• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

বুদ্ধ – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

লাইব্রেরি » ক্যারেন আর্মস্ট্রং, শওকত হোসেন » বুদ্ধ – ক্যারেন আর্মস্ট্রং
বুদ্ধ – ক্যারেন আর্মস্ট্রং / অনুবাদ শওকত হোসেন

বুদ্ধ – ক্যারেন আর্মস্ট্রং / অনুবাদ – শওকত হোসেন

সূচনা

কোনও কোনও বৌদ্ধ বলতে পারে সিদ্ধার্থ গৌতমের জীবনী রচনা খুবই অবুদ্ধসুলভ ব্যাপার। তাদের চোখে কোনও কর্তৃপক্ষেরই শ্রদ্ধা পাবার যোগ্যতা নেই। বুদ্ধদের অবশ্যই স্বপ্রণোদিত হতে হবে। নির্ভর করতে হবে নিজেদের ওপর, কোনও ক্যারিশম্যাটিক নেতার ওপর নয়। যেমন বৌদ্ধ মতবাদের লিন-চি ধারার প্রতিষ্ঠাতা নবম শতকের এক পণ্ডিত তাঁর শিষ্যদের এমনকি এমন নির্দেশও দিয়েছেন, ‘যদি বুদ্ধের দেখা পাও, বুদ্ধকে হত্যা করো!’ কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হতে স্বাধীন থাকার গুরুত্ব বোঝাতেই এই উক্তি। গৌতম হয়তো এই বাক্যটির সহিংসতা অনুমোদন করতেন না। কিন্তু সারাজীবন তিনিও ব্যক্তির কাল্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। অন্তহীনভাবে নিজেকে শিষ্যদের মনোযোগ হতে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাই জীবন ও ব্যক্তিত্ব নয়, বরং তাঁর শিক্ষাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্বাস করতেন অস্তিত্বের গভীরতম কাঠামোয় খোদাই করা সত্যকে জাগিয়ে তুলেছেন তিনি। সেটা হচ্ছে ধম্ম: শব্দটার ব্যাপক দ্যোতনা রয়েছে, তবে প্রাথমিকভাবে দেবতা, মানুষ ও পশুপাখির জীবনের একটা মৌলিক বিধি তুলে ধরে। এই সত্য আবিষ্কারের মাধ্যমে আলোকিত জনে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। এক গভীর অন্তর্গত পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছেন। জীবনের জ্বালা-যন্ত্রণার মাঝে শান্তি ও মুক্তি লাভ করেছেন। এইভাবে গৌতম পরিণত হয়েছেন বুদ্ধে–আলোকিত বা জাগ্রতজনে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁর যেকোনও শিষ্য একইভাবে আলোকিত হতে পারবে। কিন্তু লোকে মানুষ গৌতমকে পূজা শুরু করলে নিজেদের কর্তব্য হতে বিচ্যুত করে বসবে। তখন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়ে মূল্যহীন নির্ভরশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে যা কোনও আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকেই বাধাগ্রস্ত করবে।

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহ এই চেতনার প্রতি বিশ্বস্ত। গৌতমের জীবন ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যেন সামান্যই আমাদের কাছে তুলে ধরে। সুতরাং আধুনিক মানদণ্ড অনুযায়ী বুদ্ধের জীবনী রচনা খুবই কঠিন, কারণ ঐতিহাসিকভাবে সঠিক বিবেচনা করা যাবে এমন খুব সামান্য তথ্যই আছে আমাদের হাতে। ২৬৯ থেকে ২৩২ বিসিই পর্যন্ত উত্তর ভারতীয় সাহরিয় রাজ্য শাসনকারী রাজা অশোকের লিপি থেকে বৌদ্ধ ধর্ম নামে কোনও ধর্মের অস্তিত্বের বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়। কিন্তু বুদ্ধের আনুমানিক দুইশো বছর পরের মানুষ ছিলেন তিনি। নির্ভরযোগ্য তথ্যের এই অপ্রতুলতার কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীর কোনও কোনও পশ্চিমা পণ্ডিত ঐতিহাসিক চরিত্র হিসাবে গৌতমের অস্তিত্বের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি ছিল তিনি স্রেফ সেই সময়ের শাক্য দর্শনের ব্যক্তিরূপ বা সৌর কাল্টের কোনও প্রতীক ছিলেন। কিন্তু আধুনিক পণ্ডিতরা এই সন্দিহান অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তাঁরা যুক্তি দেখান, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহে খুব সামান্য জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত ‘গস্পেল সত্যি’ থাকলেও আমরা মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারি যে সিদ্ধার্থ গৌতমের অস্তিত্ব প্রকৃতই ছিল। শিষ্যরা যতখানি সম্ভব তাঁর জীবন ও শিক্ষার কথা সংরক্ষণ করেছে।

বুদ্ধ সম্পর্কে জানবার প্রয়াস চালাতে গেলে আমাদের বিশাল আকৃতির বুদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিভিন্ন টেক্সটের বিষয়বস্তু জটিল ও এর বিভিন্ন অংশের মর্যাদা বিতর্কিত। তবে এটা মোটামুটিভাবে স্বীকৃত যে, অজ্ঞাত উৎসের উত্তর ভারতীয় পালি ভাষায় লিখিত টেক্সটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। যার সঙ্গে মঘধ ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হয়। স্বয়ং গৌতম হয়তো এ ভাষায় কথা বলে থাকবেন। থেরাভেদা পদ্ধতির অনুসারী শ্রী লঙ্কা, বার্মা ও থাইল্যান্ডের বুদ্ধরা এইসব গ্রন্থ সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু রাজা অশোকের আগে ভারতবর্ষে লেখালেখির খুব একটা চল ছিল না। পালি-বিধান মুখে মুখে সংরক্ষিত হয়েছে এবং সম্ভবত বিসিই প্রথম শতাব্দীর আগে লিপিবদ্ধ হয়নি। কেমন করে এইসব ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়েছিল?

মনে হয় ৪৮৬ সালে (প্রচলিত পাশ্চাত্য সময় অনুযায়ী) বুদ্ধের মৃত্যুর অল্প পরেই তাঁর জীবন ও শিক্ষার কাহিনীগুলো সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বুদ্ধ সন্ন্যাসীরা তখন যাযাবর জীবন কাটাতেন। তাঁরা গাঙ্গেয় অববাহিকার শহর-বন্দরে ঘুরে ঘুরে জনগণকে দুঃখ-দুদর্শা থেকে আলোকন ও মুক্তির বার্তা শেখাতেন। অবশ্য বর্ষার সময়ে পথ থেকে সরে যেতে বাধ্য হতেন তাঁরা, নিজেদের বিভিন্ন বসতিতে জমায়েত হতেন তখন। বর্ষাকালীন এই অবকাশের সময়ে সন্ন্যাসীরা তাঁদের মতবাদ ও অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করতেন। বুদ্ধের পরলোকগমনের অব্যবহিত পরেই, পালি টেক্সট আমাদের জানাচ্ছে, সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন প্রচলিত মতবাদ ও অনুশীলনের মূল্যায়নের লক্ষ্যে একটা উপায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সম্মেলন আয়োজন করেন। মনে হয় আনুমানিক পঞ্চাশ বছর পর উত্তর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কোনও কোনও সন্ন্যাসী তাঁদের মহান গুরুর কথা মনে রেখেছেন; অন্যরা আরও আনুষ্ঠানিক কায়দায় তাঁদের সাবুদ সংগ্রহ করেন। তখনও এসব লিখতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু যোগ অনুশীলন তাঁদের অনেককেই বিস্ময়কর চমৎকার স্মৃতিশক্তি যুগিয়েছিল। তো তাঁরা বুদ্ধের বয়ান ও যার যার গোষ্ঠীর বিধি-বিধানের বিস্তারিত মুখস্থ করার উপায় বের করেছিলেন। যেমনটা স্বয়ং বুদ্ধ হয়তো করে থাকবেন। তাঁরা শিক্ষার একটা অংশকে কবিতায় পরিণত করেছিলেন, হয়তো আবৃত্তি করে থাকবেন (লিখিত টেক্সটে আজও বর্তমান); তাঁরা সূত্রবদ্ধ ও পুনরাবৃত্তিমূল কায়দাও আবিষ্কার করেছিলেন যাতে সন্ন্যাসীরা এইসব বয়ান অন্তর দিয়ে শিক্ষা করতে পারেন। তাঁরা হিতোপদেশ ও বিধিনিষেধকে আলাদা কিন্তু অংশত একইরকম উপাদানের সমগ্রে ভাগ করেছেন এবং বিশেষ সন্ন্যাসীদের এইসব সংকলন মুখস্থ করে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় একশো বছর পর দ্বিতীয় বারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইতিমধ্যে টেক্সটসমূহ বর্তমান পালি লিপিতে রূপ নিয়েছিল বলে মনে হয়। একে প্রায়শঃই তিপিতাকা (‘তিনটি ঝুড়ি’) নামে অবিহিত করা হয়, কারণ পরবর্তী কালে ধর্মগ্রন্থসমূহ লিপিবদ্ধ করার সময় সেগুলোকে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন পাত্রে রাখা হয়েছিল: বয়ানের ঝুড়ি (সুত্তা পিতাকা), অনুশীলনের ঝুড়ি (বিনয়া পিতাকা) ও বিভিন্ন শিক্ষার একটা মিশ্র রূপ। প্রতিটি ‘ঝুড়ি’ আবার এভাবে ভাগ করা ছিল:

[১] সুত্তা পিতাকা, বুদ্ধের হিতোপদেশের পাঁচটি ‘সংগ্রহে’র (নিকয়া) সমষ্টি :

[ক] দিঘা নিকয়া: সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ, সাধারণ মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য ও বিসিই পঞ্চম শতকের ভারতীয় ধর্মীয় জীবনের নানান বিষয়ের ওপর আলোকপাতকারী দীর্ঘ আলোচনাগুলোর চৌত্রিশটির সংকলন। তবে বুদ্ধের গুণাবলী (সাম্পাসাদানিয়া) এবং তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোর (মহা পরিনিব্বানা) একটি বিবরণও আছে।

[২] মাজহিমা নিকয়া: ১৫২টি মাঝারি দৈর্ঘ্যের হিতোপদেশের (সুত্তা) সংকলন। এগুলোয় রয়েছে বুদ্ধ, আলোকপ্রাপ্তির জন্যে তাঁর সংগ্রাম ও আদি শিক্ষার বিপুল পরিমাণ কাহিনী এবং সেই সঙ্গে মৌল মতবাদের কয়েকটি।

[৩] সাম্যত্তা নিকয়া: অষ্টপথ ও মানুষের ব্যক্তিত্বের গঠনের মতো বিষয় অনুযায়ী বিভক্ত পাঁচটি সুত্তার সিরিজের সংকলন।

[৪] আঙুত্তারা নিকয়া: সুত্তার পাঁচটি ভাগ রয়েছে এখানে যেগুলো ধর্মগ্রন্থের অন্যান্য অংশেও অন্তর্ভুক্ত।

[৫] খুদ্দাকা-নিয়া: ক্ষুদ্র রচনার সংকলন, ধম্মপদের মতো জনপ্রিয় টেক্সট, বুদ্ধের শ্লেষ মেশানো কৌতুক গল্প ও ক্ষুদে কবিতা যার অন্তর্ভুক্ত; উদানা, বেশির ভাগই কাব্যরূপে রচিত বুদ্ধের আপ্ত বাক্যের সংকলন, প্রতিটি কেমন করে আবৃত্তি করতে হবে তার কায়দাসহ সূচনা সম্বলিত; বুদ্ধের জীবন সম্পর্কিত কিছু কিংবদন্তী সম্বলিত কাব্যের আরেকটি সংকলন সুত্তা নিপাতা; এবং কোনও ব্যক্তির কম্ম (কাজ) ) কীভাবে তার ভবিষ্যৎ সত্তাকে প্রভাবিত করে দেখানোর জন্যে বুদ্ধের অতীত জীবন ও তাঁর সহচরগণ সম্পর্কিত কাহিনী জাতকা।

[২] বিনয়া পিতাকা, সন্ন্যাসীদের অনুশীলন গ্রন্থ যা শাস্ত্রবিধি গ্রন্থিত করে। এটি তিন ভাগে বিভক্ত:

[১] সুত্তা বিভঙ্গা: পাক্ষিক সভায় অবশ্যই স্বীকার্য ২২৭টি অপরাধের তালিকা। প্রত্যেকটি নিয়ম কেমন করে এল তার ব্যাখ্যাসহ ধারাভাষ্য।

[২] খন্দকা: মহাভাগ্য (মহান সিরিজ) ও কুলাভাগ্য (ক্ষুদ্র সিরিজ)-এ বিভক্ত এগুলো, বৃত্তিতে যোগ দেওয়ার নিয়মকানুন, জীবনাচার ও উৎসবের উপায় বাৎলে দেয়। নিয়মের উৎসের ঘটনা ব্যাখ্যা করে ধারাভাষ্যও রয়েছে। প্রতিটি বিধিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ধারাভাষ্য বুদ্ধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিংবদন্তী সংরক্ষণ করেছে।

[৩] পরিবার: বিধিমালার সার ও শ্রেণীবদ্ধ করণ।

‘তৃতীয় ঝুড়ি’ (অভিধম্ম পিতাকা) দার্শনিক ও মতবাদ বিষয়ক বিশ্লেষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জীবনীকারের এতে তেমন আগ্রহ নেই।

দ্বিতীয় সম্মেলনের পর বৌদ্ধ আন্দোলনে মতবিভেদ দেখা দেয়। কয়েকটি গোত্রে ভাগ হয়ে যায় তা। প্রতিটি মতবাদই এইসব প্রাচীন টেক্সট গ্রহণ করে কিন্তু সেগুলোকে নিজস্ব শিক্ষা অনুযায়ী আবার সাজিয়ে নেয়। সাধারণভাবে কোনও কিছুই পরিত্যাগ করা হয়নি বলেই মনে হয়। যদিও সংযোগ এবং পরিবর্ধনের ঘটনা রয়েছে। স্পষ্টতই থেরাভেদা মতবাদের ধর্মগ্রন্থ পালি লিপিই তিপিতাকার একমাত্র ভাষ্য ছিল না, বরং কেবল এটাই অক্ষতভাবে টিকে গেছে। তারপরও হারিয়ে যাওয়া কিছু ভারতীয় রচনা ধর্মগ্রন্থের পরবর্তী সময়ের চীনা অনুবাদে বা তিব্বতী ধর্মগ্রন্থে বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায়, যা আমাদের সংস্কৃত টেক্সটের আদি সংকলন তুলে ধরে। সুতরাং সিই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকে বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় হাজার বছর পর এসব অনুবাদ রচিত হলেও কিছু কিছু অংশ পালি লিপির মতোই প্রাচীন এবং তাকে সমর্থন করে।

এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে বেশ কয়েকটা বিষয় বেরিয়ে আসে যা আমরা যেভাবে ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তুর শরণাপন্ন হচ্ছি তাকে প্রভাবিত করবে। প্রথমত, টেক্সটসমূহ বুদ্ধের নিজস্ব বাণীর সহজ সংকলন হিসাবে বোঝানো হয়েছে, এখানে সন্ন্যাসীদের পক্ষ হতে কোনও কর্তৃত্বপূর্ণ রচনার অংশ যুক্ত হয়নি। মৌখিক প্রেরণ প্রক্রিয়া ব্যক্তিক রচনাশৈলী রহিতঃ এইসব রচনা গস্পেল সম্পর্কে নিজস্ব স্বভাবজাত ব্যাখ্যা দানকারী ম্যাথু, মার্ক, ল্যুক ও জন নামে পরিচিত ইভেঞ্জালিস্টদের সমমর্যাদার কোনও বৌদ্ধের রচনা নয়। যেসব সন্ন্যাসী এসব টেক্সট সংকলিত করেছেন তাঁদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। পরবর্তী সময়ে যাঁরা নিজেদের লেখার কাজে নিয়োজিত করেছেন, জানি না তাঁদের সম্পর্কেও। দ্বিতীয়ত, পালি লিপি অবধারিতভাবে থেরাভাদীয় মতবাদ তুলে ধরে। হয়তো যুক্তির স্বার্থে আদি রূপকে বিকৃত করে থাকবে। তৃতীয়ত, সন্ন্যাসীদের যোগ-লব্ধ অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সত্ত্বেও এই ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া অনিবার্যভাবে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সম্ভবত বহু রসদ হারিয়ে গেছে, কিছু কিছু ভুল বোঝা হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে সন্ন্যাসীদের পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়েছে। এসব হিতোপদেশের কোনগুলো নির্ভুল ও কোনগুলো বানোয়াট, জানবার কোনও উপায় আমাদের নেই। আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক ইতিহাসের প্রয়োজন মেটানোর মতো তথ্য ধর্মগ্রন্থসমূহ আমাদের যোগায় না। এসব কেবল গৌতমের মৃত্যুর মোটামুটি তিন প্রজন্ম পরে তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কিত কিছু কিংবদন্তীর অস্তিত্ব দাবি করতে পারে, যখন পালি লিপি সুনির্দিষ্ট রূপ ধারণ করেছিল। পরবর্তী কালের তিব্বতিয় ও চীনা ধর্মগ্রন্থগুলো নিশ্চিতভাবে প্রাচীন রসদ ধারণ করলেও সেগুলোও কিংবদন্তীর আরও পরের পর্যায়কে তুলে ধরে। এছাড়া, এই সত্যটিও রয়েছে যে, রক্ষাপ্রাপ্ত প্রাচীনতম পালি পাণ্ডুলিপির বয়স মাত্র ৫০০ বছর।

তবে আমাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। টেক্সটসমূহ ঐতিহাসিক উপাদান ধারণ করে যা বিশ্বস্ত বলে মনে হয়। বিসিই পঞ্চম শতাব্দীর উত্তর ভারত সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারি আমরা, যার সঙ্গে বুদ্ধের সমসাময়িক জৈনদের ধর্মগ্রন্থ মিলে যায়। টেক্সটে বেদ-ধর্মের নির্ভুল উল্লেখ রয়েছে, যার সম্পর্কে পরবর্তী কালের ধর্মগ্রন্থ ও ধারাভাষ্যের রচয়িতা বেশ অজ্ঞ ছিলেন; মঘদের রাজা বিম্বিসারার মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারি আমরা, নগর জীবনের উন্মেষ ও সেই আমলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও জানতে পারি; প্রত্নতাত্ত্বিক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদদের আবিষ্কারের সঙ্গে এসব মিলে যায়। পণ্ডিতরা এখন নিশ্চিত যে, সম্ভবত এইসব ধর্মীয় উপাদানের কিছু কিছু একেবারে আদি বৌদ্ধ মতবাদের সমসাময়িক। বুদ্ধ স্রেফ বৌদ্ধদের আবিষ্কার, ঊনবিংশ শতাব্দীর এমন দৃষ্টিভঙ্গি আজ মেনে নেওয়া কঠিন বিপুল শিক্ষার ভেতর একটি আদি বুদ্ধিমত্তার দিকে নির্দেশকারী এক ধরনের সামঞ্জস্যতা রয়েছে, রয়েছে সম্পর্ক। এগুলোকে সমন্বিত সৃষ্টি হিসাবে চিন্তা করা কঠিন। এমন ঘটা অসম্ভব নয় যে এসব বাণীর কিছু কিছু সত্যিই খোদ সিদ্ধার্থ গৌতমের উচ্চারণ ছিল, যদিও সেগুলো ঠিক কোনগুলো সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারব না আমরা।

পালি লিপির এই বর্ণনা হতে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে: এখানে বুদ্ধের জীবনের কোনও ধারাবাহিক বিবরণ নেই। ছোট ছোট ঘটনার সাথে শিক্ষার উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্রেফ কোনও নিয়ম বা মতবাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও কখনও হিতোপদেশে বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের কাছে নিজের পূর্ব-জীবন বা আলোকপ্রাপ্তির কথা বলেছেন। কিন্তু ইহুদি ও ক্রিশ্চান ঐশিগ্রন্থে মোজেস বা জেসাসের জীবন বৃত্তান্তের মতো উন্নত সময়ানুক্রমিক কোনও বিবরণ নেই। পরবর্তী সময়ে বুদ্ধরা পরিবর্ধিত, ধারাবাহিক জীবনী রচনা করেছে। আমাদের কাছে তিব্বতীয় ললিতা-বিস্তারা (সিই তৃতীয় শতাব্দী) এবং পালি নিদান কথা রয়েছে (সিই পঞ্চম শতাব্দী), জাতকা কাহিনীর ধারাভাষ্যের রূপ ধারণ করেছে এগুলো। সিই পঞ্চম শতকে থেরাভাদীয় পণ্ডিত বুদ্ধগোসা কর্তৃক চূড়ান্ত রূপ দেওয়া বিধিবিধানের পালি ধারাভাষ্যও পাঠককে বিধি-বিধানে বর্ণিত বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড ঘটনাবলীকে সময়ানুক্রমে সাজাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এসব পরিবর্ধিত বিবরণেও ফাঁক রয়েছে। এগুলোয় বুদ্ধের আলোকপ্রপ্তির পরবর্তী পঁয়তাল্লিশ বছরের শিক্ষাব্রতের কোনও বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ললিতা-বিস্তারা শেষ হয়েছে বুদ্ধের প্রথম হিতোপদেশ দিয়ে; এবং নিদান কথার সমাপ্তি ঘটেছে শিক্ষাব্রতের সূচনায় কোসালার রাজধানী সাবাস্তিতে প্রথম বুদ্ধ বসতির গোড়াপত্তনের ভেতর দিয়ে। বুদ্ধের ব্রতের আরও বিশ বছর সময় রয়েছে যার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।

এসব যেন যেসব বৌদ্ধ ঐতিহাসিক বুদ্ধের কাহিনী অপ্রাসঙ্গিক দাবি করে তারাই সঠিক, এমন ইঙ্গিতই করে। একথাও সত্যি যে উত্তর ভারতের অধিবাসীরা আমাদের মতো ইতিহাসে আগ্রহী ছিল না। তারা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর তাৎপর্য নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন ছিল। ফলে ধর্মগ্রন্থসমূহ অধিকাংশ পশ্চিমারা যাকে অপরিহার্য মনে করবে সেসব বিষয়ে খুব সামান্য তথ্যই যোগায়। আমরা এমনকি বুদ্ধ কোন শতাব্দীতে জীবন যাপন করেছেন সেটাও নিশ্চিত হতে পারি না। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, আনুমানিক বিসিই ৪৮৩ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। কিন্তু চীনা উৎসগুলো ধারণা দেয়, আরও পরে, বিসিই ৩৬৮ অব্দেও মারা গিয়ে থাকতে পারেন তিনি। খোদ বৌদ্ধরাই তাঁর জীবন সম্পর্কে এমন উদাসীন হয়ে থাকলে গৌতমের জীবনী নিয়ে কেন মাথা ঘামাতে যাবে কেউ?

কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। পণ্ডিতগণ এখন বিশ্বাস করেন যে, দ্বিতীয় সম্মেলনকালে রচিত গৌতমের জীবনের একটি হারিয়ে যাওয়া আদি বিররণের ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ের পরিবর্ধিত জীবনীগুলো রচিত। এছাড়া, ধর্মগ্রন্থসমূহ দেখায়, আদি বৌদ্ধরা গৌতমের জীবনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নিয়ে গভীর চিন্তা করেছে: তাঁর জন্ম, স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপন পরিহার, আলোকপ্রাপ্তি, শিক্ষাব্রতের সূচনা ও পরলোকগমন। এসব ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গৌতমের জীবনীর কিছু দিক সম্পর্কে আমরা হয়তো অন্ধকারে থাকতে পারি, কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ফুটে ওঠা সাধারণ কাঠামোর সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যেতে পারে। বুদ্ধ সবসময় জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁর শিক্ষাসমূহ সম্পূর্ণই নিজস্ব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক। তিনি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করেননি বা কোনও বিমূর্ত তত্ত্বের বিকাশ ঘটাননি। নিজের জীবন-ইতিহাস হতে নিজস্ব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তিনি শিষ্যদের শিখিয়েছেন যে, আলোকপ্রাপ্ত হতে হলে তাদের অবশ্যই গৃহত্যাগ করে ভিক্ষু-সন্ন্যাসী হতে হবে, যোগের মানসিক অনুশীলন অনুসরণ করতে হবে-যেমন তিনি করেছেন। তাঁর জীবন ও শিক্ষা অবিচ্ছেদ্য। তাঁর দর্শন অনিবার্যভাবে আত্মজীবনীমূলক। অন্য বৌদ্ধদের জন্যে আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হিসাবে ধর্মগ্রন্থে তাঁর জীবনের মূল কাঠামো বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি যেমন বলেছেন: ‘যে আমাকে দেখে সে ধম্মকে (শিক্ষা) দেখে আর যে ধম্ম দেখে সে আমাকেই দেখে।’

এখানে এমন একটি ধারণা রয়েছে যা সব প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বেলায়ই সত্যি। আধুনিক নিউ টেস্টামেন্ট পণ্ডিতগণ দেখিয়েছেন, আমরা যতটা ধারণা করি আসলে ঐতিহাসিক জেসাস সম্পর্কে তার চেয়ে অনেক কম জানি। আমরা যেমন মনে করি, ‘গস্পেল-সত্যি’ আসলে মোটেই তেমন নিরেট নয়। কিন্তু তা লক্ষ লক্ষ মানুষের নিজেদের জীবনকে জেসাসের অনুসরণে গড়ে তুলতে ও নতুন জীবন ধারণের উপায় হিসাবে তাঁর সহমর্মিতা ও কষ্ট ভোগের পথ অনুসরণের বেলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। জেসাস ক্রাইস্ট অবশ্যই ছিলেন, কিন্তু গস্পেলসমূহে উদাহরণ হিসাবে তাঁর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। ক্রিশ্চানরা তাদের নিজস্ব সমস্যার মূলে চোখ ফেরানোর সময় তাঁর শরণাপন্ন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কেউ ব্যক্তিগত রূপান্তরের অভিজ্ঞতা লাভ করলেই কেবল তার পক্ষে পুরোপুরিভাবে জেসাসকে উপলব্ধি করা সম্ভব। বুদ্ধের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি: যিনি সম্ভবত বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সর্বকালের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর শিক্ষা ১,৫০০ বছর ধরে ভারতে বিকাশ লাভ করে, তারপর তিব্বত, মধ্য এশিয়া, চীন কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তিনি মানবীয় অবস্থার প্রতীক ছিলেন।

এতে বোঝা যায় বুদ্ধের জীবন উপলব্ধি, যার কিয়দংশে তাঁর শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত, আমাদেরও মানুষের সংকট উপলব্ধিতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটা সাধারণভাবে একবিংশ শতাব্দীতে যেসব জীবনী রচিত হয়ে থাকে তেমন কিছু হতে পারবে নাঃ প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা উদ্ধার বা বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে বিতর্কিত নতুন তথ্য আবিষ্কার করবে না এটা, কারণ আমরা সততার সঙ্গে ঐতিহাসিক সত্য হিসাবে নিশ্চিত করতে পারব, ধর্মগ্রন্থসমূহে এমন একটি ঘটনাও নেই ঘটনাও নেই। কিংবদন্তীর সত্যটুকুই ঐতিহাসিক। আমাদের অবশ্যই বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় শত বছর পর পালি টেক্সটসমূহ চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার সময় যেভাবে প্রকাশ পেয়েছিল সেভাবেই সমগ্র কিংবদন্তীকে গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে বহু পাঠকই এই কিংবদন্তীর বৈশিষ্ট্যকে অবিশ্বাস্য মনে করবেন: গৌতমের জীবনে অধিকতর জাগতিক ও ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ঘটনাবলীর সঙ্গে দেবতার কাহিনী ও অলৌকিক ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। আধুনিক ঐতিহাসিক সমালোচনায় অতিলৌকিক ঘটনাবলীকে পরবর্তী সময়ের সংযোজন বিবেচনায় বাদ দেওয়াই সাধারণ গৃহীত নিয়ম। কিন্তু পালি বিধানের ক্ষেত্রে আমরা তা করতে গেলে কিংবদন্তীকে বিকৃত করা হবে। অধিকতর স্বাভাবিক ঘটনাগুলো এইসব তথাকথিত নিদর্শন ও বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের তুলনায় কিংবদন্তীর আদিরূপ কিনা নিশ্চিত হতে পারব না আমরা। বিধি-বিধানের বিকাশকারী সন্ন্যাসীগণ নিশ্চিতভাবে দেবতার বিশ্বাস করতেন, যদিও তাঁদের সীমাবদ্ধ সত্তা হিসাব দেখেছেন; এবং আমরা যেমন দেখব, তাঁদের মানবীয় মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার অভিক্ষেপ হিসাবে দেখতে শুরু করেছিলেন। তাঁরা আরও বিশ্বাস করতেন যে, যোগে দক্ষতা যোগীকে অসাধারণ ‘অলৌকিক’ ক্ষমতা (ইদ্ধি) দেয়। যোগ অনুশীলন এমনভাবে মনকে প্রশিক্ষিত করে যে তা ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড দেখাতে পারে, ঠিক যেমন অলিম্পিক অ্যাথলিটকে সাধারণ মরণশীলের অতিরিক্ত ক্ষমতা যোগায়। লোকে ধরে নিত যে, একজন দক্ষ যোগী শূন্যে ভাসতে পারে, মানুষের মনের কথা পড়তে পারে ও ভিন্ন লোকে গমন করতে পারে। বিধি-বিধান সংকলক সন্ন্যাসীগণ হয়তো বুদ্ধ এসব কাজে সক্ষম বলে প্রত্যাশা করে থাকবেন, যদিও ইদ্ধি সম্পর্কে তাঁর তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এসব এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন তিনি আমরা যেমন দেখব, ‘অলৌকিক কাহিনীগুলো’ প্রায়শঃই সতর্কতামূলক গল্প, এজাতীয় আধ্যাত্মিক প্রদর্শনবাদীতার অর্থহীনতা তুলে ধরার লক্ষ্যেই রচিত।

পালি ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ কাহিনীগুলোর অনেকগুলোরই রূপক বা প্রতীকী অর্থ রয়েছে। আদি বৌদ্ধরা ধর্মগ্রন্থে ঐতিহাসিকভাবে নির্ভুল বর্ণনার চেয়ে তাৎপর্যের সন্ধান করেছে। আমরা এও দেখব, নিদান কথার মতো প্রাপ্ত পরবর্তী সময়ের জীবনীসমূহ পালি বিধি-বিধানের অধিকতর বিচ্ছিন্ন এবং প্রায়গিক বিবরণের তুলনায় গৌতমের পিতৃগৃহ ত্যাগের সিদ্ধান্ত বা তাঁর আলোকপ্রাপ্তির মতো ঘটনাবলীর বিকল্প ও অধিকতর বিস্তারিত বিবরণ দেয়। পরবর্তী সময়ের এইসব কাহিনীও বিধি-বিধানের পৌরাণিক উপাদানের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধঃ দেবতার আবির্ভাব হচ্ছে, পৃথিবী কাঁপছে, অলৌকিকভাবে দরজা খুলে যাচ্ছে। আবার এমনটা মনে করা ভুল হবে যে, এসব অলৌকিক বর্ণনা আদি কিংবদন্তীর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। পরবর্তী কালের এইসব জীবনী সম্ভবত বুদ্ধের মৃত্যুর শত বছর পর রচিত নিখোঁজ জীবনীর উপর ভিত্তি করে রচিত, একই সময়ে বিধি-বিধান নির্দিষ্ট রূপ পেয়েছিল। এই স্পষ্ট পৌরাণিক কাহিনীগুলো বিধানের কাহিনীর চেয়ে ভিন্ন ছিল বলে আদি বৌদ্ধদের উদ্বিগ্ন করে তোলেনি। এগুলো ছিল এইসব ঘটনার আধ্যাত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক অর্থ প্রকাশকারী স্রেফ ভিন্ন ব্যাখ্যা।

কিন্তু এইসব মিথ ও অলৌকিক ঘটনাবলী দেখায় যে, বুদ্ধকে স্রেফ একজন পধপ্রদর্শক ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী হিসাবে দেখা উচিৎ বলে যারা বিশ্বাস করতেন সেই থোরাভাদীয় সন্ন্যাসীরাও তাঁকে অতিমানব হিসাবে দেখতে শুরু করেছিলেন। অধিকতর জনপ্রিয় মহায়না মতবাদ কার্যত গৌতমকে দেবতায় পরিণত করেছে। মনে করা হতো যে, থেরাভেদা বৌদ্ধ মতবাদের খাঁটি রূপ তুলে ধরে আর মহায়না ছিল বিকৃত। কিন্তু আধুনিক পণ্ডিতরা মনে করেন উভয়ই সঠিক। থেরাভেদা যোগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে গেছে এবং বুদ্ধের মতো আলোকপ্রাপ্ত আরাহান্তে (‘সফল জন’) পরিণত সন্ন্যাসীদের সম্মান প্রদর্শন করেছে। কিন্তু মহায়নায় বুদ্ধকে মানুষের জীবনে চিরন্তন সত্তা এবং উপাসনার বস্তু হিসাবে শ্রদ্ধাকারীরা পালি টেক্সটে জোরের সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া অন্যান্য মূল্যবোধ, বিশেষত সহমর্মিতার গুরুত্ব সংরক্ষণ করেছে। তারা মনে করেছে থেরাভেদা বড় বেশি বিশেষায়িত, আরাহান্তরা স্বার্থপরের মতো নিজেদের মাঝে অলোকনকে আঁকড়ে রেখেছেন। তাঁরা বুদ্ধ হওয়ার নিয়তিপ্রাপ্ত কিন্তু ‘বহুজনের’ কাছে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আলোকন বিলম্বিতকারী নারী-পুরুষ বোধিসত্তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পছন্দ করেছেন। আমরা দেখব, এটাই ছিল সন্নাসীদের ভূমিকা সম্পর্কে গৌতমের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। দুটো মতবাদই গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী আঁকড়ে ধরেছে: দুটোই সম্ভবত কিছু হারিয়েছে।

গৌতম কোনও ব্যক্তিক কাল্ট চাননি, কিন্তু বরং স্বয়ং তিনি, সক্রেটিস, কনফুসিয়াস এবং জেসাসের মতো আদর্শ ব্যক্তিবর্গ দেবতা বা অতিমানবীয় সত্তা হিসাবে পুজিত হয়েছেন। এমনকি পয়গম্বর মুহাম্মদও (স) সবসময় নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসাবে দাবি করা সত্ত্বেও মুসলিমরা তাঁকে ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ (ইসলাম) সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে একজন আদর্শ সম্পূর্ণ মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধা করে। এইসব মানুষের অস্তিত্বের বিশালতা ও অর্জন সাধারণ মানদণ্ডকে অস্বীকার করে বলে মনে হয়। পালি বিধানে দেখা যায়, গৌতমের জীবনেও এসব ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এইসব অলৌকিক কাহিনীকে আক্ষরিক অর্থে সত্যি ধরে নেওয়া যাবে না। এগুলো আমাদের মানবীয় সত্তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দেয়। জেসাস, মুহাম্মদ (স) ও সক্রেটিসের মতো বুদ্ধও নারী-পুরুষকে কেমন করে জগৎ ও দুঃখ-কষ্টকে অতিক্রম করা যায়, কীভাবে মানবীয় তুচ্ছতা আর প্রলোভনের ঊর্ধ্বে উঠে পরম মূল্য আবিষ্কার করা যায়, সেই শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সকলেই মানুষকে অধিকতর সচেতন করে তুলে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা সম্পর্কে জাগ্রত করে তুলতে চেয়েছেন। এভাবে ক্ষমতাশালী করে তোলা একজন মানুষের জীবনী আধুনিক বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের মানদণ্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। কিন্তু পালি লিপি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট টেক্সটসমূহে তুলে ধরা আদর্শ ব্যক্তির পর্যালোচনা থেকে আমরা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারি। মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন দর্শন লাভ করি। একটি ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রণাময় বিশ্বে মানবীয় অবস্থা সম্পর্কে একটি ভিন্ন ধরনের সত্যের রূপরেখা তুলে ধরে এইসব উদাহরণমূলক কাহিনীগুলো।

তবে বুদ্ধের জীবনীর আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, গস্পেলসমূহ স্বভাবসহ জেসাসের একটি স্পষ্ট ব্যক্তি সত্তা তুলে ধরে: বাকধারা, বিশেষ বাঁক, আবেগ ও সংগ্রামের গম্ভীর মুহূর্ত, দৃঢ়তা, আতঙ্ক ও ভয় ধরে রাখা হয়েছে এখানে। বুদ্ধের ক্ষেত্রে এটি সত্যি নয়। তাঁকে ব্যক্তির চেয়ে বরং ধরণ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর আলোচনায় আমাদের আনন্দিত করে তোলা জেসাস বা সক্রেটিসের ভাষণের আকস্মিক সরল মন্তব্য, জোর ধাক্কা, রসালো উক্তির কোনওটাই পাই না। তিনি ভারতীয় দার্শনিক চাহিদা অনুসারে কথা বলেন: গম্ভীর, আনুষ্ঠানিক, নৈর্ব্যক্তিক। আলোকপ্রাপ্তির পর আমরা তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, আশা-আশঙ্কা, হতাশার মুহূর্ত, উদ্বেলিত হওয়া বা গভীর সংগ্রাম সম্পর্কে কিছুই ধারণা করতে পারি না। অবশিষ্ট রয়ে গেছে কেবল অতিমানবীয় নীরবতা, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তিগত পছন্দের অতীত এক ধরনের মহত্ব ও গভীর প্রশান্তি। বুদ্ধকে প্রায়শঃই অমানবিক সত্তা–পশু, গাছপালা কিংবা মহীরুহের সঙ্গে তুলনা করা হয়–সেটা তিনি মানবেতর বা অমানবিক বলে নয় বরং তিনি আমরা যে স্বার্থপরতাকে আমাদের অবস্থার সঙ্গে অনিবার্য মনে করি তাকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন বলে। বুদ্ধ মানুষ হওয়ার এক নতুন উপায়ের সন্ধান করছিলেন। পশ্চিমে আমরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও আত্ম-প্রকাশকে মূল্য দিই, কিন্তু এটা সহজেই আত্ম-প্রসাদে পরিণত হতে পারে। গৌতমের মাঝে আমরা পূর্ণাঙ্গ ও শ্বাসরুদ্ধকর আত্মত্যাগ লক্ষ করি। ধর্মগ্রন্থসমূহ তাঁকে একজন পরিপূর্ণ ‘ব্যক্তিত্ব’ হিসাবে তুলে ধরেনি জানতে পারলে অবাক হতেন না তিনি, বরং হয়তো বলতেন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা বিপজ্জনকভাবে মোহ। তিনি হয়তো বলতেন, তাঁর জীবনে অসাধারণ কিছু নেই। তাঁর আগেও অন্য বুদ্ধরা ছিলেন, যাঁদের প্রত্যেকেই একই ধৰ্ম্ম প্রচার করেছেন। একই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাঁরাও। বুদ্ধ ট্র্যাডিশন এই ধরনের পঁচিশজন আলোকপ্রাপ্ত মানুষের অস্তিত্ব দাবি করে। বর্তমান ঐতিহাসিক যুগ শেষে, যখন এই অত্যাবশ্যকীয় সত্যের জ্ঞান ক্ষীণ হয়ে আসবে, মেত্তায়া নামে একজন নতুন বুদ্ধ আসবেন পৃথিবীতে। তিনিও একই জীবনচক্র অতিক্রম করবেন। বুদ্ধের এই আদিরূপের ধারণা এতই জোরাল যে নিদান কথায় পিতৃগৃহ হতে তাঁর ‘বহির্গমন’ সম্পর্কিত বিখ্যাত উপাখ্যানটিকে পালি শাস্ত্রে গৌতমের অন্যতম পূর্বসুরি বুদ্ধ বিপাসসির জীবনে ঘটার দাবি করা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থসমূহে গৌতমের অসাধারণ, ব্যক্তিগত অর্জন সম্পর্কে নয়, বরং সকল বুদ্ধ, সকল মানুষের আলোকপ্রাপ্তির সন্ধানকালে অবশ্য অনুসরণীয় উপায় সম্পর্কে আগ্রহী।

গৌতমের কাহিনীর সঙ্গে আমাদের কালের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আমরাও বিসিই ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দীর উত্তর ভারতের মতো পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। উত্তর ভারতীয় জনগণের মতো আবিষ্কার করছি যে, পবিত্রকে অনুভব করার প্রথাগত উপায় ও আমাদের জীবনের পরম অর্থ আবিষ্কার কঠিন কিংবা অসম্ভব। ফলস্বরূপ, আধুনিক অভিজ্ঞতায় শূন্যতা একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ হয়ে রয়েছে। গৌতমের মতো এক রাজনৈতিক সহিংসতার যুগে বাস করছি আমরাও। মানুষের প্রতি মানুষের ভীতিকর অমানবিক আচরণ লক্ষ করছি। আমাদের সমাজেও ব্যাপক অস্থিরতা, নাগরিক হতাশা ও বৈষম্য রয়েছে। অনেক সময় বিকাশমান নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠি আমরা।

বুদ্ধের অনুসন্ধানের বহু দিকই আধুনিক মূল্যবোধের কাছে আবেদন সৃষ্টি করবে। তাঁর সচেতন অভিজ্ঞতাবাদ এবং সেই সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমাদের নিজস্ব পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বাস্তব সুরের সঙ্গে বিশেষভাবে মানানসই, যারা অতিপ্রাকৃত ঈশ্বরের ধারণাকে অচেনা বলে মনে করেন তাঁরাও বুদ্ধের পরম সত্তার অস্তিত্ব মানতে অস্বীকৃতিকে কাছে টেনে নেবেন। নিজ গবেষণাকে তিনি মানবীয় প্রকৃতির মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং বরাবর জোর দিয়েছেন যে তাঁর অভিজ্ঞতা–এমনকি নির্বাণের পরম সত্যিও–মানবীয় প্রকৃতির সঙ্গে পুরোপুরি স্বাভাবিক। প্রাতিষ্ঠানিক ধার্মিকতার কোনও কোনও ধরনের অসহিষ্ণুতায় ক্লান্ত যারা, তারাও বুদ্ধের সহমর্মিতা ও প্রেমময় ভালোবাসার উপর গুরুত্ব প্রদানকে স্বাগত জানাবেন।

কিন্তু বুদ্ধ একটি চ্যালেঞ্জও, কেননা আমাদের অধিকাংশের চেয়ে অনেক বেশি রেডিক্যাল তিনি। আধুনিক সমাজে একটা নতুন অর্থডক্সির প্রকাশ ঘটছে যাকে অনেক সময় ‘ইতিবাচক চিন্তা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। সবচেয়ে খারাপ, আশাবাদের এই অভ্যাস আমাদের আবেগগত রক্ষা নিশ্চিত করতে বালিতে মাথা লুকাতে সাহায্য করে, নিজের এবং অন্যদের যন্ত্রণার সর্বব্যাপীতা অস্বীকার করায় ও আমাদের ইচ্ছাকৃত হৃদয়হীনতায় রুদ্ধ করতে প্ররোচিত করে। বুদ্ধ এসবে মাথা ঘামাতেন না। তাঁর চোখে মানুষ যতক্ষণ দুঃখকষ্টের বাস্তবতায় আক্রান্ত না হচ্ছে, যতক্ষণ না বুঝতে পারছে আমাদের সমগ্র অস্তিত্বে কীভাবে তা প্রবাহিত হচ্ছে, অন্য মানুষের, এমনকি যাদের আন্তরিক মনে হয় না তাদেরও, যন্ত্রণা অনুভব করতে না পারছে ততক্ষণ আধ্যাত্মিক জীবন সূচিত হতে পারে না। একথাও ঠিক যে, আমাদের বেশিরভাগই বুদ্ধের আত্ম-পরিত্যাগের মাত্রায় পৌঁছতে প্রস্তুত নই। আমরা জানি অহমবোধ খারাপ; আমরা জানি বিশ্বের সকল মহান ট্রাডিশন–কেবল বুদ্ধ মতবাদ নয়–আমাদের স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে ওঠার তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু আমরা যখন মুক্তির সন্ধান করি–ধর্মীয় বা সেক্যুলার রূপে–আমরা আসলে আমাদের সত্তার বোধ উন্নত করতে চাই। ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত অনেক কিছুই প্রায়শঃ বিশ্বাসের প্রবর্তকগণ যে অহমকে বিসর্জন দিতে বলেছেন সেটাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে বা উন্নত করার জন্যেই সৃষ্টি হয়। আমরা ধরে নিই বুদ্ধের মতো একজন মানুষ দৃশ্যতঃ ব্যাপক সংগ্রামের পর সবরকম স্বার্থপরতা বিসর্জন দিয়ে অসামরিক, রসহীন এবং গম্ভীর হয়ে উঠবেন।

কিন্তু বুদ্ধের ক্ষেত্রে তা সত্যি নয় বলে মনে হয়। তিনি নৈর্ব্যক্তিক হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁর অর্জিত অবস্থা যারা তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন তাঁদের সবার মাঝেই এক অসাধারণ আবেগ সৃষ্টি করেছে। বুদ্ধের অর্জিত কোমলতা, ন্যায্যতা, মহত্ব, নিরপেক্ষতা ও প্রশান্তির বিরামহীন এমনকি নির্মম মাত্রা আমাদের হৃদয়ের তন্ত্রীকে নাড়া দেয় ও গভীরতম আকাঙ্ক্ষায় অনুরণন সৃষ্টি করে। মানুষ তাঁর নিরাবেগ স্থৈর্য্যে বিকর্ষিত হয়নি, কোনও বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতার অভাবে নিরুৎসাহিত হয়নি। বরং তারা বুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, তাঁর চারপাশে ভীড় জমিয়েছে।

লোকে যখন দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্যে তাঁর বাৎলে দেওয়া উপায় বেছে নেয়, তারা বলে ‘বুদ্ধের কাছে আশ্রয়’ নিয়েছে। কোলাহলময় অহমবাদের সহিংস পৃথিবীতে তিনি ছিলেন শান্তির স্বর্গ। পালি লিপির একটি আবেগময় কাহিনীতে তীব্র হতাশাগ্রস্ত এক রাজা বিশাল বিশাল ট্রপিক্যাল গাছপালায় ভর্তি একটা পার্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। শকট ছেড়ে প্রায় মানুষ সমান লম্বা বিরাট বিরাট শেকড়ের মাঝে হাঁটছিলেন তিনি। ওগুলোর ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ সৃষ্টির কায়দা লক্ষ করলেন তিনি। ‘ওরা ছিল শান্ত: বেসুরো কোনও কণ্ঠ ওদের শান্তি বিনষ্ট করেনি, সাধারণ জগৎ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বোধ যুগিয়েছে ওগুলো, এমন একটা জায়গা যেখানে কেউ মানুষের থেকে দূরে আশ্রয় নিতে পারে’ ও জীবনের নিষ্ঠুরতা হতে অবসর পেতে পারে। চমৎকার প্রাচীন গাছগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায় রাজার, লাফিয়ে শকটে উঠে বহু মাইল দূরে বুদ্ধের বাড়িতে না পৌঁছা পর্যন্ত শকট হাঁকিয়ে যান। জগৎ থেকে ভিন্ন শান্তির জায়গার সন্ধান, জগৎ হতে বিচ্ছিন্ন কিন্তু বিস্ময়করভাবে অভ্যন্তরে অবস্থিত, নিরপেক্ষ, সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত, শান্ত, আমাদের যা সকল সংকটের প্রতিকূলে আমাদের জীবনে একটা মূল্য আছে, এমন একটা বিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে, যাকে অনেকে খোঁজে, বাস্তবে আমরা তাকে বলি ‘ঈশ্বর’। সত্তার সীমাবদ্ধতা ও পক্ষপাতিত্ব অতিক্রম করে যাওয়া বুদ্ধের মাঝে বহু মানুষই যেন তার দেখা পেয়েছে বলে মনে হয়। বুদ্ধের জীবন আমাদের শক্তিশালী কিছু বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে, কিন্তু তা আবার আলোকবর্তিকাও হতে পারে। আমরা হয়তো তাঁর বাৎলে দেওয়া পদ্ধতি পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারব না, কিন্তু তাঁর উদাহরণ কিছু কিছু উপায় আলোকিত করে যার সাহায্যে আমরা এক উন্নত ও সত্যিকার অর্থে সহানুভূতিময় মানবতার দিকে অগ্রসর হতে পারি।

দ্রষ্টব্য: বুদ্ধের ধর্মগ্রন্থসমূহ হতে উদ্ধৃত করার সময় আমি অন্যান্য পণ্ডিতদের অনুবাদের সাহায্য নিয়েছি। তবে সেগুলোকে নিজের মতো প্রকাশ করেছি এবং পশ্চিমা পাঠকদের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্যে আমার নিজস্ব ভাষ্য তৈরি করেছি। বুদ্ধ মতবাদের কিছু মূল্যবান শব্দ এখন সাধারণ ইংরেজি ডিসকোর্সে নৈমিত্তিক হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা সাধারণত পালি ধরনের পরিবর্তে সংস্কৃতকেই বেছে নিয়েছি। সামঞ্জস্যতার স্বার্থে আমি পালিতে স্থির থেকেছি, ফলে পাঠক, উদাহরণ স্বরূপ, কর্ম, ধর্ম এবং নির্বাণের বদলে কৰ্ম্ম, ধম্ম এবং নিব্বানা দেখতে পাবেন।

তথ্যসূত্র

১. মাজহিমা নিকয়া ৮৯।

Book Content

১. গৃহত্যাগ
২. অন্বেষণ
৩. আলোকন
৪. ধম্ম
৫. ব্ৰত
৬. পরিনিব্বানা
৭. নির্ঘণ্ট
লেখক: ক্যারেন আর্মস্ট্রং, শওকত হোসেনবইয়ের ধরন: ধর্ম ও দর্শন
বাইবেল : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - ক্যারেন আর্মস্ট্রং

বাইবেল : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

স্রষ্টার জন্য লড়াই : মৌলবাদের ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

স্রষ্টার জন্য লড়াই : মৌলবাদের ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

ইসলাম : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

ইসলাম : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

পুরাণ : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - ক্যারেন আর্মস্ট্রং

পুরাণ : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.