চার্লসের স্বর্ণসম্পদ – ১

কেরিনিয়া বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সিসদের জাহাজ এলো মাঝ সমুদ্রে। এবার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা তুলল ফ্রান্সিসের ভাইকিং বন্ধুরা। মারিয়া কিছু না বললেও সেও যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চায় এটা ওর মুখ দেখেই ফ্রান্সিস বুঝল।

অগত্যা ফ্রান্সিস সেদিন বিকেলে জাহাজের ভেক-এ উঠে এলো। পেছনে মারিয়া, হ্যারি, বিস্কো। ফ্রান্সিস মুখে কিছু বলে নি। বন্ধুদের দেশে ফেরার জন্য বার বার তাগাদা শুনে গেছে।এখন ফ্রান্সিস জাহাজ চালক ফ্লেজারকেকী নির্দেশ দেয় সবাই সেটা শোনবার জন্যে ভেক-এ এসে জড়ো হল।

ফ্রান্সিস ফ্রেজারের কাছে এলো। বলল–ফ্লেজার, দিক ঠিক করে জাহাজ দেশের দিকে চালাও। কথাটা শুনেই সব ভাইকিং বন্ধুরা চিৎকার করে উঠল–ও-হো-হো। এই ধ্বনি ওদের আনন্দের, প্রতিবাদের আবার সঙ্কল্পেরও ধ্বনি।

একদল উঠে গেল পাল খাটাবার কাঠের ওপরে। দড়িদড়া টেনে–পালগুলো ঠিক করে দিতেই পালগুলো ফুলে উঠল হাওয়ার তোড়ে। জাহাজ চলল দ্রুতগতিতে। দাঁড় বাইবার প্রয়োজন নেই। তবু দাঁড় বাইতে বেশ কয়েকজন ভাইকিং দাঁড়ঘরে নেমে এসে দাঁড়ে হাত লাগাল। জাহাজের গতি আরো বাড়ল। সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে জাহাজ চলল দ্রুতগতিতে। মারিয়ার দিকে তাকিয়ে ফ্রান্সিস হেসে বলল–কি? খুশি তো?

ভীষণ খুশি। মারিয়া প্রায় লাফিয়ে বাচ্চা মেয়ের মতো বলে উঠল।

 ফ্রান্সিসদের জাহাজ চলেছে। নির্মেঘ আকাশ। বাতাসও বেগবান। জাহাজ চলেছে দ্রুতগতিতে।

সেদিন ভোর ভোর সময়ে নজরদার পেড্রোর হাঁক শোনা গেল–ডাঙা-ডাঙা দেখা যাচ্ছে। কয়েকজন ভাইকিং জাহাজের ডেক-এ শুয়ে ছিল। একজন উঠে বসল। গলা চড়িয়ে বলল–পেড্রো ভালো করে দেখো ডাঙা বালির মাটির না পাথরের। পেড্রো চোখ কুঁচকে তাকাল। তখনই সূর্য যেন সমুদ্রের জলের ঢেউয়ের মধ্যে থেকে উঠল। রোদ ছড়াল। পেড্রো তাকিয়ে দেখতে দেখতে গলা চড়িয়ে বলল-পাথুরে ডাঙা। ঢালু হয়ে সমুদ্রের পার পর্যন্ত এসেছে। ডেক-এ বিস্কোও শুয়ে ছিল। ওর ঘুম ভেঙে গেল। বিস্কো উঠে দাঁড়াল। মাস্তুলের ওপরে বসে থাকা পেড্রোকে চেঁচিয়ে বলল–পেড্রো ভালো করে দেখো। আমি ফ্রান্সিসকে ডাকতে যাচ্ছি। পেড্রোও গলা চড়িয়ে বলল কিছুক্ষণের মধ্যে তোমরাও দেখতে পাবে।

বিস্কো চলল ফ্রান্সিসকে ডাকতে। একটু পরেই ফ্রান্সিস আর হ্যারি ডেক-এ উঠে, এলো। পেছনে মারিয়া।ফ্রান্সিস রেলিঙে ভর দিয়ে ডাঙার দিকে তাকিয়ে রইল। সমুদ্রের না বুকে ঘন কুয়াশা। স্পষ্ট কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ফ্রান্সিস অপেক্ষা করতে লাগল কখন কুয়াশা কেটে যায়। ওদের ভাগ্য ভালো। একটু পরেই হঠাৎ সব কুয়াশা কেটে গেল। সকালের রোদে স্পষ্ট দেখা গেল ডাঙা। পাথুরে ডাঙা। ঢালু হয়ে সমুদ্রের জল পর্যন্ত নেমে এসেছে। হ্যারি ফ্রান্সিসকে বলল কী করবে এখন?

-ফ্লেজারের কাছে চলো। ফ্রান্সিস বলল। তিনজনে এবার চলল জাহাজ চালক ফ্লেজারের কাছে। ওরা ফ্লেজারের কাছে এলো। ফ্রান্সিস বলল–ফ্লেজার–ডাঙা দেখা যাচ্ছে। জাহাজকিতীরে ভেড়ানো যাবে?না নৌকো নিয়ে যেতে হবে? ফ্লেজার জাহাজের হুইল ঘোরাতে ঘোরাতে বলল–যতদূর মনে হচ্ছে সমুদ্রের তির পর্যন্ত জাহাজ নিয়ে যাওয়া যাবে।

–তাই নিয়ে চলো। ফ্রান্সিস বলল। মারিয়া একটু ভীত স্বরে বলল—এখানে নামবে নাকি?

–উপায় নেই। কোথায় এলাম এটা না জানতে পারলে কতদূরে কোনোদিকে আমাদের দেশ–সেটা বুঝবো কী করে। ফ্রান্সিস বলল। হ্যারি বলল–রাজকুমারী আপনার কী মনে হয়? কোথায় এলাম আমরা?

 –সঠিক তো বলতে পারবো না। তবে এটুকু বুঝতে পারছি আমরা এখনও ভূমধ্যসাগর থেকে বেরোতে পারিনি। আমরা সাইপ্রাস দ্বীপ থেকে দক্ষিণ মুখে আসছি। যদি আমার হিসেব ঠিক থাকে তবে এখন যে ডাঙা দেখছি সেটা মাল্টা দ্বীপপুঞ্জের কোনো দ্বীপ।

রাজকুমারীর অনুমান সঠিক। হ্যারি বলল।

–সেটা জেনে খোঁজ না করলে জানা যাবে না। ফ্রান্সিস বলল। ফ্লেজারকে বলল ফ্লেজার, জাহাজ যদি তির পর্যন্ত যায় তবে তীরের কাছে যাও।

–হ্যাঁ–জাহাজ তির পর্যন্ত যাবে। ফ্লেজার বলল। তারপর তীরের দিকে জাহাজ চালাল।

দূর থেকে দেখা গেল–একটা ছোটো জাহাজ তীরে দাঁড়ানো আছে। বোঝাই যাচ্ছে এটা জাহাজঘাটা। এবার জাহাজঘাটার পরেই লোকজন যাওয়া আসা করছে এটা দেখা গেল। ফ্রান্সিস এবার সাবধান হল। দিনের বেলা জাহাজ ভেড়ানো ঠিক হবেনা। ফ্রান্সিস বলল-ফ্লেজার-জাহাজঘাটায় এখন এই দিনের বেলা জাহাজ ভেড়ানো ঠিক হবে না। এখানকার খোঁজখবর আমরা রাতে আনতে যাবো। একটু থেমে ফ্রান্সিস বলল ডানদিকের ঐদিকের তীরের কাছেই ঝোঁপজঙ্গল শুরু হয়েছে। আমরা সন্ধেবেলা ঐদিকের তীরেই জাহাজ ভেড়াবো। এখন তো এখানেই নোঙর ফেলো। আমরা এখন আর এগোবো না।

–বেশ। ফ্লেজার বলল। তারপর বিস্কো আর কয়েকজনকে বলল–নোঙর ফেলো। বিস্কোরা নোঙর ফেলতে গেল। ফ্লেজার আর কয়েকজন বন্ধুদের বলল–পাল নামাও। আমরা আর এগোব না। বন্ধুরা চলল পাল নামাতে। নোঙর ফেলা হল। পাল গুটিয়ে ফেলা হল। জাহাজ থামল। ঢেউয়ের ধাক্কায় জাহাজটা দোল খেতে লাগল।

এখন কোনো কাজ নেই। ভাইকিংরা এখানে-ওখানে জড়ো হয়ে গল্পগুজব করতে লাগল।

বিকেলে পশ্চিম আকাশে রঙিন মেঘ দেখা গেল। গভীর কমলা রঙের সূর্য আস্তে আস্তে সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে যেন ডুবে গেল। কিছুক্ষণ পরেই পশ্চিম আকাশের কমলা রং মিলিয়ে গেল। অন্ধকার নামল।

রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে ফ্রান্সিস হ্যারি আর শাঙ্কোকে বলল–রাত গম্ভীর হলে আমরা ডাঙায় নামবো। তৈরি হয়ে এসো। মারিয়া পাশেই দাঁড়িয়েছিল। ও বলে উঠল আমিও যাবো। ফ্রান্সিস মাথা নেড়ে বলল–না। তোমাকে নিয়ে যাবো না।

–আপনাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। বিদেশ বিভুই। আমরা এখানকার কিছুই জানি না। যদি বিপদে পড়ি আপনি থাকলে আমাদের বিপদ বেড়ে যাবে কমবে না। হ্যারি বলল।

-ঠিক আছে ঠিক আছে। মারিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। তারপর চলে গেল।

 তখন রাত গভীর। ফ্রান্সিস হ্যারি আর শাঙ্কোকে নিয়ে জাহাজের ডেকে উঠে এলো। দেখল ফ্রেজার হুইলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।দু’জন ভাইকিং বন্ধু নোঙর তুলল। কয়েকজন ভাইকিং ফ্লেজারের নির্দেশে দাঁড়ঘরে নেমে গেল। দাঁড় বাওয়া চলল। ফ্লেজার হুইল ঘুরিয়ে জাহাজ চালাল তীরের দিকে। জাহাজটা আস্তে আস্তে সমুদ্রতীরে ভিড়ল। কাঠর পাটাতন পাতা হল। যথাসম্ভব নিঃশব্দেই সব কাজ হল।

পাটাতনের ওপর দিয়ে ফ্রান্সিস হ্যারি আর শাঙ্কো হেঁটে তীরে নামল। একটু মাঠমতো। তারপরই জঙ্গল শুরু হয়েছে। ওরা মাঠ পার হয়ে চলল। জোছনা উজ্জ্বল। কাছাকাছি সবই দেখা যাচ্ছে। ওরা একটু পরেই জঙ্গলে ঢুকল। বন খুব ঘন নয়। ছাড়াছাড়া গাছপালা। ঘাস-ঢাকা মাটিতে কোথাও কোথাও ভাঙা জোছনা পড়েছে। ওরা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলল।

বনজঙ্গল শেষ হল। বনজঙ্গল থেকে বেরিয়ে দেখল একটা বড়ো রাস্তা উত্তরমুখো চলে গেছে! দুপাশে পাথর আর কাঠের বাড়ি। বস্তি এলাকা।

ফ্রান্সিরা দাঁড়িয়ে পড়ল। কোনো বাড়িতে ডেকে খোঁজ নেবে ফ্রান্সিস এরকমই ভাবছিল। তখনই হঠাৎ ডানদিকে গলিমতো একটা পথ দিয়ে জনা দশেক সৈন্য এসে হাজির হল। সৈন্যদের বুকে বর্ম মাথায় শিরস্ত্রাণ নেই। ঝোলা হাতা হাঁটুঝুল ঢোলা জামা। কোমরে ফেট্টি তাতে তলোয়ার গোঁজা। প্রয়োজনে এঁদের সঙ্গে লড়া যাবে। একেবারে ফ্রান্সিসদের মুখোমুখি। চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় সবই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দুদলই দাঁড়িয়ে পড়ল। এক মুহূর্ত। সৈন্যরা প্রায় ফ্রান্সিসদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে এগিয়ে এলো। ফ্রান্সিস তলোয়ার ফেলে দিল। পাথুরে মাটিতে শব্দ হল-ঝনাৎ। ফ্রান্সিস মৃদুস্বরে বলল–হ্যারি শাঙ্কো-তলোয়ার ফেলে দাও। ফ্রান্সিসদের অস্ত্র ত্যাগ করতে দেখে সৈন্যদের মধ্যে থেকে থুতনিতে ছুঁচোলো দাড়িওয়ালা একজন সর্দার গোছের সৈন্য এগিয়ে এলো। গ্রীক ভাষায় বলল–তোমরা তো এখানকার লোক নও।

হ্যারি বলল।–না। আমরা ভাইকিং। বিদেশি।

–এখানে কেন এসেছো? লোকটি বলল।

 –দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো আমাদের নেশা। হ্যারি বলল।

সর্দার ওর সঙ্গীদের দিকে তাকাল।

তখন সঙ্গীদের মধ্যে একজন বলল–তোমরা এখানে কী করে এলে?

জাহাজে চড়ে। হ্যারি বলল।

–তোমাদের জাহাজ কোথায়? সর্দার জানতে চাইল।

–ঐ জঙ্গলের পরে সমুদ্রতীরে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। হ্যারি বলল।

 –তোমরা এখন কোত্থেকে আসছো? সর্দার জিজ্ঞেস করল।

সাইপ্রাস দ্বীপ থেকে। হ্যারি বলল।

–মিথ্যে কথা। সদার গলায় জোর দিয়ে বলল।

–ভাইকিংরা মিথ্যে কথা বলে না। হ্যারিও গলা চড়িয়ে বলল।

–তোমরা রাজা তৃতীয় পিটারের গুপ্তচর। খোঁজ নিতে এসেছো আমাদের সৈন্য সংখ্যা কত। কোথায় কোথায় আমাদের ঘাঁটি। লোকটি বলল।

–আমি আবার বলছি। আমরা কোনো রাজার গুপ্তচরনই। আমরা ভাইকিং। জাহাজে চড়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই। সমস্ত পৃথিবীই আমাদের ঘরবাড়ি। হ্যারি বলল।

সর্দার থুতনির ছুঁচোলো দাড়িতে কয়েকবার হাত বুলোলো। তারপর বলল–যাক গে–তোমাদের বন্দি করা হল। কালকে দলপতি যা হুকুম দেবেন তাই পালিত হবে।

কী কথা হল বলো। ফ্রান্সিস বলল।

 হ্যারি আস্তে আস্তে সর্দার যা বলল সেসব জানাল। ফ্রান্সিস বলল হ্যারি উপায় নেই। রাজা তৃতীয় পিটারের নাম আমরা এই প্রথম শুনলাম এসব বলেও রেহাই পাবো না। অগত্যা এখন বন্দিদশা মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। সর্দার বলল– এবার চলো। একজন সৈন্য ফ্রান্সিসদের তলোয়ার নিয়ে চলল।

সর্দার ফ্রান্সিসদের আগে রাখল। পেছনে সৈন্যরা আসতে লাগল। চাঁদের উজ্জ্বল আলোতে দেখা গেল দুপাশে নিঝুম বাড়িঘরদোর। ফ্রান্সিসরা হেঁটে চলল। ফ্রান্সিসের শুধু এক চিন্তা–ওদের যে বন্দিশালায় রাখা হবে সেটা কেমন।

কিছুক্ষণ পরে সর্দার ওদের একটা খোলা মাঠমতো জায়গায় নিয়ে এলো। মাঠটার চারদিক কাটা তারে ঘেরা। প্রবেশদ্বারের সামনে আনা হল। প্রবেশদ্বারও কাটা তার পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি। সবাই প্রবেশদ্বারের সামনে এসে দাঁড়াল। দু-তিনজন পাহারাদার খোলা তলোয়ার হাতে পাহারা দিচ্ছিল।

সর্দার পাহারাদারদের কী বলল। একজন পাহারাদার কোমরের ফেট্টি থেকে চাবির তোড়া বেরকরল। চাঁদের আলোয় তোড়ার ঠিক চাবিটা বের করল।কাঁটাতারের দরজাটা খুলল। ফ্রান্সিসদের ঠেলে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। হ্যারি জানে এ ধরনের ব্যবহার ফ্রান্সিস সহ্য করবে না। তাই গলা চড়িয়ে বলল–ফ্রান্সিস–সব মেনে নাও। মাথা গরম করো না। ফ্রান্সিস কোনো কথা বলল না রুখে দাঁড়াল না। ওরা বন্দি শিবিরে ঢুকল। দেখল–আগেও কিছু বন্দি মাটিতে শুয়ে বসে আছে।

ফ্রান্সিসরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে বসল। ফ্রান্সিস ধুলোটে মাটিতে শুয়ে পড়ল। ফ্রান্সিস মৃদুস্বরে বলল–হ্যারি তুমি ঘুমিয়ে নাও। রাত জাগা তোমার সইবে না।

–কিন্তু তুমি? হ্যারি বলল।

 –বাকি রাতটা জেগেই কাটাবো। ফ্রান্সিস বলল।

 শাঙ্কো বলল–না ফ্রান্সিস–তুমি ঘুমোও আমি জেগে থাকবো। কপালে দুহাত রেখে ফ্রান্সিস চোখ বুজল। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ল না। নানা চিন্তা মাথায়।

ভোর হল। সকালের উজ্জ্বল রোদ ছড়ালা কাঁটাতারে ঘেরা বন্দি শিবিরে। উত্তর দিকের জঙ্গল থেকে বিচিত্র পাখির ডাক শোনা গেল। ফ্রান্সিস হ্যারিকে বলল-যাও তো ঐ বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে এসো। এই দলপতি কেমন লোক। ওদের বন্দি করেছেন কেন-মাল্টা এখান থেকে কতদূর সব খবর নিয়ে এসো।

হ্যারি আগে থেকে বন্দিদের কাছে গেল। গ্রীক ভাষায় ওদের সঙ্গে কথা বলতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে হ্যারি ফিরে এলো। তখনই পাহারাদারেরা সকলের খাবার নিয়ে ঢুকল। বন্দিদের বসতে বলল। সামনে একটা করে বড়ো পাতা দেওয়া হল। খেতে দেওয়া হল গোল কাটা রুটি আর আলু শাক-সজীর ঝোল। খেতে খেতে হ্যারি বলল ওরা প্রায় সবাই দস্যুতার জন্যে এখানে কয়েদ হয়ে আছে। এখনকার শাসক দলপতি নাকি অদ্ভুত লোক। নিজেই টহলদার সৈন্যদের সঙ্গে পাহারা দেয়। দলপতির নাম সিক্কা। মাল্টা এখান থেকে বেশি দূরে নয়। হ্যারি একটু থেমে বলল–সবচেয়ে মারাত্মক খবর হল কয়েকদিন পরেই এখানে ক্রীতদাস কেনাবেচার হাট বসবে। সুস্থ সবল বন্দিদের সেই হাটে বিক্রি করা হবে।

-বলো কি! ক্রীতদাস কেনাবেচা যারা করে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মানবিকতা বোধ থাকেনা। তাদের কাছে ক্রীতদাসরা গরু ছাগলের মতো। বোঝাই যাচ্ছে আমরা ভয়ানক বিপদে পড়েছি। শুধু বন্দির জীবন মেনে নেওয়া যায় কিন্তু ক্রীতদাসের জীবন মেনে নেওয়া অসম্ভব। ফ্রান্সিস বলল।

–কী করবে এখন? হ্যারি বলল।

–পালাবার উপায় বের করতে হবে। এখানকার পাহারার ব্যবস্থা দেখে পালানোর উপায় ভাবতে হবে। ফ্রান্সিস বলল।

একটু বেলা হতে বন্দি শিবিরের দরজার সামনে সৈন্যদের তৎপরতা দেখা গেল। তার মানে ওদের দলনেতা সিক্কা হয়তো আসবে। তারই তোড়জোড় শুরু হল।

কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে গেল। একজন বৃদ্ধকে নিয়ে সিক্কা ঢুকল। এ কি? এ তো সেই থুতনিতে ছুঁচোলো দাড়িওয়ালা লোকটা। সিক্কা বুঝল ফ্রান্সিসরা একটু অবাকই হয়েছে। সিক্কা ফ্রান্সিসদের কাছে এলো। হাসি নয়। যেন দাঁত খিঁচিয়ে বলল–এবার ক্রীতদাসের হাটে আমরা ভালো দর পাবো। এরকম বলিষ্ঠদেহী সাদা মানুষ তো সব সময় পাওয়া যায় না। ফ্রান্সিস বুঝল ওদের ক্রীতদাসের কেনাবেচার হাটে বিক্রি করা হবে। ফ্রান্সিস বসেছিল। এবার দ্রুত উঠে দাঁড়াল। স্পেনীয় ভাষায় বলল–আমাদের কেন ক্রীতদাসের হাটে বিক্রি করা হবে? আমাদের অপরাধ কী?

–বাঃ তোমরা তো রাজা পিটারের গুপ্তচর। তোমাদের মেরেই ফেলতাম কিন্তু তোমাদের বাঁচিয়ে রেখেছি ক্রীতদাসের হাটে বিক্রি করবো বলে। সিক্কাও স্পেনীয় ভাষায় বলল।

–আগে প্রমাণ করুন যে আমরা রাজা পিটারের গুপ্তচর। যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে যে শাস্তি দিতে চান দেবেন। আমরা সেই শাস্তি মেনে নেব। ফ্রান্সিস বলল।

–তোমাদের ব্যাপারে অত খোঁজখবর করা যাবে না। তোমাদের ক্রীতদাস কেনাবেচার হাটে বিক্রি করা হবে। ব্যস। সিক্কা বলল।

ফ্রান্সিস আর কোনো কথা বলল না। মাটিতে বসে পড়ল।

সিক্কা দস্যুদলের কাছে গেল। বলল–তোমাদেরও বিক্রি করা হবে। সব মিলিয়ে এবার আমার ব্যবসা ভালোই হবে। সিক্কা খুক খুক করে হাসল। তারপর দরজার দিকে চলল। যেতে যেতে গলা চড়িয়ে বলল–এদের যত্নটত্ন করবি। ভালো খেতে দিবি। কারো যেন অসুখ না করে। সবারই একেবারে তরতাজা চেহারা চাই। তবে না ক্রীতদাস বেচাকেনার হাটে বেশি দাম পাবো।

সিক্কা বেরিয়ে গেল। দরজা বন্ধ হল।

ফ্রান্সিসদের বন্দিজীবন কাটতে লাগল। ফ্রান্সিস সারাক্ষণ শুয়ে থাকে আর ভাবে কীভাবে এই বন্দি শিবির থেকে পালানো যায়।

দুদিন একইভাবে কাটল।

তৃতীয় দিন। তখন ফ্রান্সিসরা সকালের খাবার খেয়েছে। ফ্রান্সিস সামান্য ঘাসধুলোর ওপর শুয়ে পড়ল। মাথায় এক চিন্তা কী করে মুক্তি পাবো।

একটু পরে হ্যারি বলল–ফ্রান্সিস–ওঠো আমাদের সমস্যা আরো বাড়ল। ফ্রান্সিস চোখের ওপর থেকে দুহাতের কনুই সরিয়ে তাকাল। বলল–ওকথা বলছো কেন?

রাজকুমারী বিস্কো পেড্রো আরো কয়েকজন বন্দি হল। হ্যারি বলল।

বলো কি? ফ্রান্সিস দ্রুত উঠে বসল। দেখল-দরজা খোলা হল। রাজকুমারী বিস্কোরা ঢুকছে। ফ্রান্সিস বলে উঠল–সর্বনাশ। আর পালাবার ভরসা নেই। ক্রীতদাসের হাটে আমরা বিক্রি হয়ে যাবো।

মারিয়ারা ফ্রান্সিসদের কাছে এলো। বসল।

ফ্রান্সিস রেগে বলে উঠল–তোমরা এত অধৈর্য হয়ে পড়লে কেন?মারিয়াবিস্কো– তোমরা কেন এলে?

–তোমাদের কোন খোঁজ নেই দুদিন ধরে। আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি? মারিয়া একটু কান্নাভেজা গলায় বলল।

–আমাদের খুঁজতে এসে লাভের মধ্যে আমাদের সমস্যা বাড়ালে। ফ্রান্সিস বলল।

–আমরা তোমারিয়া বলতে গেল। ফ্রান্সিস ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল– খুব অন্যায় করেছো। জানো দুদিন পরে এখানে ক্রীতদাস কেনাবেচার হাট বসবে। ভেবেছিলাম তার আগেই পালাবো। তোমরা ধরা পড়লে–আর কোনো উপায় নেই। ক্রীতদাসের হাটে বিক্রি হতে হবে।

–এর মধ্যে তো একটা উপায় বের করতে পারবে। মারিয়া বলল।

-ক্রীতদাস কেনাবেচা যারা করে তারা যে কী হৃদয়হীন তা তোমার জানা নেই। এদের কবল থেকে বাঁচতে গেলে হয় মরতে হবে নাতো সারাজীবন পঙ্গু হয়ে থাকতে হবে। ফ্রান্সিস বলল। মারিয়া চুপ করে রইল তারপর কেঁদে ফেলল। বলল–তাহলে এদের আমি বলবো যে আমাকে বিক্রি করুক তোমাদের যেন মুক্তি দেয়।

–এ কথাটা তুমি বলতে পারলে? ফ্রান্সিস আস্তে বলল। মারিয়া কোনো কথা না বলে কাঁদতে লাগল। হ্যারি মারিয়ার কাছে এসে বসল। বলল-রাজকুমারী আপনি কান্নাকাটি করলে আমাদের মন দুর্বল হয়ে যাবে। আপনি শান্ত হোন। ফ্রান্সিস নিশ্চয় পালাবার কোনো উপায় বের করবে। শুধু আপনি ভেঙে পড়বেন না–এই অনুরোধ। মারিয়া চোখ মুছল। আস্তে আস্তে শান্ত হল।

শাঙ্কো এতক্ষণ ফ্রান্সিসদের কথাবার্তা শুনছিল। এবার বলল–ফ্রান্সিস আমি আজ রাতেই পালাবো। ফ্রান্সিস আর হ্যারি চমকে উঠল। ফ্রান্সিস বলল–শাঙ্কো–তুমি কি পাগল হলে। এই কাঁটাতারে ঘেরা বন্দিশিবির থেকে পালানো অসম্ভব বলবো না। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে।

–ফ্রান্সিস, শুধু আমিই পালাবো। বাইরে থেকে তোমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করবো। শাঙ্কো বলল।

–ঠিক আছে। আমাকে বোঝাও কী করে পালাবে? ফ্রান্সিস বলল। শাঙ্কো উঠে দাঁড়াল। বলল–চলো–দেখাচ্ছি। ফ্রান্সিস উঠে দাঁড়াল। দু’জনে চলল সদর দরজার দিকে।

দরজার কাছে এসে শাঙ্কো একজন পাহারাদারকে স্পেনীয় ভাষায় বলল-জল আনন। জল ফুরিয়ে গেছে। পাহারাদারটি বলে উঠল–তা কি করে হয়। সকালেই কাঠের পীপেয় জল ভরা হয়েছে।

–ঠিক আছে। তুমি দেখবে এসো। শাঙ্কো বলল। পাহারাদার দরজার তালা খুলে ঢুকল। চলল খাবার জল আছে কিনা দেখতে। অন্য পাহারাদারটি তলোয়ার উঁচিয়ে দরজা পাহারা দিতে লাগল।

শাঙ্কো মৃদুস্বরে বলল–ফ্রান্সিস দরজার দুপাশে আর ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখো শুধু তারে বাঁধা। ফ্রান্সিস পায়চারি করতে করতে লক্ষ্য করল। শাঙ্কোর কথা ঠিক। ফ্রান্সিস বলল–ঠিক আছে। কিন্তু ওপরে হাত পাঁচেক কাটা-তারে ঘেরা।

–ঐটুকু সাবধানে পেরোতেই হতে হবে। শাঙ্কো বলল।

–তবু তুমি আহত হবেই। ফ্রান্সিস বলল।

–ঠিক আছে। সেসব কাটাটাটা ভেন-এর ওষুধেই সেরে যাবে। কিন্তু পালাবার এই সুযোগ ছাড়া যাবে না। শাঙ্কো বলল। ফ্রান্সিস আর কিছু বলল না। তখনই পাহাদারটি এলো। ভাঙাভাঙা স্পেনীয় ভাষায় বলল–তোমাকে কে বলেছে যে জল নেই। পীপে ভর্তি জল।

–তাহলে কেউ মিথ্যে করে বলেছে। শাঙ্কো বলল।

 ফ্রান্সিস আর শাঙ্কো নিজেদের জায়গায় ফিরে এলো।

ফ্রান্সিস বলল–শাঙ্কো–তুমি দরজার মাথা দিয়ে পালাতে চাও। কিন্তু ঐখানে রাতে মশাল জ্বলে আর পাহারাদারেরা পাহারা দেয়।ওদের নজর এড়িয়ে উঠে পালাতে পারবে?

–ফ্রান্সিস–আকাশের দিকে তাকাও। শাঙ্কো বলল। ফ্রান্সিস কথাটার অর্থ বুঝল না। ওপরে খোলা আকাশের দিকে তাকাল। দেখল আকাশে কালো মেঘের আসা যাওয়া চলছে। ফ্রান্সিস মৃদু হেসে বলল–বৃষ্টি হবে। দরজার মাথায় রাখা মশাল নিভে যাবে। পাহারাদাররাও সৈন্যদের ছাউনিতে চলে যাবে। তখন সাধারণ তারে পা রেখে রেখে ওঠা যাবে। বাকি হাত চার-পাঁচেক কাটা-তার পার হতে হবে। এই বলতে চাও।

শাঙ্কো হেসে বলল–ফ্রান্সিস তোমার বুদ্ধি চিন্তার কাছে আমরা ছেলেমানুষ।

ফ্রান্সিস মাথা নেড়ে বলল–উঁহুশাঙ্কো–তুমি অনেক চিন্তাভাবনার পরিচয় দিয়েছে। এবার কাজটা করা। তার জন্যে এখন প্রয়োজন ঝড় বৃষ্টির। আকাশের মেঘ দেখে যা বুঝতে পারছি সন্ধে নাগাদ ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে। আমরা ভাইকিং। সমুদ্রে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াই। ঝড়বৃষ্টির আগাম সংকেত আমরা সহজেই বুঝি। সাবাস–শাঙ্কো।

ফ্রান্সিসদের অনুমান সত্যি হল। সন্ধের পরেই আকাশ ঘন মেঘে ঢেকে গেল। আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। বিদ্যুতের আঁকাবাঁকা রেখা আকাশটা যেন চিরে ফেলতে লাগল। সেই সঙ্গে বাজ পড়ার প্রচণ্ড শব্দ।

প্রচণ্ড হওয়ার ঝড় ঝাঁপিয়ে পড়ল বন্দিশিবিরের ওপরে। শুরু হল বৃষ্টি। দরজার মাথায় রাখা মশাল নিভে গেল। পাহারাদার দু’জন সৈন্যদের ছাউনিতে চলে গেল। একজন ছাউনির জানালা দিয়ে বন্দিশিবিরের দিকে নজর রাখল।

গভীর অন্ধকারে শুধু বিদ্যুতের আলো ঝলসে উঠছে যখন, তখন যা মুহূর্তের জন্যে দেখা যাচ্ছে।

–ফ্রান্সিস পালাচ্ছি। এই বলে শাঙ্কো দ্রুত বন্দিশিবিরের দরজার কাছে এলো।

সাধারণ তারগুলোয় পা রেখে রেখে হাত দিয়ে ধরে ধরে উঠতে লাগল। এবার কাটাতার পার হওয়া। এটুকু উঠতে কয়েক প্যাঁচ কাঁটাতার হাত দিয়ে ধরতে হল। পায়ে ভর নিতে হলো। তাতেই কাটাতারের খোঁচায় হাত পা জখম হল।

এবার শুধু কাঁটা তার পার হওয়া। শাঙ্কো উঠতে লাগল। তাতে পায়ে গায়ে কাঁটাতারের কাটা ফুটতে লাগল। বুকে গায়েও কাটা ফুটতে লাগল। শাঙ্কোর পোশাক রক্তে ভিজে গেল। কানের কাছে বৃষ্টিঝরার একটানা শব্দ। অন্ধকার চোখের সামনে। শুধু বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠা। ঐ দু এক মুহূর্তে। তারপর নিচ্ছিদ্র অন্ধকার।

শাঙ্কো মুখ বুজে সব যন্ত্রণা সহ্য করতে লাগল। একসময় ওঠা শেষ হল। এবার নামা। শাঙ্কো কাঁটা ছাড়া তার দেখে দেখে নামতে লাগল। তখনও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। পাহারাদার তার সৈন্যদের ছাউনির জানালা দিয়ে দেখল, সঙ্গীকে ডাকাডাকি করল। সঙ্গীকে পেল না। ওদিকে বন্দি পালাচ্ছে। পাহাদারটি খোলা তলোয়ার হাতে ছুটে এলো। শাঙ্কোও লাফ দিয়ে মাটিতে নেমেছে পাহারাদার তখনই ওর সামনে এসে দাঁড়াল। শাঙ্কোর পোশাক ছেঁড়া খোঁড়া।শাঙ্কো সঙ্গে সঙ্গে উঁবুহয়ে পোশাকের মধ্যে হাত বাড়িয়ে ছোরাটা বের করল। পাহারাদার তলোয়ার চালাল। শাঙ্কো ছোরা দিয়ে ঠেকাল। শাঙ্কো ভালো করেই বুঝেছিল শুধু ছোরা দিয়ে পাহারাদারের আক্রমণ ঠেকানো যাবে না। শাঙ্কো দ্রুত একবার চারপাশটা দেখে নিল। বাঁদিকে একটু দূরেই দেখল জঙ্গলমতো। শাঙ্কো সঙ্গে সঙ্গে সেদিকে ছুটল। পাহারাদারও তলোয়ার হাতে ওর পেছনে পেছনে ছুটল।

শাঙ্কো জঙ্গলে ঢুকে পড়েই দিকপাল্টে বাঁদিকে সরে গেল। দ্রুত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো। পাহারাদার তখনও জঙ্গলে শাঙ্কোকে খুঁজছে।

এবার শাঙ্কো আস্তে আস্তে জঙ্গলে ঢুকল। ডালপাতার আড়াল থেকে পাহারাদারটির দিকে এগোতে লাগল। পাহারাদারের হাত কয়েক পেছনে এসে দাঁড়াল। শাঙ্কো একটু মাথা নিচু করে তৈরি হল। বৈদ্যুৎ চমকালো। বিদ্যুতের আলোয় আন্দাজ করে পাহারাদারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হাতের ছোরাটা পাহারাদারের পিঠে ঢুকিয়ে দিল। পাহারাদারটি শাঙ্কোর ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল। কয়েকবার নড়েচড়ে মরে গেল।

শাঙ্কো তখন হাঁ করে হাঁপাচ্ছে। মাটিতে বসে পড়ল। একটুক্ষণ হাঁপালো।

তারপর ছোরাটা কোমরে গুঁজল। পাহারাদারের পোশাক টেনে খুলল। নিজের কাঁটাতারের ঘন্টা লেগে শতচ্ছিন্ন পোশাকটা খুলল। তারপর পাহারাদারের পোশাকটা পরল। পোশাকের মাথার কাছে কাপড়টা বেশি। ওটা দিয়ে মাথা ঢাকা যায়। শাঙ্কো পাহারাদারের তলোয়ারটা নিল।

কোমরের মোটা বেল্টটা লাগাতে লাগাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো।

তখন ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে বিদ্যুৎ চমকানো বন্ধ হয় নি।

অন্ধকারের মধ্যে শাঙ্কো আস্তে আস্তে কাঁটাতারে ঘেরা বন্দিশিবিরের পেছনের দিকে এলো। ফ্রান্সিসরা ঐদিকটাতেই বসেছিল। শাঙ্কো কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে চাপা গলায় ডাকল–ফ্রান্সিস ফ্রান্সিস। ফ্রান্সিস বৃষ্টিভেজা মাটিতেই শুয়ে ছিল। ডাক কানে যেতেই দ্রুত উঠে বসল। পেছনদিকে তাকাল। তখনই বিদ্যুৎ চমকালো। ও শঙ্কোকে দেখতে পেল। তাড়াতাড়ি উঠে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এলো।

শাঙ্কো বলল–আমি পোশাক পাল্টেছি। তলোয়ারও পেয়েছি। এখন কী করবো?

দলপতি সিক্কার–সৈন্যদের মধ্যে মিশে থাকো। পরশু ক্রীতদাস কেনাবেচার হাট বসবে। তখন আমাদের তো বন্দিশিবিরের বাইরে আনা হবে। হাটে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন পালাবার উপায় ভাববো। লড়াই করে নয়। বুদ্ধি খাঁটিয়ে অক্ষত দেহে আমাদের পালাতে হবে। ফ্রান্সিস বলল।

–তাহলে সব ভালো করে দেখতে হবে। একটা উপায় বের করবোই। শাঙ্কো বলল।

কাটাতারে ঘষা খেয়ে তুমি খুব আহত হওনি তো? হ্যারি এগিয়ে এসে বলল।

তা সে হয়েইছি। ও ভেনের ওষুধে সেরে যাবে। এখন কী করে পালাবো সেটা ভাবতে হবে। শাঙ্কো বলল। তারপর ও সৈন্যদের ছাউনির দিকে চলল।