এক্সপেরিমেন্ট

এক্সপেরিমেন্ট

.

বন্দিপুর। কলকাতা থেকে মাইল বারো দূরে খড়দার এক বিশিষ্ট জায়গা। বছর দশেক আগেও বন্দিপুর ছিল অখ্যাত, অজ্ঞাত। কিন্তু আজ তার চেহারা পালটে গেছে। একটানা অনেকগুলো বড় বড় বাড়ি হয়েছে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে। এর মধ্যে দেওয়াল ঘেরা সবচেয়ে বড় বাড়ির ফটকে লেখা আছে–শান্তি ভবন। বাড়ির মালিক বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. শান্তি দাস।

সন্ধে হয় হয়। মাটির বুকে আনাচে কানাচে, অন্ধকারের ছোঁয়াচ লাগলেও গাছের মাথায় এখনও দিনান্তের শেষ আলোর রেশ রয়েছে। চৈত্র মাস। একটানা গুমোট গরমের পর সবেমাত্র ঝিরঝির হাওয়া বইছে। সিলয়েট ছবির মতো ধূসর আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ে চলেছে ঘরপানে৷ পুব আকাশে পাহাড়ের মতো একটা কালো মেঘ উঁকি মারছে, গাছপালার পিছন থেকে। ঠিক এমন সময়ে একটা প্রিমিয়ার প্রেসিডেন্ট গাড়ি এসে থামল শান্তি ভবনের সামনে। প্রথমেই নামলেন বিজ্ঞানী ড. বালম আর ডি পি মুখার্জি। গাড়ির চাবি বন্ধ করে ড. দাস দুই বন্ধুকে নিয়ে সটান চলে এলেন ল্যাবরেটরির মধ্যে। ঘরের মধ্যে ঢুকতেই আপনা থেকেই উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠল সমস্ত ঘর। ঘরের মাঝখানে বিচিত্র আকারের বিশাল বিশাল কয়েল, অজস্র তারের সমাবেশ। চারপাশে নানান আকারে অনেকগুলো মোটর, ট্যাঙ্ক, টিউব আর বিচিত্র দর্শন প্রচুর যন্ত্রপাতি। বিরাট কালো সুইচবোর্ডের উপর নানান আকারের মিটার ডায়ালগুলো জ্বল জ্বল করছে মার্কারি ভেপার ল্যাম্পের নীলাভ আলোয়।

একে একে সমস্ত মিটারগুলো চেক করা হয়ে গেল। ড. বালম ঝুঁকে পড়লেন ইলেকট্রন গানের গ্যালভানো মিটারের উপর। শান্তি, এখনও ভেবে দেখো। আমি বলছি এই এক্সপেরিমেন্টের অনেক বিপদ আছে।

ড. বালম-এর কথায় উত্তেজিত হয়ে উঠলেন ড. দাস। দপ দপ করে জ্বলে উঠল চোখ দুটো। উত্তেজনায় ফরসা মুখ লাল হয়ে উঠল।

না না, কোনও বিপদ নেই। একটি প্রাণীরও ক্ষতি হবে না এতে। হতে পারে না। ডিপির তো কোনও সন্দেহ নেই! তুমি কি নিজেকে আমাদের চেয়েও বড় বলে মনে করো?

চওড়া কালো ফ্রেমের চশমার মধ্যে দিয়ে ড. বালমের দিকে তাকালেন ড. ডি পি মুখার্জি। অল্প অল্প বাতাসে পাতলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।

শান্তি ঠিক বলেছে, বালম। সত্যি কোনও সন্দেহ নেই আমার। তোমার কোনও সন্দেহ থাকলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখো না একবার।

না, কোনও কথা বললেন না ড. বালম। শুধু একবার তাকালেন ওদের দিকে। চাপা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল ওর বুক থেকে। তারপর চালু করে দিলেন ছোট ছোট হাই-টেনশান জেনারেটারগুলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সজীব হয়ে উঠল অ্যাটম আইসোলাগ্রামের টিউবগুলো। কয়েক মুহূর্ত চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন। পর পর অনেকগুলো নব ঘুরিয়ে কী যেন অ্যাডজাস্ট করলেন ড. বালম৷

এরপর অ্যাটম আইসোলাগ্রামের উপর নজর রেখে সোজা চলে এলেন কনট্রোল বোর্ডের কাছে। একটা লিভার সজোরে পেছনে টেনে দেবার সঙ্গে সঙ্গে গ্যালভানো মিটারের বড় ডায়ালের কাঁটাটা জীবন্ত হয়ে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে, ডান দিকে হেলে পড়ল। একটা প্যাড টেনে নিয়ে লিখতে শুরু করলেন ড. বালম। দাস আর ড. ডি পি দুজনেই মনে মনে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন।

না, শুধু এরাই নয়, ড. বালম নিজেও সন্তুষ্ট হলেন। একের পর এক জটিল সমস্যাগুলো অতি সহজেই সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

কতক্ষণ কেটে গেল কে জানে। দেওয়ালে লাগানো ঘড়ি চলছে টিক টিক শব্দে। হঠাৎ ড. বালম কথা বলে উঠলেন।

তোমার এক্সপেরিমেন্ট আবার পরীক্ষা করে দেখলাম শান্তি। তোমার ওয়েভ অ্যাটমিক থিয়োরির অনেকাংশের সঙ্গেই একমত আমি। কিন্তু একটা মারাত্মক ভুল রয়ে গেছে তোমার অ্যাটম ইকোয়েশানের মধ্যে। এই যে, যেখানটায় তুমি…

ব্যাস, অনেক হয়েছে। এবার চুপ করো বালম। আমার ইকোয়েশানকে তুমি বলছ ভুল। তার মানে আমাকে তুমি অপমান করতে চাইছো। ভুলে যেও না, আমি ড, শান্তি দাস। এখনও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ চলছে দাস থিয়োরি নিয়ে। আর তুমি কিনা…

রাগে, উত্তেজনায় কথা আটকে গেল। কয়েক মুহূর্ত মাথা নিচু করে কী যেন ভাবলেন ড, দাস। তারপর ফেটে পড়লেন বোমার মতো।

এই–এই মুহূর্তে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করব আমরা। তাই নিজের হাতেই তালা দিয়ে দিয়েছি ঘরের দরজায়। হাজার চেষ্টা করলেও আর তোমরা বাইরে যেতে পারবে না। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এক্ষুনি শুরু হবে আমাদের এক্সপেরিমেন্ট।

অদ্ভুত দেখাচ্ছে ড. দাসকে। উত্তেজনায় ছিপছিপে দেহটা ফুলে ফুলে উঠছে। দু-জনেই বাক্যহারা। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন ওর দিকে। এ কী সত্যি! আজই। এখনই!

বাইরে সমস্ত আকাশটা ফালা ফালা হয়ে গেল বিদ্যুৎ শিখায়। প্রচণ্ড আওয়াজে বাজ পড়ল কোথায়। বাজের আওয়াজে চমকে উঠলেন সকলে। কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

এই তো, এই তো। গ্রেট এক্সপেরিমেন্টের উপযুক্ত সময়। এক্ষুনি শুরু হবে যুগান্তকারী দাস এক্সপেরিমেন্ট। পৃথিবীকে নিশ্চল করে থামিয়ে দেব আমি এখনই।

.

০২.

সমস্ত দেহটা থর থর করে কেঁপে উঠল ড. বালমের। একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে। ড. দাসের সর্বাঙ্গে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দিল। সর্বাঙ্গে যেন হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহিত। চোখের দৃষ্টি অস্বাভাবিক, তীক্ষ্ণ শ্বাপদের মতো। চোখের মণি দুটো অশান্ত হওয়ার মতো লক্ষ্যহীন।

বালম–বালম, এখনও কি তুমি বুঝতে পারছে না। যুগান্তকারী এক পরীক্ষার মুখোমুখি আমরা। বলো, বলো বালম–কেউ কি কোনওদিন ভাবতে পেরেছিল? ভাবো তো, পৃথিবী চলেছে এক জটিল পথে। নিজের অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে নির্দিষ্ট দূরত্বে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে কোন অনাদি কাল থেকে কে জানে, আবার আমাদের সকলকে নিয়ে সূর্যও ছুটে চলে গ্যালাক্সি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে। আবার গ্যালাক্সি সিস্টেমও ছুটে চলেছে অজস্র সর্পিল নীহারিকাপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে। আর.. উঃ! ভাবো তো বালম কী প্রচণ্ড গতিতে ছুটছি আমরা… কোথায় যাচ্ছি… কেন যাচ্ছি… না গেলেই বা ক্ষতি কী… ছুটে চলাই কি বেঁচে থাকার কারণ? আরও কত প্রশ্ন…কত সমস্যা… কী তার সমাধান… কেউ কি জবাব দিতে পেরেছে কোনও কালে? কিন্তু এবার সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেব আমরা। অক্ষয় অমর হয়ে থাকব আমরা তিনজন।

পাগলা হাতির মতো ক্ষেপে উঠেছে ঝড়। ঘন ঘন বিদ্যুতের শিখায় মুহুর্মুহু আলোকিত হয়ে উঠেছে সমস্ত ল্যাবরেটরি। বিকট শব্দে আবার কোথায় যেন বাজ পড়ল।

তুমি ঠিক বলেছ ডি পি। আমাদের তো বয়স কম হল না। শান্তির এক্সপেরিমেন্টের পেছনেই কেটে গেল আমাদের সমস্ত জীবন। তোমাদের চেয়ে আমার বয়সই বেশি। চেয়ে দেখো আমার দিকে। হাতের চামড়া সব ঢিলে হয়ে ঝুলে পড়েছে। অল্প অল্প করে কাঁপছে হাতগুলো। আর কত দিনই বা বাঁচব! তাই সারা জীবন যার পেছনে কাটল, সেই পরীক্ষার ফলাফল তো জানতেই হবে। হবে কি হবে না, এই দ্বন্দ্বে অস্থির হয়ে উঠেছি। তাই আমিও বলছি, আজ থেকেই আরম্ভ হোক আমাদের এক্সপেরিমেন্ট।

আস্তে আস্তে মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথাগুলো বলে পাশের বেঞ্চের উপর বসে পড়লেন ড. বালম৷

অভ্যস্ত হাতে কয়েকটি বোতাম টিপে দিলেন ড. দাস। সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে গেল সুরের সোলেনয়েড পরিচালিত রিমোট কনট্রোল সুইচগুলো। মুহূর্তের মধ্যে গম গম করে গর্জন করে উঠল মাটির গভীরে বিশাল বিশাল জেনারেটারগুলো। বাঁ পাশে আর একপ্রস্থ বোতাম টিপে ধরলেন ড. দাস। চক্ষের নিমেষে ঘরের এক কোণে রাখা বিরাট লম্বা লম্বা টিউবগুলো গনগনে লাল হয়ে উঠল। প্রায় পঞ্চাশ ফুট লম্বা একটা টেস্ট আর্ক টানতেই ওজোনের কটু গন্ধে ভরে উঠল সমস্ত ঘরটা। ঘুরে ঘুরে সমস্ত মিটারগুলো দেখতে লাগলেন ডি পি।

না শান্তি। একই ভোল্টেজ আছে। সুন্দরভাবে কাজ করে চলেছে সমস্ত টিউবগুলো। এখন যে কোনও সময়ে তুমি তোমার অ্যাটমিক ব্রেক চালু করতে পার।

তুমি ঠিক বলেছো ডি পি৷ স্পিড আর মোশানের দিক নির্দেশক সমস্ত যন্ত্রগুলো অদ্ভুত ভালো কাজ করছে। ওই সাদা লিভারটা টানার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রগুলোর আসল কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর এর মারফতই জানতে পারব যে মহাকাশের অজস্র গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পৃথিবী নামে অতি ক্ষুদ্র এক আলোর কণিকা তার অনন্ত যাত্রাপথে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। জন্মলগ্ন থেকে যে যাত্রা শুরু করেছিল পৃথিবী আজই বুঝি তার প্রথম বিরতি। কী আনন্দ যে হচ্ছে আমার! ওঃ কতদিনের স্বপ্ন আমার! দার্শনিকের মতো শোনাল ড, দাসের কথাগুলো।

ওদের মনের কথা বুঝি জানতে পেরে গেছে বাইরের প্রকৃতি। মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেছে কালবৈশাখীর তাণ্ডব। বিশ্বের গূঢ়তম গোপন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চলেছে প্রকৃতির তিন সন্তান। অজানা আশংকায় স্তব্ধ হয়ে গেছে সবকিছু। কেবল কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ ছুটে চলেছে আকাশের বুকে।

জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালেন ড. বালম। চাঁদের আবছা আলোয় কেমন যেন মায়াময় হয়ে উঠছে চারিদিক। দূরের কোনও এক মন্দির থেকে সন্ধ্যারতির কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে। তাই শেষ লিভার টানার আওয়াজ বোধহয় পেলেন না ড. বালম।

অকস্মাৎ একটা জ্বলন্ত আগুনের শিখার মতো সাঁৎ করে আকাশের বুক থেকে ছিটকে গেল চাঁদটা। মৃদু আর্তনাদ করে দু-হাতে মাথা চেপে ধরলেন ড. বালম। অজানা আশংকায় শিউরে উঠল সমস্ত দেহটা।

চাঁদ নেই! হাজার হাজার নক্ষত্র এখন ছোট ছোট অলোকশিখা হয়ে প্রচণ্ড গতিতে উধাও হয়ে যাচ্ছে আকাশের বুক থেকে।

পেরেছি, পেরেছি! সফল হয়েছি আমরা। স্তব্ধ হয়ে থেমে গেছে পৃথিবী। সমস্ত গ্রহ নক্ষত্রগুলো পাগলের মতো ছুটে পালাচ্ছে পৃথিবীর কাছ থেকে। দেখো দেখো–ডায়ালের দিকে চেয়ে দেখো তোমরা। হা হা হা, পৃথিবী তুমি আজ আমাদের আজ্ঞাবহ মাত্র। অবিশ্বাস্য এক কর্কশ স্বরে চিৎকার করে উঠলেন ড. দাস।

বিকট আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়লেন ড. বালম। সব পরিষ্কার এখন। ওর সমস্ত আশংকাই আজ মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছে বাস্তবে। ল্যাবরেটরির শক্ত দেওয়ালগুলো গুঁড়িয়ে ধুলো হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে। ড. বালমের হাতের তলা থেকে লোহার শক্ত থামটা ধীরে ধীরে নরম হয়ে গুঁড়ো হয়ে গেল। সভয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালেন ড. বালম।

ওঃ কী বীভৎস! ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে ধুলো হয়ে যাচ্ছে হাতের হাড় মাংস। ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। ঝাপসা চোখের দৃষ্টি। তাড়াতাড়ি সঙ্গী দুজনের দিকে তাকালেন। না, কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। অথচ ড. বালম, নিশ্চিত জানেন মাত্র কয়েক ফুট দূরেই রয়েছে ওরা।

শান্তি, ডি পি, কোথায় কোথায় তোমরা… ফ্যাঁসফেঁসে স্বরে চিৎকার করে উঠলেন। বেশ কষ্ট হচ্ছে ওর। সত্যি কি কোনও আওয়াজ বেরুচ্ছে গলা দিয়ে?

যেন বহু দূর থেকে এক অস্পষ্ট স্বর ভেসে এল। এটা কি শান্তির গলা, না ডি পি-র? অথবা কি শোনার ভুল। ধীরে ধীরে মাথার উপরে ল্যাবরেটরির ছাদটা গুঁড়িয়ে ঝরে ঝরে পড়তে লাগল। পায়ের তলাকার মাটিও কেমন যেন কাঁপতে কাঁপতে নরম পাউডারের মতো হয়ে যেতে শুরু করল।

বালম… বালম… অভ্রান্ত তোমার ক্যালকুলেশান। তুমিই তো আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলে। বলেছিলে, একটাই মাত্র ল মেনে চলে অ্যাটম। অ্যাটম আর ইলেকট্রনগুলো ম্যাগনেটিক ফোর্সের জন্যেই নিজেদের কক্ষের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। আবার সকল বস্তু, বিশ্ব যাবতীয় কিছু এক অকল্পনীয় বেগে মহাশূন্যের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলার জন্যেই ওই ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফোর্সের জন্ম হয়। ইলেকট্রিক জেনারেটারকে থামিয়ে দিলে কী হয়? মুহূর্তের মধ্যে বিলুপ্তি ঘটে ম্যাগনেটিক ফিল্ডের। আর তার কারেন্ট তৈরি হয় না। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এটাই প্রযোজ্য।

সত্যি বালম, এক অবিশ্বাস্য থিয়োরি আবিষ্কার করেছ তুমি। আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই সেটা প্রমাণ করেছি। কিন্তু হায়, কে-ই বা আর দেখবে এ সব।

বহুদূর থেকে ভেসে এল ড. দাসের কথাগুলো। অনেক চেষ্টা করেও ওদের দেখতে পেলেন না ড. বালম। ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে সকল দেহটা। অঙ্গ প্রত্যঙ্গহীন ক্রমক্ষীয়মাণ একতাল মাংসপিণ্ডে পরিণত হচ্ছে ড. বালমের দেহটা। সকল বস্তু মলিকিউল-মলিকিউল থেকে অ্যাটমে পরিণত হচ্ছে… যা এক সময়ে এই পৃথিবীরই অংশ ছিল। অ্যাটমগুলো ক্রমেই স্ব-স্ব মৌলিক প্রোটন আর ইলেকট্রনে পরিণত হল। তারপর একসময় একরাশ ধোঁয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ল মহাশূন্যের বুকে। কয়েক মুহূর্ত আগেও যেখানে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর পৃথিবী নামে এক গ্রহ ছিল, এখন সেখানে কিছুই রইল না। কেবল শূন্যতা আর শূন্যতা।

.

০৩.

মহাকাশের বহুদূরে বহু নক্ষত্র জগতের ওপার থেকে কোনও এক দর্শক হয়তো এক আশ্চর্য অবর্ণনীয় ঘটনা দেখে থাকবে। বহু যোজন দূরে অবস্থিত আলোক বিন্দুরূপী পৃথিবীর সম্পূর্ণ ধ্বংস প্রত্যক্ষ করা ওর পক্ষে সম্ভব হবে না নিশ্চয়। কিন্তু সে দেখবে একটা নক্ষত্র মানে আমাদের সূর্য-নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে হঠাৎ স্থান পরিবর্তন করে নতুন এক স্থানে অবস্থান করছে। কারণ একটা গ্রহ হারিয়ে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে ওই সৌর জগতের। আর সেই ক্ষতি পূরণের জন্য প্রচণ্ডভাবে চেষ্টা করে চলেছে সূর্য সমেত সমস্ত সৌরজগৎটা। কারণ মহাজাগতিক বস্তুজগতের মধ্যে ভারসাম্য যে থাকতেই হবে।

[প্রথম প্রকাশ: বিস্ময় সায়েন্স ফিকশন, এপ্রিল-মে ১৯৭৩]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *