খুনে ক্যানিয়ন – ৯

নয়

অসহ্য গরমে ধুলোর মধ্যে চওড়া একটা সমতল ভূমিতে ঘোড়া দাবড়ে বেড়াচ্ছে বেনন। ওর পাশে চলেছে রিয়ো। প্রতিদিন একই রুটিন। রেঞ্জে ঘুরে বেড়ানো। ভাগ্যের পরিহাস, ভাবল বেনন, সেই সীমান্ত থেকে বেন স্টার্কের সঙ্গে যোগ দিতে এতদূর এসেছে ও, বলা চলে তার দলের লোক হয়ে গেছে, অথচ স্যাডলে চড়ে পাছা ব্যথা করা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রিয়ো সিদ্ধান্ত নিল দক্ষিণের দিকটায় যাওয়া দরকার। নদীটা ওদিকেই। মসৃণ ঢেউ খেলানো টিলাগুলোকে পেছনে ফেলে রুক্ষ বিরান প্রান্তরে চলে এল ওরা। অজস্র ক্যানিয়ন আর র‍্যাভিনের কারণে দুর্গম এক অঞ্চল এটা। অনেকক্ষণ পর উঁচু একটা ব্লাফের ওপর থেমে দাঁড়াল ওরা। নিচে দেখা যাচ্ছে নদীটাকে, ঘোলাটে পানি বুকে নিয়ে ধীরে বয়ে চলেছে নিঃশব্দে।

‘জিলা?’ জিজ্ঞেস করল বেনন।

নড করে ঘোড়া ঘুরিয়ে নিল রিয়ো, একটা অ্যারোয়োর সামনে থমকে দাঁড়াল। খাদটা দেখলে মনে হয় ন্যাড়া পাহাড়ের বুকে ছুরির তীক্ষ্ণ পৌঁচ মেরেছে কেউ। মাঝখান থেকে কেটে নিয়েছে বিরাট একটা অংশ।

রিয়োর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল বেনন। অ্যারোয়ো ধরে হেঁটে এগিয়ে আসছে এক প্রসপেক্টর তার খচ্চর নিয়ে। শামুকের মত ধীর গতিতে আসছে সে। লোকটাকে দূর থেকে দেখে কেমন পরিচিত বলে মনে হলো বেননের।

বেননকে হাতের ইশারা করে হাতে রাশ তুলে নিল রিয়ো, স্পারের খোঁচা দিয়ে পূর্ণ গতিতে ঘোড়া ছোটাল আগন্তুকের দিকে। অ্যারোয়োর ভেতরে ঢুকে লোকটার দু’পাশে ঘোড়া থামাল ওরা, তাকিয়ে থাকল নির্বাক।

বিস্মিত ভাবটা লুকাতে হলো বেননকে। লোকটা আর কেউ নয়, মাইক ফ্ল্যানারি। মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পরনে এখন প্লেইড শার্ট আর কর্ডের প্যান্ট, কিন্তু মাথায় ঠিকই শোভা পাচ্ছে তোবড়ানো স্টেটসন। কোমরে ঝুলছে সিক্সগান।

‘চমৎকার সঙ্গী পাবার জন্যে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতেই হয়,’ মন্তব্য করল ফ্ল্যানারি। রিয়োর ওপর থেকে সরে এসে তার দৃষ্টি স্থির হলো বেননের ওপর। নীল চোখে স্পষ্ট বদমায়েশী। পরিচয়ের কোন চিহ্ন ফুটল না তার চেহারায়, একটা সিগারেট, রোল করে ধরাল ধীরেসুস্থে।

‘আইসিসি রেঞ্জে কী করা হচ্ছে?’ জিজ্ঞেস করল রিয়ো।

বালু আর ক্যাকটাস হাত দিয়ে দেখাল ফ্ল্যানারি। বিস্মিত শোনাল তার কণ্ঠ। ‘রেঞ্জ এটা! জ্যাক র‍্যাবিটও তো না খেয়ে মরবে।’

‘প্রসপেক্টিং করো তুমি?’

‘তা নইলে এই জাহান্নামে আসি?’ খচ্চরটা দেখাল ফ্ল্যানারি। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওটা। ওটার পিঠে কোদাল, শাবল ইত্যাদি বেঁধে রাখা হয়েছে।

স্যাডলে আরাম করে বসল রিয়ো, আইরিশ ম্যানের চোখে চোখ রেখে বলল, ‘নদীর দিকে কোন খনিজ নেই।’

‘তারমানে কি আমি ধরে নেব যে পাবার কোন আশাও নেই?’

‘এদিকে ঘুরঘুর করছ কয়দিন হলো?’

চিন্তিত চেহারায় সিগারেটে টান দিল ফ্ল্যানারি। ‘তা বিশ বছর তো হবেই। কিছু কম বা বেশি হতে পারে।’

‘আস্ত মিথ্যুক তুমি,’ বলেই ঝটকা দিয়ে সিক্সগান বের করল রিয়ো। ‘তোমার কোদাল আর শাবল পুরানো, কিন্তু বুট জুতোগুলো একেবারে নতুন। দেখি তোমার হাত?’ কাছে ঘেঁষল রিয়ো, আইরিশম্যানের ওপর থেকে মুহূর্তের জন্যেও অস্ত্র সরাল না। একটা হাত টেনে নিয়ে পরখ করে দেখল। ‘একেবারে গানম্যানদের মত নরম! জীবনে কোনদিন তুমি শাবল বা কোদাল চালাওনি।’

‘এটা ঠিক যে হাতের যত্ন নিই আমি,’ বলল অবিচলিত আইরিশ লোকটা। ‘এমন কোন আইন আছে যে কাজের সময় গ্লাভ্স্ ব্যবহার করা যাবে না?’ বেল্টের তলা থেকে ভারী দুটো গ্লাভ্স্ বের করে দেখাল সে।

‘বাজি ধরে বলতে পারি, খনিজের বদলে বাউন্টি মানি সংগ্রহ করো তুমি,’ টিটকারির সুরে বলল রিয়ো।

হাসল ফ্ল্যানারি। ‘এখানে এই দুর্গম নির্জন এলাকায় বাউন্টি মানি?’

‘ফালতু কথা বন্ধ করো!’ ধমক দিল রিয়ো। বেননের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একে নিরস্ত্র করো, রন।’

ঘোড়া থেকে নেমে ফ্ল্যানারির সিক্সগানটা নিয়ে নিল বেনন।

‘এবার এগোও আমাদের সঙ্গে, নির্দেশ দিল রিয়ো। অ্যারোয়োর উঁচু দিকটা দেখাল চোখের ইশারায়। ‘হাত যেমন নরম তেমনি তোমার পা-ও যদি নরম হয় তা হলে এক গাদা ফোস্কা উপহার পাবে তুমি।’

প্রায় আর্তনাদ করে উঠল ফ্ল্যানারি, ‘একজন নিরীহ মানুষকে অস্ত্রের মুখে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তোমরা?’

‘আইসিসি,’ সংক্ষেপে উত্তর দিল রিয়ো।

‘আইনের কানে অবশ্যই যাবে যে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

‘আইন!’ টিটকারির সুরে বলল রিয়ো। ‘পেকোসের পশ্চিমে! হাঁটা শুরু করো বকবক থামিয়ে।’

কথা না বাড়িয়ে সামনে বাড়ল ফ্ল্যানারি। তার পেছনে চলল খচ্চরটা। অনুসরণ করল বেনন আর রিয়ো।

দ্রুত কাজ করছে বেননের মাথা। এখন বুঝতে পারছে ওর ধারণা ভুল ছিল, মাইক ফ্ল্যানারি বেন স্টার্কের দলের লোক নয়। রিয়ো যেমন বলছে তাই কি সঠিক? লোকটা বাউন্টি হান্টার? সম্ভবত ভুল ভাবছে রিয়ো। ধারণা করল এলডোরাডোতে রুপোর বাঁট দেখে প্রভাবিত হয়ে প্রসপেক্টর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লোকটা। ভাগ্য তাকে নিয়ে এসেছে খুনে ক্যানিয়নের কাছে। সম্ভবত গর্বের কারণে সে বলতে পারছে না যে প্রসপেক্টিঙে সে একেবারে নতুন। সেকারণেই রিয়োর সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে।

‘হয়তো ভুল লোককে বিনা কারণে ধরে নিয়ে চলেছি আমরা,’ মন্তব্য করল বেনন।

কাঁধ উঁচু করল রিয়ো। ‘হতে পারে। এদিকের পাহাড়ে প্রসপেক্টরদের অভাব নেই। লাশের ওপর মাছির দলের চেয়ে বেশি প্রসপেক্টর এদিকে ঘুরঘুর করে। কিন্তু এর মত নরম হাতওয়ালা নয় তারা কেউ। রেড এর পেট থেকে সমস্ত কথা টেনে বের করতে বেশি সময় নেবে না।’

‘রেড বেশ নিষ্ঠুর বোধহয়?’

‘কতটা তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। রেড যখন একে ছাড়ান দেবে ততক্ষণে এ বারবার ভাববে যে ওকে যদি গুলি করে মেরে ফেলতাম তা হলে এত কষ্ট পেত না।’

চুপ করে গেল বেনন। ভুলতে পারছে না যে সঙ্গী হিসেবে ফ্ল্যানারি মোটেও খারাপ ছিল না। লোকটা জীবন বাঁচিয়েছে ওর। তাছাড়া নির্দোষ কাউকে যারা অত্যাচার করে তাদের দলে থাকাটা সত্যিই কষ্টকর। মানসিক নির্যাতন।

হাঁটছে বলে দেরি হচ্ছে ফ্ল্যানারির। সূর্য ডুবে যাওয়ার কিছু পরে র‍্যাঞ্চে পৌঁছল ওরা। আরেকটা বিস্ময় অপেক্ষা করছিল বেননের জন্যে। বাঙ্ক হাউসের পাশে দাঁড়িয়ে আছে বাক্স আকৃতির একটা ওয়্যাগন। ঝকমকে হলুদ রং ওটার। প্রফেসর রুবেন স্টাসির ওয়্যাগন ওটা।

‘রেডকে খবর দাও,’ বেননকে বলল রিয়ো। ‘আমি একে পাহারা দিয়ে রাখছি।’

স্যাডল থেকে পিছলে নামল বেনন। ফ্ল্যানারির অবস্থা খারাপ। ধুলোময় চেহারা। ক্লান্ত শ্রান্ত। ফোস্কা পড়ে গেছে পায়ে। খচ্চরটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াল সে।

রাগান্বিত একটা চিৎকার শোনা গেল বাঙ্ক হাউসের ভেতর থেকে। পরক্ষণেই ভেসে এল সমস্বরে হাসির আওয়াজ। ভেতরে ঢুকে বেনন দেখল চকচকে দাড়ি নিয়ে টুলে বসা একটা লোকের ওপর ঝুঁকে আছে প্রফেসর, চোখ দুটো ঝিকমিক করছে অনাবিল আনন্দে। লোকটার চেহারায় ব্যথার ছাপ। প্রফেসর সোজা হয়ে দাঁড়াল, হাতের ফরসেপে একটা মাড়ির দাঁত। ‘এই অসুস্থ দাঁত আর কখনও ভদ্রলোককে কষ্ট দেবে না,’ ঘোষণার সুরে বলল সে। ‘তোমরা দেখেছ কী দক্ষতা আর যত্নের সঙ্গে উপড়ে আনা হয়েছে এটা। এক ডলার প্লিজ! পরেরজন বসে যাও টুলে।’

দাঁত হারানো গানহ্যাণ্ড তাড়াহুড়ো করে টুল ছাড়তেই কয়েকজনকে ঠেলে এগিয়ে এসে টুলে বসল রেড কেলটন।

কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে পথ করে নিয়ে তার পাশে চলে এল বেনন। ‘বাইরে এক প্রসপেক্টরকে নিয়ে এসেছি আমরা। নদীর কাছে ঘোরাঘুরি করছিল লোকটা।’

‘আটকে রাখো ওকে।’ কেলটনের মন যে সম্পূর্ণ অন্যদিকে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ‘জ্বালাতন কোরো না, এমনিতেই আমি অনেক ঝামেলায় আছি। মাথা ঝিমঝিম করছে, দাঁত কনকন করছে, হাড় ঝনঝন করছে। খুবই খারাপ অবস্থা।’

‘আচ্ছা।’ প্রফেসরের দিকে ফিরল বেনন। ‘আমাকে চিনতে পারছ?’

একটু অন্যমনস্ক ভাবে বেননকে দেখল রুবেন, দাড়ি হাতাল কিছুক্ষণ, তারপর বলল, ‘চিনেছি। রন জনসন। তা তোমার শরীরের অবস্থা কী, রন? পেট ঠিক আছে তো? দাঁতে ব্যথা নেই? পিঠের যাতনা? মাথা ধরা? প্রফেসর রুবেন সব জানে, চিকিৎসা করে, এবং বিশ্বাস করো, সুস্থ করেও তোলে।’

‘স্যাডলে চেপে চেপে পেছনটা শুধু ব্যথা হয়ে আছে,’ জানাল বেনন। ওষুধের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে এল বাঙ্ক হাউস থেকে। বুঝতে পারছে প্রফেসরের ভাল করে মনেও নেই যে তাকে ও মরুভূমিতে বাঁচিয়েছিল।

‘রেড বলল একে আটকে রাখতে,’ বাইরে এসে রিয়োকে জানাল বেনন। ‘ঠিক আছে,’ ঘোঁৎ করে উঠল রিয়ো, ফ্ল্যানারির কাঁধ আঁকড়ে ধরে বাঙ্ক হাউসের কোনার দিকে ঠেলে নিয়ে চলল। পেছনে পা বাড়িয়ে বেনন দেখল, কামারশালা আর ওয়্যাগন শেডের মাঝখানের ছোট একটা অ্যাডোবি ঘরের দিকে ফ্ল্যানারিকে নিয়ে যাচ্ছে রিয়ো। জোর খাটিয়ে পুরু কাঠের দরজাটা খুলল সে। ভেতর থেকে ভাপসা একটা গন্ধ আসছে। ক্লান্ত আইরিশম্যানকে ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢোকানো হলো। থমকে দাঁড়াল ফ্ল্যানারি, নাক কুঁচকে ঘোষণা দিল, ‘এই দুর্গন্ধযুক্ত ঘরে যেয়ো কুকুরও থাকতে পারবে না।’

অস্ত্র বের করে ওটার নল দিয়ে ফ্ল্যানারির মাথার পাশে জোরে একটা বাড়ি দিল রিয়ো। ধড়াস করে মাটিতে পড়ল ফ্ল্যানারি। সন্তুষ্টির আওয়াজ করল রিয়ো নাক দিয়ে। ‘এবার শালা গন্ধ পাবে না আর।’ দরজাটা বন্ধ করে দিল, তারপর কাঠের আড়াটা আটকে ফিরে তাকাল বেননের দিকে। ‘আমাদের কাজ শেষ, এবার রেডের কাজ শুরু হবে সকালে।’

বাঙ্ক হাউসের দেয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে একটা সিগার ধরাল বেনন। মাইক ফ্ল্যানারির পরিণতি চিন্তা করে ভাল লাগছে না ওর। ওর জীবন বাঁচিয়েছিল ফ্ল্যানারি। হালকা মনের আইরিশ লোকটা ভাগ্য পরীক্ষা করতে চাইবে ঠিক তেমন ধরনেরই মানুষ। ভুল জায়গায় ভুল সময়ে চলে এসেছে সে। সেজন্যে তাকে চরম মাসুল দিতে হবে সেটা হওয়া উচিত নয়। কাল পর্যন্ত ফ্ল্যানারি বন্দি থাকলে তার শেষ আশ্রয় যে বুটহিল হবে তাতে তেমন একটা সন্দেহের অবকাশ নেই। রেড তাকে ছাড়তে পারবে না ফ্ল্যানারি আইন নিয়ে ফিরে আসতে পারে সেকারণে। আইসিসিতে আইনের উপস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। ধরে নেয়া যায় ফ্ল্যানারি মারা গেছে। অথচ লোকটা ভাল। ভরসা করা যায় তার ওপর। ভাল বন্ধু হবার সমস্ত সৎ গুণই আছে ফ্ল্যানারির।

পরিকল্পনা ঠিক করে ফেলল বেনন।

বাঙ্ক হাউসের ভেতর থেকে প্রফেসর রুবেনের কথা শুনতে পাচ্ছে ও। ওষুধ বেচছে সে ক্রুদের কাছে। লোকটার সাহায্য চাইবে কিনা ভাবল বেনন, পরক্ষণে চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করে দিল। রুবেন ওকে ঠিক মত চিনতে পেরেছে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। তাছাড়া পিছলা লোক এই প্রফেসর রুবেন। নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে তেমন কোন কাজে তাকে জড়ানো যাবে না। যাকে চেনেই না তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে যাবে না সে।

রুবেনের দর্শন বুঝতে অসুবিধে হয়নি বেননের। ওষুধ ভরা ওয়্যাগন নিয়ে নানা জায়গায় যায় সে, নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশে, ব্যবসা করে তাদের সঙ্গে। নিশ্চিত নিরপেক্ষতা আর মুখ বন্ধ রেখে নিজের কাজ করে যাওয়ার কারণেই এখানে এই বন্য এলাকায় টিকে আছে সে। বেন স্টার্কের দল যেখানে জড়িত সেখানে প্রফেসর দ্বিগুণ সতর্ক থাকবে। এদিকের আউট-লরা খেপা র‍্যা স্নেকের মতই ছোবল দিতে উদ্যত-বিপজ্জনক। না, ফ্ল্যানারিকে যদি সাহায্য করতেই হয় তা হলে আর কারও সহায়তা নেয়া যাবে না, যা করার করতে হবে ওর নিজেকেই। একা। যা করার করতে হবে দ্রুত। হাতে বেশি সময় নেই।

কূকের ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে পেল বেনন। সাপারের জন্যে বাঙ্ক হাউস থেকে বেরিয়ে আসছে ক্রুরা। তাদের সঙ্গে মিশে গেল বেনন, যদিও দুশ্চিন্তার কারণে খিদে নষ্ট হয়ে গেছে ওর।

ছায়া ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। পাহাড়ের চূড়োগুলো আবছা হয়ে এল, তারপর রাত নামল চারপাশ অন্ধকার করে। উঠানে এখনও রয়েছে প্রফেসরের ওয়্যাগন, কিন্তু তাকে কোথাও দেখল না বেনন। আন্দাজ করল প্যাশিয়োতে আছে সে, রিয়ার নৈকট্যে স্কচ হুইস্কি গিলছে। বাক্যবাগীশ প্রফেসর যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে।

আজ রাতে বাঙ্ক হাউসে কোন হট্টগোল নেই। মেঝেতে পড়ে আছে প্রফেসরের ব্যথা নিরোধক ওষুধের খালি বোতল। আশি ভাগ অ্যালকোহলে তৈরি ওষুধ নামের কড়া মদ গিলে মাতাল হয়ে গেছে গানম্যানরা। স্টোভটাও জ্বলছে না। ঘরের ভেতরটা বেশ শীতল। যে যার বাঙ্কে শুয়ে নাক ডাকাচ্ছে। রেড চিৎ হয়ে পড়ে আছে তার বাঙ্কে, মুখটা হাঁ করা, নাক ডাকছে বেশ জোরেশোরে।

নিজের বাঙ্কে চলে এল বেনন, জুতো খুলে শুয়ে পড়ল। ঠিক করেছে ঘুমাবে না। মাইক ফ্ল্যানারিকে উদ্ধার করতে হবে, তার আগে বিশ্রামের উপায় নেই। মনোযোগ দিয়ে ভারী নিঃশ্বাস প্রশ্বাস শুনছে ও। একজনকে টলতে টলতে বাঙ্ক থেকে উঠতে দেখল। বাইরে গেল লোকটা প্রস্রাব করতে। একটু পরই ফিরে এল, শুয়ে পড়ল। নাক ডাকতে শুরু করল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে।

রাত শেষ হবার আগেই করতে হবে যা করার। কাল বড় বেশি দেরি হয়ে যাবে। নিঃশব্দে বাঙ্ক ছাড়ল বেনন, জুতো পরে নিয়ে গানবেল্টের দিকে হাত বাড়িয়ে থমকে গেল। ওটা নেয়া ঠিক হবে না। এমনিতে কেউ ওকে বাইরে যেতে দেখলেও অজুহাত দেখানো যাবে যে পেট খালি করতে বেরিয়েছে সে। কিন্তু গানবেল্ট নিলে সেটা সন্দেহজনক ঠেকবে।

ঘুমন্ত লোকদের পাশ কাটিয়ে সাবধানে খোলা দরজার কাছে চলে এল বেনন। আধ খাওয়া চাঁদ উঠানে মৃদু আলোআঁধারির খেলায় মেতেছে। হলুদ ওয়্যাগনটার কাছে নড়াচড়া চোখে পড়তে বরফের মত জায়গায় জমে গেল ও। মনোযোগ দিয়ে তাকানোয় দেখতে পেল দুটো মূর্তি। পরস্পরের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে তারা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরল। রিয়াকে চিনতে ভুল হলো না। প্রফেসরের গলা জড়িয়ে ধরেছে মেয়েটা, গভীর আবেগে চুমু বিনিময় করছে দু’জন। মেয়েটা বোধহয় ভাবছে রুবেন স্টাসিকে ব্যবহার করে আইন ডেকে আনতে পারবে র‍্যাঞ্চে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *