কে ডাকে তোমায় – ১

এক

স্যার, রাজুর ঘুম পাচ্ছে। ঘুম!

কিসের ঘুম? জোরে জোরে পড় ঘুম চলে যাবে।

চম্পা আবার বলল, স্যার রাজুর ঘুম পাচ্ছে।

রাজু বলল, না স্যার, আপু মিথ্যে বলছে, আমার ঘুম পায়নি।

চম্পা বলল, কী! আমি মিথ্যে বলছি? তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনিই দেখুন, ঘুমে ওর চোখ ঢুল চুল করছে কিনা?

আমজাদ রাজুর দিকে তাকিয়ে চোখে ঘুম দেখে বলল, সবে মাত্র বাজে সাড়ে দশটা। এখনই ঘুম পাচ্ছে কেন? ঠিক আছে, আজ ছুটি দিলাম, কাল থেকে কিন্তু এত শিঘ্রী ছুটি দেব না। এখন তোমরা যাও।

চম্পা বলল, বারে! রাজুর ঘুম পাচ্ছে, সে ঘুমাতে যাবে, আমি যাব কেন?

রাজু যাবে আর তুমি এখানে একা বসে থাকবে নাকী?

বসে থাকব কেন? পড়ব। তারপর রাজুকে বলল, তুই চলে যা।

রাজু বই খাতা নিয়ে চলে যাওয়ার পর চম্পা বইয়ের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইল।

আমজাদ বলল, কী ব্যাপার? রাজু চলে গেল তুমি বসে রয়েছ কেন?

আমি আরও পড়ব, এখন যাব না।

এতরাতে একা একা পড়া তোমার উচিত নয়। যাও ঘুমিয়ে পড়। আমিও ঘুমাব। আজ আর পড়াব না, শরীরটা খারাপ লাগছে।

না স্যার, আমার পড়া হয়নি। আমি পড়ব। আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন।

লাইট জ্বালা থাকলে আমার ঘুম আসবে না।

তা হলে লাইট অফ করে ঘুমান। আমি ডিম লাইট জ্বালিয়ে পড়ব।

ডিম লাইটের আলোতে কেউ পড়তে পারে বুঝি?

কেউ না পারলেও আমি পারি। আপনি লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ুন তো।

আমি ঘুমাব, আর তুমি গভীর রাত পর্যন্ত এখানে পড়বে তা একেবারেই অসম্ভব।

আমি তো কোনো অসুবিধা দেখছি না স্যার।

গভীর রাত পর্যন্ত তোমাকে একা এখানে কেউ দেখলে কি ভাববে?

কি আবার ভাববে?

তোমার কী মান ইজ্জতের ভয় নেই? কেউ দেখলে দুর্নাম রটাবে।

আপনি দুর্নামকে ভয় পান বুঝি?

তুমি ভয় পাও না?

তা পাবনা কেন? কিন্তু গভীর রাতে কে দেখতে আসবে? কই আমি তো কাউকে দেখছি না। আমি আপনার বিছানা করে দিই, অপনি শুয়ে পড়ুন।

না, তোমাকে বিছানা করে দিতে হবে না। আমাণটা আমি করে নেব। তা ছাড়া তুমিই বা আমার বিছানা করে দেবে কেন?

দিনের বেলা যখন আপনি থাকেন না তখন তো আমিই আপনার বিছানা ঝেড়ে ঠিক ঠাক করে দিই। এখন দিলে দোষ কি বলে চম্পা বিছানা ঠিক করে দিতে লাগল।

আমজাদ বিরক্ত হলেও কিছু না বলে ছোট বাথরুমের কাজ সারার জন্য বেরিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে দেখল চম্পা চৌকির উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ওড়না গায়ে নেই, বিছানার এক পাশে রয়েছে। তার যৌবন পুষ্ঠ বুকের দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেণ্ড আনমনা হয়ে পড়ল। হাজার হলেও সে একজন পূর্ণ বয়স্ক যুবক।  

চম্পা মৃদু হেসে বলল, কী দেখছেন স্যার? ঘুমাবেন আসুন।

চম্পার কথায় আমজাদ সম্বিত ফিরে পেয়ে বুঝতে পারল, সে দৈহিক মিলনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। বেশ রাগের সঙ্গে বলল, ছিঃ ছিঃ চম্পা, তুমি এত নীচ, তা জানতাম না।

চম্পা কিন্তু স্যারের কথা গায়ে মাখল না, বলল, কেন স্যার? আমি কি এমন। নীচতার কাজ করলাম? যে জন্যে আমাকে ছিঃ ছিঃ করছেন?  

আমজাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, তোমার ওড়না,কোথায়?

ও এই কথা? আমি মনে করেছিলাম কিনা কি। তারপর ওড়না গায়ে জড়িয়ে বলল, বিছানা করার সময় পড়ে গিয়েছিল।  

মিথ্যে কথা। জান না, মিথ্যা বলা হারাম।

চম্পা কোনো প্রতিউত্তর না করে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।

আমজাদ অধৈর্য গলায় বলল, কী হল? চুপ করে বসে আছ কেন?

আপনি শুধু শুধু রাগ করছেন। কি করব? পড়তে ভালো লাগছে না।

পড়তে যখন ভালো লাগছে না তখন ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

স্যার আমি যাব না।

তা হলে কী করবে?

আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কি করব তাও বলতে পারছি না।

আমজাদ তার মনের ভাব আগেই বুঝেছে। তাই বেশ রাগের সঙ্গে বলল, আমি তোমার শিক্ষক। শিক্ষকের কথা ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই মেনে চলা কর্তব্য। তাই বলছি এবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

আজ রাতে আমার ঘুম আসবে না। তার চেয়ে এখানেই রাতটা কাটিয়ে দিই।

আমজাদ আরো রেগে গিয়ে বলল, একি বলছ তুমি? জান না, একজন যুবকের সঙ্গে একজন যুবতী এভাবে রাত কাটান গুরুতর অপরাধ? ইসলামের। দৃষ্টিতে এটা হারাম। তোমার মতো সেয়ানা মেয়েকে পড়ানও ইসলামে নিষেধ। নিরুপায় হয়ে পড়াচ্ছি। তোমার উদ্দেশ্য বুঝতে আমার বাকি নেই। তুমি নিজে যেমন কলঙ্কিত হতে চাও, তেমনি আমাকেও কলঙ্কিত করতে চাও। এটাই বুঝি তোমার প্রেম ভালবাসার প্রমাণ? তুমি কী জান না, প্রেম ভালবাসা পূত ও পবিত্র। সেখানে পাপের কোনো স্থান নেই। যে প্রেম ভালবাসায় পাপ ঢুকে তাকে পবিত্র প্রেম বলে না। তা তখন হয়ে যায় শয়তানের কাজ। শয়তান মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। তাই আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলিয়াছেন, “হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা বাকারা, আয়াত-২০৮, পারা-২] আমাদের নবী (দঃ) বলিয়াছেন “যে স্বভাব চরিত্রে সর্বোত্তম, সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।” [বর্ণনায় : আবু হোরাইয়া (রাঃ)- আবু দাউদ]

এর আগেও তোমাকে সংযত হওয়ার জন্য অনেকবার বলেছি। তুমি আমার কথা না শুনে নিজের ইচ্ছামতো সব কিছু করেছ। আমাকে যদি সত্যিই তুমি ভালবেসে থাক, তাহলে আমার কথা তোমাকে মেনে চলতে হবে। এই কথা শুনে আবার ভেব না, আমি পুরুষত্বহীন। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তোমার সঙ্গে ফুর্তি করে রাত কাটিয়ে দিত। আল্লাহপাক মেহেরবাণী করে কিছু দ্বীনিএলেম আমাকে দান করেছেন। তাই নিজেকে সংযত রাখতে পেরেছি। নচেৎ এতদিনে তোমাকে নিয়ে ফুর্তির-সাগরে কবেই ভেসে যেতাম। প্রেম ভালবাসার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক অবশ্যই থাকবে। তাই বলে অসৎ পথে নয়। এত অধৈর্য হচ্ছ কেন? আল্লাহ যখন রাজি হবেন তখন বিয়ের পর সব কিছু হবে। আমার আর কিছু বলার নেই। প্লীজ, তুমি এবার চলে যাও।

চম্পা সুন্দরী ও স্বাস্থ্যবতী। তার উপর সেক্সী। তাই যৌবনে পা দেওয়ার সাথে সাথে বেশ উচ্ছঙখল হয়ে উঠে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বড় বোনের দেবরের কাছে প্রথম সতীত্ব দান করে এবং সেই থেকে কিছু দিন যাবৎ তাদের দৈহিক মিলন চলতে থাকে। সে কথা উভয় ফ্যামিলীতে জানাজানি হওয়ার পর গার্জেনদের হস্তক্ষেপের ফলে তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্লাস টেনে পড়ার সময় আমজাদ তাকে ও তার ছোট ভাই রাজুকে পড়াবার বদলে তাদের বাসায় লজিং এ আসে। কয়েক মাসের মধ্যেই চম্পা আমজাদকে ভালবাসার কথা জানিয়ে ছলা কলা করে দৈহিক মিলনের দিকে ইঙ্গিত দিতে থাকে। যৌবনে যে সব ছেলে মেয়ে একবার দৈহিক মিলনের স্বাদ পায়, তারা তা আরো পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। না পেয়ে অনেক ছেলে মেয়ে বিপথগামী হয়। যারা তা হতে পারে না, তারা সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। চম্পাও এই শ্রেণীর। তাই আমজাদ তাদের বাসায় লজিং আসার পর থেকে তার পিছনে লেগেছে। আজ সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিল যেমন করে হোক স্যারকে ক্যাপচার করবেই। তাই রাজুকে বিদায় করে এতক্ষণ অনেক ছলা কলা দেখিয়েছে। স্যার রেগে গিয়ে যা তা বললেও গায়ে না মেখে নরম স্বরে কথা বলেছে এবং নরম ব্যবহরও করেছে। এখন তার মুখে কুরআন হাদিসের কথা শুনে ও তাকে প্রত্যাখ্যান করায় খুব রেগে গেল; কিন্তু ধৈর্য হারাল না। রাগে ও অপমানে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *