পাঁচকড়ি দে রচনাবলী ৬ (ষষ্ঠ খণ্ড)
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর, ২০২১
প্রচ্ছদ : ইন্দ্রনীল ঘোষ
.
ভূমিকা
পাঁচকড়ি দে এখন দুষ্প্রাপ্য।
দুষ্প্রাপ্যতার কারণ দুটো-তিনটে হতে পারে। উনি লিখতে পারতেন না। জনাব আহমেদ খান তিরিশেক বইয়ের মালিক লিখতে পারেন না? ওর উত্তরাধিকারীদের এ বিষয়ে নজর ছিল না। জবাবিটা এই রকম—পরের সম্পত্তিতে নজর দেওয়া—আইনি এবং সৌজন্যের কারণে একেবারে নিষিদ্ধ। তবুও চেষ্টা করেছিলাম খুঁজেপেতে—কিন্তু প্রশ্নাবলী এবং বিরয বদন দেখে মফস্বলের মানুষ আমি বেশি সাহসী হতে পারিনি। গ্রন্থাগারে বইপত্র তালিকাতে থাকলেও লোপাট হয়েছে। এটা খান বিশেক লাইব্রেরি হাঁটকানোর অভিজ্ঞতা। এ থেকে আরও একটা অভিজ্ঞতা—লোপাট করার মতো চাহিদা ছিলই এবং আছেও। প্রমাণ এই ছ-খণ্ড বই সংগ্রহ করতে আমার এবং প্রকাশকের প্রাণ যায় যায়। তৃতীয়-চতুর্থ ব্যক্তিদের সহায়তাও ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রায় শেষখণ্ড হয় হয় অবস্থা। পাঠকেরা এইমাত্র ভরসা—সাত-আট খণ্ড নিয়ে সমাপ্ত করতে পারি। প্রকাশককে জানাবার চেষ্টা করুন। আগে থেকেই বিনম্র ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি।
এখানে অর্থাৎ এই খণ্ডে বিমিশ্র পাঁচকড়িকে আমরা একত্র করেছি। পাঁচকড়ি প্রণীত, পাঁচকড়ি সংশোধিত এবং পাঁচকড়ি গোয়েন্দা গল্প ছাড়া বৈষ্ণবপদাবলীর সংগ্রাহক, পালাগানের বিন্যাসে, সম্প্রতিকালে সম্পূর্ণ বিস্মৃত। প্রণীত নিয়ে অসুবিধে নেই। ‘হরতনের নওলা’ নিয়ে বড্ড ঝামেলায় পড়েছি। জাতীয় গ্রন্থাগারে এই বইয়ের হদিশ পেলে দেখবেন লেখক হিসেবে শরচ্চন্দ্র সরকারের নাম। রহস্য উপন্যাসের লেখক হিসেবে তিনি স্বক্কলের পরিচিত ছিলেন। এই তথ্য শুনেই পাঠক বলে বসলেন—শরচন্দ্রের বই পাঁচকড়ি রচনাবলিতে ঢুকলো কোন্ সুবাদে। তাহলে বইয়ের ভূমিকাটি আগে পড়ে নিতে হবে। ভূমিকা লেখক যা বলতে চেয়েছেন তা হল ১. এই বইটি পাঁচকড়ি দে—তাঁর শ্রদ্ধাধন্য লেখক পাঁচকড়ি দেখে দিয়েছেন; ২. শুধু দেখে দেননি—এটি বস্তুত তাঁরই লেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভরসাতে আমরা পাঁচকড়ির নামে এটাকে ছাপিয়েছি। শুধু তাই নয় পাঁচকড়ি দে-র নামে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বীরেন পাল মশায়ও—যিনি গোয়েন্দা লেখক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচকড়ি দে মশায়কে নিয়ে এমন কাণ্ড ঘটেছিল যা নিয়ে সত্যি কথাটা বলতে খুব একটা পাথুরে প্রমাণ দিতে পারছিলাম না। বলা হচ্ছিল পাঁচকড়ির নাম-ডাকে একদিন মানুষ লিখতে না পেরে বীরেন পাল মশায়ের নাম দিয়ে তাঁর লেখাই পাঁচকড়ি দে-র নামে ছাপা হয়। কিন্তু ছাপার অক্ষরে বীরেনবাবু ছাপানোর দায়িত্ব স্বীকার করেছেন এবং দায় এবং দায়িত্ব লেখক হিসেবে পাঁচকড়িবাবুকেই দিয়ে যাওয়াতে আমরা নিশ্চিন্ত হয়েছি এবং বীরেনবাবুকে সন্দেহ করার চেষ্টা মাত্র করিনি।
আগে এতোগুলি খণ্ড ছাপানো হয়েছে কোথাও পাঁচকড়িবাবুর পিতৃনাম আমরা উল্লেখ করতে পারিনি। এখণ্ডের দৌলতে তা আমরা জানতে পেরেছি—কোনও জীবনী অভিধানে তার উল্লেখ দেখিনি–হয়ত তা আমার দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতা হতে পারে। বীরেন্দ্রনাথ পাল-এর জন্যে ‘লক্ষটাকা’ দেখুন এবং প্রতিজ্ঞা- পাল-এ পাবেন পাঁচকড়ির পিতৃদেবের নাম-কেদারনাথ দে। পাঁচকড়ি-শরত্চন্দ্র দ্বন্দ্ব পারেন ‘হরতনের নওলা’-তে। ‘নিমাই-সন্ন্যাস’ ইত্যাদি বৈষ্ণবপদালবী এখন যাঁরা বৈষ্ণবপদাবলীর চর্চা করেন, তাঁরা গ্রন্থশেষে পাঁচকড়ি দে-র এই অপরূপ কীর্তির কথা এখন বিশেষভাবে স্মরণ করে এই খণ্ডের প্রতি ও প্রকাশকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন তাঁরা।
লক্ষটাকা, হরতনের নওলা এবং প্রতিজ্ঞা-পালন—তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে পাঁচকড়ি-শরচ্চন্দ্রকে যুগ্মভাবে স্মরণ করার সুযোগে আমরা গ্রন্থনাকে ‘পাঁচকড়ি রচনাবলী’-তে ঠাঁই দিয়েছি। বুভুক্ষু পাঠকেরা কি ‘টু-ইন-ওয়ান ভাবছেন?! রসের ধারাবাহিকতায় সবই অভিন্ন।
করুণা প্রকাশনীর স্মরণীয় বামাচরণ মুখোপাধ্যায় এবং তস্যপুত্র কৃষ্ণেন্দুর প্রয়াস লক্ষনীয়। কৃষ্ণেন্দু চিনতে পারছেন না? আমাদের বাচ্চু।
—বারিদবরণ ঘোষ
A R Khairuzzaman
বইটি সম্পূর্ণ হতে কতদিন লাগবে? অপেক্ষায় আছি। ধন্যবাদ।