খুনে ক্যানিয়ন – ১৪

চোদ্দ

বুঝতে পারছে বেনন, একজন মাত্র লোক থাকতে পারে যে ফ্ল্যানারিকে খুন করলে লাভবান হবে। প্রফেসর রুবেন স্টাসি, ওরফে বেন স্টার্ক। কিন্তু তার তো মারা যাওয়ার কথা।

মনে সন্দেহ আসায় খাড়া পাড় বেয়ে নিচে নামল বেনন। ঝোপ ধরে ধরে নামতে হলো। নদীর পাড়ে পৌঁছে বিধ্বস্ত ওয়্যাগনটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল ও। ভেতরে কিছু নেই খালি কয়েকটা বাক্স ছাড়া। একটা ট্র্যাপ ডোর চোখে পড়ল। ওটা খুলে ভেতরে তাকাল ও। লোহার লাইনিং করা ছোট্ট একটা গোপন কুঠুরি ওটা। এক ফুট গভীর এবং দু’ফুট চওড়া ও দীর্ঘ। কী ঘটেছে এখন পরিষ্কার বুঝতে পারল বেনন। ওয়্যাগনটায় একটা গোপন তলি আছে। ভেতরে লুকিয়ে রাখা সম্ভব মালপত্র। এখানেই ছিল লুটের মাল। বেন স্টার্ক ছাড়া আর কারও জানার কথা নয় কুঠুরির অবস্থান।

মনের চোখে ওয়্যাগনটা কীভাবে শূন্যে লাফ দিল সেটা দেখল বেনন। ফ্ল্যানারি বা ও নিজে স্টার্ককে নদীতে পড়তে দেখেনি। আন্দাজ করে নিয়েছিল ডাকাতটা ভেসে গিয়েছে। ওদের ধারণা ভুল ছিল। ওয়্যাগন যেখান থেকে লাফ দিয়েছে সেখানে উঠে এল বেনন। যা খুঁজছিল তা পেতে দেরি হলো না। ওয়্যাগনের চাকার দাগের পাশেই বালিতে ফুটে আছে দুটো বুটজুতোর চিহ্ন। শেষ মুহূর্তে ওয়্যাগনের উল্টোপাশ দিয়ে লাফ দিয়ে নেমে গেছে স্টার্ক, ঘন ঝোপের ভেতর গিয়ে সেঁধিয়েছে। পরে সময় সুযোগ মত ফ্ল্যানারিকে খতম করে লুটের মাল নিয়ে গেছে সে।

ওয়্যাগনটা আর উদ্ধার করার দরকার নেই। পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে র‍্যাঞ্চারকে বিদায় করে’ দিল বেনন। পাথর জোগাড় করে ফ্ল্যানারিকে কবর দিল ওগুলোর নিচে। এটুকু লোকটার প্রাপ্য।

কাজ শেষ করে ভাবতে শুরু করল এবার কী করবে। প্রফেসর রুবেনের পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে। সে এখন চেষ্টা করবে যত দ্রুত সম্ভব মেক্সিকোর ভেতরে ঢুকে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে অদৃশ্য হয়ে যেতে। দক্ষিণে একশো মাইল দূরে সীমান্ত। রওনা হওয়ার আগে বেন স্টার্ককে ঘোড়া জোগাড় করতে হয়েছে। লুটের মাল তুলতে হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার বেশি এগিয়ে থাকার কথা নয় তার। বড়জোর ছয়-সাত ঘণ্টা এগিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ডান ঘোড়াটায় চেপে দক্ষিণে এগিয়ে চলল বেনন।

দ্বিতীয় দিন দুপুরে টিলার সারি পেছনে ফেলে মরুময় প্রান্তরে প্রবেশ করল ও। চারপাশে চোলা আর মেসকিটের ঝোপ। মাঝে মাঝে প্রিকলি পেয়ার, ওক আর জুনিপার জন্মেছে। সূর্যের খরতাপে দগ্ধ এলাকায় প্রাণের কোন চিহ্ন নেই। একবিন্দু ধুলো উড়ছে না কোথাও যে বেনন ভাববে সামনে কোন অশ্বারোহী আছে।

এক নাগাড়ে এগিয়ে চলেছে ডান ঘোড়াটা, ধুলোয় সাদা হয়ে গেছে। পশ্চিমে দেখা দিল বেশ কয়েকটা পাহাড়ের চুড়ো। দক্ষিণে কালচে দেখাচ্ছে আকাশে মাথা তোলা আলামো হারকোস। দিগন্তের কাছে বাতাসের ঘূর্ণিতে ধুলো উড়ছে, এছাড়া চারপাশে আর কোন নড়াচড়া নেই।

দিন শেষ হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে লালচে হয়ে গেল সূর্যের আলো। প্রথমবারের মত হতাশ বোধ করল বেনন। বোধহয় অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে ওর। আমেরিকার জমিতে আর বেন স্টার্ককে পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে, ঠিক করল ও, মেক্সিকোর ভেতরে গিয়ে হলেও লোকটাকে পাকড়াও করবে যেভাবে হোক।

ডানের গতি বাড়ল আপনাআপনি। সন্ধ্যোর আলোয় সামনে একটা লাভার স্তর দেখতে পেল বেনন। পাহাড়ের গা থেকে একটা ছুরির মত বেরিয়ে এসেছে লাভার স্রোত। বেশ উঁচু।

বাউই ওয়েল্স্ হবে, আন্দাজ করল বেনন। ওয়াটারহোল আছে জায়গাটায়। সীমান্ত এখান থেকে আর মাত্র বিশ মাইল দূরে।

লাল-বেগুনি আলো ছড়িয়ে পশ্চিম দিগন্তে ডুব মারল সূর্য। ডুবে যাওয়ার আগে আকাশের মেঘের গায়ে নানা রং এঁকে দিয়ে গেল। হলুদ, সোনালী, বেগুনি, লাল, সবুজ বর্ণের ছোঁয়া বুকে নিয়ে আস্তে আস্তে রাতের কালোকে বরণ করতে শুরু করল আকাশ। সোজা লাভার স্তরের দিকে এগিয়ে চলেছে ডান। একটু পরই এঁকেবেঁকে এগোতে হলো। চারপাশে পড়ে আছে বড় বড় বোল্ডার।

হঠাৎ রাশ টেনে ঘোড়া থামাল বেনন, পূর্ণ সতর্ক হয়ে উঠেছে। ওর নাকে ভেসে এসেছে কাঠ পোড়ার ধোঁয়ার গন্ধ।

আড়ষ্ট ভাবে ঘোড়া থেকে নামল। একটা পাথরের তলায় ঘোড়ার দড়িটা রেখে সাবধানে সামনে বাড়ল। লাভার উঁচু স্তরের পায়ের কাছে বালিময় একটা সমতল ভূমি। ওখানে থামল, শুয়ে পড়ল বালির ওপর, ক্রল করে এগোল তারপর। বোল্ডারের ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চলেছে ধীর গতিতে। সামনে দেখতে পেল চ্যাপারাল গাছের সারি। তার মানে কাছেই পানির উৎস আছে। গাছগুলোর নিচে একটা ক্যাম্পফায়ার থেকে অলস ভাবে এঁকেবেঁকে ওপরে উঠছে ধোঁয়া, মিশে যাচ্ছে আকাশের শত বর্ণের সঙ্গে।

ছয়টা ঘোড়া একটু পরপর বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখ ডুবিয়ে ঘাস খাচ্ছে ওগুলো। আগুনের ধারে পড়ে আছে বেশ কয়েকটা গানি স্যাক, পেট মোটা স্যাডল প্যাক আর কাইয়াক। বেন স্টার্কের লুটের মাল, আন্দাজ করল বেনন। হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেল ওর।

বেন স্টার্ক কোথায়?

তাকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

সাবধানে জরিপ করল বেনন গোটা এলাকা। সমতলে ধারেকাছে কেউ নেই সেটা নিশ্চিত হয়ে গেল। এবার মুখ তুলে তাকাল ও লাভার স্রোতের দিকে। এক জায়গায় পিরামিডের মত স্তূপ হয়ে আছে লাভা। ডুবন্ত সূর্যের আলোয় জায়গাটা * উদ্ভাসিত। ওখানে নড়াচড়া চোখে পড়ল ওর। রুবেন স্টাসির মার্জিত গলার মৃদু

আওয়াজ কানে এল। একা একা বকবক করার অভ্যেস আছে নাকি লোকটার?

বেননের ইচ্ছে হলো লুটের মাল নিয়ে মরুভূমির দিকে রওনা হয়ে যেতে। জোর করে ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখল ও। এখন চূড়ান্ত মুহূর্ত উপস্থিত। ঝুঁকি নেয়ার সময় নয় এটা। নিশ্চয়ই লুটের মাল নিয়ে সরে পড়ার চেয়ে ভাল কোন পথ বের হবে।

পিছিয়ে এল ও। নারী কণ্ঠের খিলখিল হাসি শুনতে পেল।

.

মরুর ভোরের স্বাভাবিক শীতলতায় আবার ক্যাম্পের কাছে গেল বেনন। একটা বোল্ডারের আড়াল থেকে মুখ বের করতেই দেখতে পেল রুবেন স্টাসি ওরফে বেন স্টার্ককে। লোকটা আয়েস করে ধীরেসুস্থে আগুন জ্বালছে। আগুনটা ভাল করে জ্বলে ওঠার পর একটা কফি পট চাপাল সে ওটার ওপর। বিরাট একটা হাই তুলে কফি গরম হবার অপেক্ষায় থাকল।

সাবধানে সামনে বাড়ল বেনন। বালির প্রান্তরটা পেরিয়ে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে অস্ত্র হাতে এগোল। ওর দিকে পিঠ দিয়ে আছে আউট-ল। চওড়া পিঠে একটা গুলি করে দিলেই খেল খতম হয়ে যায়। কিন্তু তেমন ইচ্ছে নেই বেননের। ওর মনে পড়ে গেছে ক্রিস্টোফার সার্ডিনের কথা। কখনও কখনও মানুষকে না মেরে তার চেয়েও বেশি কষ্ট দেয়া যায়। তাই করতে চলেছে ও।

‘হাত তুলে দাঁড়াও!’ শান্ত গলায় নির্দেশ দিল বেনন স্টার্কের পিঠে সিক্সগান তাক করে। ‘আমার সঙ্গে জেলখানা পর্যন্ত যেতে হবে তোমাকে।’

ঝট করে ঘুরে তাকাল স্টার্ক। ধীরে ধীরে দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। দাড়িভর্তি চেহারায় স্পষ্ট বিস্ময় তার। মুহূর্তের মধ্যে যদিও নিজেকে সামলে নিতে পারল। মাথার ওপর দু’হাত তুলল।

‘রন জনসন! স্বয়ং শয়তানের চেয়েও আঠালো লোক তুমি। এখনও আমার পেছনে লেগে আছো!’

‘আমার উচিত তোমাকে গুলি করে মারা,’ মন্তব্য করল বেনন শুষ্ক কণ্ঠে ‘ফ্ল্যানারিকে তুমি ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছ। আমি ওরকম পারলে তোমাকে গুলি করেই মারতাম। গানবেল্ট খুলে ফেলো। সাবধান!’

‘তর্ক করার অবস্থানে নেই আমি।’ হাসল স্টার্ক। হাত নামাতে শুরু করল গানবেল্ট খোলার জন্যে।

আস্তে আস্তে সামনে বাড়ছে বেনন। মুহূর্তের জন্যেও চোখ সরাচ্ছে না আউট-লর ওপর থেকে। প্রচণ্ড ঝটকা খেয়ে হাত থেকে, সিক্সগানটা ছিটকে বেরিয়ে গেল। ব্যথায় হাত চেপে ধরল বেনন।

চমকে যেতে হলো ওকে একটা ডেরিঞ্জারের গর্জনে। ঘাড় ফেরাল।

‘চমৎকার লক্ষ্যভেদ, ভেরোনা,’ বলে উঠল স্টার্ক।

চ্যাপারালের পেছন থেকে উদ্যত অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এল রিয়া।

একে আশা করেনি বেনন, ভ্রূ কুঁচকে উঠল।

সামনে বেড়ে ওর অস্ত্রটা কুড়িয়ে নিল বেন স্টার্ক। ‘বড় বেশি অসতর্ক তুমি, রন জনসন।’

কে ভাবতে পেরেছিল রিয়া থাকতে পারে বেন স্টার্কের সঙ্গে? মনে মনে নিজেকে গাল দিয়ে ভূত বানিয়ে দিল বেনন।

‘তোমার ভাইকে না ও খুন করেছে?’ জিজ্ঞেস করল ও।

‘আমার ভাই ছিল ওর ডান হাত,’ নিষ্কম্প হাতে অস্ত্র ধরে রেখে জবাব দিল ভেরোনা। ‘ডাকাতি করতে গিয়ে মারা যায় ও।’

বেননকে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে নাস্তা সেরে নিল ভেরোনা আর বেন স্টার্ক। ঘোড়ায় বস্তা আর থলে তুলল স্টার্ক, রওনা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

‘এই ঝামেলাটা আমরা মেটাব কীভাবে?’ সে প্রস্তুত হতে জিজ্ঞেস করল ভেরোনা।

শ্রাগ করল স্টার্ক। ‘জনসন কোন ঝামেলা নয়, ডার্লিং। ও বিপদের কোন কারণ হয়ে দাঁড়াবে না আর। ওকে রেখে চলে যাব আমরা। যদি ভাগ্য ভাল হয় তা হলে মরুভূমি পেরিয়ে প্রাণ নিয়ে সভ্যতা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে ও।’

‘ওকে আমার মেরে ফেলা উচিত ছিল,’ শীতল গলায় বলল ভেরোনা। ‘কাজটা এখন সারব কিনা ভাবছি। ‘

‘না!’ কড়া শোনাল বেন স্টার্কের গলা। ‘রন জনসন একবার আমার জীবন বাঁচিয়েছে। এক ঘণ্টা আগে আমাকে খুন করতে পারত, কিন্তু করেনি। ওকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে যাব আমি। এমনকী ওর ঘোড়াটাও রেখে যাব।’

ঘোড়ায় উঠতে ভেরোনাকে সাহায্য করল সে। মাল টানার ঘোড়াগুলোর দড়ি বাঁধল ‘স্যাডল হর্নের সঙ্গে, তারপর রওনা হয়ে গেল।

পেছন থেকে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার রইল না বেননের। ভেরোনা আর আউট-ল দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাবার পর শ্রাগ করে মার্শালের ডান ঘোড়াটায় চাপল বেনন, ফিরতি পথ ধরল। বুঝতে পারছে লোক হিসেবে ততটা খারাপ নয় বেন স্টার্ক, নইলে ঝুঁকি নিতে গিয়ে খুন হয়ে যেতে হত ওকে।

.

সূর্যের আলোর নিচে দগ্ধ হচ্ছে এল পাসো। ধুলোময় ইণ্ডিয়ান, লাল শার্ট পরা টীমস্টার, দাড়িওয়ালা প্রসপেক্টররা প্লাঙ্ক ওয়াকের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে। ভারী ফ্রেইট ওয়্যাগন ধুলো উড়িয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। রেইলরোডের উঠানে বক্সকারগুলো ধাতব শব্দ তুলছে।

দীর্ঘদেহী এক আগন্তুক একটা ডান ঘোড়ায় চেপে প্রবেশ করল শহরে। মার্শালের অফিসের সামনে ঘোড়া থেকে নেমে ভেতরে ঢুকল সে।

স্পারের আওয়াজে মুখ তুলে তাকাল মার্শাল ওয়েন ডি ওভারহোলসার। লোকটাকে দেখেই চোখ দুটো বিস্ফারিত হলো তার। পুরো এক মিনিট সে তাকিয়ে থাকল সংবিৎ ফিরে পাবার আগে।

‘আমি তোমার ঘোড়াটা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি,’ শান্ত গলায় জানাল বেনন।

‘চোরের বাচ্চা চোর! অ্যাই, ধরো ওকে! কে কোথায় আছো?’

এক ঝটকায় অস্ত্র বের করে তাক করল মার্শাল বেননের বুকে।

‘আস্তে,’ ধীর কণ্ঠে বলল বেনন। ‘হাতটা নামাতে দাও, নিজের পরিচয় দিচ্ছি আমি।’

বেননের চোখের দিকে তাকিয়ে সামান্য দ্বিধার ছাপ ফুটল মার্শালের চেহারায়।

হাত নামাল বেনন। বেল্টের বাকল্টা খুলে ফেলল। ওটার ভেতরের গোপন ওয়াটার টাইট কুঠুরি থেকে একটা কাগজ বের করে বাড়িয়ে দিল ওভারহোলসারের দিকে।

কাগজটা নিয়ে চোখ বুলাল মার্শাল। পুরোটা পড়ার আগেই তার চেহারায় ফুটে উঠল নগ্ন বিস্ময়।

‘রক বেনন?’ ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করল সে। ‘অস্থায়ী রেঞ্জার? গভর্নরের বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত?’

‘এই বেচারাই সে,’ হাসল বেনন।

‘তা হলে…’

‘হ্যাঁ, ইচ্ছে করলে আমি তোমাকে নির্দেশ দিতে পারতাম। আমার নির্দেশ মানতে হত তোমাকে। সে ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও বলে দেয়া হয়েছিল যে তোমার লোকদের গতিবিধি আগেই জেনে যাচ্ছে বেন স্টার্কের দল। জাগ হ্যাণ্ডেল ছিল এক চর। তোমার ডেপুটিদের কেউ তার লোক কিনা সেটাও আমি নিশ্চিত হতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কাজটা একাই সারব ঠিক করি।’

সামনে বেড়ে ওভারহোলসারের টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে রোল করে ধরাল একটা। ধোঁয়া ছেড়ে সংক্ষেপ করল বক্তব্য।

‘প্রফেসর রুবেন স্টাসিই ছিল বেন স্টার্ক। ক্যানিয়নে তাকে তুমি পাওনি। মেক্সিকোর কাছে গিয়ে তার দেখা পাই আমি। সামান্য ভুলে সে পালাতে পেরেছে।’

‘তা হলে লুটের টাকা নিয়ে সরে পড়েছে সে?

‘সেজন্যে আমি চিন্তিত নই,’ নির্বিকার চেহারায় বলল বেনন, ‘যেকাজে আমাকে পাঠানো হয়েছিল সেটা আমি করেছি। বেন স্টার্কের দল ধ্বংস হয়ে গেছে, তার পরিচয় প্রকাশ পেয়ে গেছে-সবচেয়ে বড় কথা ভুল ভাবছ তুমি। লুটের সমস্ত সোনা এবং টাকা-পয়সা উদ্ধার করা গেছে। আমার দায়িত্ব শেষ।’

‘মানে?’

‘যা বললাম তাই। বেন স্টার্ক যখন তার প্রেমিকাকে নিয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখছে আর প্রেমের প্যাচাল পাড়ছে, আমি তখন তার গানিস্যাক আর বস্তাগুলো থেকে সোনার বাঁট, টাকা-পয়সা সব বের করে নিয়ে বালিতে পুঁতে সেরেছি ওর থলে আর অন্যান্য জায়গায় বালি আর পাথর ছাড়া অন্য কিছু নেই। সেটা ও টের পাবে মেক্সিকোর ভেতরে ঢুকে ব্যাগ খুললে। আমাদের আবার ওখানে ফিরতে হবে। ওখানে গেলেই লুটের মালের পুরোটা আমরা উদ্ধার করতে পারব।’

‘আচ্ছা!’ ঢোক গিলল ওভারহোলসার। দরজার কাছে দাঁড়ানো ডেপুটিদের দিকে তাকাল। ‘কখন রওনা হচ্ছি আমরা?’

শ্রাগ করল বেনন। ‘বিশ্রাম নিয়ে। ধরো দু’ঘণ্টা।’ ওভারহোলসারের কাছ থেকে পরিচয় পত্রটা নিয়ে আবার বাকলের ভেতর রাখল ও। বলল, ‘স্টার্ককে ধরা তোমাদের দায়িত্ব। ডাকাতির পাশাপাশি তার নামে খুনেরও অভিযোগ আছে। মাইক ফ্ল্যানারিকে খুন করেছে সে।’

‘ওকে আমরা ধরবোই,’ জোর গলায় প্রতিশ্রুতি দিল ওভারহোলসার। ‘দরকার হলে মেক্সিকোর ভেতরে ঢুকতেও দ্বিধা করব না।’

কাঁধ ঝাঁকিয়ে মার্শালের অফিস থেকে বের হয়ে এল ও। অনেক ধকল গেছে, কিন্তু ওর দায়িত্ব ও যতটা সম্ভব সুষ্ঠু ভাবে পালন করতে পেরেছে। বেন স্টার্ককে ধরা পরের কাজ। সেটা সোনা উদ্ধারের পরও করা যাবে।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *