০৩.
সাতটা দিন যেন ঘোরের মধ্যে কেটে গেল তারপর। কাজটা কি ঠিক হল? হাতের লেখাটা ওঁর, ঠিকানা ওঁর বাড়ির। কিন্তু এ নিয়ে কেই বা যাচ্ছে তদন্ত করতে? হয়তো H.D. 31 আদৌ জবাব দেবে না। তাঁর এক নম্বর অনুমানটি যদি সত্য হয় অর্থাৎ ডিভোর্সি মেয়েটি যদি নতুন করে জীবনসঙ্গীর সন্ধানে পত্রমিতালীর পথ বেছে নিয়ে থাকে। আশা করছে অসংখ্য চিঠি পাবে। তার ভিতর বেছে নিয়ে চার-পাঁচটি স্যুটারকে জবাব দেবে। যারা চাকুরে, সুদর্শন, প্রায়-চল্লিশ। ডিভোর্সি হলেও ক্ষতি নেই, যদি না আগের আহাম্মকির একটি বোঝা কাঁধে চাপিয়ে থাকে।
অবশ্য ডিভোর্স-কেসে সে ঝামেলা স্ত্রীকেই সচরাচর পোহাতে হয়। কর্তা ‘যথাবিহিত কাঞ্চনমূল্যেই’ সচরাচর প্রায়শ্চিত্তটা করে থাকে।
আচ্ছা, ওর নিজের একটি সন্তান নেই তো? ও তো নিজেই ডিভোর্সি।
তা ছাড়া H.D. মানে কি? ‘হিন্দু ডিভোর্সি? হ্যাঁ তাই। ঐ যে আজন্মকুমারী মেয়েটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে, সে পার্ট-টাইম টাইপিস্ট, বয়স বত্রিশ, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, পাঁচ ফুট এক ইঞ্চিতার নম্বর H.U. 51–-অর্থাৎ ‘হিন্দু আনম্যারেড।
পত্রমিতালীর সম্পাদকমশাই দেখা যাচ্ছে বিচক্ষণ ব্যক্তি। ‘প্রজাপতি মার্কা’ দপ্তর খোলেননি, কিন্তু মূল কারবারটা ঐ দিকেই ঝুঁকেছে। তাই ক্রমিক সংখ্যাগুলি যে জাতের বিশেষণে বিভূষিত, সেগুলি জাতপাত এবং ‘ম্যারিট্যাল স্ট্যাটাস’-এর দ্যোতক।
যাক সে কথা, যে কথা ভাবছিলেন। ঐ H.D. 31-এর কথা। দু চারটি পত্রবিনিময়ের পরেই মেয়েটা জানতে পারবে–কে কেরানি, কে গেজেটেড অফিসার। কার বুড়ি-মা ব্যাটার-বৌয়ের সেবার প্রত্যাশায় বেতো ঠ্যাঙ নিয়ে প্রতীক্ষা করছে এবং কার নির্ঞ্ঝাটের সংসার। পত্রালাপের অবকাশে জেনে নেওয়া যাবে কী কী হবি, পড়াশুনা কতদূর, গাড়ি-বাড়ি আছে কি না। নিদেন নিজস্ব ফ্ল্যাট। তারপর কায়দা করে জেনে নিতে হবে : প্রথমপক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুর হেতুটা কী? সে কি বাথরুমে গায়ে (???)
কিন্তু হয়তো ওঁর এক নম্বর অনুমানটি ভুল। বিবাহের বন্ধনে ও নিজেকে বাঁধতে চাইছে না আদৌ। চাকরি করছে, একলা থাকছে, সিনেমা-থিয়েটার-জলসা-রেস্তোরাঁ, দিব্যি ফুর্তিফাৰ্তা করছে। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। কর্তার বাক্যবাণে বিদ্ধ হতে হয় না, ওর বান্ধবীর দিকে সে কী দৃষ্টিতে তাকায় তা নজর করতে হয় না, মায় ওর শার্টে বোতাম লাগাবার পরিশ্রমটুকুও সইতে হয় না।
কিন্তু!
হ্যাঁ, একটা বিশেষ চাহিদা ওর পক্ষে মেটানো মুশকিল। আবশ্যিক জৈবিক চাহিদা। এই পুরুষশাসিত সমাজে। উইমেন্স লিব-এর ধ্বজাধারিণীরা চাকুরিক্ষেত্রে বৈসাম্য রাখতে দেননি। ‘পোস্টম্যান’কে ‘পোস্টওম্যান’ এবং ‘চেয়ারম্যান’কে ‘চেয়ারপার্সন’ করে ছেড়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে মেটার্নিটি ওয়ার্ডের পাশাপাশি ‘পেটার্নিটি ওয়ার্ড’ খুলিয়ে দজ্জাল স্বামীর গর্ভসঞ্চারের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তেমনি ‘সোনাগাছি’র পাল্লা দেওয়া ‘হীরেগাছি পট্টি’ শহর প্রান্তে খোলাতে পারেননি। কনফার্মড ব্যাচিলার প্রৌঢ় বয়সেও আইন-সম্মতভাবে দেহের ক্ষুধা মিটিয়ে আসতে পারে প্রস-কোয়ার্টার্সে; চার অঙ্কের উপার্জনক্ষমা কুমারী, ডিভোর্সি বা বিধবার কোনো বিকল্প আয়োজন নেই। ক্যালকাটা কর্পোরেশনের ‘চেয়ারম্যান’কে উৎখাত করে কোন জাঁদরেল ‘চেয়ারওম্যান’ গদী দখল করলেও সে সুযোগ মহিলাদের দিতে পারবেন না, এই একদেশদর্শী পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায়।
হয়তো সেই হেতুতেই H.D. 31 পত্রমিতালীর প্রত্যাশী।
কিন্তু 36-24-37!!
নিশ্চয় সংখ্যাতত্ত্বে গোঁজামিল আছে কিছুটা।