কামিনী কাঞ্চন – ৮

আবুল হোসেন সাহেবের ড্রাইভার নাহিদাকে গাড়িতে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নিয়ে এসে চারটের ফ্লাইটে তুলে দিয়ে গেল। নাহিদা ঢাকায় পৌঁছে হোটেল অ্যাম্বাসাডারে রাত কাটাল। পরের দিন তিনটের ফ্লাইটে সিলেট রওয়ানা দিল।

প্লেন যখন ওসমানি বিমানবন্দরে নামার জন্য সিগন্যালের অপেক্ষায় সিলেটের আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল, তখন সাগরের ঢেউয়ের মতো নাহিদার মনে আনন্দ আছড়ে পড়তে লাগল। সে জানালার পাশে বসেছিল। এয়ারপোর্টের আশপাশের পাহাড়, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-গাড়ি দেখতে পেল। এক সময় ঝাঁকি দিয়ে প্লেনের পেটের তলা থেকে চাকা দুটো বেরিয়ে এল। প্লেন ল্যান্ড করতে শুরু করলে এয়ারপোর্টের নিচের সবকিছু নাহিদা দেখতে পেল। এক সময় প্লেনটা মাটি ছুঁয়ে রান করে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। সিঁড়ি লাগাবার পর নাহিদা কাঁধে এয়ার ব্যাগ ঝুলিয়ে প্লেন থেকে নেমে লাউঞ্জে এসে ঢুকল।  

এখন পাবলিককে এয়ারপোর্টে ঢুকতে দেওয়া হয় না। প্যাসেঞ্জারদের যাতায়াত করার জন্য বেশ কয়েকটা গেট আছে। সেখানে অনেকের আত্মীয়স্বজনের ভিড়। প্যাসেঞ্জারদের কেউ কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলছে। নাহিদা গেটগুলোর দিকে তাকিয়ে নাহিদকে খুঁজল; কিন্তু পেল না। ভাবল, ফোন করলাম তবু এল না কেন? তাহলে কি তার কোনো অসুখ করেছে? কথাটা মনে হতে নাহিদার মন খারাপ হয়ে গেল। বিদেশ বিভুয়ে বেচারা কত কষ্ট পাচ্ছে। যদি সত্যিই তাই হয়, তাহলে মন প্রাণ উজাড় করে সেবা করবে। সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া চাইবে।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর মালপত্র প্লেন থেকে এল। চেক হবার পর নাহিদা সুটকেস নিয়ে বেরিয়েছে এমন সময় নাহিদকে আসতে দেখল। নাহিদ আজ আকাশি রঙের টেট্রনের পাজামা-পাঞ্জাবি পরেছে। পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খোলা থাকায় বুকের পশম দেখা যাচ্ছে। এতদিন পরে নাহিদকে দেখে নাহিদার মনে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল। পরক্ষণে তার পাশে শর্মিলাকে দেখতে পেয়ে নাহিদা এমনভাবে চমকে উঠল যেন একটা গোখরা সাপ ছোবল দেবার জন্য তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভাবল, লাউঞ্জে ঢুকে গা ঢাকা দিবে এবং পরের ফ্লাইটে ফিরে যাবে। কিন্তু তা সম্ভব হল না। ততক্ষণে তারা নাহিদাকে দেখতে পেয়েছে। নাহিদা ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইল।

অল্পক্ষণের মধ্যে নহিদ ও শর্মিলা তার কাছে এসে পৌঁছাল। নাহিদ কিছু বলার আগে শর্মিলা নাহিদার একটা হাত ধরে সালাম দিয়ে বলল, কিরে আমাদের দেখতে পেয়েও তুই অন্যদিকে চেয়ে রয়েছিস কেন?

নাহিদা কঠোরভাবে নিজেকে সামলাল। চিন্তা করল, শর্মিলার কাছে কিছুতেই ছোট হওয়া চলবে না। তার দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, তুই কবে এলি?

: পরশু। তারপর নাহিদকে বলল, ভাইয়া তুমি ওর সুটকেসটা নাও।

নাহিদ সালাম দিয়ে নাহিদার হাত থেকে সুটকেসটা নেয়ার সময় বলল, কেমন আছ, বাড়ির সবাই ভালো?

নাহিদা সলামের উত্তর দিয়ে কয়েক সেকেন্ড তার মুখের দিকে চেয়ে মনের খবর জানার চেষ্টা করল; কিন্তু সফল হলো না। বলল, হ্যাঁ সবাই ভালো। তুমি কেমন আছ?

: আল্লাহ পাকের রহমতে ভালো আছি। তারপর এস বলে গাড়ির দিকে এগোল।

নাহিদ সুটসেকটা গাড়ির পিছনের বুটে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসল। তারপর পাশের ও পিছনের দরজা খুলে দিল।

শর্মিলা আগে পিছনের সিটে বসে দরজা বন্ধ করে দিল।

নাহিদা সামনের সিটে বসার পর নাহিদ দরজা বন্ধ করে গাড়ি ছেড়ে দিল। কিছুদূর আসার পর নাহিদার দিকে চেয়ে বলল, আমার বাসায় যেতে আপত্তি আছে?

নাহিদা রাস্তার দিকে চেয়েছিল। সেইভাবে থেকেই বলল, না।

তারপর আর কেউ কোনো কথা বলল না।

নাহিদ বাসার গেটে গাড়ি থামিয়ে পিছনের বুট থেকে নাহিদার সুটকেস বের করে দিল।

শর্মিলা নেমে নাহিদাকে নামতে বলে নাহিদকে বলল, ভাইয়া, তুমি কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু।

নাহিদা নামার পর নাহিদ গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

কাদুর বাপ গাড়ির শব্দ পেয়ে বেরিয়ে এসে নাহিদাকে দেখে তার দিকে চেয়ে রইল।

শর্মিলা তাকে বলল, চাচা, সুটকেসটা নিয়ে আসুন। তারপর নাহিদাকে বলল, চল ভিতরে যাই।

নাহিদা এয়ারপোর্টে শর্মিলাকে দেখে ঈর্ষায় জ্বলে উঠে ভেবেছিল, এইজন্যেই বোধহয় নাহিদ এতদিন তার খোঁজ-খবর নেয় নি। তখন শুধু নাহিদের প্রতিই নয় সমস্ত পুরুষ জতাটার উপর তার প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ জন্মেছিল। সেই সাথে শর্মিলার লন্ডনের একটা কথা মনে পড়েছিল, “পুরুষজাতটা মেয়েদেরকে ভালোবাসতে জানে না, জানে শুধু তোষামোদ করে দেহভোগ করতে।” এইসব কথা ভেবে সে পরের ফ্লাইটে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু শর্মিলার কাছে খুব ছোট হয়ে যাবে বলে এবং নাহিদের আসল স্বরূপ দেখবে বলে কঠোরভাবে নিজেকে সংযত করেছে। তারপর শর্মিলাকে যখন নাহিদের সঙ্গে ভাইয়া সম্বোধনে কথা বলতে শুনল, তখন বেশ অবাক হয়েছিল। এখন গাড়ি থেকে নেমেই বিয়ে বাড়ির মতো গেট ও বাড়ি সাজানো দেখে আরও বেশি অবাক হল। ভিতরে গিয়ে শর্মিলাকে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার বল তো? মনে হচ্ছে এটা যেন বিয়ে বাড়ি।

শর্মিলা হাসতে হাসতে বলল, তোর অনুমান ঠিক। আজ এখানে একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ের বিয়ে হবে। তারপর একটা রুমে ঢুকে বলল, এটা গেস্ট রুম। ভাইয়া তো বেচেলার মানুষ, তাই দু’রুমের বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। অবশ্য এখানে কাদুর বাপই থাকে। কেউ এলে-টেলে সে অন্যত্র থাকে।

নাহিদা জিজ্ঞেস করল, কার বিয়ে হবে তুই জানিস?

: এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? এসেই যখন পড়েছিস তখন তো সবকিছু নিজেই জানতে পারবি।

: আচ্ছা তুই নাহিদকে ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেন?

: সেটাও পরে জানতে পারবি। তবে তোর কাছে আমার একটা অনুরোধ, তুই আমাকে শত্রু ভাববি না। তুই যে খুব চালাক তা জানতাম; কিন্তু এত বড় মিথ্যাবাদী তা জানতাম না।

নাহিদা অবাক কণ্ঠে বলল, প্রমাণ করতে পারবি?

: প্রমাণ আর কী করবো, বাস্তব ঘটনাটাই তো জ্বলন্ত প্রমাণ। তারপর বলল, ঢাকার হোটেলে আমি যা বলেছিলাম, সে কথা মন থেকে মুছে ফেল। আমি যদি তোদের সম্পর্কের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতাম, তা হলে আজ তোর কাছে এত ছোট হতাম না। আর নিজের কাছে নিজেও অপমান হতাম না। তারপর নাহিদার দুটো হাত ধরে ভিজে গলায় বলল, তুই নাহিদ ভাইয়াকে এতটুকু সন্দেহ করবি না। তার চরিত্র ফেরেশতার মতো নির্মল। গত পরশু আমি এসেছি। তারপর বাসায় এসে যখন আমার মনের কথা জানতে পারল, তখন নাহিদ ভাইয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলল, সে তোকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে। ভাগ্যের ফেরে পড়ে তোকে যদি নাও পায়, তবু অন্য কোনো মেয়েকে মনে স্থান দিতে পারবে না। আমরণ তোর পথ চেয়ে অপেক্ষা করবে। তারপর বলল, আমার জন্য তুই চিন্তা করিস না। অন্ধের মতো ভালোবেসে তাকে পাবার জন্য জীবনের গতি পরিবর্তন করেছিলাম সেকথা যেমন সত্য, তোদের সুখ-শান্তির জন্য সেই ভালোবাসা দিয়ে যে ভাই-বোনের সম্পর্ক পাতিয়েছি, সেটাও তেমনি সত্য।

নাহিদা জিজ্ঞেস করল, তুই উঠেছিস কোথায়?

: যদি বলি এখানে? তারপর হেসে উঠে বলল, নারে না, হোটেলে উঠেছি। তুই দেখছি এখনও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না। একটা কথা জেনে রাখিস, লন্ডনে অনেক ছেলের সঙ্গে যা-তা করে বেড়ালেও নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবাসার ফলে আল্লাহপাক আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন। এখন সেইসব কথা মনে পড়লে অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হই। কেঁদে কেঁদে আল্লাহ্পাকের কাছে। মাফ চাই, সারাজীবন চেয়েও যাব। জানি না তিনি আমাকে মাফ করবেন কিনা? এখন এসব কথা থাক, আসরের আজান হয়ে গেছে। কাপড় পাল্টে নামায পড়ে নেই আয়।

নামায পড়ে শর্মিলা বলল, নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবেসে তুইও অনেক পাল্টে গেছিস।

নাহিদা কিছু না বলে শুধু একটু মৃদু হাসল। তারপর বলল, নাহিদ কোথায় গেল রে?

: একটা কাজে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে। তারপর কাদুর বাপকে ডেকে বলল, চাচা, আমাদের জন্য নাস্তা তৈরি করেছ তো? তোমার সাহেব ফিরলে এক সঙ্গে খাব।

কাদুর বাপ বলল, হ্যাঁ মা, সবকিছু তৈরি আছে।

এমন সময় গাড়ির শব্দ পেয়ে শর্মিলা বলল, নাহিদ ভাইয়া এসে পড়েছে।

নাহিদ ঘরে ঢুকলে শর্মিলা তাকে জিজ্ঞেস করল, সব ঠিক আছে তো?

নাহিদ হ্যাঁ বলে বলল, তোরা তো বোধহয় এখনও নাস্তা খাস নি। তারপর কাদুর বাপকে হাঁক দিয়ে বলল, চাচা নাস্তা নিয়ে এস।

নাস্তা খাওয়ার পর নাহিদা নাহিদকে বলল, ছুটি নিয়েছ তো? চা বাগান ঘুরে ঘুরে দেখব। শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও ছাতক বেড়াতে যাব। জাফলং-এর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত দেখতে যাব। তারপর বলল, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাবার কথা মনে আছে তো?

নাহিদ এক পলক শর্মিলার মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারল তার মুখটা করুণ হয়ে গেছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নাহিদার দিকে চেয়ে বলল, ছুটি নিই আর না নিই, তোমার কোনো আশাই অপূর্ণ রাখব না।  

শর্মিলা বলল, এবার আমি যাই ভাইয়া, কাল চলে যাব। আজ টিকিটটা কনফার্ম করতে এয়ার অফিস হয়ে হোটেলে ফিরব। তবে সকালে বিদায় নিতে একবার আসতে পারি।

নাহিদ বলল, কয়েকদিন থেকে যা না, ছুটি তো আছেই। তুইও নাহিদার সঙ্গে সব জায়গায় বেড়াতে যাবি?

নাহিদের কথা শুনে নাহিদা রেগে গেলেও সংযত রইল।

শর্মিলা নাহিদার দিকে একবার চেয়ে নিয়ে বলল, না ভাইয়া, তা হয় না। হাজার হোক আমি মেয়ে তো, অতটা হয়তো সহ্য করতে পারব না। তারপর সালাম বিনিময় করে নাহিদাকে বলল, আল্লাহপাক তোমাদের সুখী করুক। আসি, আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল।

শর্মিলা চলে যাবার পর নাহিদ বলল, ও তোমার জন্য নিজেকে স্যাকরিফাইস করল, ওকে থাকতে বলা তোমার উচিত ছিল।

নাহিদা রেগে উঠে বলল, আমি না বলে বরং উচিত করেছি। ওর আজকের আচরণে আমি খুব অবাক হলেও ওকে আমি বিশ্বাস করি নি। ও যে কী ধরনের মেয়ে ছিল তা যদি জানতে, তা হলে একথা বলতে না। কত ছেলেকে যে ও নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে তা আমিই জানি। একটা ছেলে ওর জন্য সুইসাইড করেছে, লন্ডনে কত ছেলের সঙ্গে যে ডেটিং করেছে, কত ছেলের সঙ্গে যে বিছানায় গেছে….

নাহিদ তাকে আর কথা বলতে দিল না। দ্রুত উঠে এসে তার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ছি নাহিদা, কারো গোপন কথা প্রকাশ করা কঠিন গোনাহ্। পরের নিন্দা করার মতো বড় গোনাহ্ আর নেই। কুরআন পাকে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, “হে বিশ্বাসীগণ! অনেক অনুমান হইতে বাঁচিয়া থাক, কেননা, কোনো কোনো অনুমান পাপজনক হইয়া থাকে এবং (কাহারও দোষ) অনুসন্ধান করিও না, আর একে অন্যের গীবত (অগোচরে দুর্নাম)ও করিও না; তোমাদের মধ্যে কেন কি মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাইতে স্বীকার করিবে? উহা তো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করিয়া থাক; আর আল্লাহকে ভয় কর; নিঃসন্দেহে আল্লাহ বড় তওবা কবুলকারী, দয়ালু।” [সূরা হুজরাত-১২ নং আয়াত, পারা-২৬।] একটা হাদিস বলছি শোন, রসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, “কোনো মুসলমানের সম্বন্ধে রসনা দীর্ঘ করা সুদের সুদ এবং এক মুসলমানের সম্মান, জান ও মাল অন্য মুসলমানের জন্য হারাম।” [হজরত দাউদ বিদ মাইদ ও হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) মোসলেম, আবু দাউদ।]

তবে অত্যাচারিত ব্যক্তি ও নির্যাতিত ব্যক্তি অত্যাচারির অত্যাচার সম্বন্ধে লোকের নিকট বা বিচারকের নিকট নিন্দা করলে, বিচারকরা নেতার অবিচার, অত্যাচার, উৎকোচ গ্রহণ সম্বন্ধে লোক সম্মুখে নিন্দা করলে, অথবা কেউ ধর্মের কাজ করে দান-সদকা চাইলে, কিংবা শরীয়ত বিরুদ্ধ বেদাত প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে কিছু বললে পরনিন্দা হয় না। নিন্দিত ব্যক্তি ক্ষমা না করলে এই গোনাহর মাফ নেই-ইহা মানুষের হক। আল্লাহ ইহাতে হস্তক্ষেপ করবেন না। কেয়ামতে নিন্দিত ব্যক্তির গোনাহ্ নিন্দুকের ঘাড়ে পতিত হবে। এই সবও হাদিসের কথা।

কুরআন-হাদিসের কথা শুনে নাহিদার রাগ আসতে আসতে পড়ে গিয়ে আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নাহিদের হাত মুখ থেকে সরিয়ে ধরে রেখে বলল, কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা এতদূর এখনও আমি পড়ি নি। আল্লাহপাক আমাকে মাফ করুন, আমি তওবা করছি আর কোনোদিন পরনিন্দা করব না।

নাহিদ বলল, জেনে রেখ, আল্লাহ তওবাকারীকে খুব ভালোবাসেন। এখন এসব কথা বাদ দাও, তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব, রাজি আছ কিনা বল।

: কিন্তু তার আগে তোমার সঙ্গে আমার কিছু বোঝাপড়া আছে।

: সেটা ফিরে এসেও করতে পারবে। বোঝাপড়া করতে গেলে সেখানে যাওয়া হবে না।

: ঠিক আছে চল। তুমি গাড়িতে যাও, আমি কাপড়টা পাল্টে আসছি।

নাহিদ এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে এসেছিল। এখন নাহিদাকে নিয়ে সেখানে গেল।

গাড়ি থেকে নেমে নাহিদা কাজী অফিসের সাইনবোর্ড দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল।

নাহিদ তার হাত ধরে এক রকম টেনে নিয়ে যাবার সময় বলল, প্লিজ, কোনো সিন ক্রিয়েট কর না। করলে, আমার ও তোমার খালা-খালুর মান-সম্মান। থাকবে ন। যা কিছু করার বাসায় ফিরে করো।

এখন রাত এগারোটা। নাহিদা একা ঘরে জানালার রড ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছে। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে নাহিদ তাকে নিয়ে মার্কেটিং করেছে। তারপর আটটার দিকে বাসায় ফিরে নাহিদ তাকে এশার নামায পড়তে বলে সাড়ে আটটার সময় মসজিদে নামায পড়তে গেছে, এখনও ফিরে নি।  

নাহিদা বিয়ের রাতে তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করে ঘরেই নামায পড়তে বলেছিল। নাহিদ শুনে নি। গাল টিপে আদর করে বলে গেছে ওসব মেয়েলি কুসংস্কার আমি বিশ্বাস করি না।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা পার হয়ে যেতেও যখন এল না তখন বেশ ভয় পেয়ে নার্ভাস ফিল করতে লাগল। বাসার চারপাশে পাহাড়। পাহাড়ের গাছপালাগুলো অন্ধকারে দানবের মতো তার কাছে মনে হলো। আশপাশে কোনো বাড়ি-ঘর নেই। এখানকার বাড়ি-ঘরগুলো বেশ দূরে দূরে। থাকতে না পেরে দরজার কাছে এসে দেখল, কাদুর বাপ দরজার পাশে বারান্দায় একটা শীতলপাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে, আর তার হাতের তসবিহ নড়ছে। নাহিদা চাচা বলে স্নাকল।

কাদুর বাপ ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, জি আম্মা বলুন।

: তোমার সাহেব মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছি বলে গেলেন, এত রাত হলো এখনও ফিরছেন না কেন?

: উনি তো প্রতিদিন একটা-দেড়াটার সময় বাসায় ফিরেন।

নাহিদা চমকে উঠে বলল, কী বললে?

লাইটের আলোতে কাদুর বাপ নাহিদাকে চমকে উঠতে দেখেছে। বলল, সাহেবের জন্য আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। ওঁর এতটুকু ক্ষতি করার ক্ষমতা এ তল্লাটে করুর নেই।

: তা না হয় বুঝলাম; কিন্তু এত রাত পর্যন্ত থাকেন কোথায়?

: সাহেব মসজিদে আল্লাহর বন্দেগী করেন। কোনো কোনো দিন তো একেবারে ফজরের নামায পড়ে আসেন। তবে আজ মনে হয় তাড়াতাড়ি আসবেন। তারপর গেটের দিকে নজর পড়তে বলল, ঐ তো সাহেব আসছেন।

নাহিদা সেদিকে একবার চেয়ে ঘরে এসে খাটে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

নাহিদ ঘরে ঢুকে সালাম দিয়ে দরজা লাগিয়ে ঘুরে দু’হাত বাড়িয়ে বলল, তোমার চির কাক্ষিত নাহিদ তোমার বুকের ছোঁয়া ও ঠোঁটের আদর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ডাকছি, এস, ছুটে এসে ভালোবাসার আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়।

নাহিদার মন তার ডাকে সাড়া দেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল; কিন্তু লজ্জায় তা পারল না। কাঁপা গলায় সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আমি যে পায়ে শক্তি পাচ্ছি না, তোমার কাছে যাব কী করে?

নাহিদ বলল, আমি কোনো কথাই শুনতে চাই না, তাড়াতাড়ি এস বলছি।

নাহিদা আর স্থির থাকতে পারল না; কিন্তু লজ্জায় ও আনন্দে পা তুলতে পারল না। কোনো রকমে টলতে টলতে দু’এক পা এসে পড়ে যাচ্ছিল, নাহিদ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে চেপে ধরল।

নাহিদা আনন্দজনিত ভয়ে কয়েকবার চমকে উঠে কিছুক্ষণ নিথর হয়ে নিজেকে স্বামীর হাতে সঁপে দিল। তার মনে হলো সে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারপর নাহিদের বলিষ্ঠ বাহুতে নিষ্পেষিত হতে বাস্তবে ফিরে এসে সেও প্রতিদানে মেতে উঠল।

সে রাতে তারা ঘুমোতে পারল না। ভোরে গোসল করে ফজরের নামাজ পড়ল। তারপর নাস্তা খেয়ে নাহিদ কাদুর বাপকে কিছু ফরমাশ বাতলে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দু’জনে ঘুমিয়ে পড়ল।

এখন প্রায় বেলা বারোটা। কাদুর বাপ রান্নার কাজে ব্যস্ত। গেটে গাড়ির শব্দ পেয়ে বেরিয়ে এসে দেখল, তিনজন বয়স্ক লোক ও দু’জন মহিলা এবং গতকালের সেই মেয়েটি ভেতরে ঢুকছে।

আবুল হোসেন সাহেব কাদুর বাপকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে?

: জ্বি, আমি কাদুর বাপ। মানে আমি সাহেবের সবকিছু দেখাশুনা করি।

: তা তোমার সাহেব-মেম কোথায়?

: জি, তারা ঘুমাচ্ছেন।

: ঘুমাচ্ছেন মানে?

: জ্বি, উনারা দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন। আমি কত ডাকাডাকি করেও সাড়া পাই নি।

আবুল হোসেন সাহেব হাতঘড়ির দিকে চেয়ে শর্মিলাকে বললেন, এখন রাত বারোটা না দিন বারোটা?

শর্মিলা হাসি চেপে রেখে বলল, দিন বারোটা।

: তুমি একটা বোকা মেয়ে। তারপর বললেন, তুমি তো এখনও ব্যাচেলার, তাই। নচেৎ বুঝতে, নবদম্পতিরা প্রথম দিকের দিনগুলোকে রাত মনে করে।

শর্মিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইল।

জোহরা বেগম রেগে উঠে স্বামীকে ধমকের সুরে বললেন, তুমি একটা যাচ্ছেতাই লোক। এত বয়স হলো, কখন কাকে কী বলতে হয় তাও জান না।

নাহিদের বাবা নিয়াজ বললেন, আবুল হোসেন ভাই, ভাবি ঠিক কথা বলেছেন। তুমি সেই আগের মতোই রয়ে গেছ। আমরা বারান্দায় বসি চল, শর্মিলা ওদেরকে ডেকে নিয়ে আসুক।

বারান্দায় দু’টো চেয়ার ছিল। কাদুর বাপ আরও তিনটি চেয়ার এনে দিল।

শর্মিলা গিয়ে ওদের রুমের দরজায় প্রথমে আস্তে ধাক্কা দিয়ে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডেকে কাজ না হতে পরে জোরে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগল।

দরজায় ধাক্কার শব্দে দু’জনেরই ঘুম ভেঙে গেল। নাহিদ টেবিল ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল, সর্বনাশ! বেলা বারোটা বেজে গেছে।

নাহিদা বলল, তা বাজুক; কিন্তু দরজায় কে ধাক্কা মারছে তাড়াতাড়ি দেখ। নাহিদকে খাট থেকে নামতে দেখে আবার বলল, একটু অপেক্ষা কর, আমি কাপড়টা ঠিক করে পরে নিই।

নাহিদ দরজার কাছে এগিয়ে যেতে বলল, কে?

: ভাইয়া, আমি শর্মিলা।

শর্মিলার নাম শুনে নাহিদা তার উপর ভীষণ রেগে গেল।

নাহিদ দরজা খুলতেই শর্মিলা ঘরে ঢুকে হাসতে হাসতে নাহিদাকে উদ্দেশ করে বলল, কিরে, এক রাতে মধু চন্দ্রিমা পোষাল না বুঝি? তাই দিনকে রাত করে নিয়েছিস। শিগগির বাইরে চল, কারা এসেছে দেখবি?

নাহিদা অবাক হয়ে নাহিদকে বলল, তুমি বুঝি অফিস স্টাফদের দাওয়াত দিয়েছ? আচ্ছা তুমি কী? দু’একদিন পরে দিলে কী হতো? তুমি যাও, আমি বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে তারপর যাব।

শর্মিলা তার একটা হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসতে আসতে বলল, হাত-মুখ পরে ধুস, আগে চল তো।

নাহিদা বাইরে বেরিয়ে কিছুটা এসে ওদের সবাইকে দেখে ভীষণ লজ্জা পেল। তারপর শর্মিলার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে ঘরে ঢুকে গেল।

নাহিদ বারান্দায় বেরিয়ে সবার সাথে আব্বাকে দেখে ভয়মিশ্রিত লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

ওরা সবাই তাদেরকে দেখতে পেয়েছেন।

আবুল হোসেন সাহেব বড় গলায় শর্মিলাকে উদ্দেশ করে বললেন, ওদের দু’জনকেই ধরে নিয়ে এস। ওদেরকে আমি পুলিশের হাতে দেব। ভেবেছোটা কী? আমরা বেঁচে থাকতে ওরা যা খুশি তাই করবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।

শর্মিলা নাহিদাকে ধরে নিয়ে আসার সময় নাহিদকে বলল, ভাইয়া তুমিও এস।

নাহিদ ওদের আগে এসে সবাইকে কদমবুসি করল।

তাই দেখে নাহিদা অন্যদের কদমবুসি করে যখন আঙ্কেলকে কদমবুছি করে উঠে দাঁড়াল তখন আবুল হোসেন সাহেব ভাইঝির একটা হাত খপ করে ধরে শর্মিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি একটা রশি-টসি নিয়ে এস তো মা; এদের দু’জনকেই বাঁধতে হবে। ছাড়া থাকলে উড়াল দেবে।

নিয়াজ বললেন, তুমি ভুলে যাচ্ছ কেন, তোমার আমার যুগ এটা নয়। এ যুগের ছেলেমেয়েরা নিজেদের মতো সবকিছু করে।

আবুল হোসেন সাহেব বললেন, তাই বলে তোমার মতো আদর্শবান শিক্ষকের ছেলে হয়ে আমার ভাইঝিকে এয়ারপোর্ট থেকে হাইজ্যাক করে এনে বিয়ে করবে, এটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না। তোমার ছেলে বলে পার পেয়ে গেল, নচেৎ টের পাওয়াতাম।

তারপর নাহিদকে বললেন, তুমি যে একটা বাজে ছেলে জানতাম না। আরে বাবা, সবাই দেখেশুনে বিয়ে করে। দেশে এত ভালো মেয়ে থাকতে এরকম একটা তেঁদড় মেয়েকে কেউ বিয়ে করে?

জোহরা বেগম স্বামীকে ধমক দিলেন, তুমি থাম তো, কত বেজেছে খেয়াল করেছ? ওদের খিদে পায় নি বুঝি?

নাহিদার খালা সালমা বেগম বললেন, আপা ঠিক কথাই বলেছেন। ওদেরকে বকাবকি করে আর কী হবে? দোষ আপনাদেরই। ছেলেমেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তাদের বিয়ে দেওয়া গার্জেনদের কর্তব্য। আপনারা কর্তব্য পালন করেন নি।

হাবিব সাহেব বলে উঠলেন, নাহিদার খালা ঠিক কথা বলেছে। নাহিদ যখন সেকেন্ড টাইম দিনাজপুর গিয়েছিল, তখন তো আমি ফোন করে আপনাকে বলেছিলাম, ওখানেই বিয়ের কাজটা মিটিয়ে ফেলতে। এখন ওসব কথা বলে কোনো লাভ নেই। যা করলে ভালো হয়, তাই করুন।

আবুল হোসেন সাহেব ব্রিফকেস খুলে একটা খাম বের করে নাহিদার হাতে দিয়ে বললেন, সবাই যখন আমাকে দোষী সাব্যস্ত করছে তখন আমি তা স্বীকার করে টেক্সটাইল মিলের ডাইরেক্টরের পদ থেকে রিজাইন দিলাম। তারপর আর একটা বড় খাম বের করে সেটাও তার হাতে দিয়ে বললেন, আমি দোষী হলেও তোমার গার্জেন হিসেবে আমার কাছে তুমি খুব বড় অন্যায় করেছ। তাই তার শাস্তিস্বরূপ তোমার বাবার টেক্সটাইল মিল এবং তার ও আমার যা কিছু বিষয় সম্পত্তি আছে, সবকিছুর মালিকানা তোমাকে দিলাম। এবার তোমার জিনিস তুমি বুঝে নাও।

আঙ্কেলের কথা শুনে নাহিদা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চুপ করে রইল। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, এতবড় শাস্তি আমাকে দিও না আঙ্কেল, আমি সহ্য করতে পারব না। আমি কোনোকিছুই চাই না, শুধু তোমাকে ও আন্টিকে চাই। তোমার রিজাইন লেটারও অ্যাকসেপ্ট করব না। তারপর ফুঁপিয়ে উঠল।  

আবুল হোসেন সাহেব ভাইঝির গায়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে ভিজে গলায় বললেন, তুই ছাড়া আমাদের আর কে আছে বল, আমার বয়স হয়েছে। এবার সবকিছু তোকেই দেখাশুনা করতে হবে। না পারলে ঐ গুণ্ডা ছেলেটার সাহায্য নিবি বলে নাহিদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখালেন।

নাহিদা সামলে নিয়ে অনুযোগের সুরে বলল, আঙ্কেল কী হচ্ছে? ও যাই হোক না কেন, এখন আমার স্বামী আর তোমাদের বংশের একমাত্র জামাতা। জামাতাকে এত লোকজনের সামনে গুণ্ডা বলতে তোমার বিবেকে বাঁধল না?

সালমা বেগম ভাগ্নিকে উদ্দেশ করে বললেন, অনেক দস্যিপনা দেখিয়েছিস এবার তুই থাম। তারপর স্বামীর দিকে চেয়ে বললেন, এইসব করে কি দিনটা শেষ করবে, না সবাইকে নিয়ে বাসায় যাবে?

হাবিব সাহেব কিছু বলার আগে নাহিদা আঙ্কেলকে বলল, আগে বল, তোমরা সব এখানে এলে কী করে?

আবুল হোসেন সাহেব শর্মিলাকে দেখিয়ে বললেন, ঐ মেয়েটাও তোর মতো তেঁদড়। নাহিদের মতো ওরও একটা বাজে ছেলের সাথে বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর বললেন, ঐ মেয়েটাই তোর খালা-খালুর সঙ্গে পরামর্শ করে পরশু সন্ধ্যায় ফোন করে আমাকে বলল, “নাহিদ অ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালে আছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আপনি নাহিদা ও আন্টিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আসার পথে নাহিদের বাবাকেও নিয়ে আসবেন।”

তুই তো বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকা রওয়ানা হয়েছিলি, আমি তোর আন্টিকে নিয়ে পরের দিন ভোরে রওয়ানা দিয়ে প্রথমে নাহিদের বাড়িতে যাই। তারপর সেখান থেকে নিয়াজকে নিয়ে গতকাল রাত আটটার সময় তোর খালাদের বাসায় আসি। তাদের কাছে তাদের অপকর্মের কথা শুনে রাতেই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর খালা-খালু নিষেধ করল, তাই।

শর্মিলার স্যাক্রিফাইস নাহিদার মনকে নাড়া দিল। তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তোকে ছোট করব না। দোয়া করি, আল্লাহ পাক তোকে যেন সুখী করেন। তারপর তার দুটো হাত ধরে বলল, তোকে ভুল বুঝে আমি খুব অন্যায় করেছি; আমাকে তুই মাফ করে দে।  

শর্মিলা ভিজে গলায় বলল, ক্ষমা চাইছিস কেন? তোর জায়গায় আমি হলেও ঐ একই ভুল করতাম। তোরা দু’জন সুখী হ, আল্লাহ পাকের কাছে এই দোয়া করি।  

তারপর নাহিদা ছাড়া সবাইকে কদমবুছি করে নাহিদকে করার সময় বলল, ছোট বোনের কথা মনে রেখ ভাইয়া। আমার প্লেনের সময় হয়ে এসেছে, এখন আসি। তারপর ভিজে গলায় সালাম দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *