন তার কথা গ্রাহ্য না করে বন্ধুদের ঈশারা করতেই তারা পাঁচজন পাঁচটা লাঠি নিয়ে শফিকে ঘিরে ফেলল।
শফি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি তো আপনাদের কোনো ক্ষতি করি নি। তবু কেন আমাকে লাঠিপেটা করতে চাচ্ছেন? যদি বলেন সেদিন মহসিন ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম, তা হলে বলব আপনাদের উচিত হবে পুরো ঘটনা বাদি বিবাদীর কাছ থেকে জেনে তারপর কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়া।
মহসিন এতক্ষণ ধৈর্য ধরতে পারলেও আর পারল না। বলল, ঐ শালার কথা কী শুনছিস? মেরে তক্তা বানিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখ।
তার কথা শুনে শফি তাদেরকে দু’হাত তুলে থামতে বলে বলল, আগে মহসিন ভাই ওয়াদা করুক সেদিনের মতো রিভলবার বের করবেন না।
কেউ কিছু বলার আগে মহসিন বলল, ঠিক আছে, তাই হবে।
সবার আগে আমজাদ নামে একটা ছেলে শফির মাথায় লাঠির বাড়ি মারতে গেল।
শফি তার লাঠিটা ধরে কেড়ে নিয়ে তার একটা পায়ে বাড়ি লাগাল।
লাঠির বাড়ি খেয়ে আমজাদের মনে হল, পাটা ভেঙ্গে গেছে। লেংচে লেংচে সরে যেতে যেতে বলল, শালা আমার পা ভেঙ্গে দিয়েছে রে।
আমজাদের অবস্থা দেখে ও তার কথা শুনে বাকি চারজন একসঙ্গে শফিকে আক্রমণ করল।
শফি আমজাদের কেড়ে নেয়া লাঠি দিয়ে প্রথমে তাদের আক্রমণ। ঠেকাল। তারপর একে একে চারজনেরই একটা করে পা লাঠির বাড়ি মেরে ভেঙ্গে দিল।
পাঁচজনের একই অবস্থা দেখে মহসিন রাগের চোটে ওয়াদার কথা ভুলে গেল। তাড়াতাড়ি রিভলবার বের করে শফিকে গুলি করতে গেল।
শফি পাঁচজনের সঙ্গে লড়াই করলেও মহসিনের দিকে লক্ষ্য রেখেছিল। তাই তাকে রিভলবার বের করতে দেখে দ্রুত তার কাছে এসে রিভলবার ধরা হাতে খুব জোরে লাঠির বাড়ি মারল।
ততক্ষণে মহসিন ট্রিগার টিপলেও গুলি শফির গয়ে লাগল না।
তার রিভলবারটা ছিটকে দূরে পড়ে গেল। সে বুঝতে পারল, তার হাত ভেঙ্গে গেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করে হাত ধরে চিৎকার করে বলল, কে কোথায় আছ, তাড়াতাড়ি এসে এই শালা গুন্ডাকে ধরে বেঁধে ফেল। তারপর থানায় ফোন করে দারোগাকে পুলিশ নিয়ে আসতে বল।
গুলির শব্দ পেয়ে আশ পাশের ঘর থেকে অনেক লোকজন ও ছেলেমেয়ে বেরিয়ে আসতে লাগল। মহসিনদের ঘর একটু দূরে হলেও তার বাবাও বেরিয়ে এলেন। ওনার পিছন পিছন ডালিয়াও এল।
সবার দিকে একবার চেয়ে নিয়ে শফি রিভলবারটা কুড়িয়ে মহসিনের দিকে তাক করে বলল, লোকজন কেউ আমার কাছে আসতে সাহস পাবে না। আর দারোদা পুলিশ নিয়ে আসার আগে আমি যদি আপনাকে এবং আপনার বন্ধুদের একটা করে গুলি করি, তা হলে কেমন হয়? তারপর দারোগা সাহেব এসে যখন সারজমিন করে পুরো ঘটনা জানবেন তখন আমাকে নয়, আপনাকে এবং আপনার এই বন্ধুদের এরেস্ট করে থানায় নিয়ে যাবেন। ভাববেন না, দারোগা সাহেবকে অনেক টাকা ঘুষ দিয়ে ঘটনা। উল্টো দিকে নিয়ে যাবেন, তা হলে কেস আরও জটিল হবে। এই সব লোকজন কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষি দেবেন।
শফির কথা শুনে ও তার দিকে রিভলবার তাক করা রয়েছে দেখে মহসিনের মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেল। কোনো কথা বলতে না পেরে ফ্যাল ফ্যাল করে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
তার অবস্থা দেখে শফি মৃদু হেসে বলল, ভয় নেই, গুলি করব না। জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে, তাই ছেড়ে দিলাম। তারপর আকাশের দিকে ফায়ার করে চেম্বার খালি করে রিভলবারটা লোকজনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে মহসিনকে উদ্দেশ্য করে বলল, শুনেছি চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য উচ্চ ডিগ্রী নেয়ার জন্য ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন। আমার মনে হয় সেখানে আজে বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে মানুষ না হয়ে অমানুষ হয়েছেন। তারপর তার বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, মনে হয় আপনারা লেখাপড়া করলেও ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন নি। তাই আসল ঘটনা না জেনে ও ভালোমন্দ বিচার না করে মহসিন ভাইয়ের কথায় আমাকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন। মনে রাখবেন মানুষ যতই উচ্চ ডিগ্রী নিক না কেন, সেই সঙ্গে যদি ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন না করে, তা হলে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে না। যাই হোক, আপনাদেরকে আহত করার জন্য দুঃখিত। তবে একেবারে ভেঙ্গে ফেলার জন্য খুব জোরে আঘাত করিনি। ডাক্তারের কাছে প্লাস্টার করিয়ে নিলে কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবেন। এবার আসি, আল্লাহ হাফেজ বলে শফি হাঁটতে শুরু করল।
সাড়ে ছ’ফুট লম্বা সুন্দর সৌম্য চেহারা ও সু-স্বাস্ত্যের অধিকারী শফির দিকে চেয়ে এতক্ষণ সবাই অবাক হয়ে তার কথা শুনছিল। চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন শফিকে চিনতে পেরেছেন। ছেলে মহসিন ও তার পাঁচজন বন্ধুর সঙ্গে তার লড়াই দেখে খুব অবাক হয়েছেন। লড়াই শেষে তার কথা শুনে মনে মনে তারিফ না করে পারলেন না। তাকে চলে যেতে দেখে বললেন, এই ছেলে দাঁড়াও।
শফি কথা বলার সময় চেয়ারম্যানকে দেখে চিনতে পেরেও না চেনার ভান করেছিল। এখন ওনার গলা শুনে থমকে ঘুরে দাঁড়াল।
চেয়ারম্যান বললেন, আমার কাছে এস।
শফি কাছে এসে সালাম বিনিময় করে বলল, বলুন, কী বলবেন।
কয়েকদিন আগে পথে রবিউলের সঙ্গে তোমাকে দেখেছিলাম। তোমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তোমাকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছিলাম মনে আছে?
জি, আছে।
মনে হয় এখানে কারও বাড়িতে এসেছিলে, অথচ আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে যাচ্ছিলে কেন?
এখানে কারও বাড়িতে আসিনি। নলছটিতে নানার বাড়ি চার-পাঁচ দিন আগে গিয়েছিলাম। আজ ফিরছিলাম। এখানে আপনার বাড়ি জানলে নিশ্চয় দেখা করতম।
এখন চল না, কিছু নাস্তা পানি করে যাবে।
শুকরিয়া। ধৃষ্টতা মাফ করবেন, আজ নয়, অন্য একদিন এসে নাস্তাপানি করব। এবার যাবার অনুমতি দিন।
ঠিক আছে, যাও। একদিন এস কেমন?
জি আসব বলে শফি সালাম বিনিময় করে হাঁটতে শুরু করল।
শফির চলে যাওয়ার দিকে সবাই চেয়ে রইল। রাস্তার বাঁকে আড়াল হয়ে যাবার পর চেয়ারম্যান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ছেলে ও তার বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ঐ ছেলেটার কথাই ঠিক, তোমরা লেখাপড়া করে মানুষ না হয়ে গুডা হয়েছ। তাও ভালো গুণ্ডা হতে পার নি। তা না হলে একটা নিরস্ত্র ছেলে স্বসস্ত্র ছয়জনকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে বিজয়ীর বেশে চলে গেল কী করে? শুধু তাই নয়, সে যে কথাগুলো বলে গেল, সেগুলো খুব মূল্যবান। আশা করি, তার মূল্যবান কথাগুলো মগজে ঢুকিয়ে মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবে। যদি কোনো দিন শুনি, তোমরা ওর পিছনে লেগেছ, তা হলে মনে রেখো, আমিই তোমাদেরকে জেলে পাঠাবার ব্যবস্থা করব। কথা শেষ করে ভাগ্নি ডালিয়াকে নিয়ে বাড়ি যেতে যেতে বললেন, ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, ঐ ছেলেটার সঙ্গে মহসিনের আগে কোনো ঘটনা ঘটেছিল। তুই কি এ ব্যাপারে কিছু জানিস?
লড়াই করার সময় শফির মোবাইল পড়ে গিয়েছিল। ডালিয়া সবার অলক্ষ্যে সেটা কুড়িয়ে নিয়ে পেটকাপড়ে রেখেছিল। মামার কথা শুনে সেটাতে হাত বুলিয়ে দেখে নিয়ে সেদিনের ঘটনা জানিয়ে বলল, আমার ধারণা ছেলেটা যেদিন এখান দিয়ে তার নানার বাড়ি যায়, সেদিন মহসিন ভাই দেখে থাকবে এবং কবে ফিরবে সেখবরও রেখেছিল। তাই আগের ঘটনার অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বন্ধুদের নিয়ে ওতপেতেছিল।
হ্যাঁ মা, তোর কথা শুনে আমারও তাই মনে হচ্ছে। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস, ছেলেটার কী দূরন্ত সাহস? ভীন গায়ে এসে পাঁচ ছয়জন স্বসস্ত্র ছেলের সাথে খালি হাতে কীভাবে লড়াই করে তাদেরকে আহত করল?
মহসিনের সঙ্গে ডালিয়ার বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে। তবু শফি লাঠি মেরে তার হাত ভেঙ্গে দিলেও তার মনে কোনো প্রক্রিয়া হয়নি বরং শফির সাহসিকতা ও লড়াই এর নৈপুণ্য তাকে মুগ্ধ করেছে। মামাকে শফির গুণগান করতে শুনে বলল, হ্যাঁ মামা আপনি ঠিক বলেছেন। প্রথম দিনের ঘটনা দেখে আমারও তাই মনে হয়েছিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটাকে আপনি চেনেন?
হ্যাঁ চিনি। চরদৌলতখান গ্রামের ছেলে। দশ বছর বয়সের সময় হারিয়ে গিয়েছিল। ছেলের শোকে ওর বাবা একবছরের মধ্যে মারা যায়। তিন চার বছর পর ছেলেটার দাদি তার চাচাতো দেবরের ছেলের সঙ্গে ওর মায়ের বিয়ে দেন। কিছুদিন আগে ছেলেটা ফিরে এসেছে।
ডালিয়া অবাক হয়ে বলল, ওমা, তাই না কী? তারপর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা ফিরে এসে মায়ের বিয়ের কথা জেনে কী করল?
তা আমি জানব কী করে? তবে ঐ গ্রামের একজন মেম্বারের কাছে শুনলাম, ছেলেটা ভালো, ধর্ম কর্ম মেনে চলে। তাই হয়তো মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিয়েছে।
ওদের আর্থিক অবস্থা কেমন?
পূর্বপুরুষদের অনেক জমি জায়গা ছিল, প্রতিপত্তিও ছিল। এখন ওয়ারীশ বেশি হয়ে যাওয়ায় আগের মতো অবস্থা নেই। তবে ওর বাবা মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় অন্যদের চেয়ে ভালো। ওর চাচাত চাচা জাকির হোসেনের সঙ্গে ওর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হওয়ার পর সেইই জমি-জায়গা দেখাশোনা করছে। এবার হয়তো ছেলেটাই সেসব দেখাশোনা করবে।
ডালিয়া বলল, যদি উনি না দেন?
চেয়ারম্যান হেসে উঠে বললেন, বাবার সম্পত্তি ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে না কেন? সেই তো এখন সব সম্পত্তির মালিক। এবার একটা কথা বলতো, ঐ ছেলেটার ব্যাপারে তুই এত কিছু জানতে চাচ্ছিস কেন?
প্রথম দিনের ঘটনার সময় শফিকে দেখেও তার কার্যকলাপ ও কথা বার্তায় ডালিয়া মুগ্ধ হয়েছিল। সকালে যখন মহসিনভাই তাকে বলল, ছেলেটা চার পাঁচদিন আগে আমাদের গ্রামের রাস্তা দিয়ে নানার বাড়ি গিয়েছিল আজ ফিরবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কী সেদিনের বদলা নিতে চাও?
মহসিন বলেছিল হ্যাঁ, আজ ব্যাটাকে বুজিয়ে দেব কত ধানে কত চাল। এমন শিক্ষাদেব, আর কখনও আমার দিকে যেন চোখ তুলে চাইতে না পারে।
ডালিয়া আতংকিত হলেও সংযত কণ্ঠে বলেছিল, কাজটা কী ভালো হবে? মামা জানলে তোমাকেই রাগারাগি করবেন।
তা করুক, তুই কিন্তু বাবাকে আগে থেকে কিছু বলবি না। তারপর বলল, একেবারে কী জানে মারব, শুধু পাটায় করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তুই-ই বলনা, সেদিন আমাকে কত বড় অপমান করেছিল।
ডালিয়া বলল, সেদিন আমি দোষ করেছিলাম। তাই উনি আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। তাতে ওনার দোষ কোথায়? বরং তুমি উল্টো ওনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলে। আসলে তুমি নিজের দোষে নিজে অপমানিত হয়েছ। উনি তোমাকে অপমান করেন নি।
মহসিন বিদ্রূপ কণ্ঠে বলল, কি ব্যাপার বলতো? তুই যে দেখছি ঐ শালা ছোটলোকের ফরে কথা বলছিস?
ডালিয়া বিদ্রূপটা গায়ে মাখল না। বলল কারও ফরে কথা বলতে যাব কেন? যা সত্য তাই বললাম। এই যে ওনাকে শালা ছোটলোক বললে, এতে ওনাকে অপমান করার চেয়ে নিজেই অপমানিত হলে বেশী।
মহসিন রেগে উঠে বলল, থাক, তোকে আর উপদেশ দিতে হবে না। শালা কতবড় বীর আজ দেখে ছাড়ব। আবার বলছি, তুই কিন্তু বাবাকে কিছু বলবি না।
ডালিয়া আর কিছু না বলে তার কাছ থেকে চলে এসেছিল। তারপর থেকে মহসিনের দিকে লক্ষ্য রেখেছিল। তাই মারামারির ঘটনাটা পুরো দেখে শফির প্রতি আকর্ষন আরও বেড়ে গেছে।
এখন মামা যখন জিজ্ঞেস করলেন, তুই ঐ ছেলেটার ব্যাপারে এতকিছু জানতে চাচ্ছিস কেন তখন লজ্জায় তার মুখটা রাঙা হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, এমনি মনে হল, তাই জিজ্ঞেস করলাম। তারপর ঘরে এসে গোসল করার কথা বলে ওনার কাছ থেকে চলে গেল।
চেয়ারম্যান প্রশ্নটা করে ভাগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে লজ্জারাঙা মুখ দেখেছেন। তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, ছেলেটা কী ওর মনে দাগ কেটেছে? হঠাৎ স্ত্রীর কথা মনে পড়ল, আমি ডালিয়াকে মহসিনের বৌ করে ঘরে আনব। অবশ্য তিনিও তাই চান। তাই তাদেরকে স্টাডি করে দেখেছেন, তারা একে অপরকে পছন্দ করে কিনা। আর ডালিয়ার মা বাবা তো এ ব্যাপারে এক পায়ে খাড়া।