আজাহার মথুরার গল্প

আজাহার মথুরার গল্প

বর্ধমান সদরঘাটে দামোদর নদের বিস্তীর্ণ বালুকাবেলার ওপারে পলেমপুর নামে একটা গ্রাম আছে। পলেমপুরের পূর্বনাম ছিল পালোয়ানপুর। এখন কিন্তু পালোয়ানপুর বললে কেউ চিনতেই পারবে না। বলবে, “পালোয়ানপুর? সি কোন্ গেরাম বটে?” তবে প্রবীণ যারা, তারা অবশ্য সে-কথা বলবে না। শুধু বর্তমানের সঙ্গে অতীতের তুলনা করে দুঃখ-সুখের হিসেবনিকেশ করবে।

এই পালোয়ানপুর গ্রামে আজাহার আর মথুরা নামে দু’জন পালোয়ান থাকত। আজাহার ছিল মুসলমান। মথুরা ছিল হিন্দু।

আজাহারের আসল বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার এক গ্রামে। আর মথুরা ছিল বর্ধমান জেলারই লোক। মথুরার পূর্বপুরুষরা এই বর্ধমান জেলাতেই পালোয়ানপুরে জন্মেছে, মরেছে। তবে মানুষের মতো মানুষ হয়ে থাকেনি তারা। ঠ্যাঙাড়েগিরি করে, ডাকাতি করে জীবন কাটিয়েছে। কাজেই মথুরাও সেই রক্তের ছেলে হয়ে মস্ত বীর হয়ে উঠল। সোনারুন্দীর জমিদার বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে মথুরার বাবার সঙ্গে আজাহারের বাবা কাশেম আলির পরিচয় হয়। ব্রিটিশ তখন রাজত্ব করছে এদেশে। সেই সময় কোনও এক ক্ষেত্রে ডাকাতির অভিযোগে কাশেম আলি ধরা পড়ে এবং তার ফাঁসি হয়। মথুরার বাবা তখন আজাহারকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং মথুরার সঙ্গে অপত্যস্নেহে লালনপালন করেন।

আজাহার আর মথুরা দু’জনে একসঙ্গে বড় হওয়ায় অভিন্নহৃদয় বন্ধু হয়ে উঠল। দু’জনেই হয়ে উঠল বীরের মতো বীর। চেহারা হল বুনো মোষের মতো।

তবে দিনকাল খারাপ হওয়ায় ডাকাতির জাতব্যবসা তারা ধরল না। তারা গেল অন্য পথে। শরীরের মধ্যে আসুরিক শক্তি সঞ্চয় করবার জন্য উঠেপড়ে লাগল তারা। গ্রামের প্রান্তে নদীর ধারে কুস্তির আখড়া হল তাদের।

সেইখানে চলল নিষ্ঠার সঙ্গে দু’জনের শক্তিসঞ্চয়ের মহড়া। ডন বৈঠক দিয়ে, মুগুর ভেঁজে, কুস্তি করে অল্পদিনের মধ্যেই দু’জনে দু-দুটো অসুর হয়ে দাঁড়াল।

যখন তারা বুঝল যে, তাদের সঙ্গে গায়ের জোরে পেরে উঠবে এই অঞ্চলে এমন কেউ নেই, তখন একদিন আজাহার বলল, “চল মথুরা, এইবার আমরা ঠ্যাঙা-লাঠি ধরে চারদিক দাপিয়ে বেড়াই।”

মথুরা বলল, “না। আমার মাথায় অন্য এক মতলব আছে।”

আজাহার বলল, “কীরকম?”

“চুরি ডাকাতি বড় বাজে কাজ। ও কাজ আর করব না।’

“তা হলে কী করবি বল? একটা কিছু তো করতে হবে?”

“হ্যাঁ। সেই একটা কিছুর বুদ্ধিই আমার মাথায় এসেছে। আর সে বুদ্ধিটা কাজে লাগাতে

পারলে আমাদের পেটও ভরবে, খাতিরও পাব। বেশ বুক ফুলিয়ে চারদিকে ঘুরে বেড়াব আমরা।”

আজাহারের আর তর সইছিল না। বলল, “বলিস কী রে! তা এরকম মতলব যখন মাথায় এসেছে তখন বলেই ফেল কী করতে চাস?”

মথুরা বলল, “আমরা দিগ্বিজয়ে বেরোব।”

আজাহার হতাশ হয়ে বলল, “দূর। তাতে কী হবে?”

মথুরা বলল, “আরে! আগে শোনই না, কী বলতে চাই।” “বল।”

“আমরা দিগ্বিজয়ে বেরোব মানে কী? একেবারে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ঘুরে বেড়াব। অর্থাৎ আমরা এমন চ্যালেঞ্জ নেব যে, তাতে আমাদের দু’জনের বাজিমাত হবেই।” “বটে!”

“হ্যাঁ।”

“সেই চ্যালেঞ্জটা কী শুনি?”

“চ্যালেঞ্জটা হল, আমরা চারদিকে রটিয়ে দেব যে আমরা প্রত্যেক গ্রামে গিয়ে সেখানকার মস্তানদের সঙ্গে লড়াই করতে চাই। শামিয়ানা খাটিয়ে সকলের চোখের সামনে লড়াই হবে আমাদের। সেখানে শক্তিপরীক্ষায় যদি কেউ আমাদের হারাতে পারে তবে আমরা তার কাছে দাসখত লিখে নতিস্বীকার করে চলে আসব। আর যদি না পারে তবে সেই গ্রামের লোকদের আমাদের কাছে বশ্যতাস্বীকার করে রুপোর মেডেল ঝুলিয়ে দিতে হবে আমাদের গলায়। মেডেলের গায়ে সেই গ্রামের নাম খোদাই করা থাকবে। লেখা থাকবে আমরা পরাজিত।”

আজাহার বলল, “শুধু তাই নয়। মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে দিয়ে আসব।”

মথুরা বলল, “না, তা করব না। সেই পরাজয়ের খেসারত স্বরূপ নগদ একশো টাকা দিতে হবে তাদের।”

ভাই।” মথুরা বলল, “এতে আমাদের পেটও ভরবে, টাকাও হবে। ডাকাতির চেয়ে বরং বেশি রোজগার হবে এতে। লোকে আমাদের ঘৃণা না করে ভক্তি করবে। পুলিশও পেছনে লাগবে না। বেশ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করব আমরা। আর যেখানে যে দেশেই যাই না কেন, জয় আমাদের হবেই।”

আজাহার তো লাফিয়ে উঠল শুনে, “মা-শা-আল্লা। মা-শা-আল্লা। ঠিক বলেছিস।”

আজাহার বলল, “বটেই তো! কে পারবে আমাদের সঙ্গে?”

মথুরা বলল, “আমি তো আমার এই সাঁড়াশির মতো হাত দুটো দিয়ে যাকে ধরব তাকে একেবারে বেঁকিয়ে দেব।”

আজাহার বলল, “আর আমি করব কি, আমার এই এক হাতে যার মাথাটা একবার ধরব, আমার হাতের ভেতরেই তার মাথাটা গুঁড়িয়ে একেবারে ছাতু করে দেব।”

আজাহার আর মথুরা দু’জনেই মনে মনে এই ফন্দি এঁটে লোকমুখে সেই কথা সব জায়গায় প্রচার করে দিল। একেই তো আজাহার মথুরার গায়ের জোর এত বেশি ছিল যে, সেই ভয়ে সবাই তটস্থ হয়ে থাকত। তার ওপরে তাদের এই প্রস্তাবের কথা শুনে ভয়ে পিলে শুকিয়ে গেল আশপাশের গ্রামের লোকদের।

আজাহার, মথুরার সঙ্গে শক্তিপরীক্ষায় জয়লাভ করতে হবে। কিন্তু সেই পরীক্ষায় এগোবে কে? যমের মতো অমন দু-দু’জন মূর্তিমান বিভীষিকার সামনে গিয়ে কে দাঁড়াবে? কেউ সাহস করে না।

গ্রামে গ্রামে তখন স্যাকরারা গিয়ে রুপোর মেডেল তৈরি করতে বসল। সোনার চেনে গাঁথা হবে সেই রুপোর মেডেলের মালা। সেই মালা দুলবে আজাহার আর মথুরার গলায়। রোদ লেগে, আলো লেগে ঝলমল করবে সেই মালা।

গ্রামের লোকেরা চাঁদা তুলতে শুরু করল। কেননা শুধু মেডেল দিলেই তো হবে না। তার সঙ্গে সেলামি বা প্রণামী হিসেবে দিতে হবে একশো টাকা। না দিয়ে উপায়ই বা কী?

দু-দু’জন অসুরের হাতে বেঘোরে প্রাণ দেওয়ার চেয়ে নতিস্বীকার করা অনেক ভাল। আজাহার মথুরার মতো বীর কালেভদ্রে জন্মায়। অতএব জেনেশুনে তাদের সঙ্গে পাল্লা

দিতে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আজাহার, মথুরা প্রথমেই গেল সগরাইতে। এখান থেকে দুটো রাস্তা বেঁকে গেছে দু’দিকে। বাঁ হাতি রাস্তাটা সোজা চলে গেছে ছোট বৈন্যান, রায়না আর কারেলাঘাটের দিকে। তারপর আর পথ নেই। দামোদর পার হয়ে উঠতে হবে জামালপুরের ঘাটে। আর ডান হাতি, মানে সোজা দক্ষিণমুখো রাস্তাটা চলে গেছে একলক্ষ্মী, বুলচাঁদ, মোগলমারি হয়ে জাহানাবাদ (আরামবাগ)। আজাহার মথুরা ঠিক করল, সগরাই হয়ে সেয়ারাবাজার হয়ে সোজা রাস্তা ধরে জাহানাবাদের দিকে চলে যাবে। এই ভেবে সগরাইতে গিয়ে উঠল তারা।

সগরাই গ্রামের লোকেরা তো ভয়েই অস্থির।

যাই হোক, রাত্রিবেলা মস্ত শামিয়ানার নীচে আজাহার, মথুরা হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়াল। ঢাক আর কাঁসিতে বাজনা উঠল লড়াইয়ের।

আসরে মাথা হেঁট করে ঢুকল ভুবন সর্দার। ভুবন সর্দার এ অঞ্চলের নামকরা ডাকাত। আজাহার বলল, “কী সর্দার! লড়বে নাকি?”

ভুবন বলল, “না হুজুর।”

মথুরা বলল, “সে কী!”

ভুবন বলল, “আমি আপনাদের দাস।”

আজাহার সকলকে শুনিয়ে বলল, “তোমরা শোনো হে, বিখ্যাত ভুবন সর্দার বলছে সে নাকি আমাদের দাস।”

সবাই বলল, “আমরা সাক্ষী। আমরাও আপনাদের কাছে আমাদের নতিস্বীকার করছি।”

মথুরা বলল, “তা হলে নিয়ে এসো আমাদের রুপোর মেডেল।”

আজাহার মথুরার গলায় আংটা দেওয়া সোনার চেন ছিল। তাতে এঁটে দেওয়া হল রুপোর মেডেল। একটা আজাহারকে। একটা মথুরাকে।

মথুরা ভুবন সর্দারকে বলল, “এরকম ক্ষমতা নিয়ে তুমি মানুষ মারো সর্দার!” “কী করব! এ যে আমাদের জাত ব্যবসা।”

আজাহার বলল, “ঠিক আছে। এবার থেকে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য কিছু করো। মনে রেখো এটা তোমার প্রভুর আদেশ।”

“হুজুর মা বাপ।” বলে ভুবন তার লাঠি মাটিতে নামিয়ে রেখে বলল, “এই নামালাম লাঠি। আর এ কাজ করব না।”

আজাহার, মথুরা এবার গেল আমলেতে।

আমলের মোনা ঘোষ আর পোনা পান ছিল নামকরা পালোয়ান। যেমন শক্তিমান, তেমনই দুর্ধর্ষ।

আমলে বাজারে লড়াইয়ের আসরে দু’পক্ষ মুখোমুখি দাঁড়াল।

একদিকে আজাহার, মথুরা। অপরদিকে মোনা, পোনা।

আজাহার বলল, “কী রে মোনা, লড়বি নাকি?”

মোনা বলল, “আলবত।”

মথুরা পোনাকে বলল, “তুই?”

“এক হাত হয়ে যাক না! মন্দ কি?”

আজাহার, মথুরা বলল, “এখনও ভেবে দ্যাখ।”

মোনা, পোনার এ অঞ্চলে খাতির ছিল খুব। কাজেই কিছুতেই তারা হারস্বীকার করতে সাহস পাচ্ছিল না। অথচ মুখে বললেও ভয়ে বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করতে লাগল তাদের। বলল, “ব-ব-বললুম তো।”

আজাহার, মথুরা বলল, “তোরা তো এখনই তোতলাতে শুরু করেছিস। এর পরে কী করবি?”

দর্শকদের ভেতর থেকে একজন বলল, “এর পরে পাঁকে শুয়ে গড়াগড়ি খাবে।”

মোনা, পোনা বুঝল হাওয়া খারাপ। বলল, “না ভাই। সাহস পাচ্ছি না। ক্ষমা করো তোমরা। আমরা হারস্বীকার করছি। শুধু তাই নয়, বরাবরের জন্য এ গ্রাম ছেড়েও চলে যাচ্ছি আমরা। কেননা পরাজয় স্বীকার করে এ গ্রামে মাথা উঁচিয়ে আমরা আর থাকতে পারব না। শুধু গ্রামে কেন, এ তল্লাটে থাকতে পারব না।”

সঙ্গে সঙ্গে ঢাকের বাদ্যি তুমুল ভাবে বেজে উঠে আজাহার-মথুরার জয় ঘোষণা করল। গ্রামের লোকেরা আজাহার-মথুরার পায়ের তলায় একশো টাকা রেখে গলায় ঝুলিয়ে দিল সেই রুপোর মেডেল। তারপর সারারাত ধরে আজাহার মথুরাকে নিয়ে শোভাযাত্রা করে চারদিক প্রদক্ষিণ করল।

পরদিন আজাহার, মথুরা আবার রওনা হল অন্য দেশের দিকে।

আজাহার, মথুরার নামে তখন এমন বিভীষিকা লেগে গেছে চারদিকে যে, কোনও পালোয়ানই আর মাতব্বরি করতে সাহস পায় না। যে শোনে আজাহার, মথুরার নাম, সেই গা-ঢাকা দেয়।

অতএব লড়াই আর হয় না।

দেশ দেশান্তরে তখন নাম ছড়িয়ে পড়েছে তাদের।

আজাহার, মথুরা টাকার বাণ্ডিল নিয়ে, মেডেল ঝুলিয়ে ঘুরতে থাকে।

তাদের নিয়ে মুখে মুখে ছেলে-ভুলানো ছড়াও বেরিয়ে গেল কত। ছড়া শুনে দুষ্ট ছেলেরা কান্না ভুলে মায়ের বুকে মুখ লুকোতো। যেই কেউ বলত ওই আজাহার আসছে, ওই মথুরা আসছে, অমনি ছেলেমেয়েরা ভয়ে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরত।

যাই হোক, আজাহার, মথুরা এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন ঊচালনের প্রান্তে এসে হাজির হল।

ঊচালন হল বর্ধমান জেলারই অন্তর্গত একটি গ্রাম।

বাঁধা সড়ক ধরে সোজা গ্রামের ভেতরদিকে চলে গেছে একটা রাস্তা। সেই রাস্তার ধারে প্রকাণ্ড একটা বটগাছের নীচে বসল দু’জনে।

তখন গ্রীষ্মকাল। বেশ ফুরফুর করে বাতাস বইছিল। আজাহার, মথুরার ক্লান্তি দূর হয়ে গেল সেই শীতল বাতাসে। গাছের ডালে ডালে পিক পিক করে পাখি ডাকছে। কত রংবেরঙের পাখি।

তখন সন্ধে হয়ে আসছে। ক্লান্ত পাখিরা আসছে গাছের ডালে আশ্রয় নিতে। কলবল কিচিরমিচির করে তারা সারাদিনের সুখদুঃখের কথা বলছে।

আজাহার বলল, “বেশ জায়গাটা না?”

মথুরা বলল, “হ্যাঁ।”

আজাহার বলল, “এবার কিন্তু একঘেয়ে লাগছে সব। যেখানেই যাই সেই একই ব্যাপার। কেউ আর লড়াই করতে চায় না। নাম শুনলেই ভয়ে পালায়। নয়তো নতিস্বীকার করে।”

মথুরা বলল, “কে লড়বে বল? তাদের আর দোষ কী? ভয়েই তো পিলে শুকিয়ে যায় সব। আমাদের এমন অমানুষিক শক্তির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ লড়তে কি কেউ পারে?”

“তাই তো বলছি। আর ভাল লাগছে না। অনেক টাকা হয়ে গেছে আমাদের। এগুলো বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আবার নতুন উদ্যমে বেরনো যাবে।”

“তা অবশ্য মন্দ বলিসনি।”

“আজ এই গ্রামে চ্যালেঞ্জ সেরে কাল বরং ফেরা যাবে কী বল?” “হ্যাঁ, তাই।”

আজাহার, মথুরা বিশ্রাম সেরে গ্রামে ঢুকবে ভাবছে এমন সময় দেখতে পেল রোগা বেঁটে কালোমতো একটা লোক নিজের মনে গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।

লোকটিকে দেখতে পেয়ে আজাহার ডাকল, “ও ভাই, শোনো?”

লোকটি উত্তরও দিল না। ফিরেও তাকাল না।

আজাহার আবার ডাকল, “ও ভাই…?”

মথুরা ডাকল, “এই যে! শুনছ?”

লোকটি এবার গান থামিয়ে শিস দিতে দিতে ওদের কাছে এগিয়ে এল। তারপর মাথার ঝাঁকড়া চুল নাড়িয়ে দু’হাত কোমরে রেখে কায়দামাফিক ভাবে দাঁড়িয়ে বলল, “আমায় ডাকছেন?”

আজাহার বেশ ভারিক্কি গলায় বলল, “হ্যাঁ। তোমাকেই ডাকছি। কেননা এখানে তুমি ছাড়া তো আর কেউ নেই।”

“কী দরকার বলুন?”

মথুরা বলল, “তুমি কি এই গ্রামেরই লোক?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।”

“কী নাম তোমার?

“আমার নাম বাঁকা।”

“বাঁকা! সে আবার কী নাম?”

“এরকমই নাম। আমি নামেও বাঁকা, কাজেও বাঁকা। বাগদিপাড়ায় থাকি। সবাই আমাকে বাঁকা বাগদি বলে।”

“মথুরা বলল, “বেশ। তা দেখে তো তোমাকে বেশ ভাল লোক বলেই মনে হচ্ছে।”

“আজ্ঞে ভাল লোক আমি মোটেই নই। আমার সঙ্গে কারও বনে না। আমার সঙ্গে কেউ বেগড়বাঁই করলেই আমি তার সঙ্গে বাঁকা ব্যবহার করি।”

“সে তো খুব ভাল। তা বলছিলাম কি, আমরা অনেক দূর থেকে আসছি। আজ রাত্রে তোমাদের গ্রামে অতিথি হতে চাই।”

“খুব ভাল কথা। অতিথি হন। কোনও আপত্তি নেই।”

মথুরা বলল, “তা তুমি গ্রামে গিয়ে একটু খবর দিতে পারো?”

“অতিথি হবেন এর জন্য খবর দিতে কে যাবে? গ্রামে যান। যার বাড়ি ইচ্ছে উঠুন। কেউ না করবে না। অত্যন্ত অতিথিবৎসল গ্রাম আমাদের।”

মথুরা বলল, “তবু যাও না। গিয়ে একটু খবর দিয়ে এসো না ভাই?”

লোকটি বেশ প্রসন্ন হয়ে বলল, “আচ্ছা যাচ্ছি। এত করে বলছেন যখন।” বলে সে যাওয়ার উপক্রম করতেই আজাহার বলল, “ওহে শোনো?”

লোকটি ফিরে তাকাল, “বলুন।”

“আর একটা কথা বলব তোমাকে।”

“আবার কী কথা?”

“তোমাদের গ্রামে যদি তেমন পালোয়ান গোছের কোনও লোক থাকে, তবে তাকেও একটু তৈরি থাকতে বোলো।”

লোকটি এবার অবাক হয়ে বলল, “কেন?”

“আমরা তার সঙ্গে লড়াই করব।”

আজাহারের কথায় লোকটির এবার সন্দেহ হল খুব। সে আর একটু কাছে এগিয়ে এসে কপালটা ঈষৎ কুঁচকে বলল, “তার মানে?”

আজাহার বলল, “মানে অবশ্য একটাই আছে। সে তোমার জানবার দরকার নেই। যাও, তুমি গ্রামে গিয়ে খবর দাও।”

লোকটি বলল, “সে আবার কেমন কথা! আপনারা কে, কী আপনাদের পরিচয়, কিছু না জেনে আমি তো গ্রামে যাব না।”

“সে তোমার জানবার কোনও দরকার নেই।”

“দরকার নেই মানে? আপনারা অতিথি হতে চাইছেন ভাল কথা। কিন্তু অতিথি হয়ে আবার লড়াই করবার প্রস্তাব করছেন কেন? আগে আপনাদের পরিচয় দিন। তারপর গ্রামে যাব।”

আজাহার বলল, “আমাদের পরিচয় পেলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবে। যা বলি তাই করো।”

লোকটি রেগেমেগে বলল, “এঃ। অজ্ঞান হয়ে যাবে না হাতির মাথা হয়ে যাবে। আপনাদের পরিচয়টা দিয়েই দেখুন না, অজ্ঞান হই কি, কী হই, তখন দেখতে পাবেন।”

আজাহার বলল, “আমরা পালোয়ানপুরের লোক। আমাদের নাম আজাহার, মথুরা।”

“তাতে কী হয়েছে?”

মথুরা বলল, “কেন, আমাদের নাম শোনোনি?”

“না। অমন বিটকেল নাম আমার বাবাও কখনও শোনেনি।”

মথুরা কটমট করে তাকাল লোকটির দিকে। ইচ্ছে হল এক ঘুসিতে লোকটার মুখটাকে ফাটিয়ে দেয়।

লোকটি বলল, “চোখ রাঙালে কী হবে? ও নাম শুনিনি। যাক। এবার আপনার অভিপ্রায়টা খুলে বলুন দেখি?”

লোকটির কথা শুনে আজাহারের মাথা তো গরম হয়ে উঠল। যাদের নাম শুনলে বাঘে গোরুতে ভয়ে এক ঘাটে জল খায় তাদের নাম জানে না এমন বেকুব কেউ যে কোথাও থাকতে পারে তা তাদের জানা ছিল না।

আজাহার আর মথুরার মধ্যে মথুরার মাথাটা ছিল একটু ঠাণ্ডা। সে অতিকষ্টে আজাহারকে

শান্ত করে লোকটিকে তাদের উদ্দেশ্যের কথা এক এক করে সব খুলে বলল। সব শুনে লোকটি বলল, “ও এই কথা। তোমরা বুঝি দেশে দেশে গিয়ে এসব কাজ করে বেড়াচ্ছ? তা তোমরা তো একটি চড়েরও খদ্দের নও বাপু, তোমাদের আবার লড়াই করবার শখ কেন?”

আজাহার রেগে বলল, “তুমি একটু মুখ সামলে কথা বলবার চেষ্টা করো।”

লোকটিও রেগে বলল, “কেন, ভয়ে নাকি? কে হ্যা তুমি যে, তোমার সঙ্গে মুখ সামলে কথা বলতে হবে?”

আজাহার বলল, “আমাদের এই চেহারা দেখলে যমের বুক পর্যন্ত শুকিয়ে যায়, আর তুমি বলছ কিনা আমরা একটি চড়ের খদ্দের নই?”

“যা ঠিক তাই বলছি।”

মথুরা ফিসফিস করে আজাহারকে বলল, “এই, বেশি খচমচ করিস না এর সঙ্গে। ব্যাটার বোধ হয় মাথাখারাপ আছে।”

লোকটি সে-কথা শুনতে পেয়ে বলল, “মাথাখারাপ আমার নয়। মাথাখারাপ তোমাদের। এখনও বলছি ঘরের ছেলে ভালয় ভালয় ঘরে ফিরে যাও। নাহলে একবার যদি ঠ্যাঙাতে আরম্ভ করি তো সহজে ছাড়ব না।”

এরপরে আর সহ্য করা যায় না। ছোট মুখে বড় কথা কে কবে সহ্য করেছে? আজাহারের সারা শরীরে যেন জ্বালা ধরে গেল। তেড়েমেড়ে উঠে দাঁড়াল সে।

লোকটি চোখ রাঙিয়ে বলল, “অ্যাই! বেশি রোয়াব নেবে না।”

মথুরাও তখন উঠে দাঁড়িয়েছে।

লোকটির রাগ আরও বেড়ে গেল, “বড্ড গরম দেখছি যে। ওসব আমার কাছে দেখিয়ো না, বুঝেছ? এই ঊচালনের নামকরা মস্তান আমি। অনেক আচ্ছা আচ্ছা লোককে ঘায়েল করে দিয়েছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এক্ষুনি ঠাণ্ডা করে দেব।”

আজাহার, মথুরা তো ভেবেই পেল না লোকটির সত্যিই মাথাখারাপ কিনা। মথুরা ব্যঙ্গ করে বলল, “ওরে আজাহার, একটা ইঁদুরের গর্ত দেখ। গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। উনি আমাদের ঠাণ্ডা করে দেবেন।”

লোকটিও ধমকে উঠল অমনি, “চুপ কর, ব্যাটা বদমাশ কোথাকার! টিটকিরি মারছে আবার।”

মথুরা বলল, “দ্যাখো, আমরা অনেক সহ্য করেছি। আমি ইচ্ছে করলে এখুনি এক হাতে তোমাকে টিপে মেরে ফেলতে পারি।”

“তা মারো না। দেখব কত মায়ের দুধ খেয়েছ।”

“না। চুনোপুঁটি মারা আমাদের কাজ নয়, আর ছুঁচো মেরেও আমরা হাত গন্ধ করতে চাই না। যাও, যা বলছি শোনো। গাঁয়ে গিয়ে খবর দাও।”

লোকটি বেদম খেপে গেছে তখন। বলল, “খবরটবর শিকেয় রাখো। আগে আমার সঙ্গে মোকাবিলা হোক। তারপর খবর। আমাকে এক হাতে টিপে মারবে বলেছ যখন, মারো আগে। তারপর খবর।”

আজহার বলল, “আমাদের ফের ঘাঁটাচ্ছ তুমি?”

“ঘাঁটাবার কী আছে? মারব যখন বলেছ তখন মারো। তুমি আমাকে এক হাতে টিপে মারবে আর আমি তোমাদের দু’জনকে দু’হাতে টিপে মারব। এসো, এগিয়ো এসো।”

আজাহার আর থাকতে পারল না এর পর। রেগে গিয়ে ঠাস করে লোকটার গালে মারল এক চড়। কিন্তু কী আশ্চর্য! যে চড় খেয়ে বহু আচ্ছা আচ্ছা লোকেরও ভুবন অন্ধকার হয়ে গেছে সেই চড় বেমালুম হজম করে লোকটি বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল আজাহার, মথুরার ওপর। তারপর দু’হাতে দু’জনকে ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল একটা ধানকাটা মাঠের মধ্যে।

সেই মহাশক্তিমান দু’দুটো মানুষ তো হতভম্ব হয়ে গেল। এও কি সম্ভব? এ যে বিশ্বাস করা যায় না!

লোকটির কিন্তু কোনও কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ নেই। মাঠে নামিয়েই শুরু করল তার খেলা। দু’হাতে দু’জনের চুলের মুঠি ধরে অবিরাম ঠোকাঠুকি শুরু করল। তার ওপর কিল, চড়, লাথি, ঘুসিও চলল বেপরোয়া ভাবে।

আজাহার, মথুরা অমন মার জীবনে খায়নি। মারের চোটে তারা তখন বাবা রে মা রে করতে লাগল।

লোকটি বলল, “কেমন আরাম লাগছে এবার? তখন বলেছিলুম না, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যা। ভালয় ভালয় ফিরে গেলেই পারতিস। যেমন গেলি না এইবার তার ফল ভোগ কর।”

আজাহার বলল, “লক্ষ্মী দাদা আমার। এবারের মতো রেহাই দাও আমাদের। আমাদের ঘাট হয়েছে ভাই।”

লোকটি বলল, “পাগল না মাথাখারাপ? এত সহজে আমি ছাড়ি কখনও? এই তো সবে শুরু।”

মথুরা বলল, “তোমার দুটি পায়ে পড়ি ভাই। তোমার কথা না শুনে ঝকমারি হয়েছে আমাদের।”

আজাহার বলল, “আল্লা কসম। আর কখনও আমরা কারও সঙ্গে লড়াই করতে যাব না। তোমাকে আমরা কথা দিচ্ছি ভাই।”

আজাহার, মথুরা দু’জনেই তখন আধমরা হয়ে গেছে। কেটে ছিঁড়ে রক্তও বেরুচ্ছে গা দিয়ে।

এবার বুঝি দয়া হল লোকটির। মার থামিয়ে বলল, “ঠিক বলছিস তো?”

আজাহার বলল, “খোদা কসম।”

“আর কখনও এইসব করতে বেরোবি না?”

“না।”

“তিন সত্যি কর।”

“করলাম।”

লোকটি বলল, “দেখলি তো আমার নামের মহিমা? আমি আগেই বলেছি যে, আমার সঙ্গে বাঁকা ব্যবহার করলেই আমি বেঁকিয়ে দেব। আমার নাম বাঁকা বাগদি। যাক। এবার কান ধরে দশবার ওঠবোস কর।”

আজাহার, মথুরা তাই করল।

“নাকখত দে।”

আজাহার, মথুরা তাই দিল।

লোকটি এবার ওদের ছেড়ে দিয়ে বলল, “যা ব্যাটারা। খুব বেঁচে গেলি এ-যাত্রা। আজকের মতো গাঁয়ে গিয়ে জিরিয়ে নে। কাল সকালেই পালাবি এখান থেকে। আর কখনও যদি এর ত্রিসীমানায় দেখি তো একেবারে শেষ করে ফেলব।” এই বলে আবার নিজের মনে গান গাইতে গাইতে প্রস্থান করল লোকটি।

সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে রাত্রি হয়েছে তখন।

আজাহার, মথুরা অতিকষ্টে হাঁফাতে হাঁফাতে গ্রামে গিয়ে ঢুকল। গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের কাছে গিয়ে ধপাস করে উপুড় হয়ে পড়ল দু’জনে।

মাতব্বর ব্যক্তিরা তখন মজলিস করছিল চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়ায় বসে। ওদের ওইভাবে পড়তে দেখেই উঠে এল সব। গ্রামসুদ্ধু লোক হইহই করে ছুটে এল।

সবাই জিজ্ঞেস করল, “ব্যাপার কী?”

গ্রামের প্রধান ভোলা চক্রবর্তী বললেন, “কে মশাই আপনারা?”

মথুরা অতিকষ্টে বলল, “একটু জল।”

সঙ্গে সঙ্গে জল এল।

আজাহার, মথুরার চোখে জলের ঝাপটা দিতে লাগল সকলে।

একজন বলল, “আপনারা কি পালোয়ানপুরের বীর বিখ্যাত আজাহার, মথুরা? আপনাদের গলায় সোনার চেনে রুপোর মেডেল রয়েছে দেখছি?”

আজাহার, মথুরা বলল, “হ্যাঁ ভাই। আমরা তারাই।”

“তা এমন দশা কে করল আপনাদের?”

আজাহার, মথুরা তখন সব কথা খুলে বলল ওদের।

সব শুনে গ্রামের লোকদের তো বিস্ময়ের অবধি রইল না। এমন যমের মতো চেহারার দু’-দু’জন লোককে একা কোনও লোক এইভাবে যে মারতে পারে, তা তাদের ধারণারও বাইরে।

গ্রামবাসীরা বলল, “না মশাই, সেরকম শক্তিমান লোক এ অঞ্চলে নেই। তা ছাড়া এ কি একটা বিশ্বাসযোগ্য কথা নাকি? আপনাদের শক্তির কাছে দেশ-দেশান্তরের লোক নতি স্বীকার করছে। আর আমাদের গ্রামের একজন লোক আপনাদের দু’জনকে একা এইভাবে মারবে এ কী করে বিশ্বাস করি বলুন?”

আজাহার বলল, “তা হলে কি বলতে চান আমরা মিথ্যে কথা বলছি? আমাদের দু’জনের এই অবস্থা যা আপনারা চোখে দেখছেন এও কি মিথ্যে?”

“তা হলে আপনাদের শুনতে ভুল হয়েছে। সে নিশ্চয়ই অন্য কোনও গ্রামের লোক।” মথুরা বলল, “আরে না না। শুনতে আমাদের একটুও ভুল হয়নি। সে নিজের মুখে বলেছে এই গাঁয়ে থাকে সে।”

ভোলা চক্রবর্তী বললেন, “অসম্ভব! এরকম একজন লোক আমাদের গ্রামে থাকবে অথচ আমরা তাকে চিনব না, এ কি একটা কথার মতো কথা?”

আজাহার বলল, “সে বলেছে এই গাঁয়ের বাগদিপাড়ায় সে থাকে।”

“বেশ তো, শুধু বাগদিপাড়া কেন, এই গ্রামে যত লোক আছে, ছেলে থেকে বুড়ো থেকে সবাইকে এনে হাজির করছি এখানে। কই দেখিয়ে দিন তো সেই লোকটিকে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই গাঁয়ের ষোলো আনা লোক সবাইকে লাইন দিয়ে দাঁড় করানো হল। আজাহার এক এক করে দেখল প্রত্যেককে। কিন্তু কোথায় সেই লোক! সেই আসল লোকটিকেই খুঁজে পাওয়া গেল না।

গ্রামবাসীরা বলল, “দেখলেন তো? বললুম ওরকম লোক নেই কেউ আমাদের গ্রামে। সে নিশ্চয়ই কোনও ভিন গাঁয়ের লোক। কেননা আমরা এই ক’জন ছাড়া আর একটিও বাড়তি লোক নেই এই গাঁয়ে।”

আজাহার বলল, “আশ্চর্য তো! আপনাদের ভেতর সত্যিই তো দেখলুম না সেই লোকটিকে।”

“আরে মশাই থাকলে তো দেখবেন? ওরকম শক্তিমান লোক এ তল্লাটে নেই।” “কিন্তু সে যে খালি গায়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল। নিজে মুখে বলল এই গাঁয়েই সে থাকে।”

“বাজে কথা বলেছে। ওরকম লোক এ গাঁয়ে থাকেই না! ছোটখাটো মস্তান অবশ্য একজন আমাদের গাঁয়েও আছে। সে হল পশ্চিমপাড়ার গোপলা। ওই দেখুন সে বসে আছে ওখানে।”

আজাহার, মথুরা অবাক হয়ে বলল, “তাই তো! বড় আশ্চর্যের কথা।”

ভোলা চক্রবর্তী বললেন, “আচ্ছা, সে কোনও নামটাম বলেছে আপনাদের?” “আজ্ঞে হ্যাঁ। নাম বলেছে।”

“কী নাম?”

“বাঁকা বাগদি।”

নামটা শোনামাত্রই সকলে যেন আঁতকে উঠল কীরকম! সবাই সবাইয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল।

ভোলা চক্রবর্তী বললেন, “বাঁকা বাগদি ! নামটা ঠিক শুনেছেন তো মশাই?”

“শুনেছি মানে? ও নাম আমরা জীবনে ভুলব?”

“এ-এ এ কী করে সম্ভব!”

“কেন, বাঁকা বাগদিকে আপনারা চেনেন না?”

“চিনি না মানে? বিলক্ষণ চিনি। সে তো এই গ্রামেরই লোক। গত বছর ঠিক আজকের দিনে, যে বটগাছটার তলায় আপনারা বসে ছিলেন সেই বটগাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়ে মরেছিল সে।”

এই পর্যন্ত শোনামাত্রই আজাহার, মথুরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরলে আর এক মুহূর্তও সে গ্রামে থাকতে রাজি হয়নি তারা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *