৭. নির্ঘণ্ট

নির্ঘণ্ট

অহিংসা : ‘ক্ষতি না করা’: নতুন রাষ্ট্রসমূহের আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্যে উত্তর ভারতীয় বহু সাধুর গৃহীত নীতি

অকুসলা : আলোকনের প্রয়াসে বাধা সৃষ্টিকারী ‘অদক্ষ’ বা ‘অনুপযোগি’ অবস্থা।

অনাত্মা : ‘আত্মাহীন’: একটি নিত্য, স্থায়ী ও পৃথক ব্যক্তিত্ব অস্বীকারকারী মতবাদ।

আরাহান্ত : ‘সফল জন,’ যিনি নিব্বানা অর্জন করেছেন।

আরামা : বসতি স্থাপনের জন্যে বৌদ্ধ সংগঠনকে দান করা প্রমোদ-উদ্যান।

আসন : ঋজু পিঠ এবং পায়ের ওপর পা রেখে যোগ অনুশীলনের সঠিক ভঙ্গি। আবাসা: পল্লী বসতি, প্রায়শঃ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীগণ বর্ষা মৌসুম অবকাশের জন্যে শূন্য হতে নিমার্ণ করতেন।

আত্মা : চিরন্তন অপরিবর্তনীয় সত্তা যোগি, সাধু আর সমক্ষ্য দর্শনের অনুসারীরা যার সন্ধান করেছেন। উপনিষদে একে ব্রহ্মার অনুরূপ বলে বিশ্বাস করা হয়েছে।

আয়তন : অগ্রসর যোগিদের অর্জিত ধ্যান মার্গ।

ভিক্ষু : ভিক্ষুক সন্ন্যাসী যিনি দৈনন্দিন খাবারের জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। নারীবাচক শব্দটি হচ্ছে ভিক্ষুনি: নান।

বোধিসত্তা : আলোকন প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে এমন নারী বা পুরুষ। সংস্কৃত : বোধিসতবা।

ব্রহ্মা : বৈদিক ও উপনিষদ ধর্মে মহাবিশ্বের মৌলিক, পরম ও চরম নীতি।

ব্রাহ্মণ : উৎসর্গ ও বেদের পরম্পরা রক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্ত আর্য সমাজের পুরোহিত গোত্রের সদস্য।

ব্রহ্মাচার্য : পবিত্র কৌমার্য জীবন: অলোকন ও বেদনা হতে মুক্তির অনুসন্ধান।

বুদ্ধ : আলোকপ্রাপ্ত বা জাগ্ৰত জন।

চক্কবর্ত্তী : ভারতীয় লোককথার বিশ্ব শাসক বা সর্বজনীন রাজা যিনি সমগ্র জগৎ শাসন করবেন এবং শক্তিবলে ন্যায় বিচার ও সঠিক পথ আনয়ন করবেন।

সেতো-বিমুক্তি : ‘মনের উন্মুক্তি’: আলোকন ও নিব্বানা অর্জনের সমার্থক।

ধম্ম : মূলত বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থা, মূল; অস্তিত্বের মৌল বিধি; তারপর, ধর্মীয় সত্যি বিশেষ ধর্মীয় ব্যবস্থাও গড়ে তোলা মতবাদ ও অনুশীলন। সংস্কৃত: ধর্ম।

ধরণা : যোগ পরিভাষা: ‘মনোনিবেশ’। মনোছবির প্রক্রিয়া যেখানে যোগি আপন চেতনা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন।

দুঃখ : ‘কুটিল, ত্রুটিপূর্ণ, অসন্তোষজনক’: প্রায়শঃ স্রেফ ‘ভোগান্তি’ হিসাবে অনূদিত হয়।

একাগ্রতা : যোগে ‘নির্দিষ্ট বিন্দুতে’ মনোনিবেশ গৌতমী: গৌতমের গোত্রের যেকোনও নারী।

ইদ্ধি : বস্তুর ওপর মনের আধিপত্য। যোগের মাধ্যমে প্রাপ্ত ‘অলৌকিক ক্ষমতা’ যেমন শূন্যে ভাসা, বা ইচ্ছাশক্তির জোরে অবয়ব পরিবর্তন।

ঝানা : যোগ-মোহাবেশ: চারটি স্পষ্ট পর্যায়ক্রমে গম্ভীর হয়ে ওঠা একীভূত ভাবনার প্রবাহ। সংস্কৃত: ধ্যান।

জিনা : জৈনদের ব্যবহৃত বুদ্ধের সম্মানসূচক পদবী, বিজয়ী।

কম্ম : কাজ, কর্ম। সংস্কৃত: কর্মণ।

খণ্ড : স্তূপ, বাণ্ডিল, পিণ্ড;’ বুদ্ধের অনাত্মা মতবাদে মানব ব্যক্তিত্বের উপাদান। পাঁচটি ‘স্তূপ’ হচ্ছে দেহ, অনুভূতি, ধারণা, সংকল্প ও চেতনা।

ক্ষত্রিয় : আর্য সমাজে সরকার পরিচালনা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত যোদ্ধা, অভিজাত, সামন্ত শ্ৰেণী।

কুসলা : আলোকনের জন্যে বৌদ্ধদের অনুসৃত মনের, হৃদয়ের ‘দক্ষ’ বা ‘উপযোগি’ অবস্থা।

নিব্বানা : ‘নির্বাপিত হওয়া,’ ‘বিলুপ্তি: সত্তার বিলুপ্তি যা বেদনা (দুঃখ) হতে আলোকন ও মুক্তি এনে দেয়। সংস্কৃত: নির্বানা।

নিকয়া : পালি ধর্মগ্রন্থের আলোচনার ‘সংকলন’।

নিয়ামা : যোগ ধ্যানের পূর্বশর্ত মনস্তাত্ত্বিক ও দৈহিক অনুশীলন।

পাবজ্জ্য : ‘অগ্রসর হওয়া’ সন্ন্যাসীর পবিত্র জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে জগৎ ত্যাগ করা। পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধদের সংঘভুক্তির প্রথম পর্যায়।

পালি : বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকলনে ব্যবহৃত উত্তর ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষা।

পরিনিব্বানা : ‘চূড়ান্ত নিব্বানা’: মৃত্যুতে অর্জিত আলোকনপ্রাপ্ত জনের চূড়ান্ত বিশ্রাম, যেহেতু তিনি আর অন্য অস্তিত্বে জন্ম গ্রহণ করবেন না।

পতিমোক্ষ : ‘শপথ’: যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম দিকের সন্ন্যাসীগণ ছয় বছর পরপর বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম উচ্চারণ করার উদ্দেশে সমবেত হতেন। পরে, বুদ্ধের মৃত্যুর পর এটা সংগঠনের মঠাচারের আবৃত্তি ও অপরাধ স্বীকারের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। পাক্ষিক ভিত্তিকে অনুষ্ঠিত হতো।

প্রকৃতি : সামক্ষ্য দর্শনে প্রাকৃতিক জগৎ।

প্রাণায়াম : যোগের শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন যা ঘোর ও সুস্থতার একটা অবস্থা নিয়ে আসে।

প্রত্যাহার : যোগে ‘অনুভূতির প্রত্যাহার,’ কেবল বুদ্ধি দিয়ে কোনও বস্তু অনুধাবন করার ক্ষমতা।

পুরুসা : সামক্ষ্য দর্শনে সকল বস্তুকে আবৃত করে রাখা পরম আত্মা।

শাক্য মুনি : ‘শাক্য রাজ্যের সাধু,’ বুদ্ধকে দেওয়া পদবী।

সমাধি : যোগ-মনোসংযোগ; ধ্যান; আলোকপ্রাপ্তির অষ্টশীলেন একটি।

সামক্ষ্য : ‘পার্থক্যকরণ’: যোগের অনুরূপ একটি দর্শন, বিসিই দ্বিতীয় শতাব্দীতে কাপিলার সাধুগণ প্রথম প্রচার করেন।

সাম্মা সামবুদ্ধা : প্রতি ৩২,০০০ বছরে একবার মানব সমাজে আবির্ভূত আলোকনের শিক্ষক; সিদ্ধার্থ গৌতম আমাদের বর্তমান যুগের সাম্মা সামবুদ্ধা।

সামসারা : ‘অব্যাহত যাত্রা’: জন্ম ও মৃত্যুর চক্র, মানুষকে যা পরবর্তী জীবনে চালিত করে: জাগতিক জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও অস্থিরতা।

সংঘ : মূলত গোত্রীয় সংসদ, উত্তর ভারতের প্রাচীন রাজ্যসমূহের প্রাচীন শাসক গোষ্ঠী। পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট গুরুর শিক্ষা দেওয়া ধম্মের প্রচারকারী গোত্র; সবশেষে, ভিক্ষুদের বৌদ্ধ সংগঠন।

সংখারা : ‘গঠন,’ কম্মের গঠনকারী উপাদানসমূহ যা পরবর্তী অস্তিত্বের আকার

নির্ধারণ করে।

সুত্তা : ধর্মীয় আলোচনা; সংস্কৃত: সূত্ৰা।

তানহা : ভোগান্তির সবচেয়ে শক্তিশালী কারণ ‘আকাঙ্ক্ষা’ বা ‘বাসনা’।

তপস : কৃচ্ছ্রতা সাধন: আত্ম-শুদ্ধি 1

তথাগত: ‘এভাবে বিদায় গ্রহণকারী।’ আলোকপ্রাপ্তির পর বুদ্ধকে দেওয়া উপাধি। অনেক সময় ‘আদর্শজন’ হিসাবে অনূদিত।

তিপিটতাকা : আক্ষরিকভাবে ‘তিনি ঝুড়ি,’ পালি লিপির তিনটি প্রধান বিভাগ।

উপাদান: ‘আঁকড়ে থাকা,’ সংশ্লিষ্টতা; শব্দগতভাবে উপাদি অর্থাৎ জ্বালানির সঙ্গে সম্পর্কিত।

উপসোথা : বৈদিক ঐতিহ্যে উপবাস ও সংযমের দিন।

উপনিষদ : বেদের অতিন্দ্রীয় ও আধ্যাত্মিকভাবে বোধগম্যতা গড়ে তোলা নিগূঢ় উপলব্ধি; পরবর্তী কালে হিন্দু ধর্মের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।

বাস্যা: জুন হতে সেপ্টেম্বর সময়কালে বর্ষা মৌসুমে অবকাশ।

বেদ : আর্য ধর্মীয় ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের উচ্চারিত ও ব্যাখ্যাকৃত অনুপ্রাণিত টেক্সট।

বিনয়া : বৌদ্ধ ব্যবস্থায় মঠ সংক্রান্ত আচরণ বিধি: তিপিটতাকার ‘তিনটি ঝুড়ি’র একটি।

বৈশ্য : আর্য ব্যবস্থার কৃষক ও পশুপালকদের তৃতীয় গোত্র।

বাসনা : মনের অবচেতন কর্মকাণ্ড।

ইয়ামা : যোগি ও সাধুদের অনুসৃত ‘নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ’ যাদের চুরি, মিথ্যাবলা যৌনমিলন, মাদক গ্রহণ বা অন্য প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করা নিষেধ।

যোগ : চেতনা ও অন্তর্দৃষ্টির বিকল্প অবস্থার বিকাশে মনের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করার অনুশীলন।

যোগি : যোগের অনুশীলনকারী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *