কে ডাকে তোমায় – ৩

তিন

কয়েক দিন চেষ্টা চরিত্র করে আমজাদ হাটখোলা ও স্বামীবাগে দুটো টিউশনি পেল এবং ওয়ারীতে লজিং পেল। কিন্তু যাদের বাড়িতে লজিং পেল, তারা তাকে টিউশনী করার সুযোগ দিতে চাইল না। তাই সে বাধ্য হয়ে ঘুরে আসার নাম করে টিউশনী করতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যে লজিং বাড়িওয়ালা তা জানতে পেরে আমজাদকে বললেন, আপনাকে রেখেছি আমার ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্য, আর আপনি মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে টিউশনী করছেন। আপনি চলে যান। আমরা অন্য মাষ্টার রাখব।

ওখান থেকে চলে এসে দু’তিন দিন খোঁজ খবর নিয়ে ধোলাইপাড়ে দু’জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াবার বদলে খাওয়ার ব্যবস্থা করে মেসে সিট ভাড়া নিল। এখানেরই ছাত্র রাজু আর ছাত্রী চম্পা। রাজু পড়ে ক্লাস এইটে আর চম্পা টেনে পড়ে। কিছুদিন পড়াতে এসে আমজাদ বুঝতে পারল, ছাত্র হিসাবে দুই ভাই বোনই ভালো। তাদের পিছনে একটু পরিশ্রম করলে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। তাই একটু বেশি সময় নিয়ে তাদেরকে পড়াতে লাগল। চম্পা দেখতে সুন্দরী ও । স্বাস্থ্যবতী। তাই আমজাদ খুব সাবধানে তাকে পড়াত এবং পড়া শোনার ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি করত। কিন্তু তা সত্বেও চম্পা মাস্টারের দিকে ঝুঁকে পড়ল। পড়া শেষ হয়ে গেলে রাজুকে বই খাতা নিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে মাষ্টারের সঙ্গে নানারকম আলাপ করার চেষ্টা করত। প্রথম দিকে আমজাদ তেমন খেয়াল করে নি। যতদিন যেতে লাগল চম্পা তত মাষ্টারের দিকে এগোতে লাগল। একদিন হঠাৎ বলল, স্যার আপনি কি কোনো মেয়েকে ভাল বাসেন?

আমজাদ রেগে গিয়ে বলল, ছাত্রী হয়ে স্যারকে এরকম প্রশ্ন করা উচিত নয়। আর কোনোদিন এধরনের প্রশ্ন করবে না।

চম্পা স্যারের রাগকে গ্রাহ্য না করে হাসতে হাসতে বলল, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? ছাত্রী হলেও আমি ম্যাচিওর। তারপর বলল, প্রেম ভালবাসা প্রায় সব নারী পুরুষের জীবনে হয়ে থাকে। বলুন না, কোনো মেয়েকে ভালবাসেন কিনা?

এর মধ্যেই আমজাদ বুঝতে পেরেছে চম্পা খুব ষ্ট্রেট ফরওয়ার্ড মেয়ে। রাগারাগি করলে আরো কি বলতে কি বলে বসবে। তাই নিজেকে সংযত করে গম্ভীর স্বরে বলল না, তেমন কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসে নি। এতদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার চাকরির সন্ধানে হন্যি হয়ে ঘুরছি। প্রেম ভালবাসার চিন্তা মাথায় এখনো আসে নি। তা ছাড়া হাদিসে পড়েছি, “বিয়ের আগে সাবালক ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম ভালবাসা নিষিদ্ধ। বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে যত প্রেম ভালবাসা করবে ততই উত্তম।”

চম্পা হেসে উঠে বলল, বিয়ের পরতো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অটোমেটিক প্রেম ভালবাসা থাকবে। সে জিনিস আলাদা। বিয়ের আগের প্রেম ভালবাসা না হলে তাকে কি আর প্রেম ভালবাসা বলে?

তুমি বোধ হয় ধর্মীয় কোনো বইপত্র পড়নি। পড়লে এরকম কথা বলতে পারতে না। যাই হোক, এবার তুমি গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা কর। রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে।

চম্পা ঠোঁটের আড়ালে হাসতে হাসতে চলে গেল।

মাস চারেক পর চম্পার টেস্ট পরীক্ষা হল। পরীক্ষায় ফোর্থ হল। আর রাজু। ফিফথ হয়ে নাইনে উঠল।

রেজাল্ট জেনে চম্পার মা ও বড়ভাই খুব খুশী হল। যেদিন রেজাল্ট বেরুল, সেদিন দু’ভাইবোন কেউ পড়ল না। রাজু রেজাল্টের খবর জানিয়ে প্রগ্রেস রিপোর্ট দেখাল। তারপর মিষ্টি খাওয়াল।  

আমজাদ তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার ছোট আপা কই? তার রেজাল্ট কেমন হয়েছে?  

রাজু মিষ্টির খালি প্লেট নিয়ে যাওয়ার সময় বলল, ছোট আপাকে ডেকে দিচ্ছি, তার কাছেই শুনবেন।

একটু পরে চম্পা এসে আমজাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই পা ছুঁয়ে সালাম করে হাসি মুখে বলল, আমি ফোর্থ হয়েছি স্যার, দোয়া করবেন ফাইন্যাল পরীক্ষায় যেন আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারি।

সালাম করতেই আমজাদ ভেবাচ্যাখা খেয়ে গেল। সামলে নিয়ে বলল, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা উচিত নয়। যদিও মা-বাবা অথবা গুরুজনদের করা যায়। অন্যদের করা মোটেই উচিত নয়। যাকগে, রেজাল্ট শুনে খুশী হলাম। ফাইন্যাল পরীক্ষার জন্য আরো ভালোভাবে তৈরি হও। ইনশাআল্লাহ আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারবে।  

একটা কথা বলব স্যার, মাইণ্ড করবেন না বলুন?

আমজাদ কথাটা চিন্তা না করেই হঠাৎ বলে ফেলল, মাইণ্ড করার কি আছে? কি বলতে চাও বল।

আমি অনেক খারাপ ছাত্রী ছিলাম। এত ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি আপনাকে ভালবেসে। প্রথম যেদিন আপনি আমাদের বাসায় পড়াতে আসেন, সেদিন থেকে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। কথা শেষ করে স্যারের মুখের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে রইল।

আমজাদ অনেক আগেই বুঝেছে, চম্পা তার দিকে ক্রমশঃ এগোচ্ছে। হয়তো একদিন চিঠি দিয়ে ভালবাসার কথা জানাবে। কিন্তু মাত্র পাঁচ ছয় মাসের জানা শোনায় কোনো মেয়ে তাকে এভাবে সামনা সামনি ভালবাসার কথা বলবে ভাবতেই পারেনি। তাই তার কথা শুনে যেমন রেগে গেল তেমনি অবাকও হল। কিছু না বলে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।

কি হল স্যার, কিছু বলছেন না কেন? মাইণ্ড করলেন নাকী?

আমজাদ সংযত হয়ে বলল, তোমাকে একদিন প্রেম-ভালবাসার কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম, সে কথা মনে নেই?  

তা মনে থাকবে না কেন? কিন্তু আমার মনের কথা প্রকাশ করতে তো নিষেধ করেন নি। আর নিষেধ করলেও শুনতাম না। কারণ প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার অধিকার আছে।

তা আছে, তাই বলে ছাত্রী হয়ে শিক্ষককে ভালবাসার কথা জানান ঠিক নয়। তা ছাড়া তুমি আমার সম্পর্কে একরকম কিছুই জান না। তোমার মা ও বড়ভাইও জানেন না। সব থেকে বড় কথা, যথা সম্ভব আমি ধর্মের নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। বিয়ের আগে যে প্রেম ভালবাসা নিষেধ, তা তোমাকে একদিন বলেছিলাম। ওসব কথা আর কখন মুখে আনবে না। বাসার কেউ শুনে ফেললে দুর্নামের একশেষ হবে।

ভালবাসা কি পাপ যে দুর্নাম হবে? তা ছাড়া আড়ি পেতে শোনার মত এখানে কেউ নেই।  

নাই থাক, তবু তুমি আর কোনোদিন বলবে না। এবার যাও খাওয়ার ব্যবস্থা কর। নচেৎ না খেয়েই আমি চলে যাব।

চম্পা আর কিছু না বলে স্যারের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে চলে গেল।

পরের দিন পড়াতে গেলে চম্পার মা বললেন, চম্পা বলছিল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হলে তোমার সাহায্য আরো বশি দরকার। তাই তোমার জন্য আমরা একটা রুম বানিয়েছি। কালই তুমি মেস থেকে তোমার মালপত্র নিয়ে চলে এস।  

মেস ভাড়া বেঁচে যাবে ভেবে আমজাদ পরের দিন সব কিছু নিয়ে তাদের বাসায় চলে এল। আগে রাজু ও চম্পাকে রাত দশটা পর্যন্ত পড়াত। বাসায় আসার পর দশটায় খাওয়া দাওয়ার পর আবার তারা ঘন্টা খানেক পড়ে।

পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত চম্পা আজে বাজে কথা না বলে মন দিয়ে পড়াশোনা করল। পরীক্ষার পর রাজু একা রাত দশটা পর্যন্ত পড়ে।

চম্পা প্রায় প্রতিদিন এসে কিছুক্ষণ স্যারের সঙ্গে এটা সেটা আলাপ করে চলে যায়। দিনের বেলা স্যার যখন বাসায় থাকে না তখন তার রুম ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে। বিছানা ঝেড়ে ঠিক ঠাক করে দেয়। আলনার জামা কাপড় গুছিয়ে রাখে। ময়লা জামা কাপড় পেলে কেচে মাড় দিয়ে শুকোতে দেয়। শুকিয়ে গেলে সেগুলো স্ত্রী করে রাখে।  

যেদিন চম্পা প্রথম এই সব করে, সেদিন আমজাদ চম্পাকে ডেকে নিষেধ করেছিল।

চম্পা বলেছিল, শিক্ষক হলেন গুরুজন। গুরুজনের সব কিছু করে দেওয়া ছাত্রের উচিত। উচিত কাজে নিষেধ করছেন কেন?

তোমার কথা ঠিক। কিন্তু ছাত্রের এমন কাজ করা উচিত নয়, যা গুরুজনের অসন্তুষ্টির কারণ হয়। আমি চাই না, তুমি আমার এইসব কর।

আমার কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন?

হ্যাঁ।

কেন বলুন তো?

সব কেনর উত্তর দেওয়া যায় না।

কে বলেছে দেওয়া যায় না? আপনি দেবেন না তাই বলুন।

চম্পা যে খুব চালাক ও বাকপটু তা আমজাদ জানে। তাই কথা না বাড়িয়ে বলল, যাই হোক না কেন? আমি নিষেধ করছি, তুমি আমার এ জাতীয় কোনো কিছু করবে না।

আপনি নিষেধ করলেও আমি করবই। কিছুদিন আগে বললাম না, আমি আপনাকে ভালবাসি? তাই তো আপনার এতটুকু কষ্ট হোক, তা আমি চাই না। আজ বলতে হবে আপনি আমাকে ভালবাসেন কিনা।

আমজাদ এখন এপথে পা বাড়াতে চায় না। চাকরি পাওয়ার পর মা-বাবার পছন্দ মতো মেয়েকে বিয়ে করবে, এটাই তার সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া সে বিয়ের আগে প্রেম-ভালবাসাকে ঘৃনা করে। তাই বলল, প্রেম ভালবাসার ব্যাপারে তোমার সঙ্গে আগেই আলাপ হয়েছে। তবু তুমি একথা বলছ কেন?

চম্পা খুব বুদ্ধিমতি। বলল, বেশ ভালবাসার কথা না হয় নাই বললেন, আমাকে আপনার পছন্দ হয় কিনা বলুন।

তার কথা শুনে শারমিনের কথা আমজাদের মনে পড়ল। কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, সে ব্যাপারে এখনো কোনো কিছু ভাবি নি। তাই সেরকম দৃষ্টিতেও তোমাকে দেখিনি। তবে এতটুকু বলতে পারি, যে কোনো ছেলে তোমাকে পছন্দ করবে।

আমি অন্য কারো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি না। চাচ্ছি, আপনার চোখে আমি কতটুকু পছন্দ? এখন না হয় সে রকম দৃষ্টিতে দেখে বলুন।

আমজাদ কখনও চম্পার সঙ্গে কথায় পেরে উঠেনি। ভাবল, যদি পছন্দ নয় বলি, তা হলে হয়তো লজিং হারাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বলল, তুমি অপছন্দ করার মতো মেয়ে নও। আমিও তোমাকে পছন্দ করি; কিন্তু ভালবাসার কথা যে বললে, তাতে একমত নই। কারণটা আগেই বলেছি।

মানুষ পছন্দ করে বিয়ে করে। আমাকে যখন পছন্দ তখন ভালবাসা করে বিয়ে করতে আপত্তি কিসের?

অনেকে নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করলেও আমি আমার মা-বাবার পছন্দ মতো বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ সিদ্ধান্ত নিলেন কেন বলবেন?

মা বাবা কত কষ্ট করে স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করেন। তাদের অনেক আশা পছন্দ করে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবেন। তাদের সেই আশাকে মূল্যায়ন না করে মনে দুঃখ দিয়ে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করা ছেলে মেয়েদের উচিত নয়। আল্লাহ পাক কুরআনের মধ্যে মা বাবার মনে দুঃখ দিতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর হুকুম প্রত্যেক মুসলমানের মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য।

ঠিক আছে, আপনি একদিন আপনার মা-বাবাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসুন। ওঁরা আমাকে যদি পছন্দ করেন, তাহলে তো আর আপত্তি করবেন না?

তা হলে আমার আপত্তি করার প্রশ্নই উঠে না।

তা হলে বলুন কবে তাদেরকে নিয়ে আসবেন।

আমজাদ চিন্তা করল, এই মেয়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুব শক্ত। চম্পা সুন্দরী, লেখাপড়াতেও ভালো। কিন্তু তাদের বাড়ির পরিবেশ খুব নিম্ন শ্রেণীর । চম্পা যে চরিত্রহীনা তা জেনেছে। সে যে ভালবাসার কথা বলে তাকে গ্রাস করতে চায়, তাও বুঝতে পেরেছে। শুধু লজিং হারাবার ভয়ে এতকিছু বলে কাটাবার চেষ্টা করছে। মা-বাবাকে নিয়ে আসার কথা বলতে বলল, আমি এখন বেকার, মা বাবাকে বিয়ের কথা বলব কোন মুখে। আগে চাকরি বাকরি করে একটু স্বাবলম্বি হই, তারপর বলব।

আপনি শিক্ষিত, দুদিন আগে হোক পরে তোক চাকরি হবেই। বিয়ের পর আমি এখানে থেকে কলেজে পড়ব। আপনার চাকরি হওয়ার পর না হয় নিয়ে। যাবেন।  

তুমি যা বলছ, তা কিছুতেই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আচ্ছা, তুমি যে এসব কথা বলছ, তোমার মা-বড়ভাই জানেন?

আপনি এত লেখাপড়া করেছেন আর একথাটা বুঝতে পারছেন না? তারা যদি আপনাকে অপছন্দ করত, তা হলে বাসায় লজিং দিত না।

ঠিক আছে তুমি এখন যাও, আমি একটু বেরোব। তারপর চম্পা কিছু বলার আগেই আমজাদ বেরিয়ে পড়ল।

ঐদিন রাত্রে ঘুমাবার সময় আমজাদ চম্পাকে নিয়ে সমস্যার কথা ভাবতে গিয়ে শারমিনের কথা আবার মনে পড়ল। ঠিক সময় মতো যদি সে সেখানে না পৌঁছাত, তা হলে শারমিনের কী যে হত, তা আল্লাহ পাক জানেন।

আমজাদ একবার বি.এস.সি. পরীক্ষার পাশের সনদপত্র উঠানর জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে তার ছোট বোনের দেবর জাভেদের বাসায় উঠে। জাভেদ বিয়াই হলেও আমজাদের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব। ফলে দু’জন দু’জনকে তুই তোকারী করে। জাভেদ ইকোনোমিক্সে অনার্স নিয়ে বি. এ পাশ করে। রেজাল্ট বেরোবার ছয় মাসের মধ্যে মা-বাবাকে সন্তুষ্ট করার জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেকার অবস্থায় বিয়ে করে কুমিল্লা জেলার গৌরীপুরের রহিম সাহেবের এম.এ.পাশ মেয়ে আয়শাকে। রহিম সাহেব মীরসরাই কলেজের প্রিন্সীপাল। ফ্যামিলী নিয়ে ওখানেই থাকেন। জাভেদের বাবার নামও রহিম সাহেব। তিনি ঐ কলেজের ভাইস প্রিন্সীপাল। পরিচয়ের প্রথম পর্যায়ে মিতা, তারপর সেই সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্ক আরো গাঢ় করার জন্য দুই রহিম সাহেব ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে জাভেদ চাকরি পায়। আজ দু’বছর হল চট্টগ্রাম ওয়াসায় একাউন্ট সেকসানে কাজ করছে। কাটা পাহাড় লেনে ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকে। এখনো তাদের কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। বিয়ের সময় আমজাদ একবার মাত্র তার বৌকে দেখেছিল। জাভেদ তাকে অনেক বার চিঠি দিয়েছে তাদের বাসায় বেড়াতে আসার জন্য। আমজাদ উত্তরে যাব বলে জানালেও এই দু’বছরের মধ্যে একবারও যাইনি। তাই তাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য যাওয়ার কথা না জানিয়ে রওয়ানা দেয়।  

জাভেদের বাসাটা দুই রুমের। সামনের রুমটা ছোট। সেটাকে ড্রইং রুম কাম গেষ্টরুম করেছে। পরের রুমটা বেডরুম। দু’টো রুমের মাঝখানে বাথরুম। আর কিচেন রুম বেডরুমের পাশে।  

সেদিন অফিস ছুটি থাকায় দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর জাভেদ স্ত্রী আয়শার সঙ্গে খোশ গল্প করছিল। এমন সময় দরজা নক হতে শুনে বিরক্তস্বরে বলল, এখন আবার কে এলরে বাবা?

আয়শা মৃদু হেসে বলল, কে বলতে পারে কে এসেছে, তাকে তুমি বাবা বলছ। কেন?

জাভেদ তার গাল টিপে ধরে রেখে বলল, এই মেয়ে, আমি বুঝি যে এসেছে তাকে বাবা বললাম? ওটা তো কথার কথা।

ততক্ষণে আবার কড়া নাড়ার শব্দ হল।

আয়শা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চুমো খেয়ে বলল, আমিও কথার কথা বলেছি। যাও কে এসেছে দেখ।

জাভেদ দরজা খুলে আমজাদকে দেখে হর্ষোফুল্ল কণ্ঠে বলল আরে বিয়াই, তুই? তারপর সালাম বিনিময় করে জড়িয়ে ধরে বলল, তা হলে সত্যি সত্যি এলি?

আমজাদ বলল, সত্যি না মিথ্যে দেখতেই তো পাচ্ছিস।

জাভেদ আলিঙ্গন মুক্ত হয়ে তাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে দু’জন পাশাপাশি বসে বলল, তোকে কতবার চিঠি দিয়ে আসতে বলেছি, আসিস নি। তাই বিশ্বাস করতে পারছি না। তোর বিয়ান প্রায়ই বলে আমজাদ ভাইয়ের সঙ্গে তোমার গভীর বন্ধুত্বের কথা যে বল, এতবার চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠালে, কই, একবারও তো এলেন না?

আমজাদ বলল, আসতে খুব মন চায়, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তা হারে, তোদের দাম্পত্ত জীবন কেমন কাটছে বল। বিয়ান তো ধনী ঘরের এম.এ.পাশ. মেয়ে। আর তুই মধ্যবিত্ত ঘরের বি.এ.পাশ ছেলে। কোনো অসুবিধা ফিল করছিস না তো?  

নিজের সম্পর্কে কিছু বলা উচিত নয়। আবার না বললে তুই মনে কষ্ট পাবি, তাই বলছি, আল্লাপাকের অপার করুনায় আমি ভীষণ সুখী। তোর বিয়ানের মতো ভালো মেয়ে সমাজে এখনো আছে, তাকে না পেলে বিশ্বাস করতাম না। ধনী ঘরের উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে যে এত স্বামীপরায়না হয়, তা কখনো শুনি নি। তা হারে, তোদের বাড়ির সবাই কেমন আছে?

আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো। ছোট আপা কেমন আছে?

কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম, সবাই ভালো আছে।

আয়শা স্বামীর পিছু পিছু এসে দরজার পর্দা ফাঁক করে দু’বছর আগে বিয়ের রাতে একবার মাত্র দেখা আমজাদকে প্রথমে চিনতে পারল না। পরে অবশ্য তাদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারল। বন্ধুর কাছে স্বামীকে তার প্রশংসা করতে শুনে লজ্জা পেলেও খুশী হল। বন্ধু অতদূর থেকে এসেছে, তার খাওয়ার ব্যবস্থা না করে গল্প করতে দেখে গায়ে মাথায় ভালো করে কাপড় দিয়ে এবার ভিতরে ঢুকে সালাম দিল।

দু’বছর আগে একবার মাত্র দেখা বিয়াই পত্নীকে চিনতে না পেরে আমজাদ সালামের উত্তর দিয়ে জাভেদের দিকে তাকাল।

জাভেদ হেসে উঠে বলল, কিরে, চিনতে পারলি না? তোর বিয়ান। তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, এই সেই বিয়াই ও অন্তরঙ্গ বন্ধু আমজাদ।

আয়শা কিছু বলার আগে আমজাদ জাভেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুই বিয়াই বিয়াই করছিস কেন? বন্ধু পাতাবার সময় কী ওয়াদা আমরা করেছিলাম মনে নেই

বুঝি? আর শোন, তোর বৌকে কিন্তু বিয়ান বলতে পারব না, ভাবি বলব।

জাভেদ বলল, ভুল হয়ে গেছে। আর বলব না। আর ওকে ভাবি বললে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আমজাদ আয়শার দিকে আর একবার তাকিয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে বলল, ভাবি কেমন আছেন?

আয়শা বুঝতে পারল, স্বামী বন্ধুর সম্পর্কে যা বলেছে তা সত্য। বলল, আল্লাহর ফজলে ভালো আছি ভাই। আপনিও আপনাদের বাড়ির খবর ভালো?

আমজাদ বলল, জ্বি ভালো। তারপর জাভেদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর বৌ আমাকে আপনি করে বলছে, তুই কিছু বলছিস না কেন?  

স্বামী কিছু বলার আগে আয়শা বলল, একই নালিশ আমিও তো করতে পারি।

আমজাদ বুঝতে পারল, বন্ধুপত্নী খুব বুদ্ধিমতী। বলল, পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে কোনো শিক্ষিত ছেলের তুমি করে বলা কি উচিত?

তাই যদি বলেন, তাহলে বন্ধুর কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করলেন কেন? আমিও তো একই কারনে আপনি করে বলেছি।

একথার উত্তর দিতে না পেরে আমজাদ চুপ করে রইল।

স্ত্রীর কথা শুনে ও বন্ধুর অবস্থা দেখে জাভেদ হো হো করে হেসে উঠল।

আয়শা মিষ্টি ধমকের স্বরে বলল, আহ! কী হচ্ছে? সেদিন হাদিসে পড়লে না? রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “অধিক হাসিও না, কেন না ইহা দ্বারা হৃদয়ের মৃত্যু ঘটে এবং মুখমণ্ডলেল উজ্জলতা নষ্ট হয়।”  

জাভেদ অনুসাচনার স্বরে তওবা আস্তাগফেরল্লাহ পড়ে বলল, আল্লাহ আমাকে মাফ করুক, হাদিসের কথা আমার মনে ছিল না। তারপর বলল, জানিস আমজাদ, তোর ভাবির সঙ্গে কোনো ব্যাপারেই পেরে উঠতে পারি নি। তুইও পারবি বলে মনে হয় না।

আয়শা আবার মিষ্টি ধমকের স্বরে স্বামীকে বলল, থাক, অত প্রশংসা করতে হবে না। আমজাদ ভাই আধ ঘন্টর উপর হতে চলল এসেছে, তার খাওয়ার ব্যবস্থা না করে গল্প করছ? তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। তারপর  আমজাদের দিকে তাকিয়ে বলল, কাপড় চোপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে নাও, আমি তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি। কথা শেষ করে সেখান থেকে চলে গেল।

আমজাদ জাভেদকে বলল, সত্যিই তুই খুব ভাগ্যবান। ভাবি শুধু সুন্দরী নয়, ধার্মীকাও। এসব মেয়েদেরকে ইসলামের দৃস্টিতে হাসিনা বলে।  

জাভেদ বলল, ওসব কথা রেখে তোর ভাবির হুকম তামিল কর। নচেৎ ফিরে এসে যদি তোকে গল্প করতে দেখে, তা হলে আমার বারটা বাজিয়ে ছাড়বে।

আমজাদ কাপড় চেঞ্জ করতে করতে বলল, ভাবি তোর বারটা বাজাবার আগেই তুই তার তেরটা বাজিয়ে দিবি।

জাভেদ মৃদু হেসে বলল, তেমন কিছু করলে তো বাজাব। সত্যি বলতে কী জানিস? বিয়ের রাত থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোনো কিছু করে নি যাতে আমি এতটুকু রাগ বা অভিমান করতে পারি।

আজ স্বামীর ছুটি। তাই আয়শা দু’বেলার রান্না, একসঙ্গে করেছে।

জাভেদ খীচুড়ী গরুর গোস্তের ভুনা খুব ভালবাসে। তাই আয়শা প্রতি সাপ্তাহিক ছুটির দিন এইসব রান্না করে। আজও করেছে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে সব নিয়ে ফিরে এসে আমজাদকে বলল, খাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে বলে সরবত বা চা নাস্তা দিলাম না। তারপর টেবিলের উপর খাওয়ার প্লেট রেখে বলল, তোমার বন্ধুর প্রিয় খাবার খাও। এসব ভালো না লাগলে বল, হোটেল থেকে আনার ব্যবস্থা করি। রান্না করতে গেলে তো বিকেল হয়ে যাবে।

আমজাদ প্লেট কাছে টেনে নিয়ে জাভেদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই আমার হয়ে ভাবির কথার উত্তর দে। কথা শেষ করে বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করল।

জাভেদ মৃদু স্বরে হাসতে হাসতে স্ত্রীকে বলল, আমি এই সব খাবার একদম পছন্দ করতাম না। ছোট বেলায় তো খেতামই না। এস.এস.সি. পরীক্ষার পর একদিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেদিন মাওই সাহেব খীচুড়ী ও গরুর গোস্তের ভুনা করেছিলেন। তিনি জানতেন আমি ঐ সব খাই না। কিন্তু আমি দুপুরে গিয়েছিলাম বলে রান্না করার সময় পান নি। খাওয়ার সময় আমাকে সে কথা জানিয়ে বললেন, এবেলা অল্প কিছু হলেও খাও, রাতে অন্য ব্যবস্থা করব।

আমি বললাম, মাওই সাহেব, আমি এসব খেতে পারব না। আপনি বরং চিনি পানিতে মুড়ি ভিজিয়ে দিন, খাই। আমজাদ তখন এক লোকমা মুখে তুলেছিল। আমার কথা শুনে লোকমাটা নামিয়ে বলল, তুই না খেলে আমিও খাব না। আমি বললাম, সে কীরে? আমি এসব পছন্দ করি না বলে খাব না। তুই তো এসব খুব পছন্দ করিস। খাবি না বলছিস কেন? আমজাদ বলল, খেতে পারি তুই যদি অল্প কিছু হলেও খাস। ওর কথা শুনে বাধ্য হয়ে খেতে বসলাম। খেতে বেশ ভালই লাগল। তাই পেট ভরেই খেলাম। খাওয়ার পর আমজাদ হাসতে হাসতে মাকে বলল, দেখলে তো আম্মা, জাভেদ এসব পছন্দ না করলেও খেতে বসে কিন্তু পেট ভরেই খেয়েছে। দেখো, জাভেদ তোমার হাতের খীচুড়ীও ভুনা মাংস খাওয়ার জন্য এবার ঘন ঘন আসবে। তার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলাম। তারপর থেকে সত্যি সত্যি খীচুড়ী আর ভুনা মাংস আমার প্রিয় হয়ে উঠল। তারপর আমজাদকে বলল, কীরে, খাওয়ার আগে আমাদেরকে সাধলি না যে? দ্ৰতা আজও শিখলি না। সেই আগের মতো রয়ে গেছিস দেখছি।

তোর যখন এতই ভদ্রতা জ্ঞান তখন আর সে কথা বলে তোর বৌ-এর কাছে লজ্জা দিচ্ছিস কেন? তারপর বলল, আমি সিওর, তোরা খাওয়ার পর যখন খোশগল্প করছিলি তখন আমি দরজায় নক করি। ভাবির কথা বলতে পারব না, তবে খোশ গল্পে বাধা পড়ায় তুই বিরক্ত হয়েছিস। দরজা খুলবি কিনা চিন্তা করছিলি। ভাবির তাড়া খেয়ে খুলেছিস। তা ছাড়া ক্ষীদের চোটে নাড়িভুড় হজম হয়ে যাচ্ছিল, তাই তোদেরকে সাধবার কথা মনে পড়েনি।

তার কথা শুনে আয়শা কাপড়ে মুখ ঢেকে হাসতে লাগল।

জাভেদ হাসতে হাসতে বলল, আমার সম্পর্কে যা বললি, তা যদি সত্য না হয়?

আলবৎ সত্য। তারপর আয়শার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমিই বলতো ভাবি, সত্য না মিথ্যে।

আয়শা মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে বলল, সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ কুরআন পাকে বলিয়াছেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিধানসমূহ পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠাকারী এবং ন্যায়ের সহিত সাক্ষ্যপ্রদানকারী হও।” [সূরা মায়িদা, পারা-৬, ৮৯ আয়াতের ১ম অংশ]

আমাকে যখন সাক্ষী মানছ তখন সত্য না বলে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে পারি না। তোমার বন্ধুর ব্যাপারে যা বললে তা সত্য।

আমজাদ জাভেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, কিরে? সত্য সাক্ষী দেওয়ার জন্য। ভাবির উপর অসন্তষ্ট হলি না কী?

জাভেদ বলল, আল্লাহর নেক বান্দা বান্দী আল্লাহ ও রাসুল (দঃ) এর আদেশের উপর জান মাল কুরবান করে। তোর ভাবির প্রতি অসন্তষ্টীর কথা কী বলছিস? বরং এত সন্তুষ্ট হয়েছি, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

ততক্ষণে আমজাদের খাওয়া শেষ হয়েছে : হাত মুখ ধুয়ে পানি খেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে বলল “আল আলহামদুলিল্লাহ হিল্লাজী আতয়ামানা ওয়া সাক্কানা ওয়া জা’য়া লানা মিনাল মুসলিমীন। ( সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদিগকে খাদ্য খাওয়াইতেছেন, পানাহার করাইতেছেন এবং মুসলমান দলভুক্ত করিয়াছেন)

আয়শা স্বামীর বন্ধুকে স্বামীর মতো ধার্মীক বুঝতে পেরে খুশী হল। থালা বাসন নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলল, তোমরা গল্প কর আমি আসছি।

আয়শা চলে যাওয়ার পর আমজাদ রুমালে হাত মুখ মুছে আরাম করে বসে বলল, ভাবি কী সারাদিন বাসায় রান্না বান্না নিয়ে থাকে? না আরো কিছু করে? শিক্ষিত মেয়ের পক্ষে সারাদিন একা একা থাকা কুব কষ্টকর তাই না?

হ্যাঁ তোর কথা ঠিক। এখানে আসার পর আয়শার কষ্ট দেখে একদিন বললাম, সারাদিন একা একা বাসায় থাকতে তোমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে, তা জানি; কিন্তু

প্রতিকারের উপায়ও তো দেখছি না।  

তোর ভাবি বলল, তুমি যদি অনুমতি দাও, প্রতিকারের উপায় আমি বলতে পারি।

বললাম, বেশ তো বল।

আমি সেলাইয়ের কাজ কিছু কিছু জানি। তুমি রাজি থাকলে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে চাই। ছ’মাসের কোর্স। তারপর মেশিনপত্র কিনে বাসাতে কাজ করব। ছুটির দিনে ও অফিস টাইমের পর তুমি দোকান থেকে অর্ডার নিয়ে আসবে। আমি তৈরি করে দেব। তুমি সেগুলো ডেলীভারী দেবে।

আমি বললাম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে চাও হও; কিন্তু অর্ডার আনা ও ডেলীভারী দেওয়ার ব্যাপারে যা বললে, তা ঝামেলার ব্যাপার। তার চেয়ে আমার এক কলিগের ওয়াইফ কিণ্ডার গার্টেন স্কুলের প্রিনসিপ্যাল। কলিগকে ধরে সেখানে একটা ব্যবস্থা করতে পারি। তোর ভাবি বলল, কিণ্ডার গার্টেন স্কুল সকালে। ওখানে কাজ করলে তোমার অফিসে যাওয়ার আগে খাওয়া দাওয়ার অসুবিধা হবে। তুমি কোনো বালিকা বিদ্যালয়ে অথবা কলেজে ঢোকার যদি ব্যবস্থা করতে পার, তা হলে খুব ভাল হয়। ওর কথায় খুশী হলাম। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে মাস ছয়েক হল খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার ব্যবস্থা করতে পেরেছি।

এমন সময় আয়শা তিন কাপ চা নিয়ে এসে তাদেরকে দু’কাপ দিয়ে নিজেও • এক কাপ নিল।

জাভেদ চায়ে চুমুক দিয়ে আমজাদকে বলল, তুই এসে ভালই হল। আগামী সপ্তাহে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম করেছি। তুই সঙ্গে থাকলে যা জমবে না?

আমজাদ বলল, আমার দুর্ভাগ্য। আমাকে কাল অথবা পরশু যেতেই হবে। কিছু মনে করিস না। আমি ইউনিভার্সিটি থেকে পাশের সনদপত্র তুলতে এসেছি। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে হবে। কথা দিচ্ছি, কিছুদিন পর আবার যখন আসব তখন কয়েক দিন থেকে বেড়িয়ে যাব।

জাভেদ বলল, চাকরির ব্যাপার, তাই কিছু বললাম না। তবে কিছু দিনের মধ্যে যদি না আসিস, তা হলে মনে রাখিস বন্ধুত্ব আর থাকবে না।

আমজাদ বলল, ঠিক আছে মনে রাখব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *