২
আজ ক্লাস থেকে বেরিয়ে নিগার আর ময়লা জামা-কাপড় পরা একটা ছেলের সঙ্গে আফসানাকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে খুব অবাক হলো।
আফসানা নিগারদের বাসার পাশের বাসায় বাড়িওয়ালা আসির উদ্দিনের মেয়ে। তিন ভাইয়ের একমাত্র ছোটবোন। আসির উদ্দিন একজন নামকরা উকিল। তার তিন ছেলেই উচ্চশিক্ষিত ও সরকারি বড় বড় পদে চাকরি করেন। তাদের দু’টো গাড়ি। একটা আফসানার। আফসানা খুব অহংকারী। গরিব কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করে না। পাশের বাসার মেয়ে অথবা নিগার অপূর্ব সুন্দরী বলে হয়ত তার সঙ্গে মেলামেশা করে। শুধু মেলামেশা নয়, দুজনের মধ্যে বেশ অন্তরঙ্গতাও গড়ে উঠেছে। নিগার তার গাড়িতে করে প্রতিদিন ভার্সিটি যাতায়াত করে। সেই আফসানাকে একজন নগন্য ছেলের সঙ্গে ঐভাবে কথা বলতে দেখে এতক্ষণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কেরে ছেলেটা?
আফসানা হেসে উঠে বলল, বাদ দে ওর কথা, চল যাই।
যেতে যেতে নিগার বলল, একটা ন্যাস্টি ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলি এটা ভাবতেই পারছি না। এখন আবার তার কথা জিজ্ঞেস করতে হেসে উড়িয়ে দিলি। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
ছেলেটার কথা বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। পরে একসময় বলব। এখন খিধে পেয়েছে, বাসায় যাব।
কী এত কথা যে বলতে অনেক সময় লাগবে? মনে হয় ছেলেটা তোর কাজিন। গরিব বলে কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
তোকে মিথ্যে বলে এড়িয়ে যাব ভাবতে পারলি? ঠিক আছে চল, কবি নজরুল ইসলামের কবরের পাশে বসে ওর কথা বলব।
বসার পর বলল, ছেলেটার নাম আফজাল। ওর মা-বাবা নেই। তবে তিন চাচা, দাদা-দাদি ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন অনেক আছে। মা-বাবা মারা যাওয়ার সময় বয়স ছিল সাত বছর। সেই সময় আফজাল হারিয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ বিশ বছর পর যখন ফিরে এল তখন দাদা-দাদি মারা গেছেন। চাচারা তাকে গ্রহণ করল না। বলল, তুমি যে আফজাল তার প্রমাণ কী?
আফজাল কোনো প্রমাণ দেখাতে পারল না। ওদের জমি-জায়গা অনেক। গ্রামের মধ্যে সেরা ধনী। সবাই ভাবল, ডাকাতরা নিজেদের একজনকে আফজাল বানিয়ে পাঠিয়েছে। কিছুদিন থেকে ওদের টাকা-পয়সা ও সোনাদানার খোঁজ নিয়ে ডাকাতদের জানাবে। তাই চাচারা পরামর্শ করে ওকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। আর বলে দেয়, আবার যদি আসে, তা হলে মেরে ফেলবে অথবা পুলিশের হাতে তুলে দেবে।
নিগার বলল, আফজাল হারালই-বা কী করে? আবার ফিরে এলই-বা কী করে?
আফসানা বলল, মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আফজালকে চাচা-চাচিরা মোটেই দেখতে পারত না, পড়াশোনা না করিয়ে গরু-ছাগল চরাতে পাঠাত। ঠিকমতো খেতে-পরতে দিত না। অসুখ-বিসুখ করলে চিকিৎসা না করিয়ে ঐ অবস্থায় গরু ছাগল চরাতে মাঠে পাঠাত। না গেলে মারধর করত।
নিগার বলল, ওর দাদা-দাদি ছেলেদের কিছু বলত না?
না, ওর দাদা-দাদি নাকি খুব কঠিন মনের মানুষ ছিলেন। বিয়ের দু’বছরের মধ্যে আফজাল হওয়ার পর এক রাতে তার বাবা শোয়া অবস্থায় মারা যান। তাই আফজালের মাকে শ্বশুর-শাশুড়ী, স্বামীখাকী বলে গালাগালি করতেন। এমনকি মারধরও করতেন।
আফজালের মায়ের তখন ভরা যৌবন, দেখতেও খুব সুন্দরী ছিলেন। তাই খুব সাবধানে থাকতেন। রাতে মাথার কাছে ধারালো বঁটি নিয়ে ঘুমাতেন। এক গভীর রাতে বড় ভাসুর তার ইজ্জতের উপর হামলা করে। তখন আফজালের মা বঁটি দেখিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। ভাসুরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার সময় নিজের গলায় বঁটি চালিয়ে দেন। তারপর থানা-পুলিশ হতে টাকা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে কেসটা মিটিয়ে ফেলেন। মা মারা যাওয়ার পর আফজাল চাচা-চাচির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মামাবাড়ি চলে যায়। আফজালের মা আফ্রিদা খাতুন বেঁচে থাকতেই তার নানা-নানি মারা যান। তাঁদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে আফ্রিদা খাতুন বড়। আর ছেলে আসাদ উজ্জামান ছোট। ভাগ্নাকে লেখাপড়া করালে বড় হয়ে তার মায়ের সম্পত্তি চাইবে। তাই তাকে স্কুলে ভর্তি না করে গরু-ছাগল চরাতে মাঠে পাঠাতেন। এককথায় রাখালের মতো তাকে রাখেন এবং একটু ন্যায়-অন্যায় করলে ভীষণ মারধর করতেন। সেদিন খেতেও দিতেন না। একদিন গরু-ছাগল নদীর চড়ায় চরাতে গিয়ে নদীর পাড়ে বসে ক্ষিধের জ্বালায় আফজাল কাঁদছিল। এমন সময় একজন আলখেল্পাধারী লোক এসে তাকে কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করেন।
আফজাল তাকে সব কথা জানায়।
তখন আলখেল্লাধারী লোকটা ঝোলা থেকে রুটি ও ভুনা গোস্ত খেতে দেন। খাওয়ার পর বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। খাওয়া-পরার কোনো অসুবিধা হবে না।
আফজাল বলল, গরু-ছাগলের ব্যবস্থা কী হবে! এদের ঘরে কে নিয়ে যাবে?
লোকটি বললেন, সন্ধ্যে হয়ে গেলে ওরা নিজেরাই ঘরে চলে যাবে। তা ছাড়া যদি না যায়, তবু তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি তো আর ঘরে যাচ্ছ না। তোমাকে মারধর করতে পারবে না।
আফজাল চাচা-চাচি ও মামা-মামির অত্যাচার ও আধপেটা খাওয়ার কথা চিন্তা করে সেই আলখেল্লাধারী লোকটার সঙ্গে চলে যায়। তারপরের ঘটনা সে কিছুই নাকি জানে না। বছর দুই আগে সে হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার দাদার বাড়ির সদরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাত বছর বয়সে এখান থেকে চলে গেলেও তার সব কিছু মনে পড়ল। এদিক-ওদিক তাকাতে পাশে সেই আলখেল্লাধারী লোকটাকে পাশেই দেখতে পেল।
তিনি বললেন, যাও তোমার চাচা-চাচিদের কাছে পরিচয় দাও। তারা যদি তোমাকে গ্রহণ না করে, তা হলে মামার বাড়িতে গিয়ে পরিচয় দেবে।
ওর চাচারা তাড়িয়ে দিলে আফজাল নানার বাড়িতে গেল। একমাত্র মামা আসাদুজ্জামান ভাগনাকে চিনতে পারলেও না-চেনার ভান করে চাচাঁদের মতো একই কথা বলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন। এই হলো ঐ ন্যাস্টি ছেলেটার কাহিনী। তারপর চল এবার উঠি বলে আফসানা দাঁড়িয়ে পড়ল।
নিগার তার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল, তুই আফজালের এত কথা জানলি কী করে, না বললে উঠছি না।
আফসানা বলল, কিছুদিন আগে আফজাল বাবার কাছে এসে তার সব কথা বলে মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ কী করে ফিরে পাবে সে-ব্যাপারে যখন আলাপ করছিল, তখন আমিও সেখানে ছিলাম।
বিশ বছর সে যে নিরুদ্দেশ ছিল, কোথায় ছিল বা কী করত তা কিছুই বলে নি?
বললাম-না, এই বিশ বছরের কথা সে কিছুই জানে না। তবে বাবাকে একদিন জিজ্ঞেস করতে বললেন, মনে হয় কোনো বিশেষ কারণে কথাটা জানাতে চায় না। তাই হয়ত মিথ্যা করে বলেছে। তবে এমনও হতে পারে, ছেলেটা কোনো কারণে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। বিশ বছর পর আবার কোনো কারণে স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছে।
নিগার বলল, তোর বাবার কথাই ঠিক। তোকে তো দেখলাম ওর সঙ্গে বেশ হেসে হেসে কথা বলছিলি। তাতেই বুঝতে পারছি ওর সঙ্গে যথেষ্ট আলাপ করেছিস। তুই ওকে বিশ বছরের কথা জিজ্ঞেস করিস নি?
আফসানা হেসে উঠে বলল,তা আবার করি নি। বাবাকে যা বলেছে আমাকেও তাই বলেছে।
আচ্ছা, আফজালকে কি তোর শিক্ষিত ছেলে বলে মনে হয়?
বাবাকে সে-কথাও জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলল, একদম অশিক্ষিত নয় বলে মনে হয়। বেশি লেখাপড়া না করলেও ওর মধ্যে যে একটা অলৌকিক শক্তি আছে, তা আমি বুঝতে পেরেছি।
আফসানা নিগারের হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আর খিদে সহ্য করতে পারছি না, চল তো।
নিগার যেতে যেতে বলল, ঘটনাটা যেমন ইন্টারেস্টিং তেমনি মিস্টিরিয়াস, তাই না?
আফসানা বলল, তোর সঙ্গে আমিও একমত।
.
মাস্টার্স পড়ার সময় নিগার যখন বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে নাইট ক্লাবে যেতে শুরু করল তখন মেয়ের ব্যাপারে মুক্তাদীরের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেল। মেয়ে যে মায়ের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠছে, তা আগেই বুঝতে পেরে তাকে অনেক বুঝিয়েছেন। এখন আরো বোঝান, কিন্তু নিগার বলে, মা তোমার সঙ্গে যা করেছে, তা অমানবিক। আমি তার মতো কিছু করব না। তুমি আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা কোরো না। আমি যা কিছু করি-না কেন, তোমার মনে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু করব না।
মেয়ে এইসব বললেও মুক্তাদীরের দুশ্চিন্তা গেল না। চিন্তায় চিন্তায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাকে রাজি করাতে পারলেন না। একদিন স্ট্রোক করে ক্লিনিকে ভর্তি হলেন। সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা গেল, হার্টের রুগী। সেইসঙ্গে ডায়াবেটিসও আছে। ক্লিনিকে মাস খানেক থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন। বাসায় ফেরার কয়েক দিনের মধ্যে আবার স্ট্রোক করে মারা গেলেন।
বাবা মারা যাওয়ার পর মেহের নিগার আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ক্লাব থেকে অনেক রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরতে শুরু করল। তা ছাড়াও মাঝে মাঝে বাসাতেই বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে নাচ-গানের আসর বসত। সেই সাথে খাওয়া দাওয়ার পর মদের আসর জমত। পুরোনো দু’জন কাজের লোক ও দু’জন কাজের মেয়ে এইসব দেখে তারা নিগারকে বোঝাবার চেষ্টা করল, কিন্তু সে তাদেরকে কড়া থ্রেটিং দিয়ে বলল, আবার যেদিন আমার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে আসবে, সেদিন সবাইকে তাড়িয়ে দেব। তারপর থেকে তারা আর কিছু বলে না।
নিগারের অধঃপতন দেখে একদিন ভার্সিটি যাওয়ার সময় গাড়িতে আফসানা তাকে বলল, চাচা মারা যাওয়ার পর থেকে তুই কিন্তু বেশ একটু বাড়াবাড়ি করছিস।
নিগার ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল, বাড়াবাড়ি করছি মানে?
অত আর ন্যাকামি করিস নি।
হেসে উঠে নিগার বলল, ও নাইট ক্লাবে যাওয়ার কথা বলছিস? বাবা বেঁচে থাকতেও তো যেতাম।
তা যেতিস, এখন কিন্তু তুই মদ খেয়ে গভীর রাতে ফিরিস। বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে বাসাতে নাচ-গান করিস। মদ খাস। এটা কি তোর উচিত হচ্ছে? সেদিন তোর কাছে যাচ্ছিলাম, বাসায় ঢুকে কাজের বুয়া ও কাজের লোকদের যা বললি, তা শুনে তোর সঙ্গে দেখা না করে ফিরে এলাম। শোন, আমি তোর বন্ধু। তোর ভালোর জন্য বলছি, নাইট ক্লাবে আর যাস না। এখন তোর উচিত বিয়ে করা। তুই একা থাকিস, বর্তমানে সমাজের যে অবস্থা, কখন কী হয় বলা যায় না। বন্ধুদের মধ্যে কাউকে যদি পছন্দ হয়, তা হলে তাকে তুই বিয়ে করে ফেল। আর সে-রকম কেউ যদি না থাকে, তা হলে বাবা বলছিল, তার হাতে নাকি একটা ভালো ছেলে আছে। তোর মতামত পেলে ব্যবস্থা করবে।
ভালো ছেলে যখন তোর সঙ্গে চাচা বিয়ের ব্যবস্থা করছেন না কেন?
বাবা তোর বর্তমানের অবস্থা কিছু কিছু জেনেছেন। তাই হয়ত তোর ভালোর জন্য মতামত জানতে চেয়েছেন।
নিগার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, আমার কথা বাদ দে, আমি এখন বিয়ে করব না। পরীক্ষার পর ফরেনের যে-কোনো দেশে চলে যাব। দেশে থাকতে আমার মোটেই ইচ্ছা করে না। কথাটা চাচাকে জানিয়ে দিস।
কিন্তু তুই যে পথে এগোচ্ছিস তা ঠিক কি না একবারও ভেবে দেখেছিস? আর বয়ফ্রেন্ডদের বাসায় এনে নাচ-গান করিস না।
দেখ আফসানা, আমার ব্যাপারে নাক গলাবি না। আমাকে আমার মতো চলতে দে।
এরপর থেকে নিগার আফসানাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল।
আফসানা মনে দুঃখ পেলেও ব্যাপারটি নিয়ে তেমন মাথা ঘামাল না।
একদিন নিগার ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখল, আফজাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। বুঝতে পারল, আফসানাকে খুঁজছে। সেদিন আফজালকে ন্যাস্টি ছেলে মনে হলেও আজ কিন্তু তা হলো না। আধ ময়লা অর্ডিনারি পোশাক পরে থাকলেও তার সুন্দর ও সুঠাম বলিষ্ঠ দেহের দিকে তাকিয়ে মনে শিহরণ বয়ে গেল। কাছে এসে বলল, কাউকে খুঁজছেন মনে হচ্ছে?
আফজাল তার দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করল। বিফল হয়ে বলল, হ্যাঁ খুঁজছি। কিন্তু আপনি… বলে কথাটা শেষ না করে থেমে গেল।
নিগার মৃদু হেসে বলল, আপনি যাকে খুঁজছেন সে আমার ফ্রেন্ড ও নিয়ারেস্ট নেবার।
অবাক কণ্ঠে আফজাল বলল, আমি যে আপনার ফ্রেন্ডকে খুঁজছি, জানলেন কেমন করে?
আমার ফ্রেন্ডের নাম আফসানা। নিশ্চয় তাকে খুঁজছেন?
হ্যাঁ তাকেই খুঁজছি। কিন্তু আমাকে তো আপনি চেনেন না, জানেন না। আমিও আপনাকে চিনি না, জানি না। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
চলুন যেতে যেতে বলছি বলে নিগার হাঁটতে শুরু করে বলল, কিছুদিন আগে এখানে আফসানার সঙ্গে আপনাকে কথা বলতে দেখেছিলাম। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন?
ও মনে পড়েছে, আফসানাদের বাসা থেকে ফেরার সময় পাশের বাসার গেটে একদিন আপনাকে একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখেছিলাম। তিনি নিশ্চয় আপনার বাবা?
হ্যাঁ।
সেদিন ওঁকে অসুস্থ বলে মনে হয়েছিল। কেমন আছেন?
বাবা নেই, কিছুদিন আগে মারা গেছেন।
আফজাল “ইন্নলিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়ে বলল, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। আপনার আর কে কে আছেন?
আর কেউ নেই।
মানে? আপনার মা, ভাইবোন বা অন্য কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই?
মা-ভাইবোন নেই। বাবার আত্মীয়স্বজন আছে কি না জানি না। আর মায়ের আত্মীয়স্বজন থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযযাগ নেই।
ততক্ষণে তারা মধুর ক্যান্টিনের কাছে চলে এসেছে। নিগার বলল, আফসানা আজ আসে নি। চলুন-না ক্যান্টিনে, কিছু চা-টা খাওয়া যাক।
মাফ করবেন। আমাকে এক্ষুনি একজায়গায় যেতে হবে। কথা বলতে বলতে তাই দেরি হয়ে গেল। তারপর তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আফজাল হনহন করে চলে গেল।